স্পর্শের অতীত তুমি এখন

সংসারে এক সন্ন্যাসী এর ছবি
লিখেছেন সংসারে এক সন্ন্যাসী (তারিখ: শনি, ২৭/০৯/২০০৮ - ১০:৪৭পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

গুটিকয়েক সচল জানতেন, আমি মুহম্মদ জুবায়েরের ছোট ভাই। হ্যাঁ, কনিষ্ঠতম সহোদর। রিটন ভাই আভাস দিয়েছিলেন একটা লেখায়। তারপর অভিজিৎ সেদিন মন্তব্যে “'ফুর্তিবাজ' সচল ছোট ভাইটি”-র কথা উল্লেখ করলেন। কথাটি আগে প্রকাশ করতে চাইনি আমি। চেয়েছি ব্যক্তিগত শোক নিজেই কাটিয়ে উঠতে। কষ্টের মুহূর্তে শক্ত থাকার আপ্রাণ প্রয়াস আমার নিমেষে ধ্বসে পড়ে সান্ত্বনাসূচক কথায়। সুপ্রিয় সচলেরা, আপনারা আমাকে বুঝতে পারছেন?

এতোদিন ধরে লিখছি এখানে, কিন্তু বিষাদময় বা বড়ো লেখা দেয়া হয়নি কখনওই। আজ যাচ্ছে দুটোই। একসঙ্গে।

অবশ্যম্ভাবী ও অনিবার্যভাবে হয়ে আছি স্মৃতিবিদ্ধ, দগ্ধ হচ্ছি নানাবিধ অনুশোচনায়। লিখতে চাইছি অনেক কিছু, কিন্তু মনটা যে কী বিক্ষিপ্ত এখনও! তবু বড্ড ইচ্ছে করছে একান্ত ব্যক্তিগত এলোমেলো এই স্মৃতিমন্থনমূলক আত্মকথন আপন-হয়ে-ওঠা সচলদের শোনাতে। আমার বিশ্বাস, তাঁরা আমার এই বালসুলভ আচরণটি সহ্য করবেন।

এতোদিন সচলায়তনকে একটি পরিবার ভেবে এসেছি। আর ভাইয়ের মৃত্যুর (কী নিষ্ঠুর এক শব্দ!) পর তা অনুভব করতে পেরেছি রীতিমতো। তানভীর নিজের কাজকর্ম ফেলে রেখেও হাসপাতালে গেছেন তার টানে, আপডেট দিয়ে গেছেন সাধ্যমতো, জালাল ভাই দায়িত্ব পালনের নিষ্ঠা নিয়ে ভাইকে দেখতে গেছেন বারবার, পাশে থেকেছেন, শেষ সংবাদটি শুনে হাউমাউ করে কেঁদে ওঠেন রিটন ভাই, মাহবুব মুর্শেদ এক বুক বেদনা নিয়ে সবার আগে সংবাদটি দেন, পরে লেখেন “কোনোদিন এই ব্যানারটা করতে হবে কখনো ভাবিনি...”, হিমু চিৎকার করে কাঁদেন কাসেলে তাঁর ঘরে বসে।

একের পর এক হাহাকার-ছড়ানো পোস্ট দিতে থাকেন হিমু, অরূপ (তাঁর সঙ্গে ভাইয়ের ছিলো বিশেষ ধরনের সম্পর্ক), অতিথি লেখক একরামুল হক শামীম, পলাশ দত্ত, ইশতিয়াক রউফ, আনোয়ার সাদাত শিমুল, কনফুসিয়াস, অমিত, রণদীপম বসু, সুমন সুপান্থ, হাসান মোরশেদ, ফারুক ওয়াসিফ, তানভীর, জালাল ভাই, অমিত আহমেদ। অনেক সচলের মন্তব্য পড়ে ডুঁকরে কেঁদে উঠেছি। আপন না হলে কেউ এভাবে লেখে? লিখতে পারে? এর মধ্যে সচলায়তন সংহত ঘোষণা দিয়েছে বিস্মরণ প্রতিহত করার। উদ্যোগ নিয়েছে ভাইয়ের লেখাগুলো বই আকারে প্রকাশ করতে। শুনে অনেকেই বাড়িয়ে দিয়েছেন নিঃস্বার্থ সাহায্যের হাত। মাহবুব লীলেন ইঙ্গিত পেলেই কাজে ঝাঁপিয়ে পড়বেন জানিয়েছেন।

ভাই, তুমি অনুভব করতে পারছো এই ভালোবাসা?



০১
সচলায়তনের অস্তিত্ব সম্পর্কেই কোনও ধারণাই যখন ছিলো না আমার, তুমি তখন লিখতে শুরু করেছো সেখানে। আর তোমার সঙ্গে আমার তখন চলছে অভিমানের পর্ব। একটি ঘটনায় আমার দুর্বিনীত ক্রোধ আমাদের করে রেখেছিল যোগাযোগহীন। তবে তোমার লেখা নিয়ে আমার আশৈশব মুগ্ধতা (নিজের ভাইয়ের লেখা বলে ভালো-লাগাটি একটু হলেও পক্ষপাতদুষ্ট বলেই ধারণা করি) তখনও অটুট। সেই সময় সচলায়তনে তোমার লেখালেখির কথা আমি জানতে পারি। মেজো ভাইয়ের মাধ্যমে। চুপি চুপি তোমার লেখা পড়ার লোভেই সচলায়তনে আসা। তারপর ছদ্মনামে নিবন্ধন করে সচলও হয়ে গেলাম। তখন, শুরুর দিকে, ছদ্মনামের আড়ালের আমাকে তুমি চিনতে পারোনি। আমার কয়েকটি লেখায় মন্তব্যও করেছো। তবে টের পেতে সময়ও বেশি লাগেনি তোমার।

তারপর একদিন নিজস্ব বুদ্ধিবৈকল্যের অবসান ঘটিয়ে যখন যোগাযোগ করলাম তোমার সঙ্গে, তুমি আমার গলা শুনেই হেসে এমনভাবে বলেছিলে, “কে, সন্ন্যাসী?” (ঠিক এই শব্দটিই ব্যবহার করেছিলে, আমার আসল নাম নয়), যেন আমাদের যোগাযোগ ব্যাহত হয়নি এক মুহূর্তের জন্যও। সেদিন আমরা কথা বলেছিলাম মূলত সচলায়তন নিয়ে। আর সেদিনই আমরা করে ফেলেছিলাম অব্যক্ত এক চুক্তি: পরস্পরের লেখায় আমরা মন্তব্য করবো না। যা কিছু বলার, বলা হবে ব্যক্তিগত মেইলে বা ফোনে।



০২
ভাই, তুমি যেদিন চলে গেলে, দেশে তখন ২৫ সেপ্টেম্বর, আর আমেরিকাতে তখনও ২৪ তারিখ। বুবুর জন্মদিন। মেজো ভাইয়ের বিবাহবার্ষিকী।



০৩
তোমার বুক জুড়ে ছিলো বাংলাদেশ আর মুক্তিযুদ্ধ। নইলে কারুর প্রথম মেইল অ্যাড্রেস আর সর্বশেষটি - হয়?



০৪
শেষের কয়েক মাস তোমার সঙ্গে আমার যোগাযোগ ছিলো প্রাত্যহিক। আমি অবাক হতাম তোমার একটি আচরণে। কেন তুমি প্রত্যেকবার বাসা থেকে বেরুনোর সময় এবং ফিরে এসে আমাকে জানান দিতে? জি-টকে পেতাম তোমার লেখা এই জাতীয় বাক্য: “অর্ণবকে নিয়ে বাইরে যাচ্ছি কিছুক্ষণের জন্য”, “এইমাত্র ফিরলাম”। ডোরাকে অস্টিনে নিয়ে যাবার আগের মুহূর্তে লিখলে “এক্ষুণি বেরোচ্ছি”। অস্টিনে পৌঁছে মেসেজ দিলে “এলাম এইমাত্র”। তারপর অস্টিন থেকে রওনা দেয়ার সময়ও লিখলে, লিখলে ডালাসে ফিরে এসেও। নিরাময়াতীত রোগটি যে-কোনও মুহূর্তে ভয়াবহ হয়ে উঠতে পারে – সেটা তুমি জানতে বলেই যতোটা সম্ভব চেষ্টা করতে “ইন-টাচ” থাকবার?



