দেশে ফেরা - ৩ : সুন্দরবনে ৭২ ঘন্টা

রেশনুভা এর ছবি
লিখেছেন রেশনুভা (তারিখ: শনি, ৩০/০১/২০১০ - ৭:২০পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

সুন্দরবন নিয়ে সচলায়তনের পাতায় আমার পড়ামতে এর আগে লিখেছেন মোস্তাফিজ ভাই, নজরুল ভাই, লীলেন’দার মত গুণী লেখকেরা। আমার নিশ্চয়ই ডিসক্লেইমার দেওয়ার কারণটুকু আর ব্যাখ্যা করে বুঝানোর দরকার নেই। গিয়েছিলাম তিনদিনের সৌখিন ভ্রমণে। তেমন কোন উত্তেজনাময় গল্পও নেই আমার। ভাবছেন, তবে কেন লিখলাম? ভালো-খারাপের সহাবস্থানটা মনে করিয়ে দেওয়ার জন্যই হয়ত।

মুঠোফোনের কর্কশ শব্দে ঘুম ভেঙ্গে গেল। আর এরপর ঘরের মধ্যে কিছুটা সময় কেবল ধুপধাপ শব্দ। অবশেষে সেই শব্দ একসময় বাসার সিঁড়ি বেয়ে রাস্তায় মিলিয়ে গেল।

গন্তব্য বাস স্টপ। বাসা থেকে গলা বাড়িয়ে দিলেই দেখা যায়। তাড়াহুড়োয় গলা বাড়ানো দূরত্বটুকুই গেলাম রিকশায়। নামার আগেই দেখলাম ঈগল পরিবহনের এক RM2 বাসের সামনে দুই পরিচিত মুখ। ১৫ মিনিট দেরী করিয়ে দেওয়ার জন্য ক্ষমাপ্রার্থনা আর করলাম না; একটু হাসিতেই তা উড়িয়ে দিলাম।

আমাদের সুন্দরবন যাওয়ার দিন সকালবেলার ঘটনা ওটা। দিনটা ছিল আমাদের বিজয় দিবস। রাতের বাসে করে বন্ধুরা ঢাকা থেকে তখন খুলনায়। আমি খুলনা এসেছিলাম আগের দিন। পরিকল্পনা মাফিক আমার সক্কালবেলা ওদের সাথে বাস স্টপে দেখা করার কথা। ওখান থেকে বাসই আমাদের পৌঁছে দিয়ে এল লঞ্চ ঘাটে। সহযাত্রীদের সবারই তখন এক রাতের বাস ভ্রমণে তথৈবচ অবস্থা আর আমি সুন্দর করে ঘুমিয়ে এসে পুরোপুরি টিপটপ।

প্রায় সাড়ে সাতটার পর লঞ্চ ছেড়ে গেল। চারদিকে বেশ ঘন কুয়াশাই ছিল। সূর্য তখন কেবল দেখা যায়। কুয়াশায় ডেক ভিজে আছে। ওর মধ্যেই ক্যামেরার চোখ খুলে বসলাম। এবং কিছুক্ষণ পরেই একটা মজার একটা কান্ড ঘটালাম। লঞ্চ তখন রূপসা সেতু প্রায় অতিক্রম করে যাচ্ছে। ছবি একটা তুললাম বটে সেতুর, আর উপরে সূর্য নিয়ে। কিন্তু মনঃপুত না হওয়ায় ভাবলাম, লঞ্চের ও প্রান্তে যেয়ে আবার ভাল করে তুলে আসি। যেই ভাবা সেই কাজ। ঘুরে দাঁড়াতেই দেখি, সেতু অনেক দূরে চলে গেছে। ভুলে গিয়েছিলাম, যে লঞ্চ সামনে আগাচ্ছে। এক জায়গায় থেমে নেই। কিন্তু অনেকগুলো বন্ধু আমার এই যুগান্তকারী চিন্তা বুঝে ফেলায় পরবর্তী ক’টা দিন বেশ চড়া মাশুল দিতে হয়েছিল। একটা সুঁই বা টেপের তখন খুব অভাব বোধ করছিলাম।

