দেশে এসেছি বেশ কদিন হল। দুই বছর পর আসছি বলে কেমন একটা হোম সিকনেস কাজ করছিল। বিমান বন্দর থেকে বের হয়েই কেমন একটি ঘোরের মধ্যে পড়ে গেছি। সেই চেনা ভীড়, সেই মানুষের ঢল। কিন্তু কোথাও যেন কিছু মিলছে না। প্রথমত: ট্রাফিক জ্যাম আগের মত থাকলেও বাতাস অনেক বিশুদ্ধ। কারন শহরের ৭০% গাড়ি এখন গ্যাসে চলে। পেট্রোল পাম্পগুলোর চেহারাই বদলে গেছে! অনেক চেনা স্থাপনাগুলোই এখন গ্যাস পাম্প।
তাই বলে খুশি হবার কিছু নেই। রাস্তার যানবাহন চলাচলে আগের যে কোন সময়ের থেকে বেশী অরাজকতা। কে কার আগে যাবে তার প্রতিযোগীতা চলছে। রাস্তায় নতুন ট্রাফিক লাইট দেখে ভাল লাগল কিন্তু খারাপ লাগল কেউ সেগুলো মানে না বলে। কিছু রাস্তায় রিক্সা উঠিয়ে দেয়া হয়েছে এবং সেখানে উল্টোপথে রিক্সাওয়ালারা দ্রুত চলে যায়। গলির মোড়ে সিকিউরিটি গার্ড (ট্রাফিক পুলিশ মনে হল না) তাদের থামানোর চেষ্টা করে কিন্তু তাদের দেখে মনে হলো যে তারা হাল ছেড়ে দিয়েছে। 'বাঁচলে গাজী' বলে রিক্সাওয়ালারা মোড়ে তেড়ে যায়। ক্রসিংয়ে একটা গাড়ী রিক্সার সাথে লাগতে লাগতেও অ্যাকশন মুভির মত কেমন পাশ কাটিয়ে চলে যায়। রিক্সাযাত্রীর কি অবস্থা হলো দেখার কারো সময় নেই।
আসলে এটিই ব্যাপার সবাই কেমন বেপরোয়া হয়ে গেছে। সবাই বিপদজনকভাবেই বাঁচার চেষ্টা করছে।
এর কারনটি কি মুদ্রাস্ফীতি? দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি? আনুপাতিক হারে আয় না বাড়া? অথবা আমাদের সামাজিক জীবনেও কি পরিবর্তন আসছে? আমরাও কি খুবই আত্মকেন্দ্রিক হয়ে যাচ্ছি?
বাড়ীর পাশের সেই চেনা গলিগুলোকে মেলাতে পারছি না। ছোট দোতলা বাড়ীগুলো হয় ছয়তলা এপার্টমেন্টে রুপান্তরিত হয়ে গেছে নাহলে নির্মীয়মান কংক্রীটের স্তুপ বিশ্রীভাবে মুখ ভেংচে রয়েছে। নি:শ্বাস ফেলার অভাব বড়। পাড়ার কাঠাল গাছ, বড়ই গাছগুলো সব অদৃশ্য। চারিদিকে সব নতুন মুখের ভীড়ে নিজেকেই খুব উড়ে এসে জুড়ে বসা মনে হলো।
যে বন্ধুটির সাথে দিনে একবার দেখা না হলে থাকা যেত না তার সাথে দেখা হল আসার বেশ কয়েকদিন পরে। সবাই ব্যস্ত; জীবিকা, পরিবার, ট্রাফিক জ্যাম নিয়ে। এমন ঢাকাকে আমি আর চিনতে পারিনা। ঢাকা বদলে গেছে।
মন্তব্য
আসলে জায়গা ঠিকই থাকে। কিংবা বদলটা খুব ড্রাস্টিক কিছু না। আমরা বদলে যাই। বদলে যায় আমাদের দেখার চোখ।
====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির
"পাঠকের মৃত্যু" গল্পের মত।
তোমার কথাটার সাথে একমত না। তুমি শুধু বুয়েটে নতুন কদাকার হিউম্যানিটিজ ডিপার্টমেন্টের বিল্ডিংটার কথা চিন্তা করো।
হাঁটুপানির জলদস্যু
সেই সাথে আমি আমন্ত্রন জানাচ্ছি ততোধিক কদাকার, পলাশী বাজারের মোড়ে তড়িৎকৌশল অনুষদের নতুন বিল্ডিং টা দেখার।
অলমিতি বিস্তারেণ
অলমিতি বিস্তারেণ
- মুর্শেদের কথাটাই আসলে সঠিক।
স্থান বদলায় না। বদলায় কেবল আমাদের অবস্থান।
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
বাংলাদেশে যাইনি অনেক বছর হয়ে গেল। এবার গেলে হয়তো আপনার মতই অনেক পরিবর্তন চোখে পড়বে। নতুবা আমিই আমার নিজেরই অবস্থান পরিবর্তিত হয়ে গেছে।
-----------------------------------
--------------------------------------------------------