০৫
বহুবার এমন হয়েছে, কাজ থেকে ফিরে লিখলে “ভীষণ ক্লান্ত লাগছে”। আমি লিখলাম, “তাহলে কী দরকার এখন চ্যাট করার? বিশ্রাম করো, যাও।” তুমি লিখলে, “তোর সাথে এই আড্ডাটুকুই তো বিশ্রাম।”



০৬
তুমি আমাদের বড়ো ভাই হয়েও ছিলে বয়োজ্যেষ্ঠ বন্ধুর মতো। দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে বড়োভাইগিরিতে তোমার অদম্য উৎসাহ থাকলেও অন্যান্য ব্যাপারে টিপিক্যাল বড়োভাইসুলভ আচরণ করতে তোমাকে দেখিনি কখনওই। আমাদের ভাই-বোনদের মধ্যে বন্ধুসুলভ আচরণ মুগ্ধ করেছে অনেককেই।

মনে পড়ে, আমাদের বাসায় আমাদের ঘনিষ্ঠ কিশোরী, বালিকা বা তরুণীরা বেড়াতে এলে আমরা তিন ভাই মিলে তাদের নিয়ে মেতে উঠতাম নির্মল রসিকতায়। তারা কখনও হেসে গড়িয়ে পড়তো, কখনও কপট রাগ দেখিয়ে বলতো, “তোমাদের বাসায় আর কক্ষনও আসবো না। তোমরা এতো জ্বালাতন করো!” ভারি অবাক কাণ্ড, সেই “উৎপীড়িতারা” খুবই পছন্দ করতো আমাদের বাসায় আসতে।



০৬
আমরা সব ভাই-বোন তখন কলাবাগানের বশিরউদ্দিন রোডের একটি ফ্ল্যাট ভাড়া করে থাকতে শুরু করেছি। একদিন দিনাজপুর থেকে আসা আমার এক বন্ধুর ঢাকায় থাকার জায়গা নেই বলে আমি কুণ্ঠিত স্বরে জানতে চাইলাম তোমার কাছে - তাকে আমাদের বাসায় কয়েকটা দিন রাখা যায় কি না। শুনে তুমি রীতিমতো ক্ষেপে গিয়ে বললে, “এই ধরনের প্রশ্ন ভবিষ্যতে কক্ষনও করবি না। থাকার দরকার, থাকবে।”



০৭
সর্বক্ষণ রসিকতা করার মওকা অন্বেষণের অভ্যেসটি তো আমি তোমার কাছেই পেয়েছি। ঘড়ির সময় জানতে চাইলে তোমাকে সব সময় জিজ্ঞেস করতে হতো, “ঘড়িতে সময় ক’টা” বা “সময় কতো হলো”। কারণ ভুল করে কখনও “ক’টা বাজে” জানতে চাইলে তোমার অবধারিত উত্তর ছিলো, “একটাও বাজে না। সব ভালো।”

এই তো সেদিন সলিল চৌধুরীর সাইট থেকে গান ডাউনলোড করার তরিকা জানতে চাইলে আমি তাঁর সমস্ত বাংলা গানের ডাউনলোড লিংক পাঠিয়ে দিয়েছিলাম। সামান্য সময়ে সব ক’টি গান কম্পুতে আনতে পেরে ছেলেমানুষি-খুশিতে উচ্ছল হয়ে উঠেছিল তোমার কণ্ঠ। ক’টি গান তুমি শুনতে পেরেছিলে? দশটি? পঁচিশটি? সেদিন আরও বলেছিলাম, লিংকগুলো রিটন ভাইকেও দিয়ো। তুমি স্বভাবসুলভ রসিকতা করে বললে, “জ্বী না, এমনি এমনিই দেবো না। বিক্রি করবো।”



০৮
বন্ধুবৎসল শব্দটি তোমাকেই মানায় সবচেয়ে বেশি। আমি অন্তত তোমার মতো বন্ধুঅন্তপ্রাণ আর কাউকে দেখিনি। তোমার বন্ধু-পরিমণ্ডলটিও ছিলো রীতিমতো ঈর্ষাজাগানিয়া। নিজে খ্যাতিমান কেউ না হলেও তোমার যুগের সাহিত্য-, থিয়েটার-, টিভি-, সঙ্গীত-, এমনকি ক্রীড়াজগতের সেলেব্র্রিটিদের সঙ্গে তোমার অনায়াস ওঠা-বসাই শুধু ছিলো না, ছিলো বন্ধুত্বও।

তুমি বন্ধুত্ব করতে পারতে সব বয়সীদের সঙ্গে। আমার অনেক বন্ধুর সঙ্গেই তোমার যোগাযোগ ছিলো আমার চেয়ে বেশি। তোমার দেশে থাকার সময় আমার অনুপস্থিতিতে আমার কতো বন্ধু এসে থেকেছে তোমার বাসায়। এমনকি আমার এক সহপাঠী, যার সঙ্গে আমি কথা পর্যন্ত বলতাম না, নিজেকে “আমার খুব ভালো বন্ধু” পরিচয় দিয়ে দিনের পর দিন কাটিয়েছে তোমার বাসায়।



০৯
আমারই আরেক বন্ধু (গত বছর একটি সিনেমা বানিয়ে বেশ নাম কামিয়েছে বিদগ্ধ মহলে) তখন বুয়েটে পড়ে। রাজশাহীর এক কলেজের বাংলার শিক্ষকের সেই ছেলে বামন হয়ে চাঁদে হাত বাড়িয়ে চুটিয়ে প্রেম করছে খুউব উচ্চপদস্থ এক সরকারী কর্মকর্তার মেয়ের সঙ্গে। উভয়পক্ষের পিতামাতার অসম্মতির কারণে ওরা লুকিয়ে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নেয়। আমি তখন প্রবাসে। আমার বন্ধুটি তোমার কাছে এসে বলেছিল তোমার কিছু সাহায্য তার প্রয়োজন। তুমি এক মুহূর্ত না ভেবে জিজ্ঞেস করেছিলে, “বিবাহ বিষয়ক কিছু? ” সে এখনও পর্যন্ত বিস্মিত হয়ে ভাবে, কীভাবে তুমি আঁচ করতে পেরেছিলে।

সেদিন তুমি তোমার কাজকর্ম ফেলে বিয়ের সমস্ত ব্যবস্থা করে ফেললে।



১০
সচলায়তনে প্রকাশিত আমার লেখা সিরিজগুলোর ভেতরে তোমার সবচেয়ে পছন্দের ছিলো “ব্যঙ্গ বঙ্গাভিধান”। বারবার আমাকে বলেছো সিরিজটি আবার চালু করতে। আমি “মাথায় চমৎকার আর কিছু আসছে না” বললে তুমি উৎসাহ দিয়ে বলতে, “ডিকশনারি নিয়ে বসে পড়, ঠিক পেয়ে যাবি।” বসা হয়নি। আর কি হবে?

