যদি তুমি বড়োসড় আকারে মিথ্যা বলতে পারো এবং সেটা চালিয়ে যেতে পারো, শেষে এসে জনতা তোমার কথা বিশ্বাস করতে শুরু করবে।
একদিনের জার্মান চ্যাঞ্চেলর এবং হিটলারের প্রচারমন্ত্রী পল জোসেফ গোয়েবলসের বলা এই কথাটি আজ অবধি সত্যি হিসেবে দেখা যাচ্ছে। সাম্প্রতিক গণজাগরন নিয়ে আমাদের সাইবার প্রচারজগতে গোয়েবলসের কথার সত্যতা চোখে পড়ার মত।
রাজীবকে নিয়ে জামাত-শিবিরের এন্টি-প্রোপাগান্ডা, রাজীবকে নাস্তিক বানাতে বানাতে শেষে শাহবাগের গোটা আন্দোলনটাকে নাস্তিকদের আন্দোলন বানানোর অপচেষ্টায় পৌঁছেছে। এদের এই অপচেষ্টাকে তুচ্ছ করে দেখার সুযোগ নেই। ওরা যে ব্যাপক গতিতে পার্টিকুলারলি রাজীবের ইস্যুতে সক্রিয় অপপ্রচার চালিয়েছে, তার বিপরীতে রাজীবের নাম ব্যবহার করে ওইসব ভুয়া পোস্টের প্রতিবাদে সাইবার প্রচার আরও জোরদার হওয়া প্রয়োজন ছিলো বলে আমার মনে হয়েছে।
ছোটবেলায় পড়া সেই দশের লাঠি একের বোঝা নীতিগল্পটির কথা মনে পড়ে গেলো। শাহবাগের প্রজন্ম চত্বরের গণআন্দোলন এক ও অভিন্ন ইস্যুতে গত ৫ ফেব্রুয়ারী থেকে চলমান। মুলত অন্তর্জালের লেখকরাই এই আন্দোলনের সুচনাকারী ও পুরোধা। যে কারনে এই আন্দোলনে অনলাইনভিত্তিক প্রচারাভিযান বিশেষভাবে গুরুত্বপুর্ন। কিন্তু আমার উদ্বেগ হচ্ছে এই শাহবাগ প্রজন্ম চত্বরকে ঘিরে ফেসবুকে যে পরিমান গ্রুপ ও পেইজ সৃষ্টি হয়েছে তা পরিনামে সেই গল্পের মতো সমষ্টির শক্তিকে প্রচারের মতো গুরুত্বপুর্ন একটা ক্ষেত্রে আরও শক্তিশালী হওয়ার সুযোগবঞ্চিত করছে।
সবাই এক হয়ে প্রচারাভিযান চালালে সমস্যা কোথায়? শাহবাগ আন্দোলন তো কোনও দলের আন্দোলন নয়, এটা সতস্ফুর্ত জনতার আন্দোলন।
আরেকটা উদ্বেগজন পয়েন্ট হচ্ছে সাইবার স্পেসে এই প্রজন্ম চত্বর নাম দিয়ে একটা স্বাধীনতা ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিরোধী চক্র পানি ঘোলা করায় লিপ্ত। আমি আইটি এক্সপার্ট নই, এক্সপার্টরাই এর টেকনিক্যাল বিষয়গুলো বুঝবেন। গতকাল খালেদা জিয়াকে তথাকথিত হত্যার হুমকি দিয়ে যে পোস্টটি এসেছে, তা এসেছে প্রজন্ম চত্বর নামের একটা ফেসবুক পেইজ থেকে। ঘর পোড়ার মধ্যে আলুপোড়া দিয়ে খাওয়া মানুষের কিন্তু এই দেশে অভাব নেই। আরও লক্ষ্য করে দেখলাম এই বিভিন্ন পেইজগুলোতে স্বাধীনতা বিরোধী চক্রের ব্যাপক আনাগোনা, বিশেষ করে মন্তব্যের ঘরগুলোতে।
