হয়তো পথের গল্প না

রাসেল এর ছবি
লিখেছেন রাসেল (তারিখ: বিষ্যুদ, ০৬/০৩/২০০৮ - ৮:০২অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

মুহূর্ত ধরবার জন্য বসে থাকি এক একটা মুহূর্তই আসলে ভীষণ জীবন্ত হয়- অন্যসব মুহূর্তকে ভ্রান্ত প্রমাণিত করে অনেক দিন অনুরণন তুলে হৃদয়ে-
দিন যাচ্ছে অলিখিত ভাবনাই বাড়ছে কেবল- আমার অলিখিত চরিত্রগুলোর সাথে দিবসযাপন- নিশিযাপন- তবে অবসর নেই তাদের কথা জানাবার- হয়তো কোনো একদিন মিলে যাবে অবসর গল্প শোনাবার- সে আশায় দিন কেটে রাত-
কোনো প্রয়োজনই নেই এসবের আদতে- কোনো অজুহাত চলে না এখানে- পথ হাঁটি- পথের মানুষ দেখি- পথ আর ফুরায় না- বাজারে আগুন লাগে- মানুষ শুকনো মুখে বসে থাকে- যে দোকানে নিয়মিত আড্ডা দেই সে দোকানের সামনে দাঁড়ায় শিশু হাতে মা- শিশুর চোখের নীচে শুকনো ত্বক- হাতের চামড়া ঢিলে- অপুষ্টি কিংবা পানিশুন্যতা- আঙ্গুলের নখে ময়লা জমেছে- মায়ের শাড়ী ইষৎ হলদে- মাঝে লাল ফুটি- বয়েস খুব বেশী হলে ২৫- মেয়েটার চোখে কোনো স্বপ্ন বা আশা নেই- ছেলেটার জন্য কিছু দিবেন- প্রত্যাখ্যানের কোনো ভাষা নেই- বুঝতেও পারি না শিশুটা এখানের চা কিংবা কেক খেতে পারবে কি না- বয়েস আন্দাজ করা কঠিন- বললাম যাও কলা নিয়ে নাও-

মেয়েটা ইতস্তত করে- আপনি দেন- আশংকা নিয়ে তাকিয়ে থাকে দোকানী- মেয়েটা যেতে চাইছে না- হয়তো চেয়ে খাওয়ার অভ্যাস নেই- হায়রে সাধের দিন বদলের স্বপ্ন- আমাদের সুশীল ও সভ্য হয়ে উঠবার প্রচন্ড লড়াই- আমাদের মাননীয় অমানবিক এনজিও সংস্থার প্রধানদের বিবেচনা-

কথা চলে না- আড্ডার মূল বিষয় ছিলো গণতন্ত্রের পথে আমাদের অগ্রযাত্রা এবং আগামী নির্বাচন নিয়ে সংশয়-নির্বাচন হবে কি হবে না এটা মুখরোচক আড্ডার বিষয় হতেই পারে- নির্বাচন কমিশনের তোড়জোড় দেখে মনে হচ্ছিলো বিশাল কিছু একটা ঘটতে যাচ্ছে সবার জীবনে- এই ভোটার আইডি কার্ড সকল সুখের গোপন চাবি- কত রকম প্রতিশ্রুতি- ৪ কোটি ভোটার নিবন্ধিত হওয়ার পরে বিশেষ অনুষ্ঠান- আর সেখানে নিমন্ত্রিতদের দেখে আবারও প্রশ্ন- আমাদের ভোটার তালিকা- আমাদের যাবতীয় আয়োজন কি একটা আইওয়াশ- আমাদের দুর্নীতিবিরোধী অভিযান- আমাদের রাজনৈতিক নেতাদের স্থবির করে রাখা- আমাদের মাননীয় প্রধান উপদেষ্টার বিশ্বের সামনে ঘোষনা সবই কি বিশাল কোনো নাটকের সুচনা?
আমাদের উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী তামিমের বক্তব্য শুনে চিন্তিত হওয়ার কারণ আছে- তার ধারাবাহিক উদ্যোগ যেনো দ্রুতই সি শোরে গ্যাস এন্ড ওয়েল এক্সপ্লোরেশন প্রক্রিয়া শুরু হয়- মাহমুদুর রহমানের পরে এমন করিৎকর্মা মানুষকে যখন অনেক উদ্যমী দেখি মনে হয় এর পেছনে অন্য কোনো কারণ আছে-

