আমি আমার ৬ এসপিইউ কমাণ্ডো নিয়ে তিনটে ল্যাণ্ড ক্রুজার নিয়ে একাই রওয়ানা হলাম। অফিসের অন্যেরা তখনও লাঞ্চ সেরে ফেরেনি। আমার বাসা থেকে ইউএন কম্পাউণ্ড ৪ কিলোমিটারের মতো হবে। সেখানে থেকে সেটলমেন্টটা আরও প্রায় ২ কিলোমিটার। ওদের দলে ওরা ৫ জন। একজন সোমালী, বাকী চারজন বিদেশী। ওদের অফিসের সামনে মিলিত হয়ে একসাথে রওয়ানা করলাম। ওদের সাথে ওদের ৪ জন কমাণ্ডো।
এই সেটলমেন্টগুলোর ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব থাকে মূলত মিউনিসিপ্যালিটির উপর। সম্প্রতি কি যেনো একটা ঝামেলার কারণে গ্যালকাইওর মেয়র সাহেব এই সেটলমেন্টের ম্যানেজমেন্ট কমিটিকে ভেঙে দিয়েছে। তাই বর্তমানে কমিটি ম্যানেজমেন্টশুন্য। আমি ইউএনএর বন্ধুদের বিষয়টা বললে তারা জানালো যে তাদের সাথে কারো কথা হয়েছে। তারাই মূলত আমাদের সহযোগিতা করবে সেখানে।
৭টা ল্যাণ্ড ক্রুজার এক সারিতে ঢুকলো সেটলমেন্টে। ঠিক হলো যে ওখানে একটা স্কুল আছে সেখানে আমরা বসে কথা বলবো। দুজন নেতার দেখা পেলাম আমরা সেখানে। একজন বৃদ্ধ, ইংরেজি জানেনা। অন্যজন যুবক, ফ্লুয়েন্ট ইংরেজি বলে। যেহেতু লোকজন আসতে একটু সময় লাগছে, আমরা ঠিক করলাম যে আশেপাশের কয়েকটা লাইটিং প্যানেল ঘুরে দেখি। আমাদের সাথে থাকলো যুবক। একটা প্যানেল দেখে, দুটো দেখে যখন তৃতীয়টার কাছাকাছি গিয়েছি, ভাঙাস্বরে এক লোকের চিৎকার কানে আসলো। চোখের পলকে ঢ্যাঙা এক লোক হাতে একে-৪৭ নিয়ে আমাদের সামনে উদয় হলো, নাম আবদুল্লাহি। পরনে লুঙ্গি এবং একটা হাফ হাতার শার্ট, পায়ে একজোড়া চপ্পল। চোখদুটো যেনো তার কোঠর থেকে ঠিকরে বেরিয়ে যাবে। সমানে চিল্লিয়ে যাচ্ছে সোমালি ভাষায়। আমাদের সাথের সোমালি এক নারী ছাড়াও অন্য একজন বন্ধু আছে যে কেনিয়ান হলেও সোমালি ব্যাকগ্রাউণ্ডের এবং ফ্লুয়েন্ট সোমালি ভাষায় কথা বলে। ওরা দুজন তাকে ঠাণ্ডা হতে অনুরোধ করলো। একই সাথে আমাদের কমাণ্ডোরা দূর থেকে জটলাটাকে একটা বৃত্তের মতো করে ঘিরে ওদের একে-৪৭ কাক করে ফেললো। তখনই লোকটা যেনো আরও ক্ষেপে উঠলো। একেকবার আমাদের ৬ জনের একেক জনের উপর তার রাইফেলের নল ধরতে লাগলো। সাথে সাথে কমাণ্ডোদের উদ্যেশ্যে সামনে না বাড়ার নির্দেশ দিতে লাগলো। বলতে লাগলো যে যদি কোনও কমাণ্ডো সামনে বাড়ে তবে একজন বিদেশীও জ্যান্ত ফিরবে না। যতটুকু ভয় পেয়েছি তার থেকেও আমার বেশি মেজাজ খারাপ হচ্ছে। আমি বন্ধুকে বললাম যে তার ক্ষোভের কারণ জানতে চাও।
