ঐ দিনটার পরে অপরিচিত এই শহরটা পরিচিত হতে থাকে ছেলেটার সাথে। কখনও বাবার হাত ধরে; আবার হয়তবা মায়ের সাথে রিকশায় বেড়িয়ে। মসৃণ রাজপথ ধরে যেতে যেতে কোন এক অমসৃণ গলিপথে, ঘুরে বেড়ায় সে। স্কুল ছুটির পরে খানিকটা সময় ঐ মেয়েটার পিছু পিছু হেঁটে আসে। পিছু নেওয়া সারাটা পথের প্রায় পুরোটা সময়ই এদিক ওদিক তাকায়। মেয়েটার বাসার সামনে এসে কখনওবা ধরা পড়ে যায় ছেলেটার চোখজোড়া, মেয়েটার কাছে। অধিকাংশ সময়ই পেয়ে আসে নির্বাক অবহেলা কখনওবা বিনিময় একটু হাসির।
একটা সময় ছেলেটা এই শহর ছেড়ে পাড়ি জমায় অন্য কোথাও। অন্য শহরেও দিব্যি মানিয়ে নেয় ও। ঘড়ির কাটাগুলোর স্থান বদল হয়, ক্যালেন্ডারের পাতা উল্টে যায় এবং তারও পরে আবার নতুন ক্যালেন্ডার জায়গা নেয়, পুরোনোকে সরিয়ে। কিন্তু কিছু কিছু ভালোলাগা সবসময়ই রয়ে যায়। সময় কখনও সরিয়ে দিতে পারে না ওদের।
অনেকদিন পর ছেলেটা ফিরে আসে সেই শহরে। টুংটাং করে বেল বাজে রিকশার। ছেলেটা কান পাতে। যান্ত্রিক কোলাহলে বিরক্ত হয়। ঝিঁঝিঁ পোকা আর ব্যাঙের আবাসস্থল এখন দোপেয়ে এই অতি বুদ্ধিমান জীবের খপ্পরে। রাজপথের হলদে আলোয় ছেলেটার শার্টের রঙ অন্যরকম লাগে। যেমন অন্যরকম লাগে এই শহরের সেই জায়গাগুলোকে, মানুষগুলোকে; অন্যরকম লাগে নিজেকেও। কিন্তু ভালোলাগা কখনও বদলে যায় না।
হঠাৎ করেই এ পাড়ার লোকেরা দেখে একটা ছেলে প্রায় প্রতিদিনই মোড়ে এসে দাঁড়ায়; গলায় কখনওবা হাতে এক যন্ত্রসহ। পাশের দোকানে চা খাওয়ার ফাঁকে ফাঁকেই ছেলেটা দেখে নেয় তার অতিপ্রিয় শহরটাকে। সাধ মেটে না। আরও ভাল করে দেখবার জন্যই রিকশাচালককে যেতে বলে শহরের কোন এক প্রান্তের দিকে; অনেক আগের ফেলে যাওয়া দৃশ্যগুলোকে হয়ত এখনকার সাথে মিলিয়ে নিতে চায়। যেতে যেতেই কখনও ওর রিকশাকে অতিক্রম করে যায় বেয়াড়া মোটর সাইকেলগুলো সাথে নিয়ে উচ্ছ্বসিত আরোহীদের। আবার হয়তবা রাস্তার ও প্রান্তের কোন এক রিকশায় বসে থাকা সুনয়নার সাথে চোখাচোখি হয়। ঐ এক সেকেন্ডের ভালোলাগা ওরা দু’জনেই ভুলে যায় অন্য কোন মোড়ে পৌঁছে যাওয়ার আগেই।
কিছু স্মৃতি অনেক পরিচিত; আবার বাস্তব হয়ে ধরা পড়ে তা। আবার কোন কোন স্মৃতির উৎসের মানুষগুলোকেই আজ বড্ড অপরিচিত মনে হয়। তবুও সেই স্মৃতিগুলো লালিত হয়, ভাবনার খোরাক যোগায় অলস বেলায়।
কিছু স্মৃতি এবার না হয় স্থির হয়ে তোলা থাক এই পাতায়। মিলিয়ে নেব অনেক বছর পরে, আবার সেই পথে পথে ঘুরে।
ছবি ৩- বিভাগীয় কমিশনার ও মুখ্য মহানগর হাকিমের কার্যালয়
ছবি ৫- হাদিস পার্কের ছোট্ট টিলা
ছবি ৬- টিলার উপরে যেয়ে দেখা মিলল বাবার সাথে বেড়াতে আসা নাফিসার
ছবি ৮- খুলনা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার
ছবি ১১- মোঃ ইকবাল আর মোঃ রানা; দেখা হয় ওদের সাথে লঞ্চ ঘাটে
ছবি ১৭- শেখ আবু নাসের স্টেডিয়াম (খুলনা বিভাগীয় স্টেডিয়াম)
ছবি ১৮- আমার জন্মের পরের ন’মাস ছিলাম এখানকার কলোনীতে; বড় মামার বাসা
ছবি ১৯- খুলনার মৃত শিল্প এলাকা
ছবি ২০- বন্ধ ঝাঁপগুলোও তাই বলে
ছবি ২১- শুধু নিজেদের চাহিদাটুকুই মেটাতে পারে শুনেছি; জাতীয় সরবারহ গ্রিডে কোন অবদান নেই
ছবি ২২- ছোট মামার বাসা ছিল এখানেই। অনেক খেলেছি দূরের ঐ মাঠে
ছবি ২৩- নাহ, এটা আমার কোন মামার বাসা নয়
ছবি ২৫- ভালোবেসে একাকার, গরুগুলো হতবাক [খুবি ক্যাম্পাস]
ছবি ২৬- স্মৃতিসৌধ, গল্লামারী বধ্যভূমি
ছবি ২৯- এই পথ যদি না শেষ হয় … [অ্যাপ্রোচ রোড, খানজাহান আলী সেতু]
মন্তব্য
বাহ, এক পলকে ঘুরে এলাম খুলনা।
তাহলেই আমার প্রচেষ্টা সার্থক।
----------------------------------------------
আমার যত অগোছালো চিন্তাগুলি,
রয়ে যাবে এইখানে অযতনে ।।
সিরিজটি চলছে বেশ বেশ বেশ
থেমে যেন না যায় হুট-হাট.. যেন হয় শেষ.....
