সমালোচনার সমালোচনায় ভীমরুল

রাসেল এর ছবি
লিখেছেন রাসেল (তারিখ: সোম, ২২/১০/২০০৭ - ৫:১৭অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

আমার গল্প সমালোচনার মর্ষকামে বিধ্বস্ত হয়েছে কারো সুশীল হৃদয়- নারীর রচনাপাঠে পুরুষতান্ত্রিকবোধ কারো পছন্দনীয় বিষয় হতে পারে না- শৈল্পিকতা, বিমুর্ততা, রচনা শৈলী, নানাবিধ ভুল বিশেষণে ভরে থাকা সমালোচনা কাঠামোর ভেতরে মর্ষকাম কঠোর কর্কশ শব্দ।

পছন্দনীয় হতেই হবে এমন দিব্যি নেই, সাধারণ পাঠকের তুলনায় উন্নত মেধাবী মনন ধারণ করবার অসাধ্য সাধন করতে পারি নি আমি- একেবারে সাধারণ পাঠক হিসেবে কোনো শিল্প উপভোগ এবং তার বিশ্লেষণে বিশেষ বুৎপত্তি প্রয়োজন এমন দাবিকে আমি কখনই ন্যায়সম্মত ভাবি না- এমন কি আগাগোড়া আইকোনোক্ল্যাস্ট বলে অভিসম্পাত দিয়ে যে বন্ধু আমাকে বাসস্টপে ছেড়ে যায় তার সাথে শিল্পের ক্ষীন সম্পর্ক কোনো কালে ছিলো তবে এখন তার আত্মা থেকে শিল্পবোধ শুষে নিয়েছে কর্পোরেট।

এমনই ছাপোষা সঙ্গ আমার, কোনো শিল্পালয়ে পা ফেলি না, সুশীলম মানবিক সমাজে যাই না, কোনো আর্ট কালচার সভায় পদধুলি দিয়ে সে সভা পবিত্র করি না, শিল্পিত আহা উঁহু ও করতে পারি না ঠিক মতো, আমার সহগামী মানুষেরা কেউই ক্ষণিক আবেগে তাড়িত হয়ে সারা রাত প্রেমিকার জানালার সামনে দাঁড়িয়ে থাকে না এখন- সে আবেগ মৃত= তীব্র কষ্ট হলে পানশালা গিয়ে মদে মসৃন করে দুঃখ গিলে খায় না,

তারা মদ খায়, নেশা করে- নেশা কাটলে পরদিন কর্পোরেটের খাঁচায় গিয়ে মেধার মাংস দিয়ে আসে= তাদের জীবনযাপনে রবীন্দ্র সংগীত সন্ধ্যা নেই, আজ বেঙ্গল, কাল গেট্যে, পরশু আঁলিয়াস ফ্রাসেজ নেই-

আমি অবশ্য বিন্দুমাত্র দুঃখিত নই এসব সঙ্গে, এরাই বিভিন্ন সময়ে বৈতরনী পার করিয়ে দেয়, আমাদের আনন্দিত করে উত্পত্ত সঙ্গে, তাই আমি নানাবিধ ভুল সমালোচনার ব্যকরণ শিখে বসে থাকি।

শালার শিল্পীত বোধতাড়িত সমালোচনায় মর্ষকাম ঢুকে পড়ে অশ্লীল আপদের মতো।

তবুও বিশেষায়িত মর্ষকামকে আমার নিজস্ব বিবেচনায় সঠিক মনে হয়েছে, গোটা পুরুষ সমাজের ভারে যা আমার সাহিত্যচেতনাকে শেষ পর্যন্ত মর্ষকামে পর্যবসিত হৈলো, সেই দায় থেকে পুরুষ সমাজকে মুক্তি দিতে চাচ্ছি না আপাতত- কিংবা নিজের সাহিত্যচেতনার অধোগতিও রুখতে চাইছি না।

সাদামাটা সেই গল্পের কাঠামোতে কোনো চমক ছিলো না, নিস্তরঙ্গ একটানা নানাবিধ অনুভুতির বর্ণনায় তেমন শাঁসালো কিছুই ছিলো না- এরপরও এ গল্পে মোহিত হওয়ার কোনো কারণ আমি খুঁজে পাই নি-
সুশীল সমাজের করুণাবোধ জাগ্রত হতে পারে সুশীল হৃদয়ে- তবে যা অবসম্ভাবি সেই অনিবার্সতাকে আলিঙ্গন এবং প্রত্যাশিত অবজ্ঞাকে মহান করবার সুনিশ্চিত চেতনা আমার নেই।

