৭১’এ পাকিস্তানের পরাজয়ের কারণ ব্যবচ্ছেদকালে শীর্ষ সেনাকর্মকর্তাদের লুচ্চামির অধ্যায়ের উন্মোচন

রাতঃস্মরণীয় এর ছবি
লিখেছেন রাতঃস্মরণীয় [অতিথি] (তারিখ: রবি, ২০/০২/২০১১ - ৬:০৮অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

(বিচারপতি হামদূর রহমান কমিশনের রিপোর্টের আংশিক অনুবাদ এবং প্রাসঙ্গিক কিছু তথ্যানুসন্ধান)।

৭১’এর শোচনীয় পরাজয় এবং ভারতীয় বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণের পর জনগণের চাপে তৎকালীন পাকিস্তানের সরকার পূর্বপাকিস্তান থেকে প্রত্যাগত এবং সুপ্রীম কোর্টের প্রধান বিচারপতি হামদূর রহমান কে প্রধান করে এই পরাজয়ের পিছনের রাজনৈতিক এবং সামরিক কারণগুলো বিশ্লেষণ করার জন্যে তিন সদস্যবিশিষ্ঠ এক কমিশন গঠন করে “হামদূর রহমান কমিশন” নাম দিয়ে। এই কমিশনের অন্য দুই সদস্য ছিলেন পাঞ্জাব হাই কোর্টের বিচারপতি শেখ আনওয়ার-উল-হক এবং সিন্ধ হাই কোর্টের বিচারপতি তোফায়েল আলি আবদুল রেহমান। এদের সাথে কমিশনের সামরিক উপদেষ্টা হিসেবে ছিলেন অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল আলতাফ কাদির। কমিশন দুই বছরের কিছু বেশি সময় নিয়ে রিপোর্ট তৈরী এবং দাখিল করলেও তৎকালীন এবং পরবর্তী সামরিক ও বেসামরিক সরকারগুলো স্পর্শকাতরতার বিচার করে এই রিপোর্ট লোকচক্ষুর আড়ালেই রেখে দেয়। এটা সহজেই অনুমেয় যে যার নির্দেশে এই কমিশন গঠিত হয় সেই জুলফিকার আলী ভুট্টোকেও এই কমিশন রিপোর্টে ছেড়ে কথা বলেনি। তাছাড়া কমিশন যাদের অপকর্ম এই রিপোর্টে তুলে ধরে তাদের মধ্যে ইয়াহিয়া খান ১৯৮০ সাল পর্যন্ত জীবিত ছিলেন এবং তার বশংবদ জেনারেলদের অধিকাংশই ২০০০ সাল পর্যন্ত জীবিত ছিলেন। সুতরাং এই দল মূলত তাদের প্রভাব খাটিয়ে রিপোর্টটাকে অপ্রকাশিতই রেখে দেয়। এই রিপোর্টের অংশবিশেষ ২০০০ সালের অগাষ্ট মাসে ইনডিয়া টুডে পত্রিকা ফাঁস করে দেয়। এবং এর পরের দিন পাকিস্তানের ডন পত্রিকাও একটা সাপ্লিমেন্ট ছেড়ে দেয়। ইনডিয়া টুডের রিপোর্ট প্রকাশের পরপরই বাংলাদেশ সরকার পাকিস্তানের কাছে এই রিপোর্টের কপি চেয়ে পাঠায়

রিপোর্ট জেনারেল আইয়ুব খানকে সরাসরি লুচ্চামি এবং মাতলামির অভিযোগে অভিযুক্ত করেছে। রিপোর্ট বলছে, “যেখানে শাস্তিপ্রদান আবশ্যক, দ্রুত এবং যথাযথ পদক্ষেপ কেবলমাত্র জাতির এই দাবী পুরনই করবে না বরঞ্চ ৭১ এ তাদের দ্বারা সংঘটিত সব লজ্জাষ্কর আচরণের পুনরাবৃত্তির বিপক্ষে ব্যবস্থাগ্রহণ নিশ্চিত করবে।”

কমিশনের রিকমেন্ডেশনগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলো-

নিম্নবর্ণিত সেনাকর্মকতাদের মুহাম্মদ আইউব খানের কাছ থেকে জোরপূর্বক ক্ষমতা কেড়ে নেওয়ার অভিযোগে প্রকাশ্য বিচারের সন্মূখীন করা হোক (প্রয়োজনে বলপ্রয়োগের মাধ্যমে)-

