…
সপাং করে পিঠের ওপর জালিবেতের তীব্র বাড়িটা পড়তেই শার্টের নিচে চামড়াটা যেন ঝলসে উঠলো অপুর ! অবিশ্বাস্য চোখে রহমান স্যারের এমন ভয়ঙ্কর মূর্তি দেখে শিউড়ে ওঠলো সে। বড় বড় চোখ দুটো ডিমের মতো ঠেলে বেরিয়ে আসছে তার ! চতুর্থ শ্রেণীর ক্লাশ টিচার রহমান স্যারের এমন উগ্র রূপ আগে কি কখনো দেখেছে সে ! কিছুতেই মনে করতে পারলো না।
.
অপু’র মনটা আজ এমনিতেই ভীষণ খারাপ। ঠিক দু’দিন আগেই তার বাবা বিয়ে করে বাসায় একজন নতুন মা এনেছেন। নতুন মা’র মুখটা একবার দেখেই এক অজানা বিস্ময় নিয়ে বাবার মুখের দিকে তাকিয়ে রয়েছিলো সে। বাবা বলছিলেন- ইনি তোমার মা, এখন থেকে তাঁকে মা বলে ডাকবে। সে কোন জবাব দিয়েছিলো কিনা মনে নেই। কিন্তু এবছর কলেজে ভর্তি হওয়া জেদি ভাইয়াটা চোখমুখ লাল করে কোন জবাব না-দিয়ে সামনে থেকে সরে গিয়েছিলো, আর বাবাও ওর চলে যাওয়ার দিকে কিরকম করে যেন তাকাচ্ছিলেন। গতকাল অনেক আলোকসজ্জা করে বাসায় যে অনুষ্ঠানটা হলো, সেখানে কতো লোকজন এলো, খাবার দাবার চলছিলো। সবাই কীরকম হাসি-ঠাট্টা করছিলো, কিন্তু অপু’র শুধুই কান্না পাচ্ছিলো। আর বড় ভাইয়াকেও কোথাও দেখলো না সে।
.
এই উজ্জ্বল আলোয় শুধু শুধু কাঁদতে কি লজ্জা হয় না ! কিন্তু কান্না চেপে রাখলে বুকের ভিতর কোথায় যেন অন্যরকম একটা ভারী ভারী কষ্ট হয়, চোখ দিয়ে শুধু শুধু পানি বেরিয়ে আসে, এরকম কষ্ট আগে সে পায়নি কখনো। এটা কেন হয় তা কাকে যে জিজ্ঞেস করবে তাও বুঝে উঠতে পারলো না। উঠোনে একটা সাজানো উঁচু মঞ্চে নতুন মাকে কিরকম সাজিয়ে যেন বসানো হয়েছে। অনেকগুলো লম্বা লম্বা টেবিল আর চেয়ার বিছিয়ে তাতে সাদা কাপড় পেতে ওখানে যারা খাওয়া দাওয়া করছিলেন, বাবা ঘুরে ঘুরে তা দেখছিলেন, আবার মঞ্চে গিয়ে নতুন মা’র পাশে বসছিলেন। এরকম সাজে বাবাকেও আগে সে কখনো দেখেনি। ভীষণ অচেনা বাবা মনে হচ্ছিলো, আর ভয় ভয় করছিলো তার।
.
গত বছর মায়ের নিথর শরীরটা ঘর থেকে উঠোনে এনে কারা যেন শুইয়ে দিয়েছিলো। তাঁর বুকের উপর আছড়ে পড়ে বড় ভাইয়াটা কী বলে যেন চিৎকার করছিলো। আশ্চর্য ! যে মা একটু উফ শুনলেই কী হয়েছে রে বলে দৌড়ে চলে আসতেন, সেই মা একটু নড়লোও না ! আর পাশেই একটা চেয়ারে বসে লুঙ্গি পরিহিত উদোম বাবা এমন উন্মাদের মতো হাউমাউ করে কাঁদছিলো, জীবনে বাবাকে সেই একবারই কাঁদতে দেখেছে সে। এরা এমন পাগলের মতো এরকম করছিলো কেন অপু এর কিছুই বুঝে ওঠতে পারে নি। কেবল ভয়ঙ্কর অজানা এক আতঙ্কে স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়েছিলো। কে যেন ‘এদিকে এসো বাবা’ বলে অপুকে কোলে তোলে পাশের বাড়িতে নিয়ে গেলো। আর কখনোই মাকে দেখেনি সে। বাড়িটা কিরকম ফাঁকা হয়ে গেলো। এরপর কতো কান্নাকাটি করেছে সে। সবাই বলেছে মা বেড়াতে গেছে, শীগ্গিরই ফিরে আসবে। তাকে না-নিয়ে মা বেড়াতে গেছে শুনে তীব্র অভিমান ভর করেছে তার, কতোদিন ভাত পর্যন্ত খায়নি। কিন্তু মা আর আসে নি। এরপর কিভাবে যেন জেনেছে সে, মা নাকি মারা গেছে। মারা গেলে কেউ ফিরে আসে না, এটাও জেনে গেছে অপু। মা-ও আর আসবে না কখনো।
.
মা’র সাথে অপু যেরকম নেওটা ছিলো, পুলিশের চাকুরে বাবার সাথে তার সেরকম ঘনিষ্ঠতা ছিলো না কখনোই। অধিকাংশ দিনেই বাবাকে সারাদিনই দেখেনি সে। তার ঘুম থেকে ওঠার আগেই বাবা নাকি চলে গেছেন কোথায় অফিসের কাজে, ডিউটিতে। আবার ঘুমোবার আগ পর্যন্তও বাবা অফিস থেকে ফিরেন নি। এটাই ছিলো অপু’র স্বাভাবিক জীবন। মা মারা গিয়েই হঠাৎ সব এলোমেলো হয়ে গেলো। বড় ভাইয়াটাও কীরকম হয়ে গেলো। তার মেজাজেরও কোন আগামাথা রইলো না। এমনিতেই ভাইয়াটা নাকি মেধাবী ও মেজাজি ছিলো। বয়েসে অনেকটা বড় হওয়ায় কথায় কথায় অপু’কে শাসন আর মাস্টারি করার সব দায়িত্ব তাঁর ছিলো। এজন্যে ভাইয়াটাকে একদমই পছন্দ করতো না সে। কিন্তু ভাইয়াটা হঠাৎ কেমন হয়ে যাওয়ায় ওর জন্যেও অপু’র কিরকম একটা কষ্ট হচ্ছে যেন। এ অনুষ্ঠানে ভাইয়াটাকে না-দেখে অপু’র হঠাৎ খুব অভিমানও হতে লাগলো। এদিক ওদিক খুঁজেও তাকে সে কোথাও দেখতে পেলো না। কাকে জিজ্ঞেস করবে সে ?
.
ইচ্ছে হলো বাবাকে জিজ্ঞেস করে। কিন্তু আজকের বাবা যে অন্যরকম বাবা ! তবু এগিয়ে যায় সে। কিন্তু বাবার পাশে ওই নতুন মা-টাকে দেখেই ওর অন্যরকম কষ্টটা বাড়তে থাকে। কারা যেন বলছে- আগের জনের চেয়ে এবারের জন অনেক সুন্দর। শুনেই অপুর মাথায় কী যেন একটা কিলবিল করে উঠে। তার মায়ের মতো এতো সুন্দর মুখ আর একটিও দেখেনি সে। নাকের ডান পাশে ঠোঁটের উপরে কত্তো বড়ো একটা তিল ছিলো মায়ের, ওটার দিকে সে কতোদিন আশ্চর্য হয়ে তাকিয়ে থেকেছে ! এতো সুন্দর তিলও সে দেখেনি আর কারো। রাতের বেলা বারান্দায় চাঁদের আলোতে তাকে কোলে বসিয়ে মা যখন গুনগুন করে রাজকুমার আর রাজকুমারীর গল্প বলতো, কি সুন্দর হয়ে ওঠতো মা’র মুখটা ! মনে হতো কতো দূর থেকে একটা মনকাড়া সুর এসে অপুর চারদিকে ঘুরতে থাকতো আর কেমন একটা ঝিম ধরা ঘুমের মতো তন্দ্রা নেমে আসতো চোখে। মা’র মুখের তিলটাও তখন খিলখিল করে হাসতে থাকতো। ওই চাঁদটাও তার কাছে কী বিচ্ছিরি লাগতো ! আর ওরা বলে কিনা মা সুন্দর ছিলো না ! বুকের ভেতরের ভারী কষ্টটা কিলবিল করে মাথার ভেতরে তার আগুন ধরিয়ে দিলো। আর সহ্য করতে পারলো না সে। হাউমাউ করে কেঁদে উঠেই চিৎকার করতে লাগলো- ওটা পচা ওটা পচা ! পায়ের কাছে পড়ে থাকা ছোট্ট ইটের টুকরোটায় চোখ পড়লো তার, মুহূর্তেই তুলে নিলো হাতে। কিন্তু কিছু বুঝে ওঠার আগেই কে যেন তাকে জড়িয়ে ধরে আড়কোলা করে শূন্যে তুলে ‘বাবার বিয়ে দেখতে নেই বাবু’ বলতে বলতে পাশের বাড়ির দিকে নিয়ে যেতে থাকলো। অপু তখন তার সমস্ত শক্তি দিয়ে চিৎকার করছে- আমাকে ছেড়ে দাও, আমাকে ছেড়ে দাও।
.
