দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া (ইতোপূর্বে আরিচা) নৌপথে যারা ফেরীতে পার হয়েছেন, তাদের কাছে তিনটি নাম খুবই পারিচিত হওয়ার কথা- কামিনী, কস্তুরী এবং করবী। হ্যাঁ, এরা তিনজন বিশালায়তন তিনটি ফেরী। আশৈশব আমরা এই তিনটিতে চড়ে কতবার যে পদ্মা পেরিয়েছি তা সংখ্যায় গুনে শেষ করার মতো নয়। তবে এই লেখাটি কোনও ফেরীবিষয়ক রচনা নয়।
অক্সফাম নামটি শুনে পদ্মাতীরের কেউ একজন একবার আমাকে বলেছিলো যে অক্সফাম হচ্ছে পৃথিবীর সবথেকে বড়ো ভালো নৌযান প্রস্তুতকারী একটা কোম্পানী। যিনি এটা বলেছিলো তার যুক্তি ছিলো যে সেই দেশ স্বাধীনের পর থেকে অক্সফাম কোম্পানীর এই তিনটি ফেরী- কামিনী, কস্তুরী এবং করবী যেভাবে সমানে ‘সার্ভিস’ দিয়ে যাচ্ছে, তাতে খুব ভালো কোম্পানী না হলে ফেরীগুলো এতোদিন টিকে থাকতো না।
সদ্যস্বাধীন বাংলাদেশের পুনর্গঠনে এই তিনটি ফেরী বাংলাদেশ সরকারকে দেওয়া অক্সফামেরই উপহার ছিলো এবং এই তিনটি ফেরীর গায়ে আরও অক্সফামের নাম ও লোগো গৌরবের সাথে জ্বলজ্বল করে। আর হ্যাঁ, তাই অক্সফামকে নিয়ে দুটো কথা বলতেই বসা। সম্প্রতি বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশে অক্সফাম, দুই’ই চল্লিশ পেরোলো। যদিও বৈশ্বিক পদচারণার বিচারে অক্সফামের জন্ম ১৯৪২ খৃষ্টাব্দে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালীন সময়। বাংলাদেশে অক্সফামের স্বপরিচয়ে দৃশ্যত পদচারনা শুরু হয় ১৯৭০ থেকে তবে অক্সফাম কিন্তু ১৯৫৪ থেকেই তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে তাদের সহযোগী সংস্থাগুলোর মাধ্যমে কাজ করে চলেছিলো।
অক্সফাম অধিকারভিত্তিক এ্যাপ্রোচে বিশ্বাস করে এবং সেই অনুযায়ী কাজ করে। এবং একই সাথে নারী অধিকারকে অক্সফাম এর সমস্ত কর্মকাণ্ডের কেন্দ্রবিন্দুতে রাখে। দারিদ্র এবং দুর্ভোগের অবসানে অক্সফাম বিশ্বাস করে যে প্রতিটি মানুষের সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক এবং একই সাথে মানবতাবাদী আইনে অধিকার আছে এবং অক্সফাম সেই অধিকার প্রতিষ্ঠায় ও সংরক্ষণে কাজ করে। সাথে সাথে অক্সফাম শুধু দেশীয় প্রেক্ষাপটেই নয়, আন্তর্জাতিক আঙিনায়ও বৈশ্বিক সমস্যাগুলো নিয়েও প্রচারভিযান ও ওকালতিতে সক্রিয়।
অক্সফাম সরাসরি কাজ শুরু করে ১২-১৩ নভেম্বর ১৯৭০’এর মর্মান্তিক সাইক্লোনের পর দুস্থ ও পীড়িত মানুষকে জীবনরক্ষাকারী সহযোগিতা প্রদানের মাধ্যমে। শুরুতেই অক্সফাম একটা মোটা অংকের পাউণ্ডস্টার্লিং দান করে কেয়ারকে তাৎক্ষনিক ত্রাণকাজে নেমে পড়ার জন্যে। এর পরপরই অক্সফামসহ মোট চারটি সংস্থা প্রত্যেকে মিলে আবারো এবটা মোটা অংকের পাউণ্ডস্টার্লিং ত্রাণ অনুদান দেয়। ভারত থেকে আসার আগে কর ক্লিয়ারেন্সের জন্যে একটা হতাশাব্যাঞ্জক বিলম্বের পর অক্সফামের রাঁচিস্থ ফিল্ড ডিরেক্টর রিচার্ড টেলর ১৯ নভেম্বর কাঠমাণ্ডু হয়ে ঢাকায় এসে পৌঁছে।
এরপর ১৯৭১ সালের মহান স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় অক্সফাম শরনার্থীদের জন্যে ত্রাণ অপারেশনে (পাউণ্ড স্টার্লিং-এর বর্তমান মূল্যে) সেই সময় শতকোটি টাকারও বেশি পরিমানের তহবিল ব্যায় করে। এসময়ের পুরোটা ধরেই অক্সফাম পশ্চিম বাংলা এবং আসামে শরনাথীদের শিবিরগুলোতে দিনরাত কাজ করে যায়।
