বেশ কয়েক মাস হয়ে গেল জাকার্তা শহরে। ইন্দোনেশিয়াকে একটু একটু করে ভাল লাগতে শুরু করেছে। কারণ দেশটির মূল সৌন্দর্য রাজধানীর বাইরে এবং ইতিমধ্যে জাকার্তার আশে পাশে বেশ কয়েকটি সুন্দর জায়গায় যাওয়া হয়েছে। সেইসব সম্পর্কে লেখা ও ছবি পরবর্তী পর্বের জন্যে তোলা রইল। আজ আরেকটি বিষয় নিয়ে লিখছি।
আগেই বলেছিলাম যে জাকার্তার সাথে বাংলাদেশের অনেক মিল। তবে ইন্দোনেশিয়ার অর্থনৈতিক অবস্থা বাংলাদেশ থেকে অনেক ভাল। এর একটি নমুনা হচ্ছে এ দেশে প্রচুর গাড়ি এবং মটর সাইকেল আর তাদের অধিকাংশই নিজেদের দেশে সংযোজন করা। ২০০৮ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী জাকার্তা শহরে (ঢাকা শহরের দ্বিগুণ আয়তন) প্রায় ৯৫ লাখ নিবন্ধিত যানবাহন আছে যার মধ্যে ২০ লাখ গাড়ি এবং ৬৬ লাখ মটর সাইকেল। শহরটিতে যানজটের কারণ হচ্ছে যানবাহনের সংখ্যা প্রতি বছর ১০% করে বাড়ছে এবং মাত্র ২% লোক পাবলিক ট্রান্সপোর্ট ব্যবহার করে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে যে এত গাড়ি কেনার সামর্থ আছে কি না লোকের।
এখানে সরকারী গাড়ি আছে অনেক। সরকারের ছোট পদের কর্মচারীরাও গাড়ি/মটরসাইকেল পায়। বাংলাদেশের সাথে ইন্দোনেশিয়ার মূল পার্থক্য এটিই, সরকারের প্রচুর অর্থ আছে খরচ করার মত।
রাষ্ট্রপতি সুহার্তোর ৩০ বছরের সরকারের সাফল্য হচ্ছে পার ক্যাপিটা জিডিপির প্রভূত উন্নতি। ১৯৬৬ সালে জেনারেল সুহার্তোর ক্ষমতা নেবার সময় ইন্দোনেশিয়ার জনপ্রতি জিডিপি ছিল ৭০ ডলার যা ১৯৯৬ সালে বেড়ে ১০০০ ডলার হয় (বর্তমানে তা বেড়ে ৩৯০০ ডলার হয়েছে, বাংলাদেশের ১৫০০ ডলার)। এই ত্রিশ বছরের সাফল্যের মূলে রয়েছে দেশের প্রাকৃতিক সম্পদ বিশেষ করে তেল ও গ্যাস রপ্তানি। ১৯৭৩ সালের দিকে যখন তেলের মূল্য বৃদ্ধি পায় তখন জিডিপি বেড়েছে বছরে ৫৪৫% করে প্রতি বছর। এই উদ্বৃত্ত টাকা দিয়ে প্রচুর দুর্নীতির মধ্যেও সরকার অর্জন করতে পেরেছে কিছু সাফল্য - যেমন চাল উৎপাদনে স্বয়ং সম্পূর্ণ হয়েছে ১৯৮০র দশকে। সব নাগরিকের জন্যে প্রাইমারী লেভেলে শিক্ষার ব্যবস্থা করা এবং সফল পরিবার পরিকল্পনা আন্দোলন। প্রচুর বিদেশী কোম্পানী এদেশে আসে উৎপাদনের ফ্যাক্টরি বসানোর জন্যে। তবে তবুও সুহার্তোর শাসনের শেষের দিকে প্রায় ৮০% ইন্দোনেশিয়ান প্রতিদিন প্রায় ১ ডলারের কিছু বেশী আয় করত। অর্থাৎ এই বিপুল অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ধনীদের আরও ধনী করেছে আর গরীবরা গরীবই থেকেছে। সুহার্তো পরিবারের সম্পত্তি ১৫ বিলিয়ন ডলার এবং সে বিশ্বের অন্যতম দুর্নীতিগ্রস্ত নেতা।
