এই আমাদের প্রথম দেখা নয়। কিন্তু কি জানেন, প্রতিবারই সেই চিরচেনা একই অনুভূতি। প্রেমিক-প্রেমিকারাও তো একটা সময় অভ্যাসেই নিজেদের ভালোবাসে। একটু হলেও কি উচ্ছাসে ভাটা পড়ে না? এই সর্বজনীন প্রেয়সীকে পেয়ে কিন্তু আমাদের কোনই ভাটা নেই উচ্ছাসে। হোক না ওর ভেজা ভেজা নরম বালির বুকে হাঁটতে গেলে পায়ে এসে বাঁধে কলার খোসা থেকে শুরু করে আরও অনেক কিছু। হলই বা না হয় ঐ ময়লা কালো পানিতে অর্ধনগ্ন হয়ে মাতামাতি করার দরূন কিঞ্চিৎ হেরফের গায়ের চামড়ায় এবং চুলে। কিচ্ছু আসে যায় না আমাদের। ফিরেফিরে যে ওর কাছেই আসি। ক্লান্তিগুলো ওর কাছে বিলীন করে দিয়ে, নিজেদেরকে আবার খুঁজে পেতে।
রাতের বেলা সবাই জড়ো হয়ে ওর গর্জন শুনছিলাম। আমাদের কারো কারো হাতে জ্বলন্ত সিগারেটের টুকরো আর কেউবা আকাশের পানে তাঁকিয়ে খুঁজতে চাইছে কিছু জানা প্রশ্নের না জানা উত্তর। দূরে এক যুগলের আলোছায়া খেলা করে। ক্রমেই দু’টো ছায়া মিশে যায় একটা আরেকটার সাথে। এদিকে আমাদের পাশেই আর এক দম্পতি বসে। ওদের খুব মিষ্টি একটা মেয়ে আছে। নাম কি জিজ্ঞেস করলে আধো আধো বোলে বলেছিল “রেশনুভা”। ছোট্ট ছোট্ট দু’টা বেণী দুলিয়ে সে কথা বলেই যাচ্ছে। ওর মায়ের হাতটা ওর বাবা একটু ধরতেই এক দৌড়ে বাবার কোলের ভিতর যেয়ে পড়ে পিচ্চিটা। ওর বাবা-মা দু’জনেই হেসে ওঠেন। কি এক অদ্ভূত আনন্দ খেলা করে চারদিকে; আন্দোলিত হই আমরাও।
বেশিদিন থাকা হয়নি ওর কাছে। কোন এক রাতের বেলা সেই নিঃসীম অন্ধকারে শেষবারের মতন ফিরে তাঁকাই ওর দিকে, বুক ভরে নিঃশ্বাস নেই। ওর গর্জনেও যেন আজ বিষণ্ণতার সুর। বিদায় বলিনি। জানি ফিরে আসব আবার তোর কাছে, অস্তমিত সূর্যের সোনালী ছটায় তোর ঢেউয়ের মাতামাতি দেখতে।
যান্ত্রিক জীবনে হাপাতে হাপাতেই ছুটির শেষদিনগুলো পার হচ্ছিল। কোন এক রাতে আমাদের আড্ডায় প্রস্তাব করা হল রাতের নগরী ঘুরে দেখার। বের হওয়ার আগে মুঠোফোনগুলোর সঙ্গ ত্যাগ করলাম মলম পার্টির কথা ভেবে। কিছু না পেলে ওনারা মাইন্ড করে আমাদের মাইন্ড হরণ করতে পারেন এই শংকায় কিছু টাকা অবশ্য নিয়েছিলাম সাথে।
সোডিয়াম লাইটের হলুদ আলো আর কুয়াশার মাখামাখি। ভার্সিটিতে পড়ার সময় অনেক দেখেছি এই স্বাপ্নিক পরিবেশ। কেউ যেন বলেও উঠল তাই। ঐ সময়টাতে ওরকমই মনে হত। লেকের পাড়ে হাঁটতে হাঁটতে ঘোলা আলোয় কত বিনিদ্র রজনী পার হয়েছে আর শেষ হয়েছে সাথে থাকা মুঠোফোনটার প্রাণবায়ু। এখন কিন্তু অন্যরকম লাগে। না জানি কতশত স্বপ্নের আজ রাতেই হচ্ছে নিদারূণ অপমৃত্যু। দীর্ঘশ্বাসটা মিশিয়ে দিলাম সিগারেটের ধোঁয়ার সাথে। তেষ্টা পেয়েছিল খুব হাঁটতে হাঁটতে। এমন সময়ই দেখলাম একটা অ্যামবুলেন্স বেরিয়ে গেল পাশ দিয়ে সাইরেন বাঁজাতে বাঁজাতে ………………
বেজেই চলেছে। থামাথামি নেই কোন। কোনমতে হাতড়ে হাতড়ে অ্যালার্মটা বন্ধ করলাম। পড়ে থাকলাম কিছুক্ষণ বিছানায়। পিপাসা পেয়েছে ভয়ংকর। বেসিনের সামনে যেতেই চোখ চলে গেল আয়নায়। এই আমিতে কোন আনন্দ খেলা করে না; শুধু আছে মুক্ত বাতাসে বুক ভরে নিঃশ্বাস নেওয়ার অতি সামান্য ইচ্ছা।
আরও একটি স্বপ্নের অপমৃত্যু ।।
মন্তব্য
স্বপ্নের ব্যাপারটা বুঝতে পারিনি প্রথমে।
গল্প ভালো হয়েছে। আরো লিখতে থাকুন আর পোস্ট করতে থাকুন।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
নাশু ভাই বলেই ডাকলাম ...
