এটা মূলত প্রতিক্রিয়া, এখানে যেটুকু ব্যক্তিগত আক্রমন ফুটে উঠবে সেটুকু শুধুমাত্র বক্তব্য প্রকাশের ভঙ্গিতে, কোনো ব্যক্তিকে ব্যক্তিগত হয়রানির জন্য এই লেখার কোনো শব্দ ব্যবহার করা হয় নি। অভিজিৎএর লেখা পড়লাম, মন্তব্য পড়ি নি বিধায় হয়তো অনেক কথাই পুনারাবৃত্তি হয়ে যেতে পারে, সুতরাং সেইটুকু পুনারাবৃত্তিকে স্বীকার করে নিয়েই লিখছি।
আমাদের সমাজকে বিশ্নেষণ করবার কাঠামো আছে কয়টা? সমাজকে বিশ্লেষণ করা এবং এর ঘাত-প্রতিঘাতের ভেতরে একটা সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার একটা উপায় হতে পারে এটাকে ভাববাদী বিশ্লেষন দিয়ে প্রকাশ করা, ইশ্বরের অভিপ্রায় হিসেবে মেনে নেওয়া, এবং অন্য একটা পন্থা হতে পারে এখানে ঘটে যাওয়া পরিবর্তনগুলোর ভেতরে একটা সম্পর্ক স্থাপন করে এই পরিবর্তনগুলোকে যাচাই করে দেখা।
বিজ্ঞানের পন্থায় এই ম্যানিপুলেশন সম্ভব, আমরা বিভিন্ন নিয়ামক এবং প্রভাবককে একটু বাড়িয়ে কমিয়ে মূলত পরিবর্তনটিকে যাচাই করতে পারি কি না এইটুকুই বিজ্ঞানের কাজ।
সেটা বস্তুবাদী বিজ্ঞান হতে পারে, যেখানে বস্তুজগতে পরিবর্তনের নিয়মাবলী খোঁজা হয়, হতে পারে সামাজিক বিশ্লেষণ যেখানে সামাজিক পরিবর্তনগুলোকে একটা কাঠামো ধরে বিশ্লেষণ করা সম্ভব।
মার্ক্সবাদ এখানেই সফল, মার্ক্সবাদ একটা বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি, সমাজ বিশ্লেষণের একটা ধারা, বিকল্প কোনো ধারার অস্তিত্ব আমার জানা নেই, দ্বান্দ্বিক সম্পর্ক শুধুমাত্র কলহপ্রবন নয়, বরং বস্তু এবং উপাদানগুলোর পারস্পরিক সম্পর্ক স্থাপনের একটা বাগবিধি।
অতিবিপ্লবী মনোভাব, যেকোনো মতকে প্রতিষ্ঠা এবং যেকোনো মতকে নাকচ করবার প্রাণান্ত লড়াইয়ে যখন স্বাভাবিক যৌক্তিক আলোচনার পন্থা থাকে না তখন সেই স্বৈরাচারী বক্তব্যে মূলত মৌলবাদীরাই উপকৃত হয়।
অনেক রকম মতধারা রয়েছে, বিশ্লেষণ এবং প্রায়োগিকতার ভিত্তিতে যদি বিজ্ঞানকেও আমি দেখতে চাই তাহলেও সকল বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিই ধারাবাহিক ভুলের ভেতর থেকেই শুদ্ধ হয়ে উঠে। নির্ভুল বিজ্ঞান বলে কিছুর অস্তিত্ব সম্ভবপর নয়, বরং আমাদের অনুমাণের নির্ভূলতা কিংবা যথার্থতা প্রতিপাদ্য বিষয় হয় অনুসন্ধানে।
বিজ্ঞান বিষয়ে অন্ধ ভক্তি এবং বিজ্ঞান বিষয়ে অভক্তি দুটোই সমান রকম বিপদজনক প্রবণতা। বিজ্ঞান একটা চলমান বিষয়, এখানে সম্মলিতি ভাবে সবাই অবদান রাখে, এবং এই অবদান রাখতে গিয়ে তারা পূর্ববর্তীদের অনুমাণকে যথার্থ ভেবে নিয়েই একটা চিন্তনপদ্ধতি অনুসরণ করে।
অবৈজ্ঞানিক একটা লেখায় অভিজিৎ মার্ক্সবাদের বৈজ্ঞানিকতা খুঁজবার প্রায়স নিয়েছেন। তাকে অভিনন্দন, তবে বাতাস হাতড়ে সারবস্তু খুঁজে পাওয়া কঠিন।
তার অনাবশ্যক বিশাল নিবন্ধের পয়মাল পাড়ি দিয়ে মূল বক্তব্যে পৌঁছানোর চেষ্টা ছিলো আমার। যে কথা কয়েক প্যারাগ্রাফে সমাপ্ত করা যেতো সেই সমাপ্তিতে না পৌঁছে তার লক্ষ্য ছিলো পাতার পর পাতা এমন কিছু লিখে যাওয়া যা অনাবশ্যক আড়াল তৈরি করতে সক্ষম হতে পারে।
বৈজ্ঞানিক চিন্তনপদ্ধতি সম্পর্কে অভিজিৎএর ধারণা রয়েছে এমনটা ধরে নিয়েই কথা বলা শুরু করি, তিনি অনেক বিজ্ঞানময় প্রবন্ধ রচিয়াছেন, তাই তার চিন্তন পদ্ধতির অবৈজ্ঞানিকতা প্রকাশিত হলে সেটা মূলত উদ্দেশ্যমূলক একটা পদ্ধতি অবলম্বন। এটাও একটা প্রয়োগিক বিষয় বিবেচিত হতে পারে । আমি আমার যুক্তি কিভাবে সাজাবো, কাকে উদ্দেশ্য করে, কার পক্ষে কখন কোন যুক্তি এবং উদাহরণের তূণ সাজাবো সেটা আমি নিজেই সচেতন ভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহন করি, এই সিদ্ধান্ত গ্রহন প্রক্রিয়ায় অনেক কিছুই আমাদের প্রভাবিত করতে পারে, অর্থের লোভ, সম্মানের লোভ, একটু আলাদা একটু মানবিক হয়ে উঠবার লোভ-