আমরা যারা ঢাকায় থাকি তারা কিন্তু প্রতিদিন এই শহরটাকে একটু একটু করে মরে যেতে দেখছি। এই মরে যাওয়ার মানে এই না যে লোক-জন ঢাকা ছেড়ে চলে যাচ্ছে। মরে যাওয়ার মানে হচ্ছে এই যে শহরটা প্রতিদিন আরো একটু করে বসবাসের অযোগ্য হয়ে যাচ্ছে। নাগরিক জীবনে অত্যাবশকীয় ব্যবস্থাগুলো সব জায়গায় জোড়াতালি দিয়ে চলছে। শহরের বিরাট অংশ মানুষ আবার সেইটুকু থেকেও বঞ্চিত। সকাল সাতটায় বাসা থেকে বের হয়ে বাচ্চাকে স্কুলে দিয়ে অফিস পৌঁছুতে প্রায় সাড়ে নয়টা বাজে। সন্ধ্যা ছয়টায় অফিস থেকে বের হলে বাসায় পৌঁছুতে রাত আটটা বেজে যায়। অথচ আমার বাসা-বাচ্চার স্কুল-আমার অফিস খুব বেশি দূরে নয়। এই আধমরা শহর প্রতিদিন আমার চার-সাড়ে চার ঘন্টা খেয়ে ফেলে আমাকে প্রতিদিন মেরে ফেলছে। আমার মত মৃত আরো নয়-দশ মিলিয়ন "এই শহরের মানুষ" বা তাদের চোখ কী বদলে যাচ্ছে? ঠিক বলতে পারবো না। আমার কাছে তো এদের চোখ মরা মাছের চোখের মত নিষ্প্রভ মনে হয়। এদের নিয়ে গড়া সামাজিক পরিবেশটাও পঁচে যাওয়া আত্মার উৎকট গন্ধে ভরপুর। আর জায়গা! সে কী বদলায় না? পুরনো বাড়ি-ঘর-প্রতিষ্ঠান ভেঙে গড়ে ওঠা রুচিহীন চেহারার বাণিজ্যিক ভবনগুলো, আঁকা-বাঁকা হয়ে যাওয়া রাস্তাগুলো, কংক্রিটের নীচে চাপা পড়া গাছ, বাগান, পুকুর আর খেলার মাঠগুলো এরা কী জায়গাকে বদলে দেয় না? জানি না। হয়তো একটা সুনামি ধরণের কিছু হলেই কেবল জায়গার পুরোপুরি বদলানো হয়।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
রেজওয়ান ভাই, আপনি এতদিন পরে এসে এই পরিবর্তন দেখে ক্লান্ত... আর আমি ধীরে ধীরে এই পরিবর্তন ঘটতে দেখে হতাশ, মনক্ষুণ্ণ, বলা যায় মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। সবাই কেমন যেন হিংস্র, খ্যাপাটে আর স্বার্থপর হয়ে উঠছে। মায়াকানন বলে একটা জায়গায় আমি জীবনের তিরিশটি বছর কাটিয়েছি। সেই পাড়ায় থাকতেন মুখ ও মুখোশের পরিচালক জব্বার খান, শেখ নিয়ামত আলী, কৌতুকাভিনেতা সাইফুদ্দিন, লেখক মাহবুব তালুকদার। আমি জানি না, অন্য এলাকায় মানুষ কেমন ছিল... আমাদের পাড়াটা ছিল সত্যি সত্যি মায়াভরা এক কাননের মতোই। বিশাল এক মাঠে খেলতাম আমরা, সেই মাঠটা আর তার পাশের বাসাগুলোর কথা আমার আবার মনে পড়েছিল বুদ্ধদেব বসুর পুরানা পল্টন পড়ে। পূর্বাচল পরিষদ নামের স্থানীয় ক্লাবটির আয়োজনে একের পর এক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান লেগেই থাকত প্রতি শুক্রবারে! সেখানে আসত এলকার প্রত্যেকটি পরিবার। কোন পরিবারে কে গান গায়, কে নাচে, কে ছাত্র ভালো, সব জানতাম হাতের মুঠোয় ভরা দাগের মতো। একটা গোষ্ঠীগত চেতনা কাজ করত সবার মধ্যে।
আর এখন... বিয়ের পর ঐ এলাকা ছেড়েছি। আর যেতে ইচ্ছে করে না। খালি ইমারত আর ইমারত। ফ্ল্যাট বিক্রির বিজ্ঞাপন। ভাঙ্গা রাস্তা। পাশে ড্রেন। ময়লা তুলে রাখা। মাঠ নেই। গাছ নেই। অচেনা মানুষ। বাজারে চেহারা।
এই পরিবর্তন আমি নিতে পারি না। সম্ভব হয় না আমার পক্ষে।
জনসংখ্যা বেড়ে ওঠা, বাজারে মূল্যবৃদ্ধি, বাসস্থান সঙ্কট... এরকম অনেক সমস্যার কারণেই এগুলো ঘটেছে এবং ঘটতে থাকবে। এই কথাই বলবেন সবাই, জানি।
কিন্তু আমার কাছে মনে হয়, আরো কী একটা যেন হারিয়ে গেছে, কী যেন। কারো চোখের দিকে তাকিয়েই আমি সেই পুরোনো গভীরতা খুঁজে পাই না আর। সবাই কেমন যেন পাতলা দুধের মতো ফ্যাকাশে সব মানুষ...
