জয়তুন বেওয়া দুই হাতের ওপর ভর করে হেঁচড়ে হেঁচড়ে মাটির ডিবির সামনে দাঁড়ায়। মাটির গায়ে হাত বুলাতে বুলাতে বলে, তুমার দুক্কু লাগতাসে গো চাষার ব্যাডা? হেয় নাকি মাফ চাইব। রাজার সোয়ামীরে বলে হে মারছিলো? রাজায় মাফ কইরবার কেডা?
জয়তুন বাড়ির পথ ধরে। আলী হোসেন ডেকে বলে ও হেসরি বেডি, বিচার শুইন্না খুশী হইছুনি?? হেঁচড়ে হেঁচড়ে চলে তাই গ্রামে তার নাম হেসড়ি বেটি। জয়তুন জবাব দেয় না। বুঝতে পারে না তার কেমন লাগে। ঐ লোক বেঁচে থাকলো এতটা বছর। শেরপুরে এসেছিল সেই বড় বর্ষার সময় একবার। গ্রামের সব বিধবারা বাঁশঝোপের ধারে খুনখুন করে কাঁদছিল আর বিলাপ করছিল যখন, জয়তুন একটা দা শাড়ির মধ্যে লুকিয়ে গিয়েছিল নদী পর্যন্ত গিয়েছিল হাতে হেঁটে। এক কোপে নারকেল কাটতে পারে বলে সুনাম আছে জয়তুন বেওয়ার। সেই নারকেল কাটার দা নিয়ে যাচ্ছিল কামারুজ্জামানকে দেখতে। দেখা হয়নি। হেসরি বেটি যেতে পারেনি অতদুর।
বাড়ির পাকঘরে উনুনের পাশে রাখা দা টায় হাত বুলিয়ে দেয় জয়তুন। তারপর দায়ের সাথ কথা বলে। তার ভাল লাগেনা মানুষের সাথে কথা বলতে। পশু পাখির সাথেও না। রান্নাঘরের ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা জিনিসের সাথে কথা বলে সে। পুরানো একটা জ্বলে যাওয়া স্টিলের বাটি। গরম ডেগচি ধরার বেড়ি। তেলের বোতল। এরা তার কথা যত বোঝে আর কেউ তত বোঝেনা।
উনুনের পাশে গরম লাগে অনেক। এসে বসে উঠানে। তার অস্থির লাগে। বুক ধড়ফড় করে। আবার উঠে যায় উনুনের কাছে। দা এর দিকে তাকিয়ে থাকে মসজিদের মিনারের মতো। হঠাত ঝিংই ই ই শব্দে চমকে উঠে দেখে বেড়াল পোড়া স্টিলের বাটি ফেলে দিয়ে গেছে। জয়তুন বাটির সাথে কথা শুরু করে।
হেইদিনের লাহান রইদ য্যান আর উঠছিলনারে বইন। আসমান ফাইট্টা দুযোকের লাহান সুরুজ য্যান নাইমা আইছিল গ্রামত। চাষার ব্যাডা কইলো দক্ষিনা গ্রামে মেলিটারি আইছে। আমগো গেরামত আইলে গাই দুইডা লইয়া যাইবোগা। আমার হুদি আর বুদিরে কই লুহাই?
