ওয়াশিংটনের এয়ার বেসে ধ্বসে পড়া বিমানের টুকরো অংশগুলো জুড়ে যে কাঠামো তৈরি করা হয়েছে সেখানে কাজ করছে ল্যাংলী এয়ারবেসের গবেষকেরা। বিমান থেকে যতটুকু তথ্য সংগ্রহ করা সম্ভব তা করতে কোনো ত্রুটি যেনো না থাকে সেটা নিশ্চিত করতেই এখানে বিস্ফোরণ ও এরোডিন্যামিক্সের রথি-মহারথীদের নিয়ে আসা হয়েছে। বিমানের ধ্বংসাবশেষ থেকে এমন কোনো উপাত্ত পাওয়া যায় নি যা দিয়ে নিশ্চিত বলা যায় এটা অন্তর্ঘাতমূলক অপততপরতা। বিস্ফোরকের অস্তিত্ব নেই- বারুদে আগুন জ্বালালে যেমন সবটুকু পুড়ে নিঃশেষ হয়ে যায়- সেখানের রাসাওনিক বিশ্লেষণ করলেও ফসফরাস, কার্বন, নাইত্রোগেনের যৌগগুলোকে খুঁজে পাওয়া যায়- এখানেও একই অবস্থা- বিমান পুড়ে গেলে যেসব যৌগ পাওয়ার সম্ভবনা থাকে বিমানের গা থেকে সেটুকুই উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে- এটাই চিন্তার কারণ।
এফ এ এ রেগুলেশনে কোনো ফাঁকি ছিলো না- রুটিন চেক আপ শেষ করেই ফ্লাইট শুরু করেছিলো পাইলট। আধুনিক সময়ে যতটুকু কারিগরী সহায়তা দেওয়া সম্ভব তার সবটুকুই ছিলো এ বিমানে- এমন কি হঠাত যদি বিমানের ডানাও একটু কেঁপে উঠে সেটাও পাইলটের অগোচরে থাকবার সম্ভবনা নেই- ফ্লাইট ডাটা রেকর্ডার উদ্ধার করা হয়েছে- সেখানেও বিমানের কারিগরী ত্রুটি খুঁজে পাওয়া যায় নি- কোনো কারণ ছাড়াই মাঝ আকাশে একটা বিমান বিস্ফরিত হয় না-
উই হ্যাভ টু থিংক আউট সাইট দ্যা বক্স।
কাঠামোর বাইরে গিয়ে ভাবতে হবে- ক্ষীণ সম্ভবনাগুলোকেও বাদ দেওয়া যাবে না- বিস্ফোরণটা ঘটেছে ঠিক ডানার পাশেই- সেখানেই ইঞ্জিন থাকে- ইঞ্জিনকে বিস্ফোরিত করা যায় দূর থেকে? কেউ কি ইঞ্জিনের ভেতরে কোন কারসাজি করেছিলো? ইঞ্জিনের প্রতিটা অংশ তন্ন তন্ন করে খোঁজা হয়েছে- আপাতত যতটুকু জানা গেছে সেখান থেকে আউট সাইড বক্স ভাববার মতো কিছুই বের হয়ে আসে নি-
যে অন্ধকারে ছিলো সুচনায় সে অন্ধকার এখনও উপ্সথিত। বরং প্লেনের যাত্রীদের কাছ থেকে কিছু বাড়তি তথ্য পাওয়া যায় কি না এটা দেখছিলো ডেভিড লংব্যাক। বেঁচে থাকা ২৫ যাত্রীর জবানবন্দি পড়ছে বসে বসে । দুপুরে কিছুই খায় নি- মাঝে একটু বিরতি দিয়ে নীচের ভেন্ডিং ম্যাশিন থেকে কোক কিনে এনেছে- সেটাতেই চুমুক দিচ্ছে আর পরছে ও।
