শহীদ সকালে পৌছেছে বাসায়- আমার আদরের শ্যালক- ঢাকায় ঘুরতে এসেছে আমার একমাত্র বৌয়ের চাচাতো ভাই- গৃহশান্তির কারণে এই বাজারেও প্রসন্ন মুখে তার দিকে তাকিয়ে থাকি- হাসবার চেষ্টা করি- তবে মাসের এ পর্যায়ে বাড়তি একটা অতিথির ধাক্কায় যে হাসি ভেংচির মতো দেখায়-
ঈদের কেনাকাটা করতে ঢাকায় এসেছে- ঢাকার ফ্যাশন মেনে চললে হয়তো বাড়তি কোনো সুবিধা আছে মফস্বলে- যদিও সেখানে মানে আমার শ্বশুড় বাড়ীর শহরে ৮-১০টা বড় বড় মার্কেট আর সেখানের দোকানিরা রোজার শুরুতেই ঢাকা থেকেই সব কিনে নিয়ে গেছে তবে রোজার ১০ দিনের মাথায় হয়তো কোনোও এক অজানা কারণে ঢাকায় ফ্যাশন জগতে বিশাল যুগান্তকারি পরিবর্তন ঘটেছে- তাই তার আগমন শহরে- এমনিতে বেশ চটপটে ছেলে শহীদ- সেখানের কলেজে এইচ এস সি করছে - আর হালের ফ্যাশন নিয়ে আমার বিরক্তি সময় সময় বেশ কঠোর ভাবেই প্রকাশিত হয়েছে তাই বৌ বলেছে এ বিষয়ে কোনো আলোচনা যেনো আমি তার সাথে না করি- আমি বৌঅন্তপ্রান সুবোধ স্বামীর মতোই তার কোনো কথার প্রতিবাদ করি না-
গৃহাঙ্গনে শান্তি আর স্থিরতা বজায় রাখবার স্বার্থে অনেক কঠিন কাজ করতে হয় মধ্যবিত্ত মানুষকে- এটাও তেমন একটা কাজ- যদিও তার প্রায় পাছা থেকে পিছলে নেমে যাওয়া প্যান্ট আমার নজর কারে তবে বৌয়ের শীতল ভ্রুকুটি স্মরণ করে কিছু বলবার বাসনাকে হত্যা করি নির্মম ভাবে- তার সাইজ মাশাল্লা ভালোই- এর উপরে কামড়ে বসা শার্টটিকে উপেক্ষা করা গেলো না- বললাম কষ্ট হয় নি? শ্যালক উত্তর দিলো না মাজেদ ভাই বাসে চড়ে চলে আসলাম- আর মিলিটারি ভালোই করছে-
মনে মনে গালি দিয়ে এ যাত্রা সামলালাম নিজেকে- মিলিটারি ভালো করছে- কি ভালো করছে সেটা বল বেটা বেল্লিক- উল্লুকের মতো একটা কথা বলে দিলি- আবারো হাসবার চেষ্টা করলাম- নাহ মিলিটারি আর জার্ণি না এই যে শার্টটা- ওটাতো পড়েই সেলাই করতে হয়েছে- ম্যাশিনে আটকে যায় নি শরীর- মানে তোমার যে বপু তাতে ম্যাশিনে পড়লে ম্যাশিন অক্কা পাওয়ার কথা-
মাজেদ ভাই এটাই হাল ফ্যাশন - আপনি বুঝবেন কি- আপনার কোনো ফ্যাশন সেন্স নাই- সেন্সের বিষয়ে ভাই বোনের ঐক্যমত দেখে ইর্ষান্বিত হই- এমন ঐক্যমত থাকলে কি আর এই বয়েসে আবার মিলিটারির ছড়ির নীচে বসে থাকতে হতো?