পাশের বাড়ির রিনি আপুটা খুব ভালো। একেবারে মা’র মতো আদর করছিলো তাকে। অপু’র কান্না তখন থেমে থেমে গোঙানিতে পরিণত হয়েছে। ভেতর থেকে ভারি কষ্টটা দমকে দমকে বেরিয়ে আসতে চাইছিলো। এবং কখন যে ঘুমিয়ে পড়লো সে বলতে পারে না। সকালে ঘুম ভেঙে অপু বুঝতে পারলো না সে কোথায়। কয়েক মুহূর্ত পর আবিষ্কার করলো রিনি আপু ঠিক মা’র মতোই অপুকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে আছে। খুব ভালো লাগছিলো তার। কী সুন্দর মিষ্টি একটা ঘ্রাণ পাচ্ছে সে। চোখ বড় বড় করে রিনি আপুর ঘুমন্ত মুখের দিকে অপলক চেয়ে থাকলো। এবং হঠাৎ করে তার আবার কষ্ট হতে লাগলো। কাঁদতে ইচ্ছে করছে খুব। ধড়ফড় করে উঠে পড়লো সে, বাসায় যাবে। ততক্ষণে রিনি আপুর ঘুম ভেঙে গেছে।
.
বাসাটাকে একটা ছাড়াবাড়ির মতো লাগছে। গতরাতের অনুষ্ঠানের মালপত্র এখানে ওখানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। টুকটুক করে ভেজানো দরজা ঠেলে ঘরে ঢুকলো। দু’ভাই একসাথে এ ঘরে থাকে। বড় ভাইয়া ঘুমিয়ে আছে এখনো। ডন-বৈঠক করা ভাইয়াটার এ সময়ে ঘুমানোর কথা নয়। ওপাশের রান্নাঘর থেকে কাজের বুয়ার রান্নার ঠুকঠাক শব্দ পাওয়া যাচ্ছে। পড়ার টেবিলের দিকে এগিয়ে গেলো অপু। বই খাতা কলম পেন্সিল গুছিয়ে নিয়ে কাউকে কিছু না-বলেই স্কুলের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়লো।
.
বাসা থেকে খুব দূরে নয় স্কুল। কালিবাড়ি থেকে হাছননগরের দিকে চলে যাওয়া সড়কটার পাশ ঘেষেই স্কুল। গত কয়েকদিন স্কুলে আসেনি অপু। স্কুল শুরুর সময় হয়নি, কোন ছাত্রছাত্রীও আসেনি তখনো। একটু আগেভাগেই চলে এসেছে সে। স্কুলের সাইনবোর্ডটার দিকে চেয়ে রইলো কিছুক্ষণ। কালিবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, সুনামগঞ্জ। স্থাপিত ১৯… ইং। মনে হলো এর আগে গোটা সাইনবোর্ডটা কখনোই পড়া হয় নি তার। ক্লাশরুমগুলো তালাবদ্ধ থাকায় উঁচু বারান্দার একপাশটাতে পা ঝুলিয়ে বসে পড়লো। নিচে মাটিতে একটা বাঁশের পাতলা চ্যাপ্টা কঞ্চির মতো কী যেন পড়ে আছে। এটা দিয়ে অনেককেই খেলতে দেখেছে অপু। কিছু কাঁকড় আর ছোট ছোট পাথরের টুকরোসহ ওটা কুড়িয়ে নিলো। এরপর বারান্দায় বসে এক হাতে বাঁশের কঞ্চির গোড়ায় ধরে অন্যহাতের দু’আঙুলে কঞ্চিটার উপরভাগে কাঁকর বা পাথর টুকরো চেপে ধরে পেছনদিকে কঞ্চিটাকে টেনে বাঁকিয়ে হঠাৎ ছেড়ে দিলো সামান্য দূরের কোন নিশানা লক্ষ্য করে। গুলতি ছোঁড়ার মতোই পাথরটুকরোটা সজোরে ছুটে গেলো সেদিকে। স্কুলের দুষ্টু ছেলেদেরকে এভাবে খেলতে দেখেছে সে। আজ অপুও তা দিয়ে নিশানা করতে লাগলো। সবকটা নিশানা লক্ষ্যভ্রষ্ট হলেও আনমনে করে যেতে থাকলো। হঠাৎ দূর থেকে টুংটাং ঘণ্টার মৃদু শব্দে সচকিত হলো।
.
অপুর বয়সী মলিন চেহারার ছেলেটা হাওয়াই মিঠাই ভর্তি একটা বড় টিনের বাক্স ঝুলিয়ে এদিকে আসছে। বাক্সটার সামনের চওড়া দিকটায় একটা স্বচ্ছ গ্লাস লাগানো। ওখান দিয়ে অনেকগুলো গোল গোল ক্রিকেট বলের সাইজের লাল টুকটুকে হাওয়াই মিঠাই থরে থরে সাজানো দেখা যাচ্ছে। কিছুদিন আগেও এক বুড়ো চাচা স্কুলের আঙিনাটার ওই পাশে একটা বড়ো মতো গোলাকার অদ্ভুত বাক্স নিয়ে বসতো। ওটা ছিলো হাওয়াই মিঠাই বানানোর যন্ত্র। বাক্সটার মধ্যে একটা প্লেটের মতো চাকতির মাঝখানে ছোট্ট বাটির মতো একটা পাত্র ছিলো। আর চাকতিটার নিচে একটা জ্বলন্ত বাতি ছিলো। বাতির আগুন চাকতিটাকে গরম করতো আর ছোট্ট পাত্রটাতে লালরঙের চিনি দিতেই ওগুলো গলতে শুরু করতো। বাক্সটার এক পাশে একটা বাঁকানো হ্যান্ডেল ছিলো। হ্যান্ডেলটা ঘুরালেই চাকতিটা ঘুরতে থাকতো আর চাকতি থেকে লাল লাল রস ছিটকে বাক্সটার গোলাকার দেয়ালে মাকড়সার জালের মতো জাল তৈরি হতে থাকতো। এরপর লোকটি ওই জালটাকে হাত দিয়ে তুলে কিভাবে দুএক প্যাঁচ দিয়েই হাওয়াই মিঠাইয়ের একেকটা বল বানিয়ে ফেলতো। গরম গরম ওই মিঠাই খেতে লোকটির চারপাশে ভীড় জমে যেতো। এই ছেলেটি অবশ্য বানানো হাওয়াই মিঠাই নিয়েই এসছে। ইতোমধ্যে স্কুলে বেশ কিছু ছাত্র-ছাত্রী এসে গেছে এবং এদিক ওদিক দৌড়াদৌড়ি করছে। অন্যদিন হলে অপুও হয়তো তাই করতো। মিঠাই বিক্রেতা ছেলেটিকে দেখে কেউ কেউ এগিয়ে গেলো। হঠাৎ খেয়াল হলো অপুর খুব খিদে পেয়েছে।
.