তেল এবং গ্যাস (দৈনিক দশ লাখ ব্যারেল উত্তোলন) ছাড়াও ইন্দোনেশিয়ার রফতানির তালিকায় রয়েছে তৈরি খনিজ, ইলেকট্রনিক্স, পোষাক, রাবার, প্লাইউড ইত্যাদি। আর তাদের রয়েছে গ্রাসবার্গ স্বর্ণখনির আয়।
বিশ্বের সর্ববৃহৎ স্বর্ণখনি এবং তৃতীয় সর্ববৃহৎ তামার খনি গ্রাসবার্গ ইন্দোনেশিয়ার পাপুয়া দ্বীপে অবস্থিত। এর বেশীর ভাগ শেয়ার রয়েছে আমেরিকার ফ্রিপোর্ট ম্যাকমোরানের (৬৭%) এবং বাকিটুকু ইন্দোনেশিয়ার সরকারের। এই মাইনে কাজ করে প্রায় বিশ হাজার লোক। বছরে এটি প্রায় ৫৮,৫০০ কিলোগ্রাম স্বর্ণ, ১৭৫,০০০ কেজি রুপা এবং ৬ লাখ টন তামা উৎপন্ন করে। এই খনি নিয়ে রয়েছে এক বিরাট ইতিহাস।
১৯৪৯ সালে ইন্দোনেশিয়া নেদারল্যান্ডস এর কাছ থেকে স্বাধীন হবার পরেও পাপুয়া দ্বীপটি (ইরিন জায়া/ পশ্চিম নিউ গিনি) ছিল মূলত: ডাচদের দখলে (কিছু অংশে জার্মান মালিকানা ছিল)। ১৯৬০ সালে ফ্রিপোর্টের একদল সার্ভেয়ার খনিটির সন্ধান পান ১৯৩৬ সালের ডাচ একটি রিপোর্টের সূত্র ধরে। ১৯৬১ সালে জাতিসংঘের মাধ্যমে পশ্চিম পাপুয়া দখল করতে ব্যর্থ হয়ে সামরিক অভিযান চালায় সুকর্ন সরকার। পরবর্তীতে আমেরিকার মধ্যস্ততায় জাতিসংঘ ইন্দোনেশিয়াকে শর্ত দেয় যে ১৯৬৯ সালের মধ্যে তাকে একটি গনভোটের আয়োজন করতে হবে পাপুয়ার জনগণের মতামত জানার জন্যে এবং তারপরে তারা পশ্চিম পাপুয়াকে সংযুক্ত করতে পারবে।
সুহার্তো ১৯৬৬ সালের একটি ব্যর্থ সামরিক অভ্যুত্থানের জের ধরে ক্ষমতায় আসেন (যার ফলশ্রতিতে প্রায় ৫ লাখ কমিউনিষ্টকে মারা হয়) । সুহার্তো অর্থনীতিকে মুক্ত করে দেন এবং বিদেশী কোম্পানীকে বিনিয়োগের লাইসেন্স দেন (বলা হয় ঘুষের বিনিময়ে)। ১৯৬৭ সালে প্রথম কোম্পানী হিসেবে কন্ট্রাক্টটি পায় আমেরিকার ফ্রিপোর্ট সালফার - পাপুয়ায় স্বর্ণ ও তামা খনি প্রতিষ্ঠার জন্যে। কিন্তু তখনও খনিটি যেখানে অবস্থিত সেই পশ্চিম পাপুয়া স্বীকৃতভাবে ইন্দোনেশিয়ার করায়ত্ব ছিল না।
আমেরিকার অবমুক্ত সিকিউরিটি ফাইল অনুযায়ী ইন্দোনেশিয়ায় আমেরিকান রাষ্ট্রদুত ১৯৬৮ সালে একটি তারবার্তা পাঠায় যে দুর্নীতি এবং অন্যান্য অভিযোগের কারণে ইন্দোনেশিয়া সরকারের ভাবমূর্তি খারাপ - তাই তারা নির্বাচনে জিততে পারবে না। কমিউনিষ্টদের নিধনের কারনে ইন্দোনেশিয়া তখন আবার আমেরিকার গুড বুকে।
