১
খুলনাতে বাবার চাকরির সুবাদে চলে আসি ৮৮ সালের শুরুর দিকে। আমাদের প্রথম বাসাটা বেশ খোলামেলা ছিল। দু’রুমের বাসা হলেও বাসার সামনে ছিল অনেকটা খোলা জায়গা। আমার মা অনেকরকম গাছ লাগাতেন। অনেকগুলো মরিচ গাছ ছিল আমাদের। একটা গাছের মরিচে ঝাল কম হত। আমি প্রায়ই খাওয়ার আগে ঐ গাছের মরিচ তুলে নিয়ে আসতাম। আরও ছিল একটা হাসনাহেনা গাছ; আগে থেকেই ছিল।
আমার মা গান গাইতেন অল্পস্বল্প। চাঁদনী রাতে আমরা মাদুর পেতে বসতাম বারান্দায়। মা গাইতেন-
“চাঁদের হাসির বাঁধ ভেঙ্গেছে, উছলে পড়ে আলো
ও রজনীগন্ধা তোমার, গন্ধসুধা ঢালো”
বারান্দার পরই উঠানের সেই হাসনাহেনা অকৃপণভাবেই ‘গন্ধসুধা’ ঢালার কাজটা করে যেত। মাঝেমাঝে রাতে আমি ঐ গাছটার কাছে যেতে চাইতাম। মা বলতেন, হাসনাহেনার গন্ধে না কী সাপ চলে আসে। গাছের নিচে কুণ্ডলী পাকিয়ে থাকে।
আজ ফুটপাতের পাশেই দেখি খুব অবহেলায় বেড়ে উঠেছে এক হাসনাহেনা গাছ। তারই ঘ্রাণে ফিরে গেলাম প্রায় ২০/২২ বছর আগে। প্রাণ ভরে নিঃশ্বাস নিলাম যেন বাকীটা সময় ঐ সুবাসটাই সমস্ত মস্তিষ্ক জুড়ে থাকে। সুবাসটা এখনও পাচ্ছি আমি আর পাচ্ছি বলেই লিখতে পারছি। গাছের নিচে তাকিয়েছিলাম। সেখানে কোন সাপ ছিল না।
২
আমার মনে একটা সাপ আছে। সে আমাকে কিছুদিন পরপর দংশন করে আর আমি স্মৃতি কাতরতায় ভুগি।
ছোটবেলায় স্কুল থেকে ফেরার পথটা হেঁটে আসতাম। তিন/চার টাকা রিকশা ভাড়া বাঁচানোর জন্য। যেন পরে টিফিনের সময় এটা-সেটা কিনে খাওয়া যায়। আমড়া মাখা অথবা এক টাকার ললি আইসক্রীম। টাকা বেশি জমে গেলে পাঁচ টাকা দিয়ে মাঝেমাঝে ফুলপ্লেট চটপটিও খেয়ে ফেলতাম। বাসা থেকে নিয়ে যাওয়া ডিম কাককে খাওয়াতাম। স্কুলের কোন এক ম্যাডাম একথা আব্বুকে জানিয়ে দেওয়ায় মারও খেয়েছিলাম বোধহয়।
এখনও হাঁটি; না টাকা বাঁচানোর জন্য নয়। কোথায় যাবো সেই গন্তব্য এখন আর জানি না বলে। হাঁটতেই থাকি। মাঝেমাঝে শুনতে থাকি ঐ গানটা-
“তুমি চেয়ে আছো তাই, আমি পথে হেঁটে যাই
হেঁটে হেঁটে বহুদূর বহুদূর যেতে চাই”
ভাবতে খুব ভালো লাগে কেউ একজন পথ চেয়ে বসে আছে।
৩
কিন্তু ঐ পথে যাওয়ার যোগ্যতা আমি হারিয়ে ফেলেছি যে।
এই শহরের অনেক জায়গায় আগে বিচরণ ছিল বন্ধুদের সাথে। সেইসব বন্ধুদেরকে এখন হারিয়ে ফেলে ঐ পথগুলোর ছায়াও আজ আর মাড়ানো হয় না। এসএসসি পরীক্ষার পরে ছুটিতে এক বন্ধুর বাসার ছাদে আড্ডা দিতাম প্রতিদিন। ঐ গলিটার সামনে দিয়ে আজ যাই না অনেকদিন। বন্ধুটা কোথায় সে খবর ও নেই আমার কাছে।
ঐ সময়টায় প্রতিদিন চাঁদা তুলে ঘণ্টায় রিকশা ভাড়া করে ঘুরতাম। ভাড়া ছিল ১২/১৫ টাকা। এই কথা মনে হল আজ বিকেলে হঠাৎ এক রিকশাচালককে ঘণ্টার ভাড়া জিজ্ঞেস করাতে। এখন ভাড়া ৪০/৪৫ টাকা। নাহ, ঘুরিনি আজ। আমরা সেই তিনজন একত্রে নেই বলে আর যাদেরকে দেখতে যেতাম তাদের ঠিকানাও আজ জানি না বলে।
শেষ ঠিকানাটা কিন্তু আমরা সবাই জানি।
মন্তব্য
আহা ৮৮র খুলনা!
