টুয়েন্টি টুয়েন্টি বিশ্বকাপ দেখি আর চিন্তা করি বিনোদনের জায়গা থেকে আমাদের চাহিদা দিন দিন কতটা পরিবর্তিত হয়ে হালের বাজার সঙ্গস্কৃতির সাhথে তাল মিলিয়ে চলার চেষ্টা করছে, বিপননের অবস্থান থেকে দেখলে এতে দোষের কিছুই নেই তবে খেলার দিক থেকে ভাবলে অবাক লাগে আমরা বাজার সংস্কৃতির সাথে তাল মিলিয়ে চলতে গিয়ে সৈন্দর্য্যকে কতটুকু প্রাধান্য দিচ্ছি।
মাত্র ১৬ থেকে ২০টা দেশে ক্রিকেটের প্রসার ঘটেছে আর এর সবগুলোই ইংরেজদের কলোনি ছিলো- এটা সে অর্থে ঔপনিবেশিকতা- তবে এর পরেও মাঠে যারা খেলতো তাদের নিজস্ব শৈলী দেখানোর একটা সুযোগ ছিলো বড় দৈর্ঘের খেলায়- ৫ দিনের টেষ্ট ম্যাচের অর্থনৈতিক গুরুত্ব তেমন নেই-তবে যেকোনো দলের খেলোয়ারদের মান নির্নয়ের জন্য এটাই সর্বোতকiৃষ্ট পন্hথা- ব্যাটসম্যানের দক্ষতা এবং দুর্বলতা প্রকাশিত হবেই- বাংলাদেশের খেলোয়ারেরা বড় দৈর্ঘের খেলায় নিজেদের প্রমাণ করতে পারে না কারণ আমাদের অবকাঠামোগত সমস্যা- এখানের পীচের অবস্থা এতটাই করুণ পীচ থেকে বাড়তি কোনো সুবিধা পায় না বোলাররা- বরং উইকেটের অবস্থা বিচার করলে বলতে হবে এখানে শুধু অপেক্ষা করলেই বল ব্যাটে আসবে আর ক্রিকেট শট খেলবার কোনো প্রয়োজন নেই এখানে ভালো রান তুলতে- মুলত আমাদের ব্যাটসম্যানদের তেমন কোনো কষ্ট করতে হয় না এখানে রান করবার জন্য- হালের ক্রেজ তামিম ইকবাল কিংবা শাহরিয়ার নাফিসের ফুট ওয়ার্কের অবস্থা এমনই করুণ যে এরা উইকেটে থেকে রান করে ফিরে এটাই আমাকে বিস্মিত করে প্রতিবার-
ক্ল্যাসিক যুগের কথা হয়তো তবে ব্যাটসম্যান সব সময় জানে তার অফ স্ট্যাম্প কোথায়- সেটা বিবেচনা করেই সে খেলতে নামে- তবে আশরাফুল আর সাকিবকে বাদ দিলে মনে হয় না এখনকার বাংলাদেশ দলের অধিকাংশ ব্যাটসম্যানের কোনো ধারণা আছে এ বিষয়ে- তারা যখন শট শেষ করে উইকেটের সামনে চলে গেছে অধিকাংশ সময়ই তাদের অফ স্ট্যাম্প আর মিডল স্ট্যাম্পের মাঝের ফাকা জায়গাটা পুরণ হয় নি- পায়ের কাজ না থাকলে শুধু হাত আর চোখের বোঝাপরায় সব দিন সব পরিবেশে টিকে থাকা যায় না - তবে সেই বাংলাদেশের খেলয়ারেরাই ওয়েস্ট ইন্ডিজকে টুয়েন্টি টুয়েন্টি থেকে সরিয়ে দিলো- আমি আনন্দিত- তবে আশরাফুলের অসাধারণ নৈপুন্য আর আফতাবের ব্যাটে ভর করে সব দিন পার পাওয়া যাবে না -এটাই সত্য- আফতাব ছোটো দৈর্ঘ্যের খেলায় ভালো করছে এমন না- বরং সত্য হলো অনেকটা সঠিক জায়গায় বল ফেলতে না পারার জন্যই ওয়েস্ট ইন্ডিজ হেরেছে- আফতাব প্রচুর বাজে শট খেলে- নিয়মিতই- বাংলাদেশের নিস্প্রাণ পীচে যেখানে বলের মুভমেন্ট সামান্য - যেখানে বল নিয়মিতই ব্যাটে পৌhছায় সেখানে একটা নির্দিষ্ট উচ্চতায় ব্যাট চালালেই ব্যাটে বলে লাগে- পীচ থেকে কোনো বাড়তি সহায়তা না পাওয়ায় আধিকানংশ সময়ই আমাদের বোলারদের মুল দক্ষতা দেখানোর জায়গাটা হলো ভেরিয়েশন ইন লেংথ- সৈয়দ রাসেল কিংবা মঞ্জুরুল ইসলামের মতো বোলার বাদ দিলে মাশরাফি কিংবা শাহেদ কিংবা বৈশ্য কিংবা শরিফ মুলত লেংথ নির্ভর বোলার- এরা বাংলাদেশের মরা পীচে যতটুকু বাউন্স পায় সেটা যখন অন্য মহাদেশের কিংবা অন্য দেশের পীচে গিয়ে প্রমাণের চেষ্টা করে তখন দেখা যায় এদের বলের লেংথ ঠিক নেই- অন্ধের মতো কিংবা নির্বোধের মতো বল করে যাচ্ছে- মাশরাফি দেশ সেরা বোলার- বিভিন্ন দেশের মাঠে খেলবার অভিজ্ঞতা থেকে শিখে এখন অনেক পরিনত তবে এখনও তার লেংথের সমস্যার কারণে অনেক সময়ই ভুল জায়গায় বল ফেলে-