অপুও এগিয়ে গেলো। কিন্তু তার পকেটে যে কোন টাকা নেই। সে ছেলেটিকে বললো- এই আমাকে দুইটা হাওয়াই মিঠাই দাও, তোমাকে পরে টাকা দেবো। বাকী নাই !- ছেলেটির এমন তাৎক্ষণিক উত্তরে সে থতমত খেয়ে গেলো। আশেপাশের অন্যান্য ছাত্রছাত্রীদের সামনে এভাবে আচানক অপদস্ত হয়ে অপুরও জিদ চেপে বসলো- আমাকে দে বলছি, তোকে পরে টাকা দিয়ে দেবো ! না,- ছেলেটির স্পষ্ট উত্তর। এরপর কী করবে অপু জানে না। ঠাশ করে শব্দ হলো একটা ! ঝনঝন শব্দে গ্লাসটা টুকরো টুকরো হয়ে ভেঙে পড়লো মাটিতে। স্তব্ধ হয়ে গেলো সবাই, অপু নিজেও। কখন যে অপু হাওয়াই মিঠাই বাক্সের ওই গ্লাসটাকে তার বাঁশের কঞ্চি ছোঁড়া পাথরের নিশানা বানিয়ে ফেলেছে সে নিজেই জানে না ! ছেলেটিও উবু হয়ে দেখতে গিয়ে কাত হয়ে পড়া বাক্স থেকে সবকটা হাওয়াই মিঠাই গড়িয়ে নিচের ধূলোমাটিতে পড়ে গেলো। হাউমাউ করে চিৎকার করে ওঠলো ছেলেটি। ভয় পেয়ে অন্য ছাত্র-ছাত্রীরা দৌড়ে ক্লাশরুমে ঢুকে পড়লো। অপুও তাই করলো। ক্লাশরুমের দরজা দিয়ে দেখলো কেবল, ছেলেটি মাটিতে পড়ে যাওয়া কাচের টুকরো আর মিঠাইগুলো কুড়িয়ে নিয়ে কাঁদতে কাঁদতে যেদিক থেকে সে এসেছিলো সেদিকেই চলে গেলো।
.
মনটা ভীষণ খারাপ হয়ে গেলো তার। যা সে পছন্দ করে না সেসবই একে একে ঘটে যাচ্ছে। খুব ভয় হতে লাগলো অপু’র। এবং টের পেলো তার শরীরটা থর থর করে কাঁপছে। ক্লাশ শুরুর ঘণ্টা পড়ে গেছে এবং কাশ টিচার রহমান স্যার ক্লাশে ঢুকে যথারীতি রোল কলও শুরু করেছেন। কিন্তু অপুর কাঁপুনি থামছে না। এর মধ্যেই ক্লাশের বাইরে নারী কণ্ঠের চেচামেচি শুনা গেলো। হেডস্যারের বাজখাই গলার আওয়াজও পাওয়া যাচ্ছে। একটু পরেই অপুদের ক্লাশরুমের দরজায় হেডস্যার এবং তাঁর পেছনে একজন লিকলিকে দুর্বল মহিলা ও সেই ছেলেটিকে দেখা গেলো। ছেলেটি এই রুমটাকেই আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে। হেডস্যারের ইশারায় রহমান স্যারও বেরিয়ে গেলেন। এবং কিছুক্ষণ পর একাই ফিরে এলেন। কিন্তু তাঁর চেহারাটা থমথমে।
.
প্রত্যেক দিন রহমান স্যার ক্লাশে ঢুকে রোল কল সেরে প্রথমেই একটা কৌতুক বলতেন, আর ক্লাশ জুড়ে যখন হাসির রোল পড়ে যেতো তখনই ‘চুপ করো সবাই’ বলে একটা ধমক দিয়ে হট্টগোল থামিয়ে দিতেন। ক্লাশের সবাই বুঝতো ওটা আসলে স্যারের আসল ধমক নয়। তাই কেউ ওই ধমকটাতে ভয় পেতো না, বরং মজাই পেতো। কিন্তু কালচে লকলকে একটা বেত হাতে আজকের থমথমে রহমান স্যারকে কেউ দেখেনি আগে। স্যারের গমগমে কণ্ঠেও কেউ সেই আদরের রেশ খুঁজে পেলো না- ছিঃ ছিঃ ! কে এই কাজ করেছিস বলে ফেল্ ! নইলে আজ সবক’টার চামড়া তুলে ফেলবো ! সারা ক্লাশ জুড়ে পিনপতন নিস্তব্ধতা। সবার চোখে ভয়ার্ত চাউনি। অপু’র শরীরটা বুঝি পাথর হয়ে গেছে ! সেই কাঁপুনিটা নেই, কিন্তু শরীরটা বুঝি একটুও নড়ানোর সাধ্য নেই তার। গলাটা শুকিয়ে কেমন ফাঁকা হয়ে গেছে, কোন শব্দ করার শক্তিও নেই ওতে। চোখের সামনে সবকিছু সাদা হয়ে যাচ্ছে, কতকগুলো জোনাকির ঝিলমিল দেখছে শুধু। কানটা ঝাঁ ঝাঁ করছে, তবুও রহমান স্যারের ভারী গলা শুনা যাচ্ছে- আমি এক থেকে পাঁচ পর্যন্ত গুণবো। কে করেছিস এর মধ্যে যদি না বলিস তাহলে একপাশ থেকে শুরু করবো বেতানো, দেখি না-বলে কিভাবে থাকিস ! বলেই তিনি ডায়াস থেকে নেমে ডানদিকের সামনের বেঞ্চের দিকে আগাতে আগাতে শুরু করলেন গোণা- এ…ক, দু…ই…!
.
স্যারের বলা সংখ্যাগুলো তখন ক্লাশরুমের দেয়ালে প্রতিধ্বনিত হয়ে ভয়ঙ্কর শব্দে গোটা কক্ষে ছড়িয়ে পড়তে লাগলো। তি…ন ! ততক্ষণে ডানদিকের বেঞ্চ থেকে হাউমাউ কান্না আর চিৎকার শুরু হয়ে গেছে- আমি না স্যার… আমি করি নাই স্যার… আমি জানি না স্যার…। গোটা ক্লাশে তখন ভয়ার্ত কান্নার রোল। স্যারের চোখ রাগে কটমট করছে। বাজ পড়ার মতো শব্দ হলো- চা…র ! ততক্ষণে স্যার ডানদিকের বেঞ্চটার কাছে পৌঁছে গেছেন। চিৎকারের শব্দ আরো বেড়ে গেছে তখন। এবং হঠাৎ করে সমস্ত শব্দ থেমে গেলো একসাথে। সারা ক্লাশের ভয়ার্ত চোখ রুমের প্রায় মাঝামাঝি বেঞ্চটাতে আটকে গেছে। উদ্ভ্রান্তের মতো ডান হাতটা উপরে তোলে দাঁড়িয়ে আছে অপু। কিন্তু মুখ দিয়ে তার কোন শব্দ বেরোচ্ছে না।
.
সপাং করে পিঠের ওপর জালিবেতের তীব্র বাড়িটা পড়তেই শার্টের নিচে চামড়াটা যেন ঝলসে উঠলো অপুর ! উহ্… হিইইই… করে আশপাশ থেকে কয়েকটা তীক্ষ্ণ কান্নার শব্দ করলো কারা যেন। কিন্তু অপু’র মুখ দিয়ে কোন শব্দই বেরুলো না। বড় বড় স্থির চোখ দুটো ডিমের মতো ঠেলে বেরিয়ে আসছে। প্রচণ্ড ব্যথা করছে চোখে। তার সামনে এখন আর রহমান স্যার নেই, কোত্থেকে যেন মা’র মুখটা এগিয়ে আসছে তার দিকে। ওইতো তিলটা দেখা যাচ্ছে মা’র। কিন্তু ওটা হাসছে না কেন আজ ! বুকের ভেতরে একটা পাথর গড়িয়ে যাচ্ছে বুঝি। ভেতরের সেই অন্যরকম কষ্টটা লিকলিক করে বাড়তে লাগলো। সপাং করে আরেকটা বাড়ি পড়লো। এবারেরটা পড়লো ঠিক কষ্টগুলোর উপর। মুহূর্তেই একটা বিদ্যুৎ ছড়িয়ে গেলো অপুর সারা শরীরে। এবং চোখ দুটো হঠাৎ করে হালকা হয়ে এলো। জল থৈথৈ চোখে মা’র মুখটা কীকরে যেন রহমান স্যারের মুখ হয়ে গেলো ! কী অদ্ভুত চোখে তাকিয়ে আছেন রহমান স্যার। হঠাৎ করেই স্যার ওকে বুকে জড়িয়ে ধরলেন। এবং বলতে লাগলেন- জানিস কী করেছিস তুই ! ওই ছেলেটা তোরই বয়েসী। তোর মতো তারও তো স্কুলে পড়ার কথা ছিলো। কিন্তু পিতৃহীন ছেলেটাকে দুই গ্রাস ভাতের জন্যে, রুগ্ন মা’টার চিকিৎসার জন্যে সারাটাদিন না-খেয়ে না-দেয়ে ওই ক’টা হাওয়াই মিঠাই বিক্রি করে পয়সা জুটাতে হয়। বিক্রি হলে তবে সামান্য চাল আর ঔষধ নিয়ে ওকে ওর ভাঙা বস্তিঘরটায় ফিরতে হয়। বল তো এখন কী করে খাবে ও, কী করে তার মায়ের ঔষধ কিনবে ? সবই তো নষ্ট করে দিয়েছিস তুই ! তোর তো কতো কিছু আছে, ওর কী আছে বল্ ! …কথাগুলো ধ্বনিত প্রতিধ্বনিত হয়ে তীরের ফলার মতো একে একে বিঁধতে লাগলো অপুর বুকে।
.
