বাপ্পী বড়ো অসময়ে চলে গেলো

রাতঃস্মরণীয় এর ছবি
লিখেছেন রাতঃস্মরণীয় [অতিথি] (তারিখ: শনি, ৩০/০৭/২০১১ - ৩:২৪পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

৯০’র দশকের প্রথমদিকে, আমরা তখন দাপিয়ে বেড়াচ্ছি খুলনার সাংস্কৃতিক অঙ্গণ। সবেমাত্র শুরু করেছি গণসঙ্গীতের সাথে গিটার, ড্রামস আর কিবোর্ডের সঙ্গত। বিষয়গুলো খুলনার মতো জায়গায় মোটেও সহজ কিছু ছিলোনা। তবে কিছু অগ্রজের সমর্থনে আমরা এটা সম্ভব করেছিলাম। সেসময়ে বছর পাঁচেক বয়সের দুটো পিচ্চি ওদের মা-বাবার সাথে আমাদের অনুশীলন এবং অনুষ্ঠানগুলোতে এসে আমাদের সাথে জোঁকের মতো লেগে থাকতো। এই হয়তো এসে ড্রামে এক বাড়ি দিলো, নয়তো গিটারের তারগুলো ধরে দিলো টান। ওদের একটা ছিলো বাপ্পী আর অন্যটা শোভন। বাপ্পীর বাবা এ্যাডভোকেট মিনা মিজানুর রহমান, বিশিষ্ঠ আইনজীবি, রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী, এবং বাংলাদেশ রবীন্দ্রসঙ্গীত সন্মিলণ পরিষদের বহুদিনের একজন সংগঠক। আর ওর মা রমা রহমান, পেশায় অধ্যাপক এবং শখে আবৃত্তি শিল্পী। বাপ্পীর নানা প্রয়াত বিদ্যুৎ কান্তি সরকার ছিলেন খুলনার সাংস্কৃতিক অঙ্গনের একজন কিংবদন্তী। শোভন হচ্ছে অধ্যাপক হাফিজুর রহমান এবং অধ্যাপিকা হোসনে আরা রহমানের ছেলে আর প্রয়াত কবি আবুল হাসানের ভাগ্নে। বাপ্পী অবশ্য পরবর্তীকে ওর ভালো নামেই বেশি পরিচিতি পায়। আবিদ শাহরিয়ার নামে।

বাপ্পীকে আমি সবসময়েই ‘বাবা’ ডাকতাম আর ও আমাকে কাকু ডাকতো। বাপ্পীর বাবা মিজান ভাই আমার দূর সম্পর্কের কাজিন। গত সপ্তাহেই বাপ্পীর সাথে কথা বললাম। মিজান ভাইয়ের ফোন নাম্বারটা খুঁজে পাচ্ছিলাম না, তাই নাম্বারটা নেয়ার জন্যে ওকে ফোন দিয়েছিলাম। ও প্রমিস করেছিলো যে আমি ঢাকায় বাসা নিলে ও অবশ্যই বেড়াতে আসবে। তারপর গত পরশুর আগের দিন খুলনায় মিজান ভাইয়ের চেম্বারে প্রায় দুই ঘন্টা কাটালাম। আমি ২০০৫ সালে বিদেশে থাকাকালীন সময়ে শুনতে পেলাম বাপ্পী ক্লোজ আপ ওয়ানের ফাইনালে গেছে। শুনে যে কতোটা আনন্দ পেয়েছিলাম তা ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব না। এরপর তো শুধুই ওর সাফল্যের গাঁথা। তবে বাপ্পী কিন্তু নিজেকে কখোনোই একজন খ্যাপ শিল্পী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চায়নি। রবীন্দ্রসঙ্গীতেই ওর চর্চা এবং পারফর্ম্যান্স সীমাবদ্ধ রাখতে চেয়েছে সবসময়। সম্প্রতি শিল্পী এলিটা করিমের সাথে "নব আনন্দে জাগো"-একটা দ্বৈত রবীন্দ্রসঙ্গীতের এ্যালবামের রেকর্ডিংও শেষ করেছিলো। আর আজ অবশ্যই বলতে হয়, এই তো সেদিনের কথা, বাপ্পী দিগন্ত টিভির সাথে ওর সম্পর্ক চুকিয়ে দিয়েছিলো আদর্শিক কারনে। সেদিন আমরা সবাই ওর এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছিলাম। পরিবার থেকে ধর্মীয় বিষয়ে অবাধ স্বাধীনতা দেওয়া হলেও বাপ্পী ইসলামকে বেছে নিয়েছিলো ওর নিজস্ব ধর্মীয় বিশ্বাস হিসেবে এবং ও একজন প্রাকটিসিং মুসলিমও ছিলো। কিন্তু ও ছিলো আগাগোড়া মৌলবাদ বিরোধী অসাম্প্রদায়িক চেতনার এক মানুষ। তাইতো সাম্প্রদায়িকতায় বিশ্বাসী এবং স্বাধীনতার চেতনাবিরোধী দিগন্ত টিভির লোভনীয় অফার ওকে শেষ পর্যন্ত প্রলুব্ধ করতে পারেনি। ও ছেড়ে দিয়েছিলো দিগন্ত টিভির অনুষ্ঠান।