তবে একটা সুবিধা হলো ২০ অভারের ম্যাচে একটা সুযোগ হারালে দ্বীতিয় বার সে সুযোগ পাওয়া কঠিন- তবে বাংলাদেশের মতো দলের জন্য এটা সত্য না- একই ভুল বার বার না করলে সেটা নিজের নাগরিকত্বের সাথে প্রতারণা এমনটাই বিশ্বাস করে বাংলাদেশ দল- মানুষ সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য মাঠে আসবে কিছু চার ছয় দেখবে আনন্দে লাফিয়ে বাসায় ফিরে যাবে এমন ধারণা থেকেই হয়তো ২০-২০ খেলার প্রসার- বোলাররা মাঠে যাবে- তাদের কাজ বিনোদনের সহকারীর- কিছুটা স্যাডিস্ট পর্ণো ছবির মতো- নায়িকা বাধা দিচ্ছে আর একজন জোর করে সম্ভোগ করছে- এটাতেই চরম উত্তেজনা দর্শকদের ভেতরে- খানিকটা বাধা না দিলে কেমন করে হয়- ধর্ষণ মোটেও সহজ বিষয় না-
বোলার ঠিক জায়গা মতো বল ফেললো তবে ব্যাট হাতে যে মানুষটা দাড়ানো তার হাতে সময় নেই বল বুঝবার- শুধু উইকেটের বাউন্স বুঝে ব্যাট চালিয়ে যাওয়া- জুয়া খেলার মতো একটা পরিবেশ- হিট ওর মিস- যদিও সে হিসাবে বোলার বাড়তি কিছু সুবিধা পাওয়ার কথা তবে তা ঘটে না- ব্যাটসম্যানকে আউট করবার জন্য একটা বল হলেই হয়- তবে অন্ধ মানুষ যখন এলোমেলো ছুড়ি চালায় তখন আহত হওয়ার সম্ভবনা সব সময়ই রয়ে যায়- আর খেলাটা ৪-৬ এর খেলা হওয়ার সাথে সাথে অনেক বেশী ব্যাটসম্যান উপযোগী- বোলারদের হাত পা বাধা সে হিসাবে- ভুল করবার সুযোগ নেই- বরং ব্যাটসম্যানকে মারবার সুযোগ তাকে দিতে হবে- বাউন্সারের বিধি নিষেধ আছে- নো বলের সাথে ফ্রি হিটের যন্ত্রনা- লেগ সাইডে কিংবা দ্বীতিয় বাউন্সারে ওয়াইড- ব্যাটসম্যান মারলো সেটা যদি ক্রিকেটের বিধি না মানে এর পরও কোনো জরিমানা নেই- প্রথমেই একটা অসমতার সৃষ্টি হলো মাঠে- ক্রস ব্যাট- নিক- লেমন কাট- ব্যাক ওফ দ্যা ব্যাট- এসবের ভেতরে ক্রস ব্যাট একটা দক্ষতার জায়গা তবে নিক কিংবা লেমন কাট কিংবা ব্যাক ওফ দ্যা ব্যাট কোন ভাবেই ক্রিকেটিং শট না- এভাবে কোন রান আসলে সেটা নিষিদ্ধ করে দিলে অন্তত কিছুটা ভারসাম্য আসত খেলায়- বোলাররা বল করে আনন্দ পেতো-
তবে এর পরও আপত্তি কর মনে হয় প্রতিটা শটের শেষে আর উইকেট পড়বার পরে ছেলে মেয়ে লাফাচ্ছে মাঠের পাশে এটা দেখতে- চিয়ার লীডার ইন এ ক্রিকেট ম্যাচ আমার পছন্দের দৃশ্য না- বরং অসহ্য লাগে দেখতে- দর্শকদের আনন্দের ভংগিতে অভ্যস্ত আমি এইসব যৌনাবেদনময়ী মেয়েদের উলম্ফন দেখে বিরক্ত হই-
