প্রাচীনকালে নাকি আঙ্গুলে ব্যাথা হলে গোটা হাতই কেটে ফেলা হতো। আর এই সেদিনও একটা দুষ্টু লিঙ্কের জন্য গোটা ফেসবুক ব্লক করা হতো। সম্প্রতি ইউটিউবের জন্যে একই ধরণের চিকিতসা নেওয়া হয়েছে। তবে আজকে একটা খবর পড়ে একটু আশার আলো দেখতে পাচ্ছি। সরকার এখন গোটা হাত না কেটে গ্যাংগ্রীন আক্রান্ত আঙ্গুল্টাই কাটতে পারছে। এই অবাধ তথ্যপ্রবাহের যুগে এটা করাই সমিচীন। ইন্টারনেট অতি সামান্য কিছু মানুষের কাছে দুষ্টুমির উপকরণ হলেও এর ব্যবহার গোটা বিশ্বের কাছে যোগাযোগের এবং তথ্যপ্রবাহের দিগন্ত উন্মুক্ত করে দিয়েছে। অকল্যাণকর বা দুষ্টুমিতে এর এক ট্রিলিয়ন ভাগের এক ভাগও বোধকরি ব্যবহার হয়না।
মত প্রকাশের স্বাধীনতা একটি মানবাধিকার- বলেছে ইউনিভার্সাল ডিক্লারেশন অব হিউম্যান রাইটস, এর ১৯ নাম্বার আর্টিক্যালে। ইন্টারন্যাশনাল কনভেন্ট অন সিভিল এন্ড পলিটিক্যাল রাইটসের (আইসিসিপিআর) ইন্টারন্যাশনাল হিউম্যান রাইটস ল এর সমর্থন দিয়েছে। তবে মত প্রকাশের স্বাধীনতা শর্তসাপেক্ষ- মন চাইলেই আমি যা ইচ্ছে বলতে শুরু করলাম, বিষয়টা আসলে তা না।
তবে আর্টিক্যাল ১৯ বলে দিচ্ছে যে এই অধিকারের প্রয়োগ বা চর্চা কিছু কার্যভার (ডিউটিজ) এবং দায়িত্ব বহন করে। সুতরাং অপরের সন্মান ও সুনামের প্রশ্নে অথবা জাতীয় নিরাপত্তা বা সরকারী আদেশ, অথবা জনস্বাস্থ বা নীতির প্রশ্নে যখন প্রযোজ্য, এটি কিছু বিধিনিষেধ সাপেক্ষ। তবে এটি একদা মি. খালিদী যে পয়েন্ট অব ভিউ থেকে বলেছিলো, আসলে সেরকম না। মোটকথা, মত প্রকাশ করায় নিষেধ নেই কিন্তু একটু কথা আছে- এই আর কি!
প্রীত হলাম যখন দেখলাম সরকার কিছু ব্লগসাইট এবং ফেসবুক পেইজ বন্ধ করে দিয়েছে। এ সংক্রান্ত খবরে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) ভাইস চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ কম্পিউটার সিকিউরিটি ইনসিডেন্ট রেসপন্স টিমের (বিডি-সিএসআইআরটি) আহ্বায়ক গিয়াসউদ্দিন আহমেদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন,
আমরা ইতিমধ্যে জানতে পেরেছে যে রাজীবের নাম ব্যবহার করে যে ফেসবুক এ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছিলো, তা খোলা হয়েছিলো রাজীবের মৃত্যুর পরে যে প্রোফাইলে বিতর্কিত লিঙ্কগুলো জুড়ে দেওয়া হয়েছিলো রাজীবকে নাস্তিকের চুড়ান্ত প্রমান করতে। তাছাড়া রাজীবকে অথর সাজিয়ে যে বিতর্কিত লেখাগুলো ওয়েবে ছড়ানো হয়েছিলো তার সবই ছড়ানো হয়েছিলো রাজীবের মৃত্যুর রাতে বা তার পরদিন। এখানেই অনেক প্রশ্নের উত্তর মেলে। রাজীব মারা যাওয়ার পর যারা এগুলো করছে তাদের সুনির্দিষ্ট উদ্দেশ্য আছে এর পিছনে- রাজীবকে পাঁড় নাস্তিক সাজিয়ে শাহবাগের জনতার আন্দোলনকে ইসলাম বনাম এন্টি-ইসলামিক একটা রূপ দেওয়া। এটাই রাজীবের খুনী কারা এটা পরিষ্কার করে।
