১৯৮৩ সালে শিল্পী ফকির আলমগীর আমার অটোগ্রাফের খাতায় লিখে দিয়েছিলেন,
ইতিহাস বাউলের মতো ক্ষমাশীল নয়।
খাতাটা হারিয়ে গেছে, অটোগ্রাফ শিকারের নেশাও ফুরিয়ে গেছে। কিন্তু সেদিনের সেই কথাটা আজও হঠাৎ হঠাৎ করেই মনে জেগে ওঠে। এটাই আসলেই বাস্তবতা।
১৯৪৭ সালে ভারতভাগের সময় ধর্মীয় জাতীয়তাবাদ এমন প্রকটভাবে নিয়ামকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলো যে সেই জোয়ারে ভারতবর্ষের বিভিন্ন জাতিগুলোর ভাষাগত ও সংস্কৃতিক পরিচয় একদমই ঢাকা পড়ে গিয়েছিলো। বৃহৎ জনগোষ্ঠিগুলোর মধ্যে বাঙালী, পাঞ্জাবী, সিন্ধি, কাশ্মিরীরা এই বিভক্তির উল্লেখযোগ্য উদাহরন। সেই ১৯৪৭ থেকে শুরু করে ১৯৭১ সালে স্বাধীনতালাভের মাধ্যমে বাংলাদেশের জন্ম হওয়ার আগ পর্যন্ত তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের ইতিহাস কেবলই শোষনের ও বঞ্চনার। তবে এই লেখার মূল আলোচ্য সেটা নয়।
ভারতভাগের পরপরই শুরু হয় পুর্ব পাকিস্তানের উপর বৈষম্যের স্টীমরোলার যার শুরু হয় ভাষাগত অধিকার হরণের অপচেষ্টার মধ্যে দিয়ে। ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান পাবলিক সার্ভিস কমিশন অনুমোদিত পাঠ্যসূচী থেকে বাংলাকে বাতিল করে দেয় এবং বাংলা ভাষায় মুদ্রিত মুদ্রাগুলোর উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। এরপর ১৯৪৮ সালের ২১ মার্চ ঢাকা রেসকোর্স ময়দানে পাকিস্তানের গভর্ণর জেনারেল মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ এক নাগরিক সম্বর্ধনায় ঘোষনা দেয় যে উর্দূই হবে পাকিস্তানের একমাত্র ভাষা। জিন্নাহর মৃত্যুর পর পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলী খানও আমৃত্যু (অক্টোবর ১৯৫১) বাঙালীদের এই দাবী সম্পূর্ণ অগ্রাহ্য করে চলেছিলো। তার এবং তার দল মুসলীম লীগের বক্তব্য ছিলো যে এই ভাষার দাবী তুলে পাকিস্তানের মধ্যে দ্বিধাবিভক্তির চেষ্টা করা হচ্ছে এবং এই চেষ্টা সর্বাঙ্গীনভাবে ব্যার্থ হয়েছে। এসময়ে ভাষাবিদ ডক্টর মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ ব্যাঙ্গ করে বলেছিলেন,
উর্দূ তো পাকিস্তানেরই কোনও অংশের মাতৃভাষা নয়, তাকে আমরা কেনো জাতীয় ভাষা হিসেবে গ্রহন করতে যাবো! আর যদি উর্দূকে ভাষা হিসেবে মানতেই হয়, সেটা হতে পারে দ্বিতীয় ভাষা।
