এনজিওগুলো কি করছে? আজকের (১০ জুলাই ২০১১) দৈনিক যুগান্তরের উসম্পাদকীয়তে লেখক মীর আবদুল আলীমের মহাবচন পড়লাম। তিনি তার গোটা লেখায় জনৈক মোনায়েম সরকারের আগের একটি লেখার (এনজিও সাম্রাজ্য: স্বেচ্ছাসেবা না আত্মসেবা? দৈনিক যুগান্তর ৯ জুন ২০১১) প্রসঙ্গ টেনে এনেছেন। তার এই মোনায়েমুক্তি আমাকে মনে করিয়ে দিলো সেই দুই গ্রাম্য টাউট শালিসবাজের কথা। “তুই আমারে হাজীসাহেব কয়ে ডাকবি আর আমি তোরে মওলানা সাহেব কয়ে ডাকবো।”
আমি ব্যাক্তিগতভাবে লেখক আলীম সাহেব বা উক্ত মোনায়েম সরকার সাহেব, দুজনের কারও সম্পর্কেই কোনও ধারণা রাখি না। আমি বিশিষ্ঠ ‘আলীম’ বলতে প্রয়াত সংগীতশিল্পী আবদুল আলীমকেই জানি। আর বিশিষ্ঠ ‘মোনায়েম’ বলতে কনস্ট্রাকশন টাইকুন আবদুল মোনায়েমের নাম যত্রতত্র দেখি। শফিক রেহমান মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সাথে তার কাউন্টারপার্ট সৈয়দ আশরাফের তুলনা করতে গিয়ে বলেছিন, পড়াশোনায় আসক্তি আর মদ্যপানে অনাসক্তি ..............। আমি দুটোতেই অনাসক্ত, তাই যারা লেখালেখি করেন তাদের সম্পর্কে তেমন ধারণা পোষন করিনা। তবে একটু আশ্চর্যই হতে হয় যখন জাতীয় দৈনিকের উপসম্পাদকীয়তে এরকম একটা পক্ষপাতদূষ্ট লেখা প্রকাশ হয়।
এখানে লেখকদ্বয়ের এই বিষয়ের উপর লেখার মোটিফ পরিষ্কার না। দেশে এখন যে সংঘাতময় রাজনৈতিক অবস্থা বিরাজমান, শেয়ারবাজারের মন্দা, সামাজিক নিরাপত্তাহীনতা, এইসব বিষয় বাদ দিয়ে তারা দুজন এনজিওর পিছনে লাগলেন কেনো, তা অপরিষ্কার। এছাড়া তথ্যউপাত্তবিহীন লেখাদুটোকে আমি কোনও অবস্থাতেই উন্নতমানের লেখা বলতে রাজি না। তারা যে এ্যাপ্রোচে লিখেছেন তা সম্পূর্ণই আবেগনিঃসৃত এবং যে কেউই এধরণের লেখা তৈরী করতে পারে। তথ্যউপাত্তের অনুপস্থিতির পাশাপাশি লেখাদুটোতে কোনওরকম কোন বিশ্লেষণ নেই। অত্যন্ত স্থুল কিছু বক্তব্য দিয়ে তারা সাজিয়েছেন তাদের লেখা।
মি. মোনায়েম লেখার প্রথম অর্ধেকে কটাক্ষ করেছেন এনজিওদের বহুতলবিশিষ্ঠ ভবনগুলো নিয়ে, ফার্নিশার্স নিয়ে, গাড়ি নিয়ে, এসি নিয়ে, বিদেশ ভ্রমণ নিয়ে। ফন্টের মিসম্যাচের কারণে কপি করতে পারলাম না। তাছাড়া টাইপ করতে গেলে অনেক সময় লাগবে। লেখার নিচে তার পরিচিতিতে লেখা আছে তিনি রাজনীতিবিদ এবং কলামিস্ট। তার এই কটাক্ষগুলো আমাদের প্রতিনিয়ত দেখা রাজনৈতিক আচারের বাইরের কিছু মনে হয়নি যেখানে যুক্তিপূর্ণ সংলাপ থেকে মুখোরোচক কথাবার্তাই বেশি আদৃত। তার এই বক্তব্য খণ্ডানোর কিছু নেই। একটা ইন্সটিটিউশন চালাতে গেলে ফ্যাসিলিটিজ প্রয়োজন। এবং যেসব দাতাদের অর্থায়নে এইসব ফ্যাসিলিটিজ কেনা বা ভাড়া নেওয়া হয়, তা দাতাদের জানা থাকে। আর কমফোর্ট মানুষের কাজের মানোন্নয়ণের জন্যে আবশ্যক একটি বিষয়।
