হতাশার সাথে আন্দোলনের লড়াই - ব্লগার হত্যা

রানা মেহের এর ছবি
লিখেছেন রানা মেহের (তারিখ: মঙ্গল, ১১/০৮/২০১৫ - ৫:৪১অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

১৯৯৯-২০০০ সাল। এই দুবছরের শেষ আর প্রথমদিকে একটা বড় সময় জুড়ে সিলেটে চলছিল লাগাতার হরতাল, মিছিল, আক্রমণ। বিএনপি-জামাত-শিবির মরিয়া হয়ে গিয়েছিল শহীদজননী জাহানারা ইমামের নামে রাখা শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি হলের নাম পরিবর্তনে। বিপরীতে আন্দোলন চালিয়ে গিয়েছিল আওয়ামীলীগ, ছাত্রলীগ, সমাজতান্ত্রিক দলগুলো আর বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়া, অপড়ুয়া শিক্ষার্থী – সংস্কৃতিকর্মীরা।
কত অদ্ভুত বিকল্প নিয়েই না হাজির হয়েছিল জামাত। বিশ্ববিদ্যালয় যেহেতু শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়, এর ছাত্রাবাসের নাম রাখতে হবে হযরত শাহজালালের একজন সাহাবির নামে। তাতে রাজি না হলে তৎকালীন স্পিকার হুমায়ুন রশীদের মায়ের নামে তো অবশ্যই। শাহজালালের সাহাবি এবং হুমায়ুন রশীদের মায়ের সাথে এই বিশ্ববিদ্যালয়, সর্বোপরি বিদ্যাশিক্ষার দূরদুরান্তের কী সম্পর্ক থাকতে পারে সেই প্রশ্ন আমরা কিছু বিএনপি-জামাত কর্মী এবং বেশ কিছু সাধারণ মানুষ যারা হলের নাম শাবানা-ববিতা টি স্টল রাখলেও খুব বেশি ভাবিত নন, এদের করেছিলাম। তারা প্রায় প্রত্যেকেই আমাদের মূর্খতায় বিরক্ত এবং বিব্রত হয়েছেন এবং পরামর্শ দিয়েছেন এইসব ফালতু প্রতিবাদে সময় নষ্ট না করে ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার পরিবেশ তৈরি করে দিতে এবং নিজেরাও আপন পাঠেতে মনঃনিবেশ করতে।

সেইসময় অনন্য একটা ঘটনা ঘটলো। হুমায়ূন আহমেদ ঘোষণা দিলেন জাহানারা ইমামের নামের এই অপমান মেনে নেয়া তার পক্ষে সম্ভব নয়। ছাত্রাবাসের নাম জাহানারা ইমাম হল বহাল রাখার দাবীতে তিনি শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে একদিনের একটা প্রতীকি অনশন করবেন। হয় হুমায়ুন আহমেদ তখনো তার রাজাকারেরাও মানুষতত্ত্বে সম্পূর্ণ পরিস্ফূট হননি কিংবা হলেও আমরা ঠিক অনুধাবন করতে পারিনি সেইসময়। তার এই প্রতীকি অনশন অভূতপূর্ব সাড়া জাগালো। আসাদুজ্জামান নূর এবং অন্যান্য নাট্য-সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব এই অনশনের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করলেন পত্রিকায় বিবৃতি দিয়ে । বিএনপি-জামাত সিলেটে সর্বোচ্চ পেশি-অস্ত্রশক্তি নামিয়ে যুদ্ধাবস্থা জারি করে ঘোষণা দিলো ঐদিন মূল শহর থেকে কেউ বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত যেতে পারবে না।

তবু রাস্তার মোড়ে মোড়ে কঠিন জেরা, আঘাত, আক্রমণ, লাঞ্ছনা সয়েও একঝাঁক মানুষ এসে হাজির হলেন শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গনে। গানে শ্লোগানে কবিতায় একটা দিন কী করে জামাত শিবিরের নাকের ডগায় জাহানারা ইমামের হয়ে গেল – হয়ে গেল মুঠোভরা একটা জাতীয় পতাকা আমরা বুঝতেই পারলাম না। মনে হলো এই তো হবার কথা ছিল। চিরদিন এইই তো হয়ে আসছে।

আমি তখন বেশ বড়। তবু অদ্ভুত হলেও সত্যি জীবনে সেই প্রথমবার আমি নিজের কানে একদল মানুষকে মনের ভেতর থেকে জয় বাংলা বলে চিৎকার করতে শুনলাম, নিজে চিৎকার করলাম। টের পেলাম কী অবর্ণনীয় শক্তি ধারণ করে এই ছোট্ট শব্দ দুটো। একেকবার মানুষ জয় বাংলা বলে হাত মুঠো করে ওপরে ছুঁড়ে দেয়, আমরা টের পাই এই শব্দদুটো আমাদের ঘিরে একটা শক্তির বলয় তৈরি করে দিচ্ছে। জামাত শিবিরের সাধ্য নেই সেই লক্ষণরেখা পার হবার। সেই থেকে জয় বাংলা আমার জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে গেছে। যে কোন বিপদে অশান্তিতে কষ্টে দুঃখে ভালোলাগায় আনন্দে আমি বলি, জয় বাংলা।

মঞ্চে একটু পরে এলেন ভবদা, ভবতোষ রায়, গণসঙ্গীত শিল্পী। মঞ্চ মানে মাথার ওপর প্যান্ডেল আর সবাই ঘাস কিংবা চাদরের ওপর বসা। ভবদা দারুণ মজলিশি মানুষ। যেখানে যান গান আড্ডা দিয়ে একদম জমিয়ে দেন। মাঝেমাঝেই গানে বসিয়ে দেন নিজের কথা, কিছু গান করেন লোকগীতির সুরে কী কী সব বসিয়ে দিয়ে। এই নতুন করে করা গান তার কিংবা অন্যের সেটা জানি না তবে শুনতে ভারি ভালো লাগে। উনি সেদিন একটা গান ধরলেন শাহ আবদুল করিমের আমি কূলহারা কলঙ্কিনীর সুরে -
আমি বাংলাদেশের বাংগালি, আমি বাংলাদেশের বাংগালি
আমারে ডর দেখায়োনা বুলবুলি।

সেই বুলবুলি বলারও একটা কায়দা আছে। মুখে একটা বিদ্রুপের ভঙ্গি এনে ডান হাত হারমোনিয়াম থেকে তুলে বুড়ো আঙুল সামনে তর্জনীর মতো করে নাচিয়ে মাথা ঠিক দক্ষিণ ভারতীয়দের মতো করে দুলিয়ে হেসে কিংবা মুখ খিঁচিয়ে বলছেন, আমারে ডর দেখায়ো না বুলবুলি।
প্রথমবার এই গান গাইবার ধরন দেখে আসাদুজ্জামান নূর হেসে ফেললেন। পরেরবার দেখা গেল তিনিও বুড়ো আঙুল সামনে এনে আঙুল নাচিয়ে নাচিয়ে গাইছেন, আমারে ডর দেখায়ো না বুলবুলি। সেই থেকে আমি জানি বাংলাদেশের বাঙালি ঠিক সহজ জিনিস নয়, বুলবুলিতে চিরকাল ধান খেয়ে নিতে পারবে না। শাহবাগ এই জানাকে মোটামুটি অনন্ত বিশ্বাস হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে দিলো মাথার ভেতর।

সেই বিশ্বাস প্রথম টলে গেল অভিজিৎদা মারা যাবার পর। রাজিব হায়দার হত্যার পর প্রধান মন্ত্রী তাকে ঘোষণা দিয়েছিলেন দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধের প্রথম শহীদ হিসেবে। তাই বিস্ময় থেকে বেশি ছিল ক্রোধ, ঘৃণা, মেনে না নেয়ার - কাউকে মানতে না দেয়ার দুর্দমনীয় ক্ষোভ। অভিজিৎদার কেটে ভাগ খুলি-গলা থেকে ঘড়ঘড় আওয়াজ বন্যা আপার কাটা আঙুল অজয় স্যারের বিহ্বল চাহনি সব কিছু কেমন যেন মনে হলো পরাবাস্তব। ঘটছে আবার ঘটছে না।

তারপর থেকে হতাশার ছাদনাতলায় আমাদের সাতপাক শুরু। ওয়াশিকুর বাবু মারা গেলেন এক মাসের একটু সময় পর, একদম দিনের বেলায়। তবু একটু ছোট্ট প্রাপ্তি, একটু টিমটিমে আলো - দুজন অসীম সাহসী মানুষ বেঁচে থাকার পরোয়া না করে ধরে ফেলেছেন তিনজন খুনীর দুজনকে। সেই পিদিমের আলো নিভতেও খুব বেশি সময় লাগলো না। শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ত্রিশ মিনিটের হাঁটা দূরত্বে খুন হলেন অনন্ত বিজয় দাশ। একদম ঝকঝকে দিনের আলোয়, তার বাসা থেকে অল্প একটু দূরে। আমরা বুঝতে পারি, বাংলাদেশে মুক্তবুদ্ধির চর্চাকারীরা তেলাপোকারও অধম। তাদের মেরে ফেলতে পারলে পরকালে অশেষ সুবিধার পাশাপাশি ইহলৌকিক প্রচুর সুখ্যাতিও পাওয়া যায়।

ইসলামিক সন্ত্রাসীদের নৃশংসতার মুকুটে সর্বশেষ পালক হিসেবে প্রাণ দিলেন নীলাদ্রী চ্যাটার্জি নিলয়, অনলাইনে যিনি পরিচিত ছিলেন নীলয় নীল বলে। এবারে ঘাতকেরা মুক্তবুদ্ধির চর্চাকারীদের একদম নিঃসহায় করে দিয়ে গেছে ঘরের মধ্যে চাপাতির হিংস্রতা দেখিয়ে। আমরা বুঝতে পারছি আমরা আসলে বসবাস করছি একটা ঢাকনা খোলা কফিনের ভেতর। আমাদের মৃত্যু ইতোমধ্যেই নির্ধারিত, কফিনের ডালা খোলা রাখায় কোনভাবে শ্বাস নিচ্ছি শুধু। নরমাংসভোজীরা যখন যেভাবে চাইবে বন্ধ করে দেবে কফিনের ডালা। সেই প্রক্রিয়া হবে হিংস্রতর থেকে হিংস্রতম, একবার থেকে প্রতিবার।