অনেক ধন্যবাদ।
অফ টপিকঃ আপনার ঘরের পুতুলটার নাম কি রাখলেন বস?
----------------------------------------------
আমার যত অগোছালো চিন্তাগুলি,
রয়ে যাবে এইখানে অযতনে ।।
ভাল লাগল। আমরা প্রতিদিন অনেক স্বপ্নকে হত্যা করি নিজের অজান্তে।
দলছুট।
দলছুট বলে ডাকব নাকি জামান ভাই বলব? অনেক ধন্যবাদ পড়ার জন্য।
----------------------------------------------
আমার যত অগোছালো চিন্তাগুলি,
রয়ে যাবে এইখানে অযতনে ।।
আমার কাছে আপনার অনুভূতি, অনুভব ও বর্নণা খুবই ভালো লেগেছে।
**********************************
কৌনিক দুরত্ব মাপে পৌরাণিক ঘোড়া!
**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব
আহ ... তীরুদা ... আমি সত্যিই অনেক খুশি হইলাম আপনার মন্তব্য পইড়া।
আহলাদ কিন্তু বেশি দিতেছেন বস। আমি আবার বান্দর আছি, পুরা মাথায় চইড়া বসব।
----------------------------------------------
আমার যত অগোছালো চিন্তাগুলি,
রয়ে যাবে এইখানে অযতনে ।।
একটা কথা এই আবজাবটা নিয়েঃ
গল্পে পিচ্চিটার নাম রেশনুভা দেয়ার কারণ, এই নামের একটা মানুষের প্রতি আমার ব্যাপক দুর্বলতা। সে নিজেও পিচ্চি ...
----------------------------------------------
আমার যত অগোছালো চিন্তাগুলি,
রয়ে যাবে এইখানে অযতনে ।।
একটু তালগোল পাকানো, পরে বুঝলাম স্বপ্ন। স্বপ্ন তালগোল পাকানো হইতেই পারে
ভাল হইছে।
----------------------------------------------
আমার যত অগোছালো চিন্তাগুলি,
রয়ে যাবে এইখানে অযতনে ।।
---------------------------------------------------------------------------
- আমি ভালোবাসি মেঘ। যে মেঘেরা উড়ে যায় এই ওখানে- ওই সেখানে।সত্যি, কী বিস্ময়কর ওই মেঘদল !!!
- বস, স্বাপ্নিক না, স্বপ্নীল।
আপনার গল্পটা ভালো লাগলো।
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
খুবই দুঃখিত ও লজ্জিত বস ...
জানানোর জন্য অনেক ধন্যবাদ আর পড়ার জন্যও ...
----------------------------------------------
আমার যত অগোছালো চিন্তাগুলি,
রয়ে যাবে এইখানে অযতনে ।।
সমুদ্র আর লেক মিলেমিশে গেছে, তাই স্বপ্নের সাথে তাল মিলানো কষ্ট হইলো।
তবে সব মিলায় ভালো হইছে।
"Life happens while we are busy planning it"
এলোমেলো স্বপ্নের ঘোর ভেঙে জেগে ওঠা...
_________________
ঝাউবনে লুকোনো যায় না
লেখাটা ভাল্লাগসে।
নতুন মন্তব্য করুন