টানা তিনদিন মেঘ, টিপটিপে বৃষ্টির পরে তিনদিন ধরে এখানে রোদ উঠেছে। আর আজকের কথা কি বলব? এতো সুন্দর রোদ, এতো সুন্দর রোদ। স্বর্গ মনে হয় সেই জায়গা যেখানে প্রতিদিন এরকম রোদ ঝরে। মাঝে মাঝে রোদ উঠলেও বাতাস থাকে, বাইরে বেরোলে ঠাণ্ডা লেগে হাড়ে কাঁপুনি ধরে, তাই ভেতরে হিটার চালিয়ে বসে থাকা লাগে। আজ সেরকম না, বাতাস নাই, থাকলেও মৃদু, তাতে হিম নেই, শরীরে কাঁপুনি তোলায় না। আজ রোদ খেয়ে নেশা ধরে যাবার উপক্রম হল। সেই কোন আদিকালে এম কোন দিনেই বোধহয় মানুষ সূর্যকে দেবতা মেনেছিল। টানা কদিন যখন বুজে থাকে, এক চিলতে রোদও ওঠে না, মানুষজন ছাতা ধরে মাথা নিচু করে গায়ে জবরজং কাপড় জড়িয়ে হিহি করে কাঁপতে কাঁপতে পথ চলে, তখন বোঝা যায় সূর্য কত দরকার, আলোকে কি ভালোবাসি (এবং জী না, আলো কোন মেয়ের নাম না)। শুধু কি তাই, টানা অবিশ্রান্ত বৃষ্টিতে আমাদেরও কেমন জানি নীল লাগে। ঝুপঝাপ বৃষ্টি হলে তাও কথা ছিল না, কিন্তু এই শীতে টিপ টিপ করে পড়েই চলেছে, পড়েই চলেছে, সহ্য হয়? আজকে ক্লাসে বসে ভাবছিলাম এই সোনালি রোদের দিনে ক্লাস করাটা যে কি ভীষণ সময়ের অপচয়। ভাবছি আর বাইরে ঝাঁ চকচকা গাছের পাতায় আলো লেগে কেমন সোনালি হলুদ রঙ ধরেছে, তাই দেখছি। একজন একটু পরে করল কি, পর্দা টেনে দিল। তাকে দেখেই কিনা, জানালার পাশে যারা বসে ছিল তারা সবাই পর্দা টেনে দিল, গায়ে রোদ লাগে বলে। করে কি, করে কি? এমনিতেই তো ফেসবুকে খুলে বসে আছিস, অথবা স্কাইপে চ্যাট করছিস, অথবা ঘুমোচ্ছিস, কম্পিউটার আর্কিটেকচারের ক-টুকুও মনে দিয়ে শুনছিস না, তো পর্দা টেনে দিচ্ছিস কেন? ঘুমোতে সমস্যা হলে অন্য জায়গায় গিয়ে ঘুমোলেই হয়। নাহ, এরা যদি এরকম দিনের কদর একটু বুঝত...। আর গোমড়ামুখো অধ্যাপকদের কথা কি বলব? নিতান্ত বেরসিক না হলে আজ কার মন লাগে ডিস্ক্রিট ফুরিয়ারে।। বাইরে আজ যে প্রাণের মেলা বসে আছে- ভার্সিটির যে মূল ভবন তার সামনে বাচ্চারা ছুটে কূল পাচ্ছে না, তার মধ্যে কোনটা পড়ে গিয়ে ভ্যা করে কেঁদে দিতে গিয়েও থামিয়ে দিয়েছে