স্টিলের বাটি জানতে পারে তখন জয়তুন বেওয়ার একটু মন খারাপ হয়। মিলিটারি নাকি মেয়েদের ধরে নিয়ে যায়। চাষার ব্যাডা সেই কথা ভাবে না। গাইদের কথা ভাবে।
হ্যারপর মিলিটারি আইলো শান্তি কমিটির লোকগোরে নিয়া। খালি গুলির শব্দ হুনোন যায় আর চিক্কুর। গুলি চলতাসে পাহির লাহান। হের লগে খালি হুনি পাকিস্তান জিন্দাবাদ পাকিস্তান জিন্দাবাদ।
চাষার ব্যাডার তাও হুশ নাই। উধি বুধির ঘরে দাও লইয়া খাড়াইয়া আছে। আমি গিয়া পায়োত পড়লাম। আপনে চলুইন যে, আমরারে মাইরা ফালাইবো। হ্যায় যাইবো না।
তারপর গরম হাড়ি ধরার বেড়ি জানতে পারে তার ঘরে মিলিটারি আসেনা। আসে শান্তি কমিটির লোক। পাঁচ জন না দশ জন। জয়তুন ইয়াদ করতে পারেনা। তারা ফিরেও তাকায়না উদি বুদির দিকে। গোয়ালঘরের ভেতর থেকে লাথি দিতে দিতে বাইরে নিয়ে আসে চাষার ব্যাডাকে। দুইজন মাথার কাছে আর দুইজন পায়ের কাছে ধরে বলে আল্লাহু আকবর।
আমি তহন চাইয়া দেহি আরে এই মাথার কাছোত গরু কাডার চাহু লইয়া কে খারায়া রইছে? সজবরখিলার কামারু না? এইডা ইনসান চাচার পোলা না? আমি দৌড় পাইড়া গেলাম হের কাছে। তারে জানের জুরে ধাক্কা মাইরা সরাইয়া দিলাম। মাটিত পইড়া গেল হ্যায়।
তার পাও ধইরা ঝাক্কি দিতে দিতে কই ও কামারু তুমি চিনছোনি আমারে? আমি সজবরের মাইয়া। তুমি আমার ভাইয়ের লগে মক্তবে যাইতা। আমি বদিমিয়ার বইনগো। আমারে চিনছোনি সোনা ভাই, আমারে চিনছোনি?
সে উঠে চুলের মুঠি ধরে জয়তুনকে ঘরের দাওয়ায় এনে ফেলে। জ্বলন্ত উনুন জানতে পারে,জয়তুনের চোখের সামনে ছোটভাইয়ের সাথে মক্তবে পড়তে যাওয়া কামারুজ্জামান জয়তুনের স্বামীকে জবাই করে।
তারপর পাশে খাড়াইয়া থাহা একজনরে কয় কামরাইন্যা এই মাগী তরে দিলাম। কামরাইন্যা জয়তুনকে নিয়ে ঘরে ঢুকে যায়।
কামরাইন্যা দরজা খুলতেই জয়তুন আবার বের হয় দৌড়ে। তার কেন যেন মনে হয় চাষার ব্যাডা বেঁচে আছে। না সে বেঁচে নেই। মরে পড়ে আছে মরা মাছের মতো। মাথা প্রায় আলাদা হয়ে গেছে গলা থেকে। কামারুজ্জামান পাশে দাঁড়ানো। কে যেন চাষার ব্যাডার লাগানো গাছ থেকে পেঁপে কেটে দিয়েছে তার হাতে। জয়তুনের কী যেন হয় তারপর। গোয়ালঘরের পাশে থাকা দা নিয়ে জানের জোরে ঝাঁপিয়ে পড়ে কামারুর ওপর। জয়তুন সজবরখিলার মেয়ে। সে এক কোপে নারকেল কাটতে পারে।
দুইজন শান্তি আটকে ফেলে তাকে। সজবরখিলার কামারুজ্জামান দা বসিয়ে দেয় জয়তুনের পায়ের ওপর।
আমি চিক্কুর পাইরা গড়াগড়ি খাই মাটিত। পাওর দুক্কুত না চাষার ব্যাডার লাই, বুইজ্জা পাই না। তারপর মাটিতই গুমায় যাই। আমার কোনখান থেইকা যে এত গুম আইছিল মন করবার পারি না।
জেগে দেখতে পায় শেয়াল উঁকি দিচ্ছে পেঁপে গাছের কোণা দিয়ে। কোনভাবে ঘরে ঢুকে একটা শাড়ি ছিড়ে পেঁচায় পায়ে।
হেঁচড়ে হেঁচড়ে জয়তুন মসজিদে যায়। ইমাম সাহেব আর তার চার বছরের ছেলে মরে মসজিদের বাইরে পড়ে আছে।
