(১)
জ্ঞানী ব্যক্তিরা যে পথে হেঁটে যেতে সদাই দ্বিধাগ্রস্ত থাকেন, নির্বোধেরা নির্দ্বিধায় সে পথ মাড়িয়ে যায়। এই মহাজন-উক্তির যথার্থতা বুদ্ধিমান ব্যক্তিরা আগেভাগেই উপলব্ধি করতে সক্ষম হন তাঁরা বুদ্ধিমান বলেই। কিন্তু আমি যে আদতেই এক আকাট মহামূর্খ সেটা হাঁড়েহাঁড়ে টের পেতেও খুব দেরি হলো না। আগপিছ না ভেবেই ‘মুই কী হনুরে’ জাতীয় এক অদ্ভূত ভাবের প্রাবল্যে বীরদর্পে এমন এক কণ্টকাকীর্ণ পথে পা রাখলাম, দু-এক কদম এগিয়েই বুঝতে পারলাম এই ক্ষত-বিক্ষত রক্তাক্ত পায়ে হেঁটে এগিয়ে যাওয়া তো দূরস্ত্, আমার এই অনভিজ্ঞ দুর্বল সামর্থহীন নিঃসার পায়ের উপর দাঁড়িয়ে থাকাটাই এক অসম্ভব কল্পনা বলে মনে হলো! অতএব যা হবার তা-ই হলো, আমি ভূপাতিত! এই হলো আমার দর্শনচর্চার প্রাক-ইতিহাস। প্রাতিষ্ঠানিক পাঠ্যে বিজ্ঞানের ছাত্র হিসেবে দর্শনতত্ত্বের ছিটেফোটা অভিজ্ঞতাও যার ঝুলিতে নেই, সেই আমিই কিনা চিরকালের এক কঠিন রহস্যময় প্রাচীন ভারতীয় দর্শনের দুঃসহ বিভ্রম-মাখানো পথের গণ্ডপথিক হয়ে গেলাম! হা হা হা! গণ্ডমূর্খ আর কারে কয়!
মূর্খতার এখানেই শেষ নয়। মৌনতাই হয় জ্ঞানী সাধকের উপলব্ধি-যাত্রার প্রথম প্রকাশ, কেননা তাঁরা জানেন বা উপলব্ধি করতে সক্ষম যে দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতম এক অনন্ত দুর্গম পথের যাত্রীদের গন্তব্য-বন্দরের চেহারা পর্যবেক্ষণে না পাওয়াতক অব্যক্ততাই হয় ব্যক্ততার অমিয় ভূষণ। কিন্তু মূর্খ আমি যে সাব্যস্তযাত্রা শুরুই করেছিলাম রীতিমতো ঢাকঢোল পিটিয়ে এক মহান যুদ্ধযাত্রার অভিব্যক্তির বিকট মুখোশ পরে! মূর্খতার বিড়ম্বনায় তখনো কি জানতাম তা কতো হাস্যকর, নিঃসার! শুনেছি নির্বোধেরাও আকস্মিক আত্মোপলব্ধির আলোয় সচেতন হয়ে স্বকৃত ভুলের জন্য অনুশোচনায় দগ্ধ হয়ে ফিরে আসে যাত্রাবিন্দুতে স্বীকৃত সততা নিয়ে। অথচ মূর্খেরও মূর্খ এই ভূপাতিত আমি কিনা ক্ষমার অযোগ্য অহঙ্কারে ভর করেই গড়িয়ে গড়িয়ে সেই অনির্দেশ্য পথেই চলতে থাকলাম। অতএব বুদ্ধিমান পাঠক নিশ্চয়ই ইতোমধ্যেই যাচাই করে ফেলেছেন যে আমার এহেন দর্শনযাত্রার দৌড় কোন্ মার্গতক পৌঁছুতে পেরেছে! হা হা হা!