ছবি ১ - ঘন কুয়াশা আর আকাশেও দেখা যায় ইটের ভাঁটার ধোয়া Image_001

ছবি ২ - কুয়াশার কারণে হঠাৎ লঞ্চ একেবারে থেমে পাড়ের কাছে যেয়ে নোঙর করে রাখে
Image_002

ছবি ৩ - সুন্দরবনের শুরু
Image_003

ছবি ৪ - মাছ ধরা নৌকা
Image_004

প্রথম দিনের যাত্রায় তেমন কোন উল্লেখযোগ্য ঘটনা আর নেই। চারদিকে থৈথৈ পানি আর কিছুক্ষণ পরে দেখা মিলল সুন্দরবনের। আবহাওয়াও ছিল মেঘলা। প্রথমদিনের ছবিগুলো তাই তেমন সুবিধা হয়নি। সন্ধ্যাটা কাটিয়েছিলাম লঞ্চের আপার ডেকে আড্ডা মেরে যদিও আড্ডার মাঝেই আমি ঘন্টাখানেক ঝিমিয়ে নিয়েছিলাম। নোঙর করলাম কটকার কাছে।

ছবি ৫ - সন্ধ্যা
Image_005

বেশ সকালে আশেপাশের হইচইয়ে ঘুম ভাঙ্গলো। সবাই প্রস্তুতি নিচ্ছে কটকা নামার। আমিও মুখটা ধুয়ে, চুলে হালকা জেলের পরত দিয়ে শামিল হলাম। লঞ্চের পিছন দিকে গতকালই দেখেছিলাম একটা ছোট নৌকা বাঁধা ছিল। আজ সেটার ব্যবহার বুঝতে পারলাম। চারদিকে তখনও বেশ কুয়াশা তবে গতকালের চেয়ে অবস্থা ভালো। আশেপাশে তাকিয়ে দেখি আরো কতগুলো লঞ্চ পর্যটক নিয়ে এসেছে। তাড়া লাগালেন সাগর ভাই আমাদের। সাগর ভাই আমাদের দলনায়ক। আগে আগে না পৌঁছলে যে অল্প একটু বন পাবো হাঁটাপথে, তাও গ্রামের মাটির রাস্তার চেয়ে বেশি কিছু মনে হবে না বলে। আমাদের আগেই পৌঁছে গেল অন্য লঞ্চের একটা নৌকা।

ছবি ৬ - কটকার পথে
Image_006

সবার আগেই নামলাম নৌকা থেকে। একটা সময় দেখি পিছিয়ে পড়েছি বেশ, ছবি তোলার কারণে বার বার থেমে যেতে হওয়ায়। আমাদের লঞ্চে ছিলেন ৩০/৩৫ জন। আমাদের গ্রুপে ১৪ জন। এর মধ্যে আমরা ১০ জন প্রায় সমবয়সী। প্রায় বলার কারণ আমি ওদের চেয়ে বছরখানেকের সিনিয়র। কার্যকলাপে অবশ্য সমবয়সী বা ছোট সাজার চেষ্টার আমার কোন কমতি ছিল না। একপাশে বন আর একপাশে সমতল বিরানভূমি নিয়ে হেঁটে গেলাম প্রায় দেড় কিলোমিটার এর মতন। সূর্য তখন কেবল উঠি উঠি করছে। বেশ একটা সময়। একটু কান পাতলে পাখিদের মৃদু কল-কাকলী ও শোনা যায়। কিছুক্ষণ পর দু’পাশেই বন শুরু হল। তারপর হঠাৎ করেই সমুদ্র।

ছবি ৭ - কটকা নেমে, বনভূমি আর সূর্য
Image_007

ছবি ৮ - বনের পাশ দিয়ে সৈকতের পথে যাত্রা
Image_008

কটকা সমুদ্রসৈকত। আমার মতে, বাংলাদেশের সবচেয়ে সুন্দর সমুদ্রসৈকত সেন্ট মার্টিন। তবে সমুদ্রের ডাকে সাড়া দেওয়ার জন্য কক্সবাজার এর চেয়ে মাতাল করা কোনটা আর নেই মনে হয়। রাতের বেলা সমুদ্রের গর্জনটা এখনও বড্ড মিস করি। কটকাতে সৈকতে তেমন বালি নেই। কাদার ভাগটাই বেশি। তাতে কী? বন দেখতে এসে সমুদ্রসৈকতের স্বাদ পাওয়া; এ যেন রথ দেখতে এসে কলা বেচার মত অবস্থা। দু’বার চিন্তা না করেই নেমে পড়লাম হাটু পানিতে। নিজেকে মৃদু ধমক লাগালাম জিন্সের প্যান্টটা ভিজিয়ে ফেললাম বলে। বন্ধুদের পোট্রেট করার অপচেষ্টা করলাম। সেই সব ছবি দিয়ে বিরক্তি উদ্রেককারী এই পোস্টটাকে আরো বীভৎস করতে চাই না। ফিরে যখন আসবো ঠিক তখনই ঘটল ঘটনাটা।

