অসমাপ্ত খুচরা গল্পগুচ্ছ

রেশনুভা এর ছবি
লিখেছেন রেশনুভা (তারিখ: মঙ্গল, ২৭/১০/২০০৯ - ৭:৪১পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:


ফারহানা বরাবরই বলে এসেছিল সম্পর্কটা বন্ধুত্বের চেয়ে বেশি কখনও নয়। অনিকই কখনও বুঝে উঠতে চায়নি। আর বুঝে উঠাটাও একটু কষ্টকর ছিল হয়ত ওর জন্য এই কারণে যে এই নোটটা বা ঐ স্যারের সাজেশনটার দরকার হলে ফারহানা সবার প্রথমে অনিকেরই দ্বারস্থ হত। যদিও সে পড়াশোনায় বরাবরই অনিকের চেয়ে ভালো ছিল। বোকা অনিকও তাই ভেবেছিল ফারহানা হয়ত ওকেই ভালোবাসে, বলছে না ওর চারপাশ ঘিরে রাখা গাম্ভীর্যের অনিবার্য পতন হবে দেখে।

এ-লেভেল পরীক্ষা দেওয়ার পরে অনিক বন্ধুদের নিয়ে বেরিয়েছিল ঘুরতে। আর ঐ সময়ে ফারহানা কী করছিল? স্যাট (SAT) এর প্রস্তুতি নিচ্ছিল। অনিক ঘুরে আসার বেশ কিছুদিন পর ওদের দেখা হয় কোন এক বন্ধুর জন্মদিনের উৎসবে। ততদিনে অবশ্য অনিক জেনে গিয়েছিল ফারহানা হয়ত বিদেশ চলে যাচ্ছে। অনিকের তাই ইচ্ছা ছিল শেষবারের মতন ফারহানাকে জিজ্ঞেস করবে ওদের সম্পর্কের ব্যাপারে। জিজ্ঞেস করেছিল অনিক। কোন এক বান্ধবীর ডাকে ফারহানা উঠে চলে গিয়েছিল উত্তর না দিয়েই।

অনেকদিন পরে ওদের সাথে আবার দেখা হয়ে যায় দুবাই এয়ারপোর্টে। ফারহানা নিউইয়র্ক থেকে বাংলাদেশে যাচ্ছে ছুটি কাটাতে আর অনিকের গন্তব্য ইউরোপের কোন শহর এমএস করার জন্য। ফারহানা একটু বদলেছে; চোখে চশমা। তারপরও অনিকের চিরচেনা সেই চোখের দীপ্তি এখনও আগের মতই আছে। আর অনিক? একটু মোটা আর বেয়াড়া ভাবটা আরো প্রকট চেহারায়।

অনিক কী আবারও একই প্রশ্ন জিজ্ঞেস করবে? আর ফারহানা? ও কী বলবে?

অরণী খুব অবাক হয়। রাগও লাগে ওর। কোথাকার কে, চিনিনা জানিনা; ফেসবুকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট। এটা অরণীর রাগের কারণ। আর অবাক এই ভেবে যে লোকটা আবার একটা কবিতাও লিখে পাঠিয়েছে এবং কবিতার একটা বিশেষ প্যাটার্ন দেখে বোঝা যায় এটা কোথাও থেকে চোতা মারা নয়। রাগ আর বিস্ময়ের প্রাথমিক ধাক্কার পরে অরণীর মজাই লাগে। এইসব আগ-পিছু ভাবতে ভাবতেই কলিং বেলের আওয়াজ। ও চলে এসেছে, ঠোঁটে এক চিলতে হাসি নিয়েই দরজা খুলতে যায় অরণী।

