(আগের পর্বের পর---)
---
(৭)
যদি ব্যুৎপত্তিগত ইতিহাসে দৃষ্টি নিবদ্ধ করা হয়, এখানে অস্পষ্টতার কোনো সুযোগ নেই যে, সত্য উপলব্ধির দার্শনিক প্রপঞ্চে ভারতীয় দর্শন-চিন্তার ক্রমবিকাশে প্রধানত দুটি পরস্পর বিপরীত ধারা লক্ষ্য করা যায়। একটি হলো আস্তিক ধারা, অন্যটি নাস্তিকপন্থি। বর্তমান প্রচলিত অর্থে যাঁরা ঈশ্বরে বিশ্বাস করেন তাঁদেরকে আস্তিক এবং যাঁরা ঈশ্বরে বিশ্বাস করেন না তাঁদেরকে নাস্তিক বলা হলেও প্রাচীন ভারতীয় দর্শনে আস্তিক ও নাস্তিক শব্দদুটি বর্তমান অর্থে নয়, বরং এক বিশেষ অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে।
এক্ষেত্রে প্রাচীন ভারতীয় ব্যাকরণের সবচেয়ে বিখ্যাত গ্রন্থ পাণিনির ‘অষ্টাধ্যায়ী’র সংশ্লিষ্ট ব্যাকরণসূত্র উল্লেখ করা যেতে পারে। পাণিনির প্রাচীনত্ব নিয়ে দ্বিমত না-থাকলেও তার আনুমানিক সময়কাল ধরা হয় খ্রীস্টপূর্ব ৬০০-৪০০ এর মধ্যে। পাণিনি তাঁর ব্যাকরণসূত্রে ‘অস্তি নাস্তি দ্বিষ্টং মতিঃ’-এর মাধ্যমে দুটি বিপরীত মত-গোষ্ঠির উদ্ধৃতি টেনেছেন। এই সূত্রানুসারে ‘দ্বিষ্টং পরলোকো অস্তি’ অর্থাৎ পরলোক আছে এরূপ বুদ্ধি বিশিষ্ট ব্যক্তিকে আস্তিক এবং ‘দ্বিষ্টং পরলোকো নাস্তি’ অর্থাৎ পরলোক নাই এরূপ বুদ্ধি বিশিষ্ট ব্যক্তিকে নাস্তিক বলা হয়েছে।
পাণিনি সূত্রের ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে ব্যাকরণকার পতঞ্জলি (অন্যুন খ্রীস্টপূর্ব ১৫০) তাঁর ‘মহাভাষ্য’ গ্রন্থে ‘আস্তিক’ ও ‘নাস্তিক’ শব্দের সংজ্ঞা সম্বন্ধে কিছুটা আলোকপাত করেছেন। পতঞ্জলির মতে ‘অস্তি’ বা ‘আছে’ এই ধারণার বশবর্তী লোকেরা আস্তিক এবং এর বিপরীত ‘ন অস্তি’ বা ‘নাই’ এই ধারণায় প্রভাবিত লোকেরা নাস্তিক পদের দ্বারা অভিধেয় (মহাভাষ্য ৪/৪/১)। অর্থাৎ আস্তিকেরা যে বিশেষ বস্তু বা ধারণার অস্তিত্ব স্বীকার করেন, সেগুলিকে স্বীকৃতি না-দেয়ার জন্য নাস্তিকেরা স্বতন্ত্র এক গোষ্ঠির অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন। পতঞ্জলির ‘মহাভাষ্যে’ এসবের বিস্তৃত বিবরণ না থাকলেও অন্যান্য প্রাচীন গ্রন্থে নাস্তিক শব্দের ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে আরো কিছু আভাস পাওয়া যায়। এক্ষেত্রে মহাভারত থেকে উদাহরণ দেয়া যেতে পারে। মহাভারতের (আনুমানিক খ্রীস্টপূর্ব ৪০০ থেকে ৪০০ খ্রীস্টাব্দ) বিভিন্ন স্থানে নাস্তিকদের দ্বারা অস্বীকৃত বিভিন্ন ধারণার সঙ্গে বৈদিক সমর্থনকে যুক্ত করার প্রয়াস দেখা যায়। যেমন-
বেদবাদাপবিদ্ধাংস্তু তান্ বিদ্ধি ভূশনাস্তিকান্।
ন হি বেদোক্তমুৎসৃজ্য বিপ্রঃ সর্ব্বেষু কর্ম্মসু।। (মহাভারত : ১২/১২/৫)।
দেবযানেন নাকস্য পৃষ্ঠমাপ্নোতি ভারত!
