শুরুতেই সাইক্লোন সিডর (২০০৭) ও সাইক্লোন নার্গিসের (২০০৮) মাত্রা ও ক্ষয়ক্ষতির তুলুনামূলক চিত্রটিতে একটু চোখ বুলিয়ে নিন পাঠক।
টেবিলটি নিজেই ব্যাখ্যা দিচ্ছে যে কোন মাত্রার ঘুর্নিঝড়ের স্বীকার দুটি দেশ কি পরিমানে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। আর মায়ানমারে আহতের কোনও সংখ্যা পাওয়া যায়নি কারন আমার পরিচিত অনেক মায়ানমার ফেরত মন্তব্য করেছে যে আহতেরা প্রায় সকলেই আঘাতের পর কয়েকদিনের মধ্যেই মারা গেছে কারন তাদেরকে কেউ তেমনভাবে উদ্ধার করতে এগিয়ে আসেনি। সেক্টরাল বন্ধুরা অনেকেই মন্তব্য করে থাকে যে নার্গিসের আঘাতের সময় মোট মৃতের সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ মানুষ মারা গিয়ে থাকতে পারে। নার্গিসের আঘাত হানার কয়েকমাস আগে আমি আফগানিস্তান থেকে বিনা নোটিশে চাকরী ছেড়ে দিয়ে বাংলাদেশে এসে একটা বিদেশী সংস্থার সিডর রেস্পন্স প্রোগ্রামে সিনিয়র প্রোগ্রাম ম্যানেজারের কাজে যোগ দিয়েছি। সাইক্লোন আঘাত হানার পরদিনই একটি বিলেতি সংস্থা আমাদের ১৫০ জনের একটি দলের মায়ানমারে গিয়ে দ্রুত রেস্পন্সের কাজে নেমে পড়ার জন্য মিয়ানমারের সামরিক সরকারের কাছে আবেদন জানায়। বলাই বাহুল্য যে ১৫০ জনের মধ্যে থেকে ১ জনকেও তারা মায়ানমারে ঢুকতে দেয়নি।
তো স্বভাবতই মনে প্রশ্ন জাগতে পারে মায়ানমারের কেনো এক বিশাল ক্ষতি! তুলনামূলক স্বল্প মাত্রার ঘুর্নিঝড়ে মায়ানমার কেনো এই বিশাল ক্ষতি। যারা এই সেক্টরের মানুষ না বা যারা এইসব খোঁজখবর রাখেনা তাদের কাছে তো এটা অবাক হওয়ার মতোই বিষয়। তাই আমি ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা নিয়েছি একটু ব্যাখ্যা করার যে কোন শক্তির বলে বাংলাদেশ তুলনামূলকভাবে এতো অল্প ক্ষতির উপর দিয়ে সিডরের আঘাত সামলেছে। এটি কোন কারিগরী নিবন্ধ নয় এবং বিনয়ের সাথে জানাচ্ছি এবিষয়ে কারিগরী নিবন্ধ লেখার মতো স্তরের দক্ষতা আমার আছে বলে আমি মনে করিনা। তবে আরও ভালোভাবে বা বিস্তারিত জানতে চাইলে বিশেষজ্ঞ কারো সাথে আলাপ করা বা গুগলিং করা সবথেকে ভালো উপায়।
যে কোনও প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঝুঁকি হ্রাস বা মোকাবেলা বাংলাদেশের বিশাল একটি শক্তি। একটি পত্রিকা বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর বরাত দিয়ে লিখেছে যে বাংলাদেশের ভূখণ্ডে ১৫৮৪ সাল থেকে ১৯৬৯, এই ৩৮৫ বছরে অস্বাভাবিক ঘুর্নিঝড়ের সংখ্যা ছিলো ২৭টি। পক্ষান্তরে, ১৯৭০ থেকে ২০০৯, এই ৩৯ বছরে এর সংখ্যা ছিলো ২৬টি। বারবার এই প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মুখে পড়ে সহজাত ভাবে যেমন মানুষের প্রস্তুতি ও ক্ষতি প্রশমনের সক্ষমতা বেড়েছে। তেমনই সরকার ও বিভিন্ন মানবতাবাদী উন্নয়ন সহযোগিদের ক্রমাগত সহযোগিতায় এই ঝুঁকি প্রশমনের সক্ষমতা একটি পদ্ধতিগত কৌশলের রুপলাভ করেছে।