কথারা এমন তীব্র আর কষ্টের হতে পারে, অপু কি জানতো আগে ! স্যারের বেতের আঘাতে তো এরকম কষ্ট পায়নি সে ! কিন্তু স্যারের কথাগুলো সে সহ্য করতে পারছে না কেন ! তার বুকের ভেতর থেকে কী যেন দলা পাকিয়ে গলা দিয়ে বেরিয়ে আসতে চাচ্ছে। গোঙানির মতো গো গো শব্দ বেরোতে লাগলো। কিছু বলতে চাচ্ছে সে, কিন্তু বলতে পারছে না। এবং অকস্মাৎ আমার ভুল হয়ে গেছে স্যার… আর কখনো এমন করবো না স্যার … বলতে বলতেই গোটা শরীর ঝাঁকুনি দিয়ে হু হু করে তীব্র এক বাধভাঙা বন্যা নেমে এলো অপুর চোখে-মুখে। শরীরটা তার অস্বাভাবিক রকমে কাঁপছে। স্যার আরো কিছুক্ষণ জড়িয়ে ধরে রাখলেন তাকে। এদিকে ক্লাশ জুড়ে তখন এদিক-ওদিক নাক টানার ফুৎ-ফাৎ শব্দ। অপুর কান্নার বেগ কমে এলে স্যার তাকে ছেড়ে দাঁড়ালেন এবং ক্লাশের সবগুলো মুখের দিকে বার কয়েক তাকিয়েই হুঙ্কার ছাড়লেন- কিরে, সব ক’টার কি সর্দি হলো নাকি ! চুপ, কোন শব্দ নাই ! রহমান স্যারের সেই পুরনো ধমক। এরপরই ‘আয় আমার সাথে’ বলেই অপুকে হাতে ধরে ক্লাশ থেকে বাইরে বেরিয়ে এলেন।
.
বারান্দায় পা দিয়েই অপুর চোখে পড়লো হেডস্যারের পাশে বড় ভাইয়া দাঁড়িয়ে। স্কুলের আঙিনা পেরিয়ে ওদিকে সেই ছেলেটি তার মায়ের হাত ধরে ফিরে যাচ্ছে। একদৃষ্টিতে সে তাকিয়ে রইলো সেদিকেই। বুকের ভেতর আবারো কষ্ট হতে লাগলো। ‘কিরে, কাউকে না বলে-কয়ে বাসা থেকে এভাবে চলে এলি যে !’ বড় ভাইয়ার প্রশ্নে সম্বিৎ ফিরে পেলো অপু। উশকোখুশকো চেহারায় ভাইয়াটা কেমন আশ্চর্য চোখে তাকিয়ে আছে তার দিকে। অপুর হঠাৎ কী যেন হয়ে গেলো, ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে এক করুণ আর্তি বেরিয়ে এলো- ‘আমি রিনি আপুর কাছে যাবো !’ অপুর কথায় চমকে ওঠে ভাইয়ার চোখ দুটো কেমন ছলছল করতে থাকলো।
…
(২৬ মার্চ ২০১২)
…
মন্তব্য
কিছু বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছি।
আপনার গল্পের সবচেয়ে সুন্দর আর সবচেয়ে কষ্টের লাইন কোনটা জানেন?
ধন্যবাদ আপনাকে।
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
খুব সুন্দর! মন্ত্রমুগ্ধের মত পড়ছিলাম। অপুর্ব মনস্তাত্ত্বিকতা ফুটিয়ে তুলেছেন
ধন্যবাদ।
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
অসম্ভব ভাল লেগেছে । অসাধারন , মন ছুঁয়ে যাওয়া ।
অনেক ধন্যবাদ।
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
অসম্ভব ভাল লেগেছে । অসাধারন , মন ছুঁয়ে যাওয়া ।
একটা ছোট বাচ্চার অনেকগুলো অনুভূতির প্রকাশ ঘটালেন, রণ'দা।
মায়ের জন্য কষ্ট, তার সাথে কারো তুলনা করায় অবুঝ কষ্ট, অশান্ত মন নিয়ে না বুঝেই একটা অন্যায় করে ফেলার পর তার উপলব্ধির কষ্ট, মমতামাখা একটা আশ্রয়ের অভাববোধের কষ্ট, সেইসাথে আরো অনেক কিছু...
দুর্দান্ত লিখেছেন!
...........................
একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা
ঘটনাগুলো প্রকৃতই কাল্পনিক নয় বলেই হয়তো কষ্টগুলোর অস্তিত্ব জানান দিতে পেরেছি। কিন্তু তা ছাড়িয়ে যে প্রশ্নটা নিয়ে দ্বিধায় ভুগছি, অভিজ্ঞতাটা ওই বয়সের হলেও শেষপর্যন্ত কিশোর-গল্প হিসেবে উপযোগী করতে পারলাম কিনা !
আপনি তো ওইরকম শিশু-কিশোরদের আবহেই অনেকটা সময় কাটান, তাই আপনার পরবর্তী মতামত নিশ্চয়ই আমার উপলব্ধির জন্য সহায়ক হবে।
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
দ্বিধার একেবারেই কিছু নেই রণ'দা।
কিশোর-গল্প হিসেবেও চমৎকার হয়েছে। আমি কয়েক বছর আগে ক্লাস নাইনে মাতৃহীন একটা ছেলেকে পেয়েছিলাম। নষ্ট হতে হতেও শেষশেষ সামলে নিতে দেখে স্বস্তি পেয়েছিলাম অনেক বেশি।
মন আর হাত খুলে লিখে যান।
...........................
একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা
আশ্বস্ত করার জন্য ধন্যবাদ।
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
...........................
একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা
অপুগুলো এরকমই হয়
------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
খুব ভাল লাগলো, একটু মন খারাপও ..
মাঝে মাঝে মনটা একটু খারাপ না-হলে ভালো থাকার মাহাত্ম্যটা কী করে বুঝবো বলেন !
ধন্যবাদ আপনাকে।
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
আমার আম্মুর খুব ছোটবেলাতেই মা মারা যান। মা না থাকলে পৃথিবীটা অনেক নিষ্ঠুর হয়ে যায়, আম্মুর গল্প শুনে আমার তাই মনে হয়েছে।শুধুমাত্র বাবা মা হীন সন্তানরাই বুঝে যাদের বাবা মা দুজনই বেচে আছে তারা কতটা সৌভাগ্যবান। আপনার গল্পটা খুব চমৎকার হয়েছে ।
খুবই সত্য উপলব্ধি। মন্তব্যে সহমত।
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
চমৎকার !
facebook
ধন্যবাদ অণু।
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
লেখাটি পড়ে মনে হলো, মন্তব্য করবার যোগ্যতাও আমার নেই।
আপনার মন্তব্যে আমার সীমাবদ্ধতাই প্রকাশ হলো মনে হলো! হা হা হা !!