মি. আলীম এনজিও কর্মকর্তাদের বেতন ভাতা, গাড়ি, ইত্যাদি প্রসঙ্গে কটাক্ষ করেছেন যে, এনজিও না করলে তারা কতোটা বিলাসী জীবনযাপন করতে পারতেন? তিনি কি বলতে চাচ্ছেন যে বাংলাদেশে কেবলমাত্র এনজিও নির্বাহীরা এইসব সুবিধা ভোগ করে থাকন, অন্য সেক্টরের মানুষ এগুলো পায় না! চোখ বুজে ঘুমালে হবে না জনাব। কর্পোরেট সেক্টরের নির্বাহীরা এনজিও সেক্টর থেকে অনেক বেশি সুযোগসুবিধা ভোগ করে থাকেন। সরকারের আমলাতন্ত্রের শীর্ষনির্বাহীদের পয়সার অঙ্কে বেতন কম হলেও জীবনাচার কারও চেয়ে কম বিলাসবহুল না। সমালোচনার তীর নিক্ষেপ করতে চাইলে তা পক্ষপাতবিহীনভাবে করবেন, প্লিজ।
লেখকদ্বয় ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রমকে ধুয়ে ছাড়তে চেয়েছেন। কিন্তু তাদের বক্তব্যকে মাঠঘনিষ্ঠ মনে হলো না। তারা ক্ষুদ্রঋণের জালে আবদ্ধ হওয়া মানুষের উদাহরণ টেনেছেন, উদাহরণ দিয়েছেন এনজিওগুলোর ঋণ আদায়ের নামে লুঠতরাজমূলক কর্মকাণ্ডের। উল্লেখ করতে ছাড়েননি যে ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রমের অভীষ্ঠ জনগোষ্ঠি হচ্ছেন নারী যারা পালিয়ে যেতে পারবেন না এবং যাদেরকে ঘরেই পাওয়া যাবে। বিবাহবিচ্ছেদসহ নানা সামাজিক বিশৃঙ্খলার স্বীকার নারী ও তার পরিবারকেও তারা ক্ষুদ্রঋণ কর্মাণ্ডের ফল বলে ধারণা করছেন।
ক্ষুদ্রঋণ কর্মকাণ্ডের যখন কোনও রকম কোনও সাফল্যগাঁথা নেই, তাহলে মানুষ তার পিছনে এতো ছোটে কেনো? মানুষ কি চোখে দেখতে পায় না যে ক্ষুদ্রঋণের জালে জড়িয়ে তার প্রতিবেশী বা আত্মীয়ের দুরাবস্থা? আসলে তাত্বিক দিক দিয়ে ক্ষুদ্রঋণ কর্মকাণ্ডকে নালিফাই করা মোটেও সহজ কাজ না। ব্যবহারিক দিক থেকে অনেক উদাহরণ দেওয়া সম্ভব, ইতিবাচক এবং নেতিবাচক, দুই’ই। বাংলাদেশে আনুষ্ঠানিক ক্ষুদ্রঋণের কর্মকাণ্ড ৭০’এর দশকের দিকে শুরু হলেও এই উপমহাদেশে সমবায়ের ইতিহাস কিন্তু অনেক দীর্ঘকালের। সমবায় এবং ক্ষুদ্রঋণের মডালিটিতে কিন্তু বড়োসড়ো পার্থক্য দেখা যায় না। বাস্তব প্রয়োগে এসে ক্ষুদ্রঋণের অনেক ব্যার্থতার পিছনে মানুষের আচরণ একটা বিরাট কারণ হিসেবে দেখা যায়। আমি আমার মাঠের অভিজ্ঞতা থেকে দেখেছি যে মানুষ বিয়ে করার জন্যে ক্ষুদ্রঋণ নেয় আবার তালাক দেওয়ার