অত্যাশ্রমানয়ং সর্ব্বানিত্যাহুর্বেদনিশ্চয়াঃ।। (মহাভারত : ১২/১২/৬)।
ব্রাহ্মণাঃ শ্র“তিসম্পন্নাস্তান্নিবোধ নরাধিপ!
বিত্তানি ধর্ম্মলব্ধানি ক্রতুমুখ্যেস্ববাসৃজন্ ।। (মহাভারত : ১২/১২/৭)।
অর্থাৎ : সম্ভব থাকিলেও যাহারা কর্ম্ম ত্যাগ করিয়া সন্ন্যাস অবলম্বন করে, আপনি তাহাদিগকে বেদবাক্য পরিত্যাগী অত্যন্ত নাস্তিক বলিয়া অবগত হউন। ৫।
ভরতনন্দন! বেদজ্ঞ ব্রাহ্মণ সমস্ত কর্ম্মের মধ্যে বেদোক্ত কর্ম্ম পরিত্যাগ করিয়া দেবযানে স্বর্গে যাইতে পারেন না। বিশেষতঃ বেদবিশ্বাসী লোকেরা এই গৃহস্থাশ্রমকে সমস্ত আশ্রমের মধ্যে শ্রেষ্ঠ বলিয়া থাকেন। ৬।
নরনাথ! যে সকল ব্রাহ্মণ বেদজ্ঞানসম্পন্ন, আপনি তাঁহাদিগকে জানিয়া রাখুন। যাঁহারা ন্যায়ার্জিত ধন উত্তম যজ্ঞে বিতরণ করিয়াছেন, তাঁহারাই বেদজ্ঞান-সম্পন্ন। ৭।
এছাড়া প্রাচীন গ্রন্থ মনুস্মৃতিও (আনুমানিক খ্রীস্টপূর্ব ২০০ থেকে ২০০ খ্রীস্টাব্দ) প্রকৃষ্ট উদাহরণ হতে পারে। সেখানে স্পষ্ট দেখা যায়, মনুর মতে বেদনিন্দুকেরাই ‘নাস্তিক’ আখ্যায় অভিহিত হওয়ার যোগ্য। যেমন-
যোহবমন্যেত তে মূলে হেতুশাস্ত্রাশ্রয়াদ্ দ্বিজঃ।
স সাধুভি র্বহিষ্কার্যো নাস্তিকো বেদনিন্দকঃ।। ২ / ১১।। (মনুসংহিতা)।
অর্থাৎ : যে দ্বিজ হেতুশাস্ত্র অর্থাৎ অসৎ-তর্ককে অবলম্বন ক’রে ধর্মের মূলস্বরূপ এই শাস্ত্রদ্বয়ের (শ্রুতি ও স্মৃতির) প্রাধান্য অস্বীকার করে (বা অনাদর করে), সাধু ব্যক্তিদের কর্তব্য হবে- তাকে সকল কর্তব্য কর্ম এবং সমাজ থেকে বহিষ্কৃত করা (অর্থাৎ অপাংক্তেয় ক’রে রাখা)। কারণ, সেই ব্যক্তি বেদের নিন্দাকারী, অতএব নাস্তিক।
বেদবিরোধী নাস্তিকদের কার্যকলাপে বৈদিক ঐতিহ্যের ধারক বাহক মনুর সমর্থন না থাকাই যে স্বাভাবিক তা মনুসংহিতার বিভিন্ন স্থানে নাস্তিকদের নির্দ্বিধ নিন্দা করার মধ্যেই পরিস্ফুট হয়। যেমন-
অনপেক্ষিতমর্যাদং নাস্তিকং বিপ্রলুম্পকম্ ।
অরক্ষিতারমত্তারং নৃপং বিদ্যাদধোগতিম্ ।। ৮/৩০৯।। (মনুসংহিতা)।
অর্থাৎ : যে রাজা শাস্ত্রবিধি ও শিষ্টাচারের উপর প্রতিষ্ঠিত ধর্মব্যবস্থা রক্ষা করেন না, কিন্তু নাস্তিক এবং অযথা অন্যায় অর্থদণ্ডাদির দ্বারা যিনি প্রজাবর্গের ধন হরণ করেন, যিনি প্রজাগণকে রক্ষা করেন না, অথচ যিনি সেই প্রজাদের দ্রব্য সমূহের অত্তা অর্থাৎ ভোগকারী, এইরকম রাজা নরকে পতিত হয়েছেন বলে বুঝতে হবে।