১৯৬৯ সালের জুন মাসে কিসিন্জার ও নিক্সন ইন্দোনেশিয়া সফর করেন যখন পাপুয়ার অ্যাক্ট অফ চয়েস ভোটাভুটি চলছিল। কিন্তু একজন এক ভোটের নীতি পাল্টিয়ে ৮ লাখ ভোটারের যায়গায় মাত্র ১০০০ আদিবাসী নেতাদের দিয়ে প্রহসনের ভোটটি ঘটায় ইন্দোনেশিয়ার সরকার। ওদিকে কিসিন্জার সুহার্তোকে বাহবা দিচ্ছিলেন 'মডার্ন মিলিটারি ম্যান বলে'। আমেরিকার সমর্থন থাকায় এই ভোট স্বীকৃতি পায় ও পশ্চিম পাপুয়া ইন্দোনেশিয়ার হয়।
১৯৭২ সাল থেকে এর্টসবার্গ মাইন থেকে উত্তোলন শুরু করে ফ্রিপোর্ট। ১৯৮৮ সালে এই মাইনটি খালি হয়ে গেলে ৩ কিলোমিটার দুরে (৪০ বিলিয়ন ডলারে রিজার্ভের) গ্রাসবার্গ মাইন থেকে উত্তোলন শুরু করে। ২০০৫ সালে নিউইয়র্ক টাইমস রিপোর্ট করে যে ফ্রিপোর্ট ফ্রি পাপুয়া মুভমেন্টের আক্রমণ থেকে খনিকে বাঁচার জন্যে ইন্দোনেশিয়ার সেনাবাহিনীর সেবা (?) নেয় এবং ১৯৯৮ -২০০৪ সালে কোম্পানির খাতায় এই খাতে প্রায় ২০ মিলিয়ন ডলার খরচ দেখানো আছে (সামরিক বাহিনীর কোন কোন কর্মকর্তা ১৫০,০০০ ডলার পর্যন্ত পেয়েছে। দেশের আইন অনুযায়ী বিদেশী কোম্পানী থেকে সামরিক সদস্যের অর্থগ্রহণ দন্ডনীয় অপরাধ।
এই মাইনের বিক্রির অংশ ছাড়াও এর শুল্ক ইন্দোনেশিয়ার সরকারের এই খাতে সর্বোচ্চ রাজস্ব আয়।
পশ্চিম পাপুয়া দ্বীপের ধন সম্পদ নষ্ট করে আয় করার আরেকটি উদাহরণ হচ্ছে ২০০৮ সালের সামার অলিম্পিক্সের জন্যে চীন ১ বিলিয়ন ডলারের কাঠের অর্ডার দেয় ইন্দোনেশিয়ার সরকারকে যা এই দ্বীপের ব্যাপক অংশের বন উজাড় করে মেটানো হয়।
আমি খালি চিন্তা করছি আমাদের দেশের যদি এরকম প্রাকৃতিক সম্পদ আর এত আয় থাকত তাহলে দেশটি কোথায় যেত। অবশ্য ইন্দোনেশিয়ার মত হয়ত কিছু লোকের কাছেই সব ধন যেত আর অধিকাংশ লোকেরই ভাগ্য পরিবর্তন হত না। কত বিচিত্র এই বিশ্ব।
(ছবি নাসার সৌজন্যে)
কৈফিয়ত:
পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্যে ব্লগ থেকে দুরে ছিলাম বেশ কিছুদিন। মাঝে মাঝে পড়া হলেও লেখায় হাত দেয়া হয় নি। লিখতে বসব বলে ভেবেছি বেশ কয়েকদিন। কিন্তু সমস্যা হল কম্পিউটারে বসেই ফেসবুক/মেসেন্জার খোলা হয় এবং সাথে সাথেই মনোযোগ অন্যদিকে আকর্ষিত হয়। বেশ কয়েকটি লিন্কের লেখা পড়ে, গুটিকয়েক মন্তব্য করে দেখা গেল কি লিখতে বসেছি তাই ভুলে গেছি। সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং হচ্ছে মানুষের চিত্তবিক্ষেপের সবচেয়ে বড় কারণ।
মন্তব্য
আমারা কি আদৌ কোনদিন উন্নতি করতে পারবো? বিশেষ করে মানুষের মধ্যে পরিবর্তন না আসলে কিংবা রাজনীতিবিদরা সেভাবে জনগণকে উদ্বুদ্ধ করতে না পারলে?