ভারতীয় দর্শনভূমিটা কী তা না-জানলে বা না-বুঝলেও নিজের জন্ম-সংস্কারের ফলশ্রুতিতে অন্য অনেকের মতো আমাকেও ধর্ম-সংস্কারের কাঁটায় আবাল্য বিদ্ধ হতে হয়েছে সঙ্গত কারণেই। কার্যের সাথে কারণের উপযোগ খোঁজার সেই যে আবাল্য প্রশ্ন আমাকে তাড়া করতে শুরু করেছিলো তার উত্তরের সন্ধানে আজীবন দৌঁড়েই গেলাম এই দুর্গম পথে। বিজ্ঞানের আলো আমাকে মার্গপথটাই দেখিয়ে গেছে শুধু, কিন্তু উত্তরের কৌতুহলী তৃষ্ণা চিরকাল অতৃপ্তই রেখে দিলো আমায়। সেটাই কি আমার এই অহঙ্কারী মূর্খতার কারণ? হতে পারে। কেননা, চার্বাকদের মতোই আমারও ফিরে যাবার উপায় ছিলো না। গন্তব্যে পৌঁছুতে না পারলেও আমি যে এমন এক পথের যাত্রী ছিলাম হয়তো এটাই আমার অহঙ্কার। হাঁটার যোগ্যতা বা সামর্থ্য নাই থাক, যতটুকু পেরেছি ক্ষত-বিক্ষত হতে হতে গড়াতে গড়াতে যেটুকুই যেতে পেরেছি সেটুকুই আমার মূর্খতার অহঙ্কার। আমার এই নির্বদ্ধিতাকে বুদ্ধিমান পাঠক নিশ্চয়ই নিজ যোগ্যতা দিয়েই ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন এটুকু আশা করতেই পারি। শেষতক মানুষের জীবন তো আসলে তার তুলেমূলে আশারই যোগফল!
(২)
দর্শন জগতের এক বিস্মৃত মহীরুহ চার্বাক নিয়ে আমার বিভ্রম ও কৌতুহল সেই ছাত্রপর্বের শেষকাল থেকেই, যখনও আদৌ জানতামই না যে চার্বাক আসলে কে বা চার্বাক বলতে সত্যিই কী বোঝায়। কেননা অন্যদের মতো আমারও জন্ম ও ধর্ম-সংস্কারে চার্বাকদের কোন অস্তিত্বই ছিলো না, ছিলো কেবল প্রাচীন ভারতীয় আস্তিক দর্শনগুলোর কিছু কিছু বিশেষাশ্রিত তত্ত্বের সম্মিলিত মণ্ডাকারে প্রস্তুত এক বিশেষ ধরনের ককটেল, যাকে আসলে দর্শন নয়, আমরা জানতাম ধর্মের নিগূঢ় তত্ত্ব ও নৈতিকতার কিছু অনিবার্য মাপকাঠি হিসেবে। আর এগুলোকে প্রতিষ্ঠা করা হতো পুরাণ ও শাস্ত্র নামের কিছু পূজনীয় গ্রন্থাদির অলৌকিক মাহাত্ম্য দিয়ে। যেখানে কাল্পনিক অলৌকিকতা সামনে এসে দাঁড়ায়, দৈনন্দিন প্রত্যক্ষ বাস্তবতার সাথে তার দ্বন্দ্বও আবশ্যক হয়ে পড়ে বৈকি। এবং তখনই সামনের বহমান পথটাও হয়ে যায় দ্বিধাবিভক্ত। একদিকে বিশ্বাসের অলৌকিক সম্ভাবনা নিয়ে এক প্রশ্নহীন ভক্তিমার্গের আপাতমধুর বিভ্রম, অন্যদিকে নিরন্তর প্রশ্নবাণের কণ্টকাকীর্ণ যুক্তিনিষ্ঠতার সুচারু বিহ্বলতা।