কি গো বাজার করতে হবে না- টাকা দাও- মধ্যবিত্ত স্বামীর মতোই আমার ম্যানিব্যাগ বাধা থাকে বৌয়ের আচলে- সেখান থেকেই প্রয়োজন মতো দক্ষিণা পাই- সকালে বাজারের কাজটা করতে ভালো না লাগলেও যেতে হয়- অন্যান্য দিন সামনের দোকান থেকেই যা কিনার কিনে আনি- আমিষের সবটুকু দায়িত্বই বৌয়ের কাছে- নিয়মিত মাছের ঝোল পাতে পড়ে- তেমন ছুটির দিনে মুর্গি আর আলুর ঝোল কিংবা গরুর মাংস ভুনাও কপালে জুটে - ইদানিং আলুর পরিমাণ বাড়লেও তেমন রা কারি না- বাজারের যে অবস্থা তাতে কিছু বলতে গেলে হিতে বিপরীত হতে পারে-
যেমন অবস্থা বাজারের শুধু ঘরের কাজ শিখে গিন্নীপনা করা সম্ভব না- অন্তত মানি ম্যানেজমেন্টের উপর আর নিউট্রিশনের উপরে একটা ডিপ্লোমা না করলে কোনো ভাবেই সংসার চালানো সম্ভব না- তবে ইদানিং গোস্তের টুকরা দেখে মনে হয় হাত না কেটে এমন দক্ষতার সাথে ছোট টুকরা করবার কোনো প্রশিক্ষণ নিয়ে এসেছে ও।
গিন্নী হাসি মুখে সামনে আসছে- একটু ভয়ে ভয়ে তাকাই- অন্তত মাসের এ সময়ে বৌয়ের হাসিমুখ দেখলে আমার পিলে চমকে যায়- কোনো না কোনো অন্যায় আব্দার আছে নিশ্চিত ভাবে- আব্দারটা কি হতে পারে এ নিয়ে কিছুটা অনুমাণ করবার চেষ্টাও করি- তবে আমার অনুমাণ শক্তি ভুল প্রমাণিত হয় প্রতিটা দিনই- এর পরেও অভ্যাসের বসে একটা অনুমাণ করে অপেক্ষা করি।
অনুমাণটা যথার্থ না হলেও কাছাকাছি পৌছানোর আনন্দ পাই- নারীর মনে কি চলছে এটা বুঝতে পারা নাকি দেবতারও অসাধ্য- নিজেকে দেবতা গোত্রের কেউ মনে হয়। ঠিকই আমাকে বাজারে যেতে হবে বড় বাজারে- এই গলির দোকান থেকে সব্জি আনলে হবে না-দুই পদের মাছ আর মুর্গি কিনতে হবে- একটু চাল ডালও কিনতে হবে- আর যাওয়ার সময় যেনো শহীদকেও সাথে নিয়ে যাই- শেষাংস না মিললেও প্রায় অনেকটাই মিলেছে -আমি আমার বৌয়ের মর্জি বুঝতে পারছি এটাই আনন্দের সংবাদ এ মূহুর্তে- নির্বাণ পাওয়ার পথে অনেকটাই অগ্রসর হয়েছি এমনটাই আমার বিশ্বাস।
তুমি বিশ্রাম নাও- শহীদকে এড়ানোর চেষ্টা করি একটা তবে বোনের মতোই নাছোড়বান্দা সেও- নাহ মাজেদ ভাই সারা রাততো ঘুমিয়েই আসলাম- এখন আবার বিশ্রামের প্রয়োজন কি, চলেন আপনাকে সাহায্য করি- ভাবলাম যা কিনবো সেটা বয়ে আনবার মতো সামর্থ্য আমার আছেই- বাড়তি ম্যান পাওয়ারের দরকার নেই- তবে গেরস্থালি আর সরকারি অফিসে অপ্রয়োজনীয় মানুষকে জোড় করে গছিয়ে দেওয়ার রীতি আছে- আমার বাসার কাজের মানুষ আজকেও আসে নি তবে এ খাতেও আমার নিয়মিত খরচের পরিমাণ কমবে না- বরং কালকে সকালে কোনো প্রশ্ন করলে একটা করুণ কাহিনী শুনতে হবে- হয়তো তার স্বামীর আকাশ পাতাল জ্বর- হয়তো ছেলেটার ডায়ারিয়া- হয়তও ঘর ভাঙছে হঠাত নোটিশ দিয়ে- কিংবা আগুন লেগেছে- অনেক রকম নিয়মিত গল্পসম্ভারের কোনটা কাল শুনবো জানি না- তবে এমন কিছু একটা যে শুনতে হবে এটা নিশ্চিত-
