বাংলাদেশের বহুল পঠিত দৈনিক ডেইলি স্টারের স্পষ্টবাদী হিসেবে কিছুটা হলেও যা সুনাম ছিল বর্তমানে তা অবনতির দিকে।
এই বিবর্তনটা যেন আমাদের চোখের সামনেই হল। এই তত্তাবধায়ক সরকার গত বছর এগারই জানুয়ারী এলেন। এর পর ১৫ তারিখের ডেইলি স্টারের সম্পাদকীয়তেই মাহফুজ আনাম বাণী দিলেন "আমাদের দমানোর চেষ্টা চালালেও আমরা চুপ করে থাকব না।" তিনি বলে গেলেন গত ১৬ বছরে এই প্রথম তিনি তথ্য মন্ত্রণালয় থেকে ফোন পেয়েছেন এবং দাঁত ভাঙ্গা জবাব দিয়েছেন।
তারপর জানুয়ারী ১৯, ২০০৭ এ ডেইলি স্টারের ব্যবস্থাপনা সম্পাদককে তত্বাবধায়ক সরকারের প্রেস সচিব করা হল। এর পর থেকেই ক্রমান্বয়ে আমরা দেখেছি এই পত্রিকার নতুন চেহারা।
ডেইলি স্টারের তাসনিম খলিল এবং প্রথম আলোর কার্টুনিস্ট আরিফুর রহমানের উপর যে নির্যাতন চলল তার বিপক্ষে তাদের মালিকপক্ষ কোন বলিষ্ঠ অবস্থান নেয় নি। বরং তাদের পানিতেই ফেলে দিয়েছে ও ত্যাজ্য করেছে।
ওদিকে আমরা দেখেছি তাদের "১৭ বছরের নির্ভীক ও স্বজনপ্রীতি ছাড়া সাংবাদিকতার বড়াই করতে।" অথচ ডেইলি স্টারের একজন সাংবাদিক বলছেন
"প্রচার মাধ্যমের মুখ এখনও বাঁধা। আমরা সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে কোন মন্তব্যই করতে পারি না। এক বছরেরও বেশী সময় ধরে এটি চলছে। তাসনিম খলিল ও আরিফুর রহমানের কেইস দুটোর পেছনে বড় কারন রয়েছে।"
সম্প্রতি আব্দুল হান্নান (পিচ্চি না জামাতি?) নামে একজন ফ্রিল্যান্স লেখকের একটি মন্তব্য সম্পাদকীয় ছাপা হয়েছে ডেইলি স্টারে যেখানে তিনি বিস্ময় প্রকাশ করেছেন (৪র্থ প্যারায়) যে "দেশে জরুরী অবস্থা থাকা সত্বেও প্রচার মাধ্যমের কন্ঠরোধের কোন উদ্যোগ নেই। এই প্রথম কোন সাংবাদিক হয়রানি বা দমন নীতির মুখে পরে নি।"
সেন্সরশীপ নিয়ে নিউ এইজের সাম্প্রতিক বলিষ্ঠ অবস্থানের জন্যে এবং রেহনুমা আহমেদের চোখ খুলে দেয়া আর্টিকেলের জবাবে হান্নান বলেছেন (৭ম প্যারা):
"এক শ্রেনীর সংবাদপত্র, বিশেষ করে একটি প্রধান সারির ইংরেজী দৈনিক তাদের সম্পাদকীয়তে সরকারের প্রতিটি কার্যকারনের প্রতিবাদ ও হেয় করে আসছে সরকারের বিরুদ্ধে জনগণকে উত্তেজিত করানোর জন্যে।" সরকারের ফোন কল এবং উপদেশকে উনি স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ মানছেন না।
অসিফ ইউসুফের ঢাকা শহর ব্লগে এই লেখার প্রতিবাদে ডেইলি স্টারের সম্পাদককে গণ ইমেইল করতে বলা হয়।
সেই ব্লগে ডেইলি স্টার থেকে জাফর (?) নামে একজন মন্তব্য করেন:
১) এটি ফ্রিল্যান্স কন্ট্রিবিউটরের বক্তব্য, ডেইলি স্টারের নয়।
২) কাজের চাপে এবং লোক স্বল্পতায় এই লেখাটার সত্যতা যাচাই করা যায় নি।
৩) পাঠকরা নিশ্চয়ই জানেন যে এই সেকশনটি সংবাদ নয় তাই এর যথার্থতা আশা করা ঠিক নয়।এবং এই ব্লগারকে উপদেশ দেয়া হয়েছে কিছু ভদ্রচিতভাবে তার বক্তব্য ডেইলি স্টারে পাঠাতে, সেটি ছাপানো হবে।
এটি ভাল যে ডেইলি স্টার তার মর্যাদার ব্যাপারে সচেতন হয়েছে এবং ব্লগে গিয়ে আত্মপক্ষ সমর্থনের চেষ্টা করছে। কিন্তু সেটি যদি এমন দুর্বল যুক্তি না দিয়ে তাদের কাজকর্মে প্রতিফলিত হত তাহলে সবারই মঙ্গল হত।
মন্তব্য
ডেইলি স্টার - প্রথম আলোর চরিত্র নতুন করে বলার তো কিছু নেই আর। তবে আমি শুধু এটুকুই বলতে পারি,
রয়ে সয়ে দাদা। লংকায় যেয়ে সবাই রাবন হয় না, কেউ কেউ হনুমানও হয়।
আগুনটা কে জ্বালে দেখার অপেক্ষায় রইলাম।
অলমিতি বিস্তারেণ
অলমিতি বিস্তারেণ