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
আরে না না। নিজের সীমাবদ্ধতার ধারনা পেলাম।
একটা সময় বাংলা টাইপ করতাম খুব লেখালিখির জন্য। চোখের পলকে দ্রুত টাইপ করতে পারতাম। এখন অভ্যেস নেই। তাই কমেন্ট করতে গেলে আলসেমি পেয়ে বসে; সংক্ষেপে কানাগলি পৌছে যাবার প্রচেষ্ঠা। একটা সময় কোন বানান ই ভুল হতো না। এখন হবে অনেক।অনভ্যস্ততা একপ্রকার স্মৃতিচারন-ই বোধহয়।
আমি আমার ছোট্ট সন্তানকে যখন চাঁদ উপহার দেব, তাকে চাঁদের কলঙ্কের কথা বলবোনা । কারন, একদিন সে জেনে যাবে। আমি তাকে শুধু কোমলতাটুকুই দেই। সূর্য টাকে দিতে হলেও তাকে গল্পের গাছে চড়িয়ে তার প্রখর আলোটুকুও কোমল করে তুলতে দ্বিধা করবো না। চাঁদ আর সূর্য - দুই কোলবালিশের মাঝে শুয়ে থাক ফুটফুটে ফুলের মতো আমার সন্তান। যখন সে বড় হবে্, রূক্ষতা টুকু নিজের সুবিধামতো সময়ে জেনে নেবে।
হয়তো অবাক হচ্ছেন, কমেন্ট করতে এসে কি আবোল-তাবোল বলছি। যাকগে - কেন বল্লাম সেই কথা গল্প প্রসঙ্গে আসি-
রনদীপম দা@ আপনার গল্পে একটা জায়গায় - " আগের জনের চেয়ে এবারের জন আরো সুন্দর" - এ বাক্যের মাঝে ফুঁটে ওঠা আমাদের মন-মানসিকতার কলঙ্ক, আমরা যে কত সস্তা ভাবে কিছু বিচার করতে শিখি, আমাদের পরিবেশ ও পর-আবেশ ও তাদের বিষ, এই বিষটুকু ছোটদের গল্পে না থাকলে গল্পের খুব বেশি ক্ষতি হয়তো হতো না। বারবার চোখ ওই লাইনে আটকে গেছে (বারবার বলতে ২বার, জাষ্ট ২বার পড়েছি লেখাটা অনূভুতিটা আহেতুক কিনা ধরার জন্যে)।
লেখাটা কেমন লেগেছে সেটা নাইবা বল্লাম। লেখক মাত্রেই বুঝে নিতে সক্ষম, পাঠক তার ভালো লাগা খেকে কমেন্ট দিল না খারাপ লাগা খেকে।
আর এতা কথা বলায় রিরক্ত হবেন না এটা আমি নিশ্চিন্তে আশা করতে পারি। আপনার লেখা পড়ছি, এবার কমেন্ট করলাম। সুতরাং, আপনিযে সহনশীল, সে ব্যাপারে আমার সিদ্ধান্ত ভুল হবে না।
ভালো থাকবেন ও শুভকামনা জানবেন।
cresida
আপনার চমৎকার মন্তব্যে প্রথমেই স্বাগত জানাই। লেখালেখির জগতে বস্তুত আমরা প্রত্যেকেই প্রথমত পাঠক। এরপর অন্যকিছু। এরই ধারাবাহিকতায় লেখক হিসেবে যখন রঙ্গমঞ্চে দাঁড়াই, একজন অনুভূতিপ্রবণ পাঠকের নিজস্ব উপলব্ধিটা মিথষ্ক্রিয়ার মাধ্যমে খুব নিবিড়ভাবে পাওয়ার মোক্ষম সুযোগটা করে দিয়েছে বর্তমান ইন্টারনেট প্রযুক্তি। সে সৌভাগ্যেই আপনার একান্ত মানবিক বাৎসল্যমাখা অনুভূতিটা জানার সুযোগ হয়েছে। একজন লেখক মূলত এটাই চায়। আর যখন শিশুর মনোজগত নিয়ে কাজ করি তখন আমি তো ভীষণরকম চাই। তাই প্রথমেই আপনাকে কৃতজ্ঞতা জানাই।
আপনি আসলে একটা সত্য গল্পের কী-পয়েন্টটাকেই চিহ্নিত করেছেন এবং তা উদ্ধৃত করেছেন। একটা শিশুর (বা কিশোরই বলবো, যেহেতু গল্পটা একটা কিশোর গল্প) সমগ্র অস্তিত্ব জুড়ে যে অবিকল্প সত্তাটা তাকে ভীষণভাবে আবৃত করে রাখে, মা। তার সামগ্রিক ক্রিয়াকাণ্ডে মায়ের এই প্রভাব কতোটা বিপুল ও বিস্তৃত থাকে তা গড্ডালিকায় ভেসে যাওয়া আমরা আসলে বুঝি না বা সচেতন উপলব্ধিতে রাখি না হয়তো। নইলে মা-হারা একটা মানসিক আশ্রয়হীন শিশুর কষ্টের তীব্রতা না-বুঝে পরিবেশ পরিস্থিতি উপেক্ষা করে একটা মানবিক শিশুর অস্তিত্ব অস্বীকার করে এমন অর্বাচীন মন্তব্য ও কাজ (আগের জনের চেয়ে এবারের জন আরো সুন্দর) আমরা করি কী করে ! এই গল্পটা যে ওই মন্তব্যেরই মনস্তাত্ত্বিক ধারাবাহিকতা ও এর পরিণতি তা আপনি বুঝতে পেরেছেন ঠিকই। গল্পটা আসলে একটা মানবিক শিশুর বা কিশোরের শেকড়-ছেঁড়া কষ্টের করুণ আর্তি। এই আর্তিটুকু যদি আগেই বুঝে ফেলতাম আমরা, তাহলে হয়তো এ গল্পটার জন্ম হতো না। আমাদের পরিবেশ পরিস্থিতি সমাজ আমাদের শারীরিক মানসিক চাহিদার কাছে একটা শিশুর বুকের গভীরের অব্যক্ত কষ্টটা চাপা পড়ে যায় খুব সহজেই। কারণ আমরা তো আমাদের মতোই ভাবি পৃথিবীটাকে। ওই শিশুর মতো নয়। এ গল্প তো ওই শিশুর চোখে আমাদের দেখা আসলে। আমাদের কিরকম দেখার কথা ছিলো একটা শিশুর উপলব্ধি থেকে বোঝার চেষ্টা করা।
তাই হয়তো গুরুতর যে প্রশ্নটি উঁকি দিচ্ছে, এটা কি আদৌ কোন কিশোর গল্প ? না কি বড়দের গল্প ? আপনার মন্তব্যে এই প্রশ্নটি সুপ্তভাবে হলেও অপ্রকাশ্য নয়। এবং এটা যে কেবল আপনারই প্রশ্ন তা নয়। আরো কেউ কেউ অন্য ফোরামেও (যেখানে লেখাটার লিংক দেয়া হয়েছে) এ প্রশ্নটি করেছেন আমাকে। তার চেয়েও বড় কথা, গল্পটি লিখতে লিখতে ঝাপসা চোখে কোনো সুদূর অতীত থেকে নিজের কাছে আমি নিজেই প্রশ্নিত হয়েছি বারবার। এর জবাব আমি কী দেবো ! এই অসভ্য সমাজে একটি নিষ্পাপ শিশু যে পরিস্থিতির শিকার হচ্ছে প্রতিনিয়ত, তারই সমবয়েসি আরেকটি মানবিক শিশুর কি সে অধিকার নেই ওই শিশুর কষ্টটুকু জানার ? সূর্যের তীব্র তেজে আরেকটি শিশু যখন সত্যি সত্যি পুড়ে যাচ্ছে, আমার শিশুটিকে সেই তেজে না-ই পুড়ালাম, কিন্তু রোদের তেজটুকু অন্তত তাকে জানালে কি তার মানবিক বোধ সংহত হবে না কি আহত হবে, এ মীমাংসাটা নিষ্পন্নের জন্যেই তো এ গল্প।
আপনার প্রশ্নের যথাযথ উত্তর আমার জানা নেই। তবে সেই শিশুটি বড় হয়েও যখন ভেতরের কষ্টটাকে লালন করেও শেষপর্যন্ত নষ্ট হয়ে যায় নি, বরং প্রখর হয়েছে তার অনুভূতি, মানবিক আবেগ আর মানুষের প্রতি সহমর্মিতাবোধ, তখন ধরেই নিলাম যে- কিছু কিছু কষ্ট মানুষকে সত্যি মানুষ বানিয়ে তোলে। আমাদের প্রত্যের বুকের ভেতরে একেকটি কিশোর বাস করে। তাই আমরা আমাদের সন্তানদেরকে কষ্ট পেতে দেবো না এরকম না-ভেবে অন্যরকম ভাবতে পারি- কষ্টের গরলটুকু দেবো না, তবে কষ্টের অমিয়টা পান করিয়ে আগামীর জন্যে কষ্টসহ করে তুলি না-হয়।
প্রাণখুলে নির্দ্বিধায় নিজস্ব মতামত জানাবেন আমার যে কোন পোস্টে। পক্ষাপক্ষ বিবেচনা না-করেই লেখক হিসেবে এটাকে আমি অনেক বড় পাওয়া হিসেবেই বিবেচনা করি। আর আপনার মন্তব্যই আমাকে কানে কানে জানিয়ে দিয়েছে যে আমার কথায় আপনি কষ্ট পাবেন না। তাই গতরাতে লেখা উৎবচনটা আপনার জন্যে উদ্ধৃত করে দিলাম-
'
ভালো থাকবেন।
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
কেন যেন মনে হলো প্রয়োজনের তুলনায় গল্পটার দৈর্ঘ একটু বড় হয়ে গেছে।
খিদে পেলে হাওয়াই মিঠাই খাবে কেন? ওটাতে হাওয়া ছাড়া তো আর কিছু নেই !