ইতোমধ্যে গভর্ণর খাজা নাজিমুদ্দিন ভাষার দাবীতে উদ্ভুত গণজাগরণের প্রেক্ষিতে অদ্ভুত এক প্রস্তাবনা নিয়ে দরকষাকষির চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিলো- বাঙালীরা বাংলা ভাষা ব্যবহার করবে তবে তা লিখিত হতে হবে আরবী হরফে। কিন্তু তার ২৭ জানুয়ারী ১৯৫২’র ঘোষিত “উর্দূ ওনলি” নীতির প্রতিবাদে ৩১ জানুয়ারী মাওলানা ভাষানীর সভাপতিত্বে গঠিত সর্বদলীয় কেন্দ্রীয় ভাষা আন্দোলন কমিটির সভায় নাজিমুদ্দিনের এই ঘোষনাকে প্রত্যাখ্যান করা হয়। এরপরের সেই ঐতিহাসিক ঘটনা সবাই জানেন। ২১ ফেব্রুয়ারী ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করার মধ্যে দিয়ে জাগ্রত জনতার যে জোয়ার তা রুখে দেবার ক্ষমতা পাকিস্তান সরকারের ছিলোনা। প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত হলো আমাদের ভাষার অধিকার। কেবলমাত্র ভাষার অধিকারের জন্যে পৃথিবীতে এক এবং অদ্ধিতীয় এক মহান আত্মত্যাগের উদাহরণ।
যে উর্দূ নিয়ে পাকিস্তানের তৎকালীন সরকারগুলোর এতো প্রেম উথলে উঠছিলো, আসলেই সেই উর্দূ কি আদৌ কোনও কালে পাকিস্তানের ভাষা ছিলো। এর এক কথার উত্তর- না। উর্দূ ছিলো আসলে মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর মতো উদ্বাস্তুদের ভাষা। পরবর্তীতে রাষ্ট্রক্ষমতায় এসে তারা সেই ভাষাকে শাসকের ভাষায় রূপদানের চেষ্টা করে গেছে। আজ এতো বছর পরও পাকিস্তানীদের সরকারী এবং দাপ্তরিক ভাষা উর্দূ নয়, কেবলমাত্র ইংরেজি।
তাহলে পাকিস্তানে উর্দূ ভাষার অবস্থা কি? এটা মূলত ইসলামাবাদের ভাষা, তা’ও সবার নয়। তবে পাকিস্তানের ভিন্ন ভাষাভাষীরা অবশ্য উর্দূকে তাদের মধ্যে কথোপকথোনের একটা মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করে থাকে। তবে সেটা সীমাবদ্ধ শিক্ষিত সমাজের মধ্যে। আমি সিন্ধ এবং পাঞ্জাবের বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখিনি যে দুজন সিন্ধি বা পাঞ্জাবী নিজেদের মধ্যে উর্দূতে কথা বলছে। আমার অফিসের পাঠান কর্মীরাও নিজেদের মধ্যে কখোনেই উর্দূতে কথা বলে না। আমি সিন্ধের শিকারপুরের এক গ্রামে গিয়ে সারা গ্রামের মধ্যে মাত্র একজন মানুষ পেয়েছি যে সামান্য উর্দূ বলতে পারে এবং তার উর্দূ আমার ভাঙাচোরা উর্দূ থেকেও দুর্বল। উইকির তথ্যমতে পাকিস্তানের ভাষাভাষীদের শতকরা হিসেব হচ্ছে পাঞ্জাবী ৪৪.১৫%, পশতু ১৫.৪২%, সিন্ধি ১৪.১০%, শেরাইকি ১২.১০%, উর্দূ ৭.৫৭, এবং বালুচ ৩.৫৭%। যদিও অনেকেই আমার কাছে বলেছে যে উর্দূ সর্বোচ্চ ২ থেকে ৪ শতাংশ লোকের মাতৃভাষা। আবার শেরাইকি ভাষায় ১২.