কামরাঙা সিরিজের শালী সংক্রান্ত ছড়াটি তোমার ব্যক্তিগত জীবনের ঘটনা থেকে নেয়া বলে তুমি খুব হেসেছিলে। বলেছিলে, “তোর সেটা মনেও আছে!” তোমার এক বন্ধু নাকি আমার লেখা পছন্দ করে। আমি ভেবেছিলাম, কামরাঙা নিশ্চয়ই। তুমি বললে, “না, ও তো অতীব ভদ্র ছেলে। কামরাঙা পড়লে লজ্জারাঙা হয়ে পড়বে।”



১১
মনে পড়ছে অতি তুচ্ছ একটা ঘটনার কথা। আমার প্রথম প্রবাসযাত্রার সময় এয়ারপোর্টের বুকস্টল থেকে তুমি আমাকে কিনে দিয়েছিলে দিব্যেন্দু পালিতের “উড়ো চিঠি”।



১২
তুমি তখন চাকরিসূত্রে থাকো সিঙ্গাপুরে। আমি বেড়াতে গেলাম তোমার ওখানে। আমার বিয়ার-প্রীতির কথা তুমি জানতে। আর তাই অফিস থেকে ফেরার সময় প্রতিদিন নিয়ে আসতে একগাদা বিয়ার। আমার হাতে তুলে দিয়ে বলতে, “আজকেই শেষ করে ফেলা চাই।”

আরেকবার দেশে গেছি বেড়াতে। এয়ারপোর্টে আব্বা-আম্মার কান এড়িয়ে তুমি আমাকে নিচু স্বরে বললে, “ফ্রিজে ঠাণ্ডা বিয়ার রাখা আছে।” আমি তোমাকে জানালাম, “আমি তো তোমার জন্যে ভোদকা আর শ্যাম্পেন নিয়ে এসেছি।” তুমি বললে, “এই না হলে আমার ভাই!”



১৩
গতানুগতিক জীবনযাপন পদ্ধতিকে অবহেলায় ঠেলে আমার বেছে নেয়া জীবন নিয়ে আমাদের আত্মীয়-পরিজন বা চেনাজানাদের অনেকের অসন্তুষ্টির কথা আমি জানি। কিন্তু তোমাকে, আমার বড়ো ভাইকে, এই অনুযোগ নিয়ে কোনওদিন একটি কথাও বলতে তো শুনিইনি, বরং তুমি বহুবার আমার হয়ে ওকালতি করেছো। কারুর ব্যক্তিস্বাধীনতা খর্ব করার বিরোধী তুমি ছিলে বরাবরই। ভাবীই আমাকে বলেছে, আমি নিশ্চয়ই তোমার কথা শুনবো – সেই আশায় সে তোমাকে বহুবার আমাকে হেদায়েত করার করার কথা বলেও কোনও উদ্যোগ নেয়াতে পারেনি। তুমি বরাবরই বলেছো, “সে তার নিজের জীবন বেছে নিয়েছে, আমাদের সেখানে কী করবার আছে।” ভাবী এ-ও বলেছে, এই বিষয়ে তোমাকে বেশি উত্যক্ত করলে তুমি তাকে ইংরেজিতে প্রচলিত রূঢ় একটি কৌতুকের শেষ লাইন আওড়াতে, “দুধ সহজলভ্য হলে গাভী পোষার প্রয়োজনটা কী?” বড়ো ভাই হলেও প্রাপ্তবয়স্ক ছোট ভাইয়ের জীবনে হস্তক্ষেপকে অনধিকার চর্চা মনে করতে তুমি।



১৪
আমি অবাক হয়ে ভাবি, যখন বগুড়া-ঢাকার দূরত্ব (ভৌগলিক নয়) ছিলো এখনকার চেয়ে অনেক-অনেকগুণ বেশি, বস্তুত ঢাকা যখন ছিলো অনেকটা বিদেশের মতো, সেই ষাট আর সত্তুর দশকের মাঝামাঝি পর্যন্ত, বগুড়ার মতো ক্ষুদ্র এক মফস্বল শহরের অতি মধ্যবিত্ত পরিবারে বড়ো হয়ে ওঠা তোমার মধ্যে এই আধুনিক মানসিকতা আর চিন্তার প্রসারতার বীজ কীভাবে রোপিত হয়েছিল? আমরা, বাকি ভাই-বোনেরা, যতোটুকু মুক্তচিন্তা করতে শিখেছি, তা তো তুমিই সংক্রমিত করে দিয়েছিলে।



১৫
মনে পড়ছে, ডোরার এই বছরের জন্মদিনে তোমার সঙ্গে টেলিফোনে যখন কথা হচ্ছিলো, তুমি এক সময় টেলিফোনে আমাকে হোল্ড করে রেখে ডোরা আর তার বান্ধবীকে বলছিলে আমার কথা, “আমি চেয়েছিলাম ওর মতো একটা জীবন।” বিশ্বাস করো, ভাই, আমার এই জীবনের পরিবর্তে তোমাকে ফিরিয়ে আনা গেলে আমি দ্বিতীয়বার চিন্তা করতাম না।



১৬
আর ডোরার জন্মদিনের আগের দিন তুমি জানালে, এবারে বেশ হইচই করে করে পালন করা হবে এই দিনটি। কারণ আর কখনও এভাবে সম্ভব হবে কি না, কে জানে! আমি চমকে উঠে জিজ্ঞেস করেছিলাম, “আর সম্ভব হবে না মানে? ” উত্তরে তুমি বলেছিলে আমাকে, “না, ডোরা তো কলেজে চলে যাচ্ছে, শুরু হচ্ছে ওর নতুন জীবন। এর পর থেকে এই দিনটিতে সে হয়তো বন্ধুদের সঙ্গেই থাকতে পছন্দ করবে।” কথাটিতে যুক্তি হয়তো আছে, তবে আজ বুঝতে পারি, তুমি সত্যি বলোনি আমাকে।



১৭
আমি তখনও স্কুলছাত্র। তুমি ঢাবিতে। হলে থাকো। সেই সময় যতোবার গেছি ঢাকায়, তুমি ততোবার ভয়াবহ মিষ্টিখোর আমাকে নিয়ে গেছো গ্রিন রোডের আলাউদ্দিন বা বোম্বে সুইটসে। প্রতিবার আমার পছন্দমতো মিষ্টি খাইয়েছো পেট ভরে। এখন তোমার লেখা পড়ে আমি জানি, হল-জীবনে অর্থপ্রাচুর্য তোমার কখনওই ছিলো না। টাকার অভাবে অনেক সময় শুধু পানি খেয়ে রাতে ঘুমিয়ে পড়েছো বহুবার। আর সেই তুমি আমাকে তখন নিয়ে যেতে মিষ্টির দোকানে! ভাই, এতোটাই কি ভালোবাসতে হয়?



১৮
তোমার কোন আচরণটি সবচেয়ে খারাপ লাগতো, জানো? তুমি কখনও তোমার মন-খারাপের কথা, দুঃখের কথা, আর্থিক সংকটের কথা, অসুস্থতার কথা মুখ ফুটে কাউকে বলতে না। পাছে লোকে তোমাকে নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়ে, ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়ে! গত কয়েক মাসে কতো শতোবার তোমার শরীরের অবস্থা জানতে চেয়েছি! তুমি শুধু বলতে, “গলায় একটু সমস্যা। কোনও ব্যাপার না। ভালো হলেই সেরে যাবে।” তোমার সুস্থতা নিয়ে বেশি সন্দেহ প্রকাশ করলে তুমি বলতে জোর গলায়, “আমার মুখের কথা তোরা বিশ্বাস করিস না? যদি চাস, তো ডাক্তারের কাছ থেকে আমার সুস্থতার সার্টিফিকেট নিয়ে এসে তোদের পাঠাবো।”
তোমার অসুস্থতা নিয়ে আমাদের উদ্বিগ্ন করতে চাওনি – এটাও, বোধ হয়, এক ধরনের ভালোবাসা। কিন্তু এমন ভালোবাসা আমরা চাইনি, ভাই!