সরকার, সরকারের মন্ত্রী, আইন প্রণয়নকারী সংস্থা তাদের ব্যর্থতা ঢাকতে গিয়ে ব্যস্ত মৃত ব্লগার-লেখকদের আরেকবার মেরে ফেলতে। জীবিত ব্লগার লেখকদের নিদারুণ নিষ্ঠুরতায় জানাতে মুক্তচিন্তকেরা মারা গেলে লাশের দায়িত্ব নেবে পরিবার কিংবা আঞ্জুমানে মফিদুল, রাষ্ট্র নয়। রাষ্ট্র দিয়েছে অমোঘ আইন, দিয়েছে ধর্মীয় অনুভূতি নামের কর্ণের কবচকুণ্ডল। ইন্দ্র বারবার আসবে মুক্তবুদ্ধি, বলা আর লেখার স্বাধীনতার রূপ ধরে এই কবচকুন্ডল ছিনিয়ে নিতে। যুক্তি নামের প্রশ্ন নামের ফাঁদে পড়ে এই কবচকুন্ডল হতছাড়া করেছো কী মরেছো। ধরিত্রী দ্বিধা হয়েও নাস্তিক নামের সীতাকে আশ্র্য় দেবে না বাংলাদেশ।

আরো আছেন গিটকিরি গান শুনতে ভালো, শিমুল তুলো ধুনতে ভালো, ঠাণ্ডা জলে নাইতে ভালো সবই ভালো শুধু নাস্তিকেরা খারাপ জানা এবং মানা আমাদের চারপাশের একগুচ্ছ নির্লিপ্ত মানুষ। এই নির্লিপ্ত মানুষেরা কোরমার ঝোলে ভাত মাখাতে মাখাতে বলবেন নিলয় নাকি বিয়ে করেনি? হিন্দু মেয়ের সাথে লিভ টুগেদার করতো? ডারউইনিজিমে বিশ্বাস না রেখেও যারা নিউটনের তৃতীয় সূত্রে বিশ্বাস করে বিশাল আত্মতৃপ্তি পান। প্রত্যেক ক্রিয়ারই একটা সমান ও বিপরীত প্রতিক্রিয়া আছে সুতরাং ব্লগার কি আর মরছে এমনি এমনি?

আচ্ছা এই চারপাশের মধ্যে আমাদের জায়গাটা আসলে কোথায়? আমরা রাজনীতিকদের মতো শুধু ক্ষমতায় অন্ধ হতে পারি না, নির্লিপ্তের মতো ভাত মাখিয়ে যেতে পারিনা। আমরা কেউ অভিজিৎ রায়ের সহোদর, কেউ অনন্তর গুণমুগ্ধ, কেউ ওয়াশিকুরের পাশে দাঁড়ানো লোকটা, কেউ নীলয়ের বন্ধু। আমরা, যাদের কর্মী হবার কথা ঠিক কীভাবে উঠে দাঁড়াতে পারি প্রিয়জনের লাশের স্তূপ সরিয়ে? কীভাবে উচ্চারন করতে পারি বহু ব্যবহারে জীর্ণ কিন্তু জ্বলজলে একটা বচন, বিনাযুদ্ধে নাহি দিব সূচাগ্র মেদিনী?

কীভাবে থেকেও বড় প্রশ্ন আছে আমাদের জন্য। আমরা আসলে কী করছি? খুব স্পষ্টভাবে বলতে গেলে আসলে তেমন কিছুই করছি না। প্রতিবার একেকজন করে আমাদের সহযাত্রী মারা যান আমরা গালি দেই বাংলাদেশকে, অস্বীকার করি নিজের অস্তিত্বকে। অভিজিৎদা মারা যাবার পর আমার প্রথম প্রতিক্রিয়া ছিল যারা এখনো দেশে আছেন তারা দেশ ছেড়ে চলে যান। এই কথার মধ্যে শুধু নিরাপত্তার শঙ্কা ছিল না, বাংলাদেশের প্রতি একটা বিতৃষ্ণা ছিল। যেই দেশ অভিজিৎ রায়ের মতো একটা মানুষকে রক্ষা করতে পারে না, কীসের দেশ সেটা? এখনো আমি এবং আমরা তাই করি। স্বজনহত্যার বিচার না হবার, সরকারের কাছে মাথা কুটে একটু সহানুভূতির প্রত্যাশা ভঙ্গের বেদনায়, এতদিন বন্ধু জানা চারপাশের মানুষদের সবিনয় সঙ্গ ত্যাগ করার হতাশা ক্ষোভে বেদনায় ভেঙে যেতে যেতে আমরা ভুলে যাই মুক্তবুদ্ধির চর্চা একটা রিলে রেইসের মতো। যিনি শুরু করেন, তিনি শেষ করেন না। তার সীমানায় এসে ব্যাটন দিয়ে যান অন্য খেলোয়াড়ের হাতে।

আমাদের মুক্তবুদ্ধির চর্চা অবশ্য খেলার মতো এত নিরবিচ্ছিন্ন হয়নি। সীমানায় আসার আগেই আমাদের সহযাত্রীদের হাত পা কেটে ফেলা হয়েছে। পদে পদে পুঁতে রাখা আছে খাপখোলা তলোয়ার আমাদের ছিঁড়ে ফালা ফালা করার জন্য। প্রাচীন রোম কিংবা এখনকার সৌদি আরবের মানুষের মতো অজস্র দর্শক দাঁড়িয়ে আছে আমাদের দুপাশে মুখের লালা ঝরিয়ে কিংবা থু থু ছিটানোর জন্য। এরা নিজের হাতে আমাদের হত্যা করবে না কিন্তু জয়ধ্বনি জানাবে একেকটা রক্তের স্রোতধারাকে। সবকিছুর পরও ব্যাটন কিন্তু আমাদের হাতে। এই খেলা এখন আর খেলা নয়, আমাদের বেঁচে থাকার শেষ সম্ভাবনা।

আমরা প্রতিবাদ করি না কোনো আশা নেই বলে, দলবদ্ধ মানুষ রাস্তায় নামছে না বলে। স্বপ্ন দেখি আরেকটা শাহবাগের যেখানে একেকটা শ্লোগানে লক্ষ লক্ষ লোক গলা মেলায়। বিনয়ের সাথে জানাই শাহবাগ আন্দোলন আমাদের একটা ক্ষতি করে দিয়ে গেছে। আন্দোলন মানে হয়ে গেছে রোমান্টিক একটা ধারণার নাম। শ্লোগান হবে, গান হবে, শত শত মানুষ আসবে আমাদের অভিবাদন জানাতে। শুনতে কষ্ট হলেও সত্য এইসব চিন্তা বাস্তবতাবিবর্জিত। আন্দোলন এভাবে হয় না। আন্দোলন মানে শুধু যুদ্ধ নয়, আন্দোলন হলো সংগ্রাম - যাকে রক্ত দিয়ে মেধা দিয়ে শ্রম দিয়ে সফল বানাতে হয়।
ফেব্রুয়ারির প্রথম দিককার সেই একাত্ম হয়ে যাওয়া দিনগুলো পরিপূর্ণ শাহবাগ আন্দোলন নয়। শাহবাগ আন্দোলন হলো রাজিব মারা যাবার পরেও যারা আন্দোলনে গেছেন, শাহবাগ কিংবা শাহবাগের বাইরে। আন্দোলন হলো শহীদ মিনার ভেঙে ফেলার পরেও যারা ভেঙে পড়েননি, সাদা দাড়ি এক বৃদ্ধের রাজিবের ছবি হাতে বসে থাকা। আন্দোলন হলো পাতার পর পাতা লিখে বলা আমরা বাংলাদেশে ইসলামীয় খেলাফত আসতে দিব না, যুক্তির চর্চা থামাবো না। মুক্তবুদ্ধিকে স্বাগত জানাবো অবিরাম।

আমরা ছোট একটা প্রতিবাদ জানাতে কুন্ঠিত হই। বড় বড় সমাবেশ করতে চাই, যেখানে বিপুল বৈভবে সাজবে জনতার মঞ্চ। আন্দোলন শুধু বড় মঞ্চে হয় না, আসলে একেবারেই হয় না। সংস্কৃতির আন্দোলনের কথা ভাবুন। আমরা কি ধরে নেই সংস্কৃতি হয় চ্যানেল আই কিংবা এন টিভির প্রচুর অর্থের ঝনঝনাতিতে ঝংকৃত হতে থাকা ট্যালেন্টহান্টে? এগুলো একেকটা শুধুই বুদবুদ। সংস্কৃতি বাঁচিয়ে রাখতে এদের তেমন কোনো ভূমিকা নেই। সংস্কৃতি বিকশিত হয় বড় শহরের আড়ালে পড়ে থাকা ছোট্ট মফস্বল কলেজের নবীনবরণে, রবীন্দ্রনাথ মিশে থাকেন কোন এক অজ্ঞাত গ্রামের স্কুল শিক্ষকের পাগলামোতে আয়োজন করা পঁচিশে বৈশাখের অনুষ্ঠানে। মুক্তিযুদ্ধ বেঁচে থাকে দূর ভাটি অঞ্চলের রাজাকার চেয়ারম্যানের বিপক্ষে দাঁড়িয়ে কিছু দরিদ্র কিন্তু দৃঢ় মুক্তিযোদ্ধার আলাদা বিজয় দিবস উদযাপনে।
আজ আমরা যখন ঘর অন্ধকার করে দেয়ালে মাথা কুটি আর হাত কামড়াই কিচ্ছু হবে না এই দেশের কিচ্ছু হবে না বলে, বিশ্বাস করুন ব্লগারদের খুন নয়, তার পরিবারের চরিত্রহনন নয়, এই হাত কামড়ানোর সফলতাতেই সবচেয়ে বেশি প্রীত হয় ধর্মের বাকল গায়ে পরা আততায়ীরা।

প্রকাশ্য দিনের আলোয় মৃত্যুপথযাত্রীকে বাঁচাতে যখন কেউ এগিয়ে আসে না, কাকে দোষ দিবো বলুন? আমি নিজে একটা ভীরু ধরনের প্রাণী। ধারালো অস্ত্র হাতে চার পাঁচটা রক্তোন্মুখ জন্তুকে দেখে প্রবল ভয়ে নুয়ে যাব আমি, দৌড়ে পালাবো কোন নিরাপদ খোলসে। কিন্তু সেই আমিই যখন ঘরের ভেতর বসে বলবো আমি কিছু দেখিনি, শুনিনি, জানি না জানতে চাই না - হেরে যাই অনেক অনেক বেশি ঠিক তক্ষুনি। হ্যাঁ হতাশার প্রকাশ দরকার আছে। নিজেকে উজাড় করে দিয়ে কাঁদবার কিংবা গালি দেয়ার প্রয়োজন আছে। কিন্তু একে চিরস্থায়ী করে দেয়া আত্মহত্যার সামিল।

আজ যেখানে আমাদের আরো অনেক বেশি কাজে ব্যস্ত থাকার কথা, নতুন নতুন সব পরিকল্পনা আর তার বাস্তবায়নে নেমে পড়ার কথা সেখানে আমরা বসে আছি কোনো এক অলৌকিকের অপেক্ষায়। মুক্তিবুদ্ধির চর্চার পথ কখনোই রাষ্ট্র আর সমাজের কাছে অভিলাষের বস্তু ছিল না, হবেও না। সরকারকে দোষ দেই, গালি দেই; গালি তাদের প্রাপ্যও। আমরা কি একবারও ভেবে দেখেছি সরকার আসলে আমাদেরই অংশ? হালাল-হারাম হিজাবের তোড়ে ভেসে গিয়ে আমরাই কি ধর্মকে প্রাত্যাহিক আনুষঙ্গ বানিয়ে দেইনি? আওয়ামীলীগ কিংবা সরকারের এই নতজানু হওয়াতে আমাদের এই বাঙালি থেকে মুসলমান হিসেবে পুনর্জন্ম নেয়ার ভূমিকা কি নেই একটুও?