বন্ধু তার সাথে কথা বলে সাথে সাথে আমাদের অনুবাদ করে দিতে লাগলো। তার প্রথম অভিযোগ যে আমরা তার বিনা অনুমতিতে তার সেটলমেন্টে ঢুকেছি। দ্বিতীয় অভিযোগ, আমরা সম্পূর্ণ অবৈধ, স্বঘোষিত একটা কমিটির সাথে মিটিং ডেকেছি। আমরা এই অপরাধ কেনো করেছি তার সদুত্তর না দিয়ে এখান থেকে বেরোতে পারবো না। সদুত্তর না দিতে পারলে সে একজন একজন করে গুলি করে মারবে। কোনও এসপিইউ কমাণ্ডো কাউকে বাঁচাতে পারবে না। বন্ধু অত্যন্ত ঠাণ্ডা মাথায় তাকে বোঝাতে শুরু করলো যে আমরা আসলেই কোনও মিটিং করতে আসিনি। আমরা এসেছি লাইটগুলো পরিদর্শণ করতে। এসে হঠাৎ এই লোকগুলোর সাথে দেখা হয়ে গেছে। এবং তারা দাবী করেনি যে তারা কমিটি। আমরা একটু এদিক ওদিক তাকাতাকি করতে লাগলে আবদুল্লহি আবার একটা ধমক দিয়ে সবাইকে তার দিকে তাকিয়ে কথা বলতে বললো। আমি বেপরোয়া ভাবে একটা সিগারেট জ্বালালাম। চোখ থেকে রেব্যানটা খুলে হাতে নিয়ে দেখতে থাকলাম যে আশেপাশে বা পিছলে কি ঘটছে। দেখতে পেলাম যে আমাদের কমাণ্ডোরা একজন দুজন করে আস্তে আস্তে সামনের দিকে এগিয়ে এসে বৃত্তটা ছোট করছে। আবদুল্লাহি সমানে কথা বলে চলছে। আমি বুঝে নিলাম যে বিপদ আর তেমন নেই। প্রথমে তার ভিতরে যে উত্তেজনা ছিলো তা আর নেই। সে এখন অভিযোগের বদলে অনুযোগ করছে যে তাকে বরখাস্ত করা হলেও নতুন কোনও চেয়ারম্যান নিয়োগ দেওয়া হয়নি। এই ফাঁকে কেউ কেউ চেয়ারম্যান সাজার চেষ্টা করছে। এবার সে আমাদের সাথের সেই যুবকের দিকে ইঙ্গিত করে দেখালো।
আচানক এমন একটা ঘটনা ঘটে গেলো যা ঘটবে বলে ভাবতেই পারিনি। নিরস্ত্র যুবক দড়াম করে আবদুল্লাহির মুখে এক ঘুষি বসিয়ে দিলো। আচমকা ঘুষি খেয়ে কাঁত হতেই আবদুল্লাহির ঘাড় থেকে রাইফেলের সোলডার স্ট্র্যাপটা খুলে পড়ে গেলো। যুবক বসালো আরেক ঘুষি। আবদুল্লাহি ঘুষির ঠেলা সামলাতে না সামলাতেই যুবক ওকে জাপটে ধরে মাটিতে ফেলে দিলো। তখনও ওর হাতে রাইফেলটা ধরা। কিন্তু ঘুষির পর ঘুষি খেয়ে রিফ্লেক্স একশন কাজ করার আগেই ভূপাতিত। হাতের রাইফেল হাতেই ধরা থাকলো। মুহুর্তের মধ্যে আমাদের কমাণ্ডোরা এসে আবদুল্লাহির উপর ওদের এক-৪৭ গুলোর ব্যারেল চেপে ধরলো। আর একই সাথে ৭ টা ল্যাণ্ড ক্রুজারও গোটা জায়গাটা ঘিরে ফেললো। একজন কমাণ্ডো আবদুল্লাহির হাত থেকে হাতিয়ারটা কেড়ে নিলো। তখনও যুবক ওকে ঠেসে ধরে আছে। এসপিইউ কমাণ্ডোদের কমাণ্ডার আমাদের দ্রুত গাড়িতে উঠে এলাকা ছেড়ে যেতে বললো। আমরা গাড়িতে উঠতেই ড্রাইভার গাড়ি ছেড়ে দিয়ে দ্রুত ভাগতে লাগলো। বেশ কিছুদুর গিয়ে তারপর আমরা দাঁড়ালাম। কয়েক মিনিটের মধ্যে কমাণ্ডোরাও এসে আমাদের সাথে যোগ দিলো। তারপর আমরা ফিরে চললাম বাসার উদ্দেশ্যে।
ওই রাতেই আবদুল্লাহি এ্যারেস্ট হয়ে গেলো। মাসখানেক জেলে থেকে তারপর ছাড়া পেলো। এই ঘটনার মাসতিনেক পর আমি একদিন ওই সেটলমেন্টে গিয়েছি আমাদের রিজিওনাল ডিরেক্টরকে নিয়ে। সেটলমেন্ট কমিটি শুনলাম একটা সংক্ষিপ্ত মিটিংএর আয়োজন করেছে। আশ্চর্য হতেও ভূলে গেলাম যখন দেখলাম সেই আবদুল্লাহিই সেটলমেন্টের চেয়ারম্যান হয়েছে আবার। হাসিমুখে এগিয়ে এসে আমাদের অভ্যার্থনা জানিয়ে ভিতরে নিয়ে গিয়ে মিটিংস্থলে বসালো। জানিনা ওর সেই তিনমাস আগের ঘটনা মনে পড়ছিলো কিনা!