আবাল্যের সর্বভুখ পাঠক হিসেবে আমার পাঠরুচিও যথানিয়মে বিন্যাস আর পুনর্বিন্যাসের মধ্য দিয়ে আমাকে এমন এক মার্গপথে দাঁড় করিয়ে দিলো, যখন আবিষ্কার করলাম, তবে কি আমিই চার্বাক! কেবল আমার আর চার্বাকের মধ্যে এটুকুই ব্যবধান, প্রাচীন লোকায়তিক চার্বাকেরা যাবতীয় শাস্ত্রীয় অলৌকিকতাকে এমনই নির্মম বিদ্রূপ বাণে বিদ্ধ করেছেন যে যুক্তিহীন অলৌকিকতার শাস্ত্রীয় সৌধটা কল্পনায় চোখের সামনেই ধূলিস্মাৎ-ই হতে দেখি শুধু, কিন্তু নিজেকে এমন কোন বিকল্প আরেকটি সুরম্য সৌধে অধিষ্ঠিত হতেও দেখি না! বরং এক ধু-ধু বিরান প্রান্তরে দেখি দাঁড়িয়ে আছি আমি একা, সহায়হীন নিসম্বল, চার্বাকদের মতোই! নিজেকে একাকী আবিষ্কার ভীতিকরও বটে। বেদ বা শ্রুতিশাস্ত্রেই উক্ত আছে যে, সৃষ্টির শুরুতে প্রজাপতি ব্রহ্মা নিজেকে একাকী দেখে ভীত হয়েছিলেন! তাই মানুষও একাকীত্বকে ভয় পায়। এজন্যেই কি তিনি সৃষ্টিকার্যে ব্রতী হয়েছিলেন! কে জানে! শাস্ত্রে এর বিভিন্ন ব্যাখ্যাও আছে অবশ্য। তবে একাকী মানুষ যে তার একাকিত্ব কাটাতে সচেষ্ট হয় সঙ্গির খোঁজে তাতে সন্দেহ কী! আমিও সচেষ্ট হয়েছি সেই একাকী চার্বাকের খোঁজে। এভাবেই আমারও মার্গপথ নির্দিষ্ট হয়ে গেছে।
কিন্তু এখানে প্রশ্ন থেকেই যায়, অলৌকিকতায় সিদ্ধ সেই শাস্ত্রীয় সৌধটা আসলে কী ছিলো বা এখনো আছে? কেনই বা চার্বাকেরা তাকে গুড়িয়ে দিতে সচেষ্ট হয়েছিলেন? আদৌ পেরেছেন কি? আর চার্বাকদের সেই অস্ত্রগুলোই বা কী ছিলো যা দিয়ে তাঁরা এমন দুঃসাহসী হবার দুঃসাহস দেখিয়েছেন? আসলে চার্বাককে জানতে হলে তার আগে জানতেই হয় তাদের লক্ষ্যনিষ্ঠ সেই সৌধের উপাদান ও উপাখ্যানগুলোকেও, কেননা সেই সৌধের উপাদানের দুর্বলতার মধ্যেই যে লুকিয়ে আছে চার্বাকদের প্রকৃত নিশানা। আর সে কারণেই তথাকথিত পুরাণশাস্ত্রের অলৌকিক স্তম্ভগুলির নির্মাণশৈলীতে উপাদান হিসেবে যে দর্শনসঞ্জাত চুন-সুড়কির ব্যবহার করা হয়েছে আমাদেরকে তার গঠনপ্রকৃতি সম্বন্ধেও অবগত হতে হয়। তা আর কিছুই নয়, প্রাচীন ভারতীয় দর্শন। তার মধ্যেও রয়েছে বিভেদ। আস্তিক আর নাস্তিক। আস্তিক দর্শনগুলি যার প্রধান ছয়টিকে একসাথে ষড়দর্শন নামে অভিহিত করা হয়। সেগুলি হলো ন্যায়দর্শন, বৈশেষিকদর্শন, সাংখ্যদর্শন, যোগদর্শন, মীমাংসাদর্শন ও বেদান্তদর্শন। এবং এর প্রেক্ষিত হিসেবে প্রতিষ্ঠিত অন্য নাস্তিক দর্শনগুলো হলো- জৈনদর্শন, বৌদ্ধদর্শন ও নাস্তিকশিরোমণি চার্বাকদর্শন।
(৩)