আমরা দুর্যোগজনিত ঝুঁকি প্রশমনকে তিনটি পর্যায়ে ভাগ করতে পারি। নিচের চিত্রে এই ধাপগুলো ও ধাপগুলোর অধীনে কিছু কাজ দেখাতে চেষ্টা করেছি। বলে রাখি, এগুলো কেবলমাত্র নির্দেশনামূলক। এর বাইরে অনেক কিছু আছে যা স্বল্প পরিসরে আলোচনা দুরুহ।
প্রথমেই আসে প্রাক-দুর্যোগকালীন ঝুঁকি প্রশমন। এই পর্বে বাংলাদেশ বিশেষভাবে সক্ষমতা অর্জন করেছে মূলত নিজস্ব সম্পদ, উদ্যোগ ও ব্যবস্থাপনায়। এই কাজে বিদেশী অর্থায়ন থাকলেও এর ব্যবস্থাপনায় বিদেশীদের উপস্থিতি তুলনামূলকভাবে কম। আর এই কাজের আরেকটি উল্লেখযোগ্য বিষয় হচ্ছে লোকালয়ভিত্তিক দুর্যোগ ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা বা সিবিডিয়ারএম। সরকার ও উন্নয়ন সহযোগিদের পাশাপাশি লোকালভিত্তিক সমাজ ও ব্যাক্তিপর্যায়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিষয়ক জ্ঞ্যান ও চর্চা ছড়িয়ে দেওয়া এই উদ্যোগের বিরাট একটি সাফল্য। এই সাফল্যের কিছু ফিচার্স আমি নিচে উল্লেখ করছি-
# বাংলাদেশে রেডক্রস আন্দোলন অনেক শক্তিশালী এবং ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত এর কার্যক্রম বিস্তৃত। যে কোনও প্রাকৃতিক দুর্যোগকালে এই রেডক্রসের ভলান্টিয়াররাই সর্বপ্রথমে সতর্কতার বার্তা নিয়ে মাঠে নেমে আসে। এবং এরাই প্রাথমিক দুর্যোগ মোকাবেলার কাজ শুরু করে থাকে স্থানীয় সরকারের সাথে। যেমন, এই ভলান্টিয়াররা ঘোষনার পাশাপাশি মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়ার ব্যবস্থা করে ও উদ্ধারকাজে নেমে পড়ে।
# সরকার ও বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগিদের সহায়তায় মানুষ এখন দুর্যোগ ও তার ভয়াবহতা সম্পর্কে জ্ঞ্যান রাখে এবং কিভাবে এই দুর্যোগজনিত ঝুঁকি প্রশমন করা যায় সে সম্পর্কেও ধারনা রাখে।
# দেশের অনেক জায়গায় স্কুলে, কলেজে, গ্রামে, বিভিন্ন দূর্যোগ অবস্থায় করণীয় নিয়ে মক টেস্ট বা সিমুলেশন করা হয়।
# আপদকালীন প্রস্তুতির ক্ষেত্রে বাংলাদেশের মানুষ বিশেষকরে উপকূলীয় জনপদের মানুষ আগের থেকে এখন অনেক বেশি সজাগ। তারা দুর্যোগের আভাস পেলে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিতে শুরু করে যেমন নিরাপদ স্থানে সরে যাওয়ার প্রস্তুতি, পানীয় জল সংগ্রহ করা, ইত্যাদি।
# বেসরকারী উন্নয়ন সহযোগিদের করা অন্যতম একটা উল্লেখযোগ্য কাজ হচ্ছে প্রয়োজনীয় সামগ্রীর স্টকপাইলিং করা। কিছু কৌশলগত স্থানে দুর্যোগে প্রয়োজনীয় সামগ্রী আগে থেকে জমা করে রাখা যা দুর্যোগ আঘাত হানার সাথে সাথে উপদ্রুত মানুষদেরকে সরবরাহ করা যায়। এইসব সামগ্রীর মধ্য থাকে পানি বিশুদ্ধকরন ট্যাবলেট, খাওয়ার স্যালাইন, প্লাস্টিকের শিট, জেরিক্যান, সাবান, রান্নাঘরের সামগ্রী, কম্বল, বালতি, প্লাস্টিকের ল্যাট্রিন স্ল্যাব, ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট ও ট্যাঙ্ক, ইত্যাদি। এখানে কৌশলগত স্থান বলতে বোঝানো হয়েছে সেইসব স্থানকে যেখানে দুর্যোগের পরে প্রবেশ করা দুরুহ হয়ে পড়ে এবং যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ার দরুন বাইরে থেকে তাৎক্ষনিক সহায়তা পাঠানো কঠিন হয়ে পড়ে।