কোন কাজে না আসলেও আমার এ খাতে বরাদ্দ রাখতেই হয়- বৌয়ের নিয়মিত মাথাব্যাথা আর গা গুলানোর কারণে অন্তত প্রতি সপ্তাহে ৩ দিন সে বিছানায় থাকে- সে কদিন যদি কাজের মানুষটা না আসে তাহলে রীতিমতো উপবাসে থাকতে হয়- আর বিবাহিত জীবনের ট্রাজেডি এটাই যে দিন একটু ফুরফুরে মেজাজে স্ত্রী সঙ্গ চায় মন সেসব দিনেই অসহ্য মাইগ্রেন বিছানা শেয়ার করে আমার সাথে- মাঝে মাঝে মনে হয় অন্তত মাইগ্রেন আমার চেয়ে বৌয়ের সহচার্য পায় বেশী- সপ্তাহে তিন দিন হলে মাসে ১২ দিন বৌয়ের শয্যাসঙ্গী মাঈগ্রেন আর বাকি ১৮ দিনে কয় দিন আর আমি সঙ্গ পাই? আক্ষেপ করি যদি আমি মাইগ্রেন হতাম-
বাজার নিয়ন্ত্রনের যাবতীয় চেষ্টা করার পরেও বাজারে চালের দাম কমে নি- খোলা বাজারের ১৯ টাকার চাল চোখে দেখি নি এখনো- প্রতিদিন অফিস যাওয়ার পথে দেখি মিলিটারি জীপ বাজারের পাশে- বাজারের সামনে মুল্যতালিকা ঝুলানো থাকলেও সেটা মনে হয় একটা মানসিক প্রস্তুতি- ভেতরে এটা ন্যুনতম দাম- তবে এটাতে কোনো কিছু পাওয়ার আশা বাদ দাও- বরং পকেটে হাত দিয়ে সিদ্ধান্ত নাও বাজারের তালিকা থেকে কি কি বাদ দিতে হবে- কি কি একেবারে অপরিহার্য সেসব বুঝে নিয়ে ভেতরে ঢুকে যাও- যদি হিসেবে মিলে যায় তবে বিলাসিতা করতেও পারো- তবে অধিকাংশ সময় সে বিলাসিতার সুযোগ আসে না। বেগুনী চোখে দেখি নি এ রমজানে- ঘুগনি আর মুড়ি এ দিয়েই চলছে সব- আলু যা আসে তা সব্জির বিকল্প হয়ে থাকে চপ হয়ে প্লেটে আসে না- আর খুব বেশী হলে ভাত খেয়ে কাজ চালাতে হয়- মানিয়ে চলতে না শিখলে এ বাজারে টিকে থাকা মুশকিল-
বাজারে খেজুর আছে- পবিত্র খেজুরের দাম শুনে তার চারপাশে ঘুরি কয়েক বার- মদীনা শরিফের খেজুর আছে বাজারে কেজি ৪০০ টাকা- পবিত্র নগরীর পবিত্র খেজুর- এত দাম দিয়ে সওয়াব কেনা যায় না- বরং চারপাশে ঘুরলে যদি হজ্জ্বের সওয়াব মিলে- লেবুটাই যা ছুতে পারি- কাচা মরিচ আর বেগুন ছোয়ার আশা আপাতত করি না আমি- বরং সেই শুকনা মরিচে রাধা ঘুগনি মুড়ি সম্বল করে জীবন কাটাই-
বৃদ্ধ মানুষদের দেখি শুকনো মুখে বাজারে ঢুকতে- তারা ঠিক কোন আশায় আসে প্রতিদিন- আমি জানি না- হয়তো বাসার বিরক্ত বৌদের ভেতরে কোন দুরভিসন্ধি খেলা করে- হিন্দি সিরিয়াল দেখে দেখে মেয়েদের কুট কৌশল বেড়েছে- তারা সকালে বৃদ্ধের হাতে বাজারের থলে দিয়ে ভাবতেই পারে -যদি বুড়া এই সুযোগে হার্ট এট্যাক করে মরে যায় হত্যার দায়টা পড়বে বাজার দরের উপরে- তারা দল বেধে বাজারে ঢুকে শুকনা মুখে এ দিকে ও দিকে যায়- চোখ বড় বড় করে বলে- আরে বলো কি? খুন করে ফেলো- দাম চাওয়ার সময় একটু বিবেক করো? তোমাকে ছুড়ি দিলে তো বুকে বসিয়ে দিবে-
গতকাল তো ১৫ টাকা ছিলো- আজকে ২০ কেনো?