জন্যেও ক্ষুদ্রঋণ নেয়। শ্বশুর বাড়িতে বা বেয়াই বাড়িতে বেড়াতে যাওয়ার সময় ক্ষুদ্রঋণ নেয় আবার বেয়াই সাহেব তার বাড়িতে বেড়াতে আসলেও ক্ষুদ্রঋণ নেয়। সংখ্য মানুষের আচরণ এখন অনেকটা ক্ষুদ্রঋণকেন্দ্রিক হয়ে পড়েছে। খুবই সামান্য এনজিও আছে যারা ক্ষুদ্রঋণ দেওয়ার পরে সেই ঋণের অর্থের ব্যবহার সঠিকভাবে মনিটরিং করে থাকে। এছাড়া, ঋন দেওয়ার আগে যে কাজের জন্যে মানুষ ঋণের আবেদন করছেন সেই কাজের তার দক্ষতা এবং আর্থিক ভায়াবলিটি আছে কি না তা এনজিওগুলো সাধারণভাবে বিচার করে না। সর্বোপরি, ক্ষুদ্রঋণভিত্তিক সংস্থাগুলোর লক্ষই থাকে কিভাবে দ্রুত এবং অধিক পরিমানে ঋণ পেনিট্রেইট করা যায়। পিকেএসএফ, পিডিবিএফ, ব্র্যাক, গ্রামীণব্যাংক, প্রশিকা, আশা, এদের কারো মাইক্রোক্রেডিট ম্যানেজমেন্ট পলিসি খুঁজে কোনও নেতিবাচক কথাবার্তা পাওয়া যাবে না। কিন্তু সরকার বা বাংলাদেশ ব্যাংক তাদের ভূমিকা কতটুকু ঠিকভাবে পালন করছে তা কিন্তু আলোচনায় আসেনি এবং এক্ষেত্রে সরকারের সমালোচনায় লেখকদ্বয়ের নিরবতা রহস্যজনক। লেখকদ্বয় বিজ্ঞ, তাদের সহজে অনুধাবন করা উচিত যে ক্ষুদ্রঋণ কিন্তু আজ এশিয়ার সীমা ছাড়িয়ে আফ্রিকাতে এবং ল্যাটিন আমেরিকাতেও জনপ্রিয়তা পেয়েছে।
মি. সরকার নাম উল্লেখ না করলেও সরাসরি ব্র্যাককে আক্রমন করেছেন যা প্রায় সবাই বুঝতে পারবেন। ব্র্যাকের সাথে অবশ্য রাজনৈতিক মেরুকরণে অনেকের সাথেই বন্ধুত্ব হয়না যেমন হতোনা প্রশিকার সাথে (ড. ফারুকের আমলে)। আর বাংলাদেশের এনজিও সেক্টরের উত্থানের প্রাক্কালে যে বামগোষ্ঠী প্রতিনিয়ত এনজিওর নামে মুর্দাবাদ জ্ঞ্যাপন করতো, তার অনেকেই কিন্তু এ্যাডভোকেসী, গভর্ণেন্স, রাইটস, ইত্যাদি সুললিত মোড়কে মুর্দাবাদের মোর্দারকে দাফন করে এনজিওর রুটিমাখন ভক্ষণে নিমগ্ন হয় নিজেরা এনজিও ‘খাড়া’ করে নয়তো কনসালট্যান্সি করে। সংবাদপত্রগুলোতে কলাম লেখেন এবং শিক্ষকতা করেন এরকম অনেক মহারথীকে ব্যাক্তিগতভাবে চিনি। পয়সা দিলে তারা কোকশাস্ত্র রচনা করে সোস্যাল ডেভেলপমেন্টের সাথে কামশাস্ত্রের লিংকেজ দেখিয়ে দিয়ে ৮০ পাতার রিসার্চ রিপোর্ট বানিয়ে দিতে পারেন অথবা হজরত মোহাম্মদ (সাঃ) বা হলি জেসাস ক্রাইস্টকে মাইক্রোফাইনান্সের জনক বানিয়ে দিতে পারেন। আর লেখকদ্বয় ভূলেও বিবেচনায় আনছেন না যে এনজিও এখন কর্পোরেটের সাথে প্রতিযোগিতা করে বাণিজ্যিক ব্যাংক ব্যবসা করছে, খাদ্যসামগ্রী প্রস্তুত ও বাজারজাত করছে, ফ্যাশন সামগ্রী তৈরী করছে। বাংলাদেশের একটা এনজিও মালিকানাধীন বাণিজ্যিক ব্যাংকের অফিস আফগানিস্তানের সবথেকে বহুতলবিশিষ্ঠ ভবনের পুরোটা নিয়ে। গু খাইলো সব মাছে কিন্তু দোষ হইলো পাঙ্গাসের।