জনাব আহমেদের বক্তব্যসূত্রে বিটিআরসির সাইবার ক্রাইম ক্রাইটেরিয়ার যেগুলো পড়ে সেগুলো হচ্ছে ইন-জেনারেলি বিদ্বেষ সৃষ্টিকারী এবং সেটা হতে পারে রাষ্ট্রে, সমাজে, রাজনীতিতে, ধর্মে। এবং বিদ্বেষের ইভেঞ্চুয়ালিটি হচ্ছে সহিংসতা- এটা ঐতিহাসিকভাবে প্রমানিত। তাহলে আমরা সংক্ষেপে একটু দেখতে পারি সাম্প্রতিক স্বাধীনতাবিরোধী চক্রের তথাকথিত ‘মত প্রকাশ’ কিভাবে বাংলাদেশের সাইবার অপরাধ নীতিমালায় অপরাধ হিসেবে দেখা হয়।
রাষ্ট্র হচ্ছে একটি সমন্বিত স্বত্বা- জনগন, সমাজ, সংস্কৃতি, ইত্যাদির একটি সমন্বিত রূপ। রাষ্ট্রের একটি ইতিহাস থাকে যে ইতিহাস রাষ্ট্রের অতীত, অদ্ভুদ্বয়, বিবর্তন, সার্বভৌমত্ব, ইত্যাদি নির্ভর। সেক্ষেত্রে প্রথমতঃ একটি স্বাধীন রাষ্ট্রকে আফগানিস্তান, ফিলিস্তিন, ইত্যাদি বানাতে চাওয়া রাষ্ট্রদ্রোহীতা ছাড়া আর কিছুই না। তেমনি, জনগনের গণদাবী এবং যে গণদাবী নির্বাচিত সরকার কর্তৃক সমর্থিত, সেই দাবীর বিরুদ্ধে সাইবার প্রচারাভিযান চালানো যে কোনও বিবেচনায় রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সাইবার অপরাধের আওতায় পড়তে পারে। এরা সরকারকে শেখ হাসিনার সরকার বা আওয়ামী লীগের সরকার হিসেবে আখ্যায়িত করছে কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে সরকারের মালিক জনগণ। সরকার কোনও ব্যাক্তি বা দলের একক সম্পত্তি নয়।
রাজীবকে ঘোষনা দিয়ে হত্য করাটা সমাজ জীবনে দারুনভাবে নিরাপত্তাহীনতার বিষয়টি তুলে এনেছে এবং একইসাথে সরকারের ভুমিকাকেও প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। এছাড়াও রাজীবের জানাজার ইমাম সাহেবকে জবাই করে হত্যার ঘোষনা সামাজিক নৈরাজ্য সৃষ্টিরই একটি হুমকি। এইসব হুমকিতে যদিও মানুষ পথ ছেড়ে ফিরে যাবেনা কিন্তু তাদের পরিবার-পরিজনের উতকন্ঠা এইসব হুমকিতে বৃদ্ধিই পাচ্ছে। এইভাবে অনলাইনে হত্যার ঘোষনা দেওয়া পরিষ্কারভাবে একটি অপরাধ।
শাহবাগ আন্দোলন একটি অরাজনৈতিক আন্দোলন। এতে ভিন্ন ভিন্ন রাজনৈতিক দল ও মতের মানুষ সামিল হয়েছে। কিন্তু উদ্দেশ্যমূলকভাবে এই চক্রটি এই আন্দোলনকে আওয়ামী লীগের একটি রাজনৈতিক খেলা হিসেবে অপপ্রচার চালাচ্ছে। জামাতীদের উদ্দেশ্য স্পষ্ট- এই ধুয়ো তুলে আন্দোলনকে বিভক্ত করে। স্বাধীনতার সপক্ষের মানুষের মধ্যে রাজনৈতিক ডিস্টিঙ্কশন তৈরী করে জনতার এই আন্দোলনকে ধ্বংস করার অপচেষ্টা অপরাধ ছাড়া আর কিছুই নয়।
