হিন্দু সম্প্রদায়ের চিতায় চাইনা উন্নয়নের শিখা অনির্বান

রানা মেহের এর ছবি
লিখেছেন রানা মেহের (তারিখ: সোম, ০৭/১১/২০১৬ - ১:১৬পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বলে একটা শব্দ প্রচলিত আছে বাংলায়। যদিও ১৯৭১ পূর্ব ইস্ট পাকিস্তানে কিংবা স্বাধীন বাংলাদেশে এই দাঙ্গা দেখার সৌভাগ্য আমাদের হয়নি। সৌভাগ্য বললাম এজন্য, দাঙ্গায় অন্তত দুই পক্ষেরই সমান অংশগ্রহণ থাকে। এর বদলে এই মাটিতে বারবার আমরা দেখেছি সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মার খাওয়া, মুসলমানদের হাতে। দেশভাগের পর দলে দলে হিন্দুরা যেতে বাধ্য হয়েছেন ভারতে, খুব সুখকর ছিলনা সেই যাত্রা। তবু যারা রয়ে গিয়েছিলেন স্বদেশ নামের প্রবঞ্চনায়, সেই ৪৭ থেকে এখনো মাসুল গুনছেন তারা সেই স্বদেশ নামের 'লোভের'। ১৯৭১ এর মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের প্রতিটা মানুষ প্রতিটা পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলেন ঠিকই, তবু শুধুমাত্র হিন্দু হবার কারণে যেই অসহনীয় যন্ত্রনা-নির্মমতা তদের ভোগ করতে হয়েছে, এমনটা হয়নি আর কারো ক্ষেত্রে। স্বাধীনতার পর স্বপ্নের সলতেতে একটু আগুন দিয়েছিলেন প্রথম সরকার, সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতা যোগ করে। ৭৫ পরবর্তীতে সেই প্রদীপ নিভতে একটা ফুঁৎকারের বেশি লাগেনি। তারপর থেকে হিন্দু সম্প্রদায় বাংলাদেশে কেবলই ভোটের ছাপ কড়ে আঙুলে। ছাপ দেয়ার কাজ শেষ হলে সেই কড়ে আঙুল উপড়ে ফেলতে এক মুহুর্ত সময় নষ্ট করেনা কোন রাজনৈতিক দল।

দুর্গা ও কালীপূজা পরবর্তী সময়ে গত কদিন ধরে পুনরাবৃত্তি হচ্ছে ৪৭/৭১/৯০ এর হিন্দু ভাঙো চলচ্চিত্রের। আমাদের সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত নামের একটা ইনডেমনিটি আছে । এই রক্ষাকবচ পড়ে নিয়ে একের পর এক আঘাত তারা করে যাচ্ছেন হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর। সরকার উন্নয়ন এবং বিনোদন নিয়ে ব্যস্ত থাকায় এই ব্যাপারে জোর কিছু করাকে জরুরী মনে করছেন না।

ঘটনার সুত্রপাত এবং বর্তমান অবস্থা

ঘটনার শুরু মোটামুটি বুদ্ধিমান এবং কার্যকরী পদ্ধতিতে। রসরাজ দাস নামের একজন মৎস্যজীবীর ফেইসবুক একাউন্ট থেকে কাবা ও শিবের একটি ছবি শেয়ার করা হয় শুক্রবার, অক্টোবরের আঠাশ তারিখে। পরেরদিন শনিবার ইসলাম ধর্ম অবমাননার অভিযোগে আইসিটি আইনে মামলা দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয় রসরাজকে, আদালত তার পাঁচদিনের রিমান্ড মঞ্জর করেন। একটি ধর্মীয় সংগঠনের উদ্যোগে সভায় প্রতিবাদ জানানো হয় এই ঘটনার পরেরদিন, সারাদিন পরিস্থিতি থাকে উত্তপ্ত। এর পরেরদিন, রোববার অক্টোবরের ত্রিশ তারিখ কয়েকশ লোক সরাইল-নাসিরনগর-লাখাই সড়ক অবরোধ করে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ শুরু করে। আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াত নামে একটি ধর্মীয় সংগঠন ও তৌহিদী জনতার ব্যানারে হেফাজতি ইসলামের একটি দল বিক্ষোভ সমাবেশ এবং র‍্যালির আয়োজন করে নাসিরনগরে। সেই সমাবেশে আহলে সুন্নাত ও হেফাজতের নেতাদের পাশাপাশি স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতারাও উপস্থিত ছিলেন। সেই সমাবেশ চলাকালে অস্ত্র সজ্জিত একটা বড় দল কয়েকশো মানুষ অস্ত্র সজ্জিত হয়ে আক্রমন চালানো শুরু করে মালোপাড়া, নমশুদ্রপাড়া সহ নাসিরনগরের বিভিন্ন মন্দীর, বসতবাড়ি ও হিন্দু মালিকানাধীন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে। পরিকল্পিত এই হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত ও লুন্ঠিত হয় তিনশোর মতো ঘরবাড়ি ও দশটির বেশি উপাসনালয় যার মধ্যে রয়েছে বিখ্যাত দত্তবাড়ির মন্দির। নীলিমা দাশ জানান দত্তবাড়ির মন্দীরে হামলা হয়নি ১৯৭১ এর মুক্তিযুদ্ধের সময়েও। হামলার আগে কাছের মসজিদ থেকে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলার উসকানি দেয়া হয় বলে অভিযোগ করেন স্থানীয়রা। আহত হন পূজারী সহ অন্তত বিশ জন মানুষ

নির্যাতিতরা জানান ঘটনার সময় পুলিশ এবং স্থানীয় প্রশাসনের ভূমিকা ছিল নির্বিকার এবং নিশ্চল। বরং সেখানকার কিছু মুসলমান ধর্মাবলম্বী নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাঁচানোর চেষ্টা করেন মন্দির এবং হিন্দ সম্প্রদায়ভুক্ত মানুষদের। কেউ আশ্রয় দিয়েছেন কন্যা এবং মাতাকে তাদের ঘরে, কেউ নিজে শারিরীক আঘাত সয়েও রক্ষা করার চেষ্টা করে গেছেন মন্দির কিংবা বসতগৃহ

এই ঘটনার দুই তিনদিনের মধ্যে বাংলাদেশের অন্যান্য অঞ্চলে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর আঘাত মোটামুটি ছড়িয়ে পড়ে মহামারীর মতো। একই দিনে হামলা হয় সিলেটের হবিগঞ্জের মাধবপুরের অন্তত চারটি মন্দিরে। সোমবার, ৩১শে অক্টোবর চট্টগ্রামের হাটহাজারিতে মন্দীরে ডাকাতি চালিয়ে লুট করা হয় দেবীর গহনা। পরেরদিন সোমবার সিলেটের ছাতকে মসজিদের কাছে কালীপূজার আতশবাজি পোড়ানোর অভিযোগে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল করে হামলা চালানোর চেষ্টা করা হয় কালীবড়ি এবং আখড়ায়।

নভেম্বরের এক তারিখ গোপালগঞ্জের দুর্গা মন্দির হামলার 'কারণ' একটু আলাদা মনযোগের দাবী রাখে। রাতে কালীপূজার সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান দেখে ফিরছিলেন কজন নারী। এইসময় বখাটেরা তাদের উত্যক্ত করতে থাকলে মেয়েদের সাথে থাকা কজন পুরুষ এর প্রতিবাদ জানান। এর জবাবে সেই বীর উত্যক্তকারীরা জোটবদ্ধ হয়ে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করে সার্বজনীন দুর্গামন্দিরে। পূজারী জানান সেই সময় প্রাণের ভয়ে মন্দিরে আশ্রয় নেন সেখানে থাকা মেয়েরা।
হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলায় যারা ইনিয়ে বিনিয়ে ইসলামের অবমাননা কিংবা হিন্দু সম্প্রদায়ের পক্ষে উসকানোর অযুহাত তোলেন তারা এই ঘটনাটার পেছনে কিছু একটা ইন্ধনের সন্ধানে মনযোগ দিতে পারেন।

নাসিরনগরের হামলার পর ক্ষতিগ্রস্তদের পক্ষ থেকে দুটো আলাদা মামলা করেন কাজল দত্ত ও নির্মল চৌধুরী । প্রাথমিকভাবে এতে অজ্ঞাতনামা বারোশো জনকে আসামী করা হয়। পাঁচই নভেম্বর ভোর পর্যন্ত ঘটনার ভিডিও ফুটেজ এবং ঘটনার পর্যালোচনা করে ৪৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
পুলিশের কড়া নিরাপত্তার মধ্যেও আবার আগুন লাগানো হয়েছে এই এলাকার পাঁচটি বাসায় এবং এক আওয়ামী নেতার পাটের গুদামে।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান জানিয়েছেন, ঘটনা তদন্তে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং আওয়ামী লীগ থেকে মোট ৩টি দল নাসিরনগরে পাঠানো হয়েছে। হামলাকারী কিংবা উস্কানি দাতারা যে দলেরই হোক না কেন তারা কোনো ছাড় পাবেন না। আইনের আওতায় এনে দ্রুত তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। দায়িত্বে গাফেলতির অভিযোগে ব্রাহ্মণবাড়িয়া পুলিশের অপারেশন ইন চার্জ আবদুল কাদেরকে সাময়িকভাবে প্রত্যাহার করা হয়। নাসিরনগরের যেই উপজেলা নির্বাহী অফিসার চৌধুরী মোয়াজ্জেম আহমেদকেও তার দায়িত্ব থেকে প্রত্যাহার করা হয়েছে সম্প্রতি। তিনি যে শুধু সংবেদনশীল একটা পরিস্থিতিতে উগ্র ধর্মীয় গোষ্ঠিদের সভা করার অনুমতি দিয়েছিলেন তাই নয়, বরং নিজে উপস্থিত থেকে বক্তব্য দিয়েছেন ওই সভায়।