১৯
একদিন আমাদের তিন ভাইয়ের চ্যাট কনফারেন্সে মেজো ভাই লিখলো, “আমরা তিন ভাই সব সময়েই ছিলাম ব্রাদার্স ইউনিয়ন। তো হয়ে যাক না ব্রাদার্স রি-ইউনিয়ন!” তুমি বলেছিলে, “এই যে আমরা একসাথে কথা বলছি, এটাও তো রি-ইউনিয়ন এক ধরনের।” মেজো ভাই লিখলো, “না, চাই তেমন রি-ইউনিয়ন যাতে ছুঁয়ে দেখা যাবে পরস্পরকে।” তুমি এই কথার উত্তরে বলেছিলে তোমার সাম্প্রতিককালে বহুবার উচ্চারিত বাক্য, “এ-বছরে দেশে আসবোই – জীবিত অথবা মৃত।”

হায়, দেশে যাওয়া তোমার আর হলো না। মৃত অবস্থাতেও। আর তুমি এখন স্পর্শেরও অতীত।



পুনশ্চ. এই শোক কাটিয়ে উঠতে হবে। ফিরিয়ে আনতে হবে সচলায়তনের স্বাভাবিক পরিবেশ। প্রয়োজনে আমিই শুরু করবো আমার চিরাচরিত লঘু চরিত্রের লেখা দিয়ে।


মন্তব্য

আনিস মাহমুদ এর ছবি

...........................................................................................

.......................................................................................
Simply joking around...

আহমেদুর রশীদ এর ছবি

লেখা ও কমেন্টের সুত্র ধরে জুবায়ের ভাইয়ের সাথে পরিচয়। কিছু মেইলের আদান প্রদান।কাছের খুব কাছের হয়ে গিয়েছিলেন তারপর।

---------------------------------------------------------

আমরা যারা শিখিনি চাষবাস,ফসলের গীত
গুলালিতে পাখি হত্যা

---------------------------------------------------------

ঘাস তুমি ঘাসের মতো থাকো মাটি ছুঁয়ে
যে দেখার সে নতজানু হয়ে ছুঁবে তোমার আঙুল
অবরুদ্ধ মাঠ থেকে তুমি লাফিয়ে নেমোনা প্লিজ পাথরের পথে
________________________________________
http://ahmedurrashid.

রেনেট এর ছবি

সন্ন্যাসী ভাই, কি বলব, বুঝতে পারছি না। খুব খারাপ লাগছে, খুব। আপনার লেখা প্রতিটা কথা অনুভব করলাম।
আমি সেদিন কাঁদিনি, কাঁদলাম আজ।
ভালো থাকবেন।
-----------------------------------------------------
We cannot change the cards we are dealt, just how we play the hand.

---------------------------------------------------------------------------
একা একা লাগে

তানভীর এর ছবি

ভাই রে, এই সত্যটা আমি আজকেই জেনেছি আপনার ভাইয়ের কবরের পাশে দাঁড়িয়ে। কে যেন জালাল ভাইকে জিজ্ঞেস করেছিল-'ওনারা কয় ভাই? সবাই কোথায় আছে?' জালাল ভাই বলছিলেন- 'আর দুই ভাই আছে- একজন বাংলাদেশে, আরেকজন ইউক্রেনে'- তারপর ঘুরে দাঁড়িয়ে আমাকে বললেন-'তুমি তো চেন ইউক্রেনে যে থাকে- সচলায়তনের সেই সন্ন্যাসী'!! আমার মাথায় যেন বাজ পড়ল। মনে পড়ল রিটন ভাইয়ের কোন মন্তব্য বা লেখায় পড়েছিলাম গৃহত্যাগী তাঁর সেই ছোট ভাইয়ের কথা। সেটা যে আপনি তাতো ঘুণাক্ষরেও ভাবি নি।

আজকে অর্ণবকেও দেখলাম। ছোট্ট, কিউট একটা বাচচা। খুব কষ্ট লাগল দেখে। এ দুঃসময়ে জুবায়ের ভাই এবং আপনার পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানানো ছাড়া আর কিইবা করতে পারি।

= = = = = = = = = = =
ঊষার দুয়ারে হানি আঘাত
আমরা আনিব রাঙা প্রভাত
আমরা ঘুচাব তিমির রাত
বাধার বিন্ধ্যাচল।

সৌরভ এর ছবি

এইসব লেখায় কোন মন্তব্য করার যোগ্যতা নেই।


আবার লিখবো হয়তো কোন দিন

সবজান্তা এর ছবি

লিখতে চেয়েছিলাম, পারলাম না......


অলমিতি বিস্তারেণ

মাহবুব লীলেন এর ছবি

আমার জীবনে অত বেশি বোকা কোনোদিন বনেছি বলে আমার মনে নেই

কাল শেষ রাতের দিকে সন্ন্যাসীকে মেইল করে বলেছিলাম সচল বিষণ্ন হয়ে আছ
কয়েকটা গোল রুটি দিয়ে একটু হালকা করতে সবকিছু

সন্ন্যাসী উত্তরে বলেছিলেন- অন্য একটা লেখা নিয়ে ব্যস্ত আছি। এখন রুটি দিতে পারছি না। পড়লেই বুঝতে পারবেন কেন...

আমার কল্পনা শক্তি অতদূর যায়নি যে তার কারণটা জেনে আমাকে অত বোকা বনে যেতে হবে...

০২

সন্ন্যাসীকে করা আমার মেইলটা ফেরানোর প্রযুক্তি যদি আবিষ্কার করত কেউ...

অতিথি লেখক এর ছবি

কান্না থামছে না ভাই....কি বলবো, কি লিখবো জানিনা।

কল্পনা

......................................................................................
সব মানুষ নিজের জন্য বাঁচেনা

মৃদুল আহমেদ এর ছবি

স্বজন হারানোর কষ্ট আমি জানি।
কারণ আমি হারিয়েছি অনেক। এবং অনেক কম বয়সেই।
গত কয়দিন থেকে জুবায়ের ভাইকে ঘিরে যে শোক দেখতে পাচ্ছি সচলায়তনে, তাতে কোনো বাক্য যোগ করি নি আমি। কারণ আমি জানি, এই শোকস্তব্ধ মানুষগুলোর কাছে যেকোনো বাক্যই ফাঁকা শোনাবে। এই শূন্যস্থান পূরণ করা যায় না কিছু দিয়েই, কোনোদিনই না। এক্ষেত্রে আমার বক্তব্যও সৌরভ ভাইয়ের মতোই, ‍"এইসব লেখায় মন্তব্য করার যোগ্যতা নেই!"
আর সন্ন্যাসীর কাছে আমি ক্ষমাপ্রার্থী, গত রাতেই জি-টকে তাঁকে একটি লঘু প্রশ্ন করে ফেলেছিলাম... এখন তাঁর এই লেখা পড়ে বুঝতে পারছি, সেটি কতটা অনুচিত কাজ হয়েছে!
আমি আসলে চিরকালই একটা বুরবক!
---------------------------------------------
বুদ্ধিমানেরা তর্ক করে, প্রতিভাবানেরা এগিয়ে যায়!

--------------------------------------------------------------------------------------------
বললুম, 'আমার মনের সব কপাট খোলা ভোজরাজজী। আমি হাঁচি-টিকটিকি-ভূত-প্রেত-দত্যি-দানো-বেদবেদান্ত-আইনস্টাইন-ফাইনস্টাইন সব মানি!'

ধূসর মানব  [অতিথি] এর ছবি

আহা, আমার যদি এমন কোনো ভাই থাকত,
কিংবা বন্ধু,
কিংবা অন্যকেউ!

