.
…
[ গৌড়চন্দ্রিকা: নতুন সচলরা হয়তো জানেন না যে, এককালে সচলে নিয়মিত ইয়োগা'র আসর বসতো। এখন যাদেরকে বুড়ো সচল হিসেবে জানেন, তিনারা নিয়মিত ইয়োগা সেবন করিতেন। তাদেরকে সেই পুরনো দিনের স্মৃতি মনে করিয়ে দেয়া আর নতুনদেরকে সেই পুরনো লিংকটা ধরিয়ে দেয়ার জন্যেই মূলত আজকের পর্বটা। তবে এটা বলে রাখা ভালো যে, পর্বটা নিয়মিত হবার সুযোগ নেই এজন্যেই যে, 'ইয়োগা' বইটার প্রকাশকের হাঁড়ি বানিয়ে রাখা চন্দ্রমুখ দেখা আমার জন্য কোনভাবেই উপাদেয় হবে না। অতএব সবাই সুস্থ থাকুন আর বেশি বেশি করে সচল থাকুন। ]
# বৃশ্চিকাসন (Vrishchikasana):
এ আসন অভ্যাসে দেহকে বৃশ্চিক বা বিচ্ছুর মতো দেখায় বলে আসনটির নাম বৃশ্চিকাসন (Scorpion pose) ।
@ পদ্ধতি (ক):
প্রথমে শলভাসনের ভঙ্গিমায় আসুন। অর্থাৎ হাত দুটো দেহের দু’পাশে লম্বাভাবে রেখে উপুড় হয়ে শুয়ে পড়ুন। হাতের তালু মেঝের দিকে থাকবে। চিবুক মেঝেতে অথবা একপাশে বাঁকিয়ে রাখুন। এখন পা দুটো জোড়া ও সোজা রেখে মেঝে থেকে হাত দেড়েক উপরে তুলুন। শলভাসনের এই ভঙ্গিমায় হাত দুটো দু’পাশে মেলে দিন। এবার পা দুটো আরো উঁচু করে এনে হাঁটু থেকে ভেঙে পায়ের পাতা মাথার উপর বা দু’পাশে রাখুন। শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক রেখে ২০সেঃ থেকে ৩০সেঃ এ অবস্থায় থাকুন।
এরপর হাত, বুক ও কোমরের উপর জোর রেখে পা দুটো উঁচু করে উঠিয়ে ফের আস্তে আস্তে মেঝেতে নামিয়ে নিয়ে আসুন এবং উপুড় হয়ে শুয়ে পড়ুন। কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে আসনটি ২/৩ বার অভ্যাস করুন এবং প্রয়োজনমতো শবাসনে বিশ্রাম নিন।
উপকারিতা:
এ আসন অভ্যাসে ঘাড়, কাঁধ, গলা, বুক, পিঠ, মেরুদণ্ড, পেট, বস্তিপ্রদেশ, নিতম্ব ও কোমরের উপর প্রচণ্ড চাপ পড়ে, ফলে দেহে কোন রোগই আসতে পারে না।
@ পদ্ধতি (খ):
প্রথমে উপুড় হয়ে শুয়ে পড়ুন। এবার পা দুটো হাঁটু ভেঙে পায়ের পাতা যতদূর সম্ভব পিঠের উপর আনুন এবং হাতদুটো পেছন দিকে ঘুরিয়ে নিয়ে গোড়ালির কাছে শক্ত করে ধরুন। এখন পা দুটো যতটুকু সম্ভব মাথার দিকে টেনে আনুন। শরীর ধনুকের মতো বাঁকা হয়ে বুক, হাঁটু ও উরু মেঝে থেকে উঠে আসবে। শুধু পেট ও তলপেট মেঝেতে থাকবে। ধনুরাসনের এই অবস্থায় দু’হাত দিয়ে দুপায়ের বুড়ো আঙুল ধরে পায়ের পাতা দুটো টেনে এনে মাথার তালুর উপর রাখুন। শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক রেখে ২০সেঃ থেকে ৩০সেঃ এ অবস্থায় থাকুন।
এরপর হাত-পা আলগা করে উপুড় হয়ে শুয়ে পড়ুন। এভাবে ২/৩ বার আসনটি অভ্যাস করুন এবং প্রয়োজনমতো শবাসনে বিশ্রাম নিন।
উপকারিতা:
