অতীত - ২

রেশনুভা এর ছবি
লিখেছেন রেশনুভা (তারিখ: রবি, ০৬/০৯/২০০৯ - ৮:৫০অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:


নিতান্তই প্রয়োজন না থাকলে কে বের হয় বাইরে এই বিশ্রী, টিপটিপে বৃষ্টিতে? কিন্তু বের না হলে যে আগামী সপ্তাহটা দু’টো খেয়ে বেঁচে থাকা হবে না। পাউরুটি চিবুতে আর ভালো লাগে না। অগত্যা বৃষ্টি মাথায় নিয়েই বেরিয়ে যাওয়া।

ইদানীং সুযোগ পেলেই সাইকেলে চেপে বেরিয়ে পড়ি। আজও তাই হল। তবে কাজটা একটু বোকামিই হয়ে গেল বোধহয়। সাথে যে কোন বৃষ্টি নিরোধক ব্যবস্থা নেই। ‘রেইনকোট’ কেনা হয়ে ওঠেনি অলসতায় আর কিছুটা অনিচ্ছায়। এক হাতে ছাতা নিয়ে বাইক চালানোর মতন পারদর্শী এখনও হয়ে উঠতে পারিনি। তবে কি জানেন? একদমই খারাপ লাগছে না। বৃষ্টি আর বাতাস; রোমান্টিকতায় ভরা প্রকৃতিটা আজ। ঢাকা শহরের কপোত-কপোতীরা নিশ্চয়ই এরকম একটা পরিবেশ আর পর্দা টানা রিকশার জন্য অধীর হয়ে থাকে। আমিও থাকতাম একটা সময়।

ওর সাথে প্রথম বৃষ্টিতে ভেজা ঐ দিনই। অকৃপণ ভাবে সেদিন আকাশটা কেঁদেই যাচ্ছিল। রিকশা নিয়ে ঘুরতে বেরিয়েছিলাম দু’জন। বড়ই আক্ষেপের একটা বিষয় ছিল; রিকশাচালকের প্রতি তুমুল ক্রোধেরও জন্ম দিয়েছিল সেটা আমার মনে। কোন পর্দা ছিল না রিকশাতে। ও হেসেই যাচ্ছিল। হঠাৎই রিকশা থামাতে বলে ও দিল এক ছুট। আমিও অগত্যা বিরক্ত মনে পুরো ঘন্টার টাকাটা রিকশাচালককে দিয়ে ছুট লাগালাম পিছন পিছন। ওর খুব বৃষ্টিতে ভিজতে ইচ্ছে করছিল। কর্ত্রীর ইচ্ছাই কর্ম। আমিও হাঁটতে লাগলাম পাশাপাশি রাস্তায়।

অনেকক্ষণ, অনেকদূর হেঁটেছিলাম সেদিন। মাঝে বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতেই টং দোকানের চা খেলাম। এই সুযোগে যেই একটা বিড়ি ধরাতে যাব, বিড়িটাকেও ভিজে চুপসে যেতে হয় ওর খবরদারিতে। আমাদের একেবারে চুপচুপে অবস্থা। অবশ্য সেই আমলে তখনও মুঠোফোনের মালিক না হওয়ায় তেমন কোন টেনশনও ছিল না। ওর কপালের দু’পাশ থেকে ক’গাছি অবাধ্য চুল সামনে এসে পড়েছিল। কোন একটাকে কি সরিয়ে দিয়েছিলাম আমি? মনে পড়ছে না। তবে এটা বেশ মনে আছে ও সেদিন চোখে কাজল দিয়ে আসেনি।

ওর সাথে যেদিন শেষ দেখা হয়, তার কিছু পরেই নেমেছিল আবার সেই বৃষ্টি। আমি তখন কিছুই বুঝে উঠতে পারছিলাম না। আজ অবধি অবশ্য বুঝতেও পারিনি। বৃষ্টির ভেতর কিছুটা দৌড়ে কিছুটা হেঁটে কোনমতে একটা বাস ধরেছিলাম। বৃষ্টি বলেই বোধহয় রাতের বেলাও এত্ত ভীড় ছিল। কপালজোরে জানালার ধারে একটা জায়গা অবশ্য পেয়েছিলাম ঠিকই। কাঁচ ছিল না যথারীতি। তখন বুঝেছিলাম বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় কেন জায়গাটা পেয়ে গেলাম। বৃষ্টি এসে ভিজিয়ে দিয়ে যাচ্ছিল আমার চোখ মুখ।

আচ্ছা, বৃষ্টির জল কি নোনতা হয়?