ভালো লাগলো ছবিগুলো.......
সোনালী ধানক্ষেত আর সন্ধ্যা নামলে পরে - ছবিদুটো দারুণ।
------------------------------------------------------
জানতে হলে পথেই এসো, গৃহী হয়ে কে কবে কি পেয়েছে বলো....
-----------------------------------------------------------------------------------------------------
" ছেলেবেলা থেকেই আমি নিজেকে শুধু নষ্ট হতে দিয়েছি, ভেসে যেতে দিয়েছি, উড়িয়ে-পুড়িয়ে দিতে চেয়েছি নিজেকে। দ্বিধা আর শঙ্কা, এই নিয়েই আমি এক বিতিকিচ্ছিরি
ভালো থেকো।
----------------------------------------------
আমার যত অগোছালো চিন্তাগুলি,
রয়ে যাবে এইখানে অযতনে ।।
ভালো লাগলো। সেই ছেলেবেলার পর আর যাওয়া হয়নি।
অনেক ধন্যবাদ। সময় করে ঘুরে আসুন না কেন?
----------------------------------------------
আমার যত অগোছালো চিন্তাগুলি,
রয়ে যাবে এইখানে অযতনে ।।
অসাধারন শব্দটাকে সঙ্গায়িত করে আপনার পোস্টটা, ছবিগুলোর কথা কি বলব, এখনই ক্যামেরা নিয়ে বের হয়ে যেতে ইচ্ছা করছে আপনার ছবিগুলো দেখে। এমন মন ছোঁয়া লেখা আর ছবি আরো আসুক
আর হ্যাঁ পোষ্টি লক্ষকোটি তারা
=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদ্বপি গরীয়সী
=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী
সাইফ ভাই, এত প্রশংসার যোগ্য আমি না ...
ভালো থাকবেন। সামারা কে অনেক আদর।
----------------------------------------------
আমার যত অগোছালো চিন্তাগুলি,
রয়ে যাবে এইখানে অযতনে ।।
- খুলনা রেলস্টেশনের সাইনবোর্ডটা পড়ে মাথায় টুং করে গুঁতা দিলো, 'খ'টা কোন ফন্টে লেখা?
স্বর্ণকমলের রাস্তাটা মনে পড়েছে। হাতের ডান দিকে গেলেই বাসস্ট্যাণ্ড। আর হাতের বাম দিকে গেলে রাস্তার বাঁ দিকে কয়েকতলা উঁচু দালান পেরিয়ে চৌরাস্তা মোড়টা ঘুরে ডানে গেলে একটা সিনেমা হল, কী জানি নাম! এদিক থেকে গেলে চৌরাস্তার ওপাশে, ডান দিকে একটা ঝুপড়ি দেয়া রেস্টুরেন্টে খেয়েছিলাম। খাওয়ার স্বাদটা মনে নেই, ভালোই ছিলো মনেহয়। সেই একবারই গিয়েছিলাম খুলনা, দুই হাজার দুই সালে।
আপনার ছবিগুলো বেশ দারুণ হয়েছে।
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
আপনি বলার পর আমিও দেখলাম খিয়াল কইরা। বুঝলাম না কোন ফন্টে লেখা।
চৌরাস্তা বলতে কী শিববাড়ী মোড় বুঝালেন? যদি তাই হয়, ঐটা সংগীতা সিনেমা হল।
----------------------------------------------
আমার যত অগোছালো চিন্তাগুলি,
রয়ে যাবে এইখানে অযতনে ।।
লেখা আর ছবি, দুটুই ফাটাফাটি। ছবি-১২, ট্রেন স্টেশনে টিনের ছাউনিটা উড়ন্ত পাখীর মত, দেখতে ভাল লাগছে।
অফঃ আমার কাছে শিরোনামে "ব্রাকেট( )" ব্যবহার ভাল লাগে না। এভাবেও হতে পারে- "দেশে ফেরা- ২ | শহর কথন"। অথবা অন্য কোন স্টাইল।
(আমার একান্তই নিজের ভাবনা)
- বুদ্ধু
পড়েছেন আর মন্তব্য করলেন বলে অনেক ধন্যবাদ।
শিরোনামে বন্ধনীর ব্যবহার নিয়ে চিন্তা করব।
----------------------------------------------
আমার যত অগোছালো চিন্তাগুলি,
রয়ে যাবে এইখানে অযতনে ।।
রেশ্নুমিয়া,
"তোমার লেখা পড়ে মুগ্ধ হলাম"--এ জাতীয় বাক্যবন্ধ তোমাকে উপহার দিতে দিতে (এবং তুমিও উপহার হিসেবে পেতে পেতে) ক্লান্ত। গোদের উপর বিষফোঁড়া হয়ে জুটেছে এখন ছবি। রীতিমত ঝগড়া লেগে গেল আমার মাথায়--কোনটা বেশি ভাল এই নিয়ে---লেখাটা? নাকি ছবিগুলো?