ছবি ৯ - কটকা সমুদ্র সৈকত
Image_009

ছবি ১০- সূর্যের আলোতে ঝিকিমি০কি
Image_010

ভাবছেন বাঘ দেখেছি কী না? এরকম স্বল্প দিনের সৌখিন ভ্রমণে সে সৌভাগ্য হয়নি। তবে মজা হল হঠাৎ সৈকতের কাছেই বাঘের পায়ের ছাপ পাওয়া গেল বলে। অমূল্য সেই পায়ের ছাপ ঘুরে ফিরে দেখতে লাগলাম আর তুলে নিলাম বেশ কটা ছবি। পরে আবারও বাঘের পায়ের ছাপ দেখেছিলাম নীল কমল বা হিরণ পয়েন্টে। বন বিভাগের প্রহরীরা বলেছিলেন ওটা বেশ তাজা ছাপ ছিল; ঘন্টাখানেক আগের। কিন্তু বাঘ মামা স্বয়ং আর ধরা দেননি আমাদের সামনে। ওখানে বেশ কিছুটা সময় কাটিয়ে ফিরে চলা আবার নৌযানে। ঐ সময় চোখে পড়ল সিডরের সাক্ষী কিছু গাছ আর ডালপালা।

ছবি ১১ - সিডরের ছাপ এখনও যায়নি
Image_011

ছবি ১২ - বাঘের পায়ের ছাপ
Image_012

এবারের গন্তব্য দুবলার চর। নাস্তা করতে না করতেই দেখি আবার নামার তাড়া। পুরোটা সময়ই আমাদের খাওয়া-দাওয়া ছিল দারুণ। চাইনীজও খেয়েছিলাম একদিন। আর ছিল মাছ ভুনা, নানারকম ভর্তা। একদিন বিকালের নাস্তা হিসেবে ছিল ছোলা-মুড়ি। আমার ভীষণ প্রিয় জিনিস। পাইনি গোসলের লাইন দিয়েছিলাম বলে। শুধু চা খেয়েই কোন আরাম পাইনি। যাক গে। দুবলার চরে যেয়ে দেখা মিলল মাঠ ভরা শুটকির। নানা জাতের, নানা পদের; চিংড়ি, লইট্টা, ফাইসা, রূপচাঁদা। আর দেখতে পেলাম সমুদ্র সৈকতে থাকা বড় বড় কাঁকড়ার। আমার দুর্বল লেন্স দিয়ে ছবি তোলার আগেই ওরা ঢুকে যায় মাটির মধ্যে। অগত্যা দুই সহযাত্রীকে কাঁকড়া সহ দাঁড় করিয়ে তুলে ফেললাম ছবিটা। এখানে আমি একটা ভুল করে ফেলেছিলাম যেটা ঐ সময় স্বীকার করিনি। নামার আগে সাগর ভাইকে দেখলাম স্যান্ডেল খুলে ফেলতে। আমিও মনে মনে ভাবলাম বালিতে তো স্যান্ডেল খুলে নামাই ভালো। চিন্তা করিনি তখন প্রায় মধ্যদুপুরে বালি কতটা তেতে থাকতে পারে।

ছবি ১৩ - চিংড়ি শুটকি
Image_013

ছবি ১৪ - লইট্টা শুটকি
Image_014

ছবি ১৫ - কাঁকড়া ও তার দল
Image_015

দুপুরে খাওয়া হল। ঐ সময়টায় লঞ্চ গেল খাঁড়িগুলোর পাশ দিয়ে। দেখতে পেলাম বক। আর আমার কিছু বন্ধু দেখেছিল বাঁদর। আর সারাটা পথ জুড়েই ছিল শঙ্খচিল আর গাংচিল এর আনাগোনা। আমাদের হাতে ক্যামেরা দেখেই হয়ত পাশে পাশে ঘুরে বেড়াচ্ছিল। আমার লেন্স দুর্বল হওয়ায় আরো একবার আপনাদেরকে হতাশ করলাম।