সুখপাঠ্য নয় এরকম লেখার পাঠক কম। আমার এই লেখা খুব বেশি পাঠকের নজরে হয়তো আসবে না। যাদের আসবে তাদের অনুরোধ করবো, পথে নামুন। পথ মানেই কিন্তু রাস্তা নয়, পথ সমাবেশ নয়। প্রতিবাদ করুন, আন্দোলন চালিয়ে যান নিজের প্রতিটা গণ্ডিতে। এই মুহূর্তে চিরকাল সামনের সারিতে যারা ছিল সর্বোচ্চ বিপদে আছে তারাই। একটু বিশ্রাম দিন তাদের। এখন অনেক বেশি দায়িত্ব আমাদের মতো ব্যাকবেঞ্চারদের ওপর। তাদের নিরাপত্তার নিশ্চিত করে যুদ্ধ চালিয়ে যাবার কর্তব্য এখন আমাদের মতো সাধারণ সৈন্যদের। হ্যাঁ আমরা অনেকেই বিপদে আছি, পরিবারের দায়িত্ব আছে। বিপদ থাকলে পদ্ধতি বদলান, কিন্তু থামবেন না। কলম চলতে হবে, কন্ঠ জোরে ছাড়তে হবে। আর কেউ না এলে পাগলের মতো একা একাই চেঁচিয়ে যেতে হবে।
হতাশা আমাদের বাঁচাতে পারবে না, মুক্তবুদ্ধির চর্চার পক্ষে আন্দোলন পারবে।

পাদটীকা


মন্তব্য

তাহসিন রেজা এর ছবি

কলম চলতে হবে, কন্ঠ জোরে ছাড়তে হবে

ঠিক।

------------------------------------------------------------------------------------------------------------
“We sit in the mud, my friend, and reach for the stars.”

অলীক জানালা _________

ইয়ামেন এর ছবি

রানাপু, লেখা চমৎকার হয়েছে। খুব বাজে একটা সময় পার করছি আমরা। সত্যি কথা বলতে এতটা হতাশ অনেকদিন লাগেনি। একটা করে ব্লগার হত্যা হচ্ছে তা দেখে যতটা কষ্ট লাগছে তার থেকেও বেশী লাগছে প্রতি হত্যার পর আশেপাশের মানুষের প্রতিক্রিয়া। 'কলম চলবে' কথাটা মনেপ্রানে বিশ্বাস করি বলে আমরা অনেকে যে যার অবস্থানে আছি সেখান থেকে কাজ চালিয়ে যাচ্ছি, কিন্তু আজকাল অনেক সময়েই মনে হয় লড়াইটা ঠিক কার সাথে করছি? কেন করছি?
Can we, or should we even attempt, to educate a people that does not wish to be educated?

--------------------------------------------------------------------------------------------------------------------

সব বেদনা মুছে যাক স্থিরতায়
হৃদয় ভরে যাক অস্তিত্বের আনন্দে...

রেজওয়ান এর ছবি

বাংলাদেশের সমাজ, ধর্ম, রাজনীতি - সর্ব ক্ষেত্রে ভয়ের সংস্কৃতি - দমনের সংস্কৃতি বিরাজমান। সেই বিন্দু বিন্দু থেকে সিন্ধুর মত ব্লগাররাই যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও ধর্মীয় রাজনীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছিল - যা পূর্ণতা পায় শাহবাগ আন্দোলনের মাধ্যমে - অনেককে এক করতে পেরেছে সেটা। সেটাকে থামানোর জন্যেই তো হেফাজতের সৃষ্টি - ব্লগারদের কলঙ্কিত করা হোল - তারপর ধরে ধরে মারা হচ্ছে । এত সেই ৭১ এর বুদ্ধিজীবী হত্যার মতই প্লান। একটাই উদ্দেশ্য - ভয় দেখানো। আর যেন মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে না পারে - আর যাতে না লিখে - প্রশ্ন না করে, বিব্রত না করে - সব মহলকেই।

ভয়ের সংস্কৃতি ধর্মরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পক্ষে সহায়ক হয়। কারণ অসহায়ত্ব মানুষকে ধর্মাশ্রয়ী করে, তার ইহলৌকিকতাকে লুপ্ত করে। বাংলাদেশে অসহায়ত্ব এখন গ্রাস করছে সবাইকে। এ রকম পরিবেশেই ভয়ের সংস্কৃতি ছড়িয়ে যায়। হতাশা এবং অসহায়ত্ব মানুষকে ধর্মীয় ভাবাদর্শের অধীনস্থ করে ফেলে এই সুযোগ কাজে লাগিয়েই সমাজে মৌলবাদ ব্যাপকভাবে বিস্তৃত হয়।

কিন্তু আমরা কি ভয় পেয়ে থেমে যাব? অসহায় হয়ে যাব? ব্লগাররা গোষ্ঠীবদ্ধ নয় - কিন্তু তারা দল বা গোষ্ঠী হিসেবে টার্গেট। রাস্তায় প্রতিবাদ করা ছাড়া আর কোন কাজে ব্লগাররা এক হয়নি। এটাই ব্লগারদের সবচেয়ে বড় দুর্বলতা।

আমাদের প্রতিরোধ করতে শিখতে হবে। শুধু প্রতিবাদে কাজ হবে না। দেশে আইনের শাসন নেই - বলেছেন আইনজ্ঞরাই - কাজেই বিচার চেয়ে লাভ নেই।

আমরা যা করছিলাম - করে যাব। '৭১ থেকে '৯৪ বা '১৩ - যুদ্ধ এখনো শেষ হয়নি।

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

চলুক

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

আরেক ফাল্গুন২ এর ছবি

একটা জিনিস আমরা প্রায়ই ভুল করি। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের আন্দোলন শুরু হয়েছে অনেক আগে, সেই জাহানারা ইমাম এর হাত ধরে। পরবর্তিতে বছরের পর বছর তরুণ ব্লগাররা লেখালিখি, আলোচনার মাধ্যমে এটার পক্ষে যথেষ্ট জনমত সৃষ্টি করে। যার ফলে আওয়ামীলীগ সরকার এই বিচার প্রক্রিয়া শুরু করতে বাধ্য হয়। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শাহবাগ আন্দোলনের কারণে হয়নি।

শাহবাগ আন্দোলনটা শুরু হয়েছিলো, যখন হতাশ হয়ে এই তরুণরা লক্ষ্য করে যে আইনের ফাঁক গলে এই চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধীদের বেরিয়ে যাবার বা লঘুদন্ড পাবার একটা প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। আন্দোলনটা হয় এদেরকে যুদ্ধাপরাধীদের ফাকফোকর গলে বেরিয়ে যাবার পথ বন্ধ করতে সরকারকে বাধ্য করার উপলক্ষ্যে। সময়টা জাতীয় নির্বাচনের সাথে কোইনসাইড করায় নানান সাতপাচ বিচার করে সরকারও এই আন্দোলনের উপর খড়গহস্ত না হয়ে, পৃষ্ঠপোষকতা দেয়।

ঐ সময়ে শাহবাগে যে জনসমুদ্রের সৃষ্টি হয়েছিলো সেটা সরকার চাইলেও দাবাতে পারত না। ফলে পক্ষ নেওয়াটাই সবচেয়ে সেরা পথ হিসাবে দেখা দেয় তাদের সামনে। কিন্তু সরকারের সামনে এই তরুণরা একটা অচেনা অমিত শক্তি হিসাবে দেখা দেয় যে শক্তি তাদের অচেনা। জামায়াত-বিএনপি ও তাদের সমমনা গোষ্ঠির কাছে ত এটা মুর্তিমান আতঙ্কের রূপ নেয়। ফলে জামায়াত পন্থি ইসলামিক জঙ্গিরা হত্যা লীলা শুরু প্রমিনেন্ট ব্লগারদের ধরে ধরে। এবং অবাক হয়ে দেখা যায় আওয়ামী সরকারও তাতে “নীরবতাই সম্মতিরলক্ষণ” দেখাচ্ছে!

কেন সরকারের এই নিস্ক্রিয়তা? কারণ, তারা চায় তারুণ্যের এই অমিত শক্তি বাগে থাকুক। নইলে অভ্যস্ততার রাজনৈতিক অচলায়তন ভেঙ্গে নতুন ভাবে ভাবতে হবে, কাজ করতে হবে। যোগ্যতর নবীন নেতৃত্ব খুঁজতে হবে। সে ঝামেলা কে পোহাতে চায়?

হাসিব এর ছবি

ফলে জামায়াত পন্থি ইসলামিক জঙ্গিরা হত্যা লীলা শুরু প্রমিনেন্ট ব্লগারদের ধরে ধরে।

সবকিছুই জামাতের ঝোলায় পোরা এ‍্যানালাইটিকালি সাউন্ড না বিশ্লেষণ হিসেবে। জামাত, হেফাজত, আনসারুল্লাহ, আল বাইয়‍্যিনাত আলাদা আলাদা এনটিটি। তাদের বিশ্লেষণও আলাদা এনটিটি হিসেবে হওয়া দরকার।

রানা মেহের এর ছবি

হাসিব ভাই, তারা এনটিটি আলাদা হতে পারে লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্যতো একই। আলদা ফিগার বলেতো আমরা এরকম ধরে নিতে পারিনা জামাতের সাথে তাদের কোন সংশ্রব নেই। জামাতের মাঠ পর্যায়ের কর্মীদের সমর্থন ও সাহায্য ছাড়া এই ইসলামিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখা অসম্ভব।

-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস

হাসিব এর ছবি

ওদের লক্ষ‍্য উদ্দেশ‍্য এক হতে পারে, এক সাথে কাজও করতে পারে। এ সত্ত্বেও এদের পার্থক‍্য রয়েছে। সবকিছু ইউনিফায়েড করলে পার্থক‍্যের খুটিনাটি হারায়। এটা বিশ্লেষণ দুর্বল করে।