১। জেনারেল ইয়াহিয়া খান,
২। জেনারেল আবদুল হামিদ খান,
৩। লেফটেন্যান্ট জেনারেল এসজিএমএম পীরজাদা,
৪। লেফটেন্যান্ট জেনারেল গুল হাসান,
৫। মেজর জেনারেল উমর, এবং
৬। মেজর জেনারেল মিট্ঠা।

নিম্নবর্ণিত ৫ জন জেনারেল এবং ৩ জন প্রিগেডিয়ারকে ইচ্ছাকৃত কর্তব্যে গাফিলতির কারণে বিচারের সন্মূখীন করা হোক-

১। জেনারেল আমির আবদুল্লাহ খান নিয়াজী,
২। জেনারেল মোহাম্মদ জামশেদ,
৩। জেনারেল এম রহিম খান,
৪। জেনারেল ইরশাদ আহমেদ খান,
৫। জেনারেল বি এম মুস্তাফা,
৬। ব্রিগেডিয়ার জি এম বাকির সিদ্দিকী,
৭। ব্রিগেডিয়ার মোহাম্মদ হায়াত, এবং
৮। ব্রিগেডিয়ার আসলাম নিয়াজী।

জেনারেল নিয়াজির ছেলে আমানুল্লাহ নিয়াজী অবশ্য বিবিসির সাথে এক সাক্ষাৎকারে তার পিতার অপকর্মকে আড়াল করার জন্যে অন্যদের উপর দোষ চাপিয়ে কিছু মন্তব্য করেছেন। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো-

ক. পূর্ব পাকিস্তানে ত্রাসসৃষ্টিকারী সমস্ত কর্মকান্ডের হোতা জেনারেল রাওফরমান আলি এবং জেনারেল টিক্কা খান।
খ. পরবর্তীতে যখন জেনারেল নিয়াজী দায়িত্বে আসলেন, তখন লুঠতরাজের সাথে সংশ্লিষ্ঠ সকলের বিপক্ষে তিনি ‘কোর্ট-অব-ইনকোয়্যারি’ গঠন করলেন এবং তাদের পশ্চিম পাকিস্তানে ফেরত পাঠিয়ে দিলেন কোর্ট মার্শালে নেওয়ার জন্যে।
গ. কমিশনের রিপোর্টের একটা ছোট অংশ মাত্র প্রকাশিত হয়েছে এবং ভুট্টো সমস্ত রিপোর্টের তথ্যবিকৃতি ঘটিয়েছেন।
ঘ. কমিশনের টার্মস অব রেফারেন্স যারা তৈরী করেছিলেন সেই ভুট্টো, গুল হোসেন এবং টিক্কা খান, এই তিনজনই মূলত পাকিস্তান ভাঙার পিছনে দায়ী।
ঙ. আসলে এটা ছিলো ক্ষমতার লড়াই। বন্দুকের ক্ষমতার জোরেই ভু্ট্টো এবং ইয়াহিয়া খান শেখ মুজিবের সাথে ক্ষমতা বন্টন প্রত্যাখ্যান করেন। সুতরাং যতক্ষণ না আমরা রাষ্ট্রীয়পর্যায়ের বৃহদায়তনে সমস্যাটা দেখছি, আমরা সত্যি ঘটনাটা জানতে পারছি না।
চ. (ভাবানুবাদ) কমান্ডার হিসেবে আমার পিতা মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছেন। কিন্তু আপনি যখন ইনডিয়া বা শত্রুর বিপক্ষে লড়াই করবেন, তখন হত্যা অনিবার্য। ধর্ষণ ও অন্যান্য যে ধ্বংষযজ্ঞ হয়েছে তা বানোয়াট। আর যেটুকু হয়েছে তা বাঙালিরা নিজেরাই করেছে।
ছ. অডিও এ্যাড করতে পারলাম না ফরম্যাটে সাপোর্ট করছেনা বলে। তবে এখানে অডিওটা পাওয়া যাবে।