ছবি ১৬ - উড়াল দিল আকাশে
Image_016

ছবি ১৭ - শঙ্খচিল
Image_017

বিকালের দিকে পৌঁছে গেলাম হিরণ পয়েন্টের কাছে। যথারীতি নৌকা দিয়ে পাড়ে যেতে হবে। ছোট্ট একটা বিপত্তি হল এবার। হঠাৎ করেই নৌকার তলা ধাক্কা খেল মাটিতে। আমরা যারা দাঁড়িয়ে ছিলাম পড়ে গেলাম সামনের দিকে। আমি পড়লাম মধ্যবয়সী এক ভদ্রমহিলার উপর। উনি যথেষ্ট দশাসই ছিলেন বলেই হয়ত আমার দিকে ঘুরেও তাকাননি। কিন্তু দুই তরুণী পড়লেন তাঁদের সামনে দাঁড়ানো বাচ্চা একটা ছেলের উপর। তেমন কিছু হয়নি। তবে হতে পারতো যদি ঐ বাচ্চা ছেলেটার জায়গায় আমি দাঁড়িয়ে থাকতাম। নিয়তি আমাকে নিয়ে খেলতে সবসময়ই মজা পায়। আমিও অবশ্য এখন সবকিছুই নিয়তির উপর ছেড়ে দিয়েছি। এবার দেখি কে জেতে?

ছবি ১৮ - হরিণই তো মনে হয়
Image_018

এসে পৌঁছলাম ৭৯৮তম বিশ্ব ঐতিহ্য স্থান, নীল কমল বা প্রচলিত নাম হিরণ পয়েন্টে। বেশ সাজানো গোছানো বন বিভাগের অফিস আর চমৎকার একটা পুকুর। পুকুর পাড়ের কাছেই হিরণ পয়েন্ট ওয়াচ টাওয়ার। টাওয়ারে একবারে তিনজনের বেশি ওঠার নিয়ম নেই। আমরা নিয়ম দেখলে তা ভঙ্গ করতেই অভ্যস্ত। কিন্তু এই টাওয়ার তো নড়ে রীতিমত। দ্রুতগতিতেই সবাই নেমে এলাম জীবন বাঁচানোর তাগিদেই। বনের মাঝের রাস্তা দিয়ে কিছুদূর যেতে না যেতেই আবার দেখা মিলল বাঘ মামার। দুঃখিত, ওনার পায়ের ছাপের। রাতে খাওয়া দাওয়া ওনার একটু বেশি হয়ে গেয়েছিল বলেই হয়ত যত্রতত্র দেখলাম তার পায়ুপথ থেকে বের হওয়া বর্জ্য পদার্থের উপস্থিতি। নিজেকে ধন্য মনে করলাম আর সেই ছবি ক্যামেরাবন্দী করলাম। শুচিবায়ুগ্রস্ত সচলদের কথা ভেবেই এ যাত্রা ক্ষান্ত দিলাম সেই ক্লাসিক ছবি এখানে দেওয়ার অদম্য ইচ্ছাটাকে।

ছবি ১৯ - নীল কমল
Image_019

ছবি ২০ - ওয়াচ টাওয়ারের উপর থেকে
Image_020

ছবি ২১ - সেই নড়বড়ে (দুলন্ত) ওয়াচ টাওয়ার
Image_021

ভেতরে বেশ কিছুদূর গিয়েছিলাম আমরা। ফেরার পথে দেখলাম এখানেও গ্যাস পাওয়া গেছে। সেই আগুনের সদ্ব্যবহার করতে বিন্দুমাত্র ইতস্তত বোধ করলাম না। দূরে দেখলাম বেশ কিছু হরিণ। আমার এই সুপার স্লো লেন্স দিয়ে ঐ ছবি কিছুতেই তোলা যাবে না। এখানে হরিণের যে ছবিটা দেখছেন সেটা নৌকা দিয়ে হিরণ পয়েন্ট যাওয়ার সময় তোলা।