১০% মানুষ কথা বললেও লেখালিখি বেশি হয়। তবে মাতৃভাষা না হওয়া সত্ত্বেও পাকিস্তানে উর্দূ ভাষা শেখার একটা তৎপরতা দেখা যায় সরকারী চাকরী পাওয়ায় সুবিধার জন্যে। গত ২ বছরের খবর জানি, ২১ ফেব্রুয়ারীতে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে পাকিস্তানের বিভিন্ন প্রদেশে তাদের নিজ নিজ ভাষার স্বার্থসংশ্লিষ্ঠ দাবীদাওয়াগুলো উঠে আসছে। পাকিস্তান সরকারগুলোর ব্যাপক সমালোচনা হচ্ছে তাদের উপর উর্দূভাষা চাপানোর মাধ্যমে তাদের নিজস্ব ভাষাকে গুরুত্বহীন করে ফেলার ষড়যন্ত্রের কারনে।
এই হচ্ছে সেই উর্দূ ভাষা। যে ভাষার আগ্রাসন রুখতে আমরা সেই ১৯৫২ সালের ঢাকার রাজপথ রক্তে রঞ্চিত করেছিলাম, সেই উর্দূ আজও পাকিস্তানের সরকারী দাপ্তরিক ভাষার মর্যাদা অর্জন করতে পারেনি। এই সেই পাকিস্তানের তথাকথিত জাতীয় ভাষা যে ভাষা সেই দেশের প্রায় ৯৫ শতাংশ মানুষ আজও ব্যবহার করেনা। জিন্নাহ-লিয়াকত-নাজিমুদ্দিন-নূরুল আমিনের সেই প্রাণের ভাষা আজও পাকিস্তানের ৯৫% মানুষের প্রাণে তো দুরে থাক, ঠোঁটেই ঠাই পায়নি।
জানিনা কে বা কারা এটা করেছে এবং কেনো করেছে; তবে আমি এটাকে ধরে নেবো ইতিহাসের সেই অনিবার্য শাস্তি হিসেবে। জিন্নাহর কবরে তার জন্ম-মৃত্যুসালগুলো বাংলায় লেখা, ফাতেমা জিন্নাহ, লিয়াকত এবং আমিনের কবরের প্রধান পরিচিতির ভাষাই বাংলা। বাংলা ভাষা বহনকারী পাথরে পিষ্ট হচ্ছে তাদের সমাধি এবং হতে থাকবে অনন্তকাল ধরে। যে বাংলা ভাষাকে দম্ভের ভরে তারা পিষ্ঠ করেছিলো একদা, সেই বাংলার প্রস্তরভরেরই তারা পিষ্ঠ হচ্ছে এবং হতে থাকবে যুগের পর যুগ। এটাই ইতিহাসের শাস্তি কারন ইতিহাস বাউলের মতো ক্ষমাশীল নয়।
নিচে ছবির প্রস্তরগুলো যথাক্রমে জিন্নাহ, ফাতেমা জিন্নাহ, লিয়াকত আলি খান এবং নূরল আমিনকে পিষ্ঠ করে চলেছে।
তথ্যসূত্রঃ
১. বেঙ্গলি ল্যাংগুয়েজ মুভমেন্ট,
২. ল্যাংগুয়েজেস অব পাকিস্তান।
মন্তব্য
এটাকেই বলে ধর্মের কল বাতাসে নড়ে। ছবিগুলো কি আপনার তোলা?
কবিতার লাইনটা আবারও মনে পড়ল, 'দিনে দিনে বহু বাড়িয়াছে দেনা, শুধিতে হইবে ঋণ'
কবরের এই বাংলা নামফলকে এই পাপীদের ঋণ পুরো শোধ হবেনা জানি, তবু দেখে শান্তি পেলাম।
জিন্নাহর কবরে শুনেছিলাম কয়েকটি ভাষায় লেখা ফলক আছে, আন্যদেরও কি তাই?
লেখায় ।
"শাহজাদা দারাশুকো" পড়ছিলাম যেখানে উর্দু ভাষাকে উর্দু (তাবু) তে জন্ম নেয়া ভাষা বলা হয়েছে। মোগল সম্রাটের সেনাবাহিনীতে নানা দেশের নানা ভাষার লোকদের মুখের ভাষা মিলে গিয়ে তৈরী হয়েছিলো এই ভাষা।
লেখাটা ভালো লাগলো। আচ্ছা, এই যে সমাধিফলকে বাংলায় লিখা, সেটাই কি একমাত্র লিখা, নাকি কয়েকটা ভাষায় তাদের লাইফস্প্যান লেখা ছিলো?