আহা ৮৮'র খুলনা শিপইয়ার্ড!
দারুণ লাগলো রেজওয়ান ভাই!
_______________________________
তবু ধুলোর সাথে মিশে যাওয়া মানা
- হুরো মিয়া!
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
রয়েলের মোড়,খালিশপুর,
নিরালার অলিগলি ,নিউমার্কেটের ফুচকা ,ডাকবাংলো ,
সোনাডাঙ্গা ---
ক'দিনের দেখা শান্ত নিরিবিলি শহর খুলনা...
বরাবরের মত নস্টালজিক লেখা ,
সুন্দর!
--------------------------------------------------
"সোনার স্বপ্নের সাধ পৃথিবীতে কবে আর ঝরে..."
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
সাপের উল্লেখে প্রথমে ভয় পাইছিলাম । তার পর সাবধানে দুই লাইন পড়ে দেখি ভাল ভাল কথা ।
অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...
অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...
ভাল লেগেছে।
খুলনার অলিগলির ওপর একটা ছবি পোস্টের দাবী জানিয়ে গেলাম।
পারলে কিছু ছবি দেননা - জেলা স্কুল, ফাতেমা স্কুল, পুলিশ লাইন, মুন্সীপাড়া, সার্কিট হাউজ, নদী ঘাট, কয়লা ঘাট ইত্যাদি - কেমন আছে সে শহর?
ছাত্রদের সাথে দেখা করার ইচ্ছা আছে? একদিন ডাক দ্যান
------------------------------------------
জননীর নাভিমূল ছিঁড়ে উলঙ্গ শিশুর মত
বেরিয়ে এসেছ পথে, স্বাধীনতা, তুমি দীর্ঘজীবি হও।
জননীর নাভিমূল ছিঁড়ে উলঙ্গ শিশুর মত
বেরিয়ে এসেছ পথে, স্বাধীনতা, তুমি দীর্ঘজীবি হও।
খুলনার এত্তো মানুষ কই থাইক্যা আইলো? সবাই দেখি কয় খুলনা, খুলনা......
লেখা ভালো লেগেছে।
আমি অবশ্য এখনও নিজের শহরে আছি, কিন্তু পাল্টে গেছে সবকিছু। আগে যেখানে খেলতাম, আড্ডা দিতাম, এখন আর সেসব যায়গা নেই। নতুন যারা বসতি গেড়েছে, তাদেরকেও আরি চিনি না। তাই কাজ শেষে ঘরেই বসে থাকি।
মন খারাপ করা লেখা.........
একটা সুন্দর লেখা.........
---------------------------------------------------
জানতে হলে পথেই এসো, গৃহী হয়ে কে কবে কি পেয়েছে বলো....
-----------------------------------------------------------------------------------------------------
" ছেলেবেলা থেকেই আমি নিজেকে শুধু নষ্ট হতে দিয়েছি, ভেসে যেতে দিয়েছি, উড়িয়ে-পুড়িয়ে দিতে চেয়েছি নিজেকে। দ্বিধা আর শঙ্কা, এই নিয়েই আমি এক বিতিকিচ্ছিরি
হুম... ঢাকায় আসবেন কবে?
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
তুমি পোষ্ট লেখার সময় পাচ্ছো মানে তুমি ছুটিতেই আছো।
লেখাটা ভালো লেগেছে।
*******************************************
পদে পদে ভুলভ্রান্তি অথচ জীবন তারচেয়ে বড় ঢের ঢের বড়
*******************************************
পদে পদে ভুলভ্রান্তি অথচ জীবন তারচেয়ে বড় ঢের ঢের বড়
লেখা চমৎকার হইছে।
কিন্তু বাঘের ছবি দেখার অপেক্ষায় ছিলাম
সত্যি, খুবই সুন্দর লাগলো আপনার লেখাটা | আর কিছুই বলবনা আর এ প্রসঙ্গে |
শুধু বলব, কিছু ছবি upload করেন না রে ভাই, একটু দেখি আপনার খুলনারে |
গতকাল দু'বেলায় বেশ কিছু ছবি তুলেছি। আজ বা আগামীকাল আবার বের হব। আমার ছবি তোলার হাত খুবই খারাপ। তাও চেষ্টা থাকবে কিছু দেয়ার।
মন্তব্য এবং পড়ার জন্য সবাইকে ধন্যবাদ।
----------------------------------------------
আমার যত অগোছালো চিন্তাগুলি,
রয়ে যাবে এইখানে অযতনে ।।
নতুন মন্তব্য করুন