আমি আরেকটু পেছন থেকে দেখি। মাহফুজ আনামের সম্পাদকীয়র ধার আগে যতটা ছিল, মতিউর রহমানের সাথে গাঁট বাঁধার পর থেকে সেটার অবনতি শুরু হয়, এখন যার ষোলকলা পুর্ণ হওয়ার পর্ব চলছে। এটা আমার ব্যক্তিগত অবজারভেশন। আমি ডেইলী স্টারের জন্ম থেকেই এর পাঠক। পরিবর্তনটা ধীরে কিন্তু খুব নিশ্চিতভাবেই হয়েছে সেটা আমি বিশ্বাস করি।
অর্থই সব অনর্থের মূল। আজকাল সাংবাদিকতা কর্পোরেট বিজনেসে পরিণত হচ্ছে। সাংবাদিকদেরও এখন শ্রেণী বিভেদ তৈরি হচ্ছে। সাংবাদিকরা কতদিন আর শুধু সাংবাদিক শ্রেণীতে অবস্থান করবে বলুন। অপেক্ষা করুন পরবর্তী টার্নিং পয়েন্টগুলো দেখার। বাঙলাদেশেও মিডিয়া মুঘলদের আবির্ভাব হচ্ছে; তারা লেখার ধার, মনণের তেজ সব নিষ্প্রভ করতে থাকবে।
জিজ্ঞাসু
কালে কালে আরো অনেক কিছুই দেখতে পাবেন। সর্ষের ভূতগুলো কিভাবে নাচানাচি করে তাও উজ্জ্বল দিবালোকে স্পষ্ট হবে। পোস্টের জন্য ধন্যবাদ।
-জুলিয়ান সিদ্দিকী
একটা ছড়া লিখেছিলাম সচলে কার্টুনিস্ট আরিফ মুক্তি পাওয়ার খবর শুনে.. মন্তব্য হিসেবে ছড়াটি-ই আবার দিলাম এখানে
(ক্ষমা চাইছি মন্তব্যে অনেকটুকু জায়গা দখল করে নিলাম বলে )
যাকে নিয়ে আজ এতো আয়োজন
এতো ফুল লাল গালিচায়..
তিনি মানুষের ভালোবাসা চান
বাকীরা যেখানে তালি চায় ।
তিনি চান রোজ ইশকুলে যাক
সব শিশু , হাতে বই নিক
নির্ভীক দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে
লিখে যায় তার দৈনিক...
তার মতো তেজী, সাহসী লোকের
বড়ো প্রয়োজন মিডিয়ায় !
(অবস্থা যদি বেগতিক দেখে
বলে - "করে রাখি জিডি, আয়.." ।
বিপদ ঠেকাতে নতজানু হয়
কর্মচারীর "জব" যায়,
অনায়াসে তিনি নিজেকে সপেঁন
মৌলবাদীর কব্জায়।
স্বার্থ হাসিলে তার জুড়ি নেই
সব করে তিনি, যাই কন...)
তিনি জীবন্ত কিংবদন্তী
অনুকরণীয়.. "আইকন" !
২১ মার্চ ২০০৮
একমত। এমবেডেড জার্নালিজম কেবল যুদ্ধের জন্যই করা হয় না, বাণিজ্য ও নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখার জন্যও হয়।
মনে হয় তবু স্বপ্ন থেকে জেগে
মানুষের মুখচ্ছবি দেখি বাতি জ্বেলে
হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।
সংবাদপত্র সবসময়ই মুখপত্র হিসাবে কাজ করছে। আদিকাল থেকে এখনতক, সারাবিশ্বেই। নিরপেক্ষ... পাঠকের পত্রিকা... নির্ভিক... এইসব বোগাস বুলি ছাড়া কিছু না।
সার্বজনীন রূপ দিতে এবং বোকা পাঠকরে পাঁঠা বানাইতে এখন আর প্রত্যক্ষ্যভাবে মদতদারী করে না। এই যা...
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
গাফফার ভাই ( বরেণ্য আব্দুল গাফফার চৌধুরী) অনেক আগেই বলেছিলেন , মাজফুজ আনাম - মতিউর রহমান রা কার পারপাস
সার্ভ করছেন। সুশীল ধারনা টা তো এদেরই।
আজ আমরা দেখছি সুশীলরা তদারকি সরকারের নেমনতন্ন ও পাচ্ছেন। জয় তু সুশীলবাদ
সব রসুনের গোড়া এক । বুলি সবই ফালতু
আব্দুল গাফফার চৌধুরী নিজেও কি কম যান?
মনে হয় তবু স্বপ্ন থেকে জেগে
মানুষের মুখচ্ছবি দেখি বাতি জ্বেলে
হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।
কম হয়ত যান না, কিন্তু তারপরও তাঁর একটা অন্তত নীতি আছে বলে আমার মনে হয়, অন্তত তিনি বেশ প্রকাশ্যেই স্বীকার করেন, তিনি আওয়ামী লীগের সমর্থক এবং শুভাকাংখী। তবে সময়ে সময়ে তাঁকেও কিন্তু আ.লীগের বেশ সমালোচনা করতে দেখেছি।
তিনি অন্তত মতি-আনাম এর মত সুশীলের ভেক ধরে, জল্পাই আচার খাওয়ার রাস্তা ধরেননি।
অলমিতি বিস্তারেণ
অলমিতি বিস্তারেণ
নতুন মন্তব্য করুন