কমিশন ৭১এ পরাজয়ের পিছনে অন্যতম কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছে সেনাকর্মকর্তাদের পেশাগত অদক্ষতাকে, সেনা-নৌ-বিমানবাহিনীসমূহের মধ্যে সমন্বয়হীনতাকে এবং সেনা হাইকমান্ডের নৈতিক অবক্ষয়কে। সেখানে সামরিক পরিকল্পনা আশাহতকর ত্রুটিপূর্ণ ছিলো এবং ঢাকাকে প্রথম থেকেই শত্রুর আকষ্মিক এবং ব্যাপক আক্রমন থেকে মুক্ত রাখার কোনওরকম সমন্বিত প্রয়াস ছিলো না। সামরিক বৈশিষ্ট বিশ্লেষণ করতে গিয়ে কমিশন জ্যোষ্ঠ সেনাকর্মকর্তাদের দোষী সাব্যাস্ত করে বলেছেন যে প্রতিরক্ষা পরিকল্পনা প্রণয়নে এদের ‘কর্তব্যে চরম গাফিলতি’ এবং ‘প্রতিরক্ষাবুহ্য ফেলে এদের কেউ কেউ লজ্জাজনকভাবে পালিয়ে যাওয়ার দোষে দোষী, যেখানে তাদের প্রতিরোধ করার দায়িত্ব ছিলো’। পূর্ব পাকিস্তানের সামরিক প্রধান জেনারেল নিয়াজী এবং তার উপাধিনায়ক তাদের স্বভাবজাত গাফিলতির জন্যে নিদারূনভাবে নিন্দিত হয়েছেন।

এবার একটু ফিরে যাই শিরোনামে। রিপোর্টের সবথেকে স্পর্শকাতর অংশ ছিলো জ্যোষ্ঠ সামরিক কর্মকর্তাদের নৈতিক অবক্ষয়। যখন পাকিস্তান ভাঙনের দ্বারপ্রান্তে, “অভিজাত সেনারা তখন লুচ্চামিতে ব্যাস্ত”। রিপোর্ট খুঁজে বের করেছে যে ১৯৫৮ সালের আইয়ুব খানের প্রবর্তিত সামরিক আইনের সময়ের বিভিন্ন দায়িত্ব পালনকালেই এদের এই নৈতিক অবক্ষয়ের ব্যাপারটা দেখা যায়। পরে ১৯৬৯ সালের ইয়াহিয়া খানের সামরিক শাসনের আমলে এসে এদের সেই বদভ্যাস আবারও মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে এবং আরও ঘনীভূত হয়। জমি, বাড়িঘর ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিপুল অবৈধ সম্পদ অধিগ্রহণ এবং অনিয়ন্ত্রিত ও অনৈতক জীবনযাপনের যে অভিযোগ জ্যোষ্ঠ সেনাকর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে শোনা যেতো, কমিশন তারও সত্যতা খুজে পায়। এই বিষয়গুলো তাদের পেশাদারী দক্ষতা এবং নেতৃত্বের গুণাবলীকে ব্যপকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ করেছিলো।

রিপোর্ট জেনারেল ইয়াহিয়াকে একজন লুচ্চা এবং মাতাল উল্লেখ করে ২০০ জনেরও বেশি মহিলার নাম উল্লেখ করেছে যারা নিয়মিত জেনারেল ইয়াহিয়ার সাথে মেলামেশা করতেন। তার বিরুদ্ধে সবথেকে ক্ষতিকর অভিযোগটা ছিলো যে তিনি অত্যন্ত অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন করেন এবং তার অধিকাংশ সময় মদ এবং নারীর জন্যে উৎসর্গীকৃত ছিলো। যুদ্ধের উত্তেজনাকর দিনগুলোতেও তিনি কয়েকবার রাষ্ট্রপতির কার্যালয় এবং সামরিক সদরদপ্তরে যাওয়া বন্ধ করে দেন। এমনকি এই যুদ্ধের দিনগুলোতেও তার অধিকাংশ সময়জুড়ে থাকতো মদ এবং নারী।

তার কাছে যেসব রমনীকূল নিয়মিত যাতায়ত করতেন, তাদের মধ্যে বিশিষ্ঠ ছিলেন পূর্ব পাকিস্তানের পুলিশ প্রধানের স্ত্রী বেগম শামীম, জুনাগড়ের বেগম, জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী নূর জাহান; এবং ঢাকার অভিজাত সমাজের রমণীকূলের মধ্যে উল্লেযোগ্য লিলি খান ও লায়লা মোজাম্মেল। ১৯৭১এর নভেম্বর যখন পরিস্থিতি গুরুতর মোড় নিতে শুরু করেছে, এসময়ে তিনি লাহোরের গভর্ণর হাউসে তিনদিন কাটিয়ে আসেন নূর জাহানের নিবিড় সান্যিধ্যে। নূর জাহান সেখানে দিনে ২ থেকে ৩ বার তার সাথে দেখা করে যেতেন এবং প্রতিদিন রাত ৮টার দিকে আবার সেখানে যেতেন। নিচে দেখেন নূর জাহানের সাথে জেনারেল ইয়াহিয়া খানের দুটো ছবি আর অন্য এক ললনার সাথে তার আরেকটা অন্তরঙ্গ ছবি