আপনার পোস্টটা পড়ে আমার এই প্রশ্নটুকুই মনে আসলো।
প্রবন্ধের খরায় এক চিলতে জল। ভাল লাগলো পড়তে। পরের পর্বের অপেক্ষায়।
ভাল লাগল। চলুক...।
ইন্দোনেশিয়া হচ্ছে এমন একটা দেশ যেখানে প্রকৃতি তার সম্পদ উজার করে ঢেলে দিয়েছে। দরকারী হেন খনিজ সম্পদ নেই যা এই দেশটার নেই। বনজ সম্পদ আর সামূদ্রিক সম্পদ তো মোটামুটি অফুরন্ত পর্যায়ের। এক কালিমন্থন দ্বীপের সম্পদ, আয়তনের কথা ভাবলেই তো মাথা ঘোরে। এত সম্পদ পেয়ে দেশটা হয়েছে ধনী বাবার বখা ছেলের মত, যে পৈত্রিক সম্পত্তি কেবল বেচে খায় - কোন কিছু নিজে উপার্জন করেনা, নিজের অবস্থার উন্নতিও ঘটাতে পারেনা। ঔপনিবেশিক যুগ বলুন আর স্বাধীন ইন্দোনেশিয়া বলুন, সব আমলেই বিদেশীদের কাছে গাঁঠরী ভরে দেশের সম্পদ বেচা চলেছে ও চলবে। ফলে স্বাভাবিকভাবে দুর্নীতি আর অনৈতিকতা দেশটার রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঢুকেছে। যথানিয়মে সেনাবাহিনী এখানে গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর। ইন্দোনেশিয়ায় গণতন্ত্রের চর্চা নিয়ে যত কম বলা যায় ততই ভাল। এই দেশের আয় বাড়া মানে শিল্পে উন্নতি এমনটা কমই বোঝায়, বরং আরো বেশি প্রাকৃতিক সম্পদ প্রসেস না করে বা ভ্যালু অ্যাড না করে বিদেশে বিক্রী করা বোঝায়। ইন্দোনেশিয়ার সবচে' অসহ্য ব্যাপার হচ্ছে এর সাম্রাজ্যবাদী নীতি। আসিয়ান দেশগুলোর মধ্যে ইন্দোনেশিয়ার অবস্থা সবদিক দিয়ে সবচে' খারাপ। অথচ এরা যুগে যুগে প্রতিবেশীর ভূমি/দ্বীপ দখল করার চেষ্টা করেছে। অনেকগুলোকে তো গ্রাসই করে ফেলেছে।
সার্বিক বিবেচনায় আমি বাংলাদেশকেই সবদিক দিয়েই এগিয়ে রাখবো ইন্দোনেশিয়ার চেয়ে, এমন কি একে নিয়ে আশা করার ক্ষেত্রেও।
পোস্টের জন্য ধন্যবাদ। ইন্দোনেশিয়া নিয়ে আরো পড়তে চাই।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
কিছু জিনিস যোগ করি ।
নীড়পাতা.কম ব্লগকুঠি
সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং হচ্ছে মানুষের চিত্তবিক্ষেপের সবচেয়ে বড় কারণ।
পড়তে ভালো লাগলো।
*******************************************
পদে পদে ভুলভ্রান্তি অথচ জীবন তারচেয়ে বড় ঢের ঢের বড়
*******************************************
পদে পদে ভুলভ্রান্তি অথচ জীবন তারচেয়ে বড় ঢের ঢের বড়
রেজওয়ান ভাইয়ের সাথে ২-১টা বিষয় একটু যোগ করিঃ
ইন্দোনেশিয়ার একটা অলিখিত নিয়ম আছে; একটা বিদেশী গাড়ির মালিকানা আপনি তখনই পাবেন যখন আপনার অন্ততপক্ষে একটা ইন্ন্দোনেশিয়ান টয়োটা কিজাং গাড়ি থাকবে। নাম ভূলে গেছি, ইন্দোনেশিয়ার একটা ছোট্ট দ্বীপ আছে যেখানে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থার মধ্যে দিয়ে মার্সিডিসের লেটেষ্ট স্পোর্টস কারগুলো তৈরী হয়।