তবে বটম লাইন হলো
নিলয়দা@ শিশুদের ক্ষুধা টা যে পেটের চেয়ে মনের বেশি।
আবারও
@নিলয় নন্দী, আপনার অনুযোগ স্বাগত মনে মেনে নিয়েই ভাবছি এটা আমারই সীমাবদ্ধতা যে, এর চেয়ে ছোট পরিসরে একটা মানসিক আশ্রয়হীন শিশুমনের এই অচিন জগতটাকে তুলে ধরতে পারি নি আমি।
আর শিশুর ক্ষুধা বা এরকম কিছু অনুভূতি মনে হয় আমাদের বড়দের দৃষ্টিভঙ্গি প্রসূত কোন যুক্তি মেনে চলে না। তারপরেও এটা হয়তো খেয়াল করেছেন যে, অপু কিন্তু তার মানসিক অস্থিরতায় কাউকে কিছু না বলে-কয়ে বাসা থেকে একটু বেশি আগেই বেরিয়ে পড়েছিলো স্কুলের উদ্দেশ্যে। ওখানেও তার একটা উত্তর খুঁজলে পেয়ে যেতেও পারেন।
তবে আমরা বড়রা যে-যাই ভাবি, একজন শিশুপাঠকের মনে গল্পটা কীভাবে নাড়া দেবে সেটাই হয়তো গল্পটার যথার্থতা নিরূপন করবে। আমি সে সময়টুকুর অপেক্ষা করছি।
ভালো থাকবেন। মন্তব্যের জন্যে অনেক অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
'অনুযোগ' 'সীমাবদ্ধতা' এসব শব্দ ব্যবহার করে আমাকে অপরাধী করছেন কিন্তু !
গল্পটা ঠিক শিশুপাঠ্য নয়, কিশোরপাঠ্য তাই তো?
এখানে অপরাধী এসব কথা আসছে কেন ! হা হা হা ! পাঠক হিসেবে আপনাদের মতামত অবশ্যই আমার কাম্য। নইলে আমার লেখাকে আমি যাচাই করবো কিভাবে !! পাঠকের কাঠগড়ায় দাঁড়ানোকে আমি লেখকের মহত্তম সুযোগ হিসেবেই দেখি। অতএব মতামত প্রকাশে স্বাগত সবসময়।
আর গল্পটি আসলেই কিশোর গল্প। শিশুপাঠ্য তো স্রেফ কল্পনায় উড়াল দেয়ার একটা প্রতিবদ্ধকতামুক্ত আকাশ তৈরি করা। কিন্তু কিশোরের মনোজগতে তখন একটা যুক্তি ও আবেগের জগত তৈরি হয়ে যায়। তৈরি হয় কিছু জটিলতাও। অনেকেই শুধু গল্প বলে যান। আমি হয়তো সেখানে তার মনোজগতটাকে নিয়ে একটু নাড়াচাড়া করি, এই যা। সাফল্য-ব্যর্থতা সময়ের হাতেই দিয়ে রাখলাম !
মন্তব্যের জন্য আবারো ধন্যবাদ আপনাকে।
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
রনদীপম দা এর মেইল এড্রেস টা চাচ্ছি। এখানে হয়ত বলা যেত। তবে সচলায়তনের মডারেটর সেটা প্রকাশ করবে কিনা সন্দেহ। ওনাদের সাহিত্যের উপর মডারেশনের যে খড়গ, তা নিয়ে আমার ক্ষোভ অবশ্যই আছে।তাই মেইলে কিছু কথা আদান-প্রদান করতাম।
ধন্যবাদ।
cresida
ভাই ক্রেসিডা, এমনও তো হতে পারে যে আপনি সাহিত্যের নামে সচলে যা পোস্ট করে যাচ্ছেন, সেগুলো নিতান্ত অখাদ্য বলেই মডারেশনের গণ্ডি পার হচ্ছে না? মডারেটরদের নিয়ে প্যানপ্যান না করে ভালো কিছু লিখে পোস্ট করুন, নিশ্চয়ই প্রকাশিত হবে। আপনি হাগামুতা যা লিখবেন সেটাই সাহিত্য, আর প্রকাশিত না হলে মডারেটরের খড়্গের বদনাম, এ তো খুবই বালখিল্য আ্র্রচরণ। কবিতা লিখে সচলে জায়গা করে নেয়া একটা অত্যন্ত শক্ত কাজ, মেইক শিওর ইউ আর আপ টু দ্যাট স্ট্যান্ডার্ড। ধন্যবাদ।
ক্রেসিডা, আপনার আগ্রহকে সম্মান জানিয়েই বলি, যে বক্তব্য সবার সামনে দিতে পারবো না, সেটা আড়ালে করলে কতটুকু মাহাত্ম্য থাকে ! আর মেইল এড্রেস চাওয়ার প্রসঙ্গ ধরে সচল-মডারেটরদের প্রতি সন্দেহ বা অনাস্থা প্রকাশ করে সেটা কি সঙ্কুচিত করা হয়ে গেলো না ! আমি কি সচল পরিবারের বাইরে ?
আপনার হয়তো জানার সুযোগ হযনি, আমার ক্ষেত্রেই বলি, এতোদিন ধরে সচলে ব্লগিং করি কিন্তু কারো সাথে সচল বিষয়ে আজ পর্যন্ত পরোক্ষ অবস্থানে অর্থাৎ মেইলে কোন আলোচনা করার প্রয়োজন হয়নি। আমরা একে অন্যের সাথে কঠোর তর্ক-বিতর্ক সমালোচনা করলেও প্রকাশ্যেই তা করেছি এবং করে থাকি। এতে আমাদের পারস্পরিক সম্বন্ধ বা সহাবস্থানে কোন আঁচর পড়েনি। তাই অন্তত এই কিশোর উপযোগী পোস্টটাতে অনাকাঙ্ক্ষিত যে পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়ে গেছে, তাতে আমার কষ্ট লাগছে খুব। একজন কিশোর পাঠকের জন্য এই পেজটাকে কি শেষপর্যন্ত অনুকূলে রাখতে পারলাম আমরা ? আমি অত্যন্ত দুঃখ প্রকাশ করছি যে অন্তত এই প্রেক্ষাপটে আপনার অনুরোধটিও আমার দ্বারা রাখা সম্ভব হলো না। আমাকে মাফ করবেন।
আর সব সচল ও পাঠকের কাছে সনির্বন্ধ অনুরোধ রইলো, তাঁরা যেন অন্তত এটা ভুলে না-যান যে এই পেজটাতে বেশ কিছু কিশোর পাঠককে তার অভিভাবকরা এখানে পড়াতে নিয়ে আসেন। আমাদের প্রতি সেই কিশোরদের অভিব্যক্তি কী হবে তাহলে !!