গতকাল ফেসবুকে ওর সর্বশেষ স্ট্যাটাস ছিলো

passing a wndrfl tym with MATTRA at cox'sbazar.....

বয়স এখনও ২৫ পেরোয়নি। এইতো মাত্র সেদিনই ঢাবি’র পড়াশোনা শেষ করে আফজাল হোসেনের মাত্রা’য় চাকরিতে জয়েন করলো। গিয়েছিলো অফিসের রিট্রিটে কক্সবাজারে। সেখান থেকেই এই স্ট্যাটাস। আর মাত্র একটা দিন। আজ দুপুরে কলাতলীতে সমুদ্রস্নান করছিলো ওরা তিনজন একসাথে। হঠাৎই এক বিশাল ঢেউ এসে ওদের তিনজনকে টেনে নিয়ে গেলো প্রকৃতির বুকের নিবিড়ে। পাড়িয়ে দিলো অনন্ত ঘুম। ঘুমন্ত বাপ্পী ফিরে আসলো আমাদের মাঝে। এই ঘুম আর ভাঙবে না। ঘুমন্ত বাপ্পীকে আনুষ্ঠানিকতা করে আবার আমরা শুইয়ে দেবো প্রকৃতির বুকে।

আমার স্ত্রী মাত্র দু’জন শিল্পীর গান শোনেন তার মোবাইল ফোনে। আর ছোট্ট রাফিনকে ঘুম পাড়াতে হয় এই দু’জনেরই গান বাজিয়ে। এই শিল্পী দু’জন আমাদের বড়োই আপনজন। একজন আমার বান্ধবী শুভমিতা, আর অন্যজন বাপ্পী। বিশ্বাস হতে চাচ্ছেনা যে ছেলেটা নেই .............................।

যারা প্রার্থনায় বিশ্বাসী, দয়া করে আমাদের এই ছেলেটাকে ওর আত্মার শান্তির জন্যে একটু আপনাদের প্রার্থনায় রাখবেন। ও খুব ভালো, নিষ্পাপ একটা ছেলো ছিলো।

বাপ্পীর কন্ঠে আমি কান পেতে রই-


মন্তব্য

অনার্য সঙ্গীত এর ছবি

শ্রদ্ধা

______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন

সচল জাহিদ এর ছবি

শ্রদ্ধা

সকালে এসে খবরটা দেখেই মনটা খারাপ। ক্লোজআপ ওয়ান আমার অসম্ভব প্রিয় একটা অনুষ্ঠান ছিল, আর তাই আবিদের সেলিব্রেটি শিল্পী হয়ে উঠা আমাদের চোখের সামনে। শুরু থেকেই ওর গান খুব ভাল লাগত আর ভাল লাগত ওর সাদা ফতুয়া পড়ে গান গাইতে দেখা, কেমন জানি একটা শুভ্রতা লেগে থাকত। যখন রবীন্দ্রসংগীত দিয়েই ক্লোজআপ ওয়ানের শীর্ষ দশে উঠে এসেছিল তখন আর দশ জনের থেকে ওর গায়কী আলাদা করেই ভাল লাগত আমাদের। পরে পুতুলের সাথে উপস্থাপনাতেও ও ছিল সাবলীল। খুব খুব খারাপ লাগছে।


এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ অভ্র।

তাসনীম এর ছবি

শ্রদ্ধা

প্রচন্ড কষ্ট পেয়েছি। আবিদকে আমি চিনতাম না। কিন্তু ক্লোজ-আপ ওয়ান টিম দুইবার কনসার্ট করেছে আমাদের শহরে, ওদের উচ্ছ্বল মুখগুলো চোখের সামনে ভাসে। একদম বাচ্চা-বাচ্চা ছেলে মেয়ে সব। কাউকে এতো অসময়ে চলে যেতে দেখলে খুবই কষ্ট লাগে।

আবিদের একটা রবীন্দ্র সঙ্গীতের সিডি গাড়িতে প্রায়ই বাজাই। ক্লোজ-আপ ওয়ানের রবীন্দ্র সঙ্গীত শিল্পী একমাত্র আবিদই ছিল।

ওর আত্মার শান্তি কামনা করছি। এই শোক কিভাবে একজন পিতা-মাতা বহন করতে পারবেন সেটা জানিনা তবুও কামনা করছি যেন ঈশ্বর ওদের শক্তি দেন।

________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...

ফাহিম হাসান এর ছবি

খুব কষ্ট হচ্ছে। ওনার সম্পর্কে এত কিছু জানতাম না।

সাইফ জুয়েল এর ছবি

শ্রদ্ধা

অনিকেত এর ছবি

শ্রদ্ধা .........
ওঁর আত্মা শান্তি পাক!

অমিত এর ছবি

শ্রদ্ধা
এই দূর্ঘটনাগুলো বারবার কেন হয় ?

নির্লীপ্ত বহুদুর এর ছবি

শ্রদ্ধা

স্বাধীন এর ছবি

শ্রদ্ধা

আবিদের গানের গলাটা সবার থেকে ভিন্ন ছিল। ছেলেটার গান খুবই পছন্দ করি। বুঝি না, সাগরে গেলে কেন এরা সাবধানতা অবলম্বন করে না। প্রাণ তো কম গেলো না, তারপরেও এই দুর্ঘটনা কেন বন্ধ হয় না? মন খারাপ

সৈয়দ আফসার এর ছবি

শ্রদ্ধা

__________♣♣♣_________
না-দেখা দৃশ্যের ভেতর সবই সুন্দর!

Udash এর ছবি

খুব খারাপ লাগলো শুনে। এতো অল্প বয়স। আবিদ এর গান অনেক শুনেছি।
কিছু কিছু দুর্ঘটনা যেমন লঞ্চ ডুবি, বাস খাদে পড়ে যাওয়া, সমুদ্রে ভাসিয়ে নিয়ে যাওয়া, পাহাড় ধস এইগুলা কেন যে এতবার রিপিট হয়! একই কাহিনী, একই পারিপার্শ্বিকতা শুধু মানুষ গুলো নতুন। কিছুই কি করার নেই?

