মানুষের এই ছোট জীবনে শারীরিক সমস্যার অন্ত নেই। আমাদের বেশীরভাগই নিজস্বতা ছাপিয়ে অন্য কেউ হতে চাই, কোন রোল মডেলের মত। আমাদের কারও হয়ত রঙ ময়লা, কেউ খাটো (ছেলে হলে) বা কেউ লম্বা (মেয়ে হলে)। কারও নাক বোঁচা, কারও দাত উঁচু, কারও মাথায় টাক। কারও গলার স্বর চিকন, কারও মোটা। কেউ তালপাতার সেপাই আবার কেউ হাতির মত। কারও মুখে ব্রণের দাগ, কারও ত্বক তেলতেলে।
খেয়াল করে দেখেছেন? উপরের প্রত্যেকটি সমস্যাগুলো সমাধানে বাণিজ্যিক পণ্য পাওয়া যাবে। এক গায়ের রঙ ফর্সা করার পণ্যেরই তো বিশ্বব্যাপী বিলিয়ন ডলার ইন্ডাস্ট্রী। মানুষ নিজের খুঁতগুলোকে ঢাকার জন্যে অঢেল টাকা খরচ করতে রাজি। কারণ একজনের সমস্ত পৃথিবী আবর্তিত হয় তার নিজের স্বত্বা, তার চাওয়া পাওয়াকে কেন্দ্র করেই।
বিশ্বের নানা দেশে বিবিধ বাণিজ্যের প্রসার হয়েছে মানুষের এইসব চাহিদা মেটাতে। ভোগবাদের মূলমন্ত্র যে জিনিষ কেনার সাথে ব্যক্তিগত সন্তুষ্টি তা এসব পণ্যে বিদ্যমান। এই সমস্ত পণ্য প্রলোভন দেখানো বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে বিক্রি হয় (হোক দেশটি বাংলাদেশ, ভারত অথবা ইন্দোনেশিয়া)। মেয়ের রঙ ময়লা বলে সে চাকরি পাচ্ছে না, অথচ সংসারের আয় দরকার। বাবা তাকে ত্বক উজ্জ্বল করার ক্রিম কিনে দেয় আর সে এয়ার হোস্টেসের চাকুরি পায়, সংসার চালায় - কি সংবেদনশীল আবেগ। আরেক বিজ্ঞাপনে এক ছোট অভিনেতা ত্বক সাদা করার ক্রিম মেখে শ্যুটিংয়ের সময় নামকরা পরিচালকের নজরে পড়ে যায় ও নায়কের অভিনয়ের প্রস্তাব পায়। এইসব প্রচার ও আবেগের মাধ্যমে আমাদের সমাজের বর্ণবাদী মনোভাব আরও প্রতিষ্ঠা পায়।
শুধু এই নয়, ধর্মীয় অনুভূতিকে পুঁজি করেও অনেক পণ্য এসে গেছে বাজারে। ইসলামী ব্যান্কিং ব্যান্ক পরিমন্ডলে ভাল ব্যবসা করছে। নানা স্ন্যাক্সের সাথে হালাল শব্দটি জুড়ে দিলে বেশী বিক্রি হয়। শুদ্ধ ভেজিটারিয়ান পণ্যের কাটতি অনেক দেশেই। হিজাব পড়া বার্বি ডল বা ইসলামি সাতারের পোশাক জাতীয় পণ্য এখন হালের ফ্যাশন।
আর এসব পণ্য তৈরি ও বাণিজ্যে সেরা দেশ হচ্ছে চীনদেশ। আমাদের দেশে জিন্জিরায় ও তাদের মতই নানা পণ্য তৈরি হয় (পড়ুন নকল হয়) এবং সবচেয়ে ভাল দিক হচ্ছে তাদের পণ্য মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে থাকে।
চীন দেশে বিএমডাব্লিউ এক্স ফাইভ জীপটির ডিজাইনে গাড়ি বিক্রি হয় চাইনিজ ব্র্যান্ড সহকারে। তবে শোরুমের বাইরেই বিএমডাব্লিউর লোগোটি পাওয়া যায় যা লাগিয়ে নিলে আপনার স্বপ্ন পূরণ হয়ে যাবে।
কৃত্রিম সতীচ্ছদ কিট - ছবির জন্যে কৃতজ্ঞতা এনওয়াই ডেইলি নিউজ
তাদের উদ্ভাবনী শক্তিরও তারিফ করতে হয়। এক চাইনিজ কোম্পানি বের করেছে আর্টিফিসিয়াল ভার্জিনিটি হাইমেন কিট (কৃত্রিম সতীচ্ছদ কিট) এবং মাত্র ৩০ ডলারে মেয়েদের হাতের কাছে পৌঁছে যাচ্ছে এমন এক কবচ যা তাদের রক্ষা করবে সেই সব বিকারগ্রস্ত ছেলেদের কাছ থেকে যাদের বিবাহিত বধু হিসেবে শুধুমাত্র সতী মেয়েদেরই চায়। অবশ্য বিকারগ্রস্ত বলি কেন - এটি তো এখনও মধ্যপ্রাচ্যের অনেক দেশেরই প্রথা - সাদা চাদরে রক্তে মেয়েদের স্বাক্ষর রেখে সতীত্বের প্রমাণ দিতে হয়। খেলাধুলা বা অন্য কারনে সতীচ্ছদ ছেঁড়ার কারণে যেসব মেয়েদের বিবাহিত জীবন/বিবাহ হুমকির মুখে তাদের জন্যে এই পণ্যটি জীবন রক্ষাকারীই বটে। তবে মেয়েদের সে স্বাধীনতা তো দেবে না সমাজ। মিশরের মুসলিম ব্রাদারহুড (সংসদের ২০% আসন যাদের) আন্দোলন করছে এই ভার্জিনিটি কিট নিষিদ্ধ করার জন্যে। এটির বিক্রেতাদের উপর ফতোয়া জারী হয়ে গেছে।