হাসিব ভাই লিখেছেনঃ
প্রথম বাক্যের সাথে একমত। তবে আচেহ প্রদেশের ইতিহাস ইন্দোনেশিয়ার ইতিহাস থেকে একটু ভিন্নভাবে দেখতে হয়। ওলন্দাজ এবং জাপানিজ উপনিবেশকালীন সময়েও আচেহ সবসময়েই স্বাধীন ছিলো। সুতরাং বলা যায়, আচেহ কখোনোই পরাধীন ছিলো না। এবং ইন্দোনেশিয়ার স্বাধীনতায় আচেহর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে। সুলতান ইসকান্দার মুডার সহায়তা ছাড়া ইন্দোনেশিয়া এত সহজে স্বাধীনতা পেতো না। কিন্তু স্বাধীন আচেহ যখন সদ্যস্বাধীন ইন্দোনেশিয়ার সাথে যোগ দেয়, তখন তাকে প্রাদেশিক স্বায়ত্বশাসন দেওয়ার পরিবর্তে সুকর্ণ পুরষ্কৃত করেন উত্তর সুমাত্রার একটা জেলা হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে। পরে অবশ্য আচেহ প্রদেশ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছিলো। আচেহ কখোনেই বঞ্চনা ছাড়া সরকারের আনুকূল্য পায়নি। আচেহর প্রধান শক্তি হচ্ছে জনগনের জেদ।
তবে বাস্তব যে এসবিওয়াই (সুসিলো বামবাং উধোয়োনো) ক্ষমতায় আসার পর থেকে দুর্নীতে লক্ষণীয়ভাবে কমে গেছে এবং আরও কমছে। তবে বাংলাদেশ দুর্নীতিতে ফার্ষ্ট হয় একথা শোনার পর ইন্দোনেশিয়ানদের অট্টহাসি এখনও মনে পড়ে যায়। তাদের ধারণা যে দুর্নীতিতে বিশ্বের মধ্যে ইন্দোনেশিয়া হচ্ছে এক নাম্বার, তারপর ২ থেকে ১০ পর্যন্ত কেউই থাকবে না কারণ এই র্যাংকগুলোও ইন্দোনেশিয়ার, পরবর্তী দেশের র্যাংক শুরু হওয়া উচিত ১১ থেকে।
পান্ডবদা লিখেছেনঃ
শুধু তা'ই না, ইন্দোনেশিয়া সম্ভবতঃ পৃথিবীর একমাত্র দেশ যেখানে নিয়মিত সেনাবাহিনী ও পুলিশের মধ্যে যুদ্ধ হয়। আচেহ প্রদেশের সিমেলু দ্বীপে সেনাবাহিনী ও পুলিশের মধ্যে ক্রসফায়ারে আমার একজন ওয়্যারহাউজকিপার মারা যান। গন্ডগোলের ইস্যু ছিলো বন উজাড়ের বখরা কারা খাবে। সিয়ান্তার জেলসদরে পুলিশের সাবেক ব্যারাক মেশিনগানের গুলিতে ক্ষতবিক্ষত হয়েছিলো আর্মি ও পুলিশের মধ্যে ৩ দিনের যুদ্ধে। ২৫ জনের উপরে পুলিশ মারা গিয়েছিলো সেই ঘটনায়।
আর ইন্দোনেশিয়ার রাষ্ট্রপ্রধানদের আর তাদের পরিবারের ব্যাক্তিজীবনের কথা আর কি বলবো। সুকর্ণ সম্পর্কে বলা হয় যে ইন্দোনেশিয়ার ৩৩ টা প্রদেশে তার কমপক্ষে ৩৩ দুগুনে ৬৬টা সন্তান আছে। আমার চলার পথে একটা ছবি বাঁধানোর দোকানে একটা বিরাট ছবি সাজানো ছিলো, সুকর্ণ এবং জন এফ কেনেডির। ভাবতাম এই ছবিতে এর্শাদ কে ঢুকিয়ে দিলে ছবিটা পূর্ণতা পেতো। সুহার্তোর ছেলের অভিনেত্রীকে চুম্বনরত ছবি তো ওয়েবে দেখেছিলাম।