দুর্যোগকালীন ও দুর্যোগপরবর্তী ঝুঁকি প্রশমন কাজগুলো মানবিক সাড়া (বা সঙ্কটের মোকাবেলা) হিসেবেই গণ্য করা হয়। এই দুটি পর্যায় এ্যাকশন ওরিয়েন্টেড। এখানেও বাংলাদেশের সক্ষমতা উল্লেখযোগ্য। ভৌত অবকাঠামো এবং মোকাবেলা কৌশল, দুটি জায়গাতেই আমাদের সক্ষমতা বলার মতো। সীমিত সম্পদ নিয়ে আমরা যেভাবে এই মোকাবেলাগুলো করি তা থেকে অনেক দুর্যোগপ্রবন দেশই শিখতে পারে। তবে বড় স্কেলের দুর্যোগে এই দুটি পর্যায়ের জন্য আমাদের অনেকাংশেই নির্ভর করতে হয় অভিজ্ঞ বিদেশী রিলিফ কর্মীদের উপর।
দুর্যোগকালীন বিপদ মোকাবেলার বেশ কিছু সাফল্যজনক বিষয় এখানে তুলে ধরার চেষ্টা করছি।
# এখন দুর্যোগকালীন করনীয় নিয়ে মানুষের সচেতনতা আগের যে কোনও সময়ের থেকে বেশি। মানুষ জানে কোন অবস্থা কি করতে হয়।
# বাংলাদেশে অনেক সাইক্লোন শেল্টার আছে যদিও তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল এবং জেন্ডার রেস্পন্সিভ নয়। তবে আপদকালে স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, ইত্যাদি স্থাপনাগুলো শেল্টারের কাজে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। উপদ্রুত মানুষ তাদের নিকটস্থ শেল্টারে যেতে তৎপর থাকে। এছাড়া গ্রামের মধ্যে দিয়ে সেল্টারে যাওয়ার জন্য মাটির রাস্তা থাকে। তবে না বললেই নয়, আমি দেখেছি অনেক সময় প্রভাবশালী লোকেরা এই রাস্তা গ্রাস করে ফেলে। সিডরের পর আমি নিজে এইরকম বেশ কয়েকটা রাস্তা উদ্ধার করে গ্রামবাসীদের মাধ্যমে সংস্কার করেছি।
# আপদকালে শেল্টারে অবস্থানরত মানুষের জন্যে সরকারের পক্ষ থেকে চিড়া, মুড়ি, গুড়, ইত্যাদি সরবরাহের ব্যবস্থা থাকে।
# সামান্য কিছু ব্যাতিক্রম ছাড়া দেখা যায় আপদকালে মানুষ ভেদাভেদ ভুলে একসাথে দুর্যোগকে মোকাবেলা করে থাকে।
# দুর্যোগের সময় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন, বেসরকারী উন্নয়ন সহযোগি সংস্থা, বেসামরিক প্রশাসন ও সামরিক বাহিনী শৃঙ্খলার সাথে একসাথে কাজ করে থাকে। এই সমন্বয় বাংলাদেশের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার একটি বিরাট শক্তি।
দুর্যোগ পরবর্তীকালে আমাদের সক্ষমতাও অনেক প্রমানিত। এর কিছু উদাহরন এখানে তুলে ধরছি-