নাসিরনগর, মাধবপুর, ছাতক, গোপালগঞ্জেই ঘটনা থেমে নেই। এই সহিংসতা ছড়িয়েছে ঠাকুরগাঁও, নেত্রকোনা সহ আরো অনেক জায়গায়। সব খবর হয়তো আসতেও পারছেনা পত্রিকার পাতায়।

রসরাজ দাস প্রথম থেকেই বলে আসছেন তিনি নির্দোষ, তার ফোন থেকে অন্য কেউ এই ছবি শেয়ার দিয়েছে। ২৯শে অক্টোবর সকালে তার ফেইসবুক একাউন্ট থেকে এই পোস্টের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে একটি স্ট্যাটাসও দেয়া হয়, পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি তবু। হরিপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান দেওয়ান আতিকুর রহমান আঁখি জানান ঘটনার দুই তিনদিন আগে থেকে রসরাজ নিজের ফোন বাড়িতে রেখে বালিঙ্গা বিলে মাছ ধরতে যান। ভাইয়ের কাছ থেকে খবর পান তার একাউন্ট থেকে এই ছবি আসার কথা।
রসরাজ দাসকে যে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর আক্রমনের জন্য বর্ম হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে এটা মোটামুটি নিশ্চিত। একজন অল্পশিক্ষিত জেলের পক্ষে ফটোশপের এরকম নিখুঁত কাজ প্রায় অসম্ভব। তাছাড়া ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির তদন্তে জানা যায় এই ছবি হরিণবেড় বাজারের আল আমিন নামের দোকানে তৈরী করে তারপর রসরাজের একাউন্ট থেকে শেয়ার করা হয়।
খুব সাদামাটা ভাবে বলতে গেলে রসরাজ আসলে এখন দাঁড়িয়ে আছেন মৃত্যুর দ্বারপ্রান্তে। রিমান্ডের শুনানিতে একজন আইনজীবী তার পক্ষে দাঁড়াতে চাইলে তাকে দাঁড়াতে দেয়া হয়নি। অভিযোগ আছে তাকে আটকে রেখে তার কাছ থেকে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী নেয়ার চেষ্টা চলছে।
তারপরেও কোনভাবে যদি আইনের হাত থেকে বাঁচতে পারেনও, আমাদের সচেতন মুসলিম সমাজ তাকে বেঁচে থাকতে দেবে কিনা সন্দেহ। প্রচারমাধ্যমের মহান কর্মীরা ভালো কাভারেজ পাবার জন্যে তার নাম ধাম বাবা কাকা সহ পরিবারের পরিচয় এমনকী উনার ছবি পর্যন্ত প্রকাশ করে দিয়েছেন। থানা থেকে মুক্তি পেলেও এই লোকের জীবন নাশের আশংকা রয়েছে। পুলিশ এবং স্থানীয় প্রশাসন থেকে যে উনি কোন সাহায্য পাবেন না এই ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই।
পরিস্থিতি আরো খারাপ করায় মোটামুটি একক ভূমিকা রাখা মন্ত্রী ছায়েদুল হক সম্প্রতি জানিয়েছেন তিনি মনে করেন রসরাজ দাসের মতো একজন সাধারণ মানুষের পক্ষে ফেইসবুকে এরকম ছবি দেয়া সম্ভব না বরং এই ঘটনা একটি বড় ষড়যন্ত্রের ফসল।

চোখে পড়ার মতো ঘটনা হলো নভেম্বরের দুই তারিখ ফেইসবুকে হিন্দু ধর্মের দেবতাদের নিয়ে বাজে কথা বলায় পুলিশের কাছে আটক হন মির্জাপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. জাহুরুল ইসলাম বুলবুল। তিনি তার ফেইসবুক একাউন্ট হ্যাক হবার কথা জানিয়ে দুঃখপ্রকাশ করায় পুলিশ মুক্তি দেয় তাকে। রসরাজের ক্ষেত্রে একই ঘটনা হলেও প্রশাসন এবং মিডিয়া কারো কাছ থেকে কোনরকম সহানুভূতি পাননি তিনি। ধর্মীয় অবমাননা বিষয়টা সম্ভবত কেবল ইসলাম ধর্মের জন্য প্রযোজ্য


সরকার এবং আওয়ামীলীগের ভূমিকা

এই ক্ষেত্রে একটা মাত্র কথাই বলা যায়, অমার্জনীয়। ক্ষমতাসীন দলের নেতারা শুরু থেকেই এই ঘটনার সাথে সক্রিয়ভাবে জড়িত ছিলেন এবং সেখানকার মানুষদের রক্ষা করতে স্থানীয় এবং কেন্দ্রীয় সরকার চরমভাবে ব্যর্থ, তার থেকেও বড় কথা হলো আদৌ সফল হবার ইচ্ছা তাদের আছে এই ইতিবাচক ভাবনা আনাটাও কষ্টকর।

জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আল মামুন সরকার জানান, রসরাজ হরিপুর মৎস্যজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক। ওই সংগঠনের সভাপতি হলেন ১৯৭১ সালের রাজাকার তাইজুদ্দিন এর ছেলে ফারুক মিয়া যিনি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি। ফেইসবুকের সেই ছবিটি প্রকাশ পাবার পর ফারুক উদ্যোগী হয়ে রসরাজকে পুলিশে হাতে তুলে দেন। ফারুক মিয়াকে রোববারের ঘটনায় উসকানির অভিযোগে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।

রোববার ঘটনার দিন সকালে নাসিরনগর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি হাজি সুরুজ আলীর নেতৃত্বে হিন্দু দেবদেবী নিয়ে অশ্লীল উক্তি করে একটি জঙ্গী মিছিল এসে যোগ দেয় হেফাজতপন্থীদের তৌহিদী জনতা ব্যানারে করা জনসভায়। আওয়ামীলীগ নেতা এবং সমর্থকদের সাথে পেয়ে জনসভার পরিস্থিতি আরো উত্তপ্ত হয়ে পড়ে। সুরুজ আলী এই সভায় দেয়া তার বক্তব্যে রসরাজের ফাঁসি দাবী করেন। যদিও তিনি এই দাবীর মধ্যে উসকানিমূলক কিছু খুঁজে পাননি। আওয়ামীলীগ থেকে এই মুহুর্তে বহিষ্কৃত আছেন তিনি।

একই দিন দুপুরে যেই মিছিল থেকে দত্তবাড়িতে হামলা চালানো হয় সেই হামলার নেতৃত্বে ছিলেন আওয়ামীলীগ নেতা এবং নাসিরনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল হাশেম। মিছিলের শ্লোগান ছিল উগ্র এবং অংশগ্রহণকারী অনেকেই লাঠিসোটা নিয়েই মিছিলে যোগ দিয়েছিলেন। উসকানির অভিযোগে আবুল হাশেমকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়।

উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান সরকার ভাষন দিতে খুব একটা বাছবিচার করেন নি। আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত এবং হেফাজতপন্থী দুইদলের ডাকা বিক্ষোভ সমাবেশেই বক্তব্য প্রদান করেন তিনি,যদিও তার ভাষায় সেটা ছিল পরিস্থিতি শান্ত করার একটা কৌশল।

স্থানীয়রা আওয়ামীলীগের একজন মাত্র নেতার কথা বলেছেন যিনি এগিয়ে এসেছিলেন সেই দুর্যোগের মাঝে আক্রান্ত হিন্দুদের সাহায্য করতে, ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক শেখ আবদুল আহাদ । খেয়াল করার বিষয় হচ্ছে পদাধিকারের দিক দিয়ে তিনি একজন সাবেক নেতা, বর্তমান নন। সক্রিয়ভাবে উসকানিমূলক শ্লোগান দিয়ে মিছিলের নেতৃত্ব এবং বক্তব্য রাখলেন যেই তিনজন লীগ নেতা, উচিত ছিল তাদের বিরুদ্ধে মামলা রুজুর মাধ্যমে আদালতে নেয়া। তা না করে শুধুমাত্র বহিষ্কার তাদের অপরাধের তুলনায় ছোট শাস্তি হয়ে যায়।