কবিতাটা লিখে পাঠিয়ে দিয়ে বেশ একটা তৃপ্তির ভাব রেহানের চোখেমুখে খেলা করে। নিজেই নিজের প্রতিভায় বিস্মিত। কোন এক বন্ধুর দেয়া লিংক ধরে একটা ভিডিওতে ও দেখে প্রথম অরণীকে। চমৎকার নাচে মেয়েটা। কী যে একটা সরলতা মেয়েটার চোখদুটোয়। আর হাসিটাও কী সুন্দর। কোন এক সময় ও শেষের কবিতা পড়েছিল। বুঝে উঠতে পারেনি তেমন। তা নিয়ে ওর বিন্দুমাত্র খেদ নেই। শুধু লাবণ্যর জায়গায় এখন অরণীকেই দেখতে পাচ্ছে ও। যদিও প্রতি মাসেই এই লাবণ্যর স্থানটা মিউজিক্যাল চেয়ারের মতন বদল হয়।

অরণী রেহানের ফ্রেন্ড রিকোয়েস্টটা ফেলে দেয়নি। কিছুদিনের মধ্যেই বেশ কিছুটা সময় ওরা কাটাতে থাকে একত্রে টুকটাক কথাবার্তা বলে। সম্পর্ক গাঢ় হয়; একইসাথে দু’জনের ব্যস্ততাও বাড়ে। তারপর কোন একদিন রেহান আসে অরণীদের শহরে এক কনফারেন্সে যোগ দিতে। রেহান অপেক্ষা করে কোন একটা কফিশপে অরণীর জন্য। অরণী আসে একটা মেরুন রঙের শাড়ী পরে; চুলগুলো কাঁধের কাছে ছড়িয়ে আছে আর কপালে ছোট্ট একটা টিপ।

দূর থেকেই কী যেন একটা ঝিকমিক করে উঠে; অরণীর অনামিকার আংটিটা।


মন্তব্য

অতিথি লেখক এর ছবি

প্রথম গল্পটা বাস্তব কোন ঘটনা কি না জানার ইচ্ছে রইল। গতবছর আমি যখন আবু-ধাবী এয়ারপোর্টে ওয়েট করছিলাম স্টোকহোম ফ্লাইটের জন্য, তখন এরকম একটা গল্প শুনেছিলাম।

ভাল লাগল।

স্বপ্নদ্রোহ

রেশনুভা এর ছবি

ঘটনার ভেতরের টুকরো ঘটনাগুলো তো অবশ্যই বাস্তব। তবে পুরো একটা ঘটনা একজনের জীবন থেকে নেয়া হয়নি; অনেক জোড়াতালি মারা আছে। পড়েছেন বলে ভালো লাগল।

অতিথি লেখক এর ছবি

ভালোই যদি লাগে ,তা জানাতেও ভালো লাগে... * তিথীডোর

রেশনুভা এর ছবি

আর তা জানতেও ভালো লাগে। ভালো থাকবেন।

প্রবাসিনী এর ছবি

ভাইয়া, আপনি যে লাইনে আসেন তা ছেড়ে দেন দেঁতো হাসি, লিটারেচর পড়েন--কবিতা লিখেন।
________________________________________________

হইয়া আমি দেশান্তরী, দেশ-বিদেশে ভিড়াই তরী রে

________________________________________________

হইয়া আমি দেশান্তরী, দেশ-বিদেশে ভিড়াই তরী রে

রেশনুভা এর ছবি

লাইন ছাইড়া দিছি। অধ্যাপক আমারে ছেড়ে দিলেই হয় এখন। হাসি

অতিথি লেখক এর ছবি

ফারহানা, অরণীরা এমনই হয়রে ভায়া! এমনি হয়!!!!!!!!!!!!
এস হোসাইন

---------------------------------
"মোর মনো মাঝে মায়ের মুখ।"

রেশনুভা এর ছবি
চশমাওয়ালি এর ছবি

মন্দ লাগলো না হাসি

---------------------------------------------
ল্যাসিক করাতে ভয় পাই আর লেন্স ভাল লাগে না।

---------------------------------------------
ল্যাসিক করাতে ভয় পাই আর লেন্স ভাল লাগে না।

রেশনুভা এর ছবি

আপনার ক্যামেরার কী অবস্থা? পড়েছেন দেখে আমারো মন্দ লাগছে না।

মূলত পাঠক এর ছবি

ভায়া, অরণী কিন্তু ছেলেদের নাম, এর অর্থ যজ্ঞের কাষ্ঠ। এই চরিত্র নিয়ে অরণী ও উতঙ্কের কাহিনীও আছে।

রেশনুভা এর ছবি

আমার এক বাল্য বান্ধবীর নাম ছিল অরণী। জীবনে যদি আবার ওর সাথে আমার দেখা হয় এই কথাটা ওরে অবশ্যই জানাবো। আর আমারে জানানোর জন্য অনেক ধন্যবাদ মূলোদা।

হিমু এর ছবি

অরণিও তো আছে, নাকি ... চকমকি পাথর? কারে বলে দুন্দুভি, কারে বলে অরণি ...



