দেশে ফেরার পথেই ঠিক করে রেখেছিলাম ছুটির এ’কটা দিনের, আমার এই সাধারণ জীবনের অতি সাধারণ দিনপঞ্জি লিখে রাখবো। দেশে ফিরে আর সময় খুঁজে পেলাম না। এত এত মানুষের ভালোবাসায় কীভাবে যে এই ২২ দিনের ছুটিটা হুড়মুড়িয়ে চলে গেল বুঝতেই পারলাম না। আর একদিন পরই যখন ফিরতি পথের প্লেনে উঠবো, তখনই মনে হল শেষ থেকেই না হয় শুরু করি।
আগামী ছয় তারিখ থেকে আমার একটা কোর্স শুরু হচ্ছে; না হলে ঠিক আরো ক’টা দিন ছুটি বাড়িয়ে নিতাম। তবুও কী সাধ মিটত? তারচেয়ে বরং এই ভালো। ধরে যখন রাখা যাবেই না পুরোটা সময় জুড়ে, তখন কিছুটা অপ্রাপ্তি নিয়েই শেষ হোক না সবকিছু। একেবারে পুরোটা সময় জুড়ে পাওয়ার ইচ্ছা আর আকাঙ্ক্ষাটুকু রয়ে যাবে সারাজীবন ধরে। সেই অপ্রাপ্তিটুকুই পূর্ণ করতে ফিরে ফিরে আসবো।
বন্ধুদের কথাই বলছিলাম; ওদের সাথে সময়টুকু ভাগাভাগি করে নেওয়ার কথা। অনেকের সাথেই এবার প্রথম দেখা; একদমই মনে হয়নি তা। সত্যি বলতে, পুরোনো বন্ধুদের অনেকেই এখন আমার মতন দুর্ভাগা বলে দেশের বাইরে। সেজন্যে কিন্তু হৈ-হল্লা একদমই থেমে থাকেনি। বরঞ্চ অনেক বেশি হয়েছে আর সেইসব মুহূর্তগুলো রাঙিয়ে গেছে রামধনুর সাতরঙে। যাবার আগে কোনো কোনোটা খুব বেশি পরিচিত আর অনেক উজ্জ্বল; চোখ বন্ধ করলেও দেখা যায়। ধরা দেয় আপন গন্ধে আর ছন্দে।
সচলায়তনের সাথে আমার পথচলা যখন কেবল শুরু হাঁটি হাঁটি পা পা করে, তখন ঐ অসাধারণ লিখিয়ে মানুষগুলোকে খুব কাছ থেকে দেখতে ইচ্ছে হত। ধুগো’দার এই পোস্টটার কথা খুব মনে আছে। আমার তখনও সচলের সাথে মধুচন্দ্রিমা চলছে আর তাঁরা কী না আমারই পাশের দেশে এত বড় একটা আয়োজন করে ফেললেন। সেটাও না হয় হলো। পোস্টের ছবিগুলো পর্যন্ত ঝাপসা। মনতো খারাপ হয়েছিলই সাথে ভেবে নিয়েছিলাম পূর্ণ সচলরা বড়ই দাম্ভিক হন; নিজেদেরকে অপ্রকাশিত রাখতে চান বলে। তখন থেকেই একজন জ্যান্ত সচল দেখার খুব শখ ছিল যিনি কী না হবেন আমাদেরই মত দেখতে। ছাতিবানু আর দুঁদেরামের সাথে পরিচয় আগেই হয়েছিল। আর এবার দেখা পেলাম এত এত সচলের। ভালো কথা, তাঁরা আমাদের মতই দেখতে এবং আর অনেক বন্ধুবৎসল। আমার এবারের ছুটির অন্যরকম একটা অর্জন; ওনাদেরকে এখন অনেক কাছের, অনেক আপন মনে হয়।
প্রথম ক’দিন দেশে আসার পর রাতের বেলা একটু ভয়ে ভয়ে পথ চলতাম। দু’দিন যেতে না যেতেই পুরোপুরি অভ্যস্ত হয়ে পড়লাম সেই গ্যারান্টিহীন এবং গতিহীন (যানজটের সময়) জীবনের সাথে। এদিক থেকে ওদিকে ছুটতে লাগলাম; কাঁধের ব্যাগে ক্যামেরা, পকেটে আইফোন নিয়ে। একটুও ভয় লাগেনি জানেন। কেন তা বলতে পারবো না। হয়তবা দেশে ফিরে মনে হচ্ছিল, এই জায়গাটাই আমার জন্য সবচেয়ে