জব্বার মুনশির ঘরের দিকে যায়। তাইন ও বহুত আল্লাওয়ালা মানুষ। দেখে তার লাশের পাশে গাছের মত বসে আছে বউ। তারপর যায় টুনু মিয়ার বাড়ি, টুনু মিয়া তারে বুন বানাইছিল যে। টুনু মিয়ার দেহ কোলে নিয়ে আকাশ বাতাস বিদীর্ন করে চিৎকার করছে মা।
আবার বের হয় সে। পথে যোগ হয় হাসিনা বেওয়া, করিমন বেওয়া, নুরজাহান আর আরো কজন। তারা আব্দুল লস্করের ঘরে যায়, কুতুবের বাপের স্কুলে যায়, ছোট হুজুরের দোকানে যায়। যেতে যেতে জয়তুনের পায়ের থেকে রক্ত পড়ে শাড়ি ভিজে যেতে থাকে। করিমন হঠাত গ্রামের কুয়ায় ঝাপ দিতে চায়। নুরজাহান বিবাহের গীত গাওয়া শুরু করে আর হাসে।
হাঁটতে হাঁটতে নদীর তীরে পৌঁছে গেলে তারা জমে যায় জমাট বাঁধা রক্তের মতো। লাকড়ির মতো জমা করে রাখা লাশের দিকে তাকিয়ে তারা বুঝতে পারে সোহাগপুর গ্রামে তাদের বাপ স্বামী শ্বশুড় ভাই কেউ জীবিত নেই।
আমি হাসিনা বুর দিহে চাইয়্যা দেহি উনি দোয়াদরুদ পড়তাসেন। উনার দেখাদেখি আমিও পড়ি। কে যেন লা ইলাহা পড়ে। নুরজাহান কয় মুখ বাইন্ধা রাখ তরা। মোরা নাপাক।
করিমন কিচ্ছু কয়না। হ্যায় আবার নদীতে ফাল পাড়তে যায়। আমরা বুইজ্জ্যা পাইনা এই লোকগুলার কবর দিব কুনখানে? চাষার ব্যাডার কবর দিব ক্যাডা?
চাষার ব্যাডার কবর হয় কিনা জয়তুন জানেনা। এতগুলো লাশ কবর দেয়ার মতো পর্যাপ্ত মানুষ ছিলনা বলে কতগুলো লাশ নাকি পানিতে ভাসান দিয়েছিল। জয়তুন পরে চাষার ব্যাডার একটা পাঞ্জাবি কবর দেয় বাড়ির পাশে বরই গাছের নীচে। লোকে বলে মাটির ঢিবি। হুজুর বলে শেরক। জয়তুন কিছু বলেনা। তার পায়ের কাটা অংশের সাথে সাথে জিহবাটাও যেন কাটা পড়ে গেছে।
দা টা নিয়ে আস্তে আস্তে ওঠে জয়তুন। হেঁচড়ে হেঁচড়ে যায় কবরের কাছে। বিড়বিড় করে কথা বলে। সবটুকু শোনা যায়না। যতটা শোনা যায় তাতে বোঝা যায় জয়তুন বলছে তুমি হুনতাছো? হ্যার নাকি ফাঁসি হইবো। আমার কইলজাটা জইলা যায়গো। হেসরি বেটির কইলজার আগুন নিবেনা।
হঠাত কী যেন হয় সোহাগপুর গ্রামে। মাটির ঢিবি থেকে সার বেঁধে উঠে আসে অন্ধ উঁই পোকা। গ্রামের বাড়ি বাড়ি থেকে সার সার আসতে থাকে নারীরা। চৈত্রের খর রৌদ্র কমে গিয়ে এক খন্ড মেঘ নেমে আসে তাদের মাথার ওপর । মেঘ হাঁটে তাদের সাথে। নদীর স্রোত বেঁকে যায় অন্য দিকে। নৌকার লাল পাড় হয়ে ওঠে জয়তুনের পায়ে বাঁধা শাড়ি। জরিনা বেওয়া, হাসিনা, হাজেরা সবাই আসে একসাথে। এমনকি দুনিয়া ছেড়ে চলে যাওয়া কমলা, নুরুন্নাহার, চাঁদ সুলতানাও যোগ দেয় মিছিলে। কীকরে যেন পুরো গ্রাম আবার ১৯৭১ হয়ে যায়। কোথাও কোন আওয়াজ শোনা যায়না। কোন পুরুষ দেখা যায়না। শুধু একটা ফাঁসির অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকে সাতান্ন জন নারী।
মন্তব্য
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
জরিনা বেওয়া, হাসিনা, হাজেরাদের কয়েকজন...
