আমি হঠাৎ করেই বুঝলাম আমি আসলেই লেখক হতে চাই না। আমি দিকভ্রান্ত মানুষ, ঠাওর পাই না কোনো ভাবেই- হঠাৎ নতুন কোথাও গিয়ে হোঁচট খাই- এটা কোন দিক, পশ্চিমে মুখ করে দাঁড়ালে ডান হাত উত্তর অথবা ডান হাত দক্ষিণ এসব হিসাব করে ক্যাম্পাস নিয়ে ঘোরা সম্ভব নয়- সম্ভব নয় অসংখ্য মানুষের ভীড়ে নির্বিকার হেঁটে যাওয়া এবং অহেতুক হাজার মানুষের সাথে পরিচিত হওয়া এবং কুশল বিনিময় সম্ভব নয়-
বই মেলায় যাবো না যাবো না করেও ৩ দিন গেলাম- আরও কম যাওয়া যেতো হয়তো- কিংবা চেষ্টা করলে এড়িয়ে যাওয়া যেতো- তবে বই মেলার প্রতি যে তীব্র আকর্ষণ ছিলো বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে সেটা কেটে গেছে সময়ের সাথে-
বইমেলায় ঢুকলেই এখন ধুলো, মানুষের ভীড় আর নানাবিধ ছোঁয়াচ এড়িয়ে হাঁটার কসরত- হয়তো নাদিয়া কোমানিচি হলে ভালো হতো- তবে এ বয়েসে সেটা সম্ভব না-
এরপরও লেখক হিসেবে যা গুনাবলী থাকা উচিত আমার তা নেই- আমার কখনও মনে হয় না না লিখে আমি বাঁচতে পারবো না- প্রতিদিন নিয়ম করে হলেও একপাতা আমার লিখতেই হবে- এমন নিয়মতান্ত্রিকতা কিংবা তাগিদও নেই আমার ভেতরে- বরং গত কয়েকদিনে জেবতিক আরিফের সাথে বইমেলা চত্ত্বরে দেখা হওয়ার পরে বুঝলাম লেখক হওয়ার নানারকম হ্যাপা- এই প্রকাশকের দরজায় কিংবা প্রকাশনীর দরজায় পাহারা দেওয়া- এরসাথে সাক্ষাৎ তার সাথে হাসি-
এতটা সম্ভব হবে না সাত মন ঘি পুড়বে না রাধাও নাচবে না এখানে-
আর লেখকদের ভেতরে ঘারানার বিষয়ে একটা তীব্র বিতৃষ্ণাবোধ করলেও এখন দেখছি এটা এড়ানো প্রায় অসম্ভব একটা বিষয়- ছাপ লেগে যাওয়া, ছাপ লাগিয়ে দেওয়া, অহেতুক সংঘর্ষ আর বিদ্বেষ এর কোনোটাই আমাকে আগ্রহী করে না- অস্তিত্বকে দ্বিখন্ডিত করে দিচ্ছে ইদানিং এ বোধটাই প্রবল-
প্রাতিষ্ঠানিকতার বিরুদ্ধে থাকলেও আদতে কখনও প্রতিষ্ঠানের বাইরে যেতে পারে না মানুষ। মানুষ সংঘবদ্ধ রাজনৈতিক জীব এবং মানুষ আড়ম্বর করেই প্রাতিষ্ঠানিকতার চর্চা করে-
যখনই প্রতিষ্ঠান নির্মিত হয়- এই প্রতিষ্ঠান সংক্রান্ত ধারণাগুলোও জন্ম নেয়- প্রতিষ্ঠানের আগ্রাসন, প্রতিষ্ঠানের প্রতিপত্তি এবং প্রতিষ্ঠানের খবরদারি বাড়তে থাকে- প্রতিষ্ঠান কোনোসময়ই নিজেকে সীমাবদ্ধ রাখে না বরং অস্তিত্বকে সীমাবদ্ধ করে ফেলে-
আমরাই সেরা এবং আমাদের এখানেই বিশল্যকরণী পাওয়া যায়- প্রতিষ্ঠানের ধাঁচটাই এমন-