সরকারপক্ষীয় যার কথা আলাদা করে বলতে হয়, যিনি তার আচরন কথা এবং দায়িত্বহীনতা দিয়ে সরকারের ইমেজ ধ্বংস এবং সারা দেশের হিন্দু সমাজকে আরো বিপদের মুখে ঠেলে দিয়েছেন তিনি হলেন সেই জায়গার ছয়বারের নির্বাচিত সাংসদ এবং মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী অ্যাডভোকেট ছায়েদুল হক। প্রথমেই তিনি সমালোচনায় আসেন ঘটনার প্রায় তিনদিন পর্যন্ত ঘটনাস্থল পরিদর্শনে না গিয়ে। নভেম্বরের দুই তারিখ বুধবার ঘটনার সরেজমিন প্রদর্শনে না গিয়ে সারাদিন তিনি কাটান ডাকবাংলোয়।

উপস্থিত সাংবাদিকদের ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ঘটনা তেমন কিছু না, বাড়িয়ে বলা হচ্ছে।
নাসিরনগরের উপজেলা নির্বাহি অফিসারের সাথে সাংবাদিকদের বিতর্কের এক পর্যায়ে মন্ত্রী সাহেবকে জানানো হয় হামলার শিকার কাশীরাম দাস বলে একজন দুদিন ধরে অভুক্ত আছেন। মন্ত্রী আদেশ দেন কোথায় আছে কাশীরাম, নিয়ে আসো তাকে। হায় কাশীরাম! হামলায় সর্বস্ব হারিয়ে যেতে দেখেছেন হয়তো, জানেন মন্ত্রীর সামনে সবকিছু ঠিক নেই বলার পরিণতি কী। এই কাশীরাম দাস মন্ত্রীকে জানাবেন কী গেছে তার আর তার সম্প্রদায়ের ওপর দিয়ে।

কিছুক্ষণ পর ছায়েদুল হক অভিযোগ করেন, “ঘটনা ঘটার পর স্বাভাবিক কি না। উল্টা কথা কন কেন?”
অপরাধীদের বিচার হবে কি না- মন্ত্রীকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, “আল্লারে জিগান গা। কী প্রশ্ন! আশ্চর্য প্রশ্ন। বিচার হবে না কেন? দেশে বিচার হচ্ছে না?” আরো যোগ করেন, “ঘটনা তো তেমন কিছুই না। আপনারা ঘুরে দেখেন সবকিছু স্বাভাবিক আছে।”

হামলাকে গুরুত্ব না দিয়ে, হামলার ভয়াবহতাকে খাটো করে দেখিয়েই সন্তষ্ট হননি জনাব হক। উপস্থিত সাংবাদিকদের সাথে বাজে ব্যবহারের এক পর্যায়ে তিনি বলে ওঠেন "মালাউনের বাচ্চারা বেশি বাড়াবাড়ি করতেসে"। যেই শব্দ দিয়ে দোলনা থেকে চিতা পর্যন্ত একজন হিন্দুকে মনে করিয়ে দেয়া হয় তিনি অভিশপ্ত, যেই শব্দের শুধু ব্যবহার দিয়েই ভেঙে ফেলা যায় মানুষের আত্মবিশ্বাসকে, একজন মন্ত্রীর মুখে এই শব্দ শুনলেই আসলে মোটামুটি পরিষ্কার হয়ে যায় বাংলাদেশের হিন্দুদের সার্বিক অবস্থা। তারা কোনদিনই তাদের ওপর হওয়া অন্যায়ের বিচার পাননি, এবারেও পাবেন না।

যদিও মন্ত্রী সাহেব এই শব্দ ব্যবহারের ঘটনা অস্বীকার করেছেন পুরোপুরি, তিনি তার তিন বহিষ্কৃত সহযোগী যারা নাসিরনগরের ঘটনায় জড়িত ছিলেন সক্রিয়ভাবে, ভুল করেননি নির্লজ্জের মতো তাদের পক্ষোচ্চারন করতে। ফারুক মিয়া, সুরুজ আলী ও আবুল হাশেম এই তিন স্থানীয় আওয়ামী নেতা ঘটনার শুরু থেকেই ছবির শেয়ারিং, সাম্প্রদায়িক বক্তব্য দিয়ে পরিস্থিতি আরো খারাপ করার সুযোগ দিয়েছেন। এর মধ্যে ফারুক মিয়ার বিরুদ্ধে ছবি সংক্রান্ত ঘটনার মূল হোতা হিসেবে কাজ করার অভিযোগ এসেছে সেখনকার অন্যন্য আওয়ামী নেতাদের থেকে।
কড়া পুলিশ পাহাড়ার মধ্যেও যেখানে চার নভেম্বর রাতে হিন্দু গৃহে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটছে, সেখানে ছায়েদুল হক বলছেন, সেখানকার পরিস্থিতি সম্পূর্ণ স্বাভাবিক এবং হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে কোন নিরাপত্তাহীনতা নেই। তারা যখন আতঙ্কে নিজের নাম প্রকাশে সংকোচ বোধ করছেন প্রচার মাধ্যমের সামনে সেখানে তার মতে এগুলো মিথ্যা , বানোয়াট - নাসিরনগরের হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে কোন আতংক বা নিরাপত্তাহীনতা নেই্, তারা খুব স্বাভাবিক জীবন যাপন করছে।

এই পুরো ঘটনার জন্য দায়ী নাসিরনগর এবং তার আশেপাশের এলাকার ক্ষমতার ভাগ নিয়ে আওয়ামীলীগের নেতাদের নিজস্ব কোন্দল।
গত ইউপি নির্বাচনে আওয়ামী সমর্থিত প্রার্থী জয়ী হন এই এলাকা থেকে। যেখানে মন্ত্রী ছায়েদুল হক এবং আওয়ামী লীগ নেতা ফারুক মিয়ার সমর্থন ছিল স্বতন্ত্র প্রার্থী রাশেদ চৌধুরীর দিকে। সম্ভাবনা আছে এ ঘটনার প্রতিশোধ নিতে রসরাজকে ফাঁসিয়ে কৈবর্ত সমাজের উপাসনালয়সহ তাদের বাড়িঘরে হামলা-ভাংচুর করা হয়েছে।
আরো আছে স্থানীয় বালিঙ্গা বিল নিয়ে আধিপত্য বিস্তারের আকাঙ্খা। কৈবর্তপাড়ার মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির নেতা রামেশ্বর দাস জানান তারা হরিণবেড় হরিপুর আহসান মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির নামে আইনানুগ পদ্ধতিতে বালিঙ্গা বিল লিজ নেয়ার পরেও ফারুক আওয়ামী নেতা ফারুক জোর করে সেই কমিটি বাতিল করে নিজস্ব মানুষ দিয়ে নতুন কমিটি গঠন করে।

সরকার অবস্থার উন্নতিতে কোন ব্যবস্থা নেয়াতো দুরের কথা, রুটিন মতো সমস্যার সমাধানের চিন্তা না করে সমস্যা অস্বীকার করে আসছে শুধু। স্বরাষ্টমন্ত্রী ঘটনাস্থল পরিদর্শনে না গিয়ে বরং বলছেন,বাংলাদেশে সংখ্যালঘুরা নিরাপদে আছে। ছায়েদুল হকের যেখানে মন্ত্রীসভা থেকে বহিষ্কারের পাশাপাশি আইনের মুখোমুখি করা উচিত সেখানে সরকারের পক্ষ থেকে তার বিরুদ্ধে কোনরকম কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। সরকার থেকে আক্রান্ত পরিবার এবং মন্দিরে কিছু আর্থিক সহায়তা দেয়া হয়েছে পরিস্থিতির বিচারে যা নিতান্ত অপ্রতুল

বাংলাদেশে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের অবস্থা কী পরিমাণ খারাপ সেটা জানার জন্য আসলে পরিসংখ্যান, ব্লগ কিংবা বিশেষজ্ঞ মতামতের প্রয়োজন পড়েনা। আশেপাশে সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানেরা হিন্দু ধর্ম এবং ধর্মের অনুসারীদের সম্পর্কে কীরকম ধারণা পোষন করেন সেটা একটু মন দিয়ে দেখলেই বোঝা যায় পরিকল্পিতভাবে হিন্দুদের ওপর হামলা যেমন বাস্তবতা তেমনি ধর্মীয় শ্রেষ্ঠত্বের অহংকারে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে হিন্দুদের ক্ষতি করার চেষ্টা খুব অচেনা কিছু নয়।

১৯৭১ উত্তর স্বাধীন বাংলাদেশে যেকয়টা ঘটনা হিন্দু ধর্মের প্রতি অবমাননা, অশ্রদ্ধা বাড়িয়ে তুলতে সাহায্য করেছে তার মধ্যে রাষ্ট্রীয়ভাবে যেগুলো প্রতিষ্ঠিত সেগুলো হলোঃ