------------------------------------------------------------------
মাভৈ, রাতের আঁধার গভীর যত ভোর ততই সন্নিকটে জেনো।
সে প্রতীক্ষায় আমরাও
------------------------------------------------------------------
মাভৈ, রাতের আঁধার গভীর যত ভোর ততই সন্নিকটে জেনো।
দেবদ্যুতি
কদ্দিন পর লেখলেন বলেন তো?
শুরু করছেন যখন থামায়েন না, আরো লেখেন।
-----------------------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'
রাজাকারেরা কখনো বদলায় না।
facebook
৫ বছর পরে লিখলে।
কতো যে ভাল্লাগলো! লিখলে বলে, আর যেটা লিখছে সেটা পড়েও।
লেখাটা রাইখো। আমাদের তো আর খুব বেশি কিছু নাই!
______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন
হ!
-----------------------------------------------------------------
কাচের জগে, বালতি-মগে, চায়ের কাপে ছাই,
অন্ধকারে ভূতের কোরাস, “মুন্ডু কেটে খাই” ।
আরও লিখো না কেন? অনেক বছর পরে লেখা পেয়ে ভালো লাগলো, কতবার যে বলসি এর মধ্যে...
লেখা পড়ে অবশ্য চোখে পানি আসলো... তারপরে মনে পড়ল এই লাইনগুলি...
-----------------------------------------------------------------
কাচের জগে, বালতি-মগে, চায়ের কাপে ছাই,
অন্ধকারে ভূতের কোরাস, “মুন্ডু কেটে খাই” ।
এটা তো গল্প না, শুধুশুধু গল্প ট্যাগ দিয়েছেন। ফাঁসি চাই সমস্ত যুদ্ধাপরাধীর। বাংলার সমস্ত জয়তুন বেওয়ার অপেক্ষার সমাপ্তি হোক। বাংলার মাটি পবিত্র হোক। জয় বাংলা।
_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই
সাক্ষী সত্যানন্দ, দেবদ্যূতি, ঈয়াসীন - ধন্যবাদ আপনাদের
স্যাম ভাই - টাইটেল, ডিজাইন সব মিলিয়ে অনন্য একটা পোস্টার হয়েছে। এই লেখার পেছনে এই পোস্টারেরো কিছু ভূমিকা আছে
-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস
খেকশিয়াল - নীচে অনার্য যেরকম বললো, লেখা ছাড়া আর কীই বা আছে আমাদের?
অনু - রাজাকারেরা বদলায়না কথাটা ভুল। তারা বদলায়। আরো নির্মম আরো নিষ্ঠুর হয়।
অনার্য - দুটো মানুষ মরে গেল লেখার জন্য। এই দুজনের একজনের সঙ্গী বেঁচে রইলো কাটা যাওয়া আঙ্গুল নিয়ে। লেখা ছাড়া আমরা আর কী করতে পারি ব্ল?
শান্ত - বাংলার সমস্ত জয়তুন বেওয়ার অপেক্ষার সমাপ্তি হোক। বাংলার মাটি পবিত্র হোক। জয় বাংলা।
-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস
জয়তুন বেওয়াদের মতো আমিও অপেক্ষায় আছি। অপেক্ষার প্রহর বড়ই বিলম্বিত! কামারুজ্জামানের মতোই এক রাজাকারের জন্যে আমি আমার যৌবনে এক অতি প্রিয়জনকে হারিয়েছিলাম। কাদের মোল্লার ফাঁসির দিনে খুব খুউব করে সেই তার কথা মনে পড়েছিলো। আজ আপনার লেখাটা পড়েও....
