আমার এক বন্ধুর কথা বলি। বন্ধুটা আমার বেজায় বকতে পারে। আড্ডাতে ঐ মনে হয় আমাদের সবার চেয়ে বেশি কথা বলে। ও কথা বলেও খুব মজা করে। কিন্তু মাঝেমাঝে এত কথা বলাটাই কাল হয়ে দাঁড়ায় ওর জন্য। এইতো সেদিন সবাই মিলে সমানে চাপা পিটাচ্ছিলাম। কথায় কথায় আমলাতান্ত্রিক জটিলতার প্রসঙ্গ চলে আসল। সবাই মোটামুটি একমত এদেশে সচিবরা বা কাছাকাছি পর্যায়ের কর্মকর্তারাই সবচেয়ে বেশি সুবিধাবাদী। যখন যে সরকারই ক্ষমতায় আসুক না কেন, একটু ভাঁজ দিয়ে চলতে পারলে এদেরকে আটকানোর ক্ষমতা কারোরই নেই। আর অবসরের পরে তো রাজনীতির হাতছানি আছেই। এখানে বলে রাখা ভালো, আড্ডায় উপস্থিত আমাদেরই এক বন্ধুর বাবা বেশ উঁচু পদের সরকারী চাকুরে এবং আমাদের এই মতের সাথে তাঁরও কোন আপত্তি নেই। চিল্লাপাল্লার এক পর্যায়ে আমার ঐ বাচাল বন্ধুটা এমন বেফাঁস একটা কিছু বলে ফেলল যা একেবারে তীরের মতন বিঁধলো যেয়ে ঐ বন্ধুটার গায়ে। এরপর এর আড্ডা তেমন জমলো না। ঐ বেয়াক্কেল বাচাল অবশ্য পরে অনেক দুঃখ প্রকাশ করেছে কিন্তু তাতে তাঁর পাপমোচন কিন্তু হয়নি সাথে সাথে। পরে ওকে আমিই বলেছিলাম, “এত বড় দামড়া হওয়ার পরও তোর মাথার বুদ্ধি হইল না”। তাঁর সহজ স্বীকারোক্তি ছিল “আমি তো এতকিছু ভাইবা বলি নাই দোস; কথা বলার চোটে বের হয়ে গেছে”।
এরকম ওর জীবনে আরো ঘটনা আছে। ও নিজেও জানে এই দোষে সে অনেক আগে থেকেই দুষ্ট। তাঁর প্রাক্তন প্রেমিকা তাঁকে ছেড়ে গিয়েছিল তাঁর এই বিখ্যাত মাত্রাতিরিক্ত বেফাঁস কথা বলার কারণেই। ওর প্রেমিকার বাবা পুলিশে চাকরী করতেন। আর এটাওতো ঠিক পুলিশের মধ্যে সবাইতো আর ঘুষখোর নয়। সেদিন ওর প্রেমিকা ওকে বলছিল “বাবা এবার আমাকে দারুণ দামী একটা ড্রেস কিনে দিয়েছেন”। শুনে ঐ ক্যাবলা বত্রিশটা দাত বের করে বলে কী না “নিশ্চয়ই তোমার আব্বা নতুন হলুদ খাম পাইছে”। এটাই প্রথম এবং শেষ ছিল না। ফলাফল? অবশ্যম্ভাবী বিচ্ছেদ।
কিছুদিন যেতে না যেতেই দেখলাম, বাকপটু হওয়ার কারণেই হোক অথবা হোক ওর মজার মজার কথার জন্যই আবার বান্ধবী জুটিয়ে নিল অনেকগুলো। সারাটা সময়ই ও খুব ব্যস্ত। আজ এর জন্মদিন তো কাল আবার ওর সাথে বইয়ের দোকানে যেয়ে পুরোনো রেফারেন্স বই খোঁজাখুঁজি। রাত আরেকটু গভীর হলে আমাদের মেসের এক চিলতে বারান্দায় তাঁর হেড়ে গলার কথাবার্তা আর হোহো হাসি। মাঝেমাঝে অবশ্য আমি বেরসিকের মতন গিয়ে উদয় হই। বেচারা লাজুক হাসি দেয় আমাকে। চোখ টিপে মনে করিয়ে দেই এবার যেন কোন ‘মিসফায়ার’ করে না বসে।
আজকে মেসে ফিরতেই দেখলাম আবার তাঁর মুখ ভার। কিছুক্ষণ পরে নিজে থেকেই বলল, “দোস আবার গ্যাঞ্জাম লাগাই দিছি”। ওর এই এক কথা আর শুনতে ইচ্ছা হয় না। এতকিছুর পরও মদনটার শিক্ষা হয় না। প্রথমে এক চোট ঝাড়ি নিলাম। তারপর আবার আমারই মনটা একটু খারাপ হল। শত হলেও বেচারাকে কাছ থেকে দেখছি। ছেলেটা একেবারেই খারাপ নয়। খারাপটা যেটা, সেটা হল কথা বলতে বলতে দিগ্বিদিক জ্ঞানশূন্য হয়ে আবোল-তাবোল বকা।
