সেলুকাস বিচিত্র এই সময়

রাসেল এর ছবি
লিখেছেন রাসেল (তারিখ: বিষ্যুদ, ২০/০৯/২০০৭ - ৮:১৩অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

লজ্জিত হওয়ার সুযোগ নেই এখন, আমরা আসলে অদ্ভুত এক সময়ে বসবাস করছি এখানে- প্রথম আলোর আলপিনে প্রকাশিত নাম শিরোনামের কার্টুন কখন কিভাবে এতটা গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় অনুভুতির পক্ষে হানিকারক হয়ে গেলো সেটা বুঝবার উপায় নেই- তবে এ সংক্রান্ত বিভিন্ন ভাষ্যে একটা বিষয় অন্তত পরিস্কার হচ্ছে আমাদের ভেতরে ধর্মের বিষয়ে অন্ধ ভক্তি রয়েই গেছে-
অনুভুতি যখন অন্ধ তখন সেই অন্ধকারে আসলেই নতুন কোনো ভাবনা বিকশিত হতে পারে না।

আমি দুঃখিত আরিফের জন্য- প্রায় ৩০ বছর চলে আসা একটা কৌতুকের বর্ণনা এতদিন পরে কেনো অনুভুতিতে শেলের আঘাত হলো এটা বলা মুশকিল- প্রথম আলোর প্রথম পাতায় আরিফের গ্রেফতার নিয়ে যে বক্তব্য প্রকাশিত হয়েছে এবং সম্পাদকীয়তে মাননীয় সম্পাদকমন্ডলী যে বক্তব্য পরিস্কার করতে চেয়েছেন তাতে আমার লজ্জা আরও বাড়ে- তারা সম্পূর্ণ দায়টাই চাপিয়ে দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট মানুষের উপরে- হয়তো কর্পোরেট জগতে এই সাম ওয়ান হ্যাজ টু টেক দ্যা ফল বক্তব্যটা সঠিক- তবে আমাদের তথাকথিত প্রথম আলো পরিবারের বর্নীল বানী সেখানে মুখ থুবরে পড়ে-

আমাদের লজ্জা আমাদের সুশীলেরা খুব বেশী গা বাঁচিয়ে চলতে চান। তারা নিজেরা যা অনুভব করেন সেটাকে প্রকাশ করাটাও উচিত বলে মনে করেন না- আমাদের জাতির বিবেক বুদ্ধিজীবিরা সব সময়ই প্রতিক্রিয়ার ভয়ে অন্তত সমাজের অন্ধ মানুষগুলো কিংবা টুপিপড়া নির্বোধদের বিরুদ্ধে কোনো কথা বলেন নি- জাফর ইকবাল কিংবা আলী আসগর মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থা সংস্কার নিয়ে কথা বলবার পড়ে- কিংবা হাসান আজিজুল হক যখন ধর্মকে ব্যক্তি মানুষের অনুভব বললেন তখনও একই ভাবে নির্বোধ উল্লুকেরা মুরতাদ ঘোষণা করলো- তখনও তাদের এই যন্ত্রনা এবং প্রতিক্রিয়াটা সহ্য করতে হয়েছে একাকী- আমরা হয়তো ব্লগে নিজের ঘরে বসে নিজস্ব প্রতিক্রিয়া জানিয়েছি তবে এটাযে আমাদের মুক্ত চিন্তার উপরে আঘাত এটা বুঝেও তারা এটার বিরোধিতা করে হাসান আজিজুল হক কিংবা জাফর ইকবাল কিংবা আলী আসগরের পাশে দাঁড়ান নি- কোনো পত্রিকা সেটা মুক্ত চিন্তার বানী নিয়েই বিজ্ঞাপন দিক কিংবা অন্য কোনো বাহারি বিজ্ঞাপনের মোহে মানুষকে আকৃষ্ট করে কেউ তেমন ভাবে এই আগুনের আঁচ থেকে গা বাঁচিয়ে চলেছেন-

একই ঘটনা আসলে অনেক আগেই ঘটেছে- কাউকে ধর্মীয় অনুভুতিতে আঘাত দিয়েছে বলে এক ঘরে করে ফেলার কৌশলটা পুরোনো এবং সফল একটা কৌশল- নির্বোধ উল্লুক এবং দাড়ি দেখে সম্মোহিত হয়ে যাওয়া বাঞ্চোত জনগন সবাই এই একটা জায়গায় এসে পুনঃবিবেচনা করে দেশে আসলেই ধর্মীয় অনুভুতিতে আঘাত লেগেছে-