---
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়
জব্বর
দারুণ লেখা।
ছবিগুলো কি আপনার তোলা?
______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন
অসাধারণ!! বুকমার্ক করে রাখছি। এ লেখাটি অনুবাদ হওয়া প্রয়োজন। লেখকের অনুমতিক্রমে কোন ব্লগার (অথবা লেখক স্বয়ং) কি এ দায়িত্বটি নেবেন? ফেসবুক সহ বিভিন্ন মাধ্যমে বিভিন্ন ভাষাভাষীর মধ্যে এটি ছড়িয়ে দিতে চাই।
দারুন লাগল লেখাটা স্মরনীয় ভাই।
একটা মজার তথ্য - আমি শুনেছিলাম জিন্নাহর কবর বা সৌধ নির্মানের প্রোজেক্ট বাস্তবায়নে নিযুক্ত একজন নাকি বাঙালি অফিসার ছিলেন যিনি নাকি '৫২তে একজন ভাষা-আন্দোলনকারীও ছিলেন। আপনি কিছু জানেন এ বিষয়ে?
****************************************
সেই যে বলে, ইটটি মারিলে পাটকেলটি খাইতে হয়, তেমনি। ঠিক হয়েছে। ছবিগুলো দেখে খুব শান্তি লাগল।
----------------
স্বপ্ন হোক শক্তি
রু, শমশের, সজল, কল্যাণF, অনার্য ও তৌফিক জোয়ার্দার, আপনাদের সবাইকে পড়ার ও মন্তব্যের জন্যে ধন্যবাদ।
ছবিগুলো আমি নিজেই গত বুধবার ২৩ নভেম্বরে তুলেছি। জিন্নাহর কবরের নামফলক বাংলা, উর্দূ আর ইংরেজিতে লেখা। অন্যদের ক্ষেত্রে বাংলা এবং উর্দূই বেশি দেখা গেলো। একটা মাত্র কবর দেখলাম সরদার আবদুর রব নিশতারের স্ত্রীর যেটা শুধু উর্দূ আর ইংরেজিতে লেখা। যদিও নিশতারের কবরের এপিটাফ বাংলায়ও আছে। কবরের যে লম্বা অংশটা চলার পথে সামনের দিকে পড়ে সেখানের লেখাগুলো বাংলাতে পেলাম।
উর্দূ ভাষার তেমন কোনও উতপত্তিগত ইতিহাস নেই। ওই যেটা পড়েছেন, তাবুতে জন্ম নেওয়া ভাষা, ওরকমই। এই ভাষায় ফার্সীর যেমন দারুন প্রভাব তেমনই পাশাপাশি উর্দূ ভাষা সংস্কৃতেরও প্রভাবমুক্ত নয়। এছাড়া উর্দূতে প্রচুর পশতুন, পাঞ্জাবী, সিন্ধি, শেরায়েকি শব্দের প্রভাবও দেখা যায়। মীরা বাঈ, ইকবাল, এদের কারণে উর্দূ সামান্য কিছুটা জাতে উঠেছে। হিন্দি এবং উর্দূতে হরফ ছাড়া আর তেমন বিশেষ কোনও পার্থক্য নেই।
কেউ যদি এটাকে অনুবাদ করতে পারেন সেটা খু্বই ভালো উদ্যোগ হবে। আমার সময় হতে হতে কখন হবে তা ঠিক নেই। তাছাড়া ইংরেজি ব্লগিং করতে যে ধরনের দক্ষতা প্রয়োজন তা আমার নেই। আমার ইংরেজির সামান্য দক্ষতা মূলত ক্লারিক্যাল বেইসড, লিটারেচারের ইংরেজি তো বেশ কঠিন। তবু্ও সময় পেলে চেষ্টা করতে পারি।
------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।
খুব ভালো লাগল। আপনাকে ধন্যবাদ।
গুরুত্বপূর্ণ পোস্ট।
অনেক ধন্যবাদ তাজ ভাই।
ধন্যবাদ, অনেক অজানা বিষয় জানা হল, অনেক অদেখা জিনিস দেখা হল।
দারুণ একটা জিনিস জানলাম।
লেখাটা ভাল লাগল রাতঃদা। ইতিহাস কাউকেই যেন ক্ষমা না করে।
_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই
দারুণ একটা জিনিস জানলাম।
অনেক অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।
দারুণ লেখা।
ছবি দেখে খুউব ভালো লাগছে।
পৃথিবীটা আসলে একটা আয়না!