# বাংলাদেশে প্রায় ৬৪,০০০ রেডক্রস ভলান্টিয়ার রয়েছে যাদের বিভিন্ন স্তরের উদ্ধারকাজের প্রশিক্ষন রয়েছে।
# বাংলাদেশের সরকার ও বেসরকারী উন্নয়ন সহযোগিদের ত্রাণসামগ্রী, খাদ্য পানীয়জল ব্যবস্থাপনায় বিশেষায়িত দক্ষতা রয়েছে।
# বাংলাদেশে দুর্যোগকালীন জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা অনেক শক্তিশালী।
# স্থানীয় জনগোষ্ঠী দুর্যোগপরবর্তীকালে নিজস্ব উদ্যোগে বা সামান্য সহায়তা কাজে ঘরবাড়ি মেরামত শুরু করে। বাংলাদেশে এখন মালিক চালিত গৃহসংস্কার (ওনার ড্রিভেন শেল্টার রিপেয়ারিং) ধারনাটি অনেক জনপ্রিয়।
# বাংলাদেশের অধিকাংশ বেসরকারী উন্নয়ন সহযোগি সংস্থার জেলা পর্যায়ের সরবরাহকারীদের সাথে ফ্রেমওয়ার্ক এগ্রিমেন্ট থেকে ফলে ২৪-৪৮ ঘন্টা সময়ের মধ্য সংস্থাগুলো ত্রাণ কার্যক্রম শুরু করতে পারে।
সর্বোপরি বলতে হয় যে বাংলাদেশে দুর্যোগের উপর সরকারী স্ট্যান্ডিং অর্ডার (এসওডি) আছে যা আমার মনে হয় খুব বেশি দেশে নেই।
মূলত, আমাদের এই সক্ষমতা গড়ে উঠেছে তিনটি ধাপের মধ্য দিয়ে। আমরা প্রথমে দুর্যোগ ঝুঁকি প্রশমন নিয়ে জানছি ও শিখছি, এরপর দুর্যোগ ও দুর্যোগপরবর্তীকালে সেই শিক্ষণগুলোর বাস্তবায়ন ঘটাচ্ছি, এবং সবশেষে আমরা আমাদের বাস্তবায়নের আলোকে কাজের মূল্যায়ন করছি যে কোথায় আমরা ভালো করলাম এবং কোথায় আমাদের আরও ভালো করার সুযোগ ছিলো। সেগুলোকে আবার আমরা শিক্ষণ হিসেবে যুক্ত করছি পরবর্তী দুর্যোগ মোকাবেলায়।
বাংলাদেশের সাফল্যের ঢোল পিটিয়ে অহঙ্কারে আচ্ছন্ন হওয়া এই লেখার উদ্দেশ্য নয়। এটি লিখেছি দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় আমাদের কিছু শক্তিমত্তার স্বীকৃতি দেওয়ার উদ্দেশ্যে এবং আমরা অন্য অনেক দেশের তুলনায় কিভাবে এগিয়ে আছি তা বোঝানোর একটি ক্ষুদ্র প্রয়াস হিসেবে। আমাদেরও এই ক্ষেত্রে উন্নতি করার মতো অনেক কিছু আছে যা সময়ের সাথে সাথে অর্জিত হতে থাকবে বলে আশারাখি। তবে পরিশেষে এইটুকু অন্তত জোর দিয়ে বলতে পারি যে অনেক দেশই বাংলাদেশের অভিজ্ঞতা থেকে অনেক কিছু শিখতে পারবে।
মন্তব্য
প্রাকৃতিক দূর্যোগ, বিশেষত ঘুর্নিঝড়, বন্যা ইত্যাদি মোকাবেলায় বাংলাদেশের সাফল্য সত্যিই গর্বিত হওয়ার মত।
ভুমিকম্প মোকাবেলায়ও শহর এলাকায় এই ধরনের উদ্যোগ নেওয়া জরুরী। ঝড়, বন্যা মোকাবেলার অভিজ্ঞতা থাকলেও বড় ধরনের ভুমিকম্প মোকাবেলার অভিজ্ঞতা বাংলাদেশের নেই। প্রস্তুতির অভাবে যে কোনও বড় শহরে অসংখ্য রানা প্লাজার সৃষ্টি হওয়া অসম্ভব নয়।
ভুমিকম্পের ঝুঁকি এখন আমাদের সবথেকে বড় উদ্বেগ। চিন্তা করুন যদি ঢাকা শহরে মোটামুটি মাঝারি মাত্রার একটা ঝাঁকুনি দেয়, ভাবতেই শিউরে উঠি।
বাংলাদেশে বেশ কয়েকটি কন্সোর্শিয়া এটা নিয়ে কাজ করছে। স্কুলগুলোতে বিশেষকরে তারা ভূমিকম্পকালীন ও পরবর্তী মোকাবেলার কৌশলগুলো শেখাছে। আমি যেখানে কাজ করি, এটা আমাদেরও একটা প্রায়োরিটির জায়গা। ধন্যবাদ।
------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।
আমাদের মনে হয় ঝুঁকিপূর্ণ বাড়িগুলির একটা বড় অংশ রেট্রোফিটিং-এর কথা ভাবা উচিৎ। কিন্তু অর্থনৈতিক ভাবে কি সেটা সম্ভব হবে?