আমরা অন্য মানুষের মানবিক অনুভবের উপরের আঘাতকে গুরুত্ব দিচ্ছি না তবে মানুষের অন্য সব মানবীয় আবেগের মতো ধর্মীয় আবেগকে এমন সযতনে রক্ষা করে চলছি নিজেদের ধিক দিয়েও রেহাই পাওয়ার উপায় নেই এখানে।

গল্প আসলে কবে কি ছিলো জানি না-
তসলিমা নাসরিনকে যখন শিবিরের কর্মীরা বই মেলায় লাঞ্ছিত করলো- যখন তাকে দিনের বেলায় শাড়ী খুলে নেওয়ার মতো বর্বরতার শিকার হতে হলো তখনও এইসব চুতমারানি দেশের বিবেকেরা বোধ হয় মগ্ন কিশোরীর স্তনের ভাঁজ নিয়ে কবিতা লিখেছে- কিংবা বিখ্যাত কবিদের নারী লিপ্সুতার যে গল্প আমরা জেনে এসেছি সে কাজে মগ্ন ছিলেন কিংবা আমাদের পরস্পরের হোগায় আংগুল দিয়ে বসে থাকবার স্বভাব মেনে আমরা দলবাজী গুটিবাজীতে মগ্ন ছিলাম হয়তো তবে সত্য হলো এই ধরনের ঘটনার বিষয়ে সরকার কোনো বিরোধিতা কিংবা শক্ত অবস্থান গ্রহন করেন নি-= বুদ্ধিজীবিরাও করেন নি-
হুমায়ুন আজাদের উপরের হামলার কোনো প্রতিকার হয় নি- শামসুর রহমানের উপরের হামলা হলেও সেটারও কোনো প্রতিকার করে নি সরকার-
এবং কেউই আসলে তাদের পাশে প্রকাশ্যে দাঁড়ায় নি-

তবে সব সময়ই এটা সত্য যে যখন বিষয়টা ধর্মীয় অনুভুতিতে আঘাতের তখন আমাদের সুশীল সমাজ মুখের ভেতরে ধন ভরে বসে থাকে নিজের কিংবা ধর্মীয় মোল্লাদের কিংবা সরকারের- যর ধনই হোক না কেনো সেটা চুষতে চুষতে লালাসিক্ত গন্ডে অবাক তাকিয়ে থাকে পরবর্তী কর্তব্য বুঝে উঠতে পারে না।

সুতরাং আরিফের জন্য সমবেদনা- তোমার জন্য কোনো খানকির পোলাই নিজেদের অবস্থান ছেড়ে আসবে না- হয়তো তোমাকে হয়রানির জন্য সরকার কোনো দিনই ক্ষমা প্রার্থনা করবে না- হয়তো চাকুরিচ্যুত সুমন্ত আসলামের জীবনে সার্বক্ষণিক একটা দাগ হয়ে থাকবে এই ঘটনা-

তবে অব্যহত পশ্চাতসরণের ধারা মেনে আমরা নিজেদের মুক্ত চিন্তাকে কোণঠাসা করতেই থাকবো-

হোগা মারা খাইতেই আছি- খাইতেই আছি-

আমাদের মোল্লারা চেতনার শিশ্ন দিয়ে কিংবা উদ্যত শিশ্নে আর খড়গে আমাদের ধর্ষণ করছে- আমরা এখন এই এলিট অবস্থানে গলা উচিয়ে কথা বলছি তবে এটা আমাদের সাময়িক আবেগ-

যা প্রয়োজন সেটা কি আরিফ পাবে এর ফলে?
কোনো উকিল কি আরিফকে রক্ষা করতে ধর্মীয় অনুভুতির ঠুনকো অবস্থাকে ব্যখ্যা করে একটা দিক নির্দেশনা এনে দিবে-

বাঞ্চোত দেশের বাঞ্চোত অধিবাসী আমি বসে বসে ন্যাংটা ছবি দেখি আর আরিফের জন্য আবেগী বক্তব্য লিখি-

সেলুকাস বিচিত্র এই সময়


মন্তব্য

অরূপ এর ছবি

"বাঞ্চোত দেশের বাঞ্চোত অধিবাসী" আজ আমরা সবাই

আরিফ জেবতিক এর ছবি

কোন উকিল পাওয়া যায় নি বলে গতকাল আরিফকে কোর্টে তোলা হয় নি।

দ্রোহী এর ছবি
অতিথি লেখক এর ছবি

মোল্লাতন্ত্রের তাণ্ডব আর জলপাইতন্ত্রের আতঙ্কে আরিফের পক্ষে প্রত্যক্ষ সমর্থন দেয়ার সাহস পাচ্ছে না কেউ।

অক্ষম অসহায়ত্ব বোধ করছি।

- সংসারে এক সন্ন্যাসী

হিমু এর ছবি

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।