[ ভাষাশহিদ দিবস একুশে ফেব্রুয়ারি এলেই এই নির্মল ভোরে আমাদের বাঙালি মন গুমড়ে ওঠে নিবিড় শোকের ছায়ায়। আমরা শ্রদ্ধায় স্মরণ করি, স্মৃতি-তর্পণ করি ভাষা শহিদদের প্রতি। স্মৃতির মিনারের বেদিতে শ্রদ্ধা জানাই নিজের নিজের মতো করে। এই শ্রদ্ধার রূপ কেমন? আজ থেকে তেত্রিশ বছর আগের উদ্ভিন্ন তারুণ্যে সেই শ্রদ্ধার রূপটুকু গাথা ছিলো অনেক বেশি কাচা আবেগের আতিশয্যে হয়তো। তবুও সেই আবেগ যতো কাঁচা বা তরলই হোক, তখনও হয়তো এতোটা কৃত্রিমতা আমাদেরকে আক্রান্ত করতে পারেনি। কবিতা প্রয়াসের নামে এই ছোট্ট কাঁচা পঙক্তিই তার নমুনা হয়তো !]
…
| শোকার্ত |
রণদীপম বসু
।
আমায় ফিরিয়ে নাও
তোমার ক্রান্তিহীন জঠরে হে গর্ভধারিণী,
তোমার পবিত্র-স্তনে
আমার এ তৃষ্ণার্ত ঠোঁট ভেজাবার আগেই
যেন জন্মমাত্র শোকার্ত আমি
নবজাত কান্নার বদলে মুক্ত-প্রাণে
গাইতে পারি-
আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি
আমি কি ভুলিতে পারি…!
…
(১৯৮২)
মন্তব্য
আসুক, এমন দিন। একদিন হবেও এমন দিন। থাকবে না আর অন্ধকার, আর কান্না। সমবেত স্বরে গেয়ে উঠবে বাংলাদেশ একুশের গান।
কাঁচা হয়েছে কিনা জানিনা, তবে অকৃত্রিম আবেগ, আর অনুভূতির প্রাবল্যে ভাস্বর এই ক্ষুদ্র কাব্য! একুশের প্রথম প্রহরে ভীষন উদ্দীপ্ত করল, রণদা!
অন্ধকূপ
ধন্যবাদ।
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
ভালো লাগলো।
স্বয়ম
ধন্যবাদ।
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
ভাল লাগল৷৷ আচ্ছা "জঠর" শব্দের অর্থ কী?
'জঠর' শব্দের আভিধানিক অর্থ হচ্ছে- উদর, পাকস্থলী, গর্ভাশয়, জরায়ু।
এখানে বুঝতেই পারছেন কোন্ অর্থে তা ব্যবহৃত হয়েছে !
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
এই লাইনগুলো গাইবার বা পড়বার সময় শরীরে শিহরণ লাগে।
-----------------------------------
অন্ধ, আমি বৃষ্টি এলাম আলোয়
পথ হারালাম দূর্বাদলের পথে
পেরিয়ে এলাম স্মরণ-অতীত সেতু
আমি এখন রৌদ্র-ভবিষ্যতে
এই শিহরণ যেন সারাজীবন আমাদের উপলব্ধিকে জাগিয়ে রাখে ! ধন্যবাদ আপনাকে।
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
এ দিন ভোলবার নয় কিছুতেই।
--------------------------------------------------------
এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।
এক লহমার... টুকিটাকি
চেতনায় বাঙালি হলে এই দিন কখনোই ভুলবার মতো নয় ! ধন্যবাদ।
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
সুন্দর লেখা।
দেবদ্যুতি
ধন্যবাদ।
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
আপনাকেও
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
ভাল লাগলো।
তা আমার জন্যেও আনন্দের !
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
বুড়ো আঙুল ! আপনাকেও !
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
খুবই যথাযথ হয়েছে। ১৯৮৪ খ্রীষ্টাব্দে সংবাদ পত্রিকায় একুশে নিয়ে লেখা আরও একটি কবিতা একুশ বিষয়ে আমাকে এমনি ভাবে নাড়া দিতে পেরেছিল। আপনার শব্দমালা গুলো তারও আগে সৃষ্ট হয়েছিল কিন্তু আমার পড়ার সুযোগ হ‘ল ত্রিশ বছরেরও পরে। কিন্তু পেলাম সে একই মাত্রার অনুভূতি। মনে একুশ সম্বন্ধে কি গভীর অনুভূতি থাকলে এমন ভাবে লেখা যায় তা সহজেই অনুমেয়। আমাদের সকলের প্রচেষ্টায় একুশের চেতনা সমৃদ্ধ মানুষে ভরে উঠুক আমাদের দেশমাতৃকা।
- পামাআলে
তারুণ্যের অনুভব বুঝি এমনই সংবেদনশীল হয় ! আহা, সারাটি জীবন যদি এরকমই থাকতো !
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
ভাষার জন্য প্রাণ দিয়েছে শুধু বাঙ্গালীরাই!!..ভাষার প্রতি কী অগাধ ভালবাসা!!ভাবতেই মনটা ভরে যায়
আব্দুল্লাহ আল ফুয়াদ
খুব সত্যি কথাই বলেছেন। তবুও এই গর্বিত বাঙালিই কেন যে ক্রমেই হীনম্মণ্য হয়ে যায় বুঝি না !
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
"আমায় ফিরিয়ে নাও
তোমার ক্রান্তিহীন জঠরে হে গর্ভধারিণী,"
আর আমি বলি হে পাপিস্থান ফিরিয়ে না তোমার কুখ্যাত বদমাইশ রাজাকারগুলোকে যারা আমার মায়ের ভাষা ও মাতৃভূমিকে কলুষিত করছে।
--------------
রাধাকান্ত
আমি তো তাদেরকে ফিরিয়ে নিতে বলি না ! বলি তাদেরকে পাঠিয়ে দিতে কোনো জাহান্নামে !
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
কবিতা মনে ধরেছে। তবে 'ক্রান্তিহীন' কেন?
------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।
এতো এতো বিরুদ্ধ-প্রতিবেশের মধ্যেও নিরাপদে আগলে রাখা মায়ের জঠর ক্রান্তিহীন না হলে জন্ম নিলাম কী করে ! অন্তত একজন কবির দৃষ্টিতে আমি তো তা-ই দেখি !
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
সে অর্থে হয়তোবা ঠিক। আমার দুঃখিনী মায়ের জঠর তো সর্বদা ক্রান্তির ভেতর দিয়েই কালাতিপাত করেছে, তাই ভুল ভেবেছিলাম। আমার মায়ের ছবি শালিখ পাখির মতো, খয়েরী শাড়িতে তার হলুদের ছোপ, জারুল ফুলের পাতার আড়ালে লুকিয়ে থাকা বিষন্ন আঁধার তাঁর মুখ জুড়ে থমকে বসে থাকে।
------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।
রণদীপম দা, সত্যিই চমৎকার লিখেছেন। ( চূড়ান্ত )
নতুন মন্তব্য করুন