নিরাপদ। শত বিপদে শুধু এই মাটিই আমাকে আশ্রয় দেবে নিঃশর্তে। এখানে অনেক লোকের চিৎকার চেঁচামেচি সহ্য করা লাগে হয়ত কিন্তু আমার গায়ের রঙের দিকে তাকিয়ে অল্প কিছু লোকের ভ্রুকুঞ্চন, হাসি মুখে মেনে নিতে হয় না। জানি আমি বাতাসটা বড্ড সীসায় ভরা এখানে, তবুও যে আবার ফিরে আসবো এই ভারী বাতাস বুকে টেনে নিয়ে মনটাকে হালকা করতে। আমি এখানে প্রাণ ভরে কথা বলতে পারি সবার সাথে; বিজাতীয় ভাষায় কথা বলতে বলতে হাঁপিয়ে উঠি না আর। আমি এখন মায়ের সাথে বসে ইটিভিতে চলা ফ্যাশন শো দেখতে পারি; অন্যমনষ্ক ভাবে আর চ্যানেলের পর চ্যানেল ঘোরাতে হয় না। আমার বাবার সাথে একই রিকশায় চেপে বাজারে যেতে পারি; স্যাটার ডে মার্কেটে আর আমাকে একা একা ঘুরে বেড়াতে হয় না। আমার বন্ধুগুলোকে ছুঁয়ে দিতে পারি যখন ইচ্ছা তখনই; মেসেঞ্জারে পাঠানো ইমোকোনের দরকার হয় না আর।
গত সপ্তাতিনেকের প্রতিটা ভোরের প্রতিশ্রুতি ছিল ভালোবাসা আর ভালোলাগার উত্তাপে মোড়া সূর্যের। প্রতিটা দিন শুরু করতাম রোমাঞ্চ নিয়ে; নিজের মাটি আর মানুষগুলোকে আরও আপন করে পাবো ভেবে। একটু পরই ভোর হবে আজ। আজকের সূর্যটা অন্যদিনের মত হবে না।
এই সূর্যটা আমাকে ফিরিয়ে নিয়ে যাবে অন্ধকার কুঠুরীতে। আমি যেতে চাই না ওখানে; তোর কাছে থেকে যেতে চাই।
মন্তব্য
" প্রবাস এমনই, এমনই এ পর-বাস.. মৃত্যুর অধিক সে দিতে জানে বেদনা অবলীলায়!"
*সুমন সুপান্থ
ফিরতি যাত্রা নিরাপদ হোক!!
--------------------------------------------------
"সুন্দরের হাত থেকে ভিক্ষা নিতে বসেছে হৃদয়/
নদীতীরে, বৃক্ষমূলে, হেমন্তের পাতাঝরা ঘাসে..."
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
আপনার লেখার সাথে আমি অনেক পরিচিত!
তাই মনটা একটু বেশি খারাপ হলো লেখাটি পড়ে।
*************************************************************************
"জীবন কিছুটা যাতনা শেখায়__ক্ষুধা ও খরার এই অবেলায়__অতোটা ফুলের প্রয়োজন নেই।"
____________________________________________________________________
"জীবনের বিবিধ অত্যাশ্চর্য সফলতার উত্তেজনা
অন্য সবাই বহন করে করুক;
আমি প্রয়োজন বোধ করি না :
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ হয়তো
এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।"
- ফিরে, চলে আসেন এদিকে। ঠাণ্ডায় জমে যেতে যেতে ললনা দেখবো আমরা শন-পাঁপড়ি কানড়ে।
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
মনটা খারাপ করে দিলেন। ভালো থাকবেন।
_____________________
আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।
ভাইয়া.....