কাল রাতে লেখাটা পড়ে সারা রাত ঘুমাইনি। যুদ্ধের নয়মাস তের বছরের আমাকে নিয়েও বাবা মার চিন্তার সীমা ছিলো না। আমরা যারা দেশ ছেড়ে যেতে পারিনি তাদের কষ্ট অসাহায়তাও কম ছিলো না। মিলিটারী ধরে নিয়ে কি করবে কোন ধারনা ছিলো না, কিন্তু ভয়ংকর কিছু হবে সেটা মনে হতো। মনে হচ্ছে আমার জীবনও জয়তুন বিবির মত হতে পারতো একটু এদিক সেদিক হলেই। ধন্যবাদ এমন দিনে এমন একটা লেখার জন্য।
অনেকদিন পর লিখলেন। ধার কমে নাই।
আমরাও অপেক্ষা করে আছি।
ব্লগবাড়ি । ফেসবুক
অসাধারণ, অসাধারণ লেখা।
কয়েকবার পড়লাম।
অপেক্ষা তখনই শেষ হবে যখন একটা লাশ দেখবো।
ফাঁসির অপেক্ষায়...
-সো
কিছু বলার থাকে না এর পরে আর। এরকম হাজার হাজার প্রতীক্ষার অবসান হোক।
নীড়পাতায় দেয়া অংশটুকু জুড়ে বসেছে লেখার শুরুতে। 'পূর্ণ লেখায় সার সংক্ষেপ দেখাও' টার টি চিহ্ন তুলে দিন।
মন্তব্যের ভাষা জানা নেই। ভালোবাসা আর শ্রদ্ধা জানবেন।
-----------------------------------
অন্ধ, আমি বৃষ্টি এলাম আলোয়
পথ হারালাম দূর্বাদলের পথে
পেরিয়ে এলাম স্মরণ-অতীত সেতু
আমি এখন রৌদ্র-ভবিষ্যতে
...........................
Every Picture Tells a Story
এখনো আমার পড়া সেরা গল্পগুলোর নাম বললে আপনার লেখা পোকাদের দল পাতকুয়ায় ফেরে গল্পটি থাকে। এই গল্পটিও অসাধারণ হয়েছে।
অনেক অনেক বছর পর লেখলেন, ঘরে-বাহিরে সচলকে নিয়ে নানামুখী ষড়যন্ত্রের এই কালে সচলদের কলম ধরা উচিত সবার আগে। ছুরি কিংবা দলীয় ক্ষমতা নয় আমাদের শুধু কলম-ই আছে, আমাদের শুধু লেখাটাই আছে। আমরা সেটা দিয়েই লিখে যাবো ইতিহাস। বেঁচে থাকুক সচল, বেঁচে থাকুক মুকিযুদ্ধের চেতনা। জয় বাংলা।
-------------------------------------------
আমার কোন অতীত নেই, আমার কোন ভবিষ্যত নেই, আমি জন্ম হতেই বর্তমান।
আমি অতীত হবো মৃত্যুতে, আমি ভবিষ্যত হবো আমার রক্তকোষের দ্বি-বিভাজনে।
খুব ভালো লেগেছে গল্পটা।
স্নেহাশীষ রায়
চুয়াল্লিশ বছর পরে মাত্র একটা ফাঁসিতে জয়তুন বেওয়াদের জ্বালা জুড়োবে এটা আমার বিশ্বাস হয় না। আফসোস, ফাঁসির থেকে বড় সাজা আমাদের আইনে নেই।
গ্রামটার নাম সোহাগপুর। এর থেকে বড় আয়রনি কী হতে পারে?