আমি আর কিছুই জিজ্ঞেস করিনি আজ। সারাটা রাত দেখলাম বেচারা গুম মেরে পড়ে রইল তাঁর নিষ্প্রাণ, অনুজ্জ্বল মনিটরটার সামনে। বারবার মুঠোফোনটা বের করে বোতামগুলো চাপার আগেই আবার রেখে দিতে দেখলাম। আমার আজকের ঘুমটা অবশ্য একেবারেই নিরুপদ্রব হল। শেষরাতের দিকে উঠে দেখি বেচারা ঘুমিয়ে পড়েছে; ফোনটা তখনও হাতের মুঠোতেই।
বন্ধু তুমি, একটু সাবধানে, কম কথা বোলো।
মন্তব্য
বেশি কথা বলতে বলতে বেফাঁস কথা বলে ফেঁসে যাবার ঘটনা প্রায়ই ঘটে আমার...
----------------------------------------------
আমার যত অগোছালো চিন্তাগুলি,
রয়ে যাবে এইখানে অযতনে ।।
আমারও
আমারও... টাইটেল দেখে ভাবসিলাম রেশনুভাই এইটা আমারে নিয়ে লিখসে...
-----------------------------------------------------------------
কাচের জগে, বালতি-মগে, চায়ের কাপে ছাই,
অন্ধকারে ভূতের কোরাস, “মুন্ডু কেটে খাই” ।
-----------------------------------------------------------------
কাচের জগে, বালতি-মগে, চায়ের কাপে ছাই,
অন্ধকারে ভূতের কোরাস, “মুন্ডু কেটে খাই” ।
তাই না কী? আসেন কোলাকুলি করি।
----------------------------------------------
আমার যত অগোছালো চিন্তাগুলি,
রয়ে যাবে এইখানে অযতনে ।।
মানুষের মুখের কথাও এক প্রকার অস্ত্র বিশেষ.......... বুঝে শুনে কথা কইতে না পারলে কপালে দুঃখ থাকে।
এত এত দুঃখু কেনু?
----------------------------------------------
আমার যত অগোছালো চিন্তাগুলি,
রয়ে যাবে এইখানে অযতনে ।।
বোবার শত্রু নেই.... *তিথীডোর
বোবা হয়ে যে থাকতে পারি না।
----------------------------------------------
আমার যত অগোছালো চিন্তাগুলি,
রয়ে যাবে এইখানে অযতনে ।।
*তিথীডোর, কথাটা ঠিক না ভাই। কথা না বল্লেও তুমি ঘাড়টা এদিকে না ওদিকে নাড়িয়েছো কিংবা ঘাড়টা কোনদিকে বেশি কাত ছিল, তোমার মুখভঙ্গী এরকম বা সেরকম ছিল টাইপ অভিযোগ কিন্তু অহরহ শুনতে হয়।
তোমার বন্ধুর যা হয়েছে হয়েছে, তোমার কিছু হয় নাই শুনে শান্তি পেলাম মনে .........।।
**************************************************
পদে পদে ভুলভ্রান্তি অথচ জীবন তারচেয়ে বড় ঢের ঢের বড়
*******************************************
পদে পদে ভুলভ্রান্তি অথচ জীবন তারচেয়ে বড় ঢের ঢের বড়
তানবীরা'পু--তা ঠিক, আমি তো শুধু প্রবাদটাই বলেছি, বাস্তবজীবনে ননষ্টপ বকতে গিয়ে অহরহ ধরা খাই...হিঃহিঃ,ভালো থেকো! *তিথীডোর
ধরা খাওয়ার কথা শুন্তে মঞ্চায়।
----------------------------------------------
আমার যত অগোছালো চিন্তাগুলি,
রয়ে যাবে এইখানে অযতনে ।।
আহারে বেচারা !!