উল্লেখ্য, মনুসংহিতার টীকাকার মেধাতিথি উপরিউক্ত শ্লোকে উল্লিখিত ‘নাস্তিক’ শব্দটির ব্যাখ্যা করেছেন এভাবে-
‘নাস্তি পরলোকা নাস্তি দত্তং নাস্তি হুতমিতি নাস্তিকঃ।’ (মনুসংহিতা)।
অর্থাৎ : পরলোক বলে কিছু নেই, যাগ-দান-হোম এগুলিও কিছু নয়- এইরকম কথা যিনি বলেন এবং এই বিশ্বাসে যিনি চলেন তিনি নাস্তিক।
অতএব, দেখা যাচ্ছে, বৈদিক ঐতিহ্যের প্রভাবপুষ্ট সকলের কাছে ‘নাস্তিক’ সংজ্ঞাটি আসলে বৈদিক প্রাধান্যের বিরোধীদের অর্থেই ব্যবহার্য। ভারতীয় দর্শনগুলিকে ‘আস্তিক’ ও ‘নাস্তিক’ এই দুটি সুনির্দিষ্ট বিভাগে চিহ্নিত করার মূলেও রয়েছে এই বিশেষ দৃষ্টিভঙ্গিরই প্রেরণা। অর্থাৎ যাঁরা বেদের সিদ্ধান্ত প্রমাণরূপে গ্রহণ করেন তাঁদেরকে আস্তিক এবং যাঁরা বেদের সিদ্ধান্তকে অভ্রান্তরূপে গ্রহণ করেন না তাঁদেরকে নাস্তিক সম্প্রদায় বলা হয়। তাই বৌদ্ধ ও জৈনগণ পরলোক স্বীকার করলেও বেদনিন্দা করে নাস্তিক আখ্যায় অভিহিত হয়েছে। আর চার্বাকরা বেদ ও পরলোক উভয়ই অস্বীকার করে একেবারে নাস্তিক শিরোমণি আখ্যায় ভূষিত হয়েছে। তাই হয়তো চতুর্দশ শতকের বেদান্তবাদী দার্শনিক মাধবাচার্য্য তাঁর ‘সর্বদর্শনসংগ্রহ’ গ্রন্থে উদ্ধৃত করেন- ‘নাস্তিকশিরোমণিনা চার্বাকেণ’। অপরদিকে বেদ এবং উপনিষদানুসারী ষড়দর্শন যথা- সাংখ্য, যোগ, ন্যায়, বৈশেষিক, মীমাংসা ও বেদান্ত হলো সম্পূর্ণই বেদবিহিত আস্তিক দর্শন। যদিও মীমাংসকরা অবিসংবাদিতভাবেই কট্টর নিরীশ্বরবাদী।
(৮)
নিজের বেলায় আঠারোআনার হিসাবটা যে সর্বকালেই প্রযোজ্য ছিলো এবং আছে, তা হয়তো আমাদের আর বোঝার বাকি থাকে না। দর্শন জগতে লোকায়ত-চার্বাক-মতের তীব্র বিরোধিতায় বাদবাকি সবগুলো আস্তিক-নাস্তিক দর্শনই যে সবসময় একাট্টা ছিলেন তা ভিন্ন কারণে প্রসিদ্ধ। কিন্তু বাহ্যবস্তুবাদী ন্যায়-বৈশেষিকদের সাথে মীমাংসকরা মিলেমিশে চরম ভাববাদী বৌদ্ধ ও বেদান্ত-মতকে যুক্তিতর্কের মাধ্যমে যে হারে তুলোধূনো করার চেষ্টা করেছেন দর্শনের জ্ঞান-তাত্ত্বিক ইতিহাসে তাও উপেক্ষণীয় নয়। তবে