স্বাধীনতাপরবর্তকালে অক্সফাম বাংলাদেশে তাদের কর্মকাণ্ড আরও বিস্তৃত করতে থাকে। এসময়ে অক্সফাম নিজেরা কাজ করার পাশাপাশি ছোট দেশীয় সংস্থাগুলোর উন্নয়ণেও অবদান রাখে। সেদিনের সেই ছোট এনজিওগুলোর মধ্যেই আজকের ব্রাক, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র এবং প্রশিকার নাম উল্লেখযোগ্য।
পরবর্তীতে অক্সফাম বাংলাদেশে ত্রাণ কর্মসূচীর পাশাপাশি স্থায়িত্বশীল উন্নয়ন এবং পলিসি-ক্যাম্পেইনের কাজ শুরু করে। বাংলাদেশের স্থায়িত্বশীল গ্রামীণ উন্নয়নের জন্য প্রচারাভিযান বা সিএসআরএল্-এর স্বপ্নদ্রষ্টা কিন্তু অক্সফামই এবং অক্সফাম এর ক্রমাগত পৃষ্ঠপোষকতা করে চলেছে। গ্রেট ব্রিটেনে অক্সফামের জন্ম হলেও বর্তমানে অক্সফামের ১৪টি স্বতন্ত্র সদস্য একক এবং যৌথভাবে কাজ করে চলেছে। এই মুহুর্তে বাংলাদেশে অক্সফাম গ্রেট বৃটেনের পাশাপাশি অক্সফাম হংকং এবং নেদারল্যান্ডস কাজ করছে। অক্সফাম বাংলাদেশে মানবতাবাদী ত্রাণ ও পূনর্বাসন কর্মসূচীর পাশাপাশি আদিবাসী জনগোষ্ঠির অধিকার এবং নেতৃত্ব নিয়ে কাজ করে। কাজ করে নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নের জন্যে, দূর্যোগজনিত ঝুঁকি প্রশমন নিয়ে, জলবায়ুর পরিবর্তনজনিত ঝুঁকি প্রশমনের অভিযোজন কৌশল ও ওকালতি নিয়ে, এবং আরও অনেক চলমান ও সাম্প্রতিক ইস্যুগুলো নিয়ে।
সম্প্রতি অক্সফাম নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল এলায়েন্স ফর রিস্ক রিডাকশন ইনিশিয়েটিভস বাংলাদেশের দক্ষিনপশ্চিমাঞ্চলে ভয়াবহ জলাবদ্ধতার স্বীকার মানুষের জন্যে ১১,০৯২টি টয়লেটসহ থাকার ঘর নির্মানের এক কর্মসূচী শুরু করেছে যা মোট বাস্তব চাহিদার ৬০ শতাংশ। পাশাপাশি সেখানে অক্সফাম জলাবদ্ধতার নিরসন ও নদীব্যবস্থাপনার উপর ওকালতির কাজ করছে।
সম্প্রতি বাংলাদেশ সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে অবদানের জন্যে অসামান্য অবদানের জন্যে ১২৯ বিদেশী ব্যাক্তি ও সংগঠনকে ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতা সন্মাননা’ প্রদান করার। অক্সফাম এই তালিকায় এক গর্বিত সংগঠন। মানবতার বোধে উদ্দীপ্ত অক্সফাম স্বীকৃতির জন্যে কিন্তু সেদিন বাংলাদেশী সাইক্লোনদূর্গত বা শরনার্থীদের পাশে দাড়ায়নি।
অক্সফাম ছাড়াও এই সন্মাননার জন্যে মনোনীত অন্যান্য অন্যতম সংগঠনগুলো হচ্ছে ইন্টারন্যাশনাল কমিটি অফ দ্য রেড ক্রস, ইউনাইটেড নেশন্স হাই কমিশন ফর রিফিউজিস, ওয়ার্ল্ড পিস কাউন্সিল (ইনডিয়া), বিবিস ও আকাশবাণী।
অক্সফামের এশিয়া রিজিওনাল ডিরেক্টর সারাহ আইল্যান্ড আগামী ২৭ মার্চ আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশ সরকারের কাছ থেকে এই সন্মাননাস্মারক গ্রহন করবেন।
একজন মানবতাবাদী উন্নয়নকর্মী হিসেবে অক্সফাম এবং অন্যান্য সংহঠনের এই সন্মাননায় আমি নিজেও সন্মানিত এবং গর্বিত বোধ করছি। তবে সম্ভবত এই সন্মাননা প্রদানে সবথেকে বেশি গর্ব বাংলাদেশ সরকার তথা গোটা বাংলাদেশের। যারা প্রকৃতার্থে সনন্মাননা পাওয়ার যোগ্য, বাংলাদেশ তাদেরকেই সন্মানিত করলো।
অক্সফাম সম্পর্কে আরও জানতে ক্লিক করুন www.oxfam.org.uk www.oxfam.org
কৃতজ্ঞতা স্বীকারে (অক্সফাম বাংলাদেশের প্রকাশনা): 40 Years of Bangladesh, 40 Years in Bangladesh