মন্তব্য
একদম শুরুতেই ছবি দিয়েন না প্লিজ। নীড়পাতায় হঠাৎ একটা ব্যক্তিগত ছবি বেশ বেখাপ্পা লাগে।
সমস্যা নেই, পাল্টায়ে দিচ্ছি।
------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।
ওই জায়গায় বসে সিগারেট ইত্যাদি - আপনার সাহসও তো ভালোই দেখা যায়!
সাহস কতটুকু আছে তা জানিনা তবে মেজাজ খারাপ হলে একটা বিড়ি ধরানো চা'ই চাই।
পড়ার এবং মন্তব্যের জন্যে ধন্যবাদ।
------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।
হুমম, বেশ অ্যাকশন!
আরো বড়ো এ্যাকশানের গল্প আছে। পরে আস্তে আস্তে বলবো। অপেক্ষায় থাকেন কৌস্তুভ ভাই।
ধন্যবাদ।
------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।
আপনি তো সাংঘাতিক লোক মশাই ! মজার মজার ভ্রমণকাহিনীর ফাঁকে ফাঁকে টুক করে একেকটা বোমা ফাটান আর তারপর 'আরো বড়ো গল্প আছে...' বলে সুতো ছেড়ে আমাদের ঝুলিয়ে রাখেন !
****************************************
কামিং সুন ব্রাদার। প্লিজ স্টে উইথ .............................!
অট. মিশরে যাওয়ার ইচ্ছেটা মরছেনা। কিন্তু টাইম পাচ্ছিনা। ধুর্বাল, ভাল্লাগেনা কিচ্ছু যতক্ষণ না লাইভ বেলিড্যান্স দেখছি।
------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।
আপনার অভিজ্ঞতার ঝুলি বেশ ভরপুর।
------------------------
[ওয়েবসাইট] [ফেইসবুক] [ফ্লিকার ]
ঝুলি এখনও ভরপুর হয়েছে বলা যাচ্ছেনা। ঝুলির তলার সেলাই মনে হয় খুলে গেছে। এতো ভরি তাও ঝুলি আমার ভরেনা।
ধন্যবাদ আপনাকে।
------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।
জীবনের ঝুকি নিয়ে মানবতার সেবায় কাউকে দেখলে খুব ভালো লাগে। ধন্যবাদ অভিজ্ঞতা শেয়ার করার জন্য।
আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ আপা।
------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।
সিনেমা সিনেমা...
------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।
আপনার সাহসের তুলনা নাই আসাদ ভাই। আল্লাহকে ধন্যবাদা জানান যে এখনও বেচে আছেন!
Shireen
আপনাকে ধন্যবাদ। আল্লাহ আমাদের রক্ষাকর্তা।
------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।
রক্ষাকর্তা তাহলে লাদেনকে রক্ষা করলেন না কেনো?
লাদেন সম্ভবত আল্লাহর গুডবুকে জায়গা পায়নি, তাই।
------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।
আচ্ছা আপনি গুডবুকে জায়গা পেয়েছেন তাহলে? কিভাবে জানলেন? এই গুডবুকে প্লট বরাদ্দ পেতে কি করতে হবে?
যেহেতু এখনও বেঁচেবর্তে আছি, তাই এমনটা ধারণা হয়েছে। তবে আল্লাহর তরফ থেকে এখনও কোনও কনফার্মেশন পাইনি। আর যেহেতু নিজের প্লটের কাগজপত্র এখনও হাতে পাইনি, তাই এখনই প্লট বুকিংএর সিক্রেট ফাঁস করবো না। অপেক্ষা করেন।
------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।
হে হে হে
মুর্শেদ, তুমি আল্লা মিয়ার উপর এতো বিলা ক্যান? বিলা হইলে হমু আমি। ময়নারে পাঠাইছিলাম শালির তালাশ নিতে। হাবশী সুদানী হালায় কিনা ফিরা আইলো খালি হাতে!
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
আমি কিন্তু ভয় পাইছি।
সাহস-ভীতি, এইসব নিয়েই তো আমাদের চলতে হয় মানিক ভাই। ধন্যবাদ আপনাকে।
------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।
নতুন মন্তব্য করুন