লিখলে দেখে ভালো লাগল। লেখাটা কতটা ভালো লেগেছে সেটা নাহয় না-ই বললাম।
_____________________
আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।
এটাতো গল্প না, জীবন্ত উপখ্যান। যে উপখ্যানটা এই সময়ের স্মৃতিভ্রষ্ট বাঙালীকে আবারো স্মরণ করিয়ে দেবার খুব দরকার, বারবার দরকার!
অট: আপনার 'পোকাদের দল পাতকুয়াতে ফেরে' গল্পটাকে আমি একটা সংকলনের জন্য নিতে চেয়েছিলাম যদি অনুমতি দেন।
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?
অনেক ভালো লাগলো। গল্প হিসেবে পড়তে শুরু করেছিলাম, কিন্তু এতো গল্প না। এ---
এদের জন্য মৃত্যুদণ্ড অনেক হালকা শাস্তি।
আজ সম্ভবত ফাঁসি হচ্ছে।
স্বয়ম
জায়গাটার নাম 'সজবরখিলা' হবে। আরও পরে গল্পটা একবার সম্পাদনা করে নেবেন।
এই গল্পের কাহিনী যা, তাতে গল্পটা কতটুকু ভালো বা খারাপ হয়েছে সেটা নির্ণয় করার চেষ্টা ধৃষ্টতা। পা না থাকায় হেসরি বেডি হয়তো সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারে না, আর হেসরি বেডিদের কলিজা ঠাণ্ডা করতে না পারলে মেরুদণ্ডের অভাবে আমরা কোনদিন মাথা তুলে দাঁড়াতে পারবো না। বিচার প্রক্রিয়া বিলম্ব হওয়ায় এখনো প্রায়ই অনেককে চাষার ব্যাডার পরিণতি বরণ করতে হচ্ছে। আরো দেরি হলে এক সময় গোটা দেশটাকে সোহাগপুর বানিয়ে ছাড়বে।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
এদের জন্য ফাঁসি অনেক কম সাজা।আশা করছি আজ ঝুলবে আমাদের সবার অপেক্ষার পালা শেষ করে
অসাধারণ।
------------------------------------------------------------------------------------------------------------
“We sit in the mud, my friend, and reach for the stars.”
অলীক জানালা _________
জিএমটি - এই গানটা শুনলে বুকের মধ্যে হু হু করে ওঠে। লিখতে চাই। অনেক লিখতে চাই। তাও হয়ে ওঠেনা।
প্রৌঢ় ভাবনা - কত কত স্বজন যে আমরা হারিয়েছি এই লোকগুলোর জন্য। যদি পারেন এই স্মৃতিগুলো লিখে রাখবেন।
নীল কমলিনী আপু - কী কষ্টের দিন যে আপনি আপনার পারিবার আর আপনাদের মতো মানুষেরা কাটিয়েছেন, সেটা ধারনা করারো দুঃসাহস আমার নেই। জানি অনেক কষ্ট এগুলো লেখা। তাও যদি পারেন, একটু লিখবেন আমাদের জন্য। এই ইতিহাস থাকা দরকার।
সুবোধ অবোধ - আমরা সবাই অপেক্ষায়। অপেক্ষার অবসান হোক দ্রুত।
সো - অপেক্ষার অবসান ঘটুক। এই লজ্জ্বা থেকে জাতি মুক্তি পাক।
-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস
মেঘলা মানুষ - অনেক ধন্যবাদ এই ভুলটুকু ধরিয়ে দেয়ায়। অনেকদিন পর লিখলাম তো। এই জিনিসগুলো খেয়াল রাখিনি।
সুলতানা সাদিয়া - ধন্যবাদ পড়ার জন্য।
চরম উদাস আর মুস্তাফিজ ভাই - আপনাদের ধন্যবাদ দিব কী? আপনারা তো নিজেদেরই লোক।
মাসুদ সজীব - করুক তাদের মনের যাহা লয়। ইশতি সুন্দর একটা কথা বলেছে। এর থেকে অনেক দুঃসময় সচলায়তন পার করে এসেছে। এইসবে সচলের কিছুই আসবে যাবে না।