জেনারেল ইয়াহিয়ার ডেপুটি চিফ জেনারেল হামিদ সম্পর্কে কমিশন বলেছে, “এটা জাতির জন্যে চরম দুঃখজনক যে তিনি জেনালের ইয়াহিয়ার লুচ্চামি অভিযানের নিয়মিত সঙ্গী ছিলেন”। তারা দুজনে নিয়মিত জেনারেল ইয়াহিয়ার রাওয়ালপিন্ডির হার্লে ষ্ট্রিটের বাড়িতে গোপনে ঢুকে যেতেন তাদের বান্ধবীদের সাথে মিলিত হওয়ার জন্যে।

পূর্ব পাকিস্তানের সেনাপ্রধান জেনারেল নিয়াজী সম্পর্কে কমিশন বলেছে যে তিনি শিয়ালকোট এবং লাহোরে কর্মরত থাকাকালীন সময়ে অপরাধী এবং চোরাকারবারীদের কাছে থেকে লাখ লাখ রূপী কামিয়েছিলেন তাদের কেসগুলো মার্শাল ল কোর্ট থেকে নিষ্পত্তি করে দেওয়ার বিনিময়ে। তিনি লাহোরের নারী সাঈদা বোখারীর সাথে অত্যন্ত নিবিড়ভাবে সংশ্লিষ্ঠ ছিলেন যিনি গুলবাগে সিনেরিটা হোম নাম দিয়ে একটা ব্রথেল পরিচালনা করতেন। তার এই ব্রথেলে আলাদা আলাদা কামরায় সুন্দরী যুবতীরা থাকতেন। আরও একজন নারী, শিয়ালকোটের শামিম ফিরদৌস, যিনিও একই ধরনের ব্যবসা করতেন, তিনিও জেনারেল নিয়াজির ঘনিষ্ঠজন ছিলেন। কমিশন বলেছে যে সাঈদা নিয়মিত পূর্ব পাকিস্তানে এসেও নিয়াজীর সাথে মিলিত হতেন। এটা শহরের সবাই জানতো যে নিয়াজী গভীর রাতে খুবই উচ্ছল এবং মজাদার সময় কাটাতেন। তিনি ধানমন্ডির কিছু বাঙলোতে নিয়মিত যাতায়ত করতেন। এমনকি রমজান মাসেও জেনারেল নিয়াজী এবং তার অন্যান্য কমান্ডারদের জন্যে নৃত্যশিল্পী আনা হতো। “নিয়াজী ওইসব নৃত্যশিল্পীদের আস্তানায় যেতেন তার তিন তারকা খচিত এবং পতাকাবিশিষ্ঠ গাড়িতে এবং সমস্ত সামরিক সাজপোষাক সহকারে”, কমিশন বলেছে।

পাদটীকা

  • ১. অন্য একটা জিনিসের রেফারেন্স খুঁজতে যেয়ে পাকিস্তানী ডিফেন্স ফোরাম নামে একটা ওয়েবপেজ থেকে এই বিষয়ক একটা ব্লগপোষ্ট পেলাম। বেশ ইন্টারেষ্টিং। আদনান রেহমাত Womanising by Pakistan’s top military officers played its part in the defeat of 1971 এই শিরোনামে পোষ্টটা দিয়েছেন। হামদূর রহমান কমিশনের রিপোর্টের অংশবিশেষ ছাড়া ছাড়া পড়েছিলাম বিভিন্ন সময়ে। এখম মনে হচ্ছে যে পুরো রিপোর্টটা সময় করে পড়া দরকার। কি রহস্য লুকিয়ে আছে তার ভিতরে!
ছবি: 
02/08/2010 - 12:57am
02/08/2010 - 12:57am
02/08/2010 - 12:57am