সবার বক্তব্যই একই রকমের, আগাম কোনো পূর্বাভাষ পায় নি কেউই, বিমানের যাত্রীদের ভেতরেও কাউকে অস্থির মনে হয় নি, সবাই নিজের মতোই অপেক্ষা করছিলো, ধোয়া দেখবার বিষয়ে তেমন ভাবে কেউ কিছু বলে নি, জহির ওসমানের জবানবন্দীটা আবার পরছে, জহিরকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছিলো তৃতীয় দিনেই- কোনো তথ্য পাওয়া যায় নি, এমন কি কোথাও কোনো অসামনজস্যও খুঁজে পাওয়া যায় নি তার কথায়,
ফোর্ট বেলভয়ার থেকে বিশেষজ্ঞ দল বিমানের প্রতিটা অংশ নিয়ে আলাদা আলাদা ভাবে বসেছে। তারাও চিন্তিত। সাম্ভাব্য অন্তর্ঘাতের তত্ত্ব দিয়ে এটাকে বিশ্লেষণ করা যাচ্ছে না- কোথাও এ ঘটনা ঘটবার পূর্বাভাষ নেই- ১৯টি শাখায় ছড়িয়ে থাকা ইন্টেলিজেন্স দলের কারো কাছ থেকেই কোনো তথ্য জানা যায় নি।
ইসলামী জঙ্গীবাদের উত্থান হিসেবেও এটাকে প্রচার করা যাচ্ছে না। কৌশলগত মিত্রতা এবং যুদ্ধংদেহী পেন্টাগনের মানুষেরাও এটাকে পুঁজি করে কোথাও হামলা চালানোর ছুতা খুঁজলেও সেরকম কিছু দেওয়ার মতো প্রমাণও নেই। এমন কি এখনও নিশ্চিত হওয়া গেলো না এটা কি কোনো মিসাইলের আক্রমনে হয়েছে না কি ভেতরেই কোনো বিস্ফোরণ ঘটেছে।
প্লেনের ভেতরে কোনো অননুমোদিত ল্যাগেজ ছিলো কি না এ বিষয়েও খোঁজ নিয়ে নিশ্চিত হয়েছে এফ বি আই। এখানের প্রতিটা পার্সেলই আগে থেকে যাচাই করে নেওয়া। যারা প্যাকেজিংয়ের দায়িত্বে ছিলো, মেক্সিকো থেকে আসা অবৈধ অভিবাসিদের যারা এখানে প্লেনের মালপত্র তুলবার কাজ করে তাদের পয়সা দিয়ে কেউ অবৈধ কোনো লাগেজ তুলেছিলো কি না এটা যাচাই করবার জন্য সে দিন এই বিমানে লাগেজ তোলার কাজে নিয়োজিত সবাইকে হেডকোয়ার্টারে এনে জেরা করা হয়েছে-
তাদের কাছ থেকেও কোনো তথ্য পাওয়া যায় নি।
উপর থেকে নিয়মিত চাপ আসছে- সুরাহা করা যাচ্ছে না- এটাও কি টি ডাবলিউ এ ফ্লাইট ৮০০ এর মতো কোনো দুর্ঘটনা? সেবারও কেউ কেউ দাবি করেছিলো একটা মিসাইল এসে আঘাত করেছিলো বিমানে- তবে এমন কোনো বিস্ফোরণের ছিটেফোটাও পাওয়া যায় নি ধ্বংসাবশেষ ঘেঁটে।
অজানা কারণে মাঝ আকাশে বিস্ফোরিত হয়েছে বিমানটা এটাও মেনে নেওয়া যাচ্ছে না- অন্তত ১০ জন যাত্রী হলফ করে বলেছে তারা কেবিন লাগেজ থেকে ধোঁয়া বের হতে দেখেছে- প্রতিটা ফ্লাইটেই ফায়ার এন্টিগিউশার আছে- সেটা ব্যভারের মতো মারাত্বক ধোঁয়া নিশ্চই দেখা যায় নি- তাছাড়া ফায়ার এলার্ম বেজে উঠবার কোনো তথ্য পাওয়া যায় নি এফডিআর থেকে। ককপিট ভয়েস রেকর্ডারেও কোনো তথ্য নেই- ইঞ্জিনের গোলোযোগের কোনো তথ্য নেই-
নাহ সার্জেন্ট ম্যাকডয়েল চুড়ান্ত রিপোর্ট লিখবার প্রস্তুতি নিচ্ছে-