আমরা আবেগপ্রবন জাতি এবং এই আবেগ আমাদের জাতীয় জীবনের অনেক গুরুত্বপুর্ন অর্জনে সাফল্য এনে দিয়েছে। এর সাম্প্রতিক প্রমান দল-মত নির্বিশেষে শাহবাগের এবং অতঃপর সারাদেশে মানুষের গণজাগরন। কিন্তু এন্টি প্রোপাগান্ডা সাধারন মানুষের নিষ্পাপ আবেগকে বিপথে পরিচালিত করতে পারে- এটা ভুলে গেলে বা হালকা ভাবে নিলে চলবে না। স্বাধীনতা বিরোধীদের অপকর্মের দায় যেনো প্রজন্ম চত্বরের গায়ে আঁচড় না ফেলে সেদিকে সজাগ দৃষ্ট রাখা একান্ত জরুরী।
এমতাবস্থায়, আমার মনে হয় গণজাগরণ মঞ্চ থেকে কিছু উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে, যেমন-
# ইমরান এইচ সরকার অন্য পেইজগুলোকে তাদের মুল পেইজের সাথে মার্জ করার আহবান জানাতে পারে।
# সে এবং নেতৃত্বের সামনের মানুষগুলো তাদের প্রোফাইলে মুল পেইজের লিঙ্ক এন্ডোর্স করতে পারে যাতে সাধারন মানুষ যত্রতত্র না ঘুরে সেই আসল পেইজে এসে ঐক্যবদ্ধ হতে পারে।
# সে একটা ডিস্ক্লেইমার দিতে পারে যে তাদের পেইজ ছাড়া অন্য কোনও পেইজের কোনোরকম অপপ্রচারের দায় প্রজন্ম চত্বর নেবেনা।
# বিতর্ক সৃষ্টিকারী এবং সন্দেহজনক পেইজগুলোকে মাস রিপোর্ট করা যেতে পারে।
ইংরেজিতে আমরা একটা কথা ব্যবহার করে থাকি- কম্যুনিকেটিং রেজাল্ট। এর মানে হচ্ছে অর্জনগুলোকে দৃশ্যমান করা। যেখানে স্বার্থটি গণমানুষের, সেখানে অর্জনগুলোকেও মানুষের সামনে উপস্থিত করতে হবে। এই সাফল্যগাঁথা মানুষের লক্ষ্য আদায়ের লড়াইয়ে আরও উজ্জিবীত করবে। একইসাথে বিশ্ববাসীকেও জানাতে হবে প্রজন্ম চত্বরের সাফল্য। একটা সমন্বিত সাইবার প্লাটফর্মের এই রেজাল্ট কম্যুনিকেট করার শক্তি অসীম।
একটা বিষয় মনে রাখা প্রয়োজন জামাত-শিবিরের ফান্ডিং বেইস আছে কিন্তু প্রজন্ম চত্বরের আছে চেতনার ঐক্য। সুতরাং, এদের বিরুদ্ধে লড়তে ঐক্যকে আরও শক্তিশালী করে তোলা প্রয়োজন। ওদের এন্টি-প্রোপাগান্ডা মেশিন চালায় পয়সায় তাই আমাদের মাঝে ঐক্য শক্তিশালী না হলে ওদের পয়সায় চালানো মেশিন চলতেই থাকবে।
মন্তব্য
সবাইকে সচেতন এবং সতর্ক থাকতে হবে।
------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।
আমার মনে হয় মঞ্চ থেকে এটা ভালোভাবে ঘোষণা দেওয়া যেতে পারে যে তাদের অফিসিয়াল পেজ থেকে যে ঘোষণা আসবে সেটাই তাদের কথা। এর বাইরের কোন বক্তব্যের দায়দায়িত্ব তারা নেবে না।
__________________
জানি নিসর্গ এক নিপুণ জেলে
কখনো গোধূলির হাওয়া, নিস্তরঙ্গ জ্যোৎস্নার ফাঁদ পেতে রাখে
এটা করা অত্যন্ত জরুরী। ধন্যবাদ।
------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।