আমি শুরু করেছিলাম মানুষের শারীরিক সমস্যা গুলো দিয়ে। কিন্তু আপাত দৃষ্টিতে দেখা যাচ্ছে যে এগুলোর অনেকগুলোই মানসিক সমস্যা যা আমাদের সমাজ লালন পালন করে থাকে। আমরাও এর বাইরে নই তাই আমরা ধরতে পারি না, সব স্বাভাবিক লাগে।
সেদিন এক ভারতীয় টিভি চ্যানেলে দেখলাম কাঁচ দিয়ে তৈরি চোখের আদলে লকেটের এক রক্ষা কবচ বের হয়েছে যা ইন্টারনেটে অর্ডার করা যাবে। আমাদের সফলতার দিকে যারা কুদৃষ্টি দেয় সেগুলো থেকে রক্ষা করবে এই কাঁচের চোখের রক্ষাকবচ। গ্রাফিক্সের মাধ্যমে মানুষের চোখ থেকে ঠিকরানো লাল কুদৃষ্টি কিভাবে ঠেকিয়ে দিচ্ছে কবচটি তা দেখানো হল। নিশ্চয়ই এর কাটতিও প্রচুর কারণ এই কুসংস্কারে ধর্ম-বর্ণ ভেদে অনেকেই বিশ্বাসী।
আমাদের এই সব মানসিক সমস্যাগুলো সমাধানে ভার্জিনিটি কিট বা কুদৃষ্টি থেকে রক্ষার মত জিন্জিরার কোন একটি পণ্যের প্রতীক্ষায় আছি।
মন্তব্য
সুন্দর বলেছেন। আসলেই এমন একটি পণ্য দরকার।
---------------------
আমার ফ্লিকার
দুর্দান্ত একটা লেখা।... বিশেষ করে লিঙ্কগুলো খুব অবাক করেছে।
.
---------------------------------------------------------------------------
মধ্যরাতের কী-বোর্ড চালক
সঠিক
_________________
ঝাউবনে লুকোনো যায় না
আপনার ফেসবুকে শেয়ার করা লিঙ্ক থেকেই আজকে দেখেছিলাম এই খবর। মানুষের চিন্তা এবং সামর্থ্যের অভিনবত্বে মুগ্ধ !
অলমিতি বিস্তারেণ
অলমিতি বিস্তারেণ
সচেতনতা বাড়ানও কিন্তু এর বিরুদ্ধে একটা ভাল অস্ত্র। মিশরী্য় পুরুষেরা যদি জানেন কি কি কারণে হাইমেন ছিড়তে পারে, তাহলেই ঝামেলা মিটে যায়। বাংলালিংকে কর্মরত বন্ধুর সুবাদে, তাদের মিশরীয় বসদের কীর্তিকলাপ সম্পর্কে কিঞ্চিত ধারণা রয়েছে। মিশরীয় পুরুষদের জন্য কি এমন কোন সতীত্বের পরীক্ষা রয়েছে?
দারুণ লেখা, বিষয় যেমন, তেমন ঝরঝরে স্টাইল, এবং দরকারি তথ্যে সমৃদ্ধ। খুব ভালো লাগলো পড়ে।
ভালো লাগলো লেখাটা, যদিও একইসাথে হতাশও হলাম খুব ......
বড়োই ক্লান্তিকর এইসব ......
আমার আশেপাশের অনেক মানুষই আছেন যারা 'নজর লাগা'তে বিশ্বাস করেন।
নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)
নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)
ভালো লাগলো লেখা।
"সাদা চাদরে রক্তে মেয়েদের স্বাক্ষর রেখে সতীত্বের প্রমাণ দিতে হয়।"-
পরিচিত একজনের কাছেই শুনেছিলাম এজাতীয় একটি ঘটনায় এক মেয়ের অপবাদ নিয়ে শ্বশুরবাড়ি থেকে বিতাড়িত হওয়ার কাহিনী।
মাত্র একটি শুনেছি আর ঘটছেতো প্রতিনিয়ত.....
উফ্ !! কি ক্লান্তিকর, কি প্রচন্ড হতাশাজনক ব্যাপার!
আর 'নজর লাগা'? সেটাতো শোনা যায় অহরহ। এই মানসিকতার পরিবর্তন কবে হবে কে জানে?
লেখা আর লিংকগুলোর জন্য ধন্যবাদ।
খুবই সমসাময়ীক বিষয়, যার সংস্কার জরুরী । সমাজের বহু বিষয় আমরা মেনে নেই ।
নির্ভানা
ভালো লাগলো রেজোয়ান ভাই।
ধন্যবাদ, অনেক অজানা তথ্য জানলাম।
প্রিয়তে রাখলাম ।
নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)
নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)
নতুন মন্তব্য করুন