সেই সময়কার বাংলাদেশী শরণার্থীদের জন্যে অক্সফাম পরিচালিত রিলিফ অপারেশনের এ্যাডমিনিস্ট্রেটর জুলিয়ান ফ্রান্সিস আবেগ এবং অনুভূতির প্রকাশ ঘটিয়েছেন এখানে, পড়তে ক্লিক করুন- Receiving the Bangladesh freedom honour: some emotions and reflections
(সময়াভাবে কিছু ঐতিহাসিক মুহুর্তের ছবি স্ক্যান করে দিতে পারলাম না। তবে দু-এক দিনের মধ্যে সেগুলো জুড়ে দেবো)
মন্তব্য
অনেক কিছু জানলাম। অত্যন্ত মূল্যবান পোস্ট।
ধন্যবাদ ডাগ্দর্দা!
------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।
বাঃ
জেনে ভাল লাগল
ধন্যবাদ আপনাকে।
------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।
মূল্যবান পোস্ট।
[আমার চারপাশ]-[ফেবু]-[টিনটিন]
ধন্যবাদ রাজা।
------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।
অক্সফামের নাম জানতাম কিন্তু পেছনের ইতিহাস জানা ছিলোনা, ভালো লাগলো এতো কিছু জেনে।
----------------------------------------------------------------------------------------------
"একদিন ভোর হবেই"
অক্সফাম, কেয়ার, রেডক্রস- এগুলো কিন্তু সেই চল্লিশের দশক থেকে বাংলাদেশে সরাসরি বা সহযোগিদের মাধ্যমে কর্মরত।
------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।
চমৎকার পোস্ট
আমিও, শুধু নামই জানতাম অক্সফাম এর। ওরা এত কিছু করেছে, ১৯৭১ এ, জানতাম না। ফেরী তিনটির নাম খুব পছন্দ হয়েছে কিন্তু আমি এ পর্যন্ত পাইনি তাদের। মন খারাপ লাগল, আমার নিজের জন্য।
ধন্যবাদ আপনাকে। ওগুলো সচল আছে, খেয়াল করলে কোনও না কোনও একসময় ঠিকই দেখা পেয়ে যাবেন।
------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।
------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।
আপনাকে ধন্যবাদ।
------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।
আপনাকে ধন্যবাদ।
------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।
ধন্যবাদ শাফি।
------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।
অত্যন্ত মূল্যবান পোস্ট।
facebook
ধন্যবাদ অনু।
------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।
দাদা, ভালো একটা লেখা দিয়েছেন। ধন্যবাদ আপনাকে।
আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ মানিকদা।
------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।
এই ব্রিটিশরাই পুরো পৃথিবী ধরে কী অরাজকতাই না চালিয়েছে উপনিবেশ করে; এদেশও তার হাত থেকে রক্ষা পায়নি। সেদেশের মানুষদেরই একটি অংশ আবার প্রতিষ্ঠা করেছে মানবতার প্রতি মমতার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। আসলে প্রকৃতি বোধহয় এই ভাবেই ভারসাম্য রক্ষা করে। অনেক কিছু জানতে পারলাম আপনার লেখা থেকে। এই ধরনের লেখাগুলো এক করে বই হওয়া উচিৎ।
যথার্থই বলেছেন পাঁঠাদা। অরাজকতা চালায় মূলত শাসকগোষ্ঠী এবং তাদের ব্লোজবদাতা একটা সুবিধাবাদী গোষ্ঠী। এবং এই সীমিতসংখ্যক কিছু মানুষের অপকীর্তির স্বীকার হয়ে মরে একটা জনগোষ্ঠা বা কখোনো কখোনো গোটা একটা দেশ বা উপমহাদেশ।
তবুও পৃথিবীতে ভালো মানুষের সংখ্যা অনেক অনেক বেশি মন্দদের তুলনায়। কিন্তু সমস্য হচ্ছে যে ভালো মানুষেরা সাধারনত ক্ষমতায় থাকেনা কখোনও।
------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।
নতুন মন্তব্য করুন