সবখানে আমি বড় বেশি দেরি করে ফেলি সবসময়।
বড্ড দেরি করে সচলে আসা, এত ভালোমানুষকে ভালোবাসার সুযোগ না পাওয়া।

আত্নার শান্তি কামনা করি।

সচেতনা এর ছবি

খুব দুঃখজনক ঘটনা, কিছু বলার নেই - আত্মীয় বিয়োগে আপনার পাশে থাকলাম।
ওনার আত্মার শান্তি কামনা করি।

অভিমানী কেউ একজন এর ছবি

ভাবছিলাম সচলে আর একটা শব্দও লিখবো না । আপনার লেখাটা পড়ে কমেন্ট না করে থাকতে পারলাম না ।

প্রিয়জন হারানোর কি বেদনা তা সবাই একটু-আধটু জানে তাই তাই কারো সান্ত্বনা দেবার কোন ভাষা নেই । সন্ন্যাসীদা ,তারপরেও জীবন থেমে থাকে না । আপনি শোককে কাটিয়ে উঠুন তাড়াতাড়ি এই কামনাই করছি ।

লুৎফর রহমান রিটন এর ছবি

আমার এই দীর্ঘ সাত বছরের প্রবাস জীবনে সবচে বেশি কথা বলেছি আমি মুহম্মদ জুবায়েরের সংগে। সন্ন্যাসী, আপনার পরিচয়টি তার কাছে প্রকাশ করার পর এমন কোনো রাতের কথা আমার মনে পড়েনা যে রাতে আপনাকে নিয়ে তিনি কথা বলেন নি। আপনার সংগে তার কি কি কথা হলো আজ, সেটাও আমাকে শোনাতে চাইতেন। আপনাকে যে কী ভালোবাসতো মানুষটা। বারবার বলতো--ছোট ভাই হিশেবে যতোটা আদর ওর প্রাপ্য ছিলো আমার কাছে, সেটা আমি দিতে পারিনি।
আপনার আজকের এই লেখার অধিকাংশই আমার জানা।

মাংস নিয়ে আপনাদের ভাইদের মজার অনুপ্রাসিক একটা রসিকতাও আমি শুনেছি। (হাংস)

জুবায়ের ভাইয়ের এই চলে যাওয়া আমাকে প্রবাসে নিঃসংগ করে দিয়েছে। আমার সেলফোনে জুবায়ের ভাইয়ের নাম আর নাম্বারদুটো ওপেন করে রোজ দেখি,বারবার। এটা আমি কোনোদিন ডিলিট করতে পারবো না।

হাবু বেশ বড়সড়,গাবুটা তো পিচ্চি
হেরে গিয়ে হাবু বলে--উৎসাহ দিচ্ছি!

ধ্রুব হাসান এর ছবি

আসলেই পারবেন না..................এখনো আমি বাবার সেল ফোন নম্বরটা মাঝে মাঝে দেখি।

স্বপ্নাহত এর ছবি

---------------------------------

বিষণ্ণতা, তোমার হাতটা একটু ধরি?

---------------------------------

বাঁইচ্যা আছি

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

সন্ন্যাসীদা,

কোথায় শুরু করবো বুঝতে পারছি না। গায়ের জোরে অনেক ব্যস্ত একটা দিন কাটিয়ে ঘরে ফিরলাম এই কিছুক্ষণ আগে। ভুলে থাকার অপচেষ্টা। অভ্যাসবশত সচলায়তনে ঢুকে পড়া, আর আপনার লেখা দেখে অনেকটা যান্ত্রিকভাবেই পোস্টটা খুলে বসা। মনটা আবার সেই বিষন্নই হয়ে গেল।

জালাল ভাইয়ের ফোনটা পেয়ে বাসার সামনের পাহাড়টার পাশে বসেছিলাম অনেকক্ষণ। রাত সাড়ে তিনটা পর্যন্ত কান্না থামিয়ে রাখতে পেরেছিলাম। থেমে থেমে, চোখ মুছে মুছে পাক্কা তিন ঘন্টা লেগেছিল ছোট্ট লেখাটুকু লিখতে। আজকে আবার কান্না শুরু হল আপনার লেখাটা পড়ে।

জুবায়ের ভাই প্রায়ই ফোন করতেন। অনেক ব্যক্তিগত ব্যাপার নিয়ে খোলামেলা আলাপ করেছি দিনের পর দিন। অল্প বয়সে প্রেম থেকে বিয়ের আংটি কিনে ছ্যাঁকা খাওয়া, বাবা-মার অমতে বাইরে আসা থেকে রোববার সকাল হলে খুচরা পয়সার লোভে বারের বাইরে ঘুরঘুর করা, এয়ারপোর্টে অপদস্থ হওয়া থেকে জীবনের প্রয়োজনে ফাইনাল পরীক্ষার মাঝে শীতের রাতে বাইরে কাজ করা, ইত্যাদি অনেক ব্যাপার যেগুলো নিয়ে কারও সাথে কথা বলি না। জুবায়ের ভাই বলতেন তাঁর প্রবাস জীবনের প্রথম দিকের গল্প।

দেশ আর রাজনীতি নিয়ে কথা হত। সাহিত্য ও সামাজিক মূল্যবোধ নিয়ে কথা হত। দেশ নিয়ে জুবায়ের ভাইয়ের অসমাপ্ত লেখা আর আমার আগডুম-বাগডুম স্বপ্নগুলো নিয়ে কথা হত। আবদারের সুরেই জুবায়ের ভাইয়কে একবার বলেছিলাম, "দেশ আমি বদলাবোই। সময় আসলে আপনাদের সবাইকে ডাকবো। তখন কিন্তু ফাঁকি দেওয়া চলবে না।" জুবায়ের ভাই হেসে বলেছিলেন যে তিনি হয়তো পারবেন না। আমি গতরাত থেকে যেই নতুন ইঙ্গিত খুঁজে পাচ্ছিলাম তাঁর কথায়, সেটা আজ আপনার লেখায়ও পড়লাম।

আড্ডার এক পর্যায়ে জুবায়ের ভাইকে একদিন বলেছিলাম যে তিনি ছোটদের সাথে অনেক সম্মান দেখিয়ে কথা বলেন। ভুলগুলোও অনেক ভাল ভাবে বুঝিয়ে দেন। আফসোস করছিলাম যে এমন একজন বড় ভাই পেলে ভাল হত, জীবন আরামের হত। সংসারে বড় হবার আরাম আর আদরের সাথে সাথে দায়িত্ব আসে, যন্ত্রণা আসে। সেগুলো নিয়ে হাস্যোচ্ছ্বল অনেক কথা বলতাম।

এরকম আরও অজস্র মুহূর্ত ছিল। বড় কোন কিছু নিয়ে ভাবনাগুলো যখন সভয় সংকোচে চাপা পড়ে থাকতো, তখন জুবায়ের ভাইয়ের সাথে আলাপ করে নিয়ে এক ধরণের ভ্যালিডেশন পেতাম। আপনার আপন ভাই, আমি জানি আপনি বুঝবেন কষ্টগুলো। আফসোস হয়, অনেক ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও দেখা হল না তাঁর সাথে। ছবিও প্রথম দেখলাম অসুস্থতার পর পত্রিকায় প্রথম।

জুবায়ের ভাইয়ের সাথে শেষ কথা হওয়ার দিন শুরু করেছিলেন সেই কথাগুলো দিয়েই -- "কী ব্যাপার ইশতি, আমার খবর নাও না যে?" ব্যস্ত ছিলাম। খুব বেশিক্ষণ কথা বলার সুযোগ হয়ে উঠলো না।

দূরের হয়েও অনেক আপন ছিলেন জুবায়ের ভাই। সচলায়তনে আসা অনেক কষ্টের করে দিয়ে গেলেন। ভাল থাকবেন। আপনাদের ভাইয়েদের লেখনী খুবই দুরন্ত। অভিনন্দন রইলো।

কনফুসিয়াস এর ছবি

-----------------------------------
... করি বাংলায় চিৎকার ...

-----------------------------------
বই,আর্ট, নানা কিছু এবং বইদ্বীপ

নন্দিনী এর ছবি

এক্কেবারে বাক্যহারা !
শুধু একটাই কথা বলার, আপনি অনেক ভাগ্যবান, এরকম একজন ভাই পেয়েছিলেন...!

ভালো থাকবেন আপনারা।
নন্দিনী

অচল আনি এর ছবি

------------------------------------

------------------------------------
জয় বাংলা ব্লগিং! জয় সচলায়তন!!