****************************************
টেকনিক্যাল ব্যাপারে এর বিশেষজ্ঞরাই ভালো বলতে পারবেন। তবে বিকল্প প্রযুক্তি নিয়ে অবশ্যই ভাবতে হবে। ধন্যবাদ।
------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।
গুড জব! আত্মতৃপ্তিতে ভোগার দরকার নেই, তবে নিজের প্রকৃত অবস্থান জেনে আত্মবিশ্বাস রাখার দরকার আছে।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের ব্যপ্তি আরো বাড়ানো দরকার। বরিশাল, খুলনা ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ইনস্টিটিউট গড়ে তোলা দরকার। মাধ্যমিক বা উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে শিক্ষাব্যবস্থায় দুর্যোগ মোকাবেলা করার হাতেকলমে প্রশিক্ষণের এবং শিক্ষার্থীদের দুর্যোগকালীণ সময়ে স্বেচ্ছাসেবী হিসাবে কাজ করার ব্যবস্থা থাকা দরকার। এর জন্য অংশগ্রহনকারী স্বেচ্ছাসেবীদের উচ্চতর শিক্ষার জন্য বৃত্তি প্রদান করা যেতে পারে।
উপকূলীয় এলাকার স্কুল-কলেজগুলোকে সংস্কার করে পরিপূর্ণভাবে ইক্যুইপড ফ্লাড/সাইক্লোন সেন্টার বানানো যেতে পারে। এতে সারা বছর বাচ্চারা ভাঙ্গা বেড়ার ঘরে বা গাছতলায় ক্লাস করার বদলে পাকা বাড়িতে ক্লাস করার সুযোগ পাবে এবং আপদকালীন সময়ে সবাই সেখানে আশ্রয় পাবে।
দেশের দক্ষিণাঞ্চলে রাস্তা, বাঁধ, সেতু, কালভার্ট, এমব্যাঙ্কমেন্ট নির্মাণের ক্ষেত্রে অন্য অঞ্চলের চেয়ে প্রযুক্তিগত ভিন্নতা থাকা দরকার। কক্সবাজারে মেরিন ড্রাইভ নির্মাণের সময় এমন ভিন্নতা অনুসরণ না করায় সেটা অনেক বার ভেঙ্গেছে।
দেশের দক্ষিণাঞ্চলের ক্রপ সাইকেলের প্যাটার্নটি বদলানো দরকার। যে মাসগুলো অধিক সাইক্লোনপ্রবণ সে মাসগুলোতে মাঠ খালি থাকলে বা দুর্যোগ ও লবনাক্ততা সহনশীল ফসল চাষ করতে পারলে ক্ষতির পরিমাণ কমানো যেতে পারে।
যতদূর জানি নৌবাহিনী, কোস্টগার্ড বা বিজিবি'র হাতে এখনো কোন হোভারক্র্যাফট/হোভারবার্জ বা এসিভি নেই। অথচ এই তিন বাহিনীর কাছেই এসিভি থাকাটা জরুরী। পাঁচ-ছয়শ' কেজি ওজন নিতে পারে এমন এসিভি'র দাম এক লাখ ডলারেরও কম।
দুর্যোগে পিতা/মাতা/অভিভাবকহারা শিশুদের জন্য অনাথালয় ও ট্রাস্ট গড়ে তুলতে হবে। সেখানে দান করলে আয়কর রেয়াত দিতে হবে। নিঃসন্তান দম্পতিরা যেন সেখান থেকে শিশু দত্তক নিতে পারেন সেই ব্যবস্থা থাকতে হবে।