মিষ্টার জিরো এর ছবি

জামাত, হেফাজত, আনসারউল্লাহ সবগুলোই একই রসুনের একেকটা অংশ। গোড়া ঠিকই এক। তবে অবশ্যই এদের আলাদা করে পরিচয় করানো উচিত। না হলে দেখা যাবে হয়তো একসময় সবকিছুই জামাতের ঝুলিতে দিয়ে এই জঙ্গীদের সাধু সাজিয়ে যে কোন রাজনৈতিক দল গুটি চাল দিচ্ছে। এটা অবশ্যই আমার ক্ষুদ্র ধারণা থেকে বলা।

যেমন ধরেন, সিলেটের ইমাম সমিতির সভাপতি জামাতের কর্মী। সে আবার হেফাজতের কর্মকান্ডের সাথেও পরোক্ষভাবে জড়িত। হেফাজতের অনেক কাজের সহযোগী হিসেবে তাকে অনেকবার দেখা গেছে।
আবার ধরেন শাহীনুর পাশা এমপি। ইনি জামাত থেকে নির্বাচিত এমপি ছিলেন। আবার হেফাজতের সিলেট অঞ্চলের নেতা। যদিও সিলেটে হেফাজতের কমিটি হবার সময় অনেক আভ্যন্তরিন কারণে এদের ভিতরে ভিতরে কোন্দল দেখা দিয়েছিল। তাও সম্ভবত এখনো অমিমাংসিত অবস্থায় রয়েছে।
আরো অনেকেই আছে যারা সরাসরি জামাত এবং হেফাজতের সাথে জড়িত। কিন্তু এদের আলাদা করে বিশ্লেষণ না করলে জামাতকে শত্রু বানিয়ে যদি হেফাজতকে সাধু বানানোর ধান্দা কখনো করা হয় তাহলে হেফাজত ঠিকই ক্লিন চেক যাবে। ফাঁসবে একাই জামাত।

সুবোধ অবোধ এর ছবি
শুভাশীষ দাশ এর ছবি

লড়াই ছাড়া উপায় নাই। কথাগুলো বলার জন্যে ধন্যবাদ।

হযবরল এর ছবি

এই খুনগুলো একের পর এক হচ্ছে এবং বিচার হচ্ছে না। এটা একধরণের ডি-হিম্যানাইজেশন। আমাদের দেশে মানুষ মারা যাওয়া খুবই স্বাভাবিক একটা ব্যাপার। লঞ্চডুবি হবে ১৭০ জন মারা যাবে এটাই স্বাভাবিক, গাড়ী এক্সিডেন্ট হবে ১৬ জন মারা যাবে এটাই স্বাভাবিক। একজন নিজের বিশ্বাস কিংবা চিন্তার প্রতিফলন ঘটাবে ছাপার অক্ষরে এবং সে খুন হবে এটাই বাস্তবতা এই ধরণের একটা স্বাভাবিকতা তৈরি করতে চায় এরা। এই স্বাভাবিকতার বিরুদ্ধে দাঁড়াতে হলে, এই লেখাগুলো ছড়িতে দিতে হবে সব জায়গায়।

রানা মেহের এর ছবি

তাহসিন রেজা - ধন্যবাদ।

ইয়ামেন - হতাশা আসবেই। লড়াই-আন্দোলন জয় পরাজয়ের পাশাপাশি আরো নানাবিধ আনুষঙ্গ নিয়ে আসে, বেশিরভাগ সময়েই যা অবিমিশ্র সুখের হয়না। আমরা আসলে লড়াই করে যাচ্ছি একটা অবিশ্বাসের শক্তির সাথে। নিজের বিশ্বাসের প্রতিই বিশ্বস্ত নয় যারা। বিরোধীপক্ষে আরো আছে আমাদের ভাই বন্ধু কিংবা কাছের মানুষ। এদের জন্যই কষ্ট হবে বেশি। কিন্তু নিজের বিশ্বাসে অটল থাকলে এরাও পথে নামবে আজ অথবা কাল, এটা নিশ্চিত।

রেজোয়ান ভাই -

ভয়ের সংস্কৃতি ধর্মরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পক্ষে সহায়ক হয়। কারণ অসহায়ত্ব মানুষকে ধর্মাশ্রয়ী করে, তার ইহলৌকিকতাকে লুপ্ত করে। বাংলাদেশে অসহায়ত্ব এখন গ্রাস করছে সবাইকে। এ রকম পরিবেশেই ভয়ের সংস্কৃতি ছড়িয়ে যায়। হতাশা এবং অসহায়ত্ব মানুষকে ধর্মীয় ভাবাদর্শের অধীনস্থ করে ফেলে এই সুযোগ কাজে লাগিয়েই সমাজে মৌলবাদ ব্যাপকভাবে বিস্তৃত হয়।

আপনার এই কথাগুলোই আসলে তাদের মাস্টার প্ল্যান। বোকার মতো তাদের পরিকল্পনায় পা ফেলছি আমরা। যুদ্ধাপরাধী বিচার আন্দোলন শুধু ব্লগারদের আমি এরকমটা মনে করিনা। ব্লগাররা একে বেগবান করেছেন, প্রানচাঞ্চল্য দিয়েছেন কিন্তু এর জন্ম দিয়েছেন শহীদ জননী জাহানারা ইমাম আর তার অনির্বচনীয় শক্তি।

আইনের শাসনের বিপক্ষে প্রতিবাদ বলতে কী বুঝিয়েছেন আমি ঠিক পরিষ্কার নই। তবে আইনের শাসন না থাকলেও ৫৭ ধারা টাইপ জিনিসপত্র বাদ দিয়ে আইনের শাসনই সঠিক পথা।

-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস

ইয়ামেন এর ছবি

চলুক

--------------------------------------------------------------------------------------------------------------------

সব বেদনা মুছে যাক স্থিরতায়
হৃদয় ভরে যাক অস্তিত্বের আনন্দে...

রানা মেহের এর ছবি

আরেক ফাল্গুন- যুদ্ধাপরাধী বিচার শুরু হবার ব্যাপারে আপনার সাথে সম্পুর্ন একমত। জাহানারা ইমাম আমাদের মধ্যে একটা স্বপ্নের জন্ম দিয়েছিলেন, যেই স্বপ্ন মাথায় রেখে কাজ করে গেছি আমরা সবাই। উনি একা একটা মানুষ ঐ সময় না দাঁড়ালে আজ এই বিচার আমরা পেতাম কিনা সন্দেহ।

শাহবাগের বিষয়ে সরকারের সমর্থনের বিষয়ে আংশিক একমত। সরকার এক বিপুল জনগোষ্ঠীর বিপক্ষে যেতে চায়নি। কিন্তু এও সত্যি সরকারের সমর্থন না থাকলে এই আন্দোলন কোনদিন এতদুর আসতে পারতোনা, আর আন্দোলন বানচাল করতে চাইলে অনেক অনেক উপায় ছিল।

তারুন্যের অমিত শক্তিকে ভয় পেয়ে সরকারের নীরবতাই সম্মতির লক্ষণ কথাটায় তীব্রভাবে বিরোধীতা জানাচ্ছি। মুক্তচিন্তার পক্ষের লড়াইয়ে এই সরকারের আচরন ভীরু, দুর্বল এবং হতাশাব্যাঞ্জক, কিন্তু এর সমর্থক নয়। আওয়ামীলীগ তরুনদের হাত ধরেই এতদুর এসেছে। তারুন্যের শক্তিকে কীকরে কাজে লাগাতে হয় এই দল আর দলের প্রধান জানেন। সরকারের নিষ্ক্রিয়তার অনেক কারণ-অকারণ আছে। একই সাথে আছে নব্য মুসলমানদের ভোট হারানোর আশংকা। আমরা ধর্মের খোলস ছেড়ে বের হয়ে আসলে এই সরকারই ধর্মের বিরুদ্ধে কথা বললেই শাস্তি ধরনের কথাবার্তা বলার আগে ১০ বার ভাববে।

সুবোধ অবোধ - ধন্যবাদ।

শুভাশীষ দা - কতদিন পর আপনাকে সচলে দেখলাম বলুন তো?

-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস

আরেক ফাল্গুন২ এর ছবি

সরকার ভয়ে, কিংবা না বুঝে, কিংবা কোনো আভ্যন্তরিন জটিলতায়, কিংবা স্রেফ রাজনৈতিক ঘুটিবাজি করে যে কারণেই এটা করুক না কেন, নীরব ভূমিকা পালন করছে।

এই “নীরবতাই সম্মতির লক্ষণ” আপনি না বুঝলেও বা অস্বীকার করলেও বা জোর করে নিজেকে বুঝ দিলেও, আনসারুল্লাহরা কিন্তু আপনার মত ভাবছে না। তাদের ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনার সাথে নিজেদের কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছে। এবং গ্রেফতারের হুমকি পাচ্ছে কারা? সেই তরুণ ব্লগাররাই। এর চেয়ে ভালোভাবে চোখে আঙুল দিয়ে আমার পক্ষে দেখানো সম্ভব না।

রানা মেহের এর ছবি

আরেক ফাল্গুন২, আপনার কথা বুঝতে অসুবিধা হচ্ছেনাতো। সহমত পোষন করছিনা হাসি

সরকার যেকোন কারণের হোক ব্লগারদের বিপক্ষে দাঁড়িয়েছে। আপনার দেয়া সব পয়েন্টের কিছু কিছু আছে তার প্রভাবক হিসেবে আর তার সাথে আছে ধর্মকে নিজের জীবনাচরন বানানোর আমাদের প্রানপণ প্রয়াস। তবে যেই কারণেই হোক না কেন সরকারের অবস্থান সমর্থনযোগ্য নয়। কিন্তু আপনি যখনি বলবেন এই অবস্থান মানে "নীরবতাই সম্মতির লক্ষণ" তখন আপনি সরকারকে এই হত্যাকাণ্ডের সমর্থক বানিয়ে দিচ্ছেন, পরোক্ষভাবে হলেও তাদের অংশগ্রহণকারী বানিয়ে দিচ্ছেন। আমি এই মতের সাথে একদমই একমত নই। সরকারকে গালি দেয়ার ১০১টা কারণ আছে, কিন্তু সরকার খুনী নয়।

-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস

আরেক ফাল্গুন২ এর ছবি

প্রত্যক্ষ না পরোক্ষ সেটা নিয়ে বিতর্ক হতে পারে। কিন্তু সরকারও যে দায়ী সেটা নিয়ে বিতর্কের অবকাশ নেই। এটা অস্বীকার করা স্রেফ পার্টিজান স্পিরিট। কেননা, যে হাতেগোনা কয়েকজন আনসারুল্লাহ ধরা পড়েছে, তাদের কে সূত্র ধরেই এই নেটওয়ার্কের মূল হোতাদের নাগাল পাওয়া সম্ভব এবং পুরো নেটওয়ার্ক উপড়ে ফেলা সম্ভব।