পরিবর্তনশীল এর ছবি

অনেককিছু ভেবেছিলান। কিন্তু ভাবিনি কখনো- আপনার লেখা পড়েই আমাকে কাঁদতে হবে। কী আর বলব? ভালো থাকবেন। ভালো থাকবেন।
---------------------------------
ছেঁড়া স্যান্ডেল

জুলিয়ান সিদ্দিকী এর ছবি

ভ্রাতৃবিয়োগের শোকের সঙ্গে অন্য কোনো শোকের মনে হয় কিছুটা পার্থক্য আছে। আমার জ্যেষ্ঠ্য তিনজন ভাই হারিয়েছি। এই কষ্টটা যেন উথলে ওঠে না। কিন্তু দীর্ঘস্থায়ী একটি ক্ষত রেখে যায়। কিছুদিন পরপর যে ক্ষত পেকে ওঠে। কষ্টের পুঁজ-রক্ত ছাড়ায়। ফের ঝিমিয়ে পড়ে। পুনরায় কাঁচা হয় সেই ক্ষত।

তাই সমবেদনা জানানোর সামর্থ আমার নেই। কিন্তু কামনা করি শোক কাটিয়ে উঠবার শক্তি অর্জন করুন তাড়াতাড়ি।
____________________________________
ব্যাকুল প্রত্যাশা উর্ধমুখী; হয়তো বা কেটে যাবে মেঘ।
দূর হবে শকুনের ছাঁয়া। কাটাবে আঁধার আমাদের ঘোলা চোখ
আলোকের উদ্ভাসনে; হবে পুন: পল্লবীত বিশুষ্ক বৃক্ষের ডাল।

___________________________
লাইগ্যা থাকিস, ছাড়িস না!

নজমুল আলবাব এর ছবি
পলাশ দত্ত এর ছবি

::..............................................................................::

==========================
পৃথিবীর তাবৎ গ্রাম আজ বসন্তের মতো ক্ষীণায়ু

সুমন সুপান্থ এর ছবি

প্রিয় সন্ন্যাসী,

আবেগ তাড়িত মানুষ আমি । বলতে কী, এই নিপাট যুক্তি-বুদ্ধি-প্রয়োগ নিয়ন্ত্রিত দুনিয়ায় অচলই বা হয়তো কিছুটা !
তাই আপনার এমন হৃদস্পর্সী লেখাটা দাঁতে দাঁত চেপেই পড়তে হলো ! কান্নায় উপাচাচ্ছিলো চোখ । কতোবার যে ঝাপসা হয়ে এলো মনিটর ! ( লেখার সঙ্গে নিজেকে মিশিয়ে লিখলে এমনই হয়, যেভাবে সৃষ্টি হয়েছিলো জুবায়ের ভাইয়েরই অনবদ্য এক গল্প - যাই )

জুবায়ের ভাইয়ের ভাই আপনি , আপনি তো জানবেনই; আমি যে তস্য ভাই হয়ে ছিলাম অল্প ক'দিন জেনেছি তাতেও; বুকটা কী বিশাল ছিলো এই মানুষটার !!

আর কিছু লিখতে পারছি না , সন্নাসী । কান্না পাচ্ছে আবারো ।

---------------------------------------------------------

'...এইসব লিখি আর নাই লিখি অধিক
পাতার তবু তো প্রবাহেরই প্রতিক...'

---------------------------------------------------------
তুমি এসো অন্যদিন,অন্য লোক লিখবে সব
আমি তো সংসারবদ্ধ, আমি তো জীবিকাবদ্ধ শব !

আলমগীর এর ছবি

কী বলব, সন্ন্যাসী দা।
কদিন ধরেই বাকরুদ্ধ, দম-বন্ধ হয়ে আছি।
আপনাকে একদা লেখা উৎসর্গ করা একজনও মনে হয় এ গোপন কথাটি জানে না।

সয়ে যাবে সব, মনে-প্রাণে এ আশা নিয়ে বসে আছি।

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

আলমগীর ভাই, আন্দাজ ছিল, কিন্তু আমি মনে হয় এখন বুঝতে পারছি আপনি কী বুঝিয়েছিলেন!
_______________
বোকা মানুষ মন খারাপ

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

আপনারা এসব লেখা দয়া করে আর লিখবেন না। প্রথম দিন থেকেই খবরটা নিউজে শোনার পর থেকে সচলে এসেই দেখি এই অবস্থা। নিজেকে খুবই কঠিন প্রকৃতির বলে মনে করি। কিন্তু তারপরেও কয়দিন আগেই যার সাথে মেসেজ চালাচালি হয়েছে সেই মানুষটাই আজ নেই তা ভাবতেই কাতর হচ্ছি। সচলায়তন থেকে পালিয়ে থাকতে চাইছি। এর মাঝেও বার বার মনে হচ্ছে ইশতিয়াকের লেখার শিরোনামটা (কী ইশতি খবর নাওনা যে?) যেন জুবায়ের ভাই আমাকেই বলছেন। ওফ্ আমি আর সহ্য করতে পারছিনা।

জুবায়ের ভাই,

মা বাবা এখন আমার এখানে বেড়াতে এসেছে জেনে আপনি বলেছিলেন সচলায়তন থেকে আপাতত ছুটি নিতে। তারপর বাবা-মায়ের সাথে কাটানো আনন্দগুলো নিয়ে লেখা দিয়ে সবার সাথে সে আনন্দ ভাগ করে নিতে। জুবায়ের ভাই, সেই আনন্দময় অভিজ্ঞতা হয়তো সচলায়তনের পাঠকদের সাথে শেয়ার করা হবে, শুধু আপনি দেখতে পারলেন না।

আমি আপনাদের মত লিখতে পারিনা। তাই লেখা হয়নি কোন এলিজি। কিন্তু মনের খাতায় লিখে রেখেছি জুবায়ের ভাইয়ের নাম। এসব পড়তে/ভাবতে/লিখতে আমার খুবই কষ্ট। আপনারা দয়া করে আর এসব লিখবেন না।

রণদীপম বসু এর ছবি

সন্ন্যাসীজী,
এ যাবৎ আপনার পোস্টে সম্ভবত ফান মন্তব্যই করে এসেছি, নির্ভরতা নিয়ে।

আজ নতজানু হয়ে থাকার দিন। আপনার শোককে শ্রদ্ধা জানাচ্ছি। অগ্রজের প্রতি আপনার বিনয়ে আমার ভালোবাসা রইলো। এ শোক হয়তো বহুকাল থাকবে। তা ধারণ করার ক্ষমতা যেন আপনার অসীম হয় এই শুভকামনা ।

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

আরিফ জেবতিক এর ছবি

........

রায়হান আবীর এর ছবি

বাসায় আছি... নেট নেই। সেদিন সকালে ঘুম ভাংগলো দুঃসংবাদটি শুনে...আজকে শুনলাম আপনার এই কথা...অনেকদূর আসলাম লেখাটি পড়ার জন্য...

বলতে চেয়েছিলাম অনেক কথা। কান্না আটকে রাখাই এখন দায়।

ভালো থাকবেন।
=============================
তু লাল পাহাড়ীর দেশে যা!
রাঙ্গা মাটির দেশে যা!
ইতাক তুরে মানাইছে না গ!
ইক্কেবারে মানাইসে না গ!

মুশফিকা মুমু এর ছবি

-----------------------------

------------------------------
পুষ্পবনে পুষ্প নাহি আছে অন্তরে ‍‍

শোহেইল মতাহির চৌধুরী এর ছবি

সন্ন্যাসী, আবার কাঁদালেন।
মুহম্মদ জুবায়েরের মত আপনার একটা ভাই ছিলেন, এটা অনেক বড় এক সৌভাগ্য।
কামনা করি শোক কাটিয়ে স্থিত হোন।
-----------------------------------------------
সচল থাকুন... ...সচল রাখুন

-----------------------------------------------
মানুষ যদি উভলিঙ্গ প্রাণী হতো, তবে তার কবিতা লেখবার দরকার হতো না

স্নিগ্ধা এর ছবি

......................................................