মন্তব্য

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

সুন্দর লেখা। মন খারাপ করা লেখা। মন খারাপ

কিন্তু রেশনুভাই, রিকশায় পর্দা ছিল না জন্য এতো ক্রোধ কেন? চোখ টিপি

আরো আসুক অতীতের কথা। আপনার কথা। বৃষ্টি আর 'তার' কথা।

রেশনুভা এর ছবি

১ম লাইনের জন্য ... ধন্যবাদ।
২য় লাইনের জন্য ... মন্তব্য নিষ্প্রয়োজন ... চোখ টিপি
৩য় লাইনের জন্য ... অতীতকে জড়িয়েই তো বর্তমানে বেঁচে থাকা। আসবে আরো...

এনকিদু এর ছবি

এত ডিটেইল রিটেইল প্রশ্ন করেন কেন ?


অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...


অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...

তানবীরা এর ছবি

প্রহরীটা ইচরেই পেঁকে গেছে।
---------------------------------------------------------
রাত্রে যদি সূর্যশোকে ঝরে অশ্রুধারা
সূর্য নাহি ফেরে শুধু ব্যর্থ হয় তারা

*******************************************
পদে পদে ভুলভ্রান্তি অথচ জীবন তারচেয়ে বড় ঢের ঢের বড়

নীল নক্ষত্র এর ছবি

বৃস্টির জলতো ভাই নোনা হয় না, নোনা হয় অশ্রু জল আর সাগর জল। খুব সুন্দর লিখেছেন, মন উদাস করা লেখা।

রেশনুভা এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ ভাই পড়েছেন বলে এবং উৎসাহ দিচ্ছেন বলে আবারও অকুন্ঠচিত্তে কৃতজ্ঞতা।

মৃত্তিকা এর ছবি

সুন্দর...

রেশনুভা এর ছবি

ধন্যবাদ।
আপনার তোলা ছবি আর লেখা অনেক মিস করি। ১০ দিন মত হয়ে গেল। কিছু একটা দেন।

গৌতম এর ছবি

বৃষ্টির কান্নায় বিষণ্নতা থাকলে তার জল অবশ্যই নোনতা হয়। যারা বৃষ্টির কান্না ধরতে পারে, নোনতা জল গড়িয়ে পড়ে তাদের চোখের নিচ দিয়ে।

.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

::: http://www.bdeduarticle.com
::: http://www.facebook.com/profile.php?id=614262553/

.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

রেশনুভা এর ছবি

আহ গৌতম, আপনার মন্তব্যটাই তো আমার পোস্টে দিয়ে দিতে ইচ্ছে হচ্ছে।

জুয়েইরিযাহ মউ এর ছবি

পড়তে ভালো লাগলো লেখাটি।

রেশনুভা এর ছবি

ধন্যবাদ ভাই অনেক।

সমুদ্র এর ছবি

সেই আমলে রিকশার ঘন্টা কত ছিলো জানতে ইচ্ছা করে।
আর অতন্দ্র প্রহরীর অনুসন্ধিৎসু প্রশ্নের জবাব। হাসি

"Life happens while we are busy planning it"

রেশনুভা এর ছবি

উমম...মনে হয় ২০ টাকাতেই হত। মাঝে মাঝে ২৫ টাকা। মানে আমার বন্ধুরা ঘুরে এসে আমাকে যেটা বলত আর কি। আমি কি কোনদিন ঘুরছি নাকি? আমি না কত্ত বালা ... চোখ টিপি
প্রহরী বেটা জাইনাও আমার লগে রঙ করে ... দেঁতো হাসি