আমি এখনও নিশ্চিত নই অভিজিৎএর লোভ শেষ পর্যন্ত কি? অভিজিৎএর একটা চাহিদা কিংবা উদ্দেশ্য রয়েছে বলেই এই উদ্দেশ্যমুখীনতাকে প্রশ্ন করা উচিত মনে হয়েছে আমার।
অভিজিৎএর জন্য সামান্য বৈজ্ঞানিক সূচনা- যে কোনো প্রকল্প শুরুর কিছু প্রারম্ভিকা থাকে- একটা সংশয় কিংবা অনুসিদ্ধান্ত গ্রহনের পরেই আদতে বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধানের সূচনা হয়-
আমি পূর্বেই একটা কিছুকে নাকচ করবো বলেই প্রকল্প শুরু করি, প্রকল্পের সমাপ্তিতে দুটো সম্ভবনা বিদ্যমান থাকে, হয় আমার অনুসিদ্ধান্ত ভ্রান্ত প্রমাণিত হতে পারে এবং দ্বীতিয় সম্ভবনা আমার অনুসিদ্ধান্ত ভ্রান্ত নয় বরং প্রচলিত বৈজ্ঞানিক বিশ্বাসে কিছুটা ভ্রান্তির সম্ভবনা রয়েছে। তাই প্রতিটা অনুসন্ধানের শেষে কিছু অনুমিতি থাকে, ভবিষ্যত পরিকল্পনা থাকে।
ডিটারমিনিস্টিক ঘারানা, আর প্রবালিস্টিক ঘারানার ভেতরেও বৈজ্ঞানিকতার দ্বন্দ্ব দেখা যায়। তবে বৈজ্ঞানিক চিন্তন সব সময়ই সাম্ভাব্যতা যাচাই করে। তারা নিসংশয়ে কিছু বলে না বরং সামান্য একটু সংশয়ের অবকাশ রাখেই। অভিজিৎএর চিন্তন পদ্ধতিতে বরং স্থির সিদ্ধান্ত গ্রহনের একটা প্রবনতা রয়ে গেছে। সংশয়বাদী অবস্থানে নয় বরং স্থির সিদ্ধান্তে পৌঁছেই তার বক্তব্য শুরু হয়।
যেকোনো বৈজ্ঞানিক পরীক্ষণের সমাপ্তি একটু আশাবাদী সংশয় রাখে, আমাদের জ্ঞানের কিংবা পরীক্ষণের সীমায় এই প্রচলিত বৈজ্ঞানিক ধারণার কোনো বিচ্যুতি চোখে পড়ে নি তবে সেটা আমাদের পরীক্ষণ নির্ধারিত সীমায় অপ্রমাণিক, হতে পারে আমাদের পরীক্ষণ আরও নিখুঁত হলে সামান্য বিচ্যুতি লক্ষ্যনীয় হতেও পারে।
এই সংশয়টুকুই বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির জয় চিহ্নিত করে আদতে। তারা কোনো কিছুকেই অগ্রাহ্য বিবেচনা করে না, বরং এটা সত্য না হওয়ার একটা সীমা নির্ধারণ করে দেয়। এবং কোনো প্রচলিত সত্যকেও অভ্রান্ত ধরে নেয় না বরং একটা সসীমতায় এটাকে অভ্রান্ত বিবেচনা করে।
অভিজিৎএর লেখা প্রসঙ্গে আসি, সমাজ বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে মার্ক্সের অনুমাণ কিংবা মার্ক্সের চিন্তন পদ্ধতি বৈজ্ঞানিক কি না এটাই ছিলো তার প্রশ্ন এবং তার বিশাল মজমার সমাপ্তিতে তার সিদ্ধান্ত [si]মার্ক্সবাদ বিজ্ঞান নয়, বিজ্ঞান হবার তার দরকারও নেই। কিন্তু মার্ক্সবাদ থাকুক হাজারো নিপীড়িত মানুষের হৃদয়ে মুক্তির আলোকবর্তিকা হয়ে। [/si]
এই সিদ্ধান্তটুকু দিতে গিয়ে তার অনেক উদাহরণ টানতে হয়েছে, সম্পূর্ণ আলোচনাই আদতে মার্ক্সবাদের সমালোচনা নয় বরং এর প্রায়োগিকতা ভুলের উদাহরণ। বিজ্ঞানকে তার প্রায়োগিক অবস্থান থেকে আলাদা দেখতে না পারবার ব্যর্থতা চিন্তনের অবৈজ্ঞানিকতা, বিজ্ঞাদের দায় কিংবা দোষ নয় আদতে। আণবিক বোমা সৃষ্টির সম্ভবনা বৈজ্ঞানিক একটি ধারণা, পরমাণু থেকে ফিশন প্রক্রিয়ায় এত পরিমাণ শক্তি উৎপাদন সম্ভব এটাকে নিয়ন্ত্রন করা সম্ভব এবং এটাকে অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহার করে সৃষ্টির বিনাশ সম্ভব, কথা হলো যেই বিজ্ঞানীরা এই সম্ভবনাটুকু বিবেচনা করে এটাকে গাণিতিক ভাবে প্রকাশিত করেছিলেন তাদের অনুমাণের এই প্রায়োগিক ভিত্তিটাতে তাদের দায় কিংবা দোষ কতটুকু?