অনেক ধন্যবাদ। আশা করছি এই অর্বাচীন বিষয়টি এখানে আর প্রলম্বিত হবে না। ভালো থাকুন সবাই।
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
রনদীপম দা@ ব্যাপারটা শুধু একজন পাঠক লেখকের যোগাযোগ হিবেসে নিন। অবশ্যই আমি আপনাকে কোন অভিযোগ বা অনুযোগ এর জন্যে মেইল এড্রেস চাইনি। অন্তত, আমি চেষ্টা করি কোন লেখার ভিতরে ঢুকে পড়তে, বা সেটাকে নিয়ে কোন মন্তব্য করতে। শুধু "ভালো লাগলো" এই দায়সারা ভাব নিয়ে কাজ সারি না। সো, অবশ্যই আমি কোন অভিযোগ এর ভান্ডার এর জন্য চাচ্ছি না। আমি জানি না, আপনার কেন এই ধারনা হলো। আপনার মেইল এড্রেস চেয়ে সেটা যদি সচলায়তনের কোন রুলস ব্রেক এর মধ্যে পড়ে, সেটা আমার অজ্ঞতা; ইচ্ছাকৃত না কোন ভাবেই। দুখিঃত, আপনাকে বিব্রত করায়।
cresida
আমি সেই স্ট্যার্ন্ডড টাই জানতে চাচ্ছি। আমি এও শিগর, যে আপনার ওই "হাগামুতা" শব্দটি কোন প্রকারেই কোন স্ট্যান্ডার্ডে পরে না।যেহেতু পরে না, সেহেতু আপনার সাজেশন দেওয়াটাও সাজে না।ইচ্ছে করলেই আপনি ওই শব্দটা ওমিট করতে পারতেন।
এনিওয়ে, ধন্যবাদ।
রনদীপমদা এর উওরের অপেক্ষায় রইলাম
cresida
কবিতার স্ট্যান্ডার্ডটা জানতে চাচ্ছেন কই? আপনি রোজই মন্তব্যের লেজে "সচলের মডু কবিতার উপর খড়্গহস্ত", "সচলের মডু সাহিত্যের ওপর খড়্গহস্ত" টাইপ ঘ্যানঘ্যান করে যাচ্ছেন। আর হাগামুতা পড়ে দৈনিক কবিদের স্ট্যান্ডার্ডে। ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও তাই উহ্য রাখা যায় না শব্দটা। রোজ মলমূত্র পোস্ট না করে কবিতার পেছনে একটু সময় দিন, সম্ভব হলে কবিতা পড়ুন আরো, ভেবেচিন্তে লিখুন, নিশ্চয়ই প্রকাশিত হবে।
প্রথমত, আপনার "রোজই" শব্দটার প্রতি আপত্তি। কোথাও আমি রোজই আপত্তি জানাইনি।
দ্বিতীয়ত, কোন কবিতা বা লেখা বা সাহিত্যের মানদন্ড কোন মডারেশনর দ্বারা নয়, পাঠক ই নির্ধারন করেন। সো, ভুল ধারনা থেকে বের হয়ে আসেন। যে সচলায়তনের মডারেশনের গন্ডি পেরুলেই সেটা শিল্পউত্তীর্ন লেখা।বইমেলায় টাকা দিয়ে অনেক নামীদামি লেখকের বই কিনেও সেটা নিয়ে আর বাসায় ফিরতে ইচ্ছে হয় না। ইচ্ছে হয়, ডাষ্টবিনে ফেলে আসি।
ভেবে চিন্তে লেখার কথা বলছেন? আপনাদের অনেককেই দেখেছি একটা দীর্ঘ লেখা এখানে প্রকাশিত হবার পর ২মিনিটের মাথায় অনেকেই কমেন্ট করেন। আপনাদের এই শ্পিডি রিডিং এ আমি মুগ্ধ সেখানে চিন্তা-ভাবনা এর
অবকাশ থাকে নাকি আপনাদের রেগুলার হবার তীব্র প্রচেষ্ট থাকে সেটা অনুমেয়।
তারপরও আপনি "হাগামুতা" শব্দটি ব্যবহার করার পিছনে যুক্তি দিচ্ছেন। আবারো দিবেন। এর বেশি অবশ্য আমি আশা ও করি না।
cresida
একটু কষ্ট করে সচলায়তনের মডারেটরদেরও পাঠক হিসেবে স্বীকৃতি দিন। তারা গত পৌনে পাঁচ বছর ধরে হাজার হাজার লেখা পড়ে পড়ে প্রকাশ বা অপ্রকাশ করছেন। এই হাজার হাজার লেখার মধ্যে হাগামুতা কোবতেও আছে। যদি সেগুলো প্রকাশ করে পাঠকের মানদণ্ডে দণ্ডিত হওয়ার সুযোগ দেয়া হতো, আজ আপনি সচলে লিখতে বা অনুযোগ করতে আসতেন না। সেই মলস্রোতে সচল তলিয়ে যেতো বহু আগেই। সচলায়তনে আপনি আগ্রহ করে লিখতে আসছেন কারণ এখানে মলভাণ্ড থেকে উপচে পড়া কোবতে প্রকাশিত হয় না। তবে কালেভদ্রে মডারেশন স্লিপ হতে পারে। সে দায় পুরোপুরিই মডারেটরদের।
আমাদের অনেকেই লেখা প্রকাশিত হওয়ার আগেই লেখাটা পড়ার সুযোগ পান। কারণ তারা মডারেটর। সে কারণে পুরো লেখাটা পড়ে তারা প্রকাশ করার কয়েক সেকেণ্ডের মাথায় একটা ভেবেচিন্তে লেখা মন্তব্য দিতে পারেন। রেগুলার হবার "তীব্র প্রচেষ্টা" জিনিসটা কি, আমি জানি না। একটু বুঝিয়ে বলুন দেখি, এই "রেগুলারিটি" কে কীভাবে বজায় রাখেন।
আমি দৈনিক কবিদের হাগামুতা কোবতেকে হাগামুতা কোবতে বলে যেতে চাই। এই অপ্রিয় কাজটা আর কেউ করেন না। বাধ্য হয়ে আমাকেই করতে হয়। দৈনিক কবিদের মলস্রোত থেকে সচলকে রক্ষা করার দায়িত্বটা কাউকে না কাউকে তো নিতে হবে। আপনিও চাইলে আমার সাথে যোগ দিতে পারেন।
আর হা, "খামখেয়ালির" মতো অখাদ্য লেখা যেখানে প্রকাশিত হতে পারে, সেখানে আমার অন্য লেখা নিয়ে আমি কনফিডেন্ট বলেই হয়তো প্রশ্নটা তোলা। মূলতঃ এমনো হতে পারে আমার পোষ্টিং ওয়েটাই ভুল। যেমনটা ভুল আপনার কমেন্ট এর স্ট্যাইল।
cresida
একটু কষ্ট করে ঐ অখাদ্য লেখাটার লিঙ্ক দিতে পারেন কি?
সব দৈনিক কবিই নিজেকে নেরুদা ভাবে, আর নিজের মলমূত্র নিয়ে কনফিডেন্ট থাকে। এই কনফিডেন্সের সাথে একটু কোয়ালিটি যোগ করতে পারলেই দেখবেন "স্ট্যাইল" পাল্টে গেছে, কবিতাও সমাদৃত হচ্ছে।
http://www.sachalayatan.com/guest_writer/43748
নিন, দিলাম লিঙ্ক।
এটা প্রকাশিত হয়েছে, কাজেই আপনার বাকি কবিতাও প্রকাশিত হতে বাধ্য, এমন কোনো শর্ত কি রয়েছে?
হিমুদা@ শর্ত এর ব্যাপার না। মূলত আমার উদ্দেশ্য ছিল জানা যে কি ফলো করলে লেখা হয়তো উপরে যাবে। আমি বেশিরভাগ সময়ে লেখা ইমেজ হিসাবে দেই। সেটাও একসেপটেবল কিনা, সেটাও আমার অজানা। আর হ্যাঁ, খামখেয়ালি যদি ছাপা হতে পারে, অন্য লেখা নয় কেন? এমনতো না যে, অশ্লীলতার চূড়ান্ত বর্হিপ্রকাশ।যদি চূড়ান্ত অশ্লীলতা না থাকে, তাহলে সেটা পাঠকের হাতেই ছেড়ে দেয়া উচিৎ।
এনিওয়ে
ভালো থাকবেন।
cresida
ইমেজ আকারে তো কখনোই গ্রহণযোগ্য নয়, আপনি একটু সময় দিলেই ফোনেটিকে লেখা আয়ত্বে আনতে পারবেন। অন্তত মন্তব্য যখন করতে পারছেন। আর কবিতার প্রকাশযোগ্যতার শর্ত একটাই, কবিতাটা যেন কবিতা হয়ে উঠতে পারে। পুনরাবৃত্ত চর্বিতচর্বণ একঘেয়ে কবিতা প্রকাশিত না হলেই সচলের জন্যে মঙ্গল। এমন কিছু লিখুন যেটা মানুষের মনে ছাপ ফেলবে, পাঠকেরা সে কবিতা পুনরায় ব্যবহার করার উৎসাহ পাবেন, একজন অন্যকে পড়ে শোনাতে পারবেন।
বলতে ভুলে গিয়েছি, আপনার উপরোক্ত একটা লাইন এর কথা, "সচলায়তনে লিখতে আসতেন না।......" হ্যাঁ, আসতাম না। লেখা ছাপানোটাও আমার জন্য জরুরী না। সেজন্য আমার অন্য প্লাটফর্ম অবশ্যই আছে। দেখার ইচ্ছে ছিল, অর্ঘ্য এর মতো লেখক বা কবি কেন সচলায়তনে লেখা দেয় না। সেটার উত্তর ও পাওয়া হয়ে গেছে। আর ঐযে, আপনাদের কুইক রিডিং আর কুইক কমেন্ট, সেটা থেকে আমার আপনাদের ভেবে চিন্তে লেখা দেবার ব্যাপারটা অনুমেয় সহজেই। লেখক ই শুধু লিখবে, তাইনা? পাঠকের তো কোন দায়বদ্ধতা নেই। একটা লেখা প্রকাশের সাথে সাথে বুড়ো আঙ্গুল দেখানো, বা "ভালো/দারুন" বলে নিজের উপস্থিতি জানান দেয়াটাই মূল উদ্দেশ্য।
ফরগেট ইট। আপনি "হাগামুতা" ঘাটাঘাটি করার গুরুদায়িত্ব কাধে নিয়েছেন। সেটা নিয়ে ঘাটাঘাটি করুন। আমি এই থ্রেড এ যতটুকু বলার বলেছি । সো, এখানেই শেষ।
শুভকামনা।
cresida
আপনার লেখা পড়ে কি দুই ঘন্টা ধ্যান করে তারপরে মন্তব্য করতে হবে নাকি? আর কে কত দ্রুত পড়তে পারে বা পড়ে হৃদয়ঙ্গম করতে পারে, সেটা আপনি নিজের সাথে তুলনা করে কেন বিচার করছেন?