---------------------------------------------
রাজাকার আলবদর নিপাত যাক!
জয় বাংলা আমার থাক!
--------------------------------------------------------------------------------------------
বললুম, 'আমার মনের সব কপাট খোলা ভোজরাজজী। আমি হাঁচি-টিকটিকি-ভূত-প্রেত-দত্যি-দানো-বেদবেদান্ত-আইনস্টাইন-ফাইনস্টাইন সব মানি!'
আমি ঢাকায় জন্মাইনি, কিংবা খুব বেশি লম্বা সময়ের জন্যেও থাকি নি। সর্বোচ্চ এক বছর টানা থেকেছিলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার জন্যে। সেটাও দীর্ঘায়িত হয় নি। ছেড়ে আসতে হয়েছে দেশ। কিন্তু ঢাকা হয়েই যেতে হয় নিজের মফস্বলে, ঢাকাতেই যেতে হয় সব প্রয়োজনে। মাত্র দুই সপ্তাহ আগে দেশ থেকে আসা আমিও ভেবেছি, এই অদ্ভূত নগরের মানুষ হয়ে গেছে আরো বেশি স্বার্থপর, নাগরিক একটা মানুষ থেকে আরেকটা মানুষের দূরত্ব যেনো কয়েক আলোকবর্ষ।
আমার শৈশব কেটেছে ঢাকার বাইরে।
এরপরও ঢাকা আমার প্রিয় শহর, প্রাণের শহর, স্মৃতির শহর।
আমারো শৈশব ঢাকার বাইরে হলেও, কলেজ থেকে একটানা ঢাকায় আছি । ঢাকা শহরে অনেক স্নৃতি জমে গেছে গত সাত আট বছরে । ঢাকা যতই মরা-পচা-নোংরা হোক, আমারো খুব প্রিয় শহর ।
অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...
অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...
ঢাকার প্রতি কোন আলাদা অনুভূতি টের পাই না। চার বছর আগে অনেক দূরের মাঠ দেখা যেত আমার বারান্দা থেকে। এখন কিছু আশটে রংয়ের দালান ছাড়া কিছু দেখি না। তাতে কোন অস্বাভাবিকতাও চোখে পড়ে না।
হোম সিকনেস অনূভব করি চট্টগ্রামের জন্য। পুরোনো এলাকায় নতুন গজানো বিল্ডিংটা দেখেও বিরক্ত লাগে, অচেনা মনে হয় সবকিছু। দুবছর হলো যাই না। শেষবার যখন যাই বাইরে বেরোতে খুব অস্বস্তি লাগছিলো।
পাড়ার কাঠাল গাছ, বড়ই গাছগুলো সব অদৃশ্য। চারিদিকে সব নতুন মুখের ভীড়ে নিজেকেই খুব উড়ে এসে জুড়ে বসা মনে হলো।
...আমরা যারা নিয়মিত বাস করছি এই শহরে তাদেরও বোধ হয় এরকম মনে হয় মাঝে মাঝে!
যতবার তাকে পাই মৃত্যুর শীতল ঢেউ এসে থামে বুকে
আমার জীবন নিয়ে সে থাকে আনন্দ ও স্পর্শের সুখে!
এতো কিছুর মাঝেও দেশে ভালো সময় কাটুক আপনার, এই কামনাই করছি।
**********************************
কৌনিক দুরত্ব মাপে পৌরাণিক ঘোড়া!
**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব
সেই ১৯৮১ সালে আব্বা বদলি হয়ে ঢাকায় এল। তারপর থেকে ভাসমানের মত ভাড়াটিয়া হিসেবে কাটাচ্ছি। কখনোই প্রিয় হতে পারলোনা এই শহরটা।
________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।
________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।
জীবনের পরতে পরতে মিশে যাওয়া এই প্রিয় শহরটা ... বেড়ে ওঠার পুরোটা সময় জুড়ে .. ঢাকা আমার সবচাইতে প্রিয় শহর... কি আছে আর কি নেই জানি না.. ঢাকার বাইরে থেকে ফেরার পর শহরে প্রবেশের সময় টের পাই নিজের জায়গায় ফিরছি... .. কিরম যেন একটা ভালোলাগা
মরে গেলে ঝরে যায় আর বেচে থাকলে বদলায় এই হল মানুষের রীতি
তানবীরা
---------------------------------------------------------
চাই না কিছুই কিন্তু পেলে ভালো লাগে
*******************************************
পদে পদে ভুলভ্রান্তি অথচ জীবন তারচেয়ে বড় ঢের ঢের বড়
apnader lekhagulo porte bhalo laglo. 1970's er dhakar shathe 2009 dhakar mil khuje paini amar shesh dhaka visit er shomoy. Tar por gelam grame almost 30 years pore, takeo mone holo onek change. ekhono eto basor ei US theke apon korte parlam na. nijeke jajabar bale mone hocche.
নতুন মন্তব্য করুন