ওয়াইল্ড-স্কোপ এর ছবি

চলুক চলুক চলুক চলুক

রেশনুভা এর ছবি

আপনার রসনা বিলাস সিরিজের ভক্ত আমি ।

প্রবাসিনী এর ছবি

ধুরো ভাইয়া, আপনার লেখা দেখে বেশ আগ্রহ নিয়ে পড়া শুরু করলাম, কিন্তু বড় বেশি মন খারাপ হয়ে গেল।

________________________________________________

হইয়া আমি দেশান্তরী, দেশ-বিদেশে ভিড়াই তরী রে

________________________________________________

হইয়া আমি দেশান্তরী, দেশ-বিদেশে ভিড়াই তরী রে

রেশনুভা এর ছবি

হিহিহিহি [শয়তানী হাসি]।
সোয়াজিল্যান্ড যামু। তাত্তাড়ি ... দেঁতো হাসি

শাহান এর ছবি

পড়লাম ...

রেশনুভা এর ছবি

পইড়াই খালাস ... কিছুই কইলা না ... মন খারাপ

এনকিদু এর ছবি

আচ্ছা, বৃষ্টির জল কি নোনতা হয়?

জিভে লবন থাকলে বৃষ্টির জল না শুধু, গোলাপ জলও নোনতা লাগে ।


অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...


অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...

রেশনুভা এর ছবি

হাহাহা...একদম ঠিক... হাসি

শাহেনশাহ সিমন [অতিথি] এর ছবি

চলুক

অনিকেত এর ছবি

আমার মনে হয় এমন কোন বাঙালী পুরুষ পাওয়া যাবে না যার জীবনে বৃষ্টি নিয়ে কোন রোমান্টিক স্মৃতি নেই।
সব পুরুষই কোন এক সময় বৃষ্টিতে ভেজে, তার হাতে হাত রেখে ভিজে তার নারী---
সেই একই বৃষ্টি, একই নর-নারী---
অথচ প্রতিটা বারই কী নতুন!!!

অসম্ভব ভাল লাগল লেখাটা-----

শুভেচ্ছা রইল---

রেশনুভা এর ছবি

আপনার মন্তব্য পাইলে সার্থক মনে হয় লেখাটা; আফটার অল, প্রেসিডেন্ট মানুষ আপনি ... দেঁতো হাসি
ভালো থাকবেন ভাইয়া।

তানবীরা এর ছবি

কথা হলো কোন দেশের বৃষ্টির জল মীন করা হচ্ছে? বাংলাদেশের হলেও হতে পারে, পলিউটেড কিন্তু হল্যান্ডেরটা খেয়ে দেখতে হবে ...............
---------------------------------------------------------
রাত্রে যদি সূর্যশোকে ঝরে অশ্রুধারা
সূর্য নাহি ফেরে শুধু ব্যর্থ হয় তারা

*******************************************
পদে পদে ভুলভ্রান্তি অথচ জীবন তারচেয়ে বড় ঢের ঢের বড়

নীল নক্ষত্র এর ছবি

গৌতমের বৃষ্টির জল নোনা হবার থিউরি দেখে ভালো লাগলো, আহা! না জানি কত দিনের গবেষনার ফল এমনিতেই পেয়ে গেলাম। কি? আমার সাথে কেউ আছে?

রায়হান আবীর এর ছবি

বৃষ্টি রিকসা এবং পর্দা ... এই লেখাটা খুবি ভাল্লাগছে।


পুচ্ছে বেঁধেছি গুচ্ছ রজনীগন্ধা

রেশনুভা এর ছবি

আহ...কি এক সময় গেছে... মন খারাপ
আছে না কী এরকম অভিজ্ঞতা? বল শুনি... চোখ টিপি

অতিথি লেখক এর ছবি

খুব ভালো হয় নাই..আবার খুব খারাপ ও না.

অতিথি লেখক এর ছবি

"আমাকে খোঁজ না তুমি বহুদিন /

কতদিন আমিও তোমাকে খুঁজি নাকো...."

দিলেন তো চোখটা ভিজিয়ে !!!!

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।