স্নেহাশীষ - ধন্যবাদ।
-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস
বুনো - কামারুজ্জামানের মতো লোকগুলোর জন্য আসলে একটা ফাঁসি যথেষ্ট না। এদের দরকার দোজখের মতো কিছু। যেখানে অনন্তকাল যন্ত্রনা সহ্য করতে হয়। ফাঁসি পেল তো বেঁচেই গেল।
নীড় সন্ধানী - ধন্যবাদ। পোকাদের দলতো সচলের সম্পত্তি। আপনি একটু মডারেটরদের সাথে কথা বলে নেবেন। তারা রাজি থাকলে আর ভাল জায়গায় হলে আমার আপত্তি নেই।
স্বয়ম - হু, ফাঁসি কিছুই এই জানোয়ারগুলোর জন্য। তাও হোক। আজই হোক।
ষষ্ঠ পান্ডব দা - অনেক ধন্যবাদ নাম ঠিক করে দেয়ার জন্য। আমি নিয়েছি ইংরেজি থেকে। বাংলা পত্রিকায় খুঁজেছি, পাই নি।
হু। লেখায় অনেক সম্পাদনা করা উচিত ছিল। কিন্তু নিজেই আবাগাক্রান্ত হয়ে গিয়েছিলাম খুব। প্রকাশের পর যারা নির্দিষ্ট করে ভুল ধরিয়ে দিয়েছেন, সেগুলোই ঠিক করেছি। সেটা করতে গিয়ে আর যেগুলো চোখে পড়েছে, সেগুলোও। কিন্তু পুরো লেখা পড়তে পারিনি আবার। কষ্ট হয়। কদিন পর আবার চেষ্টা করবো।
স্বপ্নের ফেরিওয়ালা ও তাহসীন রেজা - অনেক ধন্যবাদ পড়া আর জানানোর জন্য।
-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস
কইলজার আগুন কি কখনো নিভে? কক্ষনো নিভে না।
______________________________________
যুদ্ধ শেষ হয়নি, যুদ্ধ শেষ হয় না
গল্পটা ফেসবুকে শেয়ার করার সময় যা বলেছি, তা এখানেও বলে যাই। সত্যি বলতে, এই বলা না বলায়তো কিচ্ছু যাবে আসবে না।
গল্প বলে যারা, যারা গল্প লিখতে পারে, তাদের সুবিধা এই যে কঠিন সত্যরে তারা বলে ফেলার মতো সহজ করে নিতে পারে। আর তাদের অসুবিধাটুকু শুধুই তাদের। একটা জীবন, ভেতরের উচাটন-কান্না সবটুকু শুষে নিয়েই গল্প হয়ে উঠে। সেই উচাটনি কান্না জয় করে একটা কিছু লিখলি, যা গল্পেরও অধিক।
------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল
---
মাত্রই ঝুলে গিয়ে শহিদ হয়ে গেল কামরু। শহিদ হওয়া কত সহজ রে আপু!
৫৭জন মায়ের জন্য অনেক দেরিতে হলেও কিছু একটা বললো বাংলাদেশ।
জয় বাংলা!
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
অথচ তার কবর হচ্ছে এই মাটিতে!
-শূন্য থেকে শূন্য
বহুদিন পর আপনার লেখা পড়লাম।
আহা! সোনার টুকরে ‘রাণা মেহের’ ভাই, কী ভয়নক নেহার শক্তি গো ভাই তোমার হাতত! উন্তি আমার বাড়ি গো, তাও এতো খবরই আমি জানিনে, আধাধেন্দা চুদা যে! এই বিচেরকুনা না হলে অন্তর কুনডাই জা’নলাম না হুনি! চুদানির পোলা চুয়াল্লিশ বছর বাঁচলো, মা’গ-ছ’ল হ’চে মানুষ ক’রছে, টেকা-প’সে, দালান-কুঠা, মাদারসা-ফাদারসা, ইলিকশন কী না ক’রবের পাছিল! গুয়া কুনা এক পাঞ্জা ফের হচিল, চাফা-গর্দান শুয়োরের নাহাল তা ফাঁসির দড়িত ম’রবের সুম গুবরে গুয়া কত্খানি ভিজ্চিল ক্যাড়াই জানে!