প্রতিটি বড় আকারের দুর্যোগের ছয় মাস পর সেই দুর্যোগের ওপর শ্বেতপত্র প্রকাশ করতে হবে। সরকারী ও বেসরকারী উভয় প্রকারের সংস্থার কার্যক্রমই এই শ্বেতপত্রে বর্ণিত হতে হবে। তাতে দেশের বিপদগ্রস্থ মানুষকে সহায়তার কথা বলে বিদেশ থেকে সাহায্য নিয়ে কেউ হাপিশ করে দিলো কিনা সেটা বোঝা যাবে। দুর্যোগ নিয়ে দুনিয়াব্যাপী যে ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন ডলারের ব্যবসা আছে তার কথা ভেবেই এই চিন্তাটা।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
অনেকগুলো মুল্যবান মতামত দিলে। ধন্যবাদ তোমাকে। শিশুদের নিয়ে তোমার প্রস্তাবনাটি ভালো লাগলো। তোমার জানার জন্য বলছি, সাইক্লোন সিডরের পরে, দিস ইজ মি- আমিই প্রথম চাইল্ড হেডেড হাউজহোল্ড তালিকাভূক্তির উদ্যোগ নেই এবং পুনর্বাসন ফেইজে উপকারভোগি নির্বাচন ক্রাইটেরিয়ায় এদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে স্থান দেই।
দুর্যোগ নিয়ে ব্যবসা, ভালো বলেছো। লিখতে হবে কিছু একটা।
------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।
দুর্যোগে পিতা/মাতা/অভিভাবকহারা শিশুদের জন্য অনাথালয় ও ট্রাস্ট গড়ে তুলতে হবে। সেখানে দান করলে আয়কর রেয়াত দিতে হবে। নিঃসন্তান দম্পতিরা যেন সেখান থেকে শিশু দত্তক নিতে পারেন সেই ব্যবস্থা থাকতে হবে। দত্তক নেয়া’র বিষয়টা আইন করে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল, দত্তকের নামে শিশু পাচার বন্ধ করার জন্য; ঘরের দরজা খোলা থাকলে সমস্যা হতে, সমস্যাগুলো ঠিকমতো না দেখে দরোজা বন্ধ করে দাও!
কেবলমাত্র অনাথালয় না করে তাদের’কে সমাজ-ভিত্তিক পুনর্বাসন করা গেলে কেমন হয়? অনাথালয় মানে সেখানে যারা অনাথ/এতিম তারাই থাকবে। যেমন: এটা না করে যার বাবা মারা গেছে তাকে তাঁর মায়ের সাথে রেখেই বড় করার দায়িত্ব রাষ্ট্র নিলে শিশুটি নিজ পরিবার আর সমাজের ভেতর-ই বড় হবে; বাবা-মা উভয়ে যদি মারা যান কিংবা নিখোঁজ (১২ বছর নিখোঁজ থাকার পর মৃত বলে ধরে নেয়া হয়) থাকেন সেক্ষেত্রে তাকে তাঁর নিকটাত্মীয়’দের কাছে রেখে বড় করার দায়িত্ব নেয়া সম্ভব, সেক্ষেত্রে বাছাই এবং মনিটরিং খুব গুরুত্বপূর্ণ। কাজটা শুনতে খুবই জটিল মনে হতে পারে, জটিল এই কারণে যে এটা শুনতে নতুন লাগছে; কিন্তু আসলে নতুন নয়। কাজটা এভাবে করা সম্ভব।