আমার বিশেষ আপত্তির একটা জায়গা হচ্ছে মি. হালীমের লেখায় আদিবাসীদের নিয়ে লেখা কথাগুলো। তিনি মাননীয় আইনমন্ত্রী মহোদয়ের রেফারেন্স দিয়ে যে কথাগুলো এখানে লিখেছেন তা সাম্প্রদায়িক বিষবাষ্প ছড়ানোয় ভূমিকা রাখতে পারে। সিএইচটিতে ১৪৯টা মিশনারী সংস্থার কাজ, ৯৫০টা চার্চ স্থাপন এবং ১৭ হাজার আদিবাসীকে খ্রীষ্ট ধর্মে ধর্মান্তকরণ, এই ধরণের বার্তা কোট করার মানে হচ্ছে দেশের অর্ধশিক্ষিত-অশিক্ষিত ধর্মান্ধ মৌলবাদী গোষ্ঠীকে ‘ওরে পাগল তুই সাকো নাড়াইস না’ ম্যাসেজ দেওয়ার মতো। আসলে এই প্রসঙ্গ আনার পিছলে মি. হালীমের মোটিফখানা কি? একটু ভেবে দেখার অবকাশ থেকে যায় বৈ কি। আর মি. মিনিষ্টারও বলিহারী বাই। পোর্টফোলিওতে থেকে তিনিইবা এমন কথা বলেন কিভাবে তা বিষ্ময়জাগানিয়া। তিনি বলেছেন,
এনজিওগুলো কোটি কোটি টাকা পাচ্ছে। বিদেশীদের টাকা খেয়ে তারা তাদের স্বার্থে কাজ করছে। এর পিছনে যে গভীর ষড়যন্ত্র রয়েছে তা স্পষ্ট। তারা পার্বত্য চট্টগ্রামে গোলযোগ সৃষ্টির চেষ্টা করছে এমন অভিযোগও রয়েছে।
হনরেবল মিনিষ্টার, আপনাকে সমীপে অধীনের বিনীতে জিজ্ঞাসা, এতসব যদি জানেন তবে আপনারা বসে বসে কার ইয়ে-উৎপাটন করছেন? অসাম্প্রদায়িকতার ধারক-বাহক-প্রতিপালক আপনার দলের নেতৃত্বে যে সরকার, জেনে শুনে আপনারা কেনো এই সাম্প্রদায়িকতার প্রসারকে মেনে নিচ্ছেন আর কনফিউজিং বক্তব্য দিয়ে বেড়াচ্ছেন। আপনাদের কি ক্ষমতা নেই? আপনারা কি সংশপ্তক নাটকের মিয়ার ব্যাটা ফেলু মিয়ার ক্ষয়িষ্নুকালীন সেই ফর্মে আছেন? বুইরা বাঘ, দাত আছে, রাগও আছে, কিন্তু কামরাইতে পারে না।
পয়েন্ট টু পয়েন্ট আলোচনা করতে গেলে অনেক সময়ের ব্যাপার। লেখা দীর্ঘ হয়ে যাবে। তবে লেখকদের কাছ থেকে আমরা বস্তুনিষ্ঠ এবং তথ্য-উপাত্ত-পরিসংখ্যানভিত্তিক লেখা আশা করি। তারা যেভাবে বাংলাদেশের এনজিও বিস্তারের সমালোচনা করেছেন, তা ভদ্রভাষায় গালিগালাজ থেকে ভালো কিছু করেন নি। লেখক যদি যুক্তিনির্ভর আলোচনা-সমালোচনা করতে সক্ষম না হন, তবে তাদের লেখা পড়া বিপদজনক এবং সময়ের অপচয় তো বটেই। নামজাদা কলামিস্ট বলেই তারা যা মনে আসবে তা’ই উগরে দেবেন, এটা গ্রহণযোগ্য না।