ধনুরাসনের সমস্ত উপকার এ আসন থেকে পাওয়া যায়। অর্থাৎ এ আসন মেরুদণ্ডের হাড়ের জোড় নমনীয় রাখে। মেরুদণ্ড-সংলগ্ন স্নায়ুমণ্ডলী ও তার পাশের পেশী সতেজ ও সক্রিয় রাখে। বুকের পেশী ও পাঁজরের হাড় বৃদ্ধিতে সাহায্য করে এবং বুক সুগঠিত করে। হৃৎপিণ্ড ও ফুসফুসের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি করে। তলপেটের উপর দেহের সমস্ত ভার পড়ে বলে ঐ অঞ্চলের পেশী, স্নায়ুজাল সবল ও সক্রিয় থাকে এবং পাকস্থলী, ক্ষুদ্রান্ত্র, বৃহদন্ত্র, প্লীহা, যকৃৎ খুব ভালো কাজ করে। আসনটি অভ্যাসে দেহের মধ্যভাগের অপ্রয়োজনীয় মেদ দূর হয়।
@ পদ্ধতি (গ):
প্রথমে ব্যাঘ্রাসনে আসুন। অর্থাৎ হাঁটু গেড়ে পায়ের আঙুলগুলো মেঝেতে রেখে বসুন। এবার দু’হাতের তালু উপুড় করে কনুই পর্যন্ত মেঝেতে রাখুন। এখন শ্বাস নিতে নিতে দেহের ভার কনুই থেকে হাতের তালুর উপর রেখে কাঁধ ও কোমরের উপর ভারসাম্য রাখা অবস্থায় হাঁটু উঁচু করে পায়ের আঙুল দিয়ে মেঝেতে সামান্য একটু ঠেলা বা ঝাঁকুনি দিয়ে পা দুটো জোড়া অবস্থায় সোজা উপরে তুলে দিন এবং মাথার একটু পেছনদিকে নিয়ে আসুন। এবার মাথা একটু উপরে তুলে সামনের দিকে তাকানোর চেষ্টা করুন। ব্যাঘ্রাসনের এ অবস্থা থেকে এখন উত্থিত পা দুটো হাঁটু ভেঙে পায়ের পাতা দুটোকে নামিয়ে এনে মাথার তালুতে রাখুন। শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক রেখে ২০সেঃ থেকে ৩০সেঃ এ অবস্থায় থাকুন।
এরপর আস্তে আস্তে পা উঠিয়ে মেঝেতে নামিয়ে আনুন। কিছুক্ষণ শুয়ে বিশ্রাম নিয়ে আসনটি ২/৩ বার অভ্যাস করুন এবং প্রয়োজনমতো শবাসনে বিশ্রাম নিন।
উপকারিতা:
ব্যাঘ্রাসনের সমস্ত উপকার এ আসনে পাওয়া যায়। এ আসন অভ্যাসে হাত, পা, বুক, মেরুদণ্ড, পিঠ, পেট, ঘাড়, কাঁধ, গলা, নিতম্ব, বস্তিপ্রদেশ এবং দেহের মধ্যভাগের খুব ভালো ব্যায়াম হয়। পেটে ও কোমরে অপ্রয়োজনীয় মেদ জমতে পারে না বলে এ আসনে দেহ খুব হালকা হয় এবং দেহের ক্ষিপ্রতা বাড়ে। মেরুদণ্ডের মধ্যে অধিক রক্ত সঞ্চালিত হওয়ায় মেরুদণ্ড অধিক সাবলীল হয় এবং হাত ও কোমরের প্রচণ্ড শক্তি বৃদ্ধি করে।
নিষেধ:
যাদের হৃদযন্ত্রে বা গলদেশের ভেতরে কোন রোগ আছে, রোগ নিরাময় না হওয়া পর্যন্ত তাদের এই আসনটি করা উচিৎ নয়।
[Images: from internet]
…
(চলবে…)
…
পর্ব: [৩৫][**][৩৭]
…
মন্তব্য
বৃশ্চিকাসন জটিল লাগলো। আজকেই প্র্যাকটিস করবো। এরপর থেকে সমস্যায় পড়লে মাথায় হাত না দিয়ে মাথায় পা দিয়ে বসে থাকব
তবে চেষ্টা করতে গিয়ে যদি ঠাশ করে আমার পেটটা ফুটে যায় আপনি দায়ী থাকবেন।
এইসব ব্যাপারে চরম উদাস থাকবেন। তাইলে পেট ফুটে গেলেও টের পাবেন না। আর টের না-পেলে তো সমস্যাই নেই ! হা হা হা !!