যৌনতা অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ একটা মানবিক অনুভুতি- এটার প্রয়োজনও আছে জীবনে-এটার আনন্দের কথাও মেনে নিতে রাজি- তবে সব খানেই যৌনাবেদনের প্রবেশ ঘটতে হবে এমনটা চাই না- মাঠে দর্শক যাবে খেলোয়ারদের দক্ষতায় বিনোদিত হতে -সেখানে এক দল হাফ ন্যাংটা ছেলে মেয়ে লাফাচ্ছে ক্যাঙ্গারুর মতো এটা কেমন অশোভন দৃশ্য- তখনই মনে হয় এ শুধু বান্যিজ্য- পয়সার ধান্দা- এখানে খেলা কোনো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় না- যদি এমন হয় যে কোনো দিন তারা আবিস্কার করে বোলারেরা উর্ধাঙ্গ খুলে নামলে বাড়তি কিছু মেয়ে দর্শক পাওয়া যাবে- তারা এ নিয়মের প্রবর্তন করবে- এবং যৌনতার বাজার দর যেমন ভাবে বাড়ছে- তাতে একটা সময় শুধুমাত্র মেয়েদের ২০ ২০ খেলা হবে- সেখানে স্তনের উঠা নামা আর খেলা- এক টিকিটে ২ ছবির মত বাড়তি পয়সার গন্ধ নিয়ে আসবে
আমি কোনো ভাবেই সমর্থন করছি না- যদিও আমার অসমর্থনে কারো কোনো বাল বাকা হবে না তবে বংলাদেসশ যদি কোনো ভাবে এই ফরম্যাটে বিশ্বজয়ী দলও হয় এর পরও আমি এটার বিরুদ্ধেই থাকব- অনেক বিচারেই আমি প্রাচীনপন্থী সৈন্দর্য্য বিবেচনায় এখানে শুধু ক্রিকেটের পক্ষে আমার ভোট।
মন্তব্য
আপনার ক্রিকেট আলোচনা সবসময়ই ভালো লাগে।
ক্রিকেটের কসমেটিক সার্জারি আর কি...
ভারত-পাকিস্তান বলয়ের সীমাহীন ওয়ান-ডে ক্রিকেট প্রসূত টাকার লোভই ক্রিকেটের আজকের এই অবস্থার জন্যে দায়ী। সেই আশির দশকের মাঝামাঝি এই ট্রেন্ড শুরু হয়। জগমোহন ডালমিয়ার যুগে এসে তা চরম আকার ধারণ করে, এবং আজকের এই Twenty20 নামে ক্রিকেটের যে প্রহসন চলছে, তা সেটারই ডিরেক্ট ফলাফল। ৫০ ওভারের ম্যাচের এত বাহুল্য হয়ে গিয়েছিল এক সময় যে সেটাও আর যথেষ্ট হলো না, এখন দরকার Twenty20 নামের এই অপ-ক্রিকেট, আর তার খেলোয়াড়রাও মোটামুটি অপ-খেলোয়াড়ই বলা চলে। টেকনিক, ট্যালেন্ট, টেম্পারামেন্ট - সবই ধ্বংস হয়েছে এসব আগডুম-বাগডুমের ফলে। আইসিসি জেতার এক দশক পরেও আমাদের ক্রিকেটের কি অবস্থা, দেখেন। একটা টেস্ট জিততে পারে না, কিন্তু একটা অন্তঃস্বারশূন্য Twenty20 জিতলে খুশির রোল বয়ে যায়।
বড় হয়েছিলাম ভিভ আর ম্যালকম মার্শালকে ভালোবেসে, গাভাস্কার বা ভেংসরকারের খেলা দেখে, ধ্বংসপ্রাপ্ত অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেট টিমের ফিনিক্সের মত ফিরে আসা দেখে। আজকের এইসব অপ-ক্রিকেট দেখলে এখন কান্না পায়, তাই দেখিও না তেমন । অথচ মাত্র দুই বছর আগেও Ashes সিরিজ দেখে আমরা পরম বিস্ময়ে বুঝেছিলাম যে টেস্ট ক্রিকেট কি রকম মাহাত্ম্যের অধিকারী হতে পারে। যাক, যুগের সাথে তাল মিলাতে গিয়ে ক্রিকেটের এডমিনিস্ট্রেটর-রা, আইসিসি ইত্যাদি বরং ক্রিকেটের জল্লাদের ভূমিকা পালন করে গেছেন। খেলার ইন্টেগ্রিটি মরনাপন্ন, বেটিং স্ক্যান্ডাল থেকে বব উলমার অব্দি। ওইদিন ফ্রেন্ডকে হিথ্রো বিমানবন্দরে নামাতে গিয়ে সুনীল গাভাস্কারকে অবশেষে দেখলাম নিজ় চোখে। ২০ বছর আগে চলে গিয়েছিলাম নিমেষে - এই লোকটাকে, ওর খেলাকে কি অসম্ভব ভালোবাসতাম, যেদিন গাভাস্কার টেস্টে প্রথম ১০,০০০ রান সংগ্রহকারী ব্যাটসম্যান হলেন ১৯৮৭-র শুরুর দিকে, সেদিনের খুশীর কথা মনে পড়ে গেলো - ঈদের খুশীকেও সেটা হার মানিয়েছিলো। ওনাকে দেখে নিজের ভেতর প্রচন্ড কষ্ট হলো। সেসব দিন আর ফিরবে না, সেই ক্লাসিক্যাল ক্রিকেটও মরে ভূত হয়ে গেছে।
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর
নতুন মন্তব্য করুন