মার্ক্স একটা সমাজ বিশ্লেষণের পন্থা আবিস্কার করেছিলেন, মহা মন্দার সময়ে কেনো মার্ক্সের অনুমান ভ্রান্ত প্রমাণিত হলো এটা মার্ক্সের চিন্তন পদ্ধতির অবৈজ্ঞানিকতা নয় বরং আবারও পরিস্কার করে বলি এটা বিশ্লেষণের ভ্রান্তি।
শ্রমিক, অর্থনৈতিক চক্র এবং ক্ষমতার চর্চা আর নানাবিধ বাগবিধি যা আমাদের চিন্তনপদ্ধতিকে নিয়ন্ত্রন করে সেটার বাইরে গিয়ে আমার স্বল্প জ্ঞানে আমার উপলব্ধি বর্ণনা করি-
সমাজে পরিবর্তন ঘটে- সমাজের পরিবর্তনগুলো এলেমেলো কিছু নয় বরং এই প্রতিটা পরিবর্তনের পেছনে কিছু সূত্র আছে। প্রতিটা পরিবর্তনের আগে প্রচলিত সমাজের কিছু মানুষের ভেতরে পরিবর্তনের আকাঙখা তীব্র হয়েছিলো, তারাই এই পরিবর্তনগুলোকে সমর্থন করে এটাকে চুড়ান্ত সমাপ্তিতে পৌঁছে দিয়েছে।
পরিবর্তনগুলো কি পূর্বে অনুমাণ করা যায়, কিংবা পরিবর্তনগুলো কি নিয়ন্ত্রনযোগ্য, আমরা কি এই পরিবর্তনের নিয়ামকগুলোকে যাদৃচ্ছিক ম্যানিপুলেট করতে পারি? মার্ক্সের ধারণা সঠিক হলে এই পরিবর্তনের নিয়ামকগুলোকে ম্যানিপুলেট করা সম্ভব।
প্রতিটা পরিবর্তনের পেছনে কিছু অনুপ্রেরণা কিছু প্রেষণা বিদ্যমান, সেই পরিবর্তনের সহযোগী প্রেষণাকে রদ করে সেটার বিরোধী কিছু প্রেষণা প্রদান করলে পরিবর্তন থেমে যাব. রাজনীতি বিশ্লেষণে এই দ্বান্দ্বিক সম্পর্কগুলো সব সময়ই একটা সমাধানে পৌঁছানোর জন্য সহায়ক।
সমাজ পরিবর্তন যে অলৌকিক অদ্ভুত কোনো ঘটনা নয়, এই বিষয়টুকুর উপলব্ধি মার্ক্সের সবচেয়ে বড় সাফল্য- ধর্মের উদ্ভবও মার্ক্সের চিন্তনপদ্ধতি অনুসারে ব্যখ্যা করা সম্ভব, এবং ধর্মের প্রায়োগিক ব্যবহারের জায়গাগুলো কিভাবে শোষণে সহায়ক হয়েছে এই ধারণাটুকুও মার্ক্সের বিশ্লেষণ থেকে অনুমাণ করা সম্ভব।
মানুষকে শোষণের স্বরুপ সম্পর্কে ভ্রান্ত ধারণা দিলে তারা শোষণের স্বরুপ ধরতে ব্যর্থ হবে এবং শোষণকে উচ্ছেদ করতে গিয়ে সমাজে পরিবর্তনের সূচনা করবে কিংবা শোষণ এড়াতে পারবে না। ভাববাদীতার সমস্যাটুকু এখানেই।
অভিজিৎ এখানে এই সমাজপরিবর্তনের প্রেষণা এবং মার্ক্সের চিন্তনপদ্ধতিকে অনুসরণ না করে এটার প্রায়োগিক দিকগুলো দিয়ে মার্ক্সকে যাচাই করবার একটা প্রচেষ্টা গ্রহন করেছেন। সমস্যাটা সেখানেই তৈরি হয়, সেখানেই মনে হয় সমাজতন্ত্র ব্যর্থ হয়েছে।
সমাজতন্ত্রের ব্যর্থতা মার্ক্সের চিন্তনধারার অবৈজ্ঞানিকতার প্রমাণ নয়, বরং সমাজ বিশ্লেষণে চিন্তকের ভ্রান্তির প্রমাণ। প্রতিটা সমাজ কাঠামোর নিজস্বতা বিবেচনা করে সেই অনুযায়ী মার্ক্সের চিন্তন পদ্ধতিকে প্রয়োগ করতে হয়। সকল রোগের একই ঔষধ বলে এই সমাজপরিবর্তনের ধারণায় কিছু নেই।
চীনের সমাজতন্ত্রের উন্মেষ, এর ভ্রান্তি এর ভেতরে সংশোধন এবং এর ক্রমবিবর্তন থেকে চীনকে শংকর সমাজতন্ত্র যারা বলছেন তারা হয়তো তাদের বিচারে সঠিক, তবে শেষ পর্যন্ত আমার বক্তব্য হলো, চীন রাষ্ট্র হিসেবে তার নাগরিকদের কি সুবিধা প্রদানের অঙ্গীকার করেছিলো সেই অঙ্গীকার কি চীন পুরণ করতে পেরেছে?
যদি চীন নাগরিক অধিকার পুরণা সফল হয় , যদি চীনের নাগরিক তাদের সমাজব্যবস্থা এবং জীবনযাপন নিয়ে সন্তুষ্ট থাকে তবে চিনে নতুন কোনো বিপ্লব হবে না, কিন্তু যদি কোনো অসন্তোষ বিদ্যমান থাকে তবে চীন একটা পর্যায়ে নিজের সমাজ ও রাষ্ট্র কাঠানো পরিবর্তনের আকাঙ্খা নিজের ভেতরেই খুঁজে পাবে এবং তখন চীন নতুন কোনো একটা সমাজপরিবর্তনের দিকে অগ্রসর হবে।
সামাজিক পরিবর্তনের এই প্রবনতাটুকু রাষ্ট্র কতটুকু নিয়ন্ত্রন করতে পারে? মার্ক্সের প্রায়োগিক দিকটা বাদ দিয়ে তাত্ত্বিক দিকটা বিবেচনা করলে জনগণের অসন্তোষের কারণ যথার্থ অনুমাণ করতে পারলে যেকোনো বিদ্রোহ দমন করা সম্ভব। উপযুক্ত পন্থা আছে এই পরিবর্তন রদ করবার এবং এই পন্থাটুকুও আসলে সেই বিবেচনায় মার্ক্সের অবদান। শেষ পর্যন্ত সমাজ বিশ্লেষণের অন্য কোনো পদ্ধতি কি আমাদের হাতে আছে?
