বুদাপেস্টে হাজির হয়েছিলাম গ্লোবাল ভয়েসেস সম্মিলনে অংশ নিতে। এয়ারপোর্ট শাটল (মাইক্রোবাস) এ চেপে হোটেলে পৌঁছে মাল পত্র রেখে ভর দুপুরে ঘুরতে বের হলাম। মনে হলো এতো ধুসর গোধুলি, হিমু, সুবিনয়দের দেশ। চারিদিকে লোকেরা স্বল্প বসনে ঘুরে বেড়াচ্ছে। প্রাকৃতিক নিয়ম অনুযায়ী ক্ষীনকায় সুন্দরী ললনারাই তার মধ্যে বেশ চোখে পরছে। তাপমাত্রা তখন ত্রিশ ডিগ্রি - তাদের জন্যে তালপাকা গরম। সেটিও কারন হতে পারে তাদের এমন খোলামেলা পোশাকের জন্যে। ইউরো কাপের খেলা দেখে ম্যারাথন আড্ডা জমিয়ে দল বেধে রাত বারটার দিকে হোটেল ফিরতে গিয়ে দেখি বুদাপেস্টের রাস্তাঘাট তখনও ভরা হাট। তরুণ-তরুণীরা তখনও পার্টি মেজাজে। ভেনেজুয়েলার ব্লগার হুলিয়ানা রিন্কন মন্তব্য করল আগে জানতাম আমাদের ল্যাটিন সংস্কৃতি বেশ খোলামেলা, তবে এদের কাছে তা নস্যি।
সম্মিলনে অংশ নিতে এসেছিল বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে গ্লোবাল ভয়েসেসের প্রায় একশ কর্মী, স্বেচ্ছাসেবী লেখক, অনুবাদক, শুভানুধ্যায়ী ও বন্ধূরা এবং এদের সবার মধ্যে একটিই মিল আছে সেটি হচ্ছে সবাই ব্লগার। সম্মিলনে আরও এসেছিল বিভিন্ন প্যানেল আলোচক, ইন্টারনেট জগতের পরিচিত কিছু তারকা, সাংবাদিক যারা আরও প্রায় শ খানেক হবে। নানা দেশের লোক মিলে বেশ কলকাকলী মুখর একটি ব্যাপার হলো।
সম্মিলনের প্রথম তিনদিনের সূচীপত্রে ইন্টারনেট সিকিউরিটি, ব্লগারদের নিরাপত্তার মত গুরুগম্ভীর ব্যাপার থাকলেও (সে নিয়ে পরে আলাপ করব) পরবর্তী দুই দিন গ্লোবাল ভয়েসেস নিজস্ব মিটিঙে নানানরকম সংস্কৃতি বিনিময় আর অনানুষ্ঠানিক অভিজ্ঞতা বিনিময় সবাইকে মাতিয়ে রেখেছে। দক্ষিণ এশিয়ার সম্পাদক নেহা খুবই মজার মেয়ে। সে সবাইকে দিয়ে বলিউডের নাচ নাচিয়ে ছাড়ল এক সেসনে।
আরেকটি পর্ব ছিল পানীয় বিনিময়। বলা হয়েছিল সবাই যার যার দেশ থেকে একটি করে পানীয় নিয়ে আসবে। কেনিয়ার ব্লগার দাউদি ফ্লাইট আগে ছিল তাই চলে গিয়েছিল দুই বোতল হাতে ধরিয়ে এই বলে যে এগুলো কেনিয়ানরা জেলে গেলে খায়। বলাই বাহুল্য সবাই তাদের কড়া জিনিষ নিয়ে এসেছিল এবং সমাপনী পার্টিতে ওগুলো খোলা হলো। লেবাননের মুসা আর রাজানের পাল্লায় পরে ওদের পানীয় কিছুটা গলধ:করন করলাম। পানি দেয়ার সাথে সাথে ওটি কেমন সাদা হয়ে গেল। পান করার পরে বুঝলাম কি জিনিষ। কতক্ষন বসে ছিলাম। গায়ে আরবী লেখা দেখে বুঝতে পারিনি। পরে ভাল করে ছোট অক্ষরের লেবেল পড়ে দেখি আরাক - ৫৩% এলকোহল। এরকম ল্যাটিন আমেরিকা, পূর্ব এশিয়া, ইউরোপীয়ান অনেক নাম না জানা (স্ট্রঙ!) পানীয় ছিল সেখানে।
উপহার বিনিময়ও হলো। বলিভিয়া থেকে এডি আভিলা তৈরি করে এনেছে স্থানীয় আদিবাসীদের তৈরি কাপড় দিয়ে বানানো ল্যাপটপ ব্যাগ। আর পেরু থেকে হুয়ান আরেলানো এনেছে বিশালাকার সামুদ্রিক মাছের আঁশের উপর পেইন্টিং করা চাবির রিং।
এবার আসি দানিয়ুবের মুক্তো নামে অভিহিত বুদাপেস্ট শহরের পরিচয় পর্বে। দানিউব যে চারটি দেশের রাজধানী ( ভিয়েনা, ব্রাতিস্লাভা, বুদাপেস্ট আর বেলগ্রেড) দিয়ে গেছে সেগুলোর সংস্কৃতিগত ঐতিহ্য খুবই উল্লেখযোগ্য। দানিয়ুবের এক পাড়ে বুদা ও ওবুদা (ওল্ড বুদা) এবং অপর পারে পেস্ট শহর। এ তিন মিলেই ১৮৭৩ সাল থেকে হাঙেরীর রাজধানী বুদাপেস্ট। এখানে ভাষা নিয়ে পর্যটকদের খুব সমস্যা হয়- ইংরেজী অনেকে জানে না। তবে দেখা গেল জার্মান বললে কিছূটা কাজ হয়। কারন হয়ত হাঙেরী কিছু সময় অস্ট্রিয়ার নিয়ন্ত্রনে ছিল যা প্রথম বিশ্বযুদ্ধে অবসান হয়। আরেকটি কারন হতে পারে যে অনেক জার্মান পর্যটক এখানে বেড়াতে আসে।