এরপরেও বই মেলা গেলাম- বইমেলা গিয়ে দোকান খুঁজে পাওয়া একটা সংগ্রাম- সাহিত্যবিকাশ, সাহিত্যপ্রকাশ নামে গোলমাল লেগে গেলেও সাহিত্যবিকাশের স্টল খুঁজতে যাই মানচিত্রে-
বইমেলার বর্ধমান হাউসের পাশেই মানচিত্রে বিভিন্ন স্টলের লোকেশন দেওয়া আছে চিহ্নিত করে- সেখানেই খুঁজে খুঁজে সাহিত্যবিকাশের দোকানের নাম্বার বের করা- ২৪৫-২৪৬
মানচিত্রের গোলকধাঁধায় এরপরে হারিয়ে যাই- হুমম ২০১-২২১- ২৪১- ২৬৭ কিন্তু ২৪১ থেকে ২৬৭এর ভেতরে বাকি দোকানগুলো নিরুদ্দেশ হয়ে গেলো? বারংবার খুঁজেও না পেয়ে ভাবলাম বোধ হয় সোহওয়ার্দিতে পাওয়া যাবে- গেলাম সোহওয়ার্দি-
নাহ সেখানে নীলক্ষেতরে তেহারি হালিম- কোপ্তা কাবাব নানাবিধ খাওয়া পাওয়া গেলেও সাহিত্য বিকাশের জন্য কোনো স্টল নেই সেখানে আর সেখানে দোকানের নাম্বার ৩৪ ৩৮, আবারও বইমেলার গেট দিয়ে ভেতরে ঢুকলাম-
আবারও সেই মানচিত্র থেকে কিছু উদ্ধারের আশা- নাহ হচ্ছে না কিছুই- ম্যানুয়াল ম্যানুভার- বইয়ের স্টলের উপরে তাকিয়ে তাকিয়ে হাঁটি- পাওয়া গেলো, ঠিক নাকের ডাগায় আছে- কোনো এক অজানা কারণে এই অঞ্চলের কোনো চিহ্ন নেই মানচিত্রে তবে দোকান আছে সেখানে-
দোকানে গেলাম- আর বুঝলাম আমার অনুদঘাটিত একটা এলার্জি মানুষের ভীড়- সেই ভীড় ঠেলে বইমেলায় বই প্রকাশের মাসে কোনোদিনই যেতে চাই না আমি-
আমি আদতে কোনোদিনই লেখক হতে চাই না।
মন্তব্য
লেখাটা কি কবিতা? কবিতার মত মনে হলো এবং সেভাবেই পড়লাম। খুবই সুন্দর হয়েছে।
...............................
খাল কেটে বসে আছি কুমিরের অপেক্ষায়...
বইমেলার ভেতরে আপাতত কবিতা নাই- একটা কবিতা কবিতা হইতেছিলো-
বইমেলায় ঘুরে ফিরে রাইসুর সাথে দেখা হয়ে যায়- অদ্যাপি তার ঘারে ঝোলে বটের শেকড়-
বইমেলার ভেতরে যা অবস্থা মানুষের ভীড়ে চিরাভর্তা হয়ে যাইতে হয়- এরপরও যাবো না যাবো না করেই যাওয়া-
প্রাপ্তি একটাই অমিতের অটোগ্রাফ-
-------------------------------------------------------
বাংলায় হাগি, মুতি, বাঁচি
------------------------------------
আমি তো গণে নেই বিচ্ছিন্ন একা
সঙ্ঘে সমুহে নেই সঙ্ঘমিতা।
পাই না তাই খাই না, হইলে তখন বুঝতেন, পারতেন কি না!!!
আগে হন, তার পর ডিসিশন নিয়েন,
- খিক খিক খিক .....
_________________________________
<সযতনে বেখেয়াল>
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
লেখাটা পড়ে একটা চিন্তা মাথায় এলো। বাংলাদেশে কি শুধু বই লিখে কেউ বেঁচে থাকতে পারবেন?