তা মেহের ভাই, আফনের নেহার হাতের জোর জয়তুনের হাতের চায়ে বেশি; আর অন্তরখান উজের ক’রি না দিলে কি ইবে নেহা যায় গো! আমরা সাহিত্য চুদাই, মুক্তিযুদ্ধ ভালা নাগে না, যত্তো নট্টর পট্টর সায়োর প্যাচাল নিয়ে মাতামাতি; মুক্তিযুদ্ধ বলে পা’নসে আর এক প্যাচালি! কী আর কমু ভাই, তুমার নেহাডা কপালত ঠেকালাম। বড়ই সোনা-মাসা, এগুলের জীবন বড়ই শক্ত, ম’রবেন্নয় কুনদিন!
ভাই গো, নেহেন, আপনের নেহা শ’ইল্লের নুম্ব খাড়া করে, যুদ্ধের উতলা ময়দানে নাফায়ে নিয়ে যায়।
ওডিন - না। তাদের কইলজার আগুন কখনো নিভবেনা। এই বিচার আসলে নিজেদের অপরাধবোধ কমানো।
অপু - উচাটনি কান্না জয় করতে পারিনিরে। এই কান্নাগুলো জয় করতেও ইচ্ছা করেনা।
আয়নামতি - যারা তাকে শহীদ বানাতে চায়, বানাতে দিন। তাদেরতো এই শোক সামলে উঠতে হবে! হু দেরি হয়ে গেল। তবু এই কলংক থেকে মুক্তি পেল বাংলাদেশ।
তিথীডোর - জয় বাংলা।
শূন্য থেকে শূন্য - এখানেই কবর হওয়া উচিত। থু থু ফেলারো তো একটা জায়গা থাকতে হবে, নাকি?
তানিম - হু। অনেক দিন পর লিখলাম। চেষ্টা করবো নিয়মিত হবার
-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস
উপনদ, আপনার কথা শুনে অনেক ভাল লাগলো। এটা কি শেরপুরের ভাষা? কী মিষ্টি।
আমি নিজেও বিচার শুরু হবার আগে তেমন কিছুই জানতাম না।
আপনিও লিখুন মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে। সবার লেখায় সমৃদ্ধ হোক বাংলা।
(আমার নামের বানান রানা মেহের)
-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস
"হেসরি বেটির কইলজার আগুন নিবেনা।" নাঃ, নিবেনা।
--------------------------------------------------------
এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।
এক লহমার... টুকিটাকি
কী অসম্ভব ভালো একটা লেখা! গল্পের মোড়কে টুকরো টুকরো নির্মম ইতিহাস। লেখাটা পড়ে যে কতটা ভালো লাগল, সেটা বোঝানোর চেষ্টা করলে ব্যর্থই হবো শুধু। তবে এটুকু বলাই যায়, বহুবহুদিন পর মনে দাগ কেটে যাওয়ার মতো, ঘুরেফিরে বারবার পড়ার মতো একটা লেখা পড়লাম।
লেখাটা পড়েছিলাম, কিছু বলা হয়নি, আসলে কিছু বলার নেই।
আজ আবার পড়লাম, আজো কিছু বলার নেই।
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
এক লহমা, ধন্যবাদ পড়ার জন্য।
অতন্দ্র, লেখার পরই তোর কথা মনে পড়ছিল বিশ্বাস কর। তুই পড়িসনি ভেবে খারাপ লাগছিল
নজু ভাই, কিছুই বলার নেই আসলে। ১৬ তারিখ দেখি মুজাহিদের কী রায় হয়।
-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস
নতুন মন্তব্য করুন