অভিজিৎএর অভিযোগের জবাবেই বলি, যেকোনো মতবাদই সর্বগ্রাসী এবং স্বৈরতান্ত্রিক হয়ে উঠবার প্রবণতা ধারণ করে, আমাদের মানসিকতার গড়ন এ জন্য দায়ী, তত্ত্ব এর জন্য মোটেও দায়ী নয়, তত্ত্বের প্রায়োগিক ভঙ্গি এবং কারা ক্ষমতায়, তাদের অভিসন্ধি নির্ধারণ করে এর সর্বগ্রাসী, এবং স্বৈরতান্ত্রিক ভাববাদী হয়ে উঠবার প্রবণতাকে।
মার্ক্সের মতবাদকে ধর্মীয় প্রবনতাযুক্ত না বলে বলা যায় এর প্রায়োগিক কাঠামোতে যারা এই মতবাদকে সমাজপরিবর্তনের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে আগ্রহী তাদের মানসিকতা এবং তাদের প্রায়োগিক দক্ষতার উপরে নির্ভর করবে তারা দ্বান্দ্বিক এবং পরিবর্তনশীল সমাজ , মানুষ এবং মানসকে নিয়ন্ত্রন এবং দমনের জন্য কতটা পরিপক্কতার সাক্ষর রেখেছেন তার উপরে।
তাই রাশিয়ায় যখন সমাজতন্ত্র কায়েমের নামে নির্বিচার সহিংসতা চলে তখন সেটা মার্ক্সের ভুল নয় বরং যেই মানুষগুলো সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার নামে সংঘর্ষে লিপ্ত হয় এবং সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা করে তাদের ভুল এবং তাদের ভ্রান্তি।
নিউটনের গতিসূত্র দিয়ে কেউ যদি অনড় বস্তুর ত্বরণ মাপতে চায় তবে সেটা সব সময়ই শূন্য হবে কিন্তু কেউ যদি দাবি করে আদতে অনড় বস্তুর মহাবিশ্বের সম্প্রসারণজণিত ত্বরণের উপস্থিতি নিউটনের তরিকার নির্ধারণ করা সম্ভব তবে তাকে বড়জোর বলা যায়, একটু ঘুমান ভাই, না ঘুমিয়ে আপনার ভাবনার জগত এলোমেলো হয়ে গেছে।
অভিজিৎকে কি বলবো?
মন্তব্য
বহুদিন পরে রাসেলকে দেখে ভালো লাগছে। পোস্ট আর প্রতিক্রিয়া দুইটাই পড়তে হবে, যদিও বুঝবো না কিছুই।
---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো
তাহলে সে দায়িত্ব আপনার কাধেই থাক । পোস্ট পড়ার পরে আমাকে বুঝিয়ে যাইয়েন একটু ।
---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো
আপনের খালি ফাঁকিবাজি! আমি বুঝাইতে গেলে হাতি দড়ির মত হয়ে যাবে।
---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো
এখনও পাসওয়ার্ড মনে আছে দেখে নিজেই অবাক হইলাম ।
যাউগ্গা, শরীরের খবরসবর ভালো?
লিখাটা মুছে যাওয়ার সমুহ সম্ভবনা আছে।
------------------------------------
আমি তো গণে নেই বিচ্ছিন্ন একা
সঙ্ঘে সমুহে নেই সঙ্ঘমিতা।
------------------------------------
আমি তো গণে নেই বিচ্ছিন্ন একা
সঙ্ঘে সমুহে নেই সঙ্ঘমিতা।
শইল ভালোই। তবে ব্যাপক দৌড়ের ওপর আছি।
---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো
ডুয়াল পোস্টিঙের কারণে এই পোস্টটিকে লেখকের নিজের ব্লগে প্রকাশ করা হলো।
_________________________________
সচলায়তন.COM কর্তৃপক্ষ
_________________________________
সচলায়তন.COM কর্তৃপক্ষ
অনেকদিন পর আপনার লেখা পড়লাম। ভাবছিলাম শইলডা খারাপ নাকি। যাউক, লেখা ভাল হইছে। প্রতিক্রিয়া লিখে ভালই করেছেন। দুই দিকই পাবলিকে জানুক, খারাপ কি! তয় দুই একটা কথা না কইলেই নয় -
এই ব্যাপারটা বাংলাদেশের সব বামেরাই উচ্চকন্ঠ হইয়া কয়। 'তত্ত্বে কোন ভুল নাই, খালি ইম্পলিকেশনে ভুল'! হইবার পারে। আপনের কথা অনেকটা ধর্মবাদী গো মত শুনাইতেছে। ধর্মবাদীরাও কয় তাগো কারো ধর্মেই কোন ভায়োলেন্স নাই, সতীদাহ নাই, বেগানা নারীরে পাত্থর ছুইড়া মারনের কথা নাই, চাইর বিয়া করার কথা নাই, বিধর্মীগো প্রতি কোন হিংসাত্মক কথাবার্তা নাই - মাগার ধর্মভিত্তিক রাষ্ট্রগুলানের উয়াদাহরণ দিলে কয় - 'ইম্পলিকেশনে ভুল' - হেরা আসলে ধর্ম মাইনা চলতাছে না! হেঃ হেঃ
তত্ত্বে ভুল নাই জানলেন কেমনে? মার্ক্সের তত্ত্বেই আছে শ্রেনী সংগ্রামের কথা, 'ডিক্টেটরশিপ অব প্রলেতারিয়েতের' কথা, 'ইনএভিটেবল রিভলুশন'-এর কথা। এইগুলানরে বৈজ্ঞানিক মনে করলে আমার কোনের কিছু নাই। আপ্নে তো আবার আমার পোস্টের মন্তব্যগুলান পড়েন নাই। কি আর করমু। এইখানে একটা সারাংশ আছে, চোখ বুলাইবার পারেন।