সম্ভব কারণ আমি নিজে দেখেছি সম্ভব। আমি এরকম ২,০৫৮ জন শিশু নিয়ে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সাথে কাজ শুরু করেছিলাম ২০০৮ সালে, ৭ উপজেলায়; সরকার এতিমখানায় প্রতিটি শিশু’র জন্য তখন ১৫০০ টাকা করে দিতো প্রতিমাসে (এখন ২০০০), এই একই পরিমাণ টাকা আমরা সমাজসেবা অধিদপ্তর এর মাধ্যমে পরিবারগুলোকে দিয়েছি, সরাসরি। এবং এই কাজটা করতে যেয়ে সম্পূর্ণ নতুন একটা ব্যবস্থাপনা কাঠামো দাঁড় করাতে হয়েছিল, সেটা কাজ করছে এখন। একইভাবে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় এখন একই মডেলে নগর এলাকায় কাজ করছে। এতিম ও ঝুঁকিপূর্ণ শিশুদের নিয়ে করা এই ‘শিশু-বান্ধব সামাজিক নিরাপত্তা’ (Child Sensitive Social Protection) মডেল বর্তমান প্রতিষ্ঠান-ভিত্তিক ব্যবস্থাপনার চাইতে বহুলাংশে ভাল। একশন রিসার্চ একটা প্রজেক্ট ছিল সেটা, আমরা তাতে সরকার’কে সহায়তা করেছি, এটা এখন একটা প্রোগ্রাম। আমি নিশ্চিত বাংলাদেশের এতিম শিশু’রা আর খুব বেশিদিন ভাগ্যের হাতে নিজেকে সোপর্দ করে বন্দি হবেনা কোন বৃত্তাবদ্ধতায়। তাই হোক।
এই শিশু’দের জন্য আপনাদের সমর্থন প্রয়োজন, সে সবার মত করে বড় হবে নাকি বড় হবে বৃত্তাবদ্ধতায় পুরোপুরি নির্ভরশীল হয়ে, এই সিদ্ধান্ত নেয়ার সময় এসেছে এখন। হয়তো আরও বহুবিধ প্রয়াস নেয়া যেতে পারে কিন্তু প্রতিষ্ঠানভিত্তিক পুনর্বাসন আর না হোক। শিশু’রা এতিম হিসেবে সমাজের বাইরে বড় না হোক, তারা বড় হোক উন্মুক্ত আকাশে। রাষ্ট্র এখন-ও ইতিবাচক তার এই কাজ নিয়ে, সবাই সরব হোক।
ধন্যবাদ তানিম মুল্যবান মতামতের জন্য। সব আইডিয়াই একসময় নতুন থাকে, আর তারপর আস্তে আস্তে সিস্টেমের সাথে খাপ খেয়ে যেতে থাকে। সরকারী সদনগুলোতে দেখেছে শিশুরা আলাদা একটা জগতের মধ্যে বড় হয় যেখানে মানসিকতার বিকাশ ঘটানো খুবই দুরুহ। পারিবারিক পরিমন্ডলই শিশুদের বিকাশের জন্য সবথেকে ভালো। নাঈম ভাই কি এই ইস্যুতে নতুন কিছু করছে, জানেন?
------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।
আমার মাথায় একটা ধান্ধাবাজী চিন্তার উদয় হচ্ছে। আমাদের এই সক্ষমতা কি আমরা বৈদেশিক মূদ্রা উপার্জনের কাজে ব্যবহার করতে পারি না? যেমন আমারিকায় যে এখন প্রতিবছর বড় বড় সাইক্লোন হচ্ছে আর তার ফলে কাতারে কাতারে মানুষ মরছে, সবকিছু লেজেগোবরে তাল পাকিয়ে যাচ্ছে, আমরা সেখানে বিশেষজ্ঞ সেবা প্রদান করতে পারি না?