ছবি ২২ - নতুন পাওয়া গ্যাস
Image_022

ফিরে আসতে আসতে লঞ্চে একেবারেই অন্ধকার। সারাদিন ঘোরাফেরার জন্যই রাতের খাবারের পর প্রায় সবাই বাঘের মতন নাসিকা গর্জন শুরু করলেন। জেগে থাকলাম আমি, শাহীন ভাই আর দুই আপু। ঢাকা থেকে আমাদের এই ভ্রমণের যাবতীয় ব্যবস্থা উনিই করেছেন। ওনার সাথে আমরা গত মার্চে কেওক্রাডং ও ঘুরে এসেছিলাম। ওনার সাথে গল্পেও মজা। উপরি হিসেবে দুই আপুতো ছিলেনই। তো আমরা সেই সিনিয়র চারজন রাতভর আড্ডা দিলাম। এবং একটা সময় ঘুমন্ত জনতার রোষের শিকার হয়ে আড্ডাস্থল পরিবর্তন করতে বাধ্য হলাম। ঘুমাতে গেলাম অনেক রাতে। আফসোস ছিল একটাই; নদীবক্ষে রাত্রিযাপনের সময় চাঁদটা নিয়েছিল ছুটি।

পরদিন বিকাল নাগাদ আমাদের খুলনা পৌঁছে যাওয়ার কথা। তার আগে ঘুরলাম আরো দু’টো জায়গা। হাড়বাড়িয়া ইকো-ট্যুরিজম সেন্টার প্রথমে। চমৎকার জায়গা। বেশ সুন্দর একটা পুকুর আছে বন শুরু হওয়ার আগে। সেই পুকুরের মাঝ বরাবর একটা সেতু চলে গেছে যার শেষ মাথায় বসার জায়গা। এত্ত মানুষের ভীড়েও আমি একা বলে আবার আফসোস হল। বেশিক্ষণ অবশ্য আফসোস করিনি যাতে পরেও আবার আফসোস করতে পারি এই ভেবে। বেশ কয়েকটা গ্রুপ ছবি তোলা হয়েছিল এখানে। শেষের এই দিনটাতেই রোদ ছিল অকৃপণভাবে।

ছবি ২৩ - হাড়বাড়িয়া ওয়াচ টাওয়ার
Image_023

ছবি ২৪ - বনের ভিতরে চলে যাওয়া রাস্তা
Image_024

ছবি ২৫ - মুগ্ধ করা রোমান্টিক পুকুর
Image_025

শেষ নামলাম আমরা করমজলে। সুন্দরবনে ঢোকার সময়ই পরে। মংলা থেকে যন্ত্রচালিত নৌকা নিয়েও চলে আসা যায়। এখানে অবশ্য বনের সৌন্দর্যটা ম্লান; একেবারেই পরিকল্পিতভাবে ছোট চিড়িয়াখানা বানিয়ে ফেলার জন্য। সেই চিড়িয়াখানায় মানুষ নামের অতি সুলভ জীবই সবচেয়ে বেশি দেখলাম। ২০০২ সালের দিকে এসেছিলাম একবার এদিকটায়। তখনও এবারের মতন এতটা যান্ত্রিক হয়ে পারেনি।

ছবি ২৬ - করমজলের হরিণ বিস্কিট, বাদাম সব খায়
Image_026

ছবি ২৭ - মিস লাস্যময়ী
Image_027

ছবি ২৮ - করমজলের কাঠের সেতু, বেশিদূর যায়নি
Image_028

লঞ্চ যতই এগোতে থাকে ততই লোকালয় বাড়তে থাকে। উজ্জ্বল দিনের আলোটাও ম্লান হতে থাকে; আর সেই ম্লান আলোয় আমাদেরকে আরো ম্রিয়মাণ দেখায়। বিকেলে পৌঁছে যাওয়ার পর ঠিক করি হাতে যেহেতু সময় আছে তবে খানজাহান আলী সেতু বা রূপসা ব্রীজটা ঘুরে আসি। আমার গত পোস্টে সেতুর বেশ কিছু ছবি থাকায় এখানে আমাদের গ্রুপেরই একটা ছবি দিয়ে দিলাম। সংগত কারণেই আমি নেই আর নেই যুবায়ের। ছবি তুলছিল ও, অন্য অ্যাঙ্গেল থেকে।