সংবিধানে ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে ঘোষনা

১৯৭২ এর নভেম্বরের চার তারিখ প্রণয়ন করা হয় বাংলাদেশের প্রথম সংবিধান। সেই সংবিধানে বাংলাদেশকে ঘোষনা করা হয় ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র হিসেবে। ধ্বংসাবশেষের ওপরে দাঁড়িয়ে এরকম ঘোষনা মোটামুটি ছিল একটা বিপ্লবের মতো। ১৯৪৭ সালে স্বাধীন হবার পরে যেখানে ভারত তার সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতা যোগ করে ১৯৭৫ সনে সেখানে স্বাধীন হবার এক বছর সম্পুর্ন হবার আগেই নিজেদের ধর্মনিরপেক্ষ ষোষনা দেয়া নিঃসন্দেহে সেই সরকারের সেরা কাজগুলোর একটা। সৌদি আরব যখন বাংলাদেশী মুসলমানদের হজ্বযাত্রা বন্ধ করে তৎকালীন সরকারকে চাপ দিচ্ছে পিপলস রিপাবলিক অফ বাংলাদেশ নাম বদলে ইসলামিক রিপাবলিক অফ বাংলাদেশ করার জন্য তখন বঙ্গবন্ধু দৃঢ় কন্ঠে জানাচ্ছেন বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে শুধু মুসলমানরাই নন, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান সবাই সমান ভাবে অংশ নিয়েছে, দেশের নাম তিনি পালটাবেন না।

বাংলাদেশ নামে নতুন একটা দেশ পাওয়ার আকাঙ্খার অনেকগুলো কারণের একটা ছিল এই দেশ হবে পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় পালিত সাম্প্রদায়িকতা মুক্ত। এই দেশে ধর্ম থাকবে, ধার্মিকেরা থাকবেন কিন্তু রাষ্ট্র কোন নির্দিষ্ঠ ধর্মের শ্রেষ্ঠত্বের ভার বইবেনা। পচাত্তর পরবর্তী সরকার ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলোকে একের পর এক প্রতিষ্ঠিত হবার সুযোগ দিয়ে গেছেন আর তার ধারাবাহিকতায় সামরিক শাসক হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ ১৯৮৮ সালের ৯ই জুন অষ্টম সংশোধনীর মাধ্যমে ধর্মনিরপেক্ষতাকে বাতিল করে বাংলাদেশের রাষ্টধর্ম ইসলাম ঘোষনা করেন।

একই বছর 'স্বৈরাচার ও সাম্প্রদায়িকতা প্রতিরোধ কমিটি'র পক্ষে এই সংশোধনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রিট আবেদন করা হয় আদালতে। রিটে বলা হয় “বাংলাদেশে নানা ধর্মবিশ্বাসের মানুষ বাস করেন। এটি সংবিধানের মূল স্তম্ভে বলা হয়েছে। এখানে রাষ্ট্রধর্ম করে অন্য ধর্মকে বাদ দেওয়া হয়েছে। এটি বাংলাদেশের অভিন্ন জাতীয় চরিত্রের প্রতি ধ্বংসাত্মক।”
২০১১ সালের ৮ই জুন আরেকটি সম্পুরক আবেদন করা হয় এই রিটের পক্ষে। সংবিধানে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম অন্তর্ভুক্ত করার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে দায়ের করা রিট খারিজ করে দেন সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগ ২০১৬র ২৮শে মার্চ। আদালতের মতে আবেদনকারীদের এই রিট করার বৈধতা নেই বলে এই রিট বাতিল ঘোষনা করা হয় এবং অষ্টম সংশোধনীতে অন্তর্ভুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে বহাল রাখা হয় ইসলামকে

সংবিধানে যদিও বলা হয়েছে ‘প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রধর্ম হবে ইসলাম, তবে অন্যান্য ধর্মও প্রজাতন্ত্রে শান্তিতে পালন করা যাইবে’ এবং রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে এর শ্রেষ্ঠত্ব কেমন হবে সেই বিষয়ে কোন দিকনির্দেশনা দেয়া হয়নি, সাধারণ মানুষের মনে এবং রাষ্ট্রীয় পরিচয়ে এর ভূমিকা ব্যাপক। এই ঘোষনা দিয়ে অন্যান্য ধর্ম পালনকে অধিকার (Right) হিসেবে না হয়ে বিবেচনামূলক (Discretionary) হিসেবে দেখানোর অবকাশ থাকে।
খেয়াল করে দেখলে বোঝা যায় সরাসরি না বললেও স্থানীয় এবং কেন্দ্রীয় প্রশাসন হিন্দু এবং অন্যান্য সংখ্যালঘু ধর্মবিশ্বাসীদের গন্য করে দ্বিতীয় শ্রেনীর নাগরিক হিসেবে। এইজন্য একই অভিযোগে একজন সনাতন ধর্মাবলম্বী রসরাজকে যেখানে আদালতের মুখোমুখি হতে হয় সেখানে একজন ইসলাম ধর্মবিশ্বাসী বিনা শাস্তিতে পার পেয়ে যান।

বাংলাদেশের প্রচুর মসজিদের খুৎবায় কিংবা সাপ্তাহিক ওয়াজে যখন হিন্দুধর্ম এবং এর অনুসারীদের গালি দেয়া হয় অশ্রাব্য ভাষায় তখনো প্রশাসন নিশ্চুপ থাকে এই রাষ্ট্রধর্মের বলে বলীয়ান হয়ে। আযানের সময় মন্দিরের আওয়াজ বাইরে আসতে পারবেনা, পূজার সরকারী ছুটির দিনগুলোতে পর্যন্ত হিন্দুরা কাজ করতে বাধ্য বেশকিছু বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে এগুলো হলো এই রাষ্ট্রীয় শ্রেষ্ঠত্বের প্রতিফলন। সুপ্রীম কোর্টের প্রধান বিচারপতি কেন একজন হিন্দু হবেন এই দাবী নিয়েও আওয়ামীলীগের দানে পুষ্ঠ ওলামালীগ মিছিল মিটিং করতে পারে, এর অনেকগুলো কারণের একটা হলো রাষ্ট্র তাদের সেই ক্ষমতা সাংবিধানিক ভাবে দিয়েছে।

আমি নিজের কানে অনেকবার শুনেছি হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বলা হচ্ছে, "দয়া করে থাকতে দিয়েছি"। এই অনুকম্পার অনুভূতি কিন্তু একদিনে আসেনি। চারপাশে যখন দেখা যায় শাসনব্যবস্থা আসলে একটা নির্দিষ্ট ধর্মকে উপলক্ষ্য করে গড়ে উঠেছে, তখন কোন না কোন ভাবে এই উপলদ্ধি আসে সাধারণ মানুষের ভেতর, যেই দেশে থাকছি সেই দেশের রাষ্ট্রধর্মের অনুসারী নন যারা তারা কোন না কোনভাবে এখানে থাকবেন দ্বিতীয় পর্যায়ে থাকার অসুবিধাসমূহ মেনে নিয়ে। এই মনোভাবগুলো চোখে দেখা যায়না। এগুলো বাস করে মনে, বিস্তার করে মস্তিষ্কে আর প্রতিফলন ঘটে দৈনন্দিন কাজ থেকে শুরু করে এমনকী আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে।

আর আরেকটা ব্যাপার হলো ধর্মের শ্রেষ্ঠত্ব নিয়ে ইসলাম নিজেই ব্যাপক উচ্চকন্ঠ। নানা ভাবে ইসলাম নিজেকে শ্রেষ্ঠ ধর্ম হিসেবে স্বীকার এবং প্রচার করে এবং অন্যান্য ধর্মের অনুসারীরা যে অপ্রিয় পাত্র এই বিষয়ে ইসলামে তেমন রাখঢাক নেই। এই শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট এমনিতেই অনেক ক্ষতিকর এবং ঝুঁকিপূর্ণ প্রমাণিত। এই ঝুঁকি কমিয়ে এবং শক্ত হাতে দমনের দায়িত্ব রাষ্ট্রের। কিন্তু রাষ্ট্র নিজেই এই ধর্মকে নিজের ধর্ম ঘোষনা দিয়ে ক্ষতি করার প্রশস্ত সুযোগ করে দিয়েছে।
আওয়ামীলীগ সরকার অন্য অনেক দল থেকে তুলনামূলক কিছু বেশি অসাম্প্রদায়িক চেতনা লালন করলেও সংবিধানের এই ধারা পালটে নব্য মুসলিমদের ভোট হারানোর পথে যাবেনা। তাই রাষ্ট্রধর্ম নামের এই কলঙ্কের হাত থেকে আমাদের মুক্তি পাবার সম্ভাবনা মোটামুটি শূন্য।