সাফল্যের পাশাপাশি এনজিওর ব্যার্থতারও অনেক ইতিহাস আছে। এই ব্যার্থতার দায় অবশ্য সরকার এড়াতে পারবে না। এনজিও এ্যাফেয়ার্স ব্যুরো (এফডি এনজিওস) এবং সমাজ কল্যাণ, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রনালয় (নন-এফডি এনজিওস) কিভাবে তার দায়াবদ্ধতা এড়িয়ে যায় এটার জবাবও সরকারকে দিতে হয়। এনজিও কিভাবে কর ফাঁকি দেয় তা ধরার দায় থেকে এনবিআরকে অব্যহতি দেওয়া যায়না। জেলা প্রশাসক তার এলাকার এনজিওগুলোর কর্মকাণ্ড তদারকীর দায় থেকেও নিষ্কৃতি পান না। সত্যিটা স্বীকার করতে হবে যে আজ বাংলাদেশের গ্রামে গঞ্জে অনেক ক্ষুদ্রঋণকেন্দ্রিক এনজিও গজিয়ে উঠেছে মহাজনী এ্যাপ্রোচে। এদের কাজই হচ্ছে ঋণ দেওয়া এবং তা থেকে মুনাফা আদায় করে নেওয়া এবং আবার ঋণ দেওয়া। এই ঋণদুষ্কৃতিচক্রকে রুখবে কে? কোথায় সরকারের কার্যকরী রেগুলেটরী ফ্রেমওয়ার্ক? লেখকদ্বয় তো কোনওরকম কোনও রেকমেন্ডেশন নিয়ে আসলেন না। অবশ্য আমি নিশ্চিত না যে আদৌ তাদের কাছে কোনও রেকমেন্ডেশন আছে কি না অথবা রেকমেন্ডেশন দেওয়ার মতো সক্ষমতা তাদের আছে কি না।
এবার একটু সাফাই গাইতেই হচ্ছে। আমার নিজের অভিজ্ঞতায় দেখা এনজিওর কাজের কিছু ইতিবাচক কয়েকটা দিক পয়েন্ট আকারে হাইলাইট করতে চাই-
১। বাংলাদেশের এনজিওগুলো ব্যাপক কর্মসংস্থানের সূযোগ করে দিয়ে দেশে বেকারত্বহ্রাসের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। একটি বিশেষ এনজিও অনেক বাংলাদেশী কর্মীকে বিদেশে কর্মসংস্থানের সূযোগ করে দিয়ে কিছু হলেও রেমিট্যান্স আমদানী করছে। এছাড়া বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য যে স্থানীয় ক্ষুদ্রঋণকেন্দ্রিক এনজিওগুলো ব্যাপকসংখ্যক এসএসসি এবং এইচএসসি পাশ জনগোষ্ঠী বিশেষ করে নারীদেরকে মাঠকর্মীসহ বিভিন্ন পদে নিয়োগ দেয়। এই শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে সরকারী, অটোনোমাস, কর্পোরেট বা অন্যত্র চাকরী পাওয়া তো দুরের কথা আবেদন করাই অসম্ভব।
২। অনেক এনজিওই এখন রপ্তানীমূখী বাণিজ্যে জড়িত হয়ে পড়েছে এবং এর মাধ্যমে আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশী পণ্যের প্রসার ঘটছে এবং কিছু বৈদেশিক মুদ্রা আসছে।
৩। এনজিও বাংলাদেশের মানুষের খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষে ব্যপকভাকে কাজ করে যাচ্ছে। লেখকদ্বয়কে বিনীতে অনুরোধ জানাবো সৌহার্দ্য কর্মসূচীর মঙ্গাপিড়িত কর্মএলাকায় একটু ‘ট্রিপ’ করে আসতে।