পাঠককে কীভাবে মন্তব্য করতে হবে, সেটা ভবিষ্যতে কোবতে হাগার পর নিচে টিউটোরিয়াল আকারে লিখে দিয়েন।
আর ফরগেট ইট। অন্য প্ল্যাটফর্ম আছে যখন, হাগামুতা কোবতে নিয়ে ওখানেই পড়ে থাকুন।
এই গল্পটা আমার চমৎকার লাগল| কেউ একজন মন্তব্যে বলেছেন দেখলাম যে "আগের জনের চেয়ে এবারের জন অনেক সুন্দর" জাতীয় আবিলতা ছোটদের গল্পে আসা উচিৎ না| কিন্তু আমি এটা মনে করি না| ছোটরা মাঝেমধ্যেই বড়দের এইসব অসুন্দর কথাবার্তার মধ্যে ঢুকে পড়তে বাধ্য হয়| আমি নিজে আট বছরে বাবাকে হারি ঐ আট নয় বছরের মধ্যেই এমন এমন সব জ্ঞান অর্জন করেছিলাম --- সে আর কহতব্য নয়| কথা হল, আমার মা তো আগলে আগলেই রাখতে চেয়েছেন আমাদের| কিন্তু আমাদের চারপাশের পৃথিবী তো আর আদর্শ পৃথিবী নয়|
আমি নিশ্চিত কিছু না বাচ্চা বা অনেক বড়রাও ঠিক নিজেদের অপুর সাথে আইডেন্টিফাই করতে পারবে| সেটাই এই গল্পটার মস্ত শক্তি|
-----------------------------------------------------
"চিলেকোঠার দরজা ভাঙা, পাল্লা উধাও
রোদ ঢুকেছে চোরের মত, গঞ্জনা দাও'
শিশুর নিজস্ব সুন্দর জগতটায় আমাদের নোংরা পৃথিবীটা ঢুকে যে তাকে অবরুদ্ধ করে ফেলে ভেঙে ফেলে তাকে, সেটা আমরা বুঝি না। কিন্তু ওই শিশুটি তার জগত হারিয়ে যে এক আশ্রয়হারা ভয়ঙ্কর কষ্টের জগততে হুমড়ি খেয়ে পড়ে সেটা কেমন, তার চোখে ওটাই দেখার চেষ্টা করেছি।
আপনি ঠিকই বলেছেন বাচ্চা বা বড়রা অনেকেই অপুর মধ্যে নিজেকে খুঁজে পাবে । এই বিশ্বাসটা সংহত হয়েছে লিখতে গিয়ে আমার নিজেকেই মাঝে মাঝে ঝাপসা হয়ে খেই হারিয়ে ফেলার কারণে।
আপনার পিতৃহারা মনের কষ্টটা হয়তো আপনারই। আমি কেবল সহমর্মিতা জানাচ্ছি, কারণ আমি হয়তো ওটা উপলব্ধি করছি।
ভালো থাকবেন। চমৎকার মন্তব্যটার জন্য অনেক ধন্যবাদ।
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
আসা উচিৎ না, এরকম বলা হয়নি, যেটা বলেছি, তা হলো, যদি না আসতো- তবে গল্পের খুব বেশি ক্ষতি হতো কিনা।
ধন্যবাদ
ক্রেসিডা
অনেক দিন এরকম চমৎকার কিশোর গল্প পড়া হয়নি। আপনার লেখার ধরণটা খুব ভাল লাগল। অপুর কষ্টটা আমাকেও ছুঁয়ে গেল।
অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
আমার বাবা মারা যান আমার ৯ বছর বয়সে। সেভাবে কখনও অভাব বোধ করতে দেননি মা এবং অন্যরা; কিন্তু তারপরেও একটা কষ্টবোধ এখনও আছেই। অপুর যায়গায় যেন নিজেকেই দেখতে পেলাম।
অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।
আমি নিজেকে অপুর জায়গায় রেখেই তো গল্পটিকে পূর্ণতা দেয়ার অক্ষম চেষ্টা করে গেছি।
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
থিমটা খুবই ভাল। এটাকে আরও হৃদয়গ্রাহী করে লেখা যেত বলে আমার মনে হয়েছে। এ লেখা পড়ে পাঠক হিসেবে আমার চোখ ঝাপসা হয়ে যাবার কথা কিন্তু তা হয়নি এ কারণেই এটা বলা। যাহোক, ধন্যবাদ আপনাকে।
তাৎপর্যপূর্ণ মন্তব্য নিঃসন্দেহে ! কিন্তু আমাকে যে মাথায় রাখতে হয়েছে এটা একটা কিশোর গল্প এবং এর প্রকৃত পাঠক ওই কিশোররাই ! সব শ্রেণীর পাঠকের মনে একইরকম দাগ কাটাতে না পারাটা অবশ্যই আমার দারুণ সীমাবদ্ধতা ! ওই দুর্দান্ত কাজটা আমার দ্বারা সম্ভব হলে সবচেয়ে বেশি তৃপ্ত হতাম আমিই ! এজন্যেই হয়তো লিখে গেলেও সবাই আসলে লেখক হতে পারে না শেষপর্যন্ত। এই না-পারার কষ্ট তো আছেই !
নির্দ্বিধ মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
দাদা, আপনার লেখাটা আমাকে একটা ছোট্ট মুখের কথা মনে করিয়ে দিলো, যদিও প্রতি মুহূর্তেই সে আমার মন জুড়ে আছে। আশা করি সেই ছোট্ট মানুষটাকে একদিন অনেক বড় মনের মানুষ করে তুলতে পারবো। আমাদের জন্য সুস্থ থাকুন...... আর লিখতে থাকুন
অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।
আপনার আশা পূর্ণ হোক, স্বপ্ন সফল হোক, শুভকামনা রইলো। ভালো থাকবেন।
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
দুর্দান্ত লাগল!
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
ধন্যবাদ ।
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
গল্পটি ভাল লাগলো৷ খুবই ভাল লাগলো৷
কিন্তু গল্পটি সম্পর্কে আমার অভিমত হলো এটি ছোটদের নিয়ে বড়দের জন্য একটি ভাল লেখা৷ ছোটদের জন্য লেখা এটি নয়৷ ছোট করে বলতে গেলে ছোটদের চিন্তার কিংবা ভাবনার যে প্রকরণ আছে এই গল্পটি সেভাবে রচিত হয় নি৷ কাহিনী কিংবা বিষয়বস্তু নয় যেভাবে উপস্থাপনা করা হয়েছে সেই কারনে৷ এর আবহটি বোঝার জন্য বড় হতে হবে- এই জন্যই এটি ছোটদের নয়৷
আমাদের দেশে কেন জানি এই ভুলটা হয়ে যায়, আমার মনে হয়৷
সিনেমায় যেমন, এমিলের গোয়েন্দা বাহিনী ছাড়া ছোটদের কোন ছবিই আমি ঐ অর্থে মনে করতে পারছি না (কেউ যদি দীপু নাম্বার টু নিয়ে জোর করেন তবে হয়তো আমতা আমতা করে মেনে নেবো...) যদিও শিশুতোষ চলচ্চিত্র নামে বেশ কয়েকটি ছবিই আমরা পেয়েছি৷
ধন্যবাদ৷ সুন্দর গল্পটির জন্য৷
শেষের বাক্যটি - গল্পটিকে অনেকদিন মনে রাখাবে আমাকে৷
যে সিদ্ধান্তহীনতাটা ভেতরে ভেতরে পোষণ করে যাচ্ছি, সেটা আবারো উস্কে দিলেন এই চমৎকার মন্তব্যটি দিয়ে, হা হা হা !
অনেক ধন্যবাদ আপনাকে। ভালো থাকবেন।
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
নতুন মন্তব্য করুন