বর্তমানে জঙ্গিদের সাথে হাতমেলানো বিএনপি-ই এক সময় বাংলাভাই এর দলকে ঝাড়েবিনাশে উপড়ে ফেলেছিলো। সেখানে 'সেক্যুলার' আওয়ামীলীগ চেষ্টা করেও পারছে না তা মেনে নেওয়া সম্ভব নয়। বরং এই নিষ্ক্রিয়তা ইচ্ছাকৃত।

ইতিহাসের কাঠগড়ায় কোনো দলকে দাঁড়াতে হবে তাদের কর্মকান্ডের আমলনামা হাতে করে। তদের "মনে কি ছিলো" কোনো পার্টিজানের সে বিষয়ক অনুমানের সেখানে কোনো দাম নাই। আওয়ামীলীগের আমল নামায় ব্লগারদের রক্তের দাগ লাগতে শুরু করেছে।

রানা মেহের এর ছবি

আরেক ফাল্গুন২, সরকার দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ, একথা অবশ্যই ঠিক কিন্তু সরকার খুনের সমর্থক এটা ভুল। হাতেগোনা আনসারুল্লা ধরা পড়েছে তাদের সুত্রে মূল হোতাদের নাগাল পাওয়া সম্ভব, আনসারুল্লাদের কাজের ধরণ সম্পর্কে জানা থাকলে আমরা এরকম ভাবতে পারবোনা। তারা এত কাঁচা কাজ করেনা।

আপনি বিভিন্ন মন্তব্যে বারবার সরকারকে হত্যাকারী বলতে চাইছেন কোন শক্ত যুক্তি ছাড়াই। দায়িত্ব পালনে অকৃতকার্যতা আর হত্যায় অংশগ্রহণ এক কথা নয়।

-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস

ইয়ামেন এর ছবি

আরেক ফাল্গুন২, সরকারের গাফিলতা বা ব্যালান্সিং অ্যাক্ট, সেটা যেই কারনেও হউক (পাব্লিক সেন্টিমেন্টের ভয়ে, ভোটের রাজনীতির জন), এবং 'সম্মতি' কিন্তু দুই জিনিস। এই দুটোকে এক করে ফেলাও কিন্তু ভুল। তারা যা করছে তা অবশ্যই ভুল, কিন্তু হত্যায় 'সম্মতি'র মত ঘৃণ্য অপরাধ নয়।

--------------------------------------------------------------------------------------------------------------------

সব বেদনা মুছে যাক স্থিরতায়
হৃদয় ভরে যাক অস্তিত্বের আনন্দে...

আরেক ফাল্গুন২ এর ছবি

"নীরবতাই সম্মতির লক্ষণ"

এই তিনটি শব্দের কোন কোনটি আপনি বুঝতে পারছেন না? সরকারের মনের কথা তো ব্লগারদের বোঝা সম্ভব নয়। তাদের কর্মই তাদের অবস্থানের বহিপ্রকাশ। এবং এক্ষেত্রে তাদের অবস্থান হেফাজতিদের সংগে। ৩২ কোটিটাকার অনুদান সরকারই দিয়েছে হেফাজত কে। ওলামালীগ চালাচ্ছে দরকারী দলই... এতকিছুর পরেও সরকারের কোনো দায় নেই?

আর কতজন ব্লগার হত্যা হবার পর আপনি মত পাল্টাবেন?

অতিথি লেখক এর ছবি

আরেক ফাল্গুন২,
আপনার ক্ষোভের জায়গাটা আমি বুঝতে পারছি। কিন্তু আপনার সাথে একমত হতে পারছি না । একটা উদাহরন দিয়ে বোঝানোর চেষ্টা করছি। ৭১ এ অনেক সাধারন মানুষের সামনেই মুক্তিযোদ্ধা বা মুক্তিকামী মানুষকে হত্যা করা হয়ছে। প্রান ভয়ে এদের অনেকেই নিরব ছিলেন। আপনি এদের খুনি বলবেন?? হ্যা এদের আপনি কাপুরুষ বলতে পারেন। আমাদের অনেকেই এমন কাপুরুষ। নিজের বা নিজের পরিবারের নিরপত্তাই আমাদের কাছে মুখ্য। তবে খুনের সংস্কৃতি দীর্ঘজীবি হতে এমন কাপুরুষতা খুব জরুরী ইলিমেন্ট। বাংলাদেশে তাই হচ্চে এবং তাদের এই কাপুরুষতার খোলশ ছেড়ে সাহসী হবার আহবান জানিয়েই এই লেখা ।

কিন্তু কাপুরুষতাকে আপনি খুনের দায়ের সাথে এক করে ফেললে কাপুরুষ উজ্জিবিত হবার পরিবর্তে আরো কুকড়ে যাবার সম্ভাবনা থাকে ।

সরকারের ব্যর্থতার বিষয়টা আমরা আমাদের দৃষ্টভংগি থেকে দেখছি ।
সরকারের আচরন মুক্তবুদ্ধির চর্চার অন্তরায় হিসেবে দেখছি। কিন্তু
আওয়ামিলীগ রাজনৈতিক দল। তাদের হিসাব অন্যরকম। দেশের
বর্তমান প্রেক্ষাপটে তাদের হিসাবটা অনেকটা এমন,
"কয়েকজন মুক্তবুদ্ধির চর্চা করালোক মারা গেলে দেশে সার্বিক রাজনৈতিক
পরিস্থিতিতে তেমন পরিবর্তন হচ্ছে না, তাই পরিস্থিতি ঘোলা না করে চুপ করে
বসে থাকাই লাভজনক। আমরা ক্ষমতায় থাকাকালীন সময়ে হাতে গোনা কয়েকজন
নাস্তিক মরছে, আমরা ক্ষমতা থেকে বিতাড়িত হলে মুক্তমনা দের মাস মার্ডার হবে। "

সমস্যাটা হচ্ছে, এই মুক্তবুদ্ধির চর্চাকারীদের হত্যার সংস্কৃতি ভবিষ্যতের জন্য যে কতটা ভয়াবহ
অন্ধকার সময় বয়ে আনবে " সেটার গুরুত্ব আমি বা আপনি বুঝতে পারলেও আওয়ামিলীগের
রাজনৈতিক হিসাবের খাতায় তার অবস্থান অনেক নিচের দিকে। আমাদের দরকার সেটাই তাদের
বোধগম্য করা ।

মামুনুর রশীদ
==========
mamun babu ২০০১ at gmail.com
হাজার মানুষের ভিড়ে আমি মানুষেরে খুজে ফিরি

ইয়ামেন এর ছবি

মামুনুর রশীদ ভাই একেবারে মনের কথা বলেছেন।

--------------------------------------------------------------------------------------------------------------------

সব বেদনা মুছে যাক স্থিরতায়
হৃদয় ভরে যাক অস্তিত্বের আনন্দে...

আরেক ফাল্গুন২ এর ছবি

৭১ এ অনেক সাধারন মানুষের সামনেই মুক্তিযোদ্ধা বা মুক্তিকামী মানুষকে হত্যা করা হয়ছে। প্রান ভয়ে এদের অনেকেই নিরব ছিলেন। আপনি এদের খুনি বলবেন??

কিসের সাথে কিসের তুলনা দিলেন ভাই? এখন বাংলাদেশেও অনেকে মনে মনে, এই হত্যাকান্ডকে সাপোর্ট করলেও প্রাণভয়ে, রাস্তায় গিয়ে মানববন্ধন করছেন না। তাদেরকে আমি কখনোই দায়ী করব না। এমনকি কাপুরুষও বলব না। কিন্তু 'সরকার' কোনো সাধারণ মানুষ না।

সরকারের ভয় পেয়ে পিছিয়ে যাওয়ার কোনো অজুহাত হয় না। জনগণের জানমালের নিরাপত্তাবিধানই তাদের সবচেয়ে বড় দায়িত্ব। সেই দায়িত্ব পালনের জন্য কোটিকোটি টাকা খরচ করে বড় বড় বাহিনি পালা হয়। এছাড়া সরকার দলের নিজস্ব কর্মীরা আছেই, যারা এলাকায় এলাকায় সচেতনতা সৃষ্টি, বিভিন্ন জঙ্গী সম্ভাবনাময় প্রতিষ্ঠান এর উপর সামাজিক নজরদারি ইত্যাদি করতে পারে। এতকিছু নিয়েও কিছু না করাটা স্রেফ কাপুরুষতা-ই নয়। সরাসরি হত্যায় অংশগ্রহণ করার সামিল।

আরেক ফাল্গুন২ এর ছবি

দুঃখিত "এখন বাংলাদেশেও অনেকে মনে মনে, এই হত্যাকান্ডকে সাপোর্ট করলেও প্রাণভয়ে, রাস্তায় গিয়ে মানববন্ধন করছেন না।"

বলে ফেলেছি। আসলে বলতে চেয়েছিলাম,

"এখন বাংলাদেশেও অনেকে মনে মনে, এইস হত্যাকান্ডের কান্ডের বিরোধীতা করলেও প্রাণভয়ে, রাস্তায় গিয়ে মানববন্ধন করছেন না।"

ইয়ামেন এর ছবি

আপনার তিনটা শব্দর তিনটাই বুঝতে পারছি। কিন্তু আপনার সাথে একমত না। এখানে মত পাল্টানর কিছু নাই। সরকারের ব্লগারদের বিষয়ে অবস্থান কোনভাবেই সমর্থন করি না। কিন্তু সরকারের ব্লগার হত্যাতে পরোক্ষভাবেও সম্মতি আছে এটা আমি মানছি না। সিম্পল হিসাব।

--------------------------------------------------------------------------------------------------------------------

সব বেদনা মুছে যাক স্থিরতায়
হৃদয় ভরে যাক অস্তিত্বের আনন্দে...

আরেক ফাল্গুন২ এর ছবি

সকল তথ্য প্রমাণের উপস্থিতিতেও 'না মানা' কে কী বলে?

ইয়ামেন এর ছবি

সরকারের সম্মতি আছে সেটার পিছনে এতো জোরাল তথ্য/প্রমান আপনার কাছেও নেই। আপনি কনজেকচারকে যদি তথ্য/প্রমান মনে করেন, তাহলে সেটা আপনার সমস্যা। এই বিষয়ে আপনার সাথে আর বাহাস করার ইচ্ছা আমার নেই। ভালো থাকবেন।

--------------------------------------------------------------------------------------------------------------------

সব বেদনা মুছে যাক স্থিরতায়
হৃদয় ভরে যাক অস্তিত্বের আনন্দে...