বেদবিহিত নয় বলে বেদনিন্দুক বৌদ্ধ নাস্তিকদের বিরোধিতার ক্ষেত্রে এসে আস্তিক দর্শনগুলোর আক্রমণ যে কেবল জ্ঞানজগতেই সীমাবদ্ধ ছিলো তা বলা যাবে না। আস্তিকদের নিজেদের মধ্যে যতো জ্ঞান-তাত্ত্বিক অন্তর্দ্বন্দ্বই থাকুক না কেন, সেখানে ঈশ্বরে বিশ্বাস বা অবিশ্বাস কোন বিবেচ্য বিষয়ই নয়, মূল সংঘাতটা মূলতই বৈদিক শাস্ত্রগ্রন্থ বেদের বিরোধিতাকারী বৌদ্ধদের প্রতি আক্রমণাত্মক অবস্থান গ্রহণটাই বোধ করি নিজেদের অনিবার্য দায় হিসেবেই মনে করা হয়েছিলো। নইলে মৌলিক দার্শনিক দৃষ্টিভঙ্গিগত বিচারে বৌদ্ধ ও বেদান্ত দর্শনের মধ্যে বিদ্বজ্জনদের বিবেচনায় তেমন একটা পার্থক্য পরিলক্ষিত না হলেও প্রাচীন ভারতীয় ক্ষমতাকেন্দ্রিক ইতিহাসে ব্রাহ্মণ্যবাদীদের হাতে বৌদ্ধদের নিপীড়িত হওয়ার ইতিহাসের অন্য কোন যুক্তিসঙ্গত ব্যাখ্যা মেলে না।
তার মানে কী দাঁড়ালো ? বর্তমান আর প্রাচীন উভয় প্রেক্ষাপটেই একটা চিরায়ত সমস্যার অভিন্ন রূপ দেখতে পাচ্ছি আমরা। বেদবিহিত হলেই আস্তিক, নইলে নাস্তিক। তবে কি যুক্তিটা এই যে, নিজের শাস্ত্রগ্রন্থ বা বিশ্বাসই চূড়ান্ত আস্তিকতা, আর তাতে অবিশ্বাস বা বিরোধিতাই নাস্তিকতা ? তার সাথে অবশ্য আরেকটি বিষয়কে অনিবার্যরূপেই যুক্ত করতে হয়, ক্ষমতা। কারণ ক্ষমতাবানরাই মূলত নিজের সাপেক্ষে অন্যের অবস্থানটাকে নিয়ন্ত্রিত করেন। সমাজ-রাষ্ট্রে আইন প্রণীত হয় মূলত ক্ষমতাবানদেরই অনুকূলে সমাজ-শাসনের সুবিধার্থে। ফলে নিজের বিশ্বাসই সত্য-বিশ্বাস, আর নিজের সাপেক্ষে ভিন্ন বিশ্বাস হয় অসত্য অপ-বিশ্বাস !
সত্যনিষ্টতার এই আপেক্ষিক অবস্থান স্বীকার করে নিলে কি তা-ই স্বীকার করতে হয় না যে, নিজের ধর্মবিশ্বাসে যিনি আস্তিক, তাঁর নিজের সাপেক্ষে ভিন্ন-বিশ্বাসীরা সবাই নাস্তিক ? এবং এই যুক্তি-ন্যায় অনুযায়ী কেবল নিজের বিশ্বাসটাই যদি আস্তিকতার মানদন্ড হিসেবে বিবেচ্য হয়, তাহলে আপেক্ষিক অবস্থানে দাঁড়িয়ে জগতে শেষপর্যন্ত আর একটিও পরম আস্তিক সত্তা কি খুঁজে পাওয়া যাবে আদৌ ? আপেক্ষিকতার এই ঘোরপ্যাঁচে পড়ে শেষতক সবাই কি নিজ নিজ বিশ্বাসের ভিত্তিতে একে অন্যের সাপেক্ষে পরস্পর নাস্তিক হয়ে যাই না !