মন্তব্য

রোমেল চৌধুরী এর ছবি

রাতঃস্মরণীয় ভাই,
আমাদের দেশেও খুঁজে পাবে এমন রতন, অনন্য সে, নেই কোন আত্মার দহন।

------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।

রাতঃস্মরণীয় এর ছবি

এমন রতন মেলে নাহি অতি দূরে,
এ বঙ্গে জন্মিছে সে যে নিবাস রংপুরে।
জলপাই উর্দীতে মোড়া বদন তাহারি
সতত হরিছে বস্ত্র শত দুষ্ট নারি।
যগদকুখাতি তার বহুগামিতা,
কথিত, তাহার অতি প্রীতি ভায়াগ্রায়।
বৃদ্ধস্ব ভার্যা প্রিত তরুনি জায়ায়
পর বধু গ্রাসে বৃদ্ধ চতুর মায়ায়।
এমনই বঙ্গরত্ন নাম এরশাদ,
বিচলিতে না'রে তারে শত অপবাদ।।

রোমেল ভাই-

ক্ষমিও অগ্রজ মোরে রংপুর নামোল্লেখে
ছন্দমিলনিমিত্যে উহা আসিয়াছে ঠেকে।
যদ্যপি এর্শাদ জন্মে হয় নামপতন,
তোমা যথা মহাজনে কলঙ্ক মোচন।।

------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।

রোমেল চৌধুরী এর ছবি

নিন্দ কেন বৎস তাঁহার গুণ বড় অতি
কামের চৌষট্টি কলায় সেই মহামতি
বাৎস্যায়নে তুচ্ছ করি ইতিহাস গড়ে
নিন্দুকের বাক্যবাণে বুড়া গরু মরে?
নিন্দা অমঙ্গলের কথা বিষের সমান
রাতঃস্মরণীয় ভনে, শোনে মোর প্রাণ।

------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

লেখাটা এখনো পড়িনি (সময়াভাব), তবে শিরোনাম পড়ে যে প্রশ্নটি মনে উদয় হলো তা হচ্ছে, পাকিস্তানের পরাজয়ের কারণ অনুসন্ধান করে আমাদের কী লাভ?

আপডেট:
লেখা পড়ে বুঝলাম, শীর্ষ সেনা কর্মকর্তাদের নৈতিক স্খলনের বিষয়টি আপনি তুলে ধরতে চেয়েছেন।

সাইদ এর ছবি

প্রকৃতিপ্রেমিক-এর সাথে একমত। আমরা কেন ওদের পরাজয় নিয়ে ভাবিত হব? এটা করে কি আমরা আমাদের মুক্তিযুদ্ধকে ছোট করছিনা?
আমার ছোট মাথায় এটাই এল।

রাতঃস্মরণীয় এর ছবি

প্রকৃতিপ্রেমিক ও সাঈদ ভাতৃদ্বয়, এই অনুসন্ধানটা আমাদের করা হলে ভাবনার বিশেষ কিছু ছিলোনা। অনুসন্ধানটা করেছে পাকিস্তানিরা, এবং এটাই ভাবনার যে তারা আমাদের সংগ্রামের মাধ্যমে অর্জিত স্বাধীনতাকে কতিপয় জেনারেলের লুচ্চামির অপকর্মের ফসল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চায়। যদি ওদের এই অনুসন্ধানুৎসারিত 'গল্প' গুলো আমরা না জানি, তাহলে তো আমরা স্বাধীনতাপরবর্তীকালের আরেকটা ষড়যন্ত্রের অধ্যায় থেকে আঁধারেই থেকে যাবো। আর আমার এই পোষ্টের আরেকটা উদ্দেশ্য হলো কেউ যদি এই পোষ্টটা পড়ে মুল রিপোর্টটা পড়তে আগ্রহ বোধ করেন। ধন্যবাদ।

------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।

রোমেল চৌধুরী এর ছবি

রাতঃস্মরণীয় ভাই,
বাংলাদেশের অভ্যুদয় যদি একটি সুদীর্ঘ রাজনৈতিক সংগ্রামের ফসল বলে কবুল করি, তবে তো একথা কবুল করতেই হয় প্রতিপক্ষের ভুল রাজনৈতিক দর্শনের অনিবার্য পরিনতি সেটা। আমরা কি জাতিসংঘের সভায় ভুট্টোর উম্মাতাল আচরণ দেখিনি? আমরা কি জিন্নাহ-র ঘোষণায় উর্দুর গিলোটিনে বাংলার বলিদান দেখিনি? হামদুর রহমান কমিশন রিপোর্টে সেসবের প্রতিফলন কিম্বা পটভূমি বিশ্লেষণ নিবন্ধিত কিনা জানিনা। যদি থেকে থাকে তাহলে সুপারিশে তার প্রতিফলন ঘটেছে কি? বড় জানতে ইচ্ছে করে।