মার্ক্সের ফেমাস প্রফেসি গুলাও দেখেন। পুঁজিবাদ থেইকা সমাজতন্ত্র, আর সেইখান থেকেইকা সাম্যবাদের যাওনের ভবিষ্যদ্বানী। হেইগুলান কিছুই হয় নাই। মাগার আশির দশকে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভাইঙ্গা পড়ল, পূর্ব ইউরপের দেশগুলান সমাজতন্ত্রের পাততারি গুটাইয়া ক্যাপিটালিজমে ফেরত গেল, চিন মোটামুটি সমাজতন্ত্র বিসর্জন দিছে বহু আগেই, তারপরেও আপ্নেরা জিগির তুইলাই জাইতাছেন - তত্ত্বে কোন ভুল নাই, ভুল খালি প্রয়োগে। এতগুলান মার্ক্স পড়া ঝানু ঝানু মাথা - হগগলতেই খালি প্রয়োগে ভুল করে।
আপ্নে এক কাজ করেন। পোস্ট মডার্নিস্ট মার্ক্সিজমে একটু চোখ বুলান। গ্রামস্কি, এডোর্নো, এলথুজার, ওয়াল্টার বেঞ্জামিন, হর্খেইমার কিংবা দেরিদা - হেগো ব্যাখ্যা ট্যাখ্যা গুলান একটু দেখেন। দেখবেন, মার্ক্সিজমের অনেককিছুই তারা বাতিল করছেন। দেখেন, হেরা ক্যামনে হিস্টোরিকালি আর কনসেপচুয়ালি ক্ল্যাসিকাল মার্কিজমকে ক্রিটিকালি এনালাইসিস করছে - পোস্টমডার্নিজমকে গোনায় আইনা। এইগুলান না দেখলে 'পয়গম্বর'দের ওহীর দুর্বলতাগুলান চোখ এড়াইয়া যাইবো। এইগুলান একটু দেখেন --আমারে গাইল দেওনের অনেক সময় পাইবেন।
হাঃ হাঃ মুশিকিল হইল, আপ্নে এমন এক এজাম্পশান ধইরা আগাইছেন, এটা লইয়া কথা কওন-ও বৃথা। আমি ভাই লোভী মানুষ হইলাম না হয়, আমারে লোভি প্রমান করতে পারলে কি মার্ক্সবাদ বৈজ্ঞানিক হইয়া যাইবো?
. আউলা মাথা, কি কইতে কি কইছি - মাপ কইরা দিয়েন। :), যাই ঘুমাইগা।
পান্ডুলিপি পোড়ে না। -- বুলগাকভ (মাস্টার এন্ড মার্গেরিটা)
পান্ডুলিপি পোড়ে না। -- বুলগাকভ (মাস্টার এন্ড মার্গেরিটা)
খাঁটি কথা কইছেন। তত্ত্ব ঠিকই আছে, খালি প্রয়োগে ভূল হইছে। আবার ট্রাই করতে হইবো। এই হইলো খোড়া যুক্তি। তত্ত্ব যদি আদৌ বাস্তবে প্রয়োগ সম্ভব না হয়, তাইলে সেই তত্ত্বের কতখানি মূল্য আছে, সেইটা তলায় দেখতে কইলেই গালিগালাজ খাইবেন আর কি।
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর
@ অভিজিৎ . যত দ্রুতই বাম ও ডানের ভুত আমাদের ঘাড় থেকে নামে ততই মঙ্গল।
অভিনন্দন! এই প্রথম স্মার্ট অভিজিৎকে এক হাত নেওয়ার মত সাহস দেখলাম।
একজন আরেকজনকে "এক হাত নিলো", আর তা দেখে পাবলিক তালিয়া বাজাচ্ছে! বাহ!
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
পাকিস্তানিদের আমি অবিশ্বাস করি, যখন তারা গোলাপ নিয়ে আসে, তখনও। - হুমায়ুন আজাদ
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
টাকা দিয়ে যা কেনা যায় না, তার পেছনেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় কেনু, কেনু, কেনু?
অভিজিৎ আবারও বিজ্ঞান বিষয়ের প্রাথমিক সূত্রগুলো পড়বার মৃদু অনুরোধ করবো। বিজ্ঞানমনস্কতা এবং বিজ্ঞানসম্মত চিন্তনপদ্ধতি অনুসরণ করতে বলবো। এর বেশী কিছু বলা যায় না এই মুহূর্তে-
আপনার চিন্তনপদ্ধতি অনুসরণ না করে বৈজ্ঞানিক চিন্তনপদ্ধতি দিয়ে বিশ্লেষণ করি সাধারণ কিছু বিষয়-
ডারউইনের বিবর্তনবাদ সাধারণ কিছু অনুসিদ্ধান্ত দিয়ে শুরু হয়েছিলো- পৃথিবীতে প্রাণীবৈচিত্র যতটা দেখা যায় তার সবগুলোর শেকড় একখানে- মূলত এক কোষী প্রাণী থেকেই বর্তমানের বিশাল বৈচিত্রময় প্রাণী ও উদ্ভিদ জগতের উৎপত্তি- সাধারণ অনুসিদ্ধান্তে পরিবর্তনের নিয়ামকগুলো ডারউইন একভাবে বলে গিয়েছিলো, প্রাকৃতিক পরিবেশের প্রভাব প্রাণী ও উদ্ভিদের বৈচিত্রের জন্য দায়ী- সেখান থেকে অনুজীববিজ্ঞান এবং বায়োকেমিস্ট্রির উত্থান এবং পরীক্ষণ যন্ত্রাংশের উন্নতির ফলে এখন পরিবেশের প্রভাবের জায়গাটাতে কোন কোনো প্রভাবক কতটুকু ভুমিকা রাখে সেটার একটা পরীক্ষ চলছে, জেনেটিযের মানুষেরাও জীনের পরিবর্তনের কারণ অনুসন্ধান করছে পুষ্ঠি বিবেচনায়- তারা কেউ মৌলিক সিদ্ধান্তগুলোকে অপ্রমাণিকত করতে পারে নি, সম্পূর্ণ ভাবে প্রমানিত করতে পারে নি এখনও। ডারউইন প্রাথমিক পর্যায়ে যেভাবে বিবর্তনকে ব্যাখ্যা করেছে এখনকার জীববিজ্ঞানীরা ঠিক একই পদ্ধতি অনুসরণ করে ব্যখ্যা করছে না- ডারউইনের ধারণা কি ভুল? অবৈজ্ঞানিক? বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব এবং বৈজ্ঞানিক বিশ্বাস কি বিবর্তনের ভেতর দিয়ে যায় না?