ভূঁতের বাচ্চা এর ছবি

জুবায়ের ভাইয়ে এতো গভীরে আমি জানতাম না, আপনার লেখার ১৯ টি অংশের প্রত্যেকটি উনার দারুন ব্যক্তিত্বের পরিচয় দিয়ে যাচ্ছে। বরাবররই ভাইয়ার লেখার আমি ভক্ত ছিলাম; সচলে পড়তাম, উনার ব্যক্তিগত ব্লগে ঢুঁ মেরে আসতাম। এই লেখা প্রথমবারে আমি পুরোটা শেষ করতে পারিনি মাঝপথে এসে দু'চোখ ঝাপসা হয়ে যায় তাই দ্বিতীয় প্রচেষ্টা লাগে শেষ করতে। তবে আমার জানা ছিলনা যে ছোটভাই হিসেবে আপনার উনাকে এত্তো কাছে থেকে দেখার সুযোগ হয়েছে।জুবায়ের ভাইয়ার জন্য, তাঁর লেখার জন্য ভালবাসা আমার যেমন ছিল তেমনটাই থাকবে। আর কিছু লিখতে পারছিনা, ঝাপসা দেখছি আবারো সবকিছু !

--------------------------------------------------------

জাহিদ হোসেন এর ছবি

এতদিন চোখ ভেজা ছিল জুবায়ের ভাইয়ের জন্য। এখন কাঁদছি আপনার জন্যে। শোকের চাদরটিকে কোনমতেই গা থেকে নামাতে পারছি না। সন্ন্যাসী-আপনার পাশে গিয়ে দাঁড়াতে বড্ড ইচ্ছে করছে।
_____________________________
যতদূর গেলে পলায়ন হয়, ততদূর কেউ আর পারেনা যেতে।

_____________________________
যতদূর গেলে পলায়ন হয়, ততদূর কেউ আর পারেনা যেতে।

কুরুবক [অতিথি] এর ছবি

কয়েকদিন আগে দেশের বাইরে চলে গেছে আমার একমাত্র বড়ভাই।
হাসিমুখে ওকে বিদায় দিলাম airport এ।

বাসায় ফিরে ওর মোবাইল কম্পিউরটার সব দখল নিয়ে নেবার পর দেখি যাই ধরি চোখ দিয়ে ঝরঝর করে পানি পড়ে।কিছুতেই থামে না।একটু থামে তো আবার শুরু হয়।তাই বোধহয় সন্ন্যাসীর লেখা পড়ে আবার চোখটা ভিজে উঠলো।

চিরতরে তাকে হারানো কতটা বেদনাদায়ক ভাবতেও পারি না।

আপনার জন্য অশ্রুসিক্ত সমবেদনা রইল।

কুরুবক

অমিত আহমেদ এর ছবি
আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

কি বলবো!!! কিচ্ছু না...

অনিন্দিতা এর ছবি

গত কয়েক দিন ধরে খুব মন খারাপ করে সচলে ঢুকছি।
আজকের জন্য বোধ হয় আমার সব কান্না জমা হয়েছিল।
--------------------------------------------
এখানে আমার কোন পোস্ট নেই । শুধু মন্তব্য করি। জুবায়ের ভাইয়ের সাথে পরিচয় তাঁর লেখার মধ্য দিয়ে। তাঁর লেখায় মাঝে মাঝে মন্তব্য করেছি। কিন্তু আমার মতো সামান্য পাঠকের মন্তব্যে ও তাঁর প্রতি মন্তব্য ও পেয়েছি।
আজ সবই মনে পড়ে যাচ্ছে।
আপনাকে বলার কিছুই খুঁজে পাচ্ছি না.............

হাসান মোরশেদ এর ছবি

-------------------------------------
সমুহ শোকেরা এলো ঝাঁক বেঁধে;
বিদায় জুবায়ের ভাই...

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

থার্ড আই এর ছবি

রুশ কবিতার কোন অনুবাদ কিংবা কামরাঙ্গা ছড়া ভেবে পোস্টে ক্লিক করে তাজ্জব বনে গেলাম!!
সন্ন্যাসী জি এই কোন পরিচয়ে আজ সচলায়তনে হাজির হলেন...!! এতটা ধৈয্যশীল মানুষ হয় ! একারনেইকি আপনার নাম 'সন্ন্যাসী' ?

জুবায়ের ভাইকে আরো গভীর ভাবে জানলাম আপনার অনবদ্য পোস্ট হতে। এমন একজন ভাই ছিলো আপনার আপনি তো মহা সৌভাগ্যবান। জুবায়ের ভাইয়ের শূন্যতা কাটছেনা, মানতে পারছিনা.....এখনও
---------------------------
স্বপ্নকে ছুঁতে চাই সৃষ্টির উল্লাসে

-------------------------------
স্বপ্নকে ছুঁতে চাই সৃষ্টির উল্লাসে

পথে হারানো মেয়ে এর ছবি

কোন স্বান্তনা দেওয়ার নেই।
শুধু সারাজীবন আশা করেছিলাম, আমার একরকম একজন বড়দা থাকবেন এবং যাঁকে হারানোর বেদনা কখন পেতে হবে না।

কীর্তিনাশা এর ছবি

......................................

-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।

-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।

মুজিব মেহদী এর ছবি

মৃত্যুঘটনার কাছাকাছি সময়ে জুবায়ের ভাইকে নিয়ে সচলায়তনে আসা সবকটি পোস্টই পড়ি, কয়েকটিতে মন্তব্যও করি। পরে শোকপ্রবাহের তোড়ে কয়েকদিন ব্লগে ঢুকব না বলেই স্থির করে ফেলি। কেবলই মন খারাপ করা যেন। কী বলা যায় এ ধরনের পোস্টে! একেকটা পোস্ট যেরকম অনুভূতি দিয়ে রচিত, সেরকম অনুভূতির পাশে দাঁড়াতে পারে এমন শব্দই খুঁজে পাওয়া যায় না যেন। তিনদিন পরে সচলায়তনে ঢুকে শোকপ্রবাহে খানিক ভাটা চোখে পড়লেও ক্লিক করা হয়ে যায় ফের শোকস্তম্ভগুলোতেই। পেছন দিক থেকে জুবায়ের ভাই বিষয়ে অপঠিত কয়েকটি পোস্ট পড়ে বিনামন্তব্যে বেরিয়ে আসতে পেরেও এই পোস্টে এসে খানিকটা দুলে উঠলাম। কিন্তু কী বলে বুঝাবো আমি এই দুলে ওঠা! এহেন বিষাদের পাশে ঋজু হয়ে কে কবে পেরেছে দাঁড়াতে!

ভাইয়ে-ভাইয়ে সম্পর্কের যে উচ্চতর পর্যায়টি মূর্ত হয়ে উঠল এই পোস্টে, পৃথিবীর হাজারো ভাই সেই সম্পর্কের বড়োই কাঙাল। সন্ন্যাসীজির পোস্টটির সংক্রমিত করবার ক্ষমতাকে সম্মান জানাই।

................................................................
তোমার হাতে রয়েছি যেটুকু আমি, আমার পকেটে আমি আছি যতটা, একদিন মনে হবে এটুকুই আমি, বাকি কিছু আমি নই আমার করুণ ছায়া

... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ...
কচুরিপানার নিচে জেগে থাকে ক্রন্দনশীলা সব নদী

অভিজিৎ এর ছবি

গুটিকয়েক সচল জানতেন, আমি মুহম্মদ জুবায়েরের ছোট ভাই। হ্যাঁ, কনিষ্ঠতম সহোদর। রিটন ভাই আভাস দিয়েছিলেন একটা লেখায়। তারপর অভিজিৎ সেদিন মন্তব্যে “'ফুর্তিবাজ' সচল ছোট ভাইটি”-র কথা উল্লেখ করলেন। ....