=======================
কোথাও হরিণ আজ হতেছে শিকার;
ছবিগুলি সংশ্লিষ্ট মোহতারাম মোহতারামাদের উইকি এন্ট্রিতে জুড়ে দিন।
ভালো প্রস্তাব ভাইডি। কিন্তু আমার উইকিতে কাজ করার অভিজ্ঞতা নাই। তবে কেউ যদি এগুলো উইকিতে এন্ট্রি করতে পারেন, তবে তো ভালোই হয়। ছবি আমার তোলা এবং ব্ল্যান্কেট পারমিশন দিয়ে রাখছি এগুলো ব্যবহারের।
------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।
ভাল লাগল! ধন্যবাদ
এই অজানা তথ্য জানতে পেরে শান্তি পেলাম, ধন্যবাদ রাত:স্মরণীয়।
এ প্রসঙ্গে একটা উৎবচন : ইতিহাস পচে না কখনো, আমরাই পচে যাই !
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
দারুণ একটা জিনিস জানলাম
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড় ।
জেনে মজা পেলাম
“Peace comes from within. Do not seek it without.” - Gautama Buddha
বিমলানন্দ লাভ করলাম।
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
facebook
উর্দুতে ৭.৫৭ ভাগ লোক কথা বললেও তাঁরা মূলত তথাকথিত অভিজাত সম্প্রদায়ের ও পাকিস্তানের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিমণ্ডলে যথেষ্ট ক্ষমতাধর। তাই ভাষা চাপিয়ে দেবার এই জুলুমের সহসা ইতি ঘটার সম্ভাবনা নেই। তাছাড়া মানুষের মুখের বুলি যেমন ভাষাকে টিকিয়ে রাখে ঠিক তেমনই ভাষাকে দ্যোতনা দেয় সাহিত্য। সেদিক থেকে বিবেচনা করে বলা যায়, যেহেতু উর্দু সাহিত্য পাকিস্তানের অপরাপর ভাষার (পাঞ্জাবী, পশতু, সিন্ধি, শেরাইকি,এবং বালুচ) সাহিত্য থেকে অনেক উঁচুমানের তাই উর্দুর অনভিপ্রেত আধিপত্য সহসা মিলিয়ে যাবার তেমন কোন যুক্তিযুক্ত কারণ নেই।
ভাষা আন্দোলনে বাংলা ভাষার বিজয় সূচিত হয়েছিল ঠিকই, কিন্তু যুগে যুগে বাংলা ভাষায় রচনাকৃত কবি-লেখক-সাহিত্যিকদের অমর সৃষ্টিসমূহই মূলত ভাষাকে টিকিয়ে রাখবে ও কাঙ্ক্ষিত প্রবহ প্রদান করবে।
২০০২ কিম্বা ২০০৩ সালে লাহোর ভ্রমণের সময় এই সমাধিগুলো দেখবার সুযোগ হয়েছিল আমার। জিন্নাহ-লিয়াকতের সমাধিতে অপরাপর ভাষার পাশাপাশি কেন বাংলাকেও অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছিল সে প্রশ্ন আমার মনেও জেগেছিল তখন। তোমার মত করে ভাবিনি, তবে এখনও মনে হয় এর কি কোন ভিন্নতর উদ্দেশ্য ছিল?