৪। এনজিও বাংলাদেশের প্রাকৃতিক দূর্যোগগুলোতে ব্যাপকভবে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিচ্ছে এবং দূর্যোগপরবর্তী পুনর্বাসনেও ব্যপকভাবে কাজ করে যাচ্ছে। লেখকদ্বয়কে বাংলাদেশের দক্ষিণ ও দক্ষিন-পশ্চিমাঞ্চল ঘুরে আসতে অনুরোধ করছি।
৫। এনজিওগুলো স্বাস্থ্য, স্যানিটেশন, শিক্ষা, জলবায়ুর পরিবর্তন, ইত্যাদি বিষয়ে ব্যাপক জনসচেতনতামূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে মানুষের সচেতনতার স্তরকে বাড়িয়ে দিচ্ছে।
৬। এনজিওগুলো স্থানীয়সরকার কাঠামোকে শক্তিশালীকরণ এবং এদের জবাবদিহিতার ব্যবস্থা নিশ্চিককরণের লক্ষ্যে কাজ করেছে।
৭। বাংলাদেশে এইচআইভি ভাইরাসের বিস্তার রোধ এনজিও যে কাজ করেছে তা বলে শেষ করা যাবেনা। আজ সবথেকে কম চার্জের যৌনকর্মীও আপনার সাথে কনডম ছাড়া সেক্স করবে না।
৮। ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রমের মাধ্যমে একটা বিরাট জনগোষ্ঠির অর্থনৈতিক স্বনির্ভরতা অর্জিত হয়েছে।
৯। কম হোক আর বেশি হোক নারী, প্রতিবন্ধী, প্রান্তিক, ক্ষুদ্র নৃতাত্ত্বিক জাতিগোষ্ঠীর কণ্ঠ আজ জাতীয় পর্যায়ে শোনা যায়।
১০। এনজিও কর্মকাণ্ডের সাফল্যগাথায় বাংলাদেশ আজ আন্তর্জাতিকভাবে প্রশংশিত হয় এবং বাংলাদেশের ক্ষুদ্রঋণ এবং এ্যাডাপটেশান লারনিংগুলো এশিয়া এবং আফ্রিয়ায় দারুনভাবে বাস্তবায়িত হচ্ছে।
এনজিওগুলোর উপর লেখকদ্বয়ের মনোভাবদৃষ্টে আমার মনে পড়ে গেলো সেই সনাতন প্রবাদ, “যারে দেখতে না’রি তার চলন বাঁকা”। একটা গল্প দিয়ে শেষ করি-
এক বদমাশ ব্যাটার অভ্যেস ছিলো বউ পিটানো। কারণে অকারণে তার বউকে ধরে পিটানো তার চা’ই। একরাতে বউ চিন্তা করলো যে কাল সকাল থেকে আমি সবকিছুই নিখুঁতভাবে করবো। ব্যাটাকে পিটানোর মতো কোনও সূযোগ দেবোনা। দেখি কিভাবে পিটায়। সকাল থেকেই বউ অতিসতর্ক। সবকিছুতেই সাবধান। ব্যাটা পিটানোর মতো কোন ছুতো না পেয়ে গজগজ করতে করতে বাজারে তার দোকানে চলে গেলো। প্রচণ্ড অস্থিরতা ব্যাটার মধ্যে বউ পিটাতে না পেরে। বেলা ১১টার দিকে ব্যাটা থাকতে পা পেরে বাড়ি চলে আসলো। এসে দেখে বউ শিল-পাটায় মশলা বাটছে। ধমাধম পিছন থেকে লাথি কষে দিলো বউটার পাছায়। বউ উল্টে পড়লো লাথি খেয়ে। ব্যাথা পেলেও তার থেকে বেশি হতবাক হয়ে গেলো লাথি খেয়ে। শেষে বউ জিজ্ঞস করলো যে আমি তো লাথি খাওয়ার মতো কোনও অপরাধ করি নাই, তয় তুমি আমারে লাথি মারলা ক্যান? ব্যাটা খেঁকিয়ে উঠে বললো যে মাগী তুই পাটার উপর পুতা দিয়া মশল্লা বাটতেছিস, পুতা ঘসতেছিস হাত দিয়া, নড়লে তোর হাত দুইটা নড়বো। কিন্তু মশল্লা বাটতে বসলে মাগী তোর খালি পাছা নড়ে ক্যান?