এসব অবান্তর প্রশ্ন শুনে হাসি- আরে বাবা বাজারের দোকানিকে প্রশ্ন করে কি হবে- বুঝলেন না গত কয়েক দিন বৃষ্টি গেলো, আরে ভাই বাজারে সাপ্লাই নাই- দামতো বাড়বেই- দেখেন না বন্যা- মিলিটারি আসবার পর ট্রাকে বেশী মাল নিয়ে আসতে পারে না- ট্রান্সপোর্টের খরচ বাড়ছে- ডিজেল পেট্রোলের দাম বাড়ায়া দিলো সরকার- বাজারে এইটার ইফেক্ট পড়বেই- এত অজুহাত তাদের পকেটে এখন মনে হয় একটানা কয়েক দিন রোদ উঠলে এর পরে বাজারে দোকানি বলবে ভাই রোদে গাছ মুর্ছা গেছে তাই বাজারে সাপ্লাই নাই- দামতো একটু বাড়বেই- খাইতে হবে এমনটা কেঊ বলছে-
গীতি আরা সাফিয়া হাতিরপুল বাজারে বসে ১৫ জন নিরাপত্তা কর্মী নিয়ে বাজার করে তার সাথে বাজারে প্রতি দিন গেলে হয়তো সস্তায় জিনিষ কেনা যাবে- তবে তিনিও কি সবদিন বাজারে আসবেন- যদি এমন হতো সকালের খবরের কাগজে লখা থাকতো মাননীয় উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ------- আজ অমুক বাজারে যাবেন তবে সে বাজারে হয়তো ন্যায্য দামে কেনাকাটা করা যেতো- সেটাতো সম্ভব না- বিকল্প হিসেবে অন্য কিছু ভাবতে হবে- হয়ত বাজারে ঢুকবার পথে জীপ থেকে কাঊকে সঙ্গে নিয়ে আসতে হবে-বাবা আর কিছু করতে হবে না- আমার সাথে সাথে হাট- আমি যে দোকানে দাড়াবো- সেখানে দাড়াও- একটু শান্তিতে বাজারটা করে বাসায় যাই-
বৃদ্ধদের দেখে হাসলেও ভাবি এক দিন আমিও এভাবেই যাবো বাজারে শুকনো মুখে ঘুরবো এ দিকে ও দিকে - তবে যতদিন এ পরিণতি এড়িয়ে থাকা যায়- শহীদকে রেখে আমি বাজারের যুদ্ধে যাওয়ার প্রস্তুতি নিতে থাকি- রীতিমতো রণস্বজ্জায় সজ্জ্বিত হয়ে ঘরে ঢুকা মাত্রই শহীদ সশব্দে হাসে আমাকে দেখে- মাজেদ ভাই এটা কি পড়ছেন? আপনাকে দেখে চোঙ্গা আনসার মনে হচ্ছে- এ জিনিষ কোথা থেকে কিনলেন-
বঙ্গ বাজার থেকে কেনা মিলিটারি ট্রাঊজারের এহেন অপমান বুকে বিধে- অনেক শখের জিনিষ এটা- তবে এটার উপকারিতা বুঝলাম তত্ত্বাবধায়ক কালে- চোঙ্গা প্যান্ট আর এই জামা পড়ে একদিন বাজারে গিয়ে দেখি আমার কদর বেড়ে গেছে- সামনের লকতার কাছে গরুর গোস্তের দাম হেকেছিলো ২৪০ টাকা- বাজারের গেটে যদিও লেখা আছে সর্বোচ্চ দর ১৮০ টাকা তবে ভেতরে এসব নিয়ে কেউ চিন্তিত না- আমাকে দেখেই দোকানি হাসি মুখে বললো ১৭০ টাকা কেজি স্যার- সামনের মানুষটা খিস্তি করলো- তবে আমি এর ব্যবসায়িক গুরুত্ব উপলব্ধি করলাম সাথে সাথেই- ৪ কেজি কিনবার বদলে ৫ কেজি কিনে আমাকে ১ কেজি উপহার দিলো সে মানুষটা- আমিও আপত্তি করলাম না- অন্তত তার যে সুবিধা হলো আর আমার সাথে থাকা আরও কয়েক জন ক্রেতার যে উপকার হলো সেটা বিবেচনা করলে এটা তেমন বড় কোনো অঙ্ক না-
সাজ্জাদ সাহেব বলছিলেন গত সপ্তাহে বুঝলেন মাজেদ সাহেব দেশের সীমান্ততো অরক্ষিত হয়ে গেলো- আমি প্রথমে বুঝি নি- সাজ্জাদ সাহেব তীব্র ভারত বিদ্বেষি- তার অফিসে বলা অর্ধেক কথাই আসলে গোপন ষড়যন্ত্র উদ্ধারের গল্প- কিভাবে কি প্রক্রিয়ায় ভারত আমাদের উপরে ছড়ি ঘুরানোর চেষ্টা করছে এটা জানতে জানতে এখন আর ভালো লাগে না - ভাবলাম এমন কিছুই হবে-তবুও তার সঙ্গত দেওয়ার জন্যে বললাম কি হলো সাজ্জাদ ভাই?