প্রসঙ্গক্রমে যেহেতু আস্তিক ও নাস্তিক শব্দযুগলের আবির্ভাব ঘটেই গেলো, সেক্ষেত্রে আমাকে দ্বিধাহীনভাবে বলতেই হয় যে, ভারতীয় দর্শন পরিভাষায় এই শব্দদুটি কোনভাবেই গুণাত্মক বা দোষাত্মক শব্দ হিসেবে নয় বরং বৈশিষ্ট্যসূচক দৃষ্টিভঙ্গি হিসেবেই ব্যক্ত করা হয়েছে। কেননা দর্শনের জগতে নাস্তিক্যবাদ, নিরীশ্বরবাদ ও জড়বাদ বা বস্তুবাদ কোনভাবেই সমার্থক শব্দ নয়। আর আস্তিক্যবাদ ও ঈশ্বরবাদও একার্থবোধক শব্দ নয়। নিরীশ্বরবাদী হয়েও যে কট্টর আস্তিক্যবাদী দর্শন হতে পারে তার দৃষ্টান্ত ভারতীয় দর্শনেই জ্বলজ্বল করছে। এ বিষয়ে ইতঃপূর্বে ‘নাস্তিক্য বনাম আস্তিক্য, শুধুই কি সত্যাসত্যের দ্বন্দ্ব’ শিরোনামে একটি নিবন্ধে এই বিষয়গুলোর যথাসাধ্য ব্যাখ্যার প্রয়াস করেছি। তাই ইদানিং বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে যখন কাউকে কাউকে সদম্ভে নিজেকে নাস্তিক হিসেবে পরিচয় দিতে দেখি কিংবা কেউ কেউ যুক্তিনিষ্ট আস্তিক হিসেবে নিজেকে পরিচিত করান তখন আমার কেবলই বিভ্রম হয়! কেননা এই আমি যে সত্যিই মূর্খ এ বিষয়ে আমার কোন সন্দেহ নেই। আমার মূর্খতার বিষয়ে আমি নিঃসন্দেহ। আর এই মূর্খতার পরিসীমা নিরূপণ করতেই আপাত একটা ইচ্ছা যে, প্রাচীন ভারতীয় দর্শনগুলোকে নিয়ে একটা আলোচনার সূত্রপাত করবো এই ব্লগ পরিমণ্ডলে, যদি সহৃদয় পাঠক আগ্রহী হন।
নিজের ঢোল নিজে পেটানোর মতোই এটুকু উল্লেখ করা আবশ্যক মনে করছি যে, অনেকেই হয়তো অবগত আছেন, ইতোমধ্যেই বর্তমান লেখকের বালখিল্যতার নিদর্শন হিসেবে ‘চার্বাকের খোঁজে ভারতীয় দর্শন’ শিরোনামে একটি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে আমার অজ্ঞানতার স্থূল আকার নিয়ে। আর সেই গ্রন্থের স্বীকারোক্তিতে উল্লেখ করা হয়েছিলো যে, “ভারতীয় দর্শন বিষয়ক আলোচনার প্রয়াস হিসেবে ‘চার্বাকের খোঁজে ভারতীয় দর্শন’ গ্রন্থটি গ্রন্থকারের সামগ্রিক প্রয়াসের প্রথম ভাগ বললে ভুল হবে না। তবে এই প্রথম-ভাগই প্রধান বা মূল কাজ। এতে চার্বাক দর্শনের সামগ্রিক একটি রূপরেখা অঙ্কন-প্রয়াসের প্রতিফলন-প্রচেষ্টায় তার মধ্যে সামগ্রিক ভারতীয় দর্শনের উৎস খুঁজতে সুপ্রাচীন সিন্ধু-সভ্যতা থেকে বৈদিক-সভ্যতা হয়ে পরবর্তী দর্শন-সম্প্রদায়ের চিন্তাধারা পর্যন্ত সামগ্রিক আলোচনার চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু এটি করতে