সত্য মিথ্যার মিশেলে ২৫ ডিসেম্বর ২০০৯

রেশনুভা এর ছবি
লিখেছেন রেশনুভা (তারিখ: রবি, ২৭/১২/২০০৯ - ৬:৫০পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

কিছু দুষ্ট বালিকা দের প্ররোচনায়, মউ মাছির চাকের মত মানুষের ভিড়ে মিশে হাঁটতে লাগলাম। চারুকলা ছাড়িয়ে উদয়ন; আবার উল্টো পথে টিএসসি। তবুও পাইনি দেখা বনলতা সেনের। অবশেষে চূড়ান্ত হয়রানির শিকার হয়ে এক চটপটি ফুসকার দোকানে বসে বললাম, সেই সুদূর সুন্দরবনের রয়েল বেঙ্গল টাইগারের কথা। তখনও ভাবিনি, হয়ে যাবে দেখা সবুজ বাঘের সাথে; ডোরা কাটা নয় সে বাঘ।

গোধূলি লগ্ন ছাড়িয়ে তখন ঘোর অন্ধকার চারপাশে। ঘোর ভাঙ্গল তখনই। আজ যে সচলাড্ডা। তড়িঘড়ি করে উঠে পড়লাম এক সিএনজিতে। বেশ খানিকটা ঘুরে পেলাম মুস্তাফিজ ভাইয়ের বাসাটা। ছাদে পৌঁছতে না পৌঁছতেই শুনতে পেলাম সঙ্গীতের সাথে সাথে নূপুরের আওয়াজ। স্বপ্নাহত মনটা তখনই আবার দেখা শুরু করল; সেই পুরোনো বোকা স্বপ্ন।

ছোট্ট গোল হয়ে থাকা একটা দলের কাছে এসে দাঁড়াতেই, দুটো পুঁচকে ছেলেমেয়ে কাছে এসে সালাম দিল। ছেলেটাকে চিনতে পারলেও মনে উত্তল বা অবতল যে দর্পণই থাকুক না কেন, তাতে মেয়েটার কোন ছবি পেলাম না। ওরা না কী লীলেন’দার মত হঠাৎ করেই বিয়ে করে ফেলেছে। আমি তো শুনে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে গেলাম। তাতে অবশ্য আশীর্বাদের কমতি হল না।

শুরু হল এরপরে হঠাৎ করেই চ্যাম্পিয়ন্স লীগের গল্প। আমি শিক্ষানবীশের মতোই শুনে গেলাম ওদের কথা আর কল্পনায় দেখতে লাগলাম আমার মেসি হয়ে ওঠার দারুণ কাল্পনিক সব ভিডিও ফুটেজ। মনের নির্জনতায় ঐ সব দৃশ্যগুলো শুধু স্বাক্ষর নয় রীতিমত দাগ কেটে ফেলল। সেই দগদগে দাগগুলোর ছবি তুলে নিয়ে নিজেদের মধ্যেই ওরা ঝগড়া শুরু করে দিল কারটা বেশি ভালো তাই নিয়ে; অনুপম ত্রিবেদী আর রোয়েনা।

বাস্তবে ফিরে এলাম নজরুল ইসলাম নামটা শুনে। আমি এই নামের এক ভণ্ড মানবকে চিনি। কিন্তু গল্প হচ্ছিল তখন আমাদের জাতীয় কবিকে নিয়ে। আসরটা ভেঙ্গে গেল তখনই, যখন সবাই শুনতে পেলাম হাঁস এই এলো বলে। পাতিহাঁস নয়, রীতিমত বুনোহাঁস। আগে তো দর্শনদারী, তারপরে গুণবিচারী। দেখতে শুরু করলাম সবাই সেই বুনোহাঁস কে।

