দশকওয়ারী কবি বিভাজনের সাথে প্রজন্মের বিভাজনও প্রচলিত একটা ধারা। আমাদের প্রজন্ম হাইব্রীড একটা কিম্ভুত কচ্ছপ। আমরা যারা মধ্য ৭০এ বড় হচ্ছি তাদের কাছে তৎকালীন রাজনৈতিক ইস্যু গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের সময়েই আমাদের পিতারা পাকিস্তানের ভুতে ফিরে যাচ্ছে। হিপ্পি প্রজন্মের দায়বদ্ধতাহীনতা আর যুদ্ধপরবর্তী অবসাদের সাথে এই অবসাদ দুর না করবার সরকারী বেসরকারী প্রয়াসের ফলে আমাদের পিতাদের জড়তা অনেক বেশী,
ব্যর্থতার দায় তাদের উপরে চাপানোর কারণ একটাই থাকে, আমাদের দায়িত্বহীনতাকে আড়াল করা। আপ ভালো তো জগত ভালো এই সুফিজমের বানী আসলে অন্য ধরনের অকর্মন্যতার বানী। সাংস্কৃতিক নির্মানের সময়ে আমাদের পূর্ব প্রজন্ম রবীন্দ্রনাথকে বিপ্লবের হাতিয়ার বানাতে পেরেছিলো- দক্ষতা সে সময়ের সাংস্কৃতিক কর্মীদের। এই যোগ্যতায় তারা অগ্রসর। আমাদের বর্তমান প্রজন্মের সাংস্কৃতিক কর্মীদের মূল ধারায় যারা এসেছে- তাদের কাছে আমাদের নিজস্ব সংস্কৃতি নির্মাণের তুলনায় , নিজেদের পশ্চিম বাংলা থেকে পৃথক দেখানোর মুঢ়তা ছিলো বেশী। তাই এখানে ইসলামিক ভাবধারা কিংবা মুসলীম বাঙালী জাতিয়তাবাদের প্রসার ঘটেছে। ঠিক আমাদের জন্মের সময়ে যেসব কবি সাহিত্যিক সংস্কৃতিকর্মী তাদের কতজন সচেতনভাবে এ বিষয়টা এড়িয়ে যেতে পেরেছেন। নিজেদের ধর্মীয় পরিচয়ের বাইরে এসে বক্তব্য রাখতে পেরেছেন।
সংস্কৃতি নষ্ট করে দেওয়ার কাজে সরকারী পৃষ্টপোষকতা ছিলো না তেমন, বরং অধিকাংশ সুবিধালোভী মানুষেরাই এ কাজটাতে অগ্রনী ভুমিকা পালন করেছেন।
প্রভাত ফেরীর সেই মনোরম শ্রদ্ধাবনত স্মৃতি নিয়ে ভাবছি না মোটেও। প্রথম যেদিন শহীদ মিনার দেখলাম সেদিন রাধাচুড়ার ফুল দিয়ে অর্ঘ্য দেওয়ার স্মৃতির চেয়ে পীড়াদায়ক স্মৃতি ছিলো সে সময়েই পথ নাটকের যুগে অভিনেতাদের সেই বেদীতেই চপ্পল পড়ে নাটক করতে দেখে।
দ্বিধার চেয়ে অসহায়ত্বই প্রকট ছিলো- বছরে একটা দিন সকালে সবাই যায় খালি পায়ে শহীদ মিনার আর বছরের বাকি ৩৬৪ দিন সেখানে স্যান্ডেল পায়ে মানুষ ঘুরছে। এমন কি এখন যখন রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রীরা এবং তাদের পাহারা দেওয়ার জন্য নায়েক বরকন্দজেরা শহীদ মিনারে যায় তারাও চপ্পল জুতা পড়ে ঘুরে সেখানে।
আমার কাছে এখন শহীদ মিনারে যাওয়া একটা বিব্রতকর অভিজ্ঞতা।
মন থেকে মানতে পারি না আবার বুঝতেও পারি না এটা কি প্রতিবাদের যোগ্য কোনো ইস্যু? শহীদ মিনারতো মন্দির না, সেখানে এত শ্রদ্ধাবনত হওয়ার কি আছে? তবে আমাদের সাংস্কৃতিক পরিচয় অক্ষুন্ন রাখবার এবং আমাদের মধ্যবিত্ত শিক্ষিত মানুষের সচ্ছলতার খোঁজে যখন একদল মানুষ ২১শে ফেব্রুয়ারী নিহতই হলো তখন সে স্মৃতিকেও শ্রদ্ধা করতে ইচ্ছা করে-
সমস্যা হলো আমাদের এই প্রবনতাকে মুখে থাবড়া মেরে দেখিয়ে দিলো আমাদের অগ্রজ সংস্কৃতিকর্মীরা যে শহীদ মিনার মন্দিরের বেদি না- সেখানে স্যান্ডেল পায়েই চলাফেরা করা যায়। আর দেখিয়েছিলো আমাদের বাস্তুচ্যুত পতিতারা- তারাও খদ্দের নিয়ে শহীদ মিনারে দুই পা ছড়িয়ে শুয়ে পড়তো।
মন্তব্য
হুম। ভাবনার বিষয়!
আসলেই তাই। এই বোধটুকু বাংলা সাহিত্যের রূপটাই পাল্টে দিয়েছিলো অনেকটা।
এ মন্তব্যের জন্য (বিপ্লব)
------------------------------------------------------------
অলমিতি বিস্তারেণ
অলমিতি বিস্তারেণ
নতুন মন্তব্য করুন