৩৩% থেকে বেশি ধান্ধাবাজী করতে পারবেন না। ওরা প্রাক দুর্যোগ প্রস্তুতিতে জঘন্যরকম কাঁচা কিন্তু উদ্ধার ও পুনর্বাসন কাজে ওরা অনেক শক্তিশালী। উদ্ধারকাজ পরিচালনার জন্য ওদের যে পরিমান আধুনিক ইক্যুইপমেন্টস আছে তা দিয়ে অনেক ভালোভাবে উদ্ধারকাজ করা সম্ভব। আমাদের আরও ভালো লজিস্টিক্স থাকলে দুর্যোগকালীন ও দুর্যোগপরবর্তী ব্যবস্থাপনায় আমরা সম্ভবত দুনিয়ার সেরা হতাম।
------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।
# বাংলাদেশে প্রায় ৬৪,০০০ রেডক্রস ভলান্টিয়ার রয়েছে যাদের বিভিন্ন স্তরের উদ্ধারকাজের প্রশিক্ষন রয়েছে
এই ভলান্টিয়ার’দের যেভাবে কাজ করতে দেখেছি তাতে তাদের স্যালুট!
সিডরে শরণখোলা’য় একজন ভলান্টিয়ার মারা-ও গিয়েছিলেন সবাইকে বাঁচাতে যেয়ে; তাঁর মেয়ে, এখনও মনে হয় স্কুলেই পড়ে, খুবই মেধাবী, নাম শারমীন, সে-ও তাঁর বাবা’র মত ভলান্টিয়ার হতে চায় শুনে খুব ভাল লেগেছিল। ভলান্টিয়ার’রাই বাঁচিয়ে রেখেছে বাংলাদেশ!
একদম খাঁটি কথা। তবে আমাদের ভলান্টিয়ারদের মধ্য যদি পর্যায়ক্রমে অল্প অল্প করে প্রফেশনালিজম গ্রো করানো যেতো তা শেষে তাদের এবং দেশের অনেক কাজে লাগতো।
------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।
তথ্যবহুল লেখা।
মিয়ানমার এবং বাংলাদেশের দুর্যোগ মোকাবেলায় প্রস্তুতির ক্ষেত্রে প্রধান পার্থক্য সৃষ্টিকারী নিয়ামক সম্ভবত গণতন্ত্র। ১ লক্ষ মানুষ মরে গেলে মিয়ানমার সরকারকে কারুর নিকট জবাবদিহি করবার প্রশ্ন উঠেনা। বাংলাদেশে উঠে। বাংলাদেশে দুর্যোগ প্রশমন নিয়ে সরকারের পাশে অসংখ্য এনজিও কাজ করে। আর উপকূলে এধরণের দুর্যোগ খুব ঘন ঘন হানা দেয়ায় উপদ্রুত এলাকার জনগোষ্ঠী নিজেরাই দুর্যোগ মোকাবেলায় যথেষ্ট সক্ষমতা অর্জন করেছে।
শ্রীলঙ্কা কিংবা ভারতের সাথে এরকম ঝড়ের তুলনামূলক বিবরণী করে বিষয়টির আরও গভীরে যাওয়া যেতে পারে।
প্রথম অংশে একমত। দেখা যাক এখন মিয়ানমারের সরকার কি করে আর বিরোধী দলইবা কি ভুমিকা রাখে।
আমার ব্যাক্তিগত মত হচ্ছে শ্রীলঙ্কা দুর্যোগ মোকাবেলার সক্ষমতা এখনও বাংলদেশের সমকক্ষ হয়নি। তবে সুনামীর পর থেকে উত্তর-পশ্চিম শ্রীলঙ্কার মানুষ এখন অনেক সচেতন। ওয়ার্নিং হলে বাট্টিকালোয়া, ভাভুনিয়া বা জাফনার জেলেরা সাগরে বেরোয় না। ভারতের ব্যাপারে একবাক্যে মন্তব্য করা কঠিন। অনেক বড় দেশ এবং দুর্যোগের লাইকলিহুড এলাকাভেদে ভিন্ন। বিহার এলাকার মানুষ যেমন এখন বন্যা মোকাবেলা করতে পারে। তেমনই, দক্ষিনের মানুষ উপকূলীয় দুর্যোগ মোকাবেলায় ভালো দক্ষতা অর্জন করেছে। তবে সুনামীর পর এই দুটো দেশই বিরাট ধাক্কা খাওয়ার পর দুর্যোগ মোকাবেলা নিয়ে অনেক সিরিয়াস হয়েছে। ধন্যবাদ।
------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।
নতুন মন্তব্য করুন