যুক্তির শৃঙ্খলা মানলে চেতনাগত অবস্থানে তাই হবার কথা। এরকম বিভ্রান্তিকর দ্বন্দ্বে কোন স্থির সত্য প্রতিষ্ঠিত হয় না বলে নিরন্তর আপেক্ষিক-অবস্থান পরিবর্তনের কারণে এটি আসলে একটি অস্থির অবস্থাই। আর তখন না-চাইলেও একটি প্রভাবকের উপস্থিতি নিয়ন্ত্রকের ভূমিকায় হাজির হয়েই যায়, যার নাম ক্ষমতা। অর্থাৎ যে বিশ্বাসী গোষ্ঠি যেকোনোভাবেই ক্ষমতাবান বলে বিবেচিত হবে, তার মাধ্যমেই নিয়ন্ত্রিত হয়ে যায় প্রেক্ষাপট। এবং তখন ক্ষমতাবানের বিশ্বাসটিই সত্য হিসেবে চেপে বসে অন্যান্য বিশ্বাসের উপর। ফলে প্রশ্ন, যুক্তি আর মুক্তচিন্তার অবলুপ্তির সাথে জ্ঞান-তাত্ত্বিক পরিমন্ডলটাও হারিয়ে যায় তখন। যেহেতু যুক্তি আর বিশ্বাস একে অন্যের পরিপূরক হয় না কখনোই। তখন কি যোগ্য সে লোকটি আর অবশিষ্ট থাকবেন যিনি অষ্টাদশ-শতকের ফরাসি দার্শনিক ভলতেয়ারের সেই বিখ্যাত উক্তিটি আওড়াতে আসবেন- ‘তুমি যা বলছো তার সাথে আমি একমত নই, কিন্তু তোমার এ কথা বলার অধিকারের জন্য প্রয়োজনে আমি জীবন দেবো।’
যুক্তিশীল হলে সতর্ক পাঠক নিশ্চয়ই স্ব-স্ব বিবেচনাবোধ থেকেই হিসাব কষে বের করে ফেলতে পারেন, আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞানমুখী সমাজ-প্রগতির সম্মুখগামী ধারায় পরিত্যক্ত প্রাচীন আস্তিক-নাস্তিক দ্বন্দ্বটি কেন আজ একান্তই অস্বাভাবিক, বিভ্রান্তিকর ও বেখাপ্পাও বটে। তারপরও এটিকে কৃত্রিমভাবে আরোপ করার উদ্দেশ্য যে কোনভাবেই সুবিবেচনাপ্রসূত নয়, বরং আমাদের এবং আগামী প্রজন্ম-প্রজন্মান্তরের সমাজ-বিকাশে এগিয়ে যাবার পথে এক বিষবৃক্ষের দেয়াল বসানোর অপচেষ্টা মাত্র, তা বুঝেও যারা চুপ থেকে না-বোঝার ভান করবো তাদের জন্য পরিশেষে হয়তো সেই বিখ্যাত পঙক্তিগুলোই অবশিষ্ট থাকবে-
‘যখন ওরা প্রথমে কমিউনিস্টদের জন্য
এসেছিলো,
আমি কোন কথা বলিনি, কারণ আমি কমিউনিস্ট নই।
তারপর যখন ওরা ট্রেড ইউনিয়নের
লোকগুলোকে ধরে নিয়ে গেল,
আমি নীরব ছিলাম, কারণ আমি শ্রমিক নই।
তারপর ওরা যখন ফিরে এসে ইহুদিদের গ্যাস চেম্বারে
ভরে মারতে,
আমি তখনও চুপ করে ছিলাম, কারণ
আমি ইহুদি নই।
আবারও আসলো ওরা ক্যাথলিকদের
ধরে নিয়ে যেতে, আমি টু শব্দটিও উচ্চারণ
করিনি, কারণ আমি ক্যাথলিক নই।
শেষবার ওরা ফিরে এলো আমাকে ধরে নিয়ে যেতে,
আমার পক্ষে কেউ কোন কথা বললো না, কারণ,
কথা বলার মতো তখন আর কেউ বেঁচে ছিলো না।’
মন্তব্য
শেষের অপেক্ষায় ছিলাম। ধন্যবাদ রণদা, আরেকটা চমৎকার সিরিজের জন্য।
অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...