তোমার বিষয় নির্বাচন ও বয়ান চমৎকার।
------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।
লোকমুখে শুনেছি অন্যান্য ভাষাগুলোও সাহিত্য মানের বিচারে যথেষ্ট উঁচুমানের। কিন্তু ওই যে বলে, বড় গাছের ছায়ার অন্য ছোট গাছ বাড়তে পারেনা। পাকিস্তানের অন্যসব ভাষার সাহিত্য ইকবালের ছায়ায় ঢাকা পড়ে গেছে। ঠিক যেমনটা বলা যায় মীরা বাঈ বা কবীর হিন্দি ভাষায় না লিখলে হিন্দিরও খবর ছিলো।
এর চেয়ে আর সত্যি হয়না।
------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।
ডুপ্লি ঘ্যাচাং।
------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।
মন মাঝি, আশালতা, ব্যাঙের ছাতা, মানিক (সুলতান), প্রৌঢ় ভাবনা, কালো কাক, ত্রিমাত্রিক কবি, দ্রোহী, কাশফুল, ফাহিম, হিমু, স্যাম, তৃষা, রণদা, নিবিড়, চরম উদাস, উচ্ছলা, তাসনীম, তারেক, রোমেল ভাই, সবাইকে পড়ায় ও মন্তব্য করায় ধন্যবাদ।
------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।
ইহাকে বলে ট্র্যাজেডি,
ফেসবুকে শেয়ার দিলাম নানা।
মজা পেলাম।
উর্দু মূলত এলিট দের ভাষা। যেটা আগে ছিল ফার্সি। বৃটিশ দের সময় ফার্সির ব্যবহার হত দাপ্তরিক কাজে, যেটা পরবর্তিতে উর্দু তে রুপান্তরের উদ্যেগ নেয়া হয় পাকিস্তান হবার পরে। আমি মনে করি, কর্তা ব্যক্তিরা সাধারন মানুশের অনুভুতির খুব দূরে অবস্থান করতেন যে কারনে এরকম একটা এলিট ভাষা কে সাধারন এর উপর চাপানোর চেষ্টা করেছিলেন। আমি নিজেও দেখেছি, করাচি ছাড়া অন্য কোথাও উর্দু সে রকম ভাবে ব্যবহার হয় না।
আসলে করাচির বৈশিষ্ঠ অন্যরকম। এটা সিন্ধের রাজধানী হলেও এর বানিজ্যিক গুরুত্বের কারনে এটাকে একটা বহুজাতিক শহর বলতেই হয়। কাউকে কাউকে বলতে শুনেছি, "করাচি বিলংস টু এভরিবডি হোয়াইল ইট বিলংস টু নোবডি।" এরকম মন্তব্য লাহোর, পেশাওয়ার, কোয়েটা, মুজফ্ফারাবাদ বা গিলগিট সম্পর্কে শুনবেন না। সুতরাং করাচির নিজস্ব একটা সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে। তবে উর্দূ ভাষার ব্যবহার নিয়ে আপনার অভিজ্ঞতার সাথে একমত পোষন করলেও বলবো যে করাচির উর্দূ মূলত আমলাতন্ত্র এবং ব্যবসাযন্ত্রের মধ্যে সীমাবদ্ধ। তবে এই দুটো তন্ত্র এবং যন্ত্র বাদ দিলে করাচির আর তেমন কিছুই অবশিষ্ঠ থাকেনা। কিন্তু ইসলামাবাদে দেখবেন উর্দূর ব্যাপক চর্চা একটা কমন ভাষা হিসেবে যেখানে ভাষাভাষীদের প্রায় প্রত্যেকেরই একটা নিজস্ব ভাষা আছে।
------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।
জাকির, অরিত্র এবং সাইক, আপনাদের পড়ার এবং মন্তব্য করার জন্যে ধন্যবাদ।
------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।
খুব আনন্দ পেলাম পড়ে, অফিসের যেই আমার ডেস্ক পাস করে তারেই ডেকে ডেকে শুনালাম আর ছবি দেখালাম!