তবে প্রেসিডেন্ট বি.জে. হাবিবীর মতো জিনিয়াসও সেখানে ছিলো। হাবিবীর তৈরী করা ১২টা যুদ্ধবিমানের সর্বশেষটা ক্র্যাশ করে ২০০৫ সালে আচেহ প্রদেশের লক্সমাউইতে। এতে নর্থ সুমাত্রার রাজ বংশের সুলতান মারা যান। তিনি সেসময়ে সেনাবাহিনীর কর্ণেল ছিলেন। আমি সেই মৃতদেহ দেখতে গিয়েছিলাম।
রেজওয়ান ভাই, যদি আপনার সংগ্রহে না থেকে থাকে, সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল উইরান্তোর লেখা আত্মজীবনিটা সংগ্রহ করতে পারেন, অনেক কিছু পাওয়া যাবে। আর সুকর্ণ-হাতা এয়ারপোর্টে তিনটা বইয়ের একটা সেট পাওয়া যায় ইন্দোনেশিয়ার ইতিহাস নিয়ে, দাম নেয় ৪০০-৫০০ ডলারের মত, দেখতে অনেকটা এ্যালবামের মতো। সংগ্রহে রাখার মতো বই। আমার কাছে ওই সেটের একটা বই আছে। আবারও পড়তে হবে। এটাও আপনি সংগ্রহ করতে পারেন। খুবই তথ্যসমৃদ্ধ।
রাতঃস্মরণীয়
ইন্দোনেশিয়ায় গাড়ি বা হোন্ডা কেনা খুবই সহজ। আপনার যদি মোটামুটি একটা আয়ের উৎস থাকে যা থেকে আপনি ৩৬-৪৮ কিস্তিতে এর দাম শোধ করতে পারেন, তবে গাড়ি/হোন্ডা আপনার বাড়িতে পৌঁছে দিয়ে যাবে কোম্পানী। তাছাড়া টয়োটা কিজাং বা হোন্ডার দাম তুলনামূলকভাবে কম। আর সবথেকে বড় কথা ইন্দোনেশিয়ায় গাড়ির জ্বালানী তেলের দাম অসম্ভবরকম কম।
গাড়ির কথাই যখন আসলো, একটা ব্যাক্তিগত অভিজ্ঞতা শেয়ার করার লোভ সামলাতে পারছি না; যদিও এটা তেমন একটা কাউকে বলিনা। একবার ১৬০ টা পিকআপ কিনতে হলো। মিতসুবিসি কোম্পানী আমাকে অফার করলো যে আমাকে একটা মিতসুবিসি গ্যালান্ট সেডান দেবে অর্ধেক দামে, বাকী অর্ধেক ৪৮ কিস্তিতে দাম শোধ করতে হবে। আমার একটাই উত্তর ছিলো, 'সরি'। পরে ফোর্ড রেঞ্জার এক্সএলটি কিনেছিলাম প্রতিযোগিতামূলকভাবে।
রাতঃস্মরণীয়
তবে বাংলাদেশ দুর্নীতিতে ফার্ষ্ট হয় একথা শোনার পর ইন্দোনেশিয়ানদের অট্টহাসি এখনও মনে পড়ে যায়। তাদের ধারণা যে দুর্নীতিতে বিশ্বের মধ্যে ইন্দোনেশিয়া হচ্ছে এক নাম্বার, তারপর ২ থেকে ১০ পর্যন্ত কেউই থাকবে না কারণ এই র্যাংকগুলোও ইন্দোনেশিয়ার, পরবর্তী দেশের র্যাংক শুরু হওয়া উচিত ১১ থেকে।
দূর্নীতি নিয়ে বোধকরি তৃতীয় বিশ্বের মানুষজনের ধারণা অনেকটা একইরকম "তাদের দেশ সবচে বেশি দূর্নীতিগ্রস্ত"। কোন সালের ঘটনা মনে নাই, তবে পাকিস্তান একবার দূর্নীতিতে ২য় হয়েছিলো।পাকিস্তানিদের ধারণা ছিলো এর মধ্যেও দূর্নীতি আছে; আসলে পাকিস্তান দূর্নীতে প্রথম হয়েছিলো সরকার টাকা খাইয়ে পজিশনটা দুই'য়ে নিয়ে গেছে!!!
নতুন মন্তব্য করুন