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
আপনি পারেন ও বটে বস!
-স্বপ্নাদিষ্ট
=======================
যে জাতি নিজের ভাগ্য নিজে পরিবর্তন করে না, আল্লাহ তার ভাগ্য পরিবর্তন করেন না।
ভাবছিলাম উদাস ভাই আসন নিয়ে একটু দুষ্টু মন্তব্য করবেন
------------------------
[ওয়েবসাইট] [ফেইসবুক] [ফ্লিকার ]
মনের কথা ক্যামনে জানলেন? আসলে আসন নিয়ে কিছু বলতে গিয়ে পরে ভাবলাম রণদা যদি আবার মাইন্ড খায়
ঘটনা হচ্ছে আমাদের ছোটবেলায় বড়দের বইয়ে বিভিন্ন আসনের কথা পড়েছি। দুইনম্বরি সব লেখকরা কি কি যে সব আসনের ছবি আর বর্ণনা যে দিতো। এখন না বুঝি শালা ফটকারা যোগাসনকে ইয়ের আসন বলে চালিয়ে দিতো।
আমি তো পড়ে কান টান লাল করে ভাবতাম একদিন আমিও বড় হয়ে ব্যাঘ্রাসন, বৃশ্চিকাসন ইত্যাদি ইত্যাদি করবো। এখন শবাসন ই ভরসা।
------------------------
[ওয়েবসাইট] [ফেইসবুক] [ফ্লিকার ]
ঠিক ফাহিম ভাই, উদাস ভাইয়ের প্রথম মন্তব্য পড়ে আমি চরম হতাশ!
সবাইকে ধরে ধরে ইয়োগা মেরে দেন
স্কুলে থাকতে ফিজিক্যাল এডুক্যাশন এর ক্লাসে ব্যায়াম করতে হতো। হায় সেই ভয়ানক দিন !! তারপর হতো পরীক্ষা !! আরও ভয়ানক!!
স্যার বলতেনঃ তোমার প্রিয় আসনটি করে দেখাও?
ব্যাস, আর যায় কই, আমিও লম্বা হয়ে শুয়ে পড়তাম। হে হে শবাসন , আমার প্রিয় আসন । একমাত্র এই আসনেই আমি উস্তাদ।
ডাকঘর | ছবিঘর
আপনি নিশ্চিত আপনি সঠিক বানানটা লিখেছেন? শেষের অক্ষরটা অন্য কোন অক্ষর হবে না তো?
****************************************
না না বানান ঠিক আছে, খালি গ আর অন্তস্থ য় অদলবদল হয়ে গেছে।
ভাগ্যিস আমি বুড়ো সচল না
অতএব সাবধান !
****************************************
একলা একলা ইয়োগা করতে একটুও মজা নেই। পাশের জন হাজার বছরের সযত্নে লালিত বেঢপ শরীর নিয়ে এই-সেই আসন করতে গিয়ে যখন চিতপটাং হয়ে পড়ে যায়, তখন পা মুচড়িয়ে নিজের পিঠ নিজে চাপড়াতে কী যে সুখ!
“Peace comes from within. Do not seek it without.” - Gautama Buddha
প্রথম আসনটা আর শেষ থেকে দুই নম্বর আসনটা উল্টায়া দিলে দেখতে আরও ভালো লাগতো! করতে কেমন লাগতো, সেইটা কৈতে পারতেছি না যদিও। তবে, রণ'দা, আপনে এইগুলা না দিয়া কই থাকেন? আমি তো খালি আপনের এই পোস্টগুলাই খুঁজি খালি।
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
বাব্বাহ, ইয়োগা পোস্ট অন্নেক দিন পর!
আপনার লেখাগুলোর অপেক্ষায় থাকি। কম লেখেন আপনি, এটা আমার অভিযোগ। আরেকটা অভিযোগ, এটা ছেলেদের ছবি নেই কেন?
বাসরে, ছবি দেখেই পিলে চমকে গেছে।
----------------
স্বপ্ন হোক শক্তি
নতুন মন্তব্য করুন