একজন লেখক যদি শুধু খেয়েপরেহেগেমুতে বেঁচে থাকতে চান, তাকে বছরে দুই লক্ষ চল্লিশ হাজার টাকা উপার্জন করতে হবে। জানি না প্রকাশনা সংস্থাগুলি লেখকদের এখন কী হারে কতটুকু সততার সাথে রয়্যালটি দেন, বা আদৌ দেন কি না, কোন অভিজ্ঞতাই নেই এ ব্যাপারে, তাত্ত্বিক পরিমাণ হচ্ছে বিক্রয়মূল্যের পনেরো শতাংশ। এই তত্ত্ব আঁকড়ে পড়ে থাকলেও বছরে লেখকের বইয়ের বিক্রি হতে হবে ষোল লক্ষ টাকার। ধরি তাঁর "নরমালাইজড" বইয়ের মূল্য দুশো টাকা, সেক্ষেত্রে সেটির আট হাজার কপি বিক্রি হতে হবে।
দেশে আট হাজার ঋণখেলাপী কোটিপতি পাওয়া যাবে, কিন্তু দুশো টাকা দিয়ে একটা ভালো বই কেনার মতো আট হাজার পাঠক খুঁজে পেতে গেলে ড়্যাব নামাতে হবে, চিরুনি অভিযান চালিয়ে খুঁজে বের করতে হবে সেই "কালা পাঠক"দের।
শুধু বই লিখে গেলেই হবে না, নিজের নামখানি যাতে পদে পদে পাঠকের চোখের সামনে থাকে সেজন্যে দৈনিক পত্রিকার সাময়িকীতে নিয়মিত লিখতে হবে, মাঝে মাঝে সপ্তাহের মাঝেই অন্যের লেখার প্রতিক্রিয়াস্বরূপ কোন কলাম, প্রতিষ্ঠানের লিজিওনে নাম লিখিয়ে একে ওকে ঘ্যাঁসঘ্যাঁস করে চুলকে যেতে হবে, মাথায় চিন্তা থাকতে হবে সেই কাল্পনিক আটহাজারক্রেতাবাহিনীর, ওগো আজ তোরা যাস নে, যাস নে ঘরের বাহিরে, ঘরেই থাক, আমার বই কিনে চল। টিভিতে বিভিন্ন টক শো-তে চেহারা দেখাতে হবে, মাঝে মাঝে চাপ কমানোর জন্য লিখতে হবে মিষ্টি প্রেমের নাটক, যেখানে নায়িকা আর নায়ক শুধু প্রেম করে, সঙ্গম করে না, কারণ টিভিতে সঙ্গম করা দেখানো যায় না, শুধু প্রেম দেখানো যায়। এরই মাঝে বিভিন্ন ইস্যুতে পথেঘাটেমিছিলেমানববন্ধনে থাকতে হবে, লাইনের কেউ মারা গেলে তার লাশ টিএসসিতে বিছিয়ে রেখে লাশের মাছি মুখ থেকে থাবা মেরে সরিয়ে হাস্যগদগদমুখে গল্প করতে হবে পড়ন্তযৌবনা কোন লাস্যময়ীর সাথে, টেলিভিশন ক্যামেরার মুখোমুখি হলেই চেহারাটিকে ভাবভারাক্রান্ত করে বলতে হবে নতুন কোন হিট কথা, যা আগে কেউ বলেনি, যা শুনলে দর্শক, অর্থাৎ তার মর্জি হলে সে পাঠকও বনে যেতে পারে, চোখ গোল করে বলবে, কস্কি!
লেখক হওয়া একটা পাপ দেশে। এরচেয়ে জিগোলো হওয়া ভালো।
হাঁটুপানির জলদস্যু
দারূন মন্তব্য!
হিমু ভাই,
আপনার কথা বহুলাংশে ঠিক। কিন্তু আপনি এত হতাশাবাদী কেন? এসবের মাঝোও কি নতুন লেখক আসছে না?
মানি বাংলাদেশে লেখাকে পেশা হিসাবে নেওয়া কঠিন। জারমানি তে কি খুব সোজা?
লেখক হবার সমস্যা তো বের করা গেলো।
সমাধান কি একটু ভাববেন?
সমাধান হচ্ছে লোকজনকে বই কিনে পড়তে উদ্বুদ্ধ করা।
জার্মানিতে লেখক হওয়া সোজা কি না জানি না, কোন লেখকের সাথে আলাপ হয়নি, লেখকজীবন নিয়ে কারো লেখাও পড়িনি, খুব বেশিদিন হয়নি এদেশে এসেছি, তবে এখানে বইয়ের দাম আর বিক্রি দুটোই অনেক। লোকজন ট্রামেবাসে বসে বসে বই পড়ে। ঢাকায় যা ট্রাফিক পরিস্থিতি, সকালে অফিসে যেতে পাক্কা এক ঘন্টা লাগে। ক'টা লোকের হাতে বই থাকে?