সেসব নানাবিধ সংশয় আর আশাবাদ নিয়ে আড্ডা গড়াতে থাকে- একটু আড়ালে গিয়ে মেয়েটা কলা খায়- কঠোর চোখে তাকিয়ে থাকে দোকানি- দোকানীর হয়তো সন্দেহ এটাও এক ধরণের ফেরেরবাজী- সে আরও একটু সময় নিয়ে তাকায়- সন্তুষ্ট হয়ে নিজের কাজে মনোযোগ দেয়- বিশ্বাসহীনতা নিয়ে অনেক কিছুই বলা যায়- আমাদের আর্থসামাজিক অবস্থা আমাদের করুণা এবং আমাদের কোমলতা নিয়েও আলোচনা করা যায়- আমাদের বিকলাঙ্গদের ঘৃণা- অবজ্ঞা এবং করুণার মিশ্র প্রতিক্রিয়ায় আমাদের সমাজে ধরেই নেওয়া হয় বিকলাঙ্গ মাত্রই অক্ষম করুণাজীবি- পথের সাথে গা ঘষে সাপের মতো এগিয়ে যাওয়া মানুষটাকে দেখি- সামনে একটা থালা- ঠেলছে- ও আল্লাগো- দয়া করেন-
এর পরে তার শরীরের সামনের অংশকে ঠেলে উঠাচ্ছে একটু উপরে- হাতে হর দিয়ে সামান্য আগাচ্ছে- সেই টানে পেছনের অংশ লগবগিয়ে সামনে যাচ্ছে- সাপের মতো এঁকেবেঁকে চলছে আর প্রতিবারই মনে হচ্ছে তার জীবনের এই বিপত্তি এড়ানোর কোনো ব্যবস্থা কি সম্ভব? একই রাস্তার উপরে অন্তত ৩টা বিকলাঙ্গ মানুষ- হাতে থালা- চোখে মিনতি এবং আমাদের করুণামিশ্রিত ঘৃনা বর্ষিত হচ্ছে অবিরাম-

আমার সামনের মেয়েটা শিশুটিকে কোলে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে- শিশুটি চোখ পিটপিট করে পৃথিবী দেখছে- হয়তো বুঝতেও পারছে না আমাদের পৃথিবীটা কি রকম মর্মান্তিক কঠোর হয়ে যাচ্ছে দিন দিন- আমাদের পরিস্থিতি কতটা বিস্ফোরক হতে পারে এ ধারণাও তার নেই-

বাজারে চালের অভাব নেই- বাজারে তেলের অভাব নেই- বাজারে খাদ্যের অভাব নেই- মজুতদার বিরোধী অভিযানের পরে বলা যায় কেউই আসলে খাদ্য সংকট তৈরির জন্য চেষ্টা করছে না তবে এরপরেও মানুষ খেতে পারছে না

মানুষের কেনবার সামর্থ্য নেই- মানুষ খেতে পারছে না কারণ খাদ্য কিনবার পয়সা নেই তাদের- বাজারের দোকানি পাইকারি কিংবা খুচরা তারা যে অনেক বেশী মুনাফা করছে এটাও সত্য না- তারা কেজিতে ১টাকা হয়তো লাভ করছে- চালের চালান আসছে যেখান থেকে সেখানেই দাম বেশী- আর আমাদের বাজারের খুচরা মূল্য নির্ধারণ করতে পারঙ্গম উপদেষ্টা মন্ডলীর অবশ্য তেমন দায় নেই পরিবেশক পর্যায়ে গিয়ে দাম নির্ধারণ করে দেওয়া-
সরকারের হাতে সবই ছিলো এবং আছে- কে কত টাকা দিয়ে এলসি খুলেছে- কত টন আমদানী করেছে- বিশেষজ্ঞ হিসেব করে বলে দিতে পারে প্যাকেট করতে আর বাজারে আনতে ঠিক কত টাকা খরচ হতে পারে- মিল গেটে দাম নির্ধারণের প্রয়োজন- ব্যবসায়ীদের মরা কান্না শুনলে মনে হয় তারা আসলে ব্যবসা করছে না লোঙরখানা খুলেছে- সেখানে ক্ষতিস্বীকার করেও তারা ব্যবসা করছে- সরকার বিমাতাসুলভ ব্যবহার করছে- অহেতুক হয়রানি করছে- ট্যাক্স দিতে দিতেই তাদের লাভ শেষ হয়ে যাচ্ছে- লাভের গুড় পিঁপড়া খাচ্ছে-
নির্বাচন কমিশন সীমানাপূননির্ধারণের প্রকল্প হাতে নিয়েছে-
উভয় সঙ্কট এটাকেই বলে- যদি নির্বাচনী এলাকার সীমানা পুনরায় নির্ধারিত হয় তবে সেটা মীমাংসার জন্য যেকোনো মামলাই নির্বাচন ঠেকিয়ে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট- যদিও মাত্র ১০টি জেলার সীমানা নির্ধারণের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছে সরকার তবে এটা হয়তো ১০টা জেলার নির্বাচনকে আটকে দিবে- সবকয়টা আসনে নির্বাচন না হলে হয়তো জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে না- অনেক রকম সম্ভাবনা আর সংশয়ের ভেতরেও শিশুটাকে দেখি-

আমাদের ভাগয়বিরম্বিত নতুন প্রজন্ম- গ্রাম থেকে উৎখাত হয়ে চলে এসেছে- মায়ের চেয়ে খাওয়ার অভ্যাস নেই- কাজের মেয়ে হিসেবে কোথাও ঢুকে যাওয়ার সম্ভবনাও ক্ষীণ- গার্মেন্টস সেক্টরে কাজ খুঁজে পাবে না- আমাদের গার্মেন্টস মালিক কতৃপক্ষ সন্তানসম্ভবা এবং শিশুসহ মাতাদের যোগ্য এবং দক্ষ জনবল বিবেচনা করতে পারেন না- হয়তো মানবিকতার বাধা আছে- হয়তো মাতার ডায়বদ্ধতা তাদের উৎপাদনক্ষমতা হ্রাস করে-

মেয়েটার সামনে আসলে কয়টা পথ খোলা? আমি হিসাব করতে থাকি-


মন্তব্য

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।