ছবি ২৯ - খুলনার পথে, আবার লোকালয়ের শুরু
Image_029

ছবি ৩০ - রূপসা সেতুতে গ্রুপ ছবি
Image_030

ঢাকার ওদের ফিরে যাবার বাস ছিল রাত সাড়ে এগারোটায়। আরো খানিকটা আড্ডা দিয়ে আমি ধরলাম আমার বাসার পথ। এতগুলো ঘন্টা একত্রে থেকে বেশ ভালো লাগছিল। কিন্তু সময়তো চলেই যায় একসময়।

আমিও তাই আর পিছু ফিরে তাকায়নি আর আমি জানতাম আমার ফিরে যাওয়ার পথের দিকেও ওরা কেউ তাকিয়ে নেই। জীবন আমাদেরকে শুধুই সামনে এগিয়ে নিয়ে যায়; পিছু ফেরার সুযোগ দেয় না।


মন্তব্য

তিথীডোর এর ছবি

সবগুলো ছবি ফেসবুকে অনেক আগেই দেখে নেয়া, মন্তব্যও করেছিলাম উচ্ছসিত হয়ে...
রিপিটেশানে গেলাম না আর!

শেষ অংশটুকুতে অমন মনখারাপের সুর বাজিয়ে কি মজা পাও ভাইয়া??

--------------------------------------------------
"আমি তো থাকবোই, শুধু মাঝে মাঝে পাতা থাকবে সাদা/
এই ইচ্ছেমৃত্যু আমি জেনেছি তিথির মতো..."
*সমরেন্দ্র সেনগুপ্ত

________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"

রেশনুভা এর ছবি

বিদায় মানেই তো ছেড়ে যাওয়া, মন খারাপ হওয়া।
অনেক ধন্যবাদ।
----------------------------------------------

আমার যত অগোছালো চিন্তাগুলি,
রয়ে যাবে এইখানে অযতনে ।।

ধুসর গোধূলি এর ছবি

- দারুণ বর্ণনা বস। সেরকম ছবি। আমার কাছে সবচেয়ে ভালো লাগলো বকের উড়ে যাওয়ার ছবিটা। ১৬ নাম্বারটা। তবে একটু কষ্ট লাগলো নৌকার তরুণীদ্বয়ের খোমা না দেখতে পারায়!

আপনার ভাগ্য খারাপ, নদীতে রাত্রিবাসে চাঁদ দেখেন নাই। অসাধারণ একটা দৃশ্য হয়। ছই তোলা নৌকায় রোমাঞ্চটা হয় তিনগুণ বেশি, কিন্তু আমার সাপে ভয় তো। তেমন আশংকাহীন থাকতে পারি না।

সুন্দরবন যাইনি কখনো। যাবো যখন, বাঘ মামাকে একটা এসেমেস করে যাবো। তিনি এলে পরে দুই মামা-ভাগনে মিলে কটকটি খাবো গলা জড়াজড়ি করে। এইটা আমার অনেকদিনের শখ।
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক

রেশনুভা এর ছবি

একেবারে কোলনে আইসা অ্যা্রাবিয়ান স্টাইলে ধন্যবাদ দিমু। দেঁতো হাসি
ঐ দু'জনের একজনের ছবি আছে আমার কাছে। উপযুক্ত পুরষ্কার পাইলে আপনার হাতে তাকে তুলে দিব। খাইছে
কটকটি খাওয়ার দৃশ্য ক্যামেরাবন্দী করতে আমারে ডাক দিয়েন। দেঁতো হাসি
----------------------------------------------

আমার যত অগোছালো চিন্তাগুলি,
রয়ে যাবে এইখানে অযতনে ।।

মৃত্তিকা এর ছবি

সচলেরা যে হারে সুন্দরবন এর ছবি পোস্টাচ্ছে, তাতে করে না গিয়েও সুন্দরবন দেখা হয়ে যাচ্ছে পুরোটা! ছবিগুলো সুন্দর হয়েছে। কিছু ছবি আলাদা করে বিশেষ ভালো লেগেছে, যেমন গ্যাসের ছবি আর সূর্য সহ ছবিগুলো। চলুক