গল্পোক্ত মহিলার অনুভুতির বর্ণনাতে আলোড়িত হওয়ার কোন কারণ মর্ষকাম চরিতার্থ করে না,যদিও সুশীল সুবোধ নই তাই নিগৃহীতা কিংবা নারী লাঞ্ছনায় যৌনসুখ বোধ করা পুরুষের দল থেকে নিজেকে সরিয়ে রাখতে পারছি না, এমন পুরুষ অহরহ আমার আশেপাশে ঘুরছে, শৈল্পিক সমাজে আনাগোনা নেই তাই জানি না ঠিক কোন আভরণে, আচরণে কিংবা উচ্চারণে তারা যৌনতাড়িত হয়, আমার আশেপাশের পরিচিত পুরুষতান্ত্রিকদের, মেয়েদের ওড়না খসলেই যৌনকামনা আপ্লুত হয় যারা, টিভিতে বিশালবক্ষা তানিয়া যাদের চেতনা স্তব্ধ করে দেয়

এবং যারা নারীকে করুণাপ্রার্থী ভেবে মহোত্তম সাজে- নারীকে বিশিষ্ঠতা দিতে চায়- কন্যা জায়া জননি এবং রমনীয় রমনী ভিন্ন জীবনে যাদের অন্য কোনো নারীর উপস্থিতি নেই যারা এটাও ভাবতে পারে না যে নারী শয্যাসঙ্গী ভিন্ন শুধু বন্ধুও হতে পারে তাদের ভেতরে দ্বন্দ্বটা রয়েই যায়।

নারীরা অবলা, কিছুটা নির্বোধ এবং অযৌক্তিত আবেগে আপ্লুত এমন সামাজিকভাবে প্রতিষ্ঠিত পুরুষতান্ত্রিকতায় সহবাসী পুরুষ মেয়েরা আশেপাশে বেঁচে থাকে,

তসলিমার লেখা খুব ভালো মানের না হলেও সামাজিক পুরুষতান্ত্রিকতার জান্তব চিত্রায়নে কিছুটা অতিরঞ্জন থাকলেও সাধারণ পুরুষের আচরণের কোমল কারুণ্য, তার মহোত্তম সাজবার বাসনা এবং নারীকে রক্ষা করতেই হবে এমন পুরুষতান্ত্রিক বোধ উহ্য না রেখেও বলা যায় সামাজিক পুরুষ মানসে এসব বোধ বিদ্যমান।

মেয়েদার লাঞ্ছনায় করুণা বোধ করা এবং পুরুষের মতো নিসংশয়, নিসংকোচ প্রত্যাখানে উল্লসিত হওয়া একই সাথে স্ববিরোধ তৈরি করলেও তা আসলে একই পুরুষতান্ত্রিকবোধ থেকে উদ্ভুত। হয়তো নারী মননের অজানা অধ্যায়, যার কতটুকু পুরুষকল্পিত, জানবার বাসনা তৃপ্ত হয় আলোচিত গল্পে, তবে সব শেষেও ভালোলাগার জায়গাটাতে একটা প্রশ্ন থেকেই যায়= আদতে আমাদের কোন অনুভুতি তৃপ্ত হয় গল্পের শেষে? সেটা কি আমাদের পুরুষতান্ত্রিক বোধ?

একটা কৌতুক আমি অসংখ্যবার পরেও এর থেকে কোনো হাস্যরস উদ্ধার করতে পারি নি-

মেয়েদের আড্ডা, তমা ঃ আচ্ছা ছেলেরা যখন আড্ডা দেয় তখন কি নিয়ে কথা বলে?
ইমাঃ আমরা যা নিয়ে কথা বলি সেটাই।
তমাঃ উমা ছেলেরা কি খারাপ।

আমার এক বন্ধুর সাথে দেখা হলো- অনেক দিন পরে এক রেস্টুরেন্টে, পাশে একটা মেয়ে- কি খরব, এখন কোথায় ইত্যকার আলাপন শেষে বললো পরিচয় করিয়ে দেই, তোদের ভাবী।
আমি বেশ চমৎকৃত হয়ে বললাম হুমম তা তোর কোন ভাইয়ের বৌ?
বেচারা বিব্রত হয়ে বললো না আমার ওয়াইফ।

যদিও আমি জানি না আমার পরিবার এবং আমার ওয়াইফ এই শব্দগুচ্ছ কেনো এত প্রচলিত, আমার বৌ, কিংবা আমার গৃহীনি কিংবা আমার অর্ধাঙ্গীনি, অনেক রকম বিশেষণ থাকলেও সেই পরিবার আর ওয়াইফেই কেনো সীমাবদ্ধ আমাদের পরিচিত করবার ধরণ?