বাংলাদেশে একটা বিকেলে ফূর্তির যা খরচ, তাতে তিনটা ভালো বই কেনা যায়। আমরা কিনি না। লেখককে মিষ্টি কথা বলে তার কাছ থেকে ভালো লেখা আদায় করা যাবে না, তার বই কিনতে হবে, কিনে পড়তে হবে, পড়ে তাকে দৌড়ের ওপর রাখতে হবে। দেশে লেখকরা দুয়েকটা উপন্যাস লিখে ঝুঁকে পড়েন টিভিতে গদোগদো মেগাসিরিয়াল লেখার জন্য। তাকেও তো খেয়েপরে বাঁচতে হবে। আমরা বই না কিনে টিভি দেখে দেখে বড় বড় কর্পোরেটের বিজ্ঞাপনের ক্যানন ফডার হলে দেশে দুইদিন পর আর বইমেলা হবে না, হবে সিডি-ডিভিডি মেলা।
নতুন লেখক আসছেন, আর পুরোনো লেখক নষ্ট হচ্ছেন।
হাঁটুপানির জলদস্যু
সমস্যাটা দুই দিকেই । লেখাকে পেশা হিসেবে না নিলে মূল পেশার চাপে শাহাদুজ্জামান ২০০৮ সালে তার একমাত্র বইটি শেষ করতে পারেন না , এটা একটা ক্ষতি ।
আবার লেখাকে পেশা হিসেবে নিয়ে হিমু সেজে হলুদ পাঞ্জাবী পরে মেলায় ঘুরতে হয় একসময়ের লেখক এবং হালের চটি নাটকের প্রডিউসার হুমায়ূন আহমেদকে , এটাও একটা ক্ষতি ।
হিমু ভাই সব বলে দিয়েছে।
আর কিছু বলার নেই।
রাসেল ভাইর অন্য সব লেখার মতোন শক্তিশালি।
আমি ও আমার স্বপ্নেরা লুকোচুরি খেলি
আবার লিখবো হয়তো কোন দিন
একমাত্র হুমায়ূন আহমেদ ছাড়া আর তো কাউকে ফুলটাইম লেখাজীবি হিসেবে দেখি না। আল্লাহ যারে দ্যায়, তারে ছাপ্পড় ফাইড়া দেয়।
_____________________________
যতদূর গেলে পলায়ন হয়, ততদূর কেউ আর পারেনা যেতে।
_____________________________
যতদূর গেলে পলায়ন হয়, ততদূর কেউ আর পারেনা যেতে।
একজন শিক্ষক, যার প্রফেশন শিক্ষাদান সে ও লেখক হতে পারেন।লেখক শব্দটা শুধু ই প্রফেশন হিসাবে ব্যভিত হয় না।আর যখন প্রফেশন হয়, তখন তার অবস্থা হুমায়ূন আহমেদ এর মতো হতে বাধ্য।
কিছু ব্যাতক্রম থাকতে পারে।
রাসেল ভাইয়ের পোষ্টে আর হিমুর মন্তব্যে বিপ্লব।
কি মাঝি? ডরাইলা?
অসাধারণ লেখা... আর অসাধারণ কমেন্ট। প্রিয় পোস্টে অ্যাড করতেই হলো!
ওই দ্যাখো কান্ড, লেখকে কি করে!!
কি মাঝি? ডরাইলা?