আচ্ছা, ওটা কি আসলেও বাঘের পায়ের ছাপ? নাকি আমাদের বোকা বানানো হচ্ছে? এতো বড় ফুলের মতন ছাপ কেনো??চিন্তিত

রেশনুভা এর ছবি

ধন্যবাদ আপু। আমি আপনার তোলা ছবির একজন ভক্ত কিন্তু।
ঐটা আসলেই পায়ের ছাপ। ভিতরের টুকু শুধু। বাইরে একটা বৃত্তাকার আকৃতি দিয়ে চিহ্নিতকরণের চেষ্টা মাত্র। হাসি
----------------------------------------------

আমার যত অগোছালো চিন্তাগুলি,
রয়ে যাবে এইখানে অযতনে ।।

অনিন্দ্য রহমান এর ছবি

২ নম্বর ছবিটা নির্বাক কইরা দিল ...


রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক

রেশনুভা এর ছবি

এইবার সবাক হন। পড়লেন অনেক ভালো লাগলো।
----------------------------------------------

আমার যত অগোছালো চিন্তাগুলি,
রয়ে যাবে এইখানে অযতনে ।।

নৈষাদ এর ছবি

চমৎকার ছবি আর বর্ণ্না।

@ মৃত্তিকা, বাঘের পায়ের ছাপ নকল করে বোকা বানানো বেশ কঠিন, কারন ট্রেইল থেকে যায়। আমার তোলা দু'টা বাঘের ছাপের ছবি দিলাম (একাধিক বার গেলাম, স্যার দের দেখা পেলাম না, পায়ের ছাপেই খুশি তাই)

সুন্দরবন - কিছুক্ষণ আগে চলে যাওয়া বাঘের পায়ের ছাপ

sunderbans 011

এই চান্সে আমার পছন্দের আরেটা ছবি দিয়ে দিলাম...।

সুন্দরবনে, ফেব্রুয়ারী ২০০৭ (১)

রেশনুভা এর ছবি

ধন্যবাদ নৈষাদ। হরিণের ছবিটা খুব সুন্দর।
----------------------------------------------

আমার যত অগোছালো চিন্তাগুলি,
রয়ে যাবে এইখানে অযতনে ।।

মুস্তাফিজ এর ছবি

চমৎকার বর্ণনা আর ছবি। যায়গা গুলো এত চেনা যে মনে হচ্ছে আপনার সাথে আমিও ছিলাম।

...........................
Every Picture Tells a Story

রেশনুভা এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ মুস্তাফিজ ভাই। আপনার সাথে একবার যেতে পারলে আসলেই খুব ভালো হত।
----------------------------------------------

আমার যত অগোছালো চিন্তাগুলি,
রয়ে যাবে এইখানে অযতনে ।।

জুয়েইরিযাহ মউ এর ছবি

ছবিগুলোতো আগেই দেখেছিলাম।
লেখাও ভালো লাগলো। শেষ লাইনে উদাস মন আরো উদাস হল।

---------------------------------------------------------
জানতে হলে পথেই এসো, গৃহী হয়ে কে কবে কি পেয়েছে বলো....


-----------------------------------------------------------------------------------------------------

" ছেলেবেলা থেকেই আমি নিজেকে শুধু নষ্ট হতে দিয়েছি, ভেসে যেতে দিয়েছি, উড়িয়ে-পুড়িয়ে দিতে চেয়েছি নিজেকে। দ্বিধা আর শঙ্কা, এই নিয়েই আমি এক বিতিকিচ্ছিরি

রেশনুভা এর ছবি

সারাদিন বাসায় থেকে ঘুমালে তো মন উদাস হবেই। হাঁটাচলা করো। ভালো লাগবে।
পড়লি বলে অনেক ধন্যবাদ।
----------------------------------------------

আমার যত অগোছালো চিন্তাগুলি,
রয়ে যাবে এইখানে অযতনে ।।

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

আপনার বর্ণনা খুবই ভালো হয়েছে; বেশ গল্প বলার ঢংয়ে লেখা। ৭ আর ১৬ নম্বর ছবিদুটো বেশী ভালো লেগেছে।

রেশনুভা এর ছবি

অসংখ্য ধন্যবাদ পিপি'দা। আপনাদের উৎসাহ, সমালোচনা আমাদের জন্য অনেক কাজে দেয়।
----------------------------------------------