আমি চাইনি, সত্যই চাইনি- বিশ্বাস করুন। আপনার লেখার সাথে আমার আজকে পরিচয় নয়, পরিচয় সেই নব্বইইয়ের দশকে যখন সবুজ মলাটের সেই বিখ্যাত বই 'সোভিয়েতস্কি কৌতুকভ'-পড়েছি। আমার জীবনে পড়া অন্যতম সেরা বইগুলোর একটা (আমার একটা কমেন্টে 'হিন্ট'ও দিয়েছিলাম, পাঠকেরা হয়তো বোঝেননি)। তারপর সচলে যখন আপনার কৌতুকগুলো দেখেছি - বিশেষতঃ প্রাক্তন সোভিয়েত ইউনিয়ন নিয়ে - বারবারই আমার স্মৃতি চলে গিয়েছিলো অনেকদিন আগেকার ওই সবুজ বইটার কৌতুকগুলোর দিকে ...সেই কতকাল আগে পড়া কিন্তু অসুবিধা হয়নি মেলাতে। কিন্তু তারপরও সচলে আপনার 'ফুর্তিবাজ' লেখা দেখে কখনো ঘূর্ণাক্ষরেও সন্দেহ হয়নি মুহম্মদ জুবায়েরের মত সিরিয়াস একজন লেখকের ভাই হতে পারেন আপনি। তারপর সেটাও যখন একসময় আবিস্কৃত হল - আমার বিস্ময় সেদিন হিমালয়শৃংগকেও অতিক্রম করে গিয়েছিলো।

শুধু লেখার 'টাইপের' পার্থক্যের জন্য নয় - বিস্মিত হয়েছিলাম আরো অনেকগুলো কারণে। ধর্ম, সমাজ, বিজ্ঞান, সংস্কার নিয়ে আপনার খোলামেলা বক্তব্য, আপনার জোরালো স্ট্যান্ড বরাবরই আমাকে মুগ্ধ করে, আর জুবায়ের ভাই ছিলেন বরাবরই এগুলোতে হয় নিস্পৃহ, নয়ত ছিলেন নিশ্চুপ। হয়ত এগুলো নিয়ে লেখালিখিকে 'অনর্থক ক্যাচাল' ভাবতেন কে জানে! সত্যই লেখার বিষয়ানুগ পার্থক্য, জীবন নিয়ে 'ফিলোসফি'সহ অনেক কিছুতেই আপনাদের মধ্যকার পার্থক্য আমি দেখিছি প্রসারিত মাত্রায়। তারপরো কয়েকটি বিষয়ে মিল আমার দৃষ্টি এড়ায়নি - আপনার দুজনের লেখার 'সাহিত্যরস', আর সর্বোপরি মুক্তিযুদ্ধ এবং রাজাকার ইস্যুতে আপনাদের দুজনের অবিকল অভিন্ন বক্তব্য। তারপরও স্বীকার করতেই হবে, তৃতীয়পক্ষের ভূমিকা না থাকলে শুধু এই মিলগুলো দিয়ে আমি আপনাদের দুজনের পারিবারিক সম্পর্ক খুঁজে পেতাম না। সেই তৃতীয় পক্ষের পরিচয় পাঠকদের কাছে রহস্যই থাকুক না হয়।

আমি জানি এ ক'দিন আপনার উপর দিয়ে কি ঝড় বয়ে গেছে। একে তো ভাইয়ের মৃত্যু - আর তারপর, আনিস সাহেবের লেখা পড়লাম। যারা আপনার পরিচয় জানে, হয়ত ভেবেছিলো, 'সন্ন্যাসী' সেজে না থাকলে হয়ত তাঁকে নিয়ে আপনিও লিখতেন - কিন্তু আপনি যে এভাবে সত্যই সব কিছু ভেঙ্গে হাজির হবেন - এত তাড়াতাড়ি - ধারনা করিনি। তবে আমি আপনার প্রতিটি মুহূর্ত বুঝতে পেরেছিলাম, উপলব্ধি করেছিলাম প্রতিটি মানসিক দ্বন্দ্বকে - এমনকি কোন দিন আপনাকে না দেখেই।

আপনার এবং জুবায়ের ভাইয়ের পরিবারের মঙ্গল কামনা করি।



পান্ডুলিপি পোড়ে না। -- বুলগাকভ (মাস্টার এন্ড মার্গেরিটা)


পান্ডুলিপি পোড়ে না। -- বুলগাকভ (মাস্টার এন্ড মার্গেরিটা)

নুরুজ্জামান মানিক এর ছবি

--------------------------------

নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)

নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)

ধ্রুব হাসান এর ছবি

শ্রদ্ধা ইউথ লাভ ব্যাপারটা যে আদায় করে নিয়েছিলেন তিনি হলেন জুবায়ের ভাই। তারপরও বড় বলেই হয়তো দূরত্বটা ছিলো বরাবরের মতোই! কিন্তু আপনার লেখায় মন্তব্য করতে বা কোন কিছু শেয়ার করতে কোনরকম দূরত্ব অনুভব করিনি কখনো। এমন কি আমার কাছের মানুষজনকে বলেছি কে এই সন্ন্যাসী? এই লোকের রুচির সাথে কেমন জানি নিজের অনেক মিল খুজেঁ পাই! সে যাইহোক, আপনার এই দীর্ঘ লেখার অনেক জায়গা কোট করা যায়, কিন্তু সকল মন্তব্য ছাড়িয়ে যে বোধটি সচল তা হলো মগজে এক ভোতা অনুভূতি.........! অফিসে এতো লোকের ভেতরেও কান্না চাপিয়ে রাখা যে কি কষ্ট তা যাদের চাপতে হয় তারা হয়তো জানেন! ভাগ্যভালো চশমা পড়ি...!
কি আর বলার আছে, ভালো থাকার চেষ্টা করুন! ভালো থাকুন।

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

দাদা... তখন খুব অসুস্থ ছিলাম... সচলায়তনে আসতে পারিনি।
এসে এতক্ষন পর্যন্তও স্থির ছিলাম... কান্না আমার খুব একটা আসে না...
কিন্তু আপনার লেখাটা পড়ে আর রইতে পারলাম না।

দাদা... ভালো থাকবেন। আর কিছু বলার নেই।
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

অতিথি লেখক এর ছবি

মানিক ভাই লিখেছেন, "বলে এক আর করে আর এক যারা, তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)" -কথাটা একাধিকভাবে সত্যি হয়ত, কিনতু ততদিনই বেঁচে আছেন তারা, যতদিন জৈবিক প্রাণটুকু দেহে আছে। কিনতু জুবায়ের ভাইএর মত মানুষরা তো আসলে বেঁচেই থাকেন। তাঁরা দেহে প্রাণ থাকতেও জৈবিক কারণে বাঁচেননি যেমন, তেমনি জৈবিক প্রাণটুকুই হারিয়েছেন, মরেননি কখনই।

যাই হোক, সন্ন্যাসী ভাই এর আর সন্ন্যাস জীবন যাপন হলো না বোধহয় আর। এই বিশাল আকুতি'র দায়ভার ওনার উপরই পড়ে যাচ্ছে মনে হয়। জুবায়ের ভাইকে কাছে না পেলেও ওনার কাছেই তাঁর ছায়াটুকু খুঁজব বোধহয় আমরা। সুতরাং এতগুলো আত্মা এবং আত্মীয়তার বাঁধন উপেক্ষা করে আর তো সন্ন্যাস থাকা যাবে না।

প্রিয় সন্ন্যাসী, আসলেই জানিনা কারো অভাব কাউকে দিয়ে কিভাবে পুরণ হয়, তবুও জুবায়ের ভাই এর সহদর হিসেবে আপনাকেই আঁকড়ে থাকা--------যতদিন প্রাণের স্পন্দন আছে, ততদিন। আপনার জায়গা সেতো আগের মতনই -----------------

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।