তবে এই লাইন চরম:
"নিশ্চয়ই তোমার আব্বা নতুন হলুদ খাম পাইছে”
---------------------------------------------------------
জানতে হলে পথেই এসো, গৃহী হয়ে কে কবে কি পেয়েছে বলো....
-----------------------------------------------------------------------------------------------------
" ছেলেবেলা থেকেই আমি নিজেকে শুধু নষ্ট হতে দিয়েছি, ভেসে যেতে দিয়েছি, উড়িয়ে-পুড়িয়ে দিতে চেয়েছি নিজেকে। দ্বিধা আর শঙ্কা, এই নিয়েই আমি এক বিতিকিচ্ছিরি
----------------------------------------------
আমার যত অগোছালো চিন্তাগুলি,
রয়ে যাবে এইখানে অযতনে ।।
এইসব আমি ডরাইনা
এমনকি টেলার পর ধাক্কা খাইয়াও না
আর কিছু আছে?
এতো কম কথা কইয়া আপনি অনেক কিছু পাইছেন বুঝি?
আর কম কথা কওয়ায় একটাও না ছুইট্টা সব কটাই এখনো present perfect continuous tense মনে লয়?
একদমই মনে লয়না বস। প্রাপ্তির খাতায় কইষ্যা মাইনাস ...
----------------------------------------------
আমার যত অগোছালো চিন্তাগুলি,
রয়ে যাবে এইখানে অযতনে ।।
হায় হায়, কথা যে আমিও বেশি কই
=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদ্বপি গরীয়সী
=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী
আমিও। কী হুবে সাইব্বাই?
----------------------------------------------
আমার যত অগোছালো চিন্তাগুলি,
রয়ে যাবে এইখানে অযতনে ।।
জিহবা ভেজা থাকলে একটু আধটু স্লিপ তো কাটবেই...
স্পার্টাকাস
এরকম পটর পটর করে এমন বন্ধু মনে হয় সব ফ্রেন্ড-সার্কেলেই একটা দুইটা থাকে। এদের নিয়ে ব্যাপার দুরকম ঘটে। এদের ছাড়া আড্ডাও ঠিক মতো জমে না...পচানোর মানুষ পাওয়া যায় না। আবার এগুলার বোক**** কারনে অনেক সময় পুরা গ্রুপ ধইরা ধরা খাইতে হয়।
আমারো কথা বলার চোটে কত বেফাঁস কথা বের হয়ে গেছে, আর তার জন্য কত কথা শুনতে হয়েছে!
..................................................................
আমি অতো তাড়াতাড়ি কোথাও যেতে চাই না;
আমার জীবন যা চায় সেখানে হেঁটে হেঁটে পৌঁছুবার সময় আছে,
পৌঁছে অনেকক্ষণ ব'সে অপেক্ষা করার সময় আছে।
এজন্যই আপনি এখন শুধু হা-হুতাশ করেন, বুঝছি।
এক কাম করেন। মুখে ছিপ্পি লাগান আর শুধু শুধু মিষ্টি মিষ্টি হাসি দেন।
----------------------------------------------
আমার যত অগোছালো চিন্তাগুলি,
রয়ে যাবে এইখানে অযতনে ।।
দুঃখিত ! লিখাটি ভাল লাগেনি।
ভালো যে লাগবেই এ প্রত্যাশা কখনই ছিল না। পড়েছেন দেখে আমার ভালো লাগলো।
----------------------------------------------
আমার যত অগোছালো চিন্তাগুলি,
রয়ে যাবে এইখানে অযতনে ।।
নতুন মন্তব্য করুন