যে মানুষটি ইন্টারনেটে একটা ব্লগ খুঁজে বের করতে পারে, ব্লগ লিখতে বা ফেসবুকিং করতে পারে, টুইটারে টুইট করতে পারে সে অন্তত এটা বোঝে — যে কেউ, যে কারো নামে একটা ব্লগসাইট বা ফেসবুক খুলে অন্য যে কাউকে হুমকি দিতে পারে বা যা খুশি তাই লিখতে পারে। সুতরাং ইন্টারনেট অ্যাক্সেসসম্পন্ন কমিউনিটির কেউ যদি এমনসব অপপ্রচারগুলোতে গলা মেলায় তাহলে বুঝতে হবে সে জেনে বুঝেই এই অপপ্রচারের অংশ হয়েছে।
কিন্তু ইন্টারনেটের সুবিধাবঞ্চিত বা ব্লগ/ফেসবুক/টুইটার বোঝে না এমন সিংহভাগ মানুষকে এ’সব ব্যাপারে ভুল বোঝানোর যথেষ্ট অবকাশ আছে। তাই অনলাইনের বাইরে বিস্তারিত পরিসরে কাজ করাটা খুবই জরুরী। যে দেশের বিরাট সংখ্যক মানুষকে চাঁদে কারো চেহারা দেখা গেছে এমন মিথ্যাচার দিয়ে খেপিয়ে খুনোখুনিতে নামিয়ে দেয়া যায় সে দেশে প্রচারণা, বোঝানো, সচেতনতা বৃদ্ধি ইত্যাদি চালাতে হবে তৃণমূল পর্যায়ে।
একটা ব্যাপার লক্ষনীয় যে, ছাপানো পত্রপত্রিকা, বিদেশী গণমাধ্যমের স্থানীয় প্রতিনিধি, স্থানীয় গণমাধ্যমে নিয়মিত লেখা বা বলা সেলিব্রেটিদের মধ্যে ছাগুবান্ধবতা প্রবল। এই ব্যাপারটি এমনি এমনি হয়নি। জামায়াত বহুদিন ধরে একটু একটু করে বিভিন্ন গণমাধ্যমে তাদের লোকজনকে ইমপ্ল্যান্ট করেছে। সেলিব্রেটি বা স্বাধীন গণমাধ্যম কর্মীদের মধ্যে সুযোগ-সুবিধা প্রদানের মাধ্যমে অন্নঋণ তৈরি করেছে, ভবিষ্যতে আরো প্রাপ্তিযোগের সম্ভাবনা দেখিয়েছে। এই ব্যাপারগুলো কনফ্রন্ট করা এতো সহজ নয়। অসংগঠিত সাধারণ জনগণের পক্ষে এগুলো পুরো মাত্রায় ও কার্যকরভাবে মোকাবেলা করা সম্ভব নয়। এই ব্যাপারে সবচে’ বড় ভুমিকাটি নিতে হবে সরকারকে। আওয়ামী লীগ ও তার সমমনা দলগুলোর এই ব্যাপারে দৃশ্যত কোন কর্মপরিকল্পনা নেই — এরও অবসান হওয়া দরকার।
যুদ্ধটা খুব সহজ নয়। কারণ প্রতিপক্ষ অনেক সংগঠিত, বিস্তৃত, শক্তিশালী ও অর্থবান। তার মানে এই না যে তাদের পরাজিত করা যাবে না। ১৯৭১ সালেও তাদের অবস্থা এমনই ছিল, রাষ্ট্রশক্তিও তাদের পক্ষে ছিল। সেদিন আমাদের all out effort জয় এনে দিয়েছিল। এখনো জিততে হলে অমন all out effort-ই দিতে হবে।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
__________________________________
----আমার মুক্তি আলোয় আলোয় এই আকাশে---
তোমার সাথে একমত কিন্তু তারপরও কথা আছে। ব্লগ, ফেসবুক বা টুইটার ব্যবহারকারী কত শতাংশ মানুষ সাইবার তথ্যপ্রযুক্তির কারিগরী দিকগুলো বোঝে? তোমার-আমার লেভেলে এইসব ধাপ্পাবাজী ভাত পাবেনা নিশ্চিত থেকো কিন্তু অনেক ইউজার আছে যারা আসলেই টেকনিক্যালি দুর্বল।