শেষমেশ হতাশ হয়ে সিদ্ধান্ত নিলাম, তুমি আসলেই 'বিশ্রী রকমের ভাল' লেখক এবং 'ফোটক' (যে ফোটো তোলে!!)
আনন্দম!
অনিকেত'দা,
সত্যি বলতে আমি আপনার মন্তব্যের জন্য অধীর অপেক্ষায় থাকি এজন্য যে, দাদা এসে ঠিকই আমাকে আরো উৎসাহিত করবেন এইসব বগরবগর লেখার জন্য।
কোনদিন হতাশ করবেন না যেন।
ভালো থাকবেন বস।
----------------------------------------------
আমার যত অগোছালো চিন্তাগুলি,
রয়ে যাবে এইখানে অযতনে ।।
ভাই, ধুম করে এবার আমার ময়মনসিং এর সাথে সাতে খুলনাটাও ঘুরে আসা হলো!
সিরিজ বন্ধ যেন না হয়!
**************************************************
“মসজিদ ভাঙলে আল্লার কিছু যায় আসে না, মন্দির ভাঙলে ভগবানের কিছু যায়-আসে না; যায়-আসে শুধু ধর্মান্ধদের। ওরাই মসজিদ ভাঙে, মন্দির ভাঙে।
মসজিদ তোলা আর ভাঙার নাম রাজনীতি, মন্দির ভাঙা আর তোলার নাম রাজনীতি।
সবকিছুই তো একসময় বন্ধ হয়ে যায়।
----------------------------------------------
আমার যত অগোছালো চিন্তাগুলি,
রয়ে যাবে এইখানে অযতনে ।।
শেষবার খুলনা গিয়েছিলাম বছর তিনেক আগে....
ছবিগুলো ফাটাফাটি!!!!
--------------------------------------------------
"সুন্দরের হাত থেকে ভিক্ষা নিতে বসেছে হৃদয়/
নদীতীরে, বৃক্ষমূলে, হেমন্তের পাতাঝরা ঘাসে..."
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
ঘটনা কী? আপনার জন্য তো অন্তঃর্জাল নিষিদ্ধ।
থ্যাংকুশ!!!
----------------------------------------------
আমার যত অগোছালো চিন্তাগুলি,
রয়ে যাবে এইখানে অযতনে ।।
মৃত শিল্পএলাকা দেখে মন খারাপ হলো। ছবিগুলা দারুণ। শেষটা ষাটগম্বুজ না?
---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো
ঠিক। ষাটগম্বুজ এর খুদে সংস্করণ।
----------------------------------------------
আমার যত অগোছালো চিন্তাগুলি,
রয়ে যাবে এইখানে অযতনে ।।
হুম, একদিন আমিও খুলনায় যাবো, বেড়াতে। আসলে ছবি দেখে হঠাৎ খুলনায় ঘুরতে ইচ্ছে হলো!
..................................................................
আমি অতো তাড়াতাড়ি কোথাও যেতে চাই না;
আমার জীবন যা চায় সেখানে হেঁটে হেঁটে পৌঁছুবার সময় আছে,
পৌঁছে অনেকক্ষণ ব'সে অপেক্ষা করার সময় আছে।
আবার দেশে এসে নেই তাহলে ...
----------------------------------------------
আমার যত অগোছালো চিন্তাগুলি,
রয়ে যাবে এইখানে অযতনে ।।
আমি বুঝি নাই এটা যে ছবি পোস্ট! এখন ঢুকে দেখি এ অবস্থা!
ছবিগুলি খুব ভাল লাগলো। বাংলাদেশের জেলা শহরগুলো নিয়ে এরকম ছবিওয়ালা পোস্ট আরো পেলে বেশ আনন্দিত হবো।
ধন্যবাদ!
না বুঝতে পারার দায় আমার। ট্যাগে দিতে ভুলে গেছিলাম।
ধন্যবাদ আপনাকেও।
----------------------------------------------
আমার যত অগোছালো চিন্তাগুলি,
রয়ে যাবে এইখানে অযতনে ।।
নতুন মন্তব্য করুন