রানা মেহের এর ছবি

হযবরল - ধন্যবাদ এই পয়েন্টটা তুলে ধরার জন্য। মৃত্যুর এই মিছিলকে স্বাভাবিক দেখানোই তাদের উদ্দেশ্য, কিছুটা হুলেও তারা সফল। পুরোপুরি সফল হতে দেয়া যাবেনা। একজন অভিজিৎদার মৃত্যু মানে বাংলাদেশ আরো কয়েক ধাপ পিছিয়ে পড়া এই জিনিস মাথায় ঢুকাতে হবে আমাদের।

সাক্ষী সত্যানন্দ, ধন্যবাদ।

-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস

অতিথি লেখক এর ছবি

চলুক

দেবদ্যুতি

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

খুব জরুরি একটা লেখা। খুব দরকারি কিছু কথা। চলুক
নিষ্ক্রিয়তা একটা ছোঁয়াচে রোগের মতো। ক্রমশ গ্রাস করে নিচ্ছে সবকিছু। এখন চারপাশ জুড়ে শুধু ভণ্ড মানুষদের ফুলপাখিলতাপাতা... ফুলপাখিলতাপাতা... ফুলপাখিলতাপাতা... :-/

শিশিরকণা এর ছবি

এটা শুধু বাংলাদেশের ক্ষেত্রে হচ্ছে তা নয়। যারা মুক্ত বুদ্ধির চর্চা করে, প্রচলিত ধারাকে প্রশ্ন করে, কারণ খুঁজতে যায়, বিশ্লেষণ করতে চায়, তারা সব সময় ক্ষমতাধারীদের চক্ষুশূল। এটাই সব কালে সব সময়ে হয়ে আসছে। মেট্রিক্স সিনেমার মত, একটা কল্পজগত তৈরি করে সবাইকে বুঝ দিয়ে রাখা হয়েছে, যারা তার বাইরে দেখতে পাচ্ছে চিন্তা করতে পারছে, তাদেরকে ভাইরাস হিসেবে ধরে ধরে নিশ্চিহ্ন করে দেয়া সিস্টেমের নিশ্ছিদ্র চলমান রাখার জন্য জরুরী। সিস্টেম বলতে ক্ষমতাধারী থেকে শুরু করে সকল সুবিধাভোগীরা।
আপনি বাকি মানুষের সহযোগিতা / সহমর্মিতা পাবেন না, কারন most are not ready to be unplugged.

~!~ আমি তাকদুম তাকদুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল ~!~

নির্ঝর অলয় এর ছবি

রানা আপু, লিখে সীমা লঙ্ঘন করে ফেললেন কীনা বুঝতে পারছি না। সেটার জন্য কত্তার রায় লাগবে।

এবার আসি আসল কথায়- নাস্তিক্যকে এ দেশে সবচেয়ে বড় অপরাধ হিসেবে দেখা হয়। এদেশের বোধ হয় ৯৯% মানুষের মতই হল- যে নাস্তিক্য ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ। এর জন্য শাস্তি প্রাপ্য- পরকালেরটা বাদমে হয়েঙ্গা- ইহকালেরটা দেবার দায়িত্ব যারা নিয়েছে তাদের প্রতি প্রচ্ছন্ন সমর্থন দেশের অধিকাংশ মানুষেরই আছে। কাজেই সরকার আদপে কিছু করবে না।

এই মানসিকতার সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপট অনুসন্ধান করা জরুরী। দেখুন- আরব্য সভ্যতায় আদৌ নাস্তিক্যবাদী বা অজ্ঞেয়বাদী কোন দর্শন কি আদৌ ছিল? আমি পাই নি। আরবদের সংঘাত বরাবরই আস্তিকদের মধ্যেই ছিল। আব্রাহামিকগণ এবং প্যাগানরা সবাইই আস্তিক ছিল। নাস্তিক্যের মত "জঘন্য" ব্যাপার কি ঐ সমাজে ছিল?

যতীন সরকার জ্ঞানী ব্যাখ্যা দেন যে, দেবী চাটুয্যে তো খুন হন নি, অভিজিৎ রায় হয়েছেন। জা,তা বলেন যে, শিবদাস বাঁড়ুজ্জে তো খুন হন নি। এরা ভুলে যান যে, দেবী চাটুয্যের সমাজে ষড়াঙ্গ দর্শনের ৫টিই নাস্তিক্যবাদী বা অজ্ঞেয়বাদী। আস্তিক্যের মাঝেও রয়েছে সর্বেশ্বরবাদ এবং সুফিজম তথা অদ্বৈতবাদ। কাজেই ওই সমাজ বহু যুগ ধরেই নাস্তিক পয়দা করেছে এবং নাস্তিক্যের প্রতি ডিসেনসিটাইজড হয়েছে। নাস্তিক্যকে ওই দেশে সীমা লঙ্ঘন বলে না এবং রাষ্ট্রটির প্রথম প্রধানমন্ত্রীও আস্তিক ছিলেন না, লোকে তো নাস্তিকই বলে!

কাজেই দুরাশা করবেন না, সীমা লঙ্ঘন করবেন না!

নির্ঝর অলয় এর ছবি

হু আহমেদ চিরকালই বিচিত্র, উনি ছফার শিষ্য ছিলেন। কাজেই আওয়ামী বিরোধিতার জন্য অনেক কিছুই করতে হয়েছে। উনি যেমন তুই রাজাকার সংলাপের জন্ম দেন, তেমনি আবার জাসাসের সহসভাপতি হন। ( রাজাকার সমগ্রঃ মুনতাসীর মামুন)

রানা মেহের এর ছবি

নির্ঝর, বিশদ মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ।

নাস্তিকতা নিয়ে মানুষের এই কঠোর মনোভাব কিন্তু খুব বেশিদিনের পুরনো নয়, অপেক্ষাকৃত নতুনই বলা চলে। নাস্তিকতাকে এই দেশে ফুলের মালা নিয়ে স্বাগত জানানো না হলেও দেখা মাত্র গুলির নির্দেশ ধরনের (উপমা) ধরণের অপরাধ হিসেবে দেখা হয়নি কখনো। হলে আরজ আলী মাতুব্বর, আহমেদ শরীফের মতো লোকজন স্বাভাবিক জীবন যাপন করে যেতে পারতেন না। বন্যা আপাও তার সাক্ষাৎকারে একই রকম কথা বলেছিলেন।

নাস্তিকতা নিয়ে এখন মানুষের এরকম প্রতিক্রিয়া জানানোর কারণ আমার মনে হয় দুটো। বৈশ্বিক রাজনীতিতে মুসলমানদের অবস্থান এবং বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে ৭৫ পরবর্তী বিশেষ করে এরশাদের সময় বাংলাদেশে মাদ্রাসা এবং প্রি ক্যাডেট জাতীয় স্কুলে সরকারের প্রচ্ছন সমর্থনে জামাতের ব্যাপক বিনিয়োগ। সেই সময়কার জন্ম নেয়া পড়াশোনা করা প্রজন্মই এখন ফুল হয়ে ফুটে নাস্তিকতার বিপক্ষে আমামা বেঁধে নেমেছেন। এই দীর্ঘ ব্রেইন ওয়াশিং প্রক্রিয়াকে ঠিক জায়গায় আনতে সময় লাগবে, ধৈর্য লাগবে কিন্তু আমাদের অজস্র তীব্র কঠিন সফঅল আন্দোলন থেকে জানি এই জিনিস সম্ভব।

যতীন সরকার অ্যাটেনশন সিকিং ধরনের পাবলিক, তার কথা আলোচনা করে লাভ নেই। ভারতের সুবিধা শুধু নাস্তিকতার চর্চা নয়, বহু ধর্মের সম্মেলন যা নতুন কিছু গ্রহণ করতে সুবিধা এনে দিয়েছে।

হুমায়ুন আহমেদ জাসাসের সহসভাপতি ছিলেন নাকি? এই তথ্যতো জানা ছিলনা! ব্যাপক পাবলিক দেখি!

-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

নাস্তিকতা নিয়ে মানুষের এই কঠোর মনোভাব কিন্তু খুব বেশিদিনের পুরনো নয়, অপেক্ষাকৃত নতুনই বলা চলে।

রানাপা, এই পরিবর্তনের সাথে প্রচারমাধ্যম (নিরপেক্ষ প্রথম আলো থেকে শুরু করে আন্তর্জাতিক মানের পিস টিভি) এরও একটা যোগসূত্র আছে। হুমায়ুন আজাদ স্যারের কথাই যদি বলি- "আমার অবিশ্বাস" বইটা অনেক বেশি উচ্চমার্গের। এই বইটার কথা ক'জন জানে? "পাক সার জমিন সাদ বাদ" এর কথ জিজ্ঞাসা করেন, অধিকাংশ মানুষেই চিনবে। এই সুস্পষ্ট পার্থক্য গড়ে তুলেছে প্রচারমাধ্যম। এখনকার মতন ফেসবুক এবং টিভি'র ছড়াছড়ি থাকলে আহমদ শরীফ কিংবা আরজ আলী মাতুব্বর এতটা নিভৃতে-নির্বিঘ্নে জীবন যাপন করে যেতে পারতেন কিনা আমার সন্দেহ আছে। নিজের গ্রামে মাতুব্বরের জীবন একেবারে নির্বিঘ্ন ছিল না কিন্তু।

পুনশ্চঃ ইনি ঢাবি'র সাদা দলে ছিলেন এটি আত্মস্বীকৃত। অন্ধভক্তরা যতই তাঁকে "স্বচ্ছ ও আন্তর্জাতিক" মানের নিরপেক্ষ বলে যাহির করার চেষ্টা করুক সেটি সত্যের অপলাপ বই আর কিছু না। জাসাসের কথা জানি না, তবে হয়ে থাকলে কি এর সূত্রেই আব্দুর রহমান বিশ্বাসের আমলে একুশে পদক (১৯৯৪) প্রাপ্তি?