বহু বহুকাল পর মনে হয় আপনাকে পেলাম !
মিস করি খুব !!
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
পুরো সিরিজটাই তথ্যবহুল এবং সুবিন্যাস্ত।
------------------------------------------------------------------
মাভৈ, রাতের আঁধার গভীর যত ভোর ততই সন্নিকটে জেনো।
তথ্যগুলো সবার জানার দরকার বলে মনে করেছি।
ধন্যবাদ।
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
আপনাকেও বুড়ো আঙুল !
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
পুরোটাই পড়লাম। পড়তে পড়তে খেই হারিয়ে ফেলছি বটে। তাই আবার আগের টুকু পড়ে নিতে হচ্ছে। এই লেখায় নিজস্ব মতামত দেবার মত আমার কোন কথা নেই, তবে.....
আসলে যে কোন অন্যায়ে না-দেখার ভান করে মুখ বুজে থাকার এটাই বোধকরি চূড়ান্ত পরিণতি !
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
এখানে ১২/১২/৬ দিয়ে কী বোঝায়?
দ্বিতীয় লাইনে কি ! চিহ্নটা সঠিক? যদ্দুর জানি এই চিহ্নটি ইংরেজি থেকে আসা। নাকি ভুল জানি?
নীড়পাতা.কম ব্লগকুঠি
মহাভারতে মোট পর্ব হলো আঠারোটা। প্রতিটা পর্বেরই একেকটা নাম আছে । এখানে প্রথম ১২ দিয়ে দ্বাদশ পর্ব বোঝানো হচ্ছে। এই পর্বের নাম হলো বন পর্ব। দ্বিতীয় ১২ হচ্ছে দ্বাদশ অধ্যায়। আর তৃতীয় ৬ দিয়ে শ্লোকসংখ্যা বোঝানো হয়। সংস্কৃত কাব্য ছন্দে প্রতিটা শ্লোক দুই চরণে রচিত। প্রথম চরণের শেষে এক দাড়ি এবং দ্বিতীয় চরণের শেষে দুই দাড়ি ব্যবহার করা হতো প্রাচীন সাহিত্যে।
তাই মহাভারত- ১২/১২/৬ দিয়ে বোঝানো হয়েছে মহাভারতের দ্বাদশ পর্বের দ্বাদশ অধ্যায়ের ষষ্ঠ শ্লোক।
আর ! চিহ্নটা ঠিকই আছে, তবে শেষে একটা দাড়ি দেয়া হয়নি। এটা আমার স্বেচ্ছাকৃতভাবেই ঘটেছে। তবে বিস্ময়বোধক চিহ্নটা ইংরেজি থেকে আসলেও আমি কিন্তু বেদ মহাভারত মনুসংহিতা ইত্যাদি অন্যান্য গ্রন্থেও শ্লোকের মধ্যে এর ব্যাপক ব্যবহার দেখতে পাই। হতে পারে একালের (বিদ্যাসাগর উত্তর) ছাপা মাধ্যমে এটি যুক্ত হয়েছে, এবং তা অবশ্যই সংশ্লিষ্ট মাননীয় সম্পাদকের অনুমতিক্রমেই হয়েছে।
অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
বিশাল ধন্যবাদ
facebook
আপনাকেও বুড়ো আঙুল
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
চমৎকার সিরিজের চমৎকার সমাপ্তিরেখা, রণ'দা।
_____________________________________________________________________
বরং দ্বিমত হও, আস্থা রাখো দ্বিতীয় বিদ্যায়।
অনেক ধন্যবাদ আপনাকে। তবে সমাপ্তি বলে কিছু নেই, দর্শনও তা স্বীকার করে না। হা হা হা !