গিয়ে ভারতীয় দর্শনের স্বাভাবিক গতিপ্রকৃতি বুঝতে যেহেতু চার্বাক ছাড়াও অন্যান্য দার্শনিক সম্প্রদায়ের মতবাদ সম্পর্কেও একটি আপাত ধারণা থাকার প্রয়োজন উপলব্ধ হয়েছে, তাই চার্বাক বাদে বাকি দর্শন সম্প্রদায়গুলি– অর্থাৎ জৈন, বৌদ্ধ, ন্যায়, বৈশেষিক, সাংখ্য, যোগ, পূর্ব-মীমাংসা এবং ব্রহ্ম-বেদান্ত ছাড়াও বেদান্তের প্রধান দুটি উপসম্প্রদায় অদ্বৈত-বেদান্ত ও বিশিষ্টাদ্বৈত-বেদান্ত এর সিদ্ধান্ত ও প্রাসঙ্গিক আলোচনা নিয়ে দ্বিতীয়-ভাগটি সাজানো হয়েছে ‘চার্বাকেতর ভারতীয় দর্শন’ নামের পরবর্তী গ্রন্থে। অবশ্যই ভিন্ন নামের গ্রন্থ দুটি একটি আরেকটির উপর নির্ভরশীল নয়, কিন্তু একটি আরেকটির পরিপূরক বললে অসঙ্গত হবে না। কেননা দুটি গ্রন্থ মিলেই গোটা ভারতীয় দর্শনের পূর্ণাঙ্গ অবয়ব ও উপস্থিতি ধারণ করেছে।”
এই প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী দ্বিতীয় ভাগের সাজানো গ্রন্থটির সম্ভাব্য যে আকার ও আয়তন দাঁড়াবে তাতে গ্রন্থটি একাধিক খণ্ডেই এবং তাও অন্তত চারটি খণ্ডে প্রকাশ করতে হবে হয়তো। কিন্তু বর্তমান আলোচনার বিবেচ্য সেটি নয়। প্রকাশনার রাজ্য সে ভিন্ন জগত। কিন্তু বিজ্ঞাপনসুলভ মনে হলেও এখানে তা উল্লেখ করার উদ্দেশ্য হলো ভারতীয় দর্শন নিয়ে এই ব্লগ পরিমণ্ডলে আলোচনার সূত্রপাত হলে তার শেষ কোথায় অর্থাৎ পর্ব সংখ্যা কতোতে গিয়ে দাঁড়াবে সেটি এ মুহূর্তে মোটেও আন্দাজগম্য নয়। যেহেতু দর্শন সংখ্যা কম নয়, অন্তত নয়টি, তাও আবার প্রতিটির আকারও বেশ পুষ্ট হবে বলে বিশ্বাস, সেক্ষেত্রে আলোচনাটির শৃঙ্খলা-পরম্পরা রক্ষা করাও অতি দুরুহ বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। হয়তো প্রথমে আস্তিক দর্শনের সৌধগুলো একে একে পরিভ্রমণ করে বেঁচেবর্তে থাকলে অতঃপর নাস্তিক্য দর্শনের যুদ্ধক্ষেত্রে পদার্পণ করা যেতে পারে। তদুপরি জ্ঞানাশ্রিত হলেও দর্শনের নিরস রাজ্যে ব্লগের প্রবহমান পাঠককে রসিয়ে রসিয়ে আমন্ত্রণ করাও কতোটা উৎসাহজনক কাজ হবে তার ঔচিত্যেবাধ বিবেচনাই এ মুহূর্তে দুরোত্তর মনে হচ্ছে।
আর তাই এটিকে আপাতত এতৎবিষয়ক পাঠক জনমত যাচাই পোষ্ট হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে। আর যাই হোক অন্তত সচলে দীর্ঘদিনের অনুপস্থিতি কাটানোর সিদ্ধি হিসেবে তো এই পোস্টটিকে গ্রহণ করা যেতেই পারে! হা হা হা!!