১০ জুলাই ২০১১
মন্তব্য
যে লেখাগুলোর কথা বলেছেন তা সত্যিই একপেশে। মিস্টার মোনায়েম এই এন্টি-এনজিও ক্যাম্পেইন বেশ অনেকদিন ধরেই করছেন। সরকারও মনে হয় গ্রামীণ ব্যাংকের পর এখন এনজিওদের সাইজ করার তালে আছে। আইনমন্ত্রী মনে হয় এই তালেই কথাগুলো বলেছেন।
এনজিওদের নিজেদের স্বার্থেই জবাবদিহিতা আরো বাড়ানো দরকার। আপনি ঠিকই বলেছেন সরকার এনজিওদের ব্যর্থতার দায় এড়াতে পারবেনা। তবে, সরকার আসলেই এনজিওদের নিয়ে সিরিয়াস কোন কিছু করতে চায় বলে মনে হয়না। কারণ, সেক্ষেত্রে সরকার এনজিওদের ঢালাও দোষারোপ করতে পারবেনা।
ধন্যবাদ আপনাকে এনালিটিকাল লেখার জন্য।
এম আব্দুল্লাহ
আবার গুস্তাকী করে ফেললাম না তো! আমি মি. মোনায়েম এবং হালীম, কারো সম্পর্কেই জানিনা।
যারা এনজিও বিরোধী ক্যাম্পেইন বাংলাদেশে শুরু করেছিলেন, তারা কিন্তু কোনও জন্মেই ভাত পাননি। নতুন পাগলেও ভাত পাবেনা এটা নিশ্চিত থাকেন। সরকারও অতোটা কাঁচা রাস্তায় যাবেনা। আর উদ্দেশ্যমূলকভাবে এনজিওদের টাইট দিলে গেলে সরকারের বোথ ওয়ে ট্রাবল। দেশীয় এবং বৈদেশিক। বরঞ্চ সরকার যদি এনজিওদের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে পারে, অনেক সমস্যার সমাধান বেরিয়ে আসবে তাতে।
আপনাকে ধন্যবাদ এম আব্দুল্লাহ।
------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।
সহমত! লেখা জটিল হইছে
ধন্যবাদ তানিম এহসান।
------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।
আজ একজনের সাথে কথা হচ্ছিলো যিনি মি. মোনায়েম সরকারকে প্রায় সিকি শতক ধরে চেনেন। মি. সরকারের অনেক স্পেশালাইজেশনের সাথে তিনি পরিচিত।
মি. সরকার দৈনিক যুগান্তরে এনজিওদের ধুয়ে ছেড়ে দিলেও তিনি নিজেই কিন্তু গবেষণা প্রতিষ্ঠানের ছদ্মাবরণে একটা এনজিও চালান যেটার নাম বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন ফর ডেভলপমেন্ট রিসার্চ।
কাক কাকের মাংস খায়না, পুলিশও সাধারণত অন্য পুলিশরে বাঁটে ফেলে না, কিন্তু এনজিও সেক্টর এর আলাদা। এখানে সবসময়েই একটা অসুস্থ্য প্রতিযোগিতা দেখা যায় যে কে কার থেকে উপরে উঠবে এবং নিজেদেরকে হাইলাইট করবে। কিন্তু মি. সরকার যে এ্যাপ্রোচে দৈনিক যুগান্তরে লিখেছেন, তাতে বোঝাতে চেয়েছেন যে বাংলাদেশে এনজিওর থেকে খারাপ আর কিছু নেই।
আমি শুনেছি যে প্রফেসর ইউনূস ইস্যুতে তিনি নাকি বেশ সরব ছিলেন। সেরকম দু'একটা লেখা পড়তে পারলে তার পলিটিক্যাল মোটিফটা কিছুটা পরিষ্কার হতো।
------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।
কেশোৎপাটনপূর্বক আঁটি বাঁধা আর বাল ছিড়ে আঁটি বাঁধা কি এক জিনিস?
বাংলা ভাষার প্রতি কেন এই একপেশে আচরণ!
জ্বী জনাব, দুটোর একই মানে। আঁটি বাঁধার কেতাবী বাংলা জানলে সেটাই দিতুম কিন্তু জানি না যে সেটি! ধন্যবাদ।
------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।
জনাব সরকার সাহেব বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের পুরোনো ও প্রভাবশালী নেতা এবং বঙ্গবন্ধুর বিশেষ স্নেহভাজন ছিলেন। তার এনজিও সংক্রান্ত কর্মকাণ্ড জানা ছিল না।
জ্বী, এমনই কিছুটা জানলাম। শুনেছি একসময় নাকি তাকে দল থেকে কোনঠাসা করে দেওয়া হয়েছিলো। পরে কিবরিয়া স্যারের কান্ধে বন্দুক রেখে তিনি শিকার করেছেন। তবে বিস্তারিত জানিনা।
------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।
ভাল লিখেছেন । কিন্তু এদের কখন শুভ বুদ্দির উদয় হবে তা কি কেউ বলতে পারেন?.........
সম্ভবত কেউই তা বলতে পারবেন না।
ধন্যবাদ আপনাকে।
------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।
নতুন মন্তব্য করুন