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
একাধিক দিন ধরে সময় নিয়ে কয়েক বার করে পড়লাম। ছোটবেলার তারিয়ে তারিয়ে, চেটে চেটে জিলিপি খাওয়ার মত!
এর পর তো সমাদর করতে লাগে।
আমার ছোট মাপের সামর্থ্যে এই এল।
নির্ভুল বিশ্বাসের অব্যর্থ যুক্তিতে
*** *** ***
জিরাফের সাথে দেখা হলে জানাল সে -
মহান তিনি আছেন ঐ উপরের ডালে।
একমাত্র জিরাফই তাঁকে দেখতে পায়, আর তাই -
তিনি ভালবাসেন শুধু জিরাফকে
আর যারা জিরাফের কথা শোনে তাদেরকে। আর তাই -
বাকিদের থাকার কোন মানেই নেই।
চিনি মুখে ডেঁয়ো পিঁপড়ে শপথ নিলে
তিনি আছেন চিনির মধ্যে, আর তাই -
তিনি শুধু চিনি মুখে ডেঁয়ো পিঁপড়ে-কেই
ভালবাসেন। আর তাই -
বাকিদের কামড়ে অস্থির করে দিলে
কোনো দোষ নেই।
পোড়া কাঠ লিখে দিল তিনি থাকেন
আগুনের মধ্যে, আর তাই -
যারা তা মানে না, তাদের
যত তাড়াতাড়ি সম্ভব
পুড়িয়ে ফেলা দরকার কারণ,
একমাত্র তবেই তারা তাঁর
দেখা পেয়ে যাবে।
কোলা ব্যাঙ বলল - ... ...
হাঙর ঘোষণা দিল - ... ...
কাক কা কা করে জানিয়ে দিল - ... ...
সব্বাই সাফ জানিয়ে দিল যে,
পরিস্কার দেখা যাচ্ছে -
সে ছাড়া,
আর যারা তাকেই বিশ্বাস করে তারা ছাড়া,
বাকিদের থাকার কোন অর্থই হয় না।
এই পরিস্কার যুক্তিতে
তারা সবাই বাকি সবাইকে
নিজের নিজের তাঁর কাছে পাঠিয়ে দিল।
*** *** ***
- একলহমা, জুন ৪, ২০১৩
বাহ্ ! অভিনন্দন আপনাকে !
আমি যা বোঝাতে প্রায় এগারো হাজার শব্দ ব্যবহার করলাম, আপনি তো তা-ই একটি কবিতার মাধ্যমে বুঝিয়ে দিলেন !
কিন্তু আপনার উদ্ধৃত তারিখটা কি জুন না জুলাই হবে !
অনেক অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
কি যে বলেন! আপনার অভিনন্দন পেয়ে অবশ্য খুব ভাল লেগেছে। তবে কবিতাটার যেটুকু ভাল তার পুরো কৃতিত্ব আপনার, মানবেন্দ্র নাথ বন্দ্যোপাধ্যায় আর মিরোস্লাভ হোলুব সাহেবের। দুর্বলতার দায় আমার।
আপনার এগার হাজার শব্দের লেখাটি এক অসামান্য এবং অত্যন্ত প্রয়োজনীয়, সাহসী দলিল।
আপনার পরের লেখার সাগ্রহ অপেক্ষায় আছি।
হ্যাঁ উদ্ধৃত তারিখটা জুলাই হবে। কিন্তু, আমি তো ওটা ঠিক করতে পারব না! আপনার পক্ষে সম্ভব হবে ওটা ঠিক করে দেওয়া? দিতে পারলে খুব ভাল লাগবে।
- একলহমা
দেরিতে ধন্যবাদ। হা হা হা !
তবে তারিখ সংশোধনের এখতিয়ার তো আমারো নেই !
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
নতুন মন্তব্য করুন