আমার যত অগোছালো চিন্তাগুলি,
রয়ে যাবে এইখানে অযতনে ।।

রাহিন হায়দার এর ছবি

বর্ণনা ও ছবি দুইটাই চ্রম ভালু পাইলাম! চলুক
________________________________
তবু ধুলোর সাথে মিশে যাওয়া মানা

রেশনুভা এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ রাহিন। কেমন যাচ্ছে দিনকাল? টিউলিপের সময়ে চলে এসো।
----------------------------------------------

আমার যত অগোছালো চিন্তাগুলি,
রয়ে যাবে এইখানে অযতনে ।।

রাহিন হায়দার এর ছবি

দিনকাল যাচ্ছে একরকম।
আপনি তো আমস্টার্ডামে? মে/জুনে আসার প্রবল সম্ভাবনা, সেটাই কি টিউলিপের সময়? দেঁতো হাসি
________________________________
তবু ধুলোর সাথে মিশে যাওয়া মানা

রেশনুভা এর ছবি

আমি আমস্টার্ডামে না; এনস্কেডে তে। তবে দেখা তো হবেই। টিউলিপ দেখার সেরা সময় এপ্রিল। মে'র দ্বিতীয় অর্ধে বাগান বন্ধ হয়ে যায়।
----------------------------------------------

আমার যত অগোছালো চিন্তাগুলি,
রয়ে যাবে এইখানে অযতনে ।।

রাহিন হায়দার এর ছবি

তাইলে এই যাত্রা টিউলিপ দর্শন হইল না। ব্যাপার্না। বৃক্ষে কাঁঠাল থাকিতে গুম্ফে তৈলমর্দন বাদ্দিলাম। খোমাখাতায় বিশদ কথা হবে।
________________________________
তবু ধুলোর সাথে মিশে যাওয়া মানা

অনার্য সঙ্গীত এর ছবি

দারুণ ছবি আর গল্প।
চলেন একবার সব সচলেরা সুন্দরবনে গিয়ে নাচাকুদা করে আসি। শ্যামনগরে আমার পৈত্রিক নিবাস। কষ্টমষ্ট করে থাকার জায়গা হয়ে যাবে... হাসি
____________________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ !

______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন

রেশনুভা এর ছবি

তাই নাকি? দারুণ হয় তাহলে। আর আপনার বেহালা। ওয়াও।
----------------------------------------------

আমার যত অগোছালো চিন্তাগুলি,
রয়ে যাবে এইখানে অযতনে ।।

দুষ্ট বালিকা এর ছবি

ধুর! বদলুকগুলা ইধার উধার যায় আর আজাইরা ছবি পোস্টায়! কইষ্যা মাইনাচ! [ মন খারাপ ]

-------------------------
ওলো সুজন আমার ঘরে তবু আইলোনা
এ পোড়া মনের জ্বলন কেন বুঝলোনা!

**************************************************
“মসজিদ ভাঙলে আল্লার কিছু যায় আসে না, মন্দির ভাঙলে ভগবানের কিছু যায়-আসে না; যায়-আসে শুধু ধর্মান্ধদের। ওরাই মসজিদ ভাঙে, মন্দির ভাঙে।

মসজিদ তোলা আর ভাঙার নাম রাজনীতি, মন্দির ভাঙা আর তোলার নাম রাজনীতি।

রেশনুভা এর ছবি
নাশতারান এর ছবি

১, ৫, ১৬ , ২২ বেশি ভালো লাগলো। ২৭ নং ছবিটা খোমাচিত্র করব ভাবছি। আপনি কী বলেন? চোখ টিপি

_____________________

আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।

রেশনুভা এর ছবি

আবার জিগায়। তোমার লেখা কই। এতদিনে চার-পাঁচটা ডিউ হয়ে গেছে।
----------------------------------------------

আমার যত অগোছালো চিন্তাগুলি,
রয়ে যাবে এইখানে অযতনে ।।

ওডিন এর ছবি

অসাধারণ সব ছবি! বিশেষ করে ২, ৬ আর ৭ আলাদাভাবে ভালো লাগলো ...
______________________________________
যুদ্ধ শেষ হয়নি, যুদ্ধ শেষ হয় না

রেশনুভা এর ছবি

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।