আমরা জানি যে বাংলাদেশ সবুজের প্রতীক। কিন্তু জার্মানীতে আসার পর গ্রীস্মকালে এত সবুজ দেখেছি যে দেশে না থাকার কষ্ট কিছুটা হলেও ভূলে থাকা গেছে।
ইউরোপের হেমন্ত বেশ রঙ্গীন। অক্টোবর মাস জুড়ে গাছের সবুজ পাতাগুলো দ্রুত রং বদলিয়ে লাল আর হলুদের বিচিত্র দ্যোতনা সৃষ্টি করে। সে এক অপূর্ব দৃশ্য। এরপর শুরু হয় পাতা ঝরা। সে এক অদ্ভুত দৃশ্য। ঝড়ো হাওয়ার পর ঝির ঝির শব্দে পাতা পড়তে থাকে। পাতাগুলো বোটার দিকে কেন্দ্র করে কেমন ঘুরতে ঘুরতে নামে থেমে দাড়িয়ে মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকতে হয়।
এইসময়ে সাহেব-সুবোদের কাজ বেড়ে যায়। গাছ যতই ন্যাড়া হয় রাস্তায়, ফুটপাতে, গাড়ীতে, লনে সর্বত্র পাতার আচ্ছাদন বাড়ে। নিয়মিত পরিস্কার না করলে বৃষ্টির পানিতে পচে গন্ধ হবে। কিন্তু আমাদের অব্যর্থ অস্ত্র ঝাড়ুর কন্সেপ্টটি এদের নেই। ব্লোয়ার এবং অন্যান্য আধুনিক যন্ত্রপাতি দিয়ে তারা কাজে নামে। প্রচুর ইলেক্ট্রিসিটি বা তেল পুড়িয়ে বহু সময় ধরে তারা এইসব ঝরাপাতা রাস্তায় কিছু পর পর জড়ো করে এবং পরে একটি ক্রেনওয়ালা ট্রাক এসে এগুলো নানা কসরতে তুলে সৎকারের জন্যে নিয়ে যায়। মিথ্যে বলছি না এটি পড়ে দেখুন।
এরপর তাদের প্রতীক্ষা কখন বরফ পড়বে। ঠিকমত বরফ না পড়লে ইকলজিকাল ভারসাম্য রক্ষা হয়না। গতবারের খুবই সামান্য তুষারপাতের জন্যে এবার গ্রীষ্মে মশা ও অন্যান্য পোকা মাকড়ের আধিক্য লক্ষ্য করা গেছে। এক বাংলাদেশী গার্মেন্টস ব্যবসায়ী বললেন তাদের শীত বস্ত্রের চালানের অর্ডার এবার তারা জার্মানী থেকে কম পাচ্ছেন কারন গতবারের অনেক পোষাক অবিক্রিত রয়েছে।
জার্মান আবহাওয়ার পূর্বাভাষ সাধারনত: অব্যর্থ হয়। তাই যখন শুনলাম শনিবার দিন বরফ পড়বে আগে থেকেই মানসিক প্রস্তুতি নিয়েছিলাম।
কিন্তু সকাল থেকেই আবহাওয়া দেখলাম গত দিনগুলির বিষন্নভাবের চেয়ে ভাল। রৌদ্রের দেখা পাওয়া গেল কিছু সময়। সকালে ৫ ডিগ্রি দিয়ে শুরু হলেও রৌদ্রের দরুন ৮-৯তে পারদ উঠে গেল আর আমিও নিশ্চিন্তে ২০ কিমি দুরের তুর্কী হাটে সাপ্তাহিক বাজারে গেলাম। সাথে নেয়া মান্কী ক্যাপটি কাজে লাগলো না কারন বাতাসে চিল ফ্যাক্টর কম। ভাবলাম আবহাওয়া পূর্বাভাষ তাহলে ভুল।
দুপুর বেলায় বাসায় ফিরে খেয়ে দেয়ে কম্পিউটারে বসেছি। হঠাৎ আকাশ কালো করে বৃষ্টি শুরু হলো। একটু পরেই দেখি চিৎকার "আসো আসো বরফ দেখে যাও"। জানালার বাইরে তাকালাম - খুবই ক্ষুদ্র আকারে সাদা সাদা কি যেন পড়ছে বৃষ্টির সাথে; থার্মোমিটারে তখন ৫ ডিগ্রি। দৌড়ে ব্যালকনিতে গেলাম। আস্তে আস্তে সাদার পরিমান বাড়ল এবং কিছুক্ষন পর বরফের একটি হালকা আস্তরন পড়ল সমস্ত খোলা যায়গায়। ফিরে এসে থার্মোমিটারে দেখলাম ২ ডিগ্রি।
কিছুক্ষন পরে বরফ পরা থামলো এবং আস্তে আস্তে বরফের আস্তরনগুলো গলতে শুরু করলো। এমনই মজার ছিল এই মৌসুমের প্রথম তুষারপাত।
মন্তব্য
এদিকে অক্টোবরের ২২ তারিখে প্রথম পড়ছে । গত দুইদিন বেশীরভাগ সময় স্নোয়িঙ হৈছে । পুরা কাপায় দিছে ।
নীড়পাতা.কম ব্লগকুঠি
শ্নেরেগেন, আজকে এর ভেতর দিয়ে ঠেলেঠুলে বের হয়েছি। আর পাতা ঝরার ব্যাপারটা ঘরে কাজ করতে করতে দেখি, আমার ঘরের জানালার উল্টোদিকে অনেক গাছ। শহরের বৃক্ষবহুল অংশগুলির সামনে এক দুর্দান্ত দৃশ্য হয় জোরে বাতাস চালানোর সময়। মোবাইলের দুর্বল ক্যামেরা দিয়ে ব্যাপারটা ঠিক ধরা পড়ে না বলে ছবি তোলার চেষ্টা করি না।
হাঁটুপানির জলদস্যু
কাসেলে ইংলিশ আবহাওয়া চলাতাছে
ঋণম্ কৃত্বাহ ঘৃতম্ পীবেৎ যাবৎ জীবেৎ সুখম্ জীবেৎ
অজ্ঞাতবাস
ইংলিশ আবহাওয়ার কথা আর কইয়েন না ।বুক ফেটে কান্না পাচ্ছে ওয়েলসের বিশ্রী প্যাঁচপেঁচে শীতে।
::একাকিত্বের বিলাস আমার অনেকদিনের সাধ::
::একাকিত্বের বিলাস আমার অনেকদিনের সাধ::
সুন্দর। ছবিটা ছোট করে দিলে আরো ভাল হত। এত বড় ছবি দেখা অসুবিধাজনক, একবার ডানে একবার বামে টেনে টেনে দেখা মজা নষ্ট করে দেয়।
ধন্যবাদ সবাইকে মন্তব্যের জন্যে।
প্রকৃতিপ্রেমিক: পরের বার করব। এখনও শিখছি।
পৃথিবী কথা বলছে আপনি কি শুনছেন?
পৃথিবী কথা বলছে আপনি কি শুনছেন?
নতুন মন্তব্য করুন