অনেকেই প্রশ্ন করেন রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে স্বীকৃতি দেয়াকে শ্রেষ্ঠ ধর্ম ঘোষনা করা হলো কীভাবে? না এই ঘোষনা দেয়া হয়নি। কিন্তু মানুষের মননে রাষ্ট্র একে বিশেষ কিছু মনে করে এই ধারণা ঢুকিয়ে দিতে সমর্থ হয়েছে। আর বাংলাদেশে ১৯৪৭ থেকে শুরু করে যেখানে হিন্দুদের ওপর অবিশ্রাম অত্যাচারের ইতিহাস আছে, যেখানে ১৯৭১ সালে শুধুমাত্র অমুসলিম হবার অপরাধে মানুষের ওপর নেমে এসেছে অশেষ দুর্দিন সেখানে এই রাষ্ট্রধর্ম জিনিসটা যেমন একটা ফ্রাঙ্কেন্সটাইন তেমনি অমুসলিমদের ওপর এঁকে দিয়েছে হিটলারের হলুদ চিহ্ন।

অর্পিত সম্পত্তি আইন

বাংলাদেশকে প্রায়ই আমরা সমঅধিকার কিংবা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ বলতে ভালোবাসি। নোয়াখালি দাঙ্গা, বরিশাল দাঙ্গা, বাবরি মসজিদোত্তর অরাজকতা মাথায় নিয়েও মোটা দাগে বলা যায় মতপার্থক্য থাকার পাশাপাশি বেশ কিছু সাম্প্রদায়িক সহনশীলতা আছে। কিতু একটা কথা আমরা যেন ভুলে না যাই দল বেঁধে মন্দিরে হামলা করা ছাড়াও নীরবে রাষ্ট্রীয় আইনের মাধ্যমে একটা সম্প্রদায়কে পঙ্গু করে ফেলা যায়। শত্রু সম্পত্তি আইন কিংবা অর্পিত সম্পত্তি আইন এর সরব উদাহরণ।

১৯৬৫ সালে অনুষ্ঠিত পাকিস্তান-ভারত যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানে পাকিস্তান প্রতিরক্ষা অধ্যাদেশ জারি হয়। এ অধ্যাদেশের ধারাবাহিকতায় যেসব ধর্মীয় সংখ্যালঘু ৬/৯/১৯৬৫ পূর্ব থেকে ১৬/২/১৯৬৯ তারিখ পর্যন্ত পাকিস্তান থেকে ভারতে গমন করেছেন এবং সেখানে বসবাস করেছেন তাদের ঘোষনা দেয়া হয় দেশের শত্রু বলে এবং তাদের সম্পত্তি ঘোষিত হয় সম্পত্তি শত্রু সম্পত্তি হিসেবে। ১৯৬৯-এর ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি পাকিস্তান সরকার জরুরি অবস্থা প্রত্যাহার করে নিলেও তবে ওই একই দিনে সংখ্যালঘুদের ওপর আরোপিত হয় ‘শত্রু সম্পত্তি জরুরি বিধান অবিরত’ নামীয় অধ্যাদেশ। স্বাধীনতার পূর্ব পর্যন্ত তা বহাল থাকে।

বাংলাদেশের স্বাধীনতা লাভের পর এই অসভ্য আইনটি বিলোপের দাবী উঠলেও এ রয়ে যায় স্বমহিমায়। স্বাধীনতার কিছু পরেই ১৯৭২ এর ২৬শে মার্চ তৎকালীন সরকার অর্পিত সম্পত্তি আইন অধ্যাদেশ জারি করে। এই আইন দিয়ে স্বাধীনতা পূর্ব 'শত্রু সম্পত্তি' এবং পাকিস্তানীদের ফেলে যাওয়া সম্পত্তি একই শ্রেণিতে অন্তর্ভুক্ত হয়। ১৯৭৪ সালে সংশোধিত আইনানুসারে সকল শত্রু সম্পত্তি বাংলাদেশ সরকারের কাছে অর্পিত হয় এবং শত্রু সম্পত্তি নামকরণ হয় অর্পিত সম্পত্তি হিসেবে। ১৯৭৬ সালে এ আইনটির আরেকবার সংশোধনে করে। নতুন এই সংশোধনে সরকার অর্পিত সকল শত্রু সম্পত্তির প্রশাসন, নিয়ন্ত্রণ, ব্যবস্থাপনা, হস্তান্তরে একচ্ছত্র মালিকানা পায়। যদিও এই আইনের দরকার ছিল স্বাধীনতার পরপর যারা পাকিস্তান কিংবা অন্য দেশের নাগরিকত্ব গ্রহণ করেছিলেন তাদের সম্পত্তি সরকারের এখতিয়ারে নিয়ে আসার জন্য,তারপর থেকেই এই আইন ব্যাবহার করা হয়েছে মূলত হিন্দু সম্পত্তিকে অর্পিত সম্পত্তি দেখিয়ে আত্মসাৎ করার উদ্দেশ্যে।

১৯৯৬ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ এই আইন বাতিলের প্রতিশ্রুতি দিলেও দলের প্রচুর নেতাকর্মীরাই এইসব শত্রু সম্পত্তির ভোক্তা ছিলেন। মূলত তাদেরই কারণে এই আইন বাতিলে পিছিয়ে যায় আওয়ামী সরকার। তাদের শাসনামলের শেষের দিকে বেশ তাড়াহুড়ো করে অনেক অসংগতি সহ পাশ করা হয় অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যাপন আইন ২০০১, যার উদ্দেশ্য ছিল এই আইনের সুযোগ নিয়ে নির্দোষ ব্যক্তিদের সম্পত্তি যা শত্রু-অর্পিত হিসেবে দেখানো হয়েছে তা আসল মালিকের কাছে ফেরত দেয়া। যা আবার আরেকটি সংশোধনী দিয়ে দিয়ে মোটামুটি অকার্যকর করে দেয় বিএনপি জামাত নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকার ২০০৩ সালে।
আশার কথা হচ্ছে ২০১১ থেকে ২০১৩ পর্যন্ত এই আইনের ব্যাপক সংস্কার করে মোটামুটি একটা রুপে দাঁড় করানো গেছে। এখনো এই আইনে প্রচুর ফাঁক ফোকড় আছে যার মাধ্যমে আসল মালিকের কাছে সম্পত্তি প্রত্যাপন মোটামুটি অসম্ভব। কিন্ত তারপরো একে নিয়ে আরো কাজ করে ভুক্তভোগীদের দুর্ভোগের সুরাহা হওয়া সম্ভব।

এই আইন পাশ হয়ে সংশোধনী হতে হতে কত হিন্দু ব্যাক্তি/পরিবার যে সর্বস্ব হারিয়েছেন তা আমাদের ধারণার বাইরে। কদিন আগে পাকিস্তানের গণপরিষদে প্রথম বাংলাকে রাষ্ট্রভাষার দাবী করা ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের জন্মদিন ছিল। যিনি মুক্তিযুদ্ধ শুরু হবার কিছুদিন পরেই পাকিস্তানী বাহিনীর হাতে অবর্ণনীয় অত্যাচার সহ্য করে মারা যান। স্বাধীন বাংলাদেশে এই মনিষীর বাড়ি শত্রুসম্পত্তি হিসেবে সরকার অধিগ্রহণ করে নেয়। এরকম আরো বহু রাজনীতিক এবং অন্যান্যরা আছেন যারা শুধুমাত্র হিন্দু ধর্মের অনুসারী হবার কারণে সম্পত্তি খুইয়েছেন রাষ্ট্রের হাতে। সফল ব্যক্তিদেরই যেখানে এরকম পরিণাম সেখানে সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ সহজেই অনুমেয়। তাপস কান্তি বাউল তার এই লেখায় দাবী করেন ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত এই আইনের কারণে "প্রায় ৩৫ লাখ ৯০ হাজার হিন্দু নাগরিক তাদের সম্পত্তি হারিয়েছেন, হয়েছেন বাস্তুহারা, দেশছাড়া, পরিচয়বিহীন। অন্যভাবে বলতে গেলে, প্রতি ৩৪টি হিন্দু পরিবারের মধ্যে ১০টি হিন্দু পরিবার অর্পিত সম্পত্তি আইনের কারণে তাদের সহায়-সম্বল হারিয়েছেন।"

পরিসংখ্যানে না গিয়েও আমার ব্যাক্তিগত অভিজ্ঞতা বলতে পারি। কলেজে পড়ার সময় আমার এক হিন্দু সহপাঠির বাবা চিকিৎসারত অবস্থায় ভারতের ব্যাঙ্গালোরে মারা যান। কদিন পর স্থানীয় আওয়ামী এবং বিএনপি নেতারা মিলে তাদের বসতবাড়িকে শ্ত্রু সম্পত্তি দাবী করে। কলেজ ছেড়ে দেয়ার পর তার সাথে আর যোগাযোগ হয়নি। আশংকা করি কোনরকম ক্ষমতার অধিকারী না হওয়ায় তারা গৃহহীন হয়েছেন। এই লেখা যারা পড়ছেন আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি তাদের অনেকেরই এরকম অভিজ্ঞতা আছে।