বীমা কোম্পানি নিজের মতো করে প্রাইভেট ইনভেস্টিগেটর লাগিয়েছে কাজে। তাদের এ বাবদে ক্ষতিপুরণ দিতে হচ্ছে প্রায় ৫ বিলিয়ন ডলার- এয়ার আমেরিকা দুর্ঘটনার জন্য ক্ষতিপুরণ দিচ্ছে ২ বিলিয়ন ডলার। এছাড়াও তাদের ব্যবসায়িক প্রভাব এবং বিশ্বস্ততায় আঘাত এসেছে।
প্রতিদন্ডী কোম্পানিগুলো যেভাবে ঘাড়ের উপর নিশ্বাস ফেলছিলো এ দুর্ঘটনার পরে তাদের বিমানের যাত্রী পরিবহন সংখ্যা বেড়েছে- এবং যারা অগ্রীম টিকেট কেটেছিলো তারাও একে একে ফ্লাইট ক্যানসেল করে অন্য বিমানে যাচ্ছে।
এফএএ নতুন করে সাবধানতা অবলম্বন করতে বলেছে। এখন আভ্যন্তরীণ ফ্লাইটেও ২ জন করে ফ্লাইট মার্শাল থাকবে- তাদের কাজ হবে সন্দেহজনক যাত্রীদের দেখে রাখা। প্রতিটা বিমানের যাত্রীর নাম পরিচয় অন্তত ৩ ঘন্টা আগে জানাতে হবে। শেষ মূহুর্তে কোনো যাত্রীকে প্লেনে উঠতে দেওয়া হবে না। আর সকল যাত্রীকে প্লেন ছাড়বার অন্তত ৪ ঘন্টা আগে বিমানবন্দরে উপস্থিত হতে হবে। লাগেজ পরীক্ষা করে প্লেনে উঠানোর জন্য বিমানবন্দরের লাগেজপরীক্ষকদের পেরেশানী বাড়লো।
সামান্য লাল আলো জ্বললেই লাগেজ খুলে পরীক্ষা করছে তারা- যদিও বেশীর ভাগ সময়ই দেখা যাচ্ছে ফলস এলার্ম এরপরেও এফএএর দাবি পুরণ করতে তারা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে।
মিহিরের চশমার জন্য চেহারাটা আরও ছোটো ছোটো লাগে। এমনিতেই চুপচাপ মিহির, শুধু চোখটাই জীবন্ত। সারাক্ষণ ঈয়ের ভেতরে মাথা গুঁজে পরে থাকতো এখনও সে অভ্যাস যায় নি। কোনো বন্ধু গড়ে উঠে নি- বন্ধু গড়ে উঠবার জন্য যেটুকু সময় প্রয়োজন সেটুকু সময় সে কাটিয়েছে পড়ার টেবিলে।
এমনিতে সবার সাথেই সড্ভাব তার- তবে বন্ধু না বলে তাদের পরিচিত বলাটাই বেশী শোভন হবে- ক্লাশের ছেলেদের ঠাট্টা মশকরা শুনে শুনে অভ্যস্ত মিহির যখন প্রথম তার উর্ধতন কর্মকর্তাকে বললো সামথিং ইজ রং উইথ ফ্লাইট ২৩১, তার হাসিতে যে অবজ্ঞা ছিলো সেটা হজম করতে কষ্ট হয়েছে মিহিরের।
হাতি ঘোড়া গেলো তল মশা বলে কত জল? এমনই প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলো তার দিকে। এফবিআই এর বিস্ফোরণ বিশেষজ্ঞ দল এসেছিলো এখানে, ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের বোমা বিশেষজ্ঞরা এসে আমাদের বিমান পরীক্ষা করে যে রিপোর্ট দিয়েছে সেটাতো তুমি জানোই। এরপরেও তোমার সংশয় যায় না।
তোমার কি মনে হয়, তুমি তাদের চেয়ে বেশী জানো?