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

রানা মেহের এর ছবি

দেবদ্যুতি - ধন্যবাদ

অপ্র - ধন্যবাদ ভাইয়া। আমাদের বসে থাকার অলসতা করার একদম সময় নেইরে। ওরা বসে নেই আমরা কীকরে বসি বল? আমরা চারপাশ ভুলে গিয়ে যত বেশি ফুল লতা পাতায় ঝুঁকে যাব, ওরা জিতে যাবে তত বেশি। ফুল খেলবার দিন নয় অদ্য।

শিশিরকণা, একদম অক্ষরে অক্ষরে একমত আপনার সাথে। ক্ষমতাশীল আর প্রতিষ্ঠিত তত্ত্বের সাথে মুক্তবুদ্ধির চর্চাকারীদের ইতিহাস প্রাগৈতিহাসিক, ঘটমান বর্তমান এবং অনিবার্য ভবিষ্যৎ। যুক্তি নিয়ে প্রশ্ন নিয়ে যারা কাজ করে গেছেন, এর মধ্যেই করে গেছেন। হ্যা আওয়ামীলীগের কাছে আমাদের প্রত্যাশা বেশি বলে আশা ভঙ্গের বেদনাও বেশি। কিন্তু এর মধ্যেই আমাদের কাজ করে যেতে হবে, লড়ে যেতে হবে। আনপ্লাগড হতে অরাজি মানুষেরাও একদিন আসবেন আমাদের সাথে আমাদের নিজেদের থেমে পড়া চলবেনা শুধু।

-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস

অনিন্দ্য রহমান এর ছবি

চলুক


রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক

মিষ্টার জিরো এর ছবি

রানা আপু, এই নষ্ট সময়টাতে চারদিকের হতাশা আর আপনজনদের কাছ থেকে হাত পা বেঁধে ঘরে বসে থাকার উপদেশ শুনতে শুনতে ভিতরে ভিতরে প্রতিনিয়তই যখন ভাঙ্গছিলাম, ঠিক তখনই আপনার এই লিখাটি মনের মাঝে কতোটুকু উৎসাহ আর সাহস দিয়েছে তা আপনাকে বুঝাতে পারবো না।
অনেক অনেক ধন্যবাদ আপু। অসাধারণ হয়েছে লিখাটি।

নিটোল এর ছবি

দারুণ লেখা রানাপু। গুরু গুরু

হতাশা আমাদের বাঁচাতে পারবেনা, মুক্তবুদ্ধির চর্চার পক্ষে আন্দোলন পারবে।

এটাই মূল কথা। চলুক

_________________
[খোমাখাতা]

রানা মেহের এর ছবি

অনিন্দ্য, কেমন আছো ভাইয়া? এখন তো লেখা দাও একটা।

জিরো - অভিভাবক স্বজনেরা তো বলবেনই, তাদের আশংকা খুব অমূলকও নয়। কিন্তু এরই মধ্যে কাজ করে যেতে হবে। বিপদে মাথা ঠান্ডা রেখে ট্যাকটিকস রাখতে হবে বিপদ কমানোর, কিন্তু লড়াই থামানো চলবে না।
জামাত আর অন্যান্য দলের আলাদা পরিচয় রাখার ব্যাপারে তোমার পর্যবেক্ষন খুব ভালো হয়েছে। এই জিনিসটা মাথায় রাখবো।

নিটোল - ধন্যবাদ ভাইয়া। আমরা নিশচই হতাশার এই সময়টাকে খুব দ্রুত কাটিয়ে উঠবো।

-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস

এক লহমা এর ছবি

"আমরা কি একবারও ভেবে দেখেছি সরকার আসলে আমাদেরই অংশ। হালাল-হারাম হিজাবের তোড়ে ভেসে গিয়ে আমরাই কি ধর্মকে প্রাত্যাহিক আনুষঙ্গ বানিয়ে দেইনি? আওয়ামীলীগ কিংবা সরকারের এই নতজানু হওয়াতে আমাদের এই বাঙ্গালি থেকে মুসলিম হিসেবে পূনর্জন্ম নেয়ার ভূমিকা কি নেই একটুও?" - চলুক

পুনর্জন্ম নেওয়ার পর পুনর্জাতরা যা যা করবার তা ত করবেই, তবে যাদের ঐ পুনর্জন্ম হল না, তারাও তাদের কাজ করে যাবে। চাপাতি সব সময়ই কিছু কলম থামিয়েছে, কখনই সব কলম থামাতে পারে নি।

--------------------------------------------------------

এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।

এক লহমার... টুকিটাকি

মাসুদ সজীব এর ছবি

রানা আপু, প্রতিটি হত্যাকান্ডের পর মনে হয় দূর ছাই কি হবে মূর্খ, বর্বর, অন্ধ আর ভুলোমনাদের এসব বলে, কি লাভ এত লেখালেখি করে? ফলে হতাশা, ক্ষোভ, ঘৃণা সবকিছু এত ঘিরে ধরে যে সব কিছু ছেড়ে দিতে ইচ্ছে করে।

জানি সরকারের নানা নোংরা ভোটের রাজনীতি আছে, আছে চাটুকারদের নানান ধান্ধা। এদের কাছে যদি আমরা হেরে যাই, কলম থামিইয়ে দেই তাহলে ওদের জয়টা তো আমরাই নিশ্চিত করে দিচ্ছি! তাহলে এতদিন যে লিখলাম, আলোর কথা বললাম সবি তো শুধু বুলি হয়ে যাবে! শুধু নিজেকে নিরাপদ রাখার স্বার্থে নিজের শিকড় কে উপড়ে ফেলে বদলে যেতে হবে, যদি তাই হয় তাহলে মৃত্যুর আগে মরে যেতে হবে। মৃত্যুর আগে মা্রে যাওয়ার, হেরে যাওয়াড় কোন অর্থ হতে পারে না। তাই কলম চলবে, চলতেই হবে।

-------------------------------------------
আমার কোন অতীত নেই, আমার কোন ভবিষ্যত নেই, আমি জন্ম হতেই বর্তমান।
আমি অতীত হবো মৃত্যুতে, আমি ভবিষ্যত হবো আমার রক্তকোষের দ্বি-বিভাজনে।

প্রাতিভাসিক এর ছবি

সংস্কৃতি বিকশিত হয় বড় শহরের আড়ালে পড়ে থাকা ছোট্ট মফস্বল কলেজের নবীন বরনে, রবীন্দ্রনাথ মিশে থাকেন কোন এক অজ্ঞাত গ্রামের স্কুল শিক্ষকের পাগলামোতে আয়োজন করা পঁচিশে বৈশাখের অনুষ্ঠানে। মুক্তিযুদ্ধ বেঁচে থাকে দূর ভাটি অঞ্চলের রাজাকার চেয়ারম্যানের বিপক্ষে দাঁড়িয়ে কিছু দরিদ্র কিন্তু দৃঢ় মুক্তিযোদ্ধার আলাদা বিজয় দিবস উদযাপনে।
আজ আমরা যখন ঘর অন্ধকার করে দেয়ালে মাথা কুটি আর হাত কামড়াই কিচ্ছু হবেনা এই দেশের কিচ্ছু হবেনা বলে, বিশ্বাস করুন ব্লগারদের খুন নয়, তার পরিবারের চরিত্রহনন নয়, এই হাত কামড়ানোর সফলতাতেই সবচেয়ে বেশি প্রীত হয় ধর্মের বাকল গায়ে পড়া আততায়ীরা।

ব্যক্তিগত ভাবে আমি মনে করি, কেউ যদি এরকম ধারনা পোষণ করে যে এই দেশের কিচ্ছু হবে না, তাহলে সে আসলে সত্যি সত্যি দেশকে ভালবাসে না। দেশকে ভালবাসলে দেশের প্রতি একটা দরদ থাকার কথা। সেই দরদ যদি দরকারের সময়-ই অব্যবহৃত থাকে, তাহলে সেই দেশ উচ্ছন্নে গেলে তার দায় সেই ব্যক্তির উপর-ই বর্তায় - পুরোটা না হলেও, অনেকখানিই।
দু্র্ভাগ্যজনক ব্যাপার হল যে, আমাদের চারপাশের প্রায় সবাই এমনই মন-মানসিকতার মানুষ। তাদেরকে পাল্টানো না গেলে দেশ পাল্টাবে না।

ঈয়াসীন এর ছবি

গুরু গুরু

------------------------------------------------------------------
মাভৈ, রাতের আঁধার গভীর যত ভোর ততই সন্নিকটে জেনো।

প্রোফেসর হিজিবিজবিজ এর ছবি

চলুক

____________________________

রানা মেহের এর ছবি

এক লহমা, হু। কিছু কিছু পূণর্জাতকেরা কাজ অনেক কঠিন করে দেন, কিন্তু কাজ তাতে থেমে থাকেনা। থাকবেওনা।

সজীব, হেরে যাওয়াটা শুধু সরকারের কাছেই না, আরো অনেক বেনিফিশিয়ারি আছে। আরো আছে হতাশ হয়ে নিজের কাছেই হেরে যাবার লোভ। এই নিজেকেই হারিয়ে দেয়া বেশি জরুরী।

প্রাতিভাসিক, দেশের কিছু হবেনা যারা বলেন তারা দেশকে ভালোবাসেন না এরকম চিন্তা আসলে বেশি সরলীকরণ। দুঃসময় সবাই সমান শক্তিতে গ্রহণ করতে পারেন না, কারো কারো উঠে দাঁড়াতে একটু বেশি সময় লাগে।কিন্তু দিন শেষে আমরা সবাই উঠে দাঁড়াই। এই দাঁড়ানোটা যেন জারি থাকে।

ঈয়াসীন ও হিজিবিজবিজ, ধন্যবাদ পড়ার জন্য।

-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস

ফাই সিদ্ধি এর ছবি

হতাশা আমাদের বাঁচাতে পারবেনা, মুক্তবুদ্ধির চর্চার পক্ষে আন্দোলন পারবে।

অতিথি লেখক এর ছবি

আসলেই হতাশা চর্চা করে কখনোই কোন কিছু হবে না,হয় নি।নিজের মাঝেই গড়ে তুলতে হবে আন্দোলন,হতাশার খোলস থেকে বেরিয়ে এসে নিজেকে ,হ্যা নিজের সত্ত্বাকে আগে আন্দোলিত করতে হবে সাংস্কৃতিক ভাবে,রাজনৈতিক ভাবে,সামাজিকভাবে।
তারপর সেই আন্দোলিত সত্ত্বাকে ছড়িয়ে দিতে হবে চারপাশে।

রায়হান রোমান

আসিফ চৌধুরী এর ছবি

আস্তিক নাস্তিক কোন ফ্যাক্টর না, কাহিনী হলো আপনার ব্যাক্তিগত অনলাইন জগতে কখনো কোথাও "জয় বাংলা" বলেছেন? জামাত-শিবির-হেফাজত এর বিরুদ্ধাচরণ করেছেন? রাজাকারের বিচার চেয়েছেন? তাহলেই "হইছে কাম"... এইবার গর্দানে নারিকেল তেল আর নাকে সরিষার তেল দিয়া অপেক্ষায় থাকেন। চাপাতির শান চলছে, কোপ আসলো বলে...