এখন এরকম একটা আইন থাকবে মুক্তিযুদ্ধোত্তর স্বাধীন বাংলাদেশে বছরের পর বছর আর আমরা দাবী করবো আমরা দুটি ভাই শিবের গাজন গাই, এই কথা কি অসাড় অবাস্তব নয়? মন্দিরে পুলিশ পাহার দিয়েই রাষ্ট্র এবং সরকারের দায়িত্ব শেষ হয়ে যায়না। এই দুটো প্রতিষ্ঠানকে থাকতে হয় অভিভাবকের মতো। যা রাষ্ট্রধর্ম এবং এই আইন দিয়ে অসম্ভব।
আরো অনেককিছু আছে যেখানে বাংলাদেশ সরকারের করার আছে অনেক আমি শুধ রাষ্টের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দুটো কর্তব্য তুলে ধরলাম।

কদিন আগে সচল ত্রিমাত্রিক কবি একটা গুরুত্বপূর্ণ প্রসঙ্গ তুলেছিলেন আমাদের স্কুলের ধর্মশিক্ষা বইয়ে কীভাবে পূর্বতন নবীদের প্রতিমা ভাঙাকে সাফল্য এবং বুদ্ধিমানের কাজ হিসেবে দেখানো হয়েছিল সেটা নিয়ে। ছেলে মেয়েরা যখন এরকম একটা কাজকে পড়াশোনার অংশ হিসেবে ভালো কাজ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে বড় হয়, তারা বড় হয়ে সেই প্রতিমাপূজা, সেই ধর্মের অনুসারীদের অসম্মান করব, এতে কি অবাক হবার কিছু আছে? আমরা প্রায় প্রতি ক্লাসে বাংলা বইয়ে ইসলামের নবী কিংবা খলিফার ভালো কাজের বিবরণ পড়ে বড় হয়েছি। কখনো নবীর ঈদের দিনে অনাহারী ছেলে মেয়েকে কাছে টেনে নেয়ার গল্প কিংবা ঊমরের দাসকে উটের পিঠে চড়িয়ে নিজে তপ্ত বালিতে পথ চড়ার কবিতা। কটা গল্প কিংবা কবিতা আছে অন্য ধর্মের বিখ্যাত ব্যক্তিদের করা কাজ নিয়ে? তারপরো আমরা আশা করি সব ঠিকঠাক থাকবে?

বাংলাদেশে হিন্দুরা যেই পরিমাণ অসহায়ত্ব নিয়ে থাকেন, আমাদের পদে পদে লজ্জা পাওয়া উচিত আমরা এরকম একটা রাষ্ট্রব্যবস্থার নাগরিকত্ব ধারণ করি বলে। আওয়ামী লীগ সরকারের প্রচুর চমৎকার সব কাজ আছে। এই সরকারের সময়ে যতটুকু উন্নয়ন হয়েছে দেশে অতটুকু আর কারো দিয়ে হতোনা এই কথা নিঃসন্দেহ হয়েই বলা যায়। কিন্তু একজন দরিদ্র কৈবর্তের শেষ সম্পদ মাছ ধরা জাল যখন লুট হয়ে যায় ধর্ম রক্ষার নামে, পূজারীর সামনে যখন ধুলায় লুটায় তার পরম আদরের প্রতিমা তখন এইসব উন্নয়নকে মনে হয় সেই মণিহারের মতো। যাকে ধরতে গেলেই লাগে, যারে পরতে গেলেই বাজে। আমরা উন্নয়নের ওম চাই চাই প্রিয় রাষ্ট্র-সুপ্রীয় সরকার কিন্তু আমার দেশের মানুষের চিতার আগুনের তাপে নয়। সময় থাকতে এই আগুন নেভান। চিতা যেন দাবানলে বদলে না যায়। দাবানল দেবালয় এড়ায় না।

পাদটীকা


মন্তব্য

রানা মেহের এর ছবি

কোন একটা অদ্ভুত সমস্যার কারণে অনেক চেষ্টা করেও কিছু রেফারেন্স যোগ করতে পারছিনা। একটু পরে আবার চেশটা করছি। দুঃখিত এই সমস্যার জন্যে।

-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস

হাসিব এর ছবি

উসকানির অভিযোগে আবুল হাশেমকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়।

"সাময়িক বহিষ্কার", বহিষ্কার না।

আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াত নামে একটি ধর্মীয় সংগঠন ও তৌহিদী জনতার ব্যানারে হেফাজতি ইসলামের একটি দল বিক্ষোভ সমাবেশ এবং র‍্যালির আয়োজন করে নাসিরনগরে।

এখানে একটা ইন্টারেস্টিং বিষয় হল আহলে সুন্নাহ আর হেফাজতের সম্পর্ক রেষারেষি পর্যায়ে। এই দুই দল আবার আওয়ামী লীগকে তাগুত মনে করে। এই তিন বিরোধী শিবির হিন্দু পেটাতে এক হয়ে লাঠিসোটা নিয়ে মাঠে জিহাদে নেমে গেছে। এটার রাজনৈতিক তাৎপর্য সীমাহীন।

ধর্মীয় অবমাননা বিষয়টা সম্ভবত কেবল ইসলাম ধর্মের জন্য প্রযোজ্য।

বিষয়টা সেরকমই। মন্দির ভাঙলে কি ধর্মীয় অনুভূতি আহত হবার মামলা নেয়? মনে হয় না। অনভুতি সংখ্যালঘুদের জন্য না।

সরকার অবস্থার উন্নতিতে কোন ব্যবস্থা নেয়াতো দুরের কথা, রুটিন মতো সমস্যার সমাধানের চিন্তা না করে সমস্যা অস্বীকার করে আসছে শুধু। স্বরাষ্টমন্ত্রী ঘটনাস্থল পরিদর্শনে না গিয়ে বরং বলছেন,বাংলাদেশে সংখ্যালঘুরা নিরাপদে আছে। ছায়েদুল হকের যেখানে মন্ত্রীসভা থেকে বহিষ্কারের পাশাপাশি আইনের মুখোমুখি করা উচিত সেখানে সরকারের পক্ষ থেকে তার বিরুদ্ধে কোনরকম কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। সরকারের পক্ষ থেকে আক্রান্ত পরিবার এবং মন্দীরে কিছু আর্থিক সহায়তা দেয়া হয়েছে পরিস্থিতির বিচারে যা নিতান্ত অপ্রতুল।

আমার ধারণা হইচই না হলে সরকার কিছুই হয়নি এরকম ভাব করে থাকতো। এরা একবার বলে তাদের কেউ কিছু করে নাই, অন্যদিকে তিনজনকে সাময়িক বহিষ্কার করে। ইউএনো সরাতে এতদিন লাগিয়ে ফেললো। সমাজের একটা অংশ থেকে প্রতিবাদ হয়েছে বলেই এখন টনক নড়েছে। তবে বিভিন্ন বিষয়ে নানা কথা বললেও ৫৭ ধারার মামলা ও সেই বিবাদ বুঝতে রিমান্ড বাদ যায়নি।

শেষ করি হেডলাইন প্রসঙ্গ টেনে। আমার কাছে মনে হয় না উন্নয়নের সাথে কোন সংখ্যালঘু প্রসঙ্গের বিরোধ এখানে রয়েছে। উন্নয়ন ক্যাপাসিটি বাড়ায়। বিপন্ন কারো কাছে দ্রুত সাহায্য পৌঁছানর জন্যও উন্নয়ন দরকার। এখানে প্রশ্নটা হল সেই পৌঁছানোর ইচ্ছাটা সরকারের আছে কিনা। এই ইচ্ছা বিষয়ে লেখায় যা বলা হয়েছে সে বিষয়ে একমত।

রানা মেহের এর ছবি

ধন্যবাদ হাসিব ভাই। সাময়িক বহিষ্কার কথাটা আমিও পড়েছিলাম্ন কিন্তু যেই রেফারেন্স দেয়া সেখানে শুধু বহিষ্কার লেখা তাই সেটাই ব্যবহার করেছি। সাময়িক হোক কিংবা পূর্ণ, বহিষ্কার করে তাদের আসলে আইনের হাত থেকে বাঁচিয়ে দেয়া হয়েছে।

আহলে সুন্নাত আর হেফাজতিদের এই অম্ল মধুর প্রেমের কথা জানা ছিলনা। হিন্দু পেটাতে যেকোন বিরহই প্রেমে রুপান্তর করা যায় দেখছি।

উন্নয়নের প্রসঙ্গ শিরোনামে এনেছি আসলে কষ্ট পেয়ে। এই সরকারের যেকোন সমালোচনায় সরকারের সমর্থকদের কাছ থেকে উন্নয়নের কথা শুনি। এই প্রসঙ্গেও শুনছি। উন্নয়নের কৃতজ্ঞতাতো আমাদের সবারই আছে। কিন্তু উন্নয়নের নামে যে সংখ্যালঘুদের সমস্যা নিবারনে অবহেলা বৈধ হয়ে যায়না, এই জন্যেই এই শিরোনাম।