হালকায়ে অফটপিক।
প্রবাসের শুরুটা মজার ছিল। শুরুর খানিক পর থেকে নিরন্তর ট্র্যাজেডি। ভক্স ওয়াগনের মেশিন সাফসুতরো করতে গিয়ে মরতে মরতে বাঁচা। সেই সময় ব্লগ ছিল না। ইমেইলে যোগাযোগ হতো বন্ধুবান্ধবের সাথে। একদিন গায়ে ব্যাথা আর চাপা জ্বর নিয়ে মর্মান্তিক বর্ণনার মেইল দিলাম সবুজ বাঘকে। স্বভাবত:ই মর্মাহত হলো। পরদিন জবাব পেলাম,
রাসেলের পোস্ট পইড়া একলগে অনেকগুলা কথা মনে হইলো, তার মধ্যে একটা লিখলাম। লেইখা প্যাট ভরবো না জানলেই কি ল্যাখা লাগবো না? চুরিচামারি কইরা প্যাট ভরামু আর আনন্দদায়ক বাজে কথা লিখা ডেগচিতে ভাঁপ উঠানোর প্রকৃত খোঁয়াব দেখুম।
ঋণম্ কৃত্বাহ ঘৃতম্ পীবেৎ যাবৎ জীবেৎ সুখম্ জীবেৎ
অজ্ঞাতবাস
ধারালো লেখা, ধারালো মন্তব্য।
স্বার্থক বাংলা ব্লগিং, স্বার্থক সচল হওয়া।
___________________________
বুড়োরা সবাই সমস্বরে বললো, "নবজন্ম", আমি চাইলাম "একটা রিওয়াইন্ড বাটন"
দারুণ লেখা...
একদা লেখক হইতে চাহিয়া এখন রাইত দিন প্যাকেজ লেখি। ডিমান্ড ভয়াবহ ভালো। লেইখা কূল পাইতেছি না। হাতে যে ক্ষেপ আছে সেইগুলা শেষ করতেই আগামী ৩ মাস পার হইবো। নতুন ক্ষেপ নিতে না চাই... কিন্তু লোকজন ছাড়ে না।
গত দুই বছর ধইরা একটা উপন্যাস লেখুম লেখুম ভাবতাছি... কিন্তু ফুরসত পাই না।
আরিফ ভাই মনে করাইলেন, আমিও পাইতেছিলাম এই মেলায় শাহাদুজ্জামানের বই না পড়তে পারার দুঃখ... বিসর্গতে দুঃখ...
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
হ , দেখতে দেখতেই সৈয়দ দেলগীর মইরা যাচ্ছে ... নাট্যকার নজরুল ইসলামরেও তো বউ বাচ্চা নিয়া খাইয়া বাচঁতে হইবো ।
আগুন মন্তব্য হিমুর- পয়সার জন্য লেখা কিংবা লিখে বেঁচে থাকবার চেষ্টা করেছে কেউ কেউ- তাদের কেউ কেউ সংবাদপত্রের সম্পাদকীয় লিখেছে পেশাগত প্রয়োজনে তবে সার্বক্ষণিক লেখক হিসেবে আসলে বাংলাদেশে হুমায়ুন ছাড়া আর কে আছে?
-------------------------------------------------------
বাংলায় হাগি, মুতি, বাঁচি
------------------------------------
আমি তো গণে নেই বিচ্ছিন্ন একা
সঙ্ঘে সমুহে নেই সঙ্ঘমিতা।
আট হাজার লোক পটাতে হবে। ভূমিকম্প হোক ৎসুনামি হোক, বন্যা মহামারী জলোচ্ছ্বাস ঘূর্ণিঝড়ে অকম্প অটল থেকে বছরে দুইশো টাকার বই কিনে যেতে হবে এদের, বংশ পরম্পরায়। মোটামুটি এরকম বছর চল্লিশ যদি এরা কিনে যেতে পারে, তাহলে আরেকজন লিখেখাওয়া লেখক পাওয়া যেতে পারে।
দুইশো টাকা দিয়ে একটা ভালো পিৎজাও পাওয়া যায় না ঢাকায়। দুইজনে বসে সিনেপ্লেক্সে সিনেমা দেখতে লাগে আরো বেশি, স্প্রাইট-পপকর্নশুদ্ধা। একটা ভালো কার্ডের দাম দুইশো টাকা থেকে বেশি, আহলাইদ্যা বান্ধবীর জন্য তুলতুলে পুতুলের দাম কমপক্ষে এর তিনগুণ। কিন্তু দুইশো টাকা দিয়ে একটা বই কিনতে গেলেই অজুহাতের হিড়িক পড়ে যাবে, কোনটা ফেলে কোনটা দেয়া যায় মানুষ ভেবে পায় না।