লম্বা সামিট শুরু হওয়া পর অবসর সময় কম ছিল বলে সামিটের সেশন ফাঁকি দিয়েও কিছু পর্যটন হলো। তবে অতৃপ্তি থেকেই গেল। আসলে দানিয়ুবের পারে বসে দিনের পর দিন কাটিয়ে দেয়া যায়।
ভেনেজুয়েলার আরেক ব্লগার লরা ভিদাল সাহিত্যের ছাত্রী। অরুন্ধতী রায়ের উপর একটি ডিসার্টেশন জমা দিতে হয়েছে বলে সে ভারত উপমহাদেশের উপর বেশ পড়াশোনা করেছে। আমাদের সাহিত্য সংস্কৃতি সম্পর্কে সে জানতে খুবই আগ্রহী। কিন্তু (রবীন্দ্রনাথ ছাড়া) সে বাংলা কোন সাহিত্যই পড়ে নি। আমাকে পেয়ে তার প্রশ্নবাণ শুরু হলো। আমি তাকে বাংলাদেশের ব্লগিংয়ের সাম্প্রতিক অবস্থা সম্পর্কে বললাম। সে খুবই অবাক এবং সাথে সাথে আনন্দিতও হলো যে আমাদের অনলাইন রাইটার্স ফোরাম রয়েছে এবং (সচলায়তনে) নিয়মিত সাহিত্যের উপর ইবুক প্রকাশিত হয়। সে আক্ষেপ প্রকাশ করল যে তাদের সাহিত্য সংক্রান্ত বিচ্ছিন্ন ব্লগ থাকলেও এমন উদ্যোগ তাদের বিশাল ব্লগোস্ফিয়ারে কেউ নেয় নি।
সচলায়তনের বছর পূর্তি উপলক্ষে এর পেছনের সৃহৃদদের অভিনন্দন জানিয়ে বলছি যে আপনাদের কষ্ট বৃথা যায় নি। অবশ্যই বলে বেড়ানোর মতো কিছু অর্জন হয়েছে।
মন্তব্য
রেজওয়ান ভাইকে ধন্যবাদ জানাই।
হাঁটুপানির জলদস্যু
আমিও ধন্যবাদ জানাই।
খুব ভাল লাগলো সব মিলিয়ে।
-----------------------------------
... করি বাংলায় চিৎকার ...
-----------------------------------
বই,আর্ট, নানা কিছু এবং বইদ্বীপ ।
চমৎকার লাগলো পড়ে।
আপনার শেষের দিকের কথাগুলির সাথে সহমত। সচলায়তন আমার ধারণা একমাত্র পরিচ্ছন্ন ব্লগ, যেখানে অন্য ব্লগের গুষ্টি উদ্ধার না করে, সবাই চমৎকার লেখা দেন। এই পরিচ্ছন্নতার জন্য বাড়তি অভিনন্দন সচলায়তনকে।
অলমিতি বিস্তারেণ
অলমিতি বিস্তারেণ
নিজেকে ভালো ছেলে কখনওই মনে করিনি। অতএব বুদাপেস্ট যাওয়াটা এখন আমার জন্যে ফরজ । একবার যেতেই হবে ওই শহরে হজ্ব করতে!
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
মৌমাছির জীবন কি মধুর?
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
টাকা দিয়ে যা কেনা যায় না, তার পেছনেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় কেনু, কেনু, কেনু?
সাধুবাদ।
আহ ঈশ্বর, আমাদের ক্ষোভ কি তোমাকে স্পর্শ করে?
আবার লিখবো হয়তো কোন দিন
অভিনন্দন রেজোয়ান ভাইজান।
..লেখার শেষ কথাটি যেন আমারই মনের কথা।
যতবার তাকে পাই মৃত্যুর শীতল ঢেউ এসে থামে বুকে
আমার জীবন নিয়ে সে থাকে আনন্দ ও স্পর্শের সুখে!
তবে যে শুনেছিলাম সে নাকি কেবল বুড়ো-বুড়িদের দেশ? সকল যুবতী গেছে আম্রিকায় আর যুবকেরাও গেছে তাদের পেছন পিছু পিছু?
---------
অনেক সময় নীরবতা
বলে দেয় অনেক কথা। (সুইস প্রবাদ)
------------
...অনেক সময় নীরবতা
বলে দেয় অনেক কথা...
আহা গো দিদি, দুষ্টু সুমেরু তোমাকে কেবল মিথ্যে প্রবোধ দিয়েছিলো
-------------------------------------
বালক জেনেছে কতোটা পথ গেলে ফেরার পথ নেই,
-ছিলো না কোন কালে;
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
রেজওয়ান ভাইকে জাঝা।
====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির
জাঝা
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
বুদাপেস্টে তাল পাকা গরম কত দিন থাকে। ভাবছি, গেলে গরমেই যাবো।
পড়ে আরাম লাগছে, লগে মহা জিদ। আপনে মিয়া ভাই বলগিঙ কইরা কত দ্যাশ বইদেশে যান। আর আমরা ঢাকায়ই যাইতে পারি না।
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল
------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল
শুভেচ্ছা।
ওয়েবসাইট | ফেসবুক | ইমেইল
দারুন লাগল!
নতুন মন্তব্য করুন