চমৎকার, তবে তোর বৌয়ের কোনো নাম আছে না কি এখন ওয়াইফ আর মিসেস অমুকে পরিচয়ে জীবন চালাচ্ছে।
ওর নাম শান্তা-

ভালো লাগলো, এতক্ষণ পর সম্বোধনের কিছু পেলাম, ভাবী আপনি বলে বন্ধুর বৌয়ের সাথে আলাপন আমার পছন্দনীয় কাজ না,তাছাড়া এই পিচ্চি মেয়েকে আপনি কপনি করতে পারবো না, বরং আমার নিজের পছন্দ নাম ধরে আলাপচারিতা, এটাতে অনেক বেশী অন্তরঙ্গতা এবং আন্তরিকতা প্রকাশ পায় এমনটাই আমার বিশ্বাস, তবে এখনও মাঝে মাঝে এই ওয়াইফ এবং ভাবি আপনি পরিবেশে গিয়ে হোঁচট খাই।

তবে এদের সবাই একই মাপের সুশীল এমনও না,
আমার ওয়াইফ চাইছে বিকেলটা আমি ওর সাথে কাটাই- সাথে সাথে টিপ্পুনি উড়ে আসে, মামা ওয়াইফের জন্য তো সারারাত পড়েই আছে, নাকি এখনও ডাবল ইনিংস চালাইতাছো।

স্বামী স্ত্রীর ব্যক্তিগত যৌনজীবন সম্পর্কিত একান্ত বন্ধুদের আলোচনা কিংবা আগ্রহ কিংবা কৌতুক আমার কাছে অশোভন এবং কুরুচির পরিচায়ক মনে হয়, এড়িয়ে যাওয়ার উপায় নেই- আড্ডায় মাঝে মাঝেই এমন বিব্রতকর মুহূর্ত চলে আসে,

শীতের রাতে কি আর কাম সারতে ইচ্ছা করে, তারপরও দেখি বোয়ু ঠেলতেছে- ও নাকি গরম হইছে-

প্রাণপনে পরিপার্শ বিস্মৃত হতে চেষ্টা করি তবে এরপরের প্রশ্নবাণগুলো কানে বিদ্ধ হয়=
সবারই অন্যের বিছানা সম্পর্কে অহেতুক অশোভন কৌতুহল আছে- উঠতি বয়েসে পর্ণো ফ্লিমের মেটানো চাহিদা বাস্তবিক জীবনে এসে আর টৃপ্তি দেয় না, একটা প্রতিযোগিতামুলক মনোভাব চলেই আসে- আচ্ছা ও কি আমার চেয়ে বেশী সময় টিকে?

তাই নিজস্ব যৌন জীবনের সবিস্তার বর্ণনা কিংবা নিজের যৌনক্ষমতার বিস্তারিত বিবরণ, এমন বর্ণনা সমাজে অপ্রতুল না,দেহের আর দেহভঙ্গির বর্ণনা উপমার সাথে আড্ডার কয়েকজোড়া চকচকে চোখে ভেসে ওঠা দৃশ্যগুলো াপশোভন হলেও এটাই সামাজিক জীবন।
এখানে নারীর ঝুলে যাওয়া স্তন বিষয়ে সরস মন্তব্য উঁচু দরের কৌতুক বিবেচিত হয়, এমন কি সেদিন রাস্তায় শুনলাম একটা ছেলে বলছে- একটু খাওয়া দাওয়া কন্ট্রোল করো, বুক পেট তো এক হয়ে গেলো- নারী দেহ বর্ণনার যেকোনো স্থুলতা এখানে চরম কৌতুক বিবেচিত হয়- এবং একই সমাজে অনাবিল আগ্রহে নারীর মনঃস্তত্ব বুঝবার বাসনা আমার কাছে নিছক মর্ষকাম মনে হলেও এই নিজস্ব অনুভবের বাইরে আমি যাচ্ছি না কোনো মতেই।

এখানে আমাকে সামগ্রীক পুরুষসমাজের ভার কাঁধে তুলে নেওয়ার যন্ত্রনা থেকে অব্যহতি দেওয়া যায়ই, সমালোচিত গল্প ঐচ্ছিক কিংবা অনৈচ্ছিক ভাবে এই সমাজের প্রচলিত পুরুষের মর্ষকাম চরিতার্থ করতে পারে কি না এটা মুল বিবেচনা হতে পারে।
সাধারণ মানুষ যাদের অগোচরে তৃপ্ত করে বন্ধুর সাথে বন্ধুর স্ত্রীর সঙ্গমের নানা ভঙ্গি একই রকম অশোভনতার বেড়ে ওঠা আমাদের অধিকাংশ পুরুষের ভেতরেই এসব বোধ খেলা করে, নিজের বিস্তৃত এবং নান নারীদেহের স্বাদ পাওয়া অভিজ্ঞতা সম্পন্ন যৌন জীবনের উপমা টানতে যখন কেউ বলে চুদতে চুদতে আমার ধনে কড়া পড়ে গেছে সেটা বলতে পেরে সে যেমন আত্মপ্রসাদ অনুভব করে এমন কোনো এক আত্মপ্রসাদ হয়তো বোধ করে সুশীল সমাজ এই সাধারণ গল্প পড়ে।