------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।

রাতঃস্মরণীয় এর ছবি

রোমেল ভাই, আপনার প্রশ্নের উত্তর দিতে গেলে আরও একটু পড়তে হবে। যতদুর মনে হচ্ছে রিপোর্টে সেরকম কিছু নেই। তারা তাদের ঐতিহাসিক কোনও কিছুকেই ভুল বলে মনে করেনা, সুতরাং ৭১কে ভুলের কোনও কনসিকোয়েন্স বলে মনে করে কি না তা আর একটু দেখতে হবে সময় করে।

------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।

রাতঃস্মরণীয় এর ছবি

আমরা কি জিন্নাহ-র ঘোষণায় উর্দুর গিলোটিনে বাংলার বলিদান দেখিনি?

একুশের সকালে ডেপুটি হাইকমিশনার সাহেব বলছিলেন যে জিন্নার কবরের এপিটাফ যে তিনটা ভাষায় লেখা তার মধ্যে বাংলাও আছে।

তুমি যাওগো কোন বঙ্গে,
তোমার কপাল যাবে সঙ্গে।।

------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।

হিমু এর ছবি

এই কমিশনের রিপোর্ট আসলে মারা খাওয়া গোয়ায় ফাটা পাখা দিয়ে বাতাসের চেষ্টা মাত্র। যেন নিয়াজি পাকিস্তানী মাগীদের না চুদে রাতের বেলা কামানের পাশে ছালা বিছিয়ে শুয়ে থাকলে এই যুদ্ধে খুব জিততে পারতো।

রোমেল চৌধুরী এর ছবি

সহমত। 'Righteousness of Cause' ছাড়া যুদ্ধজয় অসম্ভব। 'Cause' ছাড়া ক্ষণিকের জন্য বিচ্ছিন্ন বিজয় হয়তো হতে পারে কিন্তু কখনোই তা দীর্ঘায়ু হয় না। ওদের আর যাই থাকুক যুদ্ধের সপক্ষে কোন 'Righteousness of Cause' ছিল না।

------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।

রাতঃস্মরণীয় এর ছবি

হিমু এবং রোমেল ভাতৃদয়ের সাথে সহমত।

এই কমিশনের রিপোর্ট আসলে মারা খাওয়া গোয়ায় ফাটা পাখা দিয়ে বাতাসের চেষ্টা মাত্র।

তবে হিমু, আমার মনে হয়েছে কি, পাখাটা ফাটা ছিলোনা, ওটা পাকিস্তানের বিখ্যাত পাক, হাবিব বা ন্যাশনাল ব্রান্ডের প্যাডেস্টাল ফ্যান ছিলো। হাওয়া বেশি পড়ে গেছিলো। লুঙ্গি পরে প্যাডেস্টাল ফানের দিকে পা দিয়ে শুলে যা হওয়ার কথা তা'ই হয়েছে। বাতাসে লুঙ্গি উড়ায় দিয়ে জিনিসপত্র বের করে দিয়েছে। এই রিপোর্টের ব্যাপারটা অনেকটা যেমন খুলনার ভাষায় বলে, "কাশি দিয়ে পাদ ঢাকা"।

------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।

অতিথি লেখক এর ছবি

আমাদের এরশাদ কাগু এদেরই উত্তরপুরুষ না!!!

ঐ রিপোর্টটা পুরোতা পাওয়া যায় না কোথাও?

--- থাবা বাবা!

রাতঃস্মরণীয় এর ছবি

ওইযে উপরে লিখেছিলাম,

এমন রতন মেলে নাহি অতি দূরে,
এ বঙ্গে জন্মিছে সে যে নিবাস রংপুরে।
জলপাই উর্দীতে মোড়া বদন তাহারি
সতত হরিছে বস্ত্র শত দুষ্ট নারি।
যগদকুখাতি তার বহুগামিতায়,
কথিত, তাহার অতি প্রীতি ভায়াগ্রায়।
বৃদ্ধস্ব ভার্যা প্রিত তরুনি জায়ায়
পর বধু গ্রাসে বৃদ্ধ চতুর মায়ায়।
এমনই বঙ্গরত্ন নাম এরশাদ,
বিচলিতে না'রে তারে শত অপবাদ।।

গোটা রিপোর্টটা এখানে পাবেন থাবাদা।

------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।