মন্তব্য
আমার ভালো লাগলো
ধন্যবাদ আপনাকে।
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
আপনার অন্যসব লেখার মতই আগ্রহ নিয়েই পড়ব।
------------------------------------------------------------------------------------------------------------
“We sit in the mud, my friend, and reach for the stars.”
অলীক জানালা _________
আপনার আগ্রহকে সম্মান দেখানোর চেষ্টা থাকবে নিশ্চয়ই !
অনেক ধন্যবাদ।
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
এত দূর আইসা হতাশ হইয়া পড়লে কেমনে কী স্যার?
০২
প্রাচীন জিনিসগুলা হারায় কেন? হারায় এই কারণে যে একটা সময় সেইগুলা নিয়া নাড়াচাড়া বন্ধ হইয়া যায়
আপনার কাজটা কিন্তু ইউনিক; প্রকাশনায় এখন বিকল্পও আছে; প্রিন্ট প্রকাশে ঝামেলা আছে কিন্তু ইবুকও তো হইতে পারে এই গবেষণাগুলার
০৩
সবচে ভালো হয় যদি বাংলা একাডেমির লগে যোগাযোগ করতে পারেন; এইসব বইয়ের লাইগা বড়ো প্রতিষ্ঠানের পৃষ্ঠপোষকতা খুবই দরকারি। কারণ এইগুলা এক বচ্ছরে দুইশো কপি বিক্রি হয় না। ফলে বাণিজ্যিক প্রকাশকের লাইগা এইগুলা মরাত্মাক ঝুকির বিষয়; যা আবার পাবলিক প্রতিষ্ঠানের জন্য না
আমি আসলে নৈরাশ্যবাদী মানুষ নই কখনোই, কেননা জীবনের সংজ্ঞাটাকে নির্ধারিত কিছু সময়ের যোগফল হিসেবে চেনার চেষ্টা করে যাই। আর মানুষের জীবনে সময়ের সংজ্ঞা আসলে কাল নয়, কর্মপ্রচেষ্টার বিম্ব মাত্র। তাকে প্রতিবিম্বিত করার প্রয়াস তো একজন আশাবাদী মানুষই করতে চায় !
০২
নিজে পাগলা হলে জীবনে আসলে কিছু কিছু এমনই পাগলা মানুষের সাথে দেখা হয়েই যায় ! আপনাকে নিশ্চয়ই টুটুল ভাই সম্পর্কে অধিক বলার দরকার নেই ! বায়ান্ন ফর্মার বিশাল চার্বাকটাকে আলোর মুখ দেখিয়ে যে ঝুঁকি নিয়েছেন তিনি, তাঁর পাগলামী প্রবল হয়ে ওঠলে কে জানে পরবর্তী চারটি খণ্ড একসাথেই ভূমিষ্ট হয়ে যাওয়াটা বোধ করি আশ্চর্যের হবে না ! আগ্রহের আলামত একটু একটু টের পাওয়া যাচ্ছে মনে হয় ! হা হা হা !
০৩
মন্তব্যের উপরিউক্ত দ্বিতীয়ভাগ সত্য হতে চললে এই তৃতীয়ভাগের মন্তব্য বোধকরি প্রযোজ্য হবে না আর। আবারো হা হা হা !!