......... উদাস

পাগল মন এর ছবি

খবরটা দেখে কষ্ট পেলাম। মন খারাপ
আবিদের উপস্থাপনা আর গান বেশ ভালো লেগেছিল ক্লোজআপ ওয়ানে।
ওর আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি।

------------------------------------------
হায়রে মানুষ, রঙিন ফানুস, দম ফুরাইলে ঠুস
তবুও তো ভাই কারোরই নাই, একটুখানি হুঁশ।

ধৈবত(অতিথি) এর ছবি

শ্রদ্ধা

রু (অতিথি) এর ছবি

খুব কষ্ট পেলাম খবরটা জেনে। ওর আত্মা শান্তিতে থাকুক। আবিদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাই।

তিথীডোর এর ছবি

শ্রদ্ধা

________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"

মৃত্যুময়-ঈষৎ এর ছবি

শ্রদ্ধা খুব সতর্ক থাকতে হয়, সমুদ্র কখনও কখনও মূর্তিমান দানব!!! উচ্ছ্বাসের পাশাপাশি সাবধানতাও থাকতে হবে!!!!!!! এভাবে আমরা তরুণ প্রাণ আর হারাতে চাই না!!!!!!! মন খারাপ

তানিম এহসান এর ছবি

বড়ো অসময়ে! ওর আত্মাার শান্তিকামনা করেছি!

আশফাক এর ছবি

শ্রদ্ধা

অপছন্দনীয় এর ছবি

শ্রদ্ধা

রণদীপম বসু এর ছবি

এই দুর্ভাগা দেশটাতে যে বাপ্পীদের প্রয়োজন থাকে দীর্ঘ-দীর্ঘকাল, ওরাই চলে যায় সবার আগে !
এসব দুর্বহ শোকের কোনো সান্ত্বনা নেই, তবু.............................

ওর পরিবারের জন্য রইলো অক্ষম সহমর্মিতা...................................

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

ইমতিয়াজ আহমেদ এর ছবি

খুবি কষ্ট পেলাম। ও এত ভালো রবিন্দ্র সঙ্গীত গাইতো। ওকে আমরা খুব মিস করব। আল্লাহ আবিদকে বেহেস্ত নসিব করুন।

shoptorshi এর ছবি

সবাই কেই চলে যেতে হ্য় একদিন।কিন্তু কারও জন্য তা ৯০ ব্ছর কার ও জন্য ২৫ বা তার ও কম কেন তা বুঝি না। তারা যেখানেই থাক ভাল থাক। শ্রদ্ধা

অরুপ এর ছবি

শ্রদ্ধা

বন্দনা এর ছবি

ছেলেটা এত সুন্দর রবীন্দ্রসংগীত করতো, আমার খুব ভালো লাগতো।
শ্রদ্ধা

মুস্তাফিজ এর ছবি

শ্রদ্ধা

...........................
Every Picture Tells a Story

নৈষাদ এর ছবি

শ্রদ্ধা
ওফ্‌। এই দূর্ঘটনাগুলো কেন যে বারবার হয়?

নাদিয়া জামান এর ছবি

শ্রদ্ধা কিছু বলার ভাষা পাচ্ছি না .........

saima এর ছবি

শ্রদ্ধা অকালে ঝরে গেল একটা উদীয়মান নক্ষত্র।

রানা মেহের এর ছবি

এনটিভিতে তার মা কে দেখছিলাম।
কাঁদতে কাঁদতে বলছিলেন, আমার ছেলেকে বিয়ে দেবো। সীতাহার বানিয়ে দেবো। কে বলে আমার টাকা নাই।
এতো কষ্ট হচ্ছিলো দেখে

-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস

The Reader এর ছবি

শ্রদ্ধা

sam_intent এর ছবি

শ্রদ্ধা

বইখাতা এর ছবি

আহা! আহা! খুবই খারাপ লাগছে। ছেলেটার গান শুনেছি, ভালো গাইতো। এভাবে চলে যাওয়া মেনে নেয়া কষ্টের।

বিলাস এর ছবি

শ্রদ্ধা

ইস্কান্দর বরকন্দাজ এর ছবি

.........

তারানা_শব্দ এর ছবি

শ্রদ্ধা

"মান্ধাতারই আমল থেকে চলে আসছে এমনি রকম-
তোমারি কি এমন ভাগ্য বাঁচিয়ে যাবে সকল জখম!
মনেরে আজ কহ যে,
ভালো মন্দ যাহাই আসুক-
সত্যেরে লও সহজে।"

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।