পরিবর্তনশীলতাই বিজ্ঞানের ধর্ম, এখানে চিরন্তন কিছু নেই, মৌলিক কিছু অনুসীকার্য আছে যা আমার প্রাকৃতিক পরিবেশ এবং পরিবেশের প্রভাব ব্যখ্যা করবার সময় মূলত অপরিবর্তনশীল ধরে নেই, এই ধরে নেওয়াটাই বিজ্ঞান।
আমরা যা কিছু অনুসিদ্ধান্তকে ধরে নিয়ে ব্যখ্যা শুরু করছি সেই অনুসিদ্ধান্তগুলোকে আমরা খুব কম সময়ই প্রশ্ন করি, এবং প্রশ্ন করলে নিউটনের মেকানিক্স সম্পর্কিত চিরন্তন ধারণাগুলোও বদলাতে থাকে। এবং ক্ষুদ্র পরিসরে ব্যপক সাফল্যের পরেও আইনস্টাইনকে সাধারণ মহাকর্ষ বিষয়ে একটা নতুন ভাবনাপদ্ধতির জন্ম দিতে হয়, বস্তুর উপরে স্থানের প্রভাব এবং স্থানের উপরে বস্তুর প্রভাব- সময়ের উপরে বস্তুর প্রভাব এবং সময়ের চিরন্তনতাকে খারিজ করে অতিগতিশীল বস্তুর জন্য নতুন করে সময়ের ধারণা প্রবর্তন করতে হয়।
কিন্তু শেষ পর্যন্ত নিউটনের সাফল্যকে প্রশ্ন করে না আইনস্টাইন, তাকে অবশেষে একটা সাধারণীকরণের মাধ্যমে নিউটনের সফল মহাকর্ষ সূত্রকেই প্রতিপাদন করতে হয় তার সাধারণ মহাকর্ষ তত্ত্ব দিয়ে-
এখন আইনস্টাইন কি মৌলিক বিজ্ঞানের জন্ম দিলেন? তিনি তার প্রশ্নের ধরণ বদলেছেন, নতুন অনুসিদ্ধান্ত গ্রহনের জন্য তার সমাধানে নতুন কিছু বিষয় উঠে এসেছে- আইন্সটাইনকে অভ্রান্ত ধরে নিয়ে কিছু চিন্তনধারা বিজ্ঞানে বিদ্যমান।
তবে আইন্সটাইন ইজ গড এমন মৌলবাদীতা নেই বিজ্ঞানে।
পোষ্ট মর্ডান মার্ক্সিস্ট সমাজ পরিবর্তণে যে কয়টা সূচক নিয়ে আসুক না কেনো, তার ভাবনা কাঠামোতে দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদের উপস্থিতি নেই?
মার্ক্সের বস্তুবাদী বক্তব্য এবং এর প্রয়োগের ভ্রান্তিকে সুবিনয় এবং অভিজিৎ যেভাবে প্রশ্ন করলো তাতে তাদের অনুরোধ করতে পারি- কোয়ান্টাম মেকানিক্সের একজন দিকপাল শ্রোয়েডিঙ্গারের চিন্তন পদ্ধতি অনুসরণ করতে-
বেচারা প্রাথমিক অবস্থায় একটা ভুল অনুসিদ্ধান্ত নিয়ে শুরু করেছিলো, ফলাফলে তার বস্তু এবং ক্ষুদ্র পরিসরে তার পরিবর্তনের বিষয়ে যে ভবিষ্যতবানী ছিলো সেটা ভ্রান্ত ছিলো।
একই ভাবে অপেনহাইমারের প্রবন্ধ, কিংবা ডিরাকের প্রবন্ধ নিয়ে কথা বলা যায়, সময়ের সাথে পুরোনো চিন্তন পদ্ধতির ভুলগুলো ধরা পরে, এই ভাবেই সভ্যতা অগ্রসর হয়।
মার্ক্সের সমাজবিশ্লেষণের কাঠামোকে প্রশ্ন না করে সমাজকে অনুধাবণের ব্যর্থতা স্বীকার করতে অভিজিৎ কিংবা সুবিনয়ে সমস্যা কেনো এটা বুঝতে আমি ব্যর্থ।
প্রায়োগিক ভুল মেনে নিতে সমস্যাটা কোথায়? বৈজ্ঞানিক কোনো চিন্তনপদ্দতি কি কোনো ভুল প্রয়োগ দোষে দুষ্ট নয়? চিন্তনপদ্ধতি, বিশ্লেষণ এবং সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া প্রতিটা বিষয়ই প্রাথমিক অনুসিদ্ধান্তের উপরে নির্ভর করে, এ কারণেই এখনও গবেষণা প্রবন্ধ বের হচ্ছে, কিউইডির ব্যপক সাফল্যের পরেও এটা নিয়ে এখনও প্রবন্ধ লিখছে মানুষেরা, গবেষণা করছে, এটার গ্রহনযোগ্যতা এবং এর নির্ভুলতা অনুসন্ধান করছে, এমনিতে এই তত্ত্বে তেমন ত্রুটি নেই, প্রচলিত ভাবনা কাঠামোর প্রশ্নগুলোর উত্তর দিতে পারছে সফল ভাবেই। নিউটনের মহাকর্ষ তত্ত্বও ভ্রান্ত ছিলো না, বরং এটা দিয়ে এখনও লোকজন মঙ্গলে রকেট পাঠিয়ে সেটা দিয়ে নির্ভুল কাজ করতে পারছে, আইনস্টাইনের তত্ত্ব আসবার পর নিউটনের মেকানিক্স কি বাতিলের খাতায় চলে গেছে? কিংবা অবৈজ্ঞানিক প্রমাণিত হয়েছে?