হাঁটুপানির জলদস্যু আলো দিয়ে লিখি

জি.এম.তানিম এর ছবি

বলবে কি, তোমরা তো নোটবই পড়নি... দেঁতো হাসি
-----------------------------------------------------------------
কাচের জগে, বালতি-মগে, চায়ের কাপে ছাই,
অন্ধকারে ভূতের কোরাস, “মুন্ডু কেটে খাই” ।

-----------------------------------------------------------------
কাচের জগে, বালতি-মগে, চায়ের কাপে ছাই,
অন্ধকারে ভূতের কোরাস, “মুন্ডু কেটে খাই” ।

অতিথি লেখক এর ছবি

হায়রে অনিক!! হায়রে রেহান!! আজীবন জইলা পুইড়াই মরলি!!
@ প্রবাসিনীঃ আমাদের স্যার বহু গুণে গুনান্নিত!! (গুনান্নিত বানান ভুল করার জন্যে দুঃখিত)

- শূন্য

রেশনুভা এর ছবি

গুণান্বিত। অবস্থা তো দেখি, "যেনে শুনে বিষ করেছি পান এর মতন"। খাইছে

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

গল্প সমাপ্ত হবে কবে? নাকি এই পর্যন্তই?

রেশনুভা এর ছবি

বুঝতেছি না পিপিদা। সমাপ্ত করবো? খারাপ হয় না আবার এদের নিয়েই লিখতে বসলে। কিন্তু এক নায়িকার নাম নিয়া তো সমস্যায় পড়ছি। বাস্তবের নায়িকার নামই দিয়া দিব না কী? খাইছে

পান্থ রহমান রেজা এর ছবি

হায় অরণী, হায়..... নামটা উহ্য থাক! দেঁতো হাসি
..............................................................................................

আমি অতো তাড়াতাড়ি কোথাও যেতে চাই না;
আমার জীবন যা চায় সেখানে হেঁটে হেঁটে পৌঁছুবার সময় আছে,
পৌঁছে অনেকক্ষণ ব'সে অপেক্ষা করার সময় আছে।

রেশনুভা এর ছবি

উহ্য থাকাই ভালো। যে যাঁর মতন করে পূরণ করে নিবে। খাইছে

সুহান রিজওয়ান এর ছবি

হায় প্রেম !!!

-------------------------------------------------------------
মধ্যরাতের কী-বোর্ড চালক

রেশনুভা এর ছবি

কী হল সুহান? হা-হুতাশ কেনু?

ধুসর গোধূলি এর ছবি

- দিলেন, প্রথম গল্পটা দিয়ে আমার একটা বিরাট গল্পের প্লট মেরে দিলেন।! মন খারাপ

দ্বিতীয় গল্পটা নিয়ে আর কী কমু! যারে মনপ্রাণ দিয়া পছন্দ করছিলাম তারে বিয়া কইরা নেনের বাচ্চা আমেরিকা গিয়া বসবাস শুরু করছে। অখন ছিনেমায় তার আর সেইরম উধাকধাক করা নাচ দেহি না, তারে দেইখাও মনের মধ্যে কুচকুচহোতাহ্যায় ভাব চাগাইতে পারি না। মন খারাপ
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক

রেশনুভা এর ছবি

আরে ছি ধুগো ভাই। আমারটাতো গল্প না...অতি ক্ষুদ্র অংশবিশেষ। আপনি লিখেন; আর অনেকদিন ধরে আপনার গল্পও পাচ্ছি না। তাড়াতাড়ি লিখেন।
আর সে তো এখন কবরে এক পা দিয়া দিছে। তাঁর মেয়ে আছে না কী? ... খাইছে