রানা মেহের আপা, ছোট্ট একটা টাইপো রয়ে গিয়েছে, আমি কুলহারা কলঙ্কিনী গানটা রাধারমণ না, শাহ আব্দুল করিমের লেখা। অধমের খুঁতখুঁতানির অপরাধ নিজ গুনে ক্ষমা করে দিয়েন

আসিফ চৌধুরী এর ছবি

ধন্যবাদ আপা।
হুমায়ুন আহমেদ সম্পর্কে আরেকটা সম্পূরক তথ্য দেই। উনি বিশ্ববিদ্যালয়ে সাদা দলের নির্বাচিত প্রার্থী ছিলেন এবং এক সময়ে দৈনিক ইনকিলাব এ নিয়মিত কলাম লিখতেন (যেটা নিয়ে শহীদ জননীর সাথে তার বাহাসের কথা তিনি নিজেই তার একটা বইয়ে স্বীকার করে নিয়েছেন)

সুলতানা সাদিয়া এর ছবি

বিপদ থাকলে পদ্ধতি বদলান, কিন্তু থামবেন না। কলম চলতে হবে, কন্ঠ জোরে ছাড়তে হবে।

চলুক

-----------------------------------
অন্ধ, আমি বৃষ্টি এলাম আলোয়
পথ হারালাম দূর্বাদলের পথে
পেরিয়ে এলাম স্মরণ-অতীত সেতু

আমি এখন রৌদ্র-ভবিষ্যতে

নীড় সন্ধানী এর ছবি

সময়াভাবে লেখাটিতে মন্তব্য করতে দেরী হয়ে গেল।

এরকম একটি লেখার খুব দরকার ছিল। কেননা, এতে আমাদের অনেকের না লেখা কথাগুলো লিপিবদ্ধ হয়ে গেছে। আমি এর সাথে কিছু কথা যোগ করি।

ইস্যুটি ছিল মুক্তিযোদ্ধা বনাম রাজাকার। হয়ে গেল আস্তিক বনাম নাস্তিক। ব্লগার=নাস্তিক এই সমীকরণটা প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিল জামাত-শিবির-হেফাজত(এমনকি বিএনপিও) মৌলবাদ চক্রটি, সেটাই করছে। এদের প্রাথমিক মুখপাত্র ছিল আমারদেশ ও মাহমুদুর রহমান।(ইনকিলাবকেও হিসেবে রাখতে হয় কেননা ওরাই রাজীব নাস্তিক এই ইস্যুটা প্রথম তুলেছিল)। ২০১৩ সালের ৫ ফেব্রুয়ারী থেকে পরবর্তী পনের দিনের এই দুটি পত্রিকা পড়লে বোঝা যাবে মুক্তিযুদ্ধের ইস্যু কিভাবে আস্তিক নাস্তিক ইস্যুতে বিবর্তিত হয়ে গিয়েছিল। খেয়াল করে দেখবেন, শাহবাগ জাগরণ শুরু হবার প্রথম দুদিন আমারদেশ পত্রিকাটিও শাহবাগ জাগরণের বিপক্ষে কোন কথা বলার পথ খুঁজে পায়নি, বরং মৃদু সহমতের ভাবই দেখিয়েছিল। তারপর থেকে পরিকল্পনায় রদবদল ঘটে। আস্তে আস্তে শাহবাগ জাগরণকে নিয়ে কুৎসার রং চড়ানো শুরু হয়। আন্দোলনের প্রতি ব্যাপক জনগোষ্ঠীর মনে কাদা মাখাতে বেছে নেয়া হয় রাজীব হায়দারকে যিনি ওই জাগরনের একজন কর্মী হলেও তার এমন কোন জনপ্রিয়তা ছিল না যাতে তাঁকে খুন করে আন্দোলন দমানো যাবে। কিন্তু তিনি ধর্মের বিরোধী লেখালেখি করতেন, 'নাস্তিক' বলে পরিচিত ছিলেন, সেটাকে হাইলাইট করাই ছিল খুনের একমাত্র উদ্দেশ্য। ওই খুন হবার সাথে সাথে 'শাহবাগীরা নাস্তিক' এটা ব্যাপক প্রচারণা পায় ওদের হাতে। সুতরাং হেফাজতের অজ্ঞ মূর্খ মোল্লাদের মাঠে নামিয়ে দেয়ার পথ একদম সহজ হয়ে যায়। এখানে লক্ষ্যনীয় যে যেসব ব্লগার মুক্তিযুদ্ধ ইস্যু নিয়ে লেখালেখি করে জনপ্রিয়, তাদের কাউকে বেছে নেয়া হয়নি। কেননা ইস্যুটাকে 'মুক্তিযুদ্ধ রাজাকার' থেকে সরিয়ে 'আস্তিক-নাস্তিক' দিকে নিয়ে যাওয়া ওদের জন্য দরকার ছিল। এই ইস্যুতে এমনকি সরকারও সাহস করবে না তথাকথিত নাস্তিক ব্লগারদের পক্ষে থাকার। মনে হচ্ছে ওরাই আপাতত সফল। বর্তমানে সেটারই প্রতিফলন দেখতে পাচ্ছি। একের পর এক রুটিনমাফিক ব্লগার হত্যা ঘটছে এবং সরকারকে দুই পাল্লায় পা দিয়ে ভারসাম্য রক্ষা করতে হচ্ছে। ঝুলে আছে বিচার।

এখন আমরা জানি না কে পরবর্তী টার্গেট হতে যাচ্ছে। কিন্তু এটা জানি যে যাকে টার্গেট করা হবে তার রক্ষা নেই। একদল বদ্ধপরিকর খুনী সারা দেশে ছড়িয়ে আছে। তারা চাইলে যে কাউকে চাপাতির নীচে নিতে পারে।

আমাদের কি ভয় পাওয়া উচিত? ব্যক্তিগতভাবে ভয় পাওয়াই উচিত। কিন্তু সম্মিলিতভাবে আমরা অনেক বেশী শক্তিশালী। অতএব এই সম্মিলিত শক্তি নিয়ে আমাদের যা বলার তা সাহসের সাথেই বলবো।

‍‌-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?

অনল হক  এর ছবি

কি করি? কি যে করি?

ছিন্ন ভিন্ন পড়ে থাকে নিলয়ের মৃতদেহ। রক্তাপ্লুত পড়ে থাকে নিলয়ের মৃতদেহ। পাশের ঘরে বন্ধ দুয়ারের অপারে আছাড়ি বিছারি দাপিয়ে কাঁদে তার স্ত্রী। কেন প্রিয়তমা বাংলাদেশ?
কারণ, নিলয়ের মৃতদেহের ওপর দাঁড়িয়ে আছে স্থিতাবস্থা। নিলয়ের মৃতদেহের আনাচে কানাচে ঘুরে বেড়ায় ধর্মীয় এবং মুক্তমনা সঙ্খ্যালঘুর সন্ত্রস্ত, ক্ষীণ অস্তিত্ব। খুঁজে বেড়ায় সংকীর্ণতাবাদী ক্রূর মৌলবাদ এবং তার পালতু ঘৃণ্য জানোয়ারদের শ্বদন্ত থেকে আত্মরক্ষার উপায়। চোখে পড়ে যায় মন্দের ভালো, রাজনৈতিক ছত্রচ্ছায়া। সুন্দর সমীকরণঃ আপনি কি বিপন্ন? আসুন এই শিবিরে। ইসলাম বিপন্ন? চলে যান ঐ শিবিরে।

চলুক এই সমীকরণ বছরের পর বছর। প্রতি বৎসর, প্রতিমাস, প্রয়োজনে প্রতি সপ্তাহে কাটা হোক একেকটি নিলয়। আর এরই ফাঁকে ফাঁকে আসুন আমরা লিখতে থাকি শুধু। বিশ্বাস করুন, লেখাটা গুরুত্বপূর্ণ নয়, গুরুত্বপূর্ণ হল শুধুমাত্র লিখতে থাকা।

আমরা লিখতে থাকব প্রত্যেকে একা একা। আর নরমাংসলোলুপ হায়েনারা আসবে একসাথে; কেটে টুকরো টুকরো করে যাবে। খেয়াল রাখবেন, যেন একসাথে আমরা জুড়ে না যাই, যেন লেখার সাথে সাথে অস্ত্রের বিরুদ্ধে আমরাও অস্ত্র না হাতে নিয়ে ফেলি। আমরা যেন গ্রামে না যাই, গ্রামে গ্রামে যেন অশিক্ষিত চাষাভুষার ছেলে মেয়ের মধ্যে আমাদের সংগঠন গড়ে না ওঠে। তাহলে ভীষণ মুশকিল। সব গড়বর। একাত্তর দেখা দিতে পারে। আর আপনারা তো জানেনই যে একাত্তরে আমাদের বড় ভয়!

অতিথি লেখক। অনল হক।

রানা মেহের এর ছবি

ফাই সিদ্ধি, ধন্যবাদ।

রোমান রায়হান, সেটাই। হতাশার কাছে হেরে যাওয়া যাবেনা কোনভাবেই।

আসিফ চৌধুরী, আপনাকে যে কী বলে ধন্যবাদ দিব ভাই! এরকম একটা জরুরী ভুল ধরিয়ে দিয়েছেন। এটা টাইপো না, আমার জানার ভুল। আপনার মন্তব্য দেখে খোঁজ নিয়ে দেখি কী বাজে একটা ভুল করেছি। ছি ছি। অনেক ধন্যবাদ এই উপকারটার জন্য।
সাদা দল কি বিএনপি সমর্থিত? হুমায়ূন আহমেদ এই দলের নির্বাচিত ছিলেন? কী অবস্থা!
উনি লিখতেন পূর্ণিমা নামের ইনকিলাব গ্রুপের একটা ম্যাগাজিনে। জাহানারা ইমাম নিষেধ করায় আর লেখেননি। জাহানারা ইমামের মতো অসাধারণ মানুষের কতভাবেই না ছায়া রেখে যান।

সাদিয়া, ধন্যবাদ।

নীড় সন্ধানী, অসাধারণ মন্তব্য। আপনার এই মন্তব্যটাই স্বতন্ত্র একটা লেখা হতে পারতো। আস্তিক-নাস্তিক বিভাজন বিশাল একটা পরিকল্পনার ক্ষুদ্র অংশ মাত্র। আমরা শুধু নাস্তিক মারা যাচ্ছে দেখছি, এর পেছনে বিশাল পরিকল্পনা দেখছিনা। অনেক ধন্যবাদ এই গুরুত্বপূর্ণ সংযোজনের জন্য।

অনল হক, লেখা একটা বড় সমবায়। আর এই সমবায়ের সমবেত শক্তিকে তাদের বড় ভয়। লেখা থামানো চলবে না।

-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস

আসিফ চৌধুরী এর ছবি

সাদা দল শুধু বিএনপি না, জামায়াত-বিএনপি সমর্থিত শিক্ষকদের গ্রুপ। তিনি এই প্যানেল থেকে যতটুকু জানি একাধিকবার নির্বাচন করেছিলেন

সোহেল ইমাম এর ছবি

এই লেখা খুব বেশি পাঠকের নজরে হয়তো আসবে না। যাদের আসবে তাদের অনুরোধ করবো, পথে নামুন। পথ মানেই কিন্তু রাস্তা নয়, পথ সমাবেশ নয়। প্রতিবাদ করুন, আন্দোলন চালিয়ে যান নিজের প্রতিটা গণ্ডিতে। এই মুহূর্তে চিরকাল সামনের সারিতে যারা ছিল সর্বোচ্চ বিপদে আছে তারাই। একটু বিশ্রাম দিন তাদের। এখন অনেক বেশি দায়িত্ব আমাদের মতো ব্যাকবেঞ্চারদের ওপর।

চলুক সহমত

---------------------------------------------------
মিথ্যা ধুয়ে যাক মুখে, গান হোক বৃষ্টি হোক খুব।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।