সবশেষে দাবি, আমাদের দেশে দুর্নীতিবাজ ঘুষখোরদের ছেলেমেয়েদের বইকেনা বাধ্যতামূলক করা হোক।
হাঁটুপানির জলদস্যু
আরও একটা বিকল্প আছে ৬৩, ৪৫, ১২১ বিভিন্ন নামে মেগা সিরিয়াল লিখে যাওয়া- আনিসুল হক হওয়া যায় নিজের হোগা নিজে মেরে প্রতিষ্ঠার রসাস্বাদন করা যায় তবে মননশীল লেখার জন্য যে পরিসর আর পরিশ্রম প্রয়োজন সেটা মনে হয় না সম্ভব হবে-
-------------------------------------------------------
বাংলায় হাগি, মুতি, বাঁচি
------------------------------------
আমি তো গণে নেই বিচ্ছিন্ন একা
সঙ্ঘে সমুহে নেই সঙ্ঘমিতা।
আর প্রকাশনার সমস্যা হলো এটা ওদের রুটি রুজির বিষয়- তাই ফর্মা মেপে প্রকাশকের মনমতো লেখা দেওয়াও খানিকটা সমস্যার- আমার মনে হয় এই বিষয়টাও বিবেচনার যোগ্য- একটা উপন্যাসের ঘটনার পরিসর চরিত্র নির্ধারণ করছে না- নির্ধারণ করছে এর প্রকাশনা ব্যয় অনেক সম্ভাবনা নিয়ে শুরু হওয়া উপন্যাসের শেষটায় গিয়ে হতাশ হতে হয়- চরিত্র পরিণতি পেলো না- কিংবা পরিনতি বলতে যাদি মধুর সমাপ্তি কিংবা বিষাদময় অবসান হয়- সেটা আসলে তাড়াহুড়োয় মনে হলো গল্প হত্যা- দায়টা লেখকের সাথে প্রকাশকের উপরেও যায়- যে উপন্যাসের ব্যপ্তি হবে ৩০০ পাতা সেটা ছাপাবে কে?
-------------------------------------------------------
বাংলায় হাগি, মুতি, বাঁচি
------------------------------------
আমি তো গণে নেই বিচ্ছিন্ন একা
সঙ্ঘে সমুহে নেই সঙ্ঘমিতা।
উপন্যাসের ব্যাপ্তি ৩০০ পাতার বেশি হওয়া উচিত বলে আমি মনে করি। উপন্যাস পড়তে যদি হাগার চেয়েও কম সময় লাগে, তাহলে কিভাবে হবে? একটা উপন্যাস পড়তে হবে দিনের পর দিন, হপ্তার পর হপ্তা ধরে। অফিসে যাবার পথে পড়তে পড়তে যাবো, ফেরার পথে পড়তে পড়তে ফিরবো, রাতের বেলা ঘুমোতে যাবার আগে পড়বো আধ ঘন্টা, ভাববো, চিন্তা করবো চরিত্রগুলোর জুতোতে নিজের পা গলিয়ে, বইটা মাঝে মাঝে নাকের কাছে ধরে নিয়ে গন্ধ শুঁকবো, মাঝে মাঝে বই বন্ধ করে ভাববো উপন্যাস থেকে পাওয়া কোন আইডিয়া নিয়ে। ঔপন্যাসিকদের দায়, প্রকাশকের দায় পাঠককে বিস্তৃত উপন্যাস পাঠের দিকে আকর্ষণ করার। প্রয়োজনে তাঁরা আলাদা ফিন্যান্সিঙের জন্যে খোঁজ করুন। ৬৪ পাতায় খেল খতম পয়সা হজমের চর্চা থেকে তাঁরা বেরিয়ে আসুন। প্রয়োজনে অল্প কপি ছাপান, যোগাযোগ করুন সারা দেশের স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরিগুলির সাথে।
হাঁটুপানির জলদস্যু
মোবাইল সেবাদাতাসহ বড়বড় প্রতিষ্ঠানগুলির উচিত তাদের কেন্দ্রীয় অফিস এবং শাখা অফিসগুলিতে লাইব্রেরি খোলা। সেখানে একজন লাইব্রেরিয়ান নিয়োগ করে কর্মীবাহিনীকে বই পড়ার সুযোগ করে দেয়া হোক। তারা নিজেদের বিজ্ঞাপন করে হলেও লোকজনকে জানাক, আমরা বই কিনি, বই পড়ি।
হাঁটুপানির জলদস্যু
গ্রামীন ফোন বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রকে স্পন্সর করছে।
--------------
রাতুল
নতুন মন্তব্য করুন