প্রজন্ম চত্বর নামধারী যে পেইজ থেকে খালেদা জিয়াকে হুমকী দেওয়া হয়েছে, সেটার ফ্যান সংখ্যা কিন্তু ২৮,৮২৬- সংখ্যাটা কিন্তু একেবারে ফেলে দেওয়ার মতো নয়। কিভাবে এই পেইজের উতপত্তি, বা এটি আদৌ একটি রিয়াল পেইজ কি না, সে অনুসন্ধান কিন্তু সাধারন ইউজাররা না'ও করতে পারে টেকনিক্যাল জ্ঞ্যানের সীমাবদ্ধতার জন্যে। আর এখানেই জামাতিদের অপর্চুনিটি। এবং সাধারনের আবেগ জামাতিরা সুকৌশলে অপব্যবহার করার চেষ্টা করছে।
------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।
এই প্রোপাগান্ডায় সবচেয়ে বেশি এগিয়ে আছে- যে শাহবাগের আন্দোলন হচ্ছে নাস্তিকদের আন্দোলন।
পথে-ঘাটে যেখানেই বেরোচ্ছি সেখানেই এই কথা শুনছি।
নাস্তিকদের স্বপক্ষে শাহবাগ মঞ্চে কেউ একটা শব্দ করে নি, তারপরও এই প্রচারণায় তারা সফল হয়ে গেছে প্রায় !
আমাদের সমস্যা হলো, ধর্মের বিপক্ষে কেউ কোন কথা বলেছে শুনলেই আর যাচাই করার কথা ভাবতে যাই না।
আপনার সাথে একমত। আমি গ্রামগঞ্জের খোঁজ রাখি, অনেক সাধারন গ্রামবাসীর কথা শুনেছি যারা জামাতিদের ঘৃণা করে কিন্তু আবার নাস্তিকদের পিছনে সমর্থন দিতে আগ্রহী নয়।
সত্যি কথা সবসময় বলা ঠিক না, সঠিক সময়ে এসে বলতে হয়। যে মুহুর্তে জামাতিরা শাহবাগের আন্দোলনকে নাস্তিকতার ট্যাগ লাগিয়ে অপপ্রচারে ফাটিয়ে ফেলছে, ঠিক সেই মুহুর্তে মাননীয় তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু নবিজীর নামে কুতসা রটনাকারীদের প্রতি কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করলেন এবং আওয়ামী ওলামা লীগ নাস্তিকদের ফাঁসির দাবী নিয়ে প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন করে বসলো। এর ঠিক পরপরই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী রাঙ্গামাটি মিটিং-এ একই হুঁশিয়ারি দিলেন। আমার মনে হয় এই কথাগুলো পরে বললেও তেমন ক্ষতি হতো না।
------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।
মার্জ করার কি বাস্তবসম্মত কোন উপায় আছে?
টেকনিক্যালি বোধহয় সম্ভব নয় স্যামদা। তবে একই স্পিরিট যারা ধারন করছে, তারা প্রজন্ম চত্বরের অফিসিয়াল পেইজে মাইগ্রেট করতে পারে। এভাবে মার্জার সম্ভব। ধন্যবাদ।
------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।
বিজয় অর্জন কঠিন বটে, ততোধিক কঠিন বিজয়কে ধরে রাখা। আমাদের সকলকে সজাগ থাকতে হবে।
কঠিন হলেও দুটোর কোনটাই অসাধ্য নয় ভাই। শুধু সজাগ থেকে লাভ নেই, অপপ্রচারের জবাব প্রচার দিয়েই দিতে হবে নতুবা বহুবাচ্য মিথ্যেটাই সত্যি হয়ে দাঁড়িয়ে যাবে। ধন্যবাদ।
------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।
নতুন মন্তব্য করুন