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
লীলেন ভাইয়ের মন্তব্যটা গুরুত্বপূর্ণ। আমিও মনে করি আপনার হাল ছাড়া ঠিক হবে না। অনেক আগে শাহবাগে সম্ভবত আপনিই একদিন বলছিলেন যে, শুধু পড়লেই হবে না, যা শিখলাম, সেই উপলব্ধিটাকে লিখে প্রকাশ করাও জরুরী। সেই যুক্তিতেই আমি মনে করি যে আপনার উচিত দর্শন বিষয়ে লব্ধ জ্ঞানটুকু পুরোপুরি লিখে ফেলা। আপনি কতোটা সময় একনিষ্ঠভাবে দর্শন পাঠে ব্যয় করেছেন, তার কিছুটা জানি দেখেই এতো জোর দিয়ে বললাম। আমি মোটামুটি শক্তভাবেই বিশ্বাস করি যে আপনার লেখাগুলি সম্পূর্ণ হলে সেটা বাংলা ভাষায় ভারতীয় দর্শন সংক্রান্ত একটা গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন হবে।
অলমিতি বিস্তারেণ
আপনার মন্তব্য যেহেতু লীলেন ভাইয়ের মন্তব্যের সাথে সম্পর্ক রচনা করে আছে, তাই উত্তরের ক্ষেত্রেও নিশ্চয়ই তথৈবচ হওয়া উচিৎ ! হা হা হা !
তবে আমার লেখা কতোটা গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন হবে সেটার সাথে যেসব সামর্থ্যের অনিবার্যতা রয়েছে সে ব্যাপারে তো পোস্টেই স্বীকারোক্তি দিয়েছি ! তার পরও আমার উপর আপনাদের অতিবিশ্বাস আমাকে অনুপ্রাণিত করে, না কি আতঙ্কিত করে সেটাই নির্ণয় করতে পারছি না ! কিন্তু আশাবাদী মানুষের তো প্রাণিত হওয়াই উচিৎ বলে মনে করি যদি আপনাদের বিশ্বাসটুকু সাধারণ পর্যায়ে বলবৎ রাখেন। নিজের সাধ্যকে তো অতিক্রম করতে পারবো না, তবে আপনাদের বিশ্বাসের মর্যাদা কতোটা অক্ষুণ্ন রাখতে পারবো এখনো নিশ্চিত না হলেও এটুকু বলতে পারি যে, আমার প্রচেষ্টায় সাধ্যটুকু বিলিয়ে দেবো।
অ।ট। অনেকদিন আপনাকে দেখি না, মন টানে !
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
এক নাম্বার কথা হচ্ছে যতগুলো বই হোক এবং সেগুলোর আকার যা-ই হোক ভারতীয় দর্শনের বিস্তারিত (আপনার যথাসাধ্য) আপনাকে লিখতেই হবে। এই কথাকে ধ্রুব ধরে বাকি কথাগুলো বলছি।
বই প্রকাশনার ক্ষেত্রে বাংলা একাডেমিকে রাজী করাতে পারলেই কাজ হয়ে যাবার কথা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ও এই প্রকার কাজ করে। জগন্নাথ/চট্টগ্রাম/রাজশাহী/জাহাঙ্গীরনগর/ইসলামী (কুষ্টিয়া)/খুলনা/শাহজালাল/রোকেয়া/নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও খোঁজ নিতে হবে। ভারতের আনন্দ আর পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য পুস্তক পর্ষদ রাজী হবে কিনা নিশ্চিত না। তবে যেখান থেকেই হোক ছাপা হতে হবে।
ছাপানোর পাশাপাশি ই-বুক থাকাটাও জরুরী। ভবিষ্যতের পাঠকেরা মূলত ই-বুকই পড়বেন। এই ব্যাপারে সাহায্য করার মতো মানুষ সচলেই আছেন।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
একদম ঠিক।
------------------------------------------------------------------------------------------------------------
“We sit in the mud, my friend, and reach for the stars.”