না বিডি আরকে তো বাজারের লাইসেন্স দিয়ে দিলো- এখনতো ওরা বাজারে গিয়ে বসবে- তাহলে সীমান্ত পাহারা দিবে কে? আর অর্থনীতির সাথে যুক্ত হলে কি আর সততা বজায় রাখা যায়- ওরাই এখন অন্যায় করবে-
ভারততো আরও একটা সুযোগ পেয়ে গেলো।
এর পর আর মনোযোগের প্রয়োজন নেই- এর পরের কথাগুলো আমার জানা আছে-
শহীদের কথা শুনে বিরক্ত হলেও সেটা প্রকাশ করার উপায় নেই কোনো- গৃহ শান্তির বানী জপ করতে করতে বাজারের পথে রওনা হলাম-
এন টিভিতে দুপুরের খবরে প্রাচারিত হলো- অভিনব প্রতারণা- আজ সকালে ভুয়া মিলিটারি সেজে বাজারে প্রতারণার দায়ে এক ব্যক্তিকে আটক করেছে যৌথ বাহিনী-
মন্তব্য
ব্লগের গল্পারুরা কই।
দেখি কই নিয়ে যান উনারা এইটারে।
খবরটা শুনেই মেজাজ খুব খারাপ হয়ে গেল মাজেদের। আপনমনে কিছুক্ষন খিস্তি – খেউর করে চলল জাতির গুষ্টির ইয়ে ধরে।
দুপুরের খাবার খেতে খেতে তিনটা বেজে গেল। মাজেদ সাধারণত একটা থেকে দেড়টার ভেতর দুপুরের খাবার খেয়ে ফেলে। ক্ষুধা সহ্য করার ক্ষমতা তার নেই। আজ খাবার দিতে দেরী হওয়ায় রাগে তার পিত্তি জ্বলে যাচ্ছিল কিন্তু কিছুই বলার নেই। গৃহশান্তি বজায় না রাখতে পারলে আবার মাইগ্রেন এসে নিজের জায়গা দখল করে নিতে পারে ভেবে চুপ করে রইলো।
বিকালের দিকে গিন্নী এসে বললেন, “এই শোনো, আমি শহীদকে নিয়ে একটু বসুন্ধরার দিকে যাচ্ছি। তুমি কি কোথাও যাবে নাকি? আমাদের আসতে সন্ধ্যা হবে।”
মাজেদ বললো, “নাহ – তোমরা বরং বেড়িয়ে আসো। আমার শরীরটা ম্যাজ ম্যাজ করছে। আমি বরং কিছুক্ষন গড়াগড়ি দিয়ে নিই। বিকালে একবার বের হয়ে আশরাফ সাহেবের ওদিকে যেতে পারি।”
গিন্নী কিছু না বলে চলে গেল। বউয়ের গমন পথের দিকে তাকিয়ে একটা নিঃশ্বাস ফেললো মাজেদ। বউ চলে গেছে নিশ্চিৎ হওয়া মাত্রই ফোনটা তুলে নিল সঙ্গোপনে, তারপর সেই অতি পরিচিত নাম্বারটা ডায়াল করলো – ওপাশ থেকে পরিচিত সেই কন্ঠের হ্যালো শুনেই তার ভেতরটা এলোমেলো হয়ে গেল বরাবরের মতো।
“কি করছো শিউলী? বিকালে আসতে পারবে?”
“আজাদের শরীরটা ভালো নেই - আজ বাসায় আছে ও। আমি একটু পরে বের হয়ে শিরিনদের ওদিকে যাবো একবার।” উদ্বিগ্ন স্বরে বললো শিউলী।
“শিরিনদের বাসা আজিমপুরে না? যাবার পথে আসবে নাকি একবার রোকেয়া হলের সামনে?”
“তুমি থাকবে? ঠিক আছে তাহলে – ফেরার পথে দেখা হচ্ছে। তুমি আগে থেকেই পৌছে যেও, আমি তোমার মোবাইলে ফোন করবো আসার আগে।” শিউলী মাদকতা জড়ানো কন্ঠে বলে।
ফোন রেখে উৎফুল্ল মনে শিস দিতে দিতে বাথরুমের দিকে এগিয়ে যায় মাজেদ।
দিলাম গল্পের বারোটা বাজিয়ে।
কি মাঝি? ডরাইলা?
নতুন মন্তব্য করুন