সবচেয়ে বেশি করে দেখলেন সিলেট থেকে আগত এক ব্যর্থ ঘটক। নাহ কোন হাঁস নয়; তিনি দেখছিলেন বিবাহ ইচ্ছুক পাত্রদের জন্ম বৃত্তান্ত ছাদের ঐ কোণাটায় বসে। সেখানেই হঠাৎ উদয় হলেন ঐ যে হিন্দী ছবিটা, “শাহেনশাহ” এর নায়কের মত দেখতে এক বলিষ্ঠ যুবক। ঐ যুবকের ছায়ায় বিলীন হয়ে গেলেন ঘটক অপু ভাই।

“কী লেখস এইগুলা, ফাজিল পোলা। চান্দা কিন্তু ডাবল নিমু”। পান্থ’দার এই ঝাড়ি শুনেই বন্ধ করে দিলাম আমার এই হালকা মিথ্যার উপর ঝাপসা সত্য মিশানো গল্প।

কিন্তু এখনই বাজবে না ছুটির ঘন্টা। শুনে নিন তবে ছোটখাটো কিছু ঘটনা এবারের বর্ষশেষ সচল আড্ডার। মিথ্যাও হতে পারে কিন্তু … … চোখ টিপি

ঘটনা ১: আমার হাত ধরে তুমি নিয়ে চল সখা, আমি যে সচলায়তন চিনি না

ভণ্ড মানবের পরিচয় পর্ব চলছে। নাম ঠিকানা বলার পরই সে এক বিশাল বিপত্তি বাঁধিয়ে দিল। সে না কী কোথাকার কোন রেশনুভা এর হাত ধরে সচলে এসেছে। সেই রেশনুভা আবার জলজ্যান্ত পু্রুষ মানুষ। সাক্ষী দিবেন আড্ডায় উপস্থিত সবাই। কোন জামানায় আইসা পড়লাম রে ভাই, বলেন এইবার।

অবশ্য তাৎক্ষণিকভাবেই এই মিথ্যাচার এর প্রতিবাদ জানিয়েছেন রেশনুভা। উনারা কখনই একে অন্যের হাত ধরেননি শুধুমাত্র হাত মিলানোর সময় ছাড়া ... খাইছে

ঘটনা ২: বালক, তা সে হতেই পারে না

এক হাচল-বালিকার সাথে ফোনে কথা বলছিলাম আড্ডার সময়ে। আড্ডার স্থান বালিকার বাসা থেকে সাত সমুদ্র তের নদীর ওপারে হওয়ায় (বালিকা ঢাকাতেই থাকেন) তিনি আসতে পারেননি। আসতে না পারার জন্য তাঁর মনও বেজায় খারাপ। ফোন দিয়েই উনি কথা বলছিলেন অনেকের সাথেই।
- আমি বললাম, “আজ তো বালকও এসেছেন।”
- “হতেই পারে না। ও তো মৌলভীবাজার।” বালিকার কণ্ঠে অবিশ্বাস।
- “সত্যি কথা।” এই বলে ফোন তুলে দিলাম বালকের কাছে।

এরপরে বালক জানান দিলেন তাঁর পুরুষালী স্বরের অস্তিত্ব। জানি না, শেষ পর্যন্ত বালিকা বিশ্বাস করেছিলেন কী না যে সে আসলেই “বালক”।

আজ শুধু এটুকুই বলি, আমরা সবাই ই বালক ... হাসি

ঘটনা ৩: অ্যাই, ব্যাগটা নিয়ে আয় না

গল্প-গুজব, আড্ডা চলছে। কিছু বসে, বাকীরা দাঁড়িয়ে। হঠাৎই জনৈক হাচল অনুভব করলেন তার ডান বাহু ধরে কে যেন ঝাঁকাচ্ছে। সেই হাচল তেমন পাত্তা দিলেন না। ভাবলেন, হবে হয়ত তার কোন বেআদব ছাত্রের কাজ। পোলাপান গুলান আদব-লেহাজ কিচ্ছু শিখে নাই। কিন্তু পরক্ষণেই তার ভুল ভাঙ্গল।
- “অ্যাই, ব্যাগটা নিয়ে আয় না।”