অলীক জানালা _________
আপনার এক নম্বর কথাকে শিরোধার্য জ্ঞান করছি।
আর বাকি কথার উত্তরে আমি কিন্তু নিরুত্তর ! কেননা অপ্রাতিষ্ঠানিকতার শক্তিকে সম্বল করে ঘটে যাওয়া কৃতকর্মের দায় কোন প্রতিষ্ঠান বহন করার উদারতা কতোটা দেখাবে সেটা আমার দ্বারা নির্ণয় করা সম্ভব নয় এমুহূর্তে ! আর নিঃসন্দেহ নই বলেই ব্রাত্য আমার দ্বারা ব্রাহ্মণ ভজনার প্রচেষ্টাও সম্ভব হবে না বলেই মনে করি। তবে এখন পর্যন্ত যেহেতু আশাহত নই তাই এর পরে যেটুকু বলার বাকি থাকে সে কথাটুকু উপরে লীলেন ভাইয়ের মন্তব্যের উত্তরে বলেছি পাণ্ডব দা !
দেখা যাক, আপনাদের কতোটুকু আশা পূরণ করতে পারি !
অ।ট। এই দর্শনের যাতাকলে ফেলে আপনারা আমার ক্যামেরা হাতে ঘোরাঘুরিটা যে পুরোপুরি বন্ধ করেছেন সেই দুরভিসন্ধিটা এখন বুঝতে পারছি !
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
আপনার লেখা মনোযোগ দিয়ে পড়ি। দর্শন নিয়ে আলোচনা আগ্রহ নিয়ে পড়ব, সচলে জমজমাট হয়ে উঠুক অনাগত পোস্ট গুলোর আলোচনা।
[উপরে লীলেন এবং পাণ্ডব দা´র ই-বুক করার প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে জানিয়ে রাখছি, আপনি সত্ত্বাধিকারী এমন প্রকাশিত বা অপ্রকাশিত বই, ই-বুকে রূপান্তর করে প্রকাশ করতে চাইলে আমার সাথে নিঃসঙ্কোচে যোগাযোগ করতে পারেন। আগ্রহ নিয়ে আপনার সাথে কাজ করব।]
অনেক ধন্যবাদ।
ব্রাকেটবন্দি' মন্তব্যে আপনার সহযোগিতার আশ্বাসকে আন্তরিক সম্মান জানাচ্ছি। প্রকাশিত বইগুলোর সত্ত্ব নিজের হলেও প্রকাশকের দিকটাকেও বিবেচনায় রাখতে হয় লেখক হিসেবে। তাই ই-বুকের বিষয়টাকে আপাতত অপেক্ষমান রাখাটাই সমুচিত হবে মনে হয়। দেখা যাক্, আপনার আশ্বাস আমার মনে থাকবে। ভালো থাকবেন।
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
দর্শনচর্চার আগ্রহ বাড়িয়ে দিলো।
-নির্ঝর মাহমুদ
দর্শনচর্চা আমরা প্রতিনিয়তই করে থাকি জানতে বা অজান্তে। তবে দর্শনের প্রাতিষ্ঠানিক রূপটাকে আমরা দেখার আগেই কল্পনায় ভয় পেয়ে যাই বলেই হয়তো দর্শনের নাম শুনে আমাদের আগেভাগেই নাভিশ্বাস উঠে যায় ! হা হা হা ! আমার বেলায়ও এমনটাই ঘটেছে ! কিন্তু এখন এক ধরনের মজা পেয়ে গেছি মনে হয় !
অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
রণদা, প্রথমত আপনার এই লেখাটা সুমধুর লাগলো।
ভারতীয় দর্শন-চার্বাক এরকম একটা কাজ করতে হলে যেই বিপুল পরিশ্রম, সময় দিতে হয় তাতে কাউকে এরকম কাজ করার জন্য বলতে সংকোচ লাগে। তাও অনুরোধ করবো, প্লিজ করুন। আমরা তেমন কেউই হয়তো পড়বোনা, জানবোই না কী ধৈর্য নিয়ে এই কাজ করেছেন আপনি, তবু লিখুন। কলেবরের কথা ভাববেন না। এই লেখগুলোর মূল্য আসলে আমাদের সময়ে পরিমাপ হবেনা,হবে আরো পরে।
-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস
নতুন মন্তব্য করুন