জি.এম.তানিম এর ছবি

ভাবছি... কাউকে মনে হয় দোষ দেওয়া যায় না...
-----------------------------------------------------------------
কাচের জগে, বালতি-মগে, চায়ের কাপে ছাই,
অন্ধকারে ভূতের কোরাস, “মুন্ডু কেটে খাই” ।

-----------------------------------------------------------------
কাচের জগে, বালতি-মগে, চায়ের কাপে ছাই,
অন্ধকারে ভূতের কোরাস, “মুন্ডু কেটে খাই” ।

রেশনুভা এর ছবি

নাহ। আমিও কাউরে দোষ দেই না। ভালু ছেলে। হাসি

অতিথি লেখক এর ছবি

গল্পটা অণু হইলেও ভালো লাগাটা অণু পরিমান না এইডা গ্যারান্টেড।

মহসীন রেজা

রেশনুভা এর ছবি

তাইলে কী পরমাণু? ডুবাই দিলেন তো ভাই ... খাইছে

নিবিড় এর ছবি

দুইটাই ভাল লাগছে তবে প্রথমটা একটু বেশী হাসি


মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড় ।

রেশনুভা এর ছবি

ইয়েয়েয়েয়ে ... দেঁতো হাসি
ধন্যবাদ ভাই।

নিবিড় এর ছবি

হঠাৎ ইয়েয়েয়েয়ে... কেন? রহস্য কি চিন্তিত


মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড় ।

রেশনুভা এর ছবি

হাহাহা ... রহস্য নাই বস। খুশির বহিঃপ্রকাশ। দেঁতো হাসি

অম্লান অভি এর ছবি

হায়াহীনাদের নিয়ে এমন- 'অসমাপ্ত খুচরা গল্পগুচ্ছ'। খুচরা কই, দুটাতো গোটাই কাহিনী পেলাম? ফারহানা আর অরণী ডাকে অথবা মোহে এমন করে না গিয়ে অনিক আর রেহান উঠে আসতো না আজকে গল্পে, তাই না? সেই ম্রিয় বাস্তবতাকে সহ্যের মধ্যে রেখে ইতি টানা জন্য ধন্যবাদ। ভালো লাগল আগামীর প্রত্যাশায় ব্যর্থতা নয় সার্থকতার।

মরণ রে তুহু মম শ্যাম সমান.....

দময়ন্তী এর ছবি

আমাদের দেশগুলোতে আসলে ছোটবেলা থেকে ছেলেমেয়েরা তেমন সহজভাবে মেলামেশা করে না বলে অনিক, রেহান 'বন্ধুত্ব' জিনিসটাই বোঝে না৷ মেয়েদের সাথে আলাপ হলেই ভাবে "বিবাহের নিমিত্ত'৷ কি আর করা!
-----------------------------------------------------
"চিলেকোঠার দরজা ভাঙা, পাল্লা উধাও
রোদ ঢুকেছে চোরের মত, গঞ্জনা দাও'

-----------------------------------------------------
"চিলেকোঠার দরজা ভাঙা, পাল্লা উধাও
রোদ ঢুকেছে চোরের মত, গঞ্জনা দাও'

রেশনুভা এর ছবি

আরে দময়ন্তীদি, আমার গল্পের নায়কেরা অনেক ইসস্মার্ট; আমার মতন। ওরা তো একটু মাখামাখি প্রেম করতে চায়; বিবাহ না। দেঁতো হাসি

আর আমি তো অমন মেয়েই খুঁজছি...

আমি মিলব তাঁর সাথে
কিন্তু বিবাহ হবে না
বিবাহ হবে না।

অতিথি লেখক এর ছবি

কেন খালি পুলাপানেরই দোষ? অনিক,রেহান বন্ধুত্ব বোঝে না...আর
অরনী যে বন্ধুত্বকে পুঁজি করে জেনেশুনে পরকিয়া করে চলছে সেটা চোখে পড়ে না?
/
ভণ্ড_মানব

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।