এই কণ্ঠ কোনভাবেই সেই হাচলের কোন ছাত্রের হতেই পারে না। তবে এত মানুষের ভিড়ে কী কোন পরী ভর করল তার উপর। এইসব ভাবতে ভাবতেই আবার টান ডান বাহুতে। নিজের উৎকণ্ঠা আর উত্তেজনা দুটোই চেপে রেখে হাচল তাকালেন তার ডানদিকে। নিউটনের তৃতীয় সূত্র আরো একবার সত্য প্রমাণিত হল। হাচল হলেন আনন্দিত আর সেই মানবী (দেখতে যদিও উনি পরীর মতোই) ছিটকে গেলেন দু’ফুট দূরে। তবে?

ভুল মানুষের হাত ঝাঁকি খেয়েছিল। ভুলগুলোও মাঝে মাঝে ভালই লাগে ... দেঁতো হাসি

শেষের কথাঃ

অদ্ভুত ভালোলাগার কিছুটা সময় কেটেছিল সেদিন। যারা আসতে পারেননি, তাঁদের উপস্থিতির অভাব বোধ করেছি পুরোটা সময় আর যারা এসেছেন তাঁদের সাথে আবারও সময় কাটাতে চাই।

নিশ্চয়ই কোনদিন দেখা হবে আবার।


মন্তব্য

তিথীডোর এর ছবি

পড়ি আর হিংসাই...
আপসুস!

--------------------------------------------------
"সোনার স্বপ্নের সাধ পৃথিবীতে কবে আর ঝরে..."

________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"

রেশনুভা এর ছবি
তিথীডোর এর ছবি

জ্বলে পুড়ে ছারখার...

--------------------------------------------------
"সোনার স্বপ্নের সাধ পৃথিবীতে কবে আর ঝরে..."

________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"

তিথীডোর এর ছবি

জ্বলে পুড়ে ছারখার...

--------------------------------------------------
"সোনার স্বপ্নের সাধ পৃথিবীতে কবে আর ঝরে..."

________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"

ধুসর গোধূলি এর ছবি

হাচল হলেন আনন্দিত আর সেই মানবী (দেখতে যদিও উনি পরীর মতোই)
বড় হয়ে আমি বিশাল এক হাচল হবো। মন খারাপ
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক

রেশনুভা এর ছবি

ছোটখাটো হইলেও চলব!!!

পান্থ রহমান রেজা এর ছবি

দেঁতো হাসি
.................................................................................

আমি অতো তাড়াতাড়ি কোথাও যেতে চাই না;
আমার জীবন যা চায় সেখানে হেঁটে হেঁটে পৌঁছুবার সময় আছে,
পৌঁছে অনেকক্ষণ ব'সে অপেক্ষা করার সময় আছে।

নাশতারান এর ছবি

আসরটা ভেঙ্গে গেল তখনই, যখন সবাই শুনতে পেলাম হাঁস এই এলো বলে।

বুঝলাম না !!
আপনি আসার কমপক্ষে আড়াই ঘন্টা আগে থেকে আমি আড্ডায় উপস্থিত ছিলাম।

_____________________

আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।

রেশনুভা এর ছবি

হমম ... মিথ্যার মিশেল বেশি ছিল।

বালক এর ছবি

- “অ্যাই, ব্যাগটা নিয়ে আয় না।”

আমি কিন্তু তখন পাশে ছিলাম। দেঁতো হাসি

*************************************************************************
"আমার কোনো নীল শার্ট নেই, ছিলো না কখনো__নীলিমা দেখেছি শুধু একাই__ নীল শার্ট নেই বলে কেউ আমাকে নাবিক বলেনি__ অথচ সমুদ্রেই ছিলাম আমি।"

____________________________________________________________________
"জীবনের বিবিধ অত্যাশ্চর্য সফলতার উত্তেজনা
অন্য সবাই বহন করে করুক;
আমি প্রয়োজন বোধ করি না :
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ হয়তো
এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।"

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

ছবি ছাড়া এই পোস্টরে দিক্কার...
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

উজানগাঁ এর ছবি

সহমত

মুস্তাফিজ এর ছবি

ছবি ছাড়া এই পোস্টরে দিক্কার..