আমার মতে এইসব প্রচারনার অন্যতম খারাপ ইম্প্যাক্ট হচ্ছে ধর্মীয় বিভাজন সৃষ্টির অপচেষ্টা। বাংলাদেশের অল্পকিছু মানুষ বাদের বাকী সবাই অসাম্প্রদায়িক এবং এখানে সব ধর্মের মানুষ সৌহার্দের সাথে বসবাস করে। কিছু বিচ্ছিন্ন দুর্ঘটনা অবশ্য এখানে ঘটেছে তবে তার গোটাটাই এই নষ্টচক্রের সৃষ্টি। আশা করি এদের এইসব প্রচার কোনই কাজে আসবে না কিন্তু তার পরেও যদি ওদের এই ইসলাম বনাম নাস্তিক্যবাদ বা এন্টি-ইসলাম কোনও ভাবে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টে অবদান রাখে, এরাই তার জন্য এককভাবে দায়ী। আর সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের অপচেষ্টা এবং বিভিন্ন ধর্মের মানুষের মাঝে অবিশ্বাস সৃষ্টিকারী কর্মকাণ্ড নিঃসন্দেহে অপরাধ।
এই হচ্ছে ওদের মত প্রকাশের নমুনা। এই মতগুলো শাহবাগের ঐক্যে ফাঁটল ধরাতে তেমন কোনও কাজে না আসলেও আমাদের সতর্কতা জরুরী। একইসাথে আমাদের প্রয়োজন সরকারের পদক্ষেপ। লক্ষ করেছি এরা প্রবাসীদের উপর কিছুটা হলেও প্রভাব ফেলতে সক্ষম হচ্ছে। চোখ রাখুন ওদের সাইবার কর্মকাণ্ডে, সাইবার স্পেসেই ওদের জবাব দিন, প্রতিহত করুন। তবে সরকার আন্তরিক হলে ওদের সাইবার ক্রাইম দমনে সবথেকে কার্যকরী ভুমিকা রাখতে পারে। যখনই ওদের কোনও সাইবার অপকর্মকাণ্ড আপনার চোখে পড়ে, নিজের পক্ষে যা করা সম্ভব (যেমন, রিপোর্ট করা, কাউন্টার কমেন্ট করা, ইত্যাদি) করুন আর সাথে সাথে সরকারের সংশ্লিষ্ঠ দপ্তরে তার কিঙ্ক পাঠিয়ে দিন এই ঠিকানায়- contactএ্যাটcsirt.gov.bd। সরকার যদি অভিযোগ পাওয়া মাত্র লিঙ্ক দেখে সাথে সাথে ব্যবস্থা নেয়, তবে একদিকে ওদের অপকর্ম যেমন কম মানুষের কাছে পৌঁছাবে; অন্যদিকে, ক্রমাগত ব্যান খেতে খেতে ওদের অনেকেই উতসাহ হারিয়ে ফেলবে।
আর শুধু অভিযোগ করে বসে থাকলে হবে না, সরকার কতোটুকু আন্তরিকতার সাথে এই অভিযোগগুলোর ভিত্তিতে ব্যবস্থা নিচ্ছে, তা’ও লক্ষ রাখতে হবে।
মন্তব্য
আসলেই। নইলে এত দ্রুত লিংক ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছিল কেন? সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় কি জানেন, নিজেকে ইসলামের একনিষ্ট সেবক মনে করেন, এমন অনেক ব্যক্তিকে দেখা গেছে মহানবীর প্রতি অবমাননাকর লেখাগুলো ফটোকপি করে হাতে হাতে ধরিয়ে দিতে। এই কাজ করতে এদের ভিতর পাপবোধ জাগেনি। এইখান থেকেই এদের আসল উদ্দেশ্য উপলব্ধি করা যায়। আসলে ধর্মের প্রতি ভালবাসা থেকে নয়, বরং শাহবাগ আন্দোলনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতেই তাদের এই কপিচেষ্টা!
এটাই আসল কথা। ধন্যবাদ।
------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।
------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।
হ্যাঁ, এটাই আসল কথা।
------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।
নতুন মন্তব্য করুন