ভাইয়েরা আগে বিজ্ঞান কি? বৈজ্ঞানিকতা কি? বৈজ্ঞানিক চিন্তন পদ্ধতি কি এইসব সাধারণ বিষয়ে পরিপক্ক হন এরপরে কোনটা বৈজ্ঞানিক ভাবনা কোনটা অবৈজ্ঞানিক ভাবনা, পোস্ট মর্ডান আর লিওমর্ডান অল=ড মর্ডান নিয়ে বক্তব্যের কচকচানি দিয়েন। গ্রামার না শিখেও মানুষ অনেক কথা বলে তবে গ্রামার শিখলে অন্তত কিছু ভাষার পরিবর্তন এবং গঠনের স্বরুপ জানা যায়। আগে ব্যকরণ শিখেন পরে আমরা আলোচনা করবো কেনো কি, কিভাবে মার্ক্সবাদের সমাজ বিশ্লেষণের ধরণটায় বৈজ্ঞানিকতা আছে
------------------------------------
আমি তো গণে নেই বিচ্ছিন্ন একা
সঙ্ঘে সমুহে নেই সঙ্ঘমিতা।
------------------------------------
আমি তো গণে নেই বিচ্ছিন্ন একা
সঙ্ঘে সমুহে নেই সঙ্ঘমিতা।
ভাই, একই অনুরোধ আপনেরেও আমি করি।
আপনাদের ওই এক সমস্যা। সবকিছুরেই ডারউইন দিয়া যাস্টিফাই করেন – বুইঝা না বুইঝা। ডারউইনের বিবর্তন তত্ত্ব শুধু বাইয়োলজিক্যাল সায়েন্সে প্রযোজ্য, ডারউইন কয় নাই সেটা সমাজ জীবনে প্রয়োগ করতে। আপনে নিশ্চয় জানেন, হার্বাট স্পেন্সর সমাজ জীবনে ডারউইনিজমের প্রয়োগ ঘটাইতে গিয়া ‘সামাজিক বিবর্তনবাদের’ জন্ম দিয়া কি বিপত্তি ঘটাইছিলো।
স্পেন্সর ডারউইন কথিত জীবন সংগ্রাম (struggle for existence)কে বিকৃত করে 'যোগ্যতমের বিজয়' (survival of the fittest) শব্দগুচ্ছ সামাজিক জীবনে ব্যবহার করে বিবর্তনে একটি অপলাপমূলক ধারণার আমদানী করছিলো। এ ধরনের বিভ্রান্তকারী দর্শনের ফলশ্রুতিতেই পরবর্তীতে বিভিন্ন শাষক গোষ্ঠী নিজেদের স্বার্থে ঔপনিবেশিকতাবাদ, জাতিভেদ, বর্ণবৈষম্যকে বৈধতা দান করতে সচেষ্ট হয়েছিলেন বিভিন্ন সময়। হিটলার তার নাৎসীবাদের সমর্থনে একে ব্যবহার করছিলো। ১৯৩০ সালে আমেরিকার ২৪ টি রাষ্ট্রে 'বন্ধ্যাকরণ আইন' পাশ করা হয়, উদ্দেশ্য ছিল জনপুঞ্জে 'অনাকাঙ্খিত' এবং 'অনুপযুক্ত' দুর্বল পিতামাতার জিনের অনুপ্রবেশ বন্ধ করা। অর্থাৎ 'সামাজিকভাবে ডারউইনবাদের প্রয়োগ'-এর মাধ্যমে 'যোগ্যতমের বিজয়' নানা ধরণের নৈরাজ্যজনক প্রতিক্রিয়শীলতার জন্ম দিয়েছিল, আর বিভ্রান্তি সৃষ্টি করেছিল, যা থেকে অনেকে এখনও মুক্তি পায় নি। কিন্তু আসল কথা হইলো- ডারউইন কখনওই এধরনের 'যোগ্যতমের বিজয়'-এর কথা বলেন নাই, কিংবা তার প্রাকৃতিক নির্বাচনের তত্ত্বকে কখনই সামাজিকজীবনে প্রয়োগ করার কথা ভাবেননি।
সমাজ জীবনের সব কিছু ডারউইনিয়ান বিবর্তনের সাথে তুলনা করলে কইলাম ভুল হইব। সমাজ জীবনের অনেক কিছুই আমরা বংশ পরম্পরায় বহন করি - রীতি নীতি, প্রথা, সংস্কৃতিক বিভিন্ন উপাদান। এইগুলা ডারউইনিয়ান না ' বরং অনেকটাই ল্যামার্কিয়ান। কাজেই বায়োলজিতে বিবর্তন-এর ব্যাপার স্যাপার একই রকম ভাবে সমাজ জীবনেও খাটবো এই ধারনা ভুল।
আরেকটা উদাহরণ দেই। আইন্সটাইন থিওরী অব রিলেটিভিটি পদার্থবিজ্ঞানে প্রদান করার পর অনেকে ভুল কইরা হেইটারে সেটা সামাজিক জীবনে প্রয়োগ করতে গিয়া কইতে শুরু করলো – ‘সব কিছুই আপেক্ষিক’। আসলে তো সব কিছু আপেক্ষিক নয়। অনেক কিছুই আপেক্ষিক নয়। একটি উদাহরণ হতে পারে ‘আলোর গতিবেগ’। সমাজে চাইল্ড আবিউজ কিংবা চাইর বছরের শিশুরে ধর্যণ যে খারাপ - এইটা সমাজ নির্বিশেষে সত্য। আপেক্ষিক না। যাহোক মুল কথা হচ্ছে, জীববিজ্ঞান বা পদার্থবিজ্ঞানের প্রেক্ষাপটে নির্মিত এবং প্রয়োগিত একটি তত্ত্ব সমাজবিজ্ঞানে প্রযুক্ত হতে হবেই- এমন কোন বাধ্যবাধকতা নেই। এই ধরনের প্রয়োগ এক ধরনের ফ্যালাসির জন্ম দেয়। এরে কয় - ' Naturalistic fallacy'। একে 'The Natural Law fallacy / Appeal to Nature'ও কয়।