**************************************************
“মসজিদ ভাঙলে আল্লার কিছু যায় আসে না, মন্দির ভাঙলে ভগবানের কিছু যায়-আসে না; যায়-আসে শুধু ধর্মান্ধদের। ওরাই মসজিদ ভাঙে, মন্দির ভাঙে।
মসজিদ তোলা আর ভাঙার নাম রাজনীতি, মন্দির ভাঙা আর তোলার নাম রাজনীতি।
কবরে তিন ভাষায় লেখার কারণ হতে পারে সেসময় এই তিনটি ভাষাই পাকিস্তানের সরকারি কাজে ব্যবহৃত হতো। কিংবা ১৯৫২ -র পরে এই লেখাগুলো খোদাই করা হয়েছিল যখন কিনা এই তিন ভাষা পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হিসাবে স্বীকৃত।
ধন্যবাদ দুষ্ট এবং সুরাইয়া।
এই সমাধিলিপিগুলো ঠিক কখন লেখা হয়েছে তা জানিনা।তবে লেখার স্টাইল দেখে মনে হচ্ছে এপিটাফগুলো এক সময়ে লেখা না, ভিন্ন ভিন্ন সময়ে লেখা।
------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।
এই কবরগুলোতে জন্ম-মৃত্যুর তারিখ কি শুধু বাংলাতেই লিখা? নাকি তৎকালীন পাকিস্তানের প্রধান সব ভাষাতেই সেগুলো লিখা যার সাথে বাংলাও স্থান পেয়েছে? আমি জিন্নাহ ও ফাতেমা জিন্নাহর কবরের ছবি ইন্টারনেটে যা দেখলাম...তাতে আরবী বা উর্দু (এই দুই হরফের পার্থক্য আমি জানি না) জাতীয় ভাষাতে আরো কি কি লিখা দেখলাম।
যদি পাকিস্তানের জাতীয় নেতার মর্যাদা দেয়ার জন্য পাকিস্তানের প্রচলিত সকল প্রধান ভাষাতেই করবে নামাঙ্কিত করা থাকে, তবে বরং বাংলার ব্যবহারে আমি অপমানিতই বোধ করব। বাঙ্গালীর অধিকারহরণের অপচেষ্টায় লিপ্ত থাকার পর পাকিস্তানের সকল জাতিগোষ্ঠির সাথে সাথে বাঙ্গালীরও নেতা হিসেবে নিজেকে জাহির করার অধিকার তারা রাখে না।
জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী
বাংলায় এপিটাফ লেখার পিছনের কারন ধারনা করা কঠিন। কারন শেষের ছবিটায় দেখবেন নূরুল আমিনের মৃত্যু কিন্তু বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ারও বেশ পরে, ১৯৭৪ সালে। তার কবরেও কিন্তু বাংলায় এপিটাফ হয়েছে।
উর্দূ এবং আরবিতে বর্ণমালা একই কেবল উর্দূতে ২-৩টা হরফ বেশি। আমি নিজেও উর্দূ বা আরবী পড়তে পারিনা।
------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।
বহুদিন আগে শাইখ শিরাজ এর করা একটি প্রামাণ্য চিত্রে উনিও এই সমাধি লিপির ভিডিও দেখিয়েছিলেন, খুব সম্ভব গোপন ক্যামেরায় ধারণ করেছিলেন। উনি তখন বলেছিলেন ৫২'র ভাষা আন্দোলনের পর যখন বাংলাকেও রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা দেওয়া হয়, তখন এদের সমাধিলিপিতে বাংলা ব্যবহার করা ছাড়া উপায় থাকে না। (বেশ আগে দেখেছিলাম,এরকমটাই মনে পরছে।)
ছবি গুলোর জন্য ধন্যবাদ, অনেক খুঁজছিলাম, অবশেষে পেলাম।
ধন্যবাদ বাবুবাংলা এবং মাহমুদ।
------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।
নতুন মন্তব্য করুন