একটা বিষয় কিছুতেই মিলছে না- এমন কি ল্যাবরেটরিতে নিয়ে গিয়ে পরীক্ষা করবার সময় যে খটকাটা ছিলো এখন সেটা আরও বেড়েছে-
সিয়াটলের আকাশে বিস্ফোরিত প্লেনের সংবাদ পড়ে তার আগ্রহ আরও বেড়েছে- সারাক্ষণ সিএনএন এর সংবাদ দেখার জন্য পারলে টেলিভিশনের পর্দায় নাক লাগিয়ে রাখে।
সংবাদ আর সংবাদ বিশ্লেষণ শুনে মনটা খারাপ হয়-
মন খারাপ ভাবটা মুছে যায় না সহজে- এমন অপমান সহ্য করাও কঠিন। জহির ওসমানকে সাম্ভাব্য বোমাবাজ চিহ্নিত করতে উঠে পড়ে লেগেছে মিডিয়া- সেটাও আহত করে ওকে।
বিমানের আসন বিন্যাস আর জহিরের সাম্ভাব্য অবস্থান দেখানোর সময় মনে হলো ফ্লাইট ২৩১এর সাথে এখানে কি যেনো একটা মিল আছে। দুটো জায়গাটেই বিস্ফোরণ হয়েছে ইঞ্জিনের পাশেই- ইঞ্জিনের কাছাকাছি জায়গা থেকেই বিস্ফোরণের উৎপত্তি।
মিহির আবারও মেজর শাহেদের সাথে যোগাযোগ করবে ঠিক করলো।
পরদিন সকালেই মিহিরের আব্দার শুনে মেজর শাহেদের চোখ কপালে উঠলো। মিহির অনুমতি চাইছে সে আবার প্লেনের ধ্বংসাবশেষ পরীক্ষা করে দেখতে চায়। টপ সিক্রেট ক্ল্যাসিফাইড এখন এটা। সামরিক বাহিনীর উচ্চপদস্ট তদন্ত কমিটি এখন এটাকে পরীক্ষা করছে- সেখানে যুক্ত হতে চাইছে মিহির নামের এই সাদামাটা ছেলেটা। ভালো ছাত্র হওয়া ছাড়া তার আর কোনো যোগ্যতাই নেই-
এখন চাইলেই তো অনুরোধ করে বলা যায় না আমি দেখতে চাই আবার পরীক্ষা করে।
মিহির মনে মনে একটা সাম্ভাব্য কারণ খুঁজছিলো- সেটা খুঁজে পাওয়া যাবে কি না এটা নির্ভর করছে মেজর শাহেদের অনুমতি পাওয়ার উপরে-
কেমিক্যাল এনালাইসিসের রিপোর্ট ওর প্রয়োজন। সেটা দেখবার সুযোগ কি ও পাবে?
মন্তব্য
একে একে তিনটা পর্বই পড়লাম। দারুন জমেছে কাহিনী— তা "মাসুদ রানা" আসবে কখন?
কি মাঝি? ডরাইলা?
নাহ মাসুদ রানা আইবো না। মাসুদ রানা অন্য মিশরে মিশরে গেছে গিয়া, রাহাত খান এখন সাবস্টিট্যুট খুঁজে।
-------------------------------------------------------
বাংলায় হাগি, মুতি, বাঁচি
------------------------------------
আমি তো গণে নেই বিচ্ছিন্ন একা
সঙ্ঘে সমুহে নেই সঙ্ঘমিতা।
পড়ছি এবং পরের পর্বের অপেক্ষায়।
----------------------------------------------
আমাকে নিঃশব্দে অনুসরণ করে একটা নদী-
সাথে নিয়ে একটা পাহাড় আর একটা নিঃসঙ্গ মেঘ।
রহস্য সিরিজ আমার সবসময়ই ভালো লাগে।
- ডিজিটাল ফোরট্রেস পড়তে গিয়ে পাতার পর পাতা শেষ হয় শালার ভূমিকা-বর্ণনার যবনিকা আর হয় না।
মাসুদ রানারে না আনেন পিসি মিত্তিররে আনেন। তাও কেন্দ্রে আসেন, পরিধিতে আমাগোরে আর কত ঘুরাইবেন মিয়া?
আর আপনেরে হিমু'র ব্যামোতে পাইছে? লোকজনরে বসায়া রাখেন ক্যা?
_________________________________
<সযতনে বেখেয়াল>
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
নতুন মন্তব্য করুন