-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস

হাসিব এর ছবি

কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক গ্রুপ মূলত হানাফি মাজহাব ফলো করে আর আহলে সুন্নাহরা লা মাজহাব অর্থাৎ কোনও মাজহাবের ধার ধারে না। আইসিসের মতো। এদের রেষারেষি পুরনো ।
বছর দুয়েক আগে ডায়লগ ছিল যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বানচাল করতে সব ষড়যন্ত্র হচ্ছে। আদতে কে কী সেল করলো তাতে কিছু যায় আসে না। বিচার হচ্ছে, উন্নয়নও হচ্ছে। সাথে এসব ভাঙ্গা ভাঙ্গিও চলছে।

সাইদ  এর ছবি

আহলে সুন্নত ওয়াল জামাতেরা লা মাজহাব নয়। লা মাজহাব হল আহলে হাদিস যারা তারা। আহলে সুন্নত ওয়াল জামাতেরা কাদেরিয়া অথবা চিশতিয়া তরিকতপন্থী। হেফাজত/কওমী মাদ্রাসাওয়ালাদের সাথে এদের রেষারেষি পীরালি, বিদাত এসব নিয়ে। আপনি সম্ভবত মিশিয়ে ফেলেছেন আহলে হাদিস আর আহলে সুন্নত ওয়াল জামাতের সাথে।

হাসিব এর ছবি

ধন্যবাদ। আমার ধারণা ছিল আহলে সুন্নাত আর আহলে হাদিস এক গ্রুপ। আমি মিশিয়ে ফেলেছিলাম। আর ওরা কাদেরিয়া, চিশতিয়া পন্থি হলে তাদের সাথে হেফাজতের বিরোধ মাজার, পীর, মিলাদ, জিকির ইত্যাদি "বিদাত" নিয়ে এটা ঠিক।

অতিথি লেখক এর ছবি

আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা'তঃ এরা পীরপন্থী নয়। তবে এরা পীরপ্রথার বিরোধিতা করে না। এদের কেউ কেউ নক্‌শবন্দী-মুজাদ্দেদী ত্বরিকাহ্‌র সাথে যুক্ত থাকে। এই ত্বরিকাহ্‌ সাধারণত মাজার বানায় না। তাদের কেউ কেউ ওরস করে বটে তবে সেটা ক্বাদেরিয়া-চিশতিয়া ত্বরিকাহ্‌র ওরসের মত নয়। সেখানে পীর বন্দনা ধরনের কিছু বিশেষ থাকে না। এরা সোশ্যাল-ডেমোক্রেট ধরনের পলিটিক্যাল ইসলামের সাথে জড়িত। এদের ভেতর নেতাভিত্তিক উপদলীয় কোন্দল আছে।

আহ্‌লে হাদিসঃ এরা কুরআন আর সহীহ্‌ হাদিস (সিয়াহ্‌ সিত্তাহ্‌) ছাড়া কিছু মানে না। অর্থাৎ এরা চার মাজ্বহাবের চার ইমাম ও ইলমুল মারিফা'র ইমামদের (যেমন, ক্বাদেরিয়া, চিশতিয়া, নক্‌শবন্দীয়া, মুজাদ্দেদীয়া, সুহরাওয়ার্দীয়া, মাইজভান্ডারীয়া ইত্যাদি) শিক্ষা অনুসরণ করে না। এরা ঘোরতর পীরবিরোধী। বাংলাদেশে জঙ্গীবাদী ইসলামী গ্রুপগুলোর মূল এখান থেকে শুরু। এরা রেভ্যুলশনারী ধরনের পলিটিক্যাল ইসলামের সাথে জড়িত। এদের ভেতর নেতাভিত্তিক উপদলীয় কোন্দল আছে।

ক্বাদেরিয়া-চিশতিয়াঃ বাংলাদেশে পীরপন্থীদের বড় গ্রুপ হচ্ছে এই স্কুল। এইখানে ভ্যারিয়েশন এতো ব্যাপক যে সেটা কেস টু কেস ধরে বিশ্লেষণ না করলে বোঝা মুশকিল। গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হচ্ছে যে কোন সেক্টের মুসলিম, এমনকি অমুসলিমরা পর্যন্ত এই স্কুলের অন্তর্ভূক্ত হতে পারে। এদের বড় অংশ মাজার ও ওরস কেন্দ্রিক। এরা আওয়ামী লীগ-বিএনপি-জাতীয় পার্টি ধরনের সাধারণ রাজনীতির সাথে জড়িত থাকতে পারে, নাও পারে।

নক্‌শবন্দীয়া-মুজাদ্দেদীয়াঃ এই স্কুল বাংলাদেশে পীরপন্থীদের দ্বিতীয় বৃহৎ স্কুল। এখানে ভ্যারিয়েশন অপেক্ষাকৃত কম। এখানে মাজার ও ওরসের দৌরাত্ম কম। এরা আওয়ামী লীগ-বিএনপি-জাতীয় পার্টি ধরনের সাধারণ রাজনীতির সাথে জড়িত থাকতে পারে, নাও পারে।

হেফাজত/কওমী/দেওবন্দী/খারেজীঃ এরা মাজ্বহাবপন্থী, মাজার ও ওরস বিরোধী। তবে এদের কেউ কেউ পীরপন্থী, মূলত নক্‌শবন্দী-মুজাদ্দেদী ত্বরিকাহ্‌'র সাথে যুক্ত। পীরপন্থী উপগ্রুপটা ছাড়া এরা রেভ্যুলশনারী ধরনের পলিটিক্যাল ইসলামের সাথে জড়িত। কখনো সরকারের সাথে স্ট্র্যাটেজিক কারণে একমত হলেও এদের ডিগ্রী স্বীকৃত নয় বলে এদের অবস্থান সব সময়ে সরকারের বিপরীতে থাকে। এদের মধ্যে বেফাক্বভিত্তিক উপদলীয় কোন্দল আছে।

আলীয়াঃ এরা হচ্ছে মূলত জামায়াত-শিবির ঘরাণার পলিটিক্যাল ইসলামের সূতিকাগার। এরা মাজ্বহাবপন্থী এবং মাজার ও ওরসের ঘোর বিরোধী। এদের শিক্ষাব্যবস্থা সরকার নিয়ন্ত্রিত বলে (ডিগ্রী স্বীকৃত) রাষ্ট্রযন্ত্রের রন্ধ্রে রন্ধ্রে এরা অবস্থান নিতে সমর্থ।

নীড় সন্ধানী এর ছবি

এই মন্তব্যটি খুব প্রয়োজনীয় সংযোজন। ধর্মভিত্তিক গ্রুপগুলো সম্পর্কে আমাদের অনেকের ধারণা অপ্রতুল বলে প্রায়ই গুলিয়ে ফেলি কে কেন কোন পক্ষে কাজ করে।

‍‌-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?

অতিথি লেখক এর ছবি

বাংলাদেশ নামে নতুন একটা দেশ পাওয়ার আকাঙ্খার অনেকগুলো কারণের একটা ছিল এই দেশ হবে পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় পালিত সাম্প্রদায়িকতা মুক্ত।

-এই বাক্যটা বুঝতে পারিনি।

ভারতবর্ষের ইতিহাসে গত শতাব্দীর ত্রিশ-চল্লিশের দশক ছাড়া আর কখনো সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা হয়নি। ঐসময়টুকু ছাড়া বাকি সময়ে, মানে সুদূর অতীত থেকে এখনকার সময় পর্যন্ত কখনো সখনো গরম মাথায়, আর বাকি সময় খুব ঠাণ্ডা মাথায়, পরিকল্পনা করে সংখ্যালঘু নিধণ চলে আসছে। ভারতবর্ষ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির লীলাভূমি - এই বাক্যটা একটা নির্লজ্জ মিথ্যাচার। "আগে কি সোন্দর দিন কাটাইতাম" - কথাটায় কেউ বিশ্বাস করলে তাকে "সোন্দর দিন" খুঁজতে হাজার দশেক বছর আগের ইতিহাস ঢুঁড়তে হবে। এই অনুচ্ছেদে বলা 'ভারতবর্ষ' মানে ইন্ডিয়া-পাকিস্তান-বাংলাদেশ।

নিজের দেশের সংখ্যালঘু নির্যাতনের সংবাদে যারা অন্য দেশে কবে কী হয়েছে না হয়েছে ইত্যাদি ফিরিস্তি টানে তারা আসলে নির্যাতনকারীর পক্ষে সাফাই গাওয়ার চেষ্টা করে। সুযোগ পেলে এরাও সংখ্যালঘুদেরকে দুচার ঘা লাগাবে, বা তাদের সম্পদ লুট-দখল করবে, বা তাদের নারীদের ভোগ করার চেষ্টা করবে। অন্যের করা অন্যায় দিয়ে নিজের অন্যায় ঢাকার চেষ্টা যে দুর্বৃত্তপরায়ণতা সেটা এরা চেপে যায়। সমাজে চোর-ডাকাত-খুনী-ধর্ষক-লুটেরা-দুর্নীতিবাজ মানুষের অভাব নেই। তার মানে এই না যে চুরি-ডাকাতি-লুট-ধর্ষণ-দুর্নীতি আইনসিদ্ধ ব্যাপার। সংখ্যালঘু নির্যাতনের ব্যাপারে এই সমীকরণটি মানতে বড় অংশ মানুষ অরাজী। এই অনুচ্ছেদে বলা 'সংখ্যালঘু' মানে শুধু ধর্মীয় সংখ্যালঘু নয়।