পড়তে শুরু করার আগেই ভাবছিলাম মন খারাপ করা লেখা কিন্তু এতোটা মন খারাপ হবে ভাবিনি।
সেই অপ্রাপ্তিটুকুই পূর্ণ করতে ফিরে ফিরে আসবো।
তবে তাই হোক নাহয়।
-------------------------------------------------------------
জানতে হলে পথেই এসো, গৃহী হয়ে কে কবে কি পেয়েছে বলো....
-----------------------------------------------------------------------------------------------------
" ছেলেবেলা থেকেই আমি নিজেকে শুধু নষ্ট হতে দিয়েছি, ভেসে যেতে দিয়েছি, উড়িয়ে-পুড়িয়ে দিতে চেয়েছি নিজেকে। দ্বিধা আর শঙ্কা, এই নিয়েই আমি এক বিতিকিচ্ছিরি
পোস্টের লিংক দিতে ভুলে গেছিলাম। পাবেন এখানে।
----------------------------------------------
আমার যত অগোছালো চিন্তাগুলি,
রয়ে যাবে এইখানে অযতনে ।।
আপনি এবারে দেশে যাওয়ার পরে আপনার সম্পর্কে আমার নতুন অবসারভেশন হল... আপনি লুক খুব্বি খ্রাপ এবং প্রচন্ড লুলী
লেখা মাশাল্লাহ ভাল হচ্ছে দিন কে দিন। আমি দেশ, দেশের মানুষদের অভাব অনুভব করি এটা সত্যি, তবে এই প্রবাস জীবনও আমার খুব প্রিয়।
___________________________________________________
আনন্দে থাকি, আনন্দে রাখি
প্রাপ্তি থেকে পাওয়ার জন্য স্ংগ্রাম টা বেশি বর্ণময়।অপ্রাপ্তি থাকুক, বার বার তোকে ফিরিয়ে আনুক। যাত্রা শুভ হোক।
কাঁধে যে ক্যামেরা ছিলো তা বুঝবো কেমনে ? এই পোস্ট তা প্রমাণ করলো না।
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
দুর্দান্ত। কিন্তু বিষণ্ণ।
ফিরে গিয়ে আওয়াজ দিয়েন, কথা হবে।
দেখতে দেখতে যাওয়ার দিন চলেই আসলো, না?
চলে যাওয়া মানে প্রস্থান নয়
আবার আসবেন, আড্ডাবো তখন।
একটা ক্যামেরা দেখসিলাম। আপনার ছিলো?
_________________
ঝাউবনে লুকোনো যায় না
_________________
ঝাউবনে লুকোনো যায় না
হুরো মিয়া, আবার ৮ মাস পরে না আসছেন। কয়দিনই তো। মন খারাপের কিছু নাই। ভালোয় ভালোয় গন্তব্যে পৌঁছান।
..................................................................
আমি অতো তাড়াতাড়ি কোথাও যেতে চাই না;
আমার জীবন যা চায় সেখানে হেঁটে হেঁটে পৌঁছুবার সময় আছে,
পৌঁছে অনেকক্ষণ ব'সে অপেক্ষা করার সময় আছে।
ফেরতকালের শুভকামনা থাকলো...
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
তাহলে তো মজায় আছেন। দেশে যে হারে সচলাড্ডা আর মাশ্রুমাড্ডা হচ্ছে ..
না চাইলেও ফিরতে হয় কঠিন নিয়তি
*******************************************
পদে পদে ভুলভ্রান্তি অথচ জীবন তারচেয়ে বড় ঢের ঢের বড়
*******************************************
পদে পদে ভুলভ্রান্তি অথচ জীবন তারচেয়ে বড় ঢের ঢের বড়
=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদ্বপি গরীয়সী
=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী
নতুন মন্তব্য করুন