আমিও দিলাম

দিক্কার..

...........................
Every Picture Tells a Story

স্পার্টাকাস এর ছবি

রেশ্নুভাই, আপ্নের এই নারীলিপ্সু স্বভাবটাকে সত্য ধরব নাকি মিথ্যা ধরব??
ভন্ড আর আপ্নের সম্পর্ক নিয়ে কিছু্ বললাম না, বাঁধ ভেঙ্গে যেতে পারে খাইছে

---------------------------------------
জননীর নাভিমূল ছিঁড়ে উলঙ্গ শিশুর মত
বেরিয়ে এসেছ পথে, স্বাধীনতা, তুমি দীর্ঘজীবি হও।

জননীর নাভিমূল ছিঁড়ে উলঙ্গ শিশুর মত
বেরিয়ে এসেছ পথে, স্বাধীনতা, তুমি দীর্ঘজীবি হও।

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

বেশ মজা হয়েছে বোঝা-ই যাচ্ছে...

নজমুল আলবাব এর ছবি

আপনে একটা বেহুদা। কতো করে বল্লাম নাবিস্কো থাইকা বিস্কুট নিয়া আসতে। আনলেন না।

------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল

রেশনুভা এর ছবি

দুঃখিত বস। ভিতর দিয়ে আসছিলাম। মন খারাপ

মাহবুব লীলেন এর ছবি

রেশনুভা যে ওইদিন নিজেরে একমাত্র হাচল-ছার প্রমাণ করল ওইটা বাদ গেছে

গৌতম এর ছবি

ছবি ছাড়া এই পোস্টরে দিক্কার...

.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

শিক্ষাবিষয়ক সাইট ::: ফেসবুক

.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

রেশনুভা এর ছবি

আমার তোলা অল্প কিছু ছবি আছে এখানে। ১৫২ নম্বর মন্তব্যে।

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

মাইনাছ।

====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির

তানবীরা এর ছবি

মিসড ইউ।

*******************************************
পদে পদে ভুলভ্রান্তি অথচ জীবন তারচেয়ে বড় ঢের ঢের বড়

*******************************************
পদে পদে ভুলভ্রান্তি অথচ জীবন তারচেয়ে বড় ঢের ঢের বড়

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

ভুলগুলোও মাঝে মাঝে ভালই লাগে ...
হুমম চিন্তিত

নিবিড় এর ছবি

মিচকা হাসির ইমোটা কই দেঁতো হাসি


মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড় ।

জুয়েইরিযাহ মউ এর ছবি

মন খারাপ ................. হাসি

-------------------------------------------------------
জানতে হলে পথেই এসো, গৃহী হয়ে কে কবে কি পেয়েছে বলো....


-----------------------------------------------------------------------------------------------------

" ছেলেবেলা থেকেই আমি নিজেকে শুধু নষ্ট হতে দিয়েছি, ভেসে যেতে দিয়েছি, উড়িয়ে-পুড়িয়ে দিতে চেয়েছি নিজেকে। দ্বিধা আর শঙ্কা, এই নিয়েই আমি এক বিতিকিচ্ছিরি

ভণ্ড_মানব এর ছবি

আপনি যেখানেই যাইবেন, সেখানেই হানা দিমু। দেঁতো হাসি
আপনার দেশ ছাড়ার আগে আরেকবার কুলাকুলি করতে মঞ্চায়। চোখ টিপি
__________________________________
যাক না জীবন...যাচ্ছে যখন...নির্ভাবনার(!) নাটাই হাতে...

__________________________________
যাক না জীবন...যাচ্ছে যখন...নির্ভাবনার(!) নাটাই হাতে...

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।