বাংলাদেশের বিবেকবান মানুষের সামনে আওয়ামী লীগ ছাড়া অন্য কোন অপশন নেই। বর্তমান আওয়ামী লীগে সাবেক মুসলিম লীগ, সাবেক জাতীয় পার্টি, সাবেক বিএনপি, সাবেক জামায়াত, সাবেক বাম - সবই আছে। অর্থাৎ পূর্বতন স্বাধীনতাবিরোধী, স্বৈরাচারের সহযোগী, লুটেরা, গলাকাটা সবাই আওয়ামী লীগের ছায়াতলে আশ্রয় পেয়েছে। তাই দেশের বিভিন্ন স্থানে অথবা দেশের বিভিন্ন ঘটনায় আওয়ামী লীগের কাউকে কাউকে অমন আচরণ করতে দেখলে অবাক হবার কিছু নেই। সত্যটা হচ্ছে এই যে, আওয়ামী লীগ দল হিসেবে ঐ আচরণগুলো করেনি, বা অমন কিছু করার সিদ্ধান্ত নেয়নি সুতরাং তার দায় দল হিসেবে আওয়ামী লীগের অথবা আওয়ামী লীগ সরকারের হতে পারে না। অথচ ব্যক্তিপর্যায়ে করা অমন আচরণগুলো প্রায়ই দলের দায়িত্বশীল কারো কারো কাছ থেকে বৈধতা বা সাফাই দেয়া বা ধামাচাপা দেবার চেষ্টা লক্ষ করা যায়। যখন থেকে ব্যক্তির অন্যায়ের দায় গ্রহনে দল অস্বীকার করা শুরু করবে তখন থেকে দলের নাম ভাঙিয়ে অন্যায় করার সংস্কৃতি বন্ধ হবে। সব সমালোচনা সরকারকে ফেলে দেবার অপচেষ্টা নয়। সব অন্যায়ের প্রতি সমান ট্রিটমেন্ট দলের কর্মীদের মনোবল বৃদ্ধি করে, সাধারণ মানুষের আস্থা বৃদ্ধি করে।

প্রতিদিন অন্যায্যতা আর bullying-এর শিকার, মাঝে মাঝে সহিংসতার শিকার এই দেশের সব ধরনের সংখ্যালঘুকে সম্ভবত আরও অনির্দিষ্টকাল পর্যন্ত সাম্যতা, সদাচার, মানবিকতাসম্পন্ন সমাজের জন্য অপেক্ষা করতে হবে।

সোহেল ইমাম এর ছবি

খুব ভালো একটা লেখা। কিন্তু দিনকে দিন মানুষ হবার বদলে আমরা সবাই যেন আরো বেশিহারে মুসলমান হয়ে উঠছি। আড্ডায় একবন্ধু বলছিল মানুষ “ধর্মভিরু”, আমার মনে হলো এই কথাটা এখন পাল্টে ফেলতে হবে সেই বন্ধুকেও বলেছিলাম কথাটা হবে ধর্মঅহঙ্কারী, এক ধরণের সাম্প্রদায়িক অহঙ্কার; এখানে ধর্মভিরু- শব্দের লাজুক ব্যঞ্জনাটা আর খাটেনা। এই লেখার উপলব্ধী এখন যে কয়জনের মধ্যে আছে তারা রাষ্ট্রীয় সংখ্যালঘুদের চেয়েও সংখ্যালঘু হয়ে পড়ছে।

---------------------------------------------------
মিথ্যা ধুয়ে যাক মুখে, গান হোক বৃষ্টি হোক খুব।

রানা মেহের এর ছবি

সাইদ আর হাসিব ভাই, আপনারা কি একটু কষ্ট করে এই ইসলামিদলগুলোর বিভিন্নতা নিয়ে একটা লেখা পড়তে দেবেন কিংবা নিহেরা লিখবেন প্লিজ? এই জায়গাটা বুঝতে গিয়ে প্রায়ই হাবুডুবু খাই। কিন্তু বাংলাদেশে ইসলামির আন্দোলনের মাত্রা বুঝতে হলে এই বিভিন্নতা বোঝা জরুরী।

অতিথি, আগে কী সোন্দর দিন কাটাইতাম ব্যাপারটা খউব ব্যাপক না হলেও একেবারে ভুল নয়। সম্প্রীতি থেকে যেই শব্দটায় আমি জোর দেই তা হলো সাম্প্রদায়িক সহনশীলতা। এই সহনশীলতা ছিল বলেই ধর্ম বিষয়ক অনেক গোলযোগের পরেও একসাথে সবাই থাকতে পেরেছে। যদিও এই কথাটাও মাথায় রাখতে হবে, এই একসাথে থাকার পেছেন ত্যাগ স্বীকারটুকু করেছেন ধর্মীয় সংখ্যালঘুরাই। যেখানে কোন রকম বিভেদ বাঁধার সম্ভাবনা আছে সেখানে তারা নিজেদের নিয়ম উৎসব কেটে ছেঁটে ছোট করেছেন বৃহত্তর ঐক্যের স্বার্থে।

দল হিসেবে করছেনা বলেই আওয়ামী লীগের দায় নেই এই কথা ভুল। একই জিনিস যখন পুনরাবৃত্তি হয় বারবার এবং বিশদ ক্ষেত্রে সেখানে দলগত সমর্থন না থাকলেও দায়িত্ব এড়ানো যায়না। আর আপনি যেটা বললেন সাফাই গাওয়া বা ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা, সেতো আছেই।

সোহেল, ধর্মভীরু শব্দটা এখন আসলেই অচল। ধর্মঅহঙ্কারি কথাটার জন্য ধন্যবাদ।

-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস

অতিথি লেখক এর ছবি

আমি যে বাক্যটা বুঝিনি বলেছিলাম সেটা তো বুঝিয়ে দিলেন না।

এই একসাথে থাকার পেছেন ত্যাগ স্বীকারটুকু করেছেন ধর্মীয় সংখ্যালঘুরাই। যেখানে কোন রকম বিভেদ বাঁধার সম্ভাবনা আছে সেখানে তারা নিজেদের নিয়ম উৎসব কেটে ছেঁটে ছোট করেছেন বৃহত্তর ঐক্যের স্বার্থে।

- আপনার এই বক্তব্যের সাথে একমত। এবং এটা প্রমাণ করে ওই তথাকথিত 'সোন্দর দিন' সংখ্যালঘুদের জন্য কখনো ছিল না। এবং এটাও প্রমাণ করে যে সেখানে সংখ্যালঘুর ওপর নির্যাতনের কথা বিটুইন দ্য লাইন রয়ে গেছে।

দল হিসেবে আওয়ামী লীগের দায় না থাকাটা হচ্ছে 'আইনের কথা'। অপরাধের পুনারাবৃত্তি বা ঘটিত অপরাধের বিচার না হবার দায় সরকারের হয়, দলের নয়। কিন্তু বিবেকের কথা যদি বলেন তাহলে আওয়ামী লীগ দায় এড়াতে পারে না। বর্তমান আওয়ামী লীগের যে গঠনের কথা আমি উপরে বলেছি সেখানে কিন্তু দেখতে পাবেন আওয়ামী লীগের মূল দর্শনের সাথে সাংঘর্ষিক অবস্থানের লোকজন দলে ঠাঁই পেয়ে গেছে। ফলে দলে সাফাই গাওয়া বা ধামাচাপা দেবার লোকের অভাব হয় না।

একটা বিষয় কি লক্ষ করেছেন দলীয় পরিচয়ের বাইরে থাকা লোকজনের বিরাট অংশ এই রকম ঘটনাবলীতে কী রকম রিঅ্যাক্ট করে? শরৎকাল আসলে মূর্তি ভাঙা, বাইরের দুনিয়ায় কিছু হলে স্থানীয় সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা, সারা বছর ধরে তাদেরকে 'বুলি' করা আর সুযোগ পেলে তাদের সম্পদ জবরদখল করার ব্যাপারে তারা কী কী সব মহান বাণী দেয়? তথাকথিত সুশীল সমাজ, নাগরিক সমাজ ইত্যাদি মহলে এইসব ঘটনায় কেমন শুনশান নীরবতা বজায় থাকে?

নীড় সন্ধানী এর ছবি

এই তথ্যবহুল লেখাটা কোন জাতীয় দৈনিকে ছাপা হওয়া দরকার ছিল। লেখা ও মন্তব্যে এমন জরুরী কিছু বিষয় জানা গেছে যা আরো অনেক বেশী পাঠকের কাছে পৌঁছানো উচিত। নাসিরনগর বিষয়ে পত্রিকার টুকরো খবরগুলোতে পুরো চিত্রটা পাচ্ছিলাম না। এখানে বিস্তারিত সব তথ্য একসাথে পাওয়া গেল। অশেষ ধন্যবাদ কষ্টসাধ্য লেখাটির জন্য।

‍‌-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।