হেইজন্যই, মার্ক্স যখন তার Das Capital ডারউইনরে উৎসর্গ করবার গেছিলেন, ডারউইন প্রত্যাখ্যান করছিলেন। ব্যাপারটা মাথায় রাইখেন। ডারউইন কথিত ‘জীবন সংগ্রাম’রে যারা শ্রেনী সংগ্রামের সমর্থক মনে করেন তারা ডারউইনের তত্ত্ব কিছুই বোঝেন না।
সেইটা নিয়া আমি কোন প্রশ্ন করতাছি না। আমি প্রশ্ন করতাছি – এই যে বিবর্তনের ধারা মার্ক্স তার তত্ত্ব দিয়া কইয়া গেছিলো – পুঁজিবাদ থেইকা সমাজতন্ত্র, সেইখান থেইক্যা সাম্যবাদ -এইটা ভুল। আপ্নে যতই হেঈডারে বিজ্ঞানের ছাঁচে ফেলবার চান - লাভ হইবো না কিছুই।
ভাই, নিউটনের মেকানিক্স সম্পির্কিত ধারণা এমনি এমনি বদলায় নাই। ফলসিফায়াবিলিটির মধ্য দিয়া গেছে। টলেমির ধারনা মানুষ ত্যাগ কইরা কোপার্নিকাসের সূর্যকেন্দ্রিক তত্ত্বই দেখেন - বাতিলযোগ্যতা সব সময়ই একখান রল প্লে করছে। এইটারে অস্বীকার করণ বোকামী।
আপ্ননে কার্ল পপারের 'পভার্টি অব হিস্ট্রিসিজম' বইটা পড়েন, যেখানে উনি পরিস্কারবাহবেই দেখাইছেন, মার্ক্সের তত্ত্বের 'কী-কন্সেপ্ট'গুলা ফলিসিফায়াবিলিটির ছাঁকনিতে উত্তীর্ণ হয় না।
জোর কইরা গা দিয়া পাহাড় ঠেললেই তো হইব না।
পান্ডুলিপি পোড়ে না। -- বুলগাকভ (মাস্টার এন্ড মার্গেরিটা)
পান্ডুলিপি পোড়ে না। -- বুলগাকভ (মাস্টার এন্ড মার্গেরিটা)
সমাজকে অনুধাবণের ব্যর্থতা স্বীকার করতে অভিজিৎ কিংবা সুবিনয়ে সমস্যা কেনো
কারন মার্ক্সবাদীরাই ব্যাবাক অনুধাবণ কইরা ফালাইছে। বাকি সব তো বেকুব।
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর
নিজের হীনতা স্বীকার করে নেওয়ার সততা সবার থাকে না,
আপনাকে ধন্যবাদ আপনি নিজের অজ্ঞতা স্বীকারের সৎ সাহস দেখালেন।
------------------------------------
আমি তো গণে নেই বিচ্ছিন্ন একা
সঙ্ঘে সমুহে নেই সঙ্ঘমিতা।
------------------------------------
আমি তো গণে নেই বিচ্ছিন্ন একা
সঙ্ঘে সমুহে নেই সঙ্ঘমিতা।
সাম্যবাদী বিপ্লব হইলে পরে খবর দিতে ভুইলেন না কিন্তু। আপনের মত মহতী সবজান্তার থেকে আরো অনেক কিছু শেখার আছে কি না।
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর
জ্ঞানের প্রবাহের প্রবণতাও পানির মতোই, উপর থেকে নীচের দিকে যায়। আমি আপনার চেয়ে জ্ঞানী হলে জ্ঞানসুধারস আপনাকে সিক্ত করবেই জনাব মুস্তাফি।
------------------------------------
আমি তো গণে নেই বিচ্ছিন্ন একা
সঙ্ঘে সমুহে নেই সঙ্ঘমিতা।
------------------------------------
আমি তো গণে নেই বিচ্ছিন্ন একা
সঙ্ঘে সমুহে নেই সঙ্ঘমিতা।
আমিও বইলাম, যদি আমারেও সিক্ত করে এই আশায়। 'ছাগল', 'বেকুব', 'লোভি' সব বিশেষন-ই কপালে জুটছে যখন, কি আর করুম।
পান্ডুলিপি পোড়ে না। -- বুলগাকভ (মাস্টার এন্ড মার্গেরিটা)
পান্ডুলিপি পোড়ে না। -- বুলগাকভ (মাস্টার এন্ড মার্গেরিটা)
সুবিনয় মন্তব্য না করলে জানতেই পারতাম না এরকম একটা লেখা নামছে।
রাসেলকে জাঝা।
জ্ঞানের কথা। পড়াশোনা নাই, তাই বুঝি না।
আপনাকে ফিরতে দেখে ভাল্লাগলো। এইখানে মেলা ঝামেলা, নিয়মকানুন অনেক, পাঠকও কম, তারপরও বলি, অনুরোধ করি, নিয়মিত থাকুন।
আবার লিখবো হয়তো কোন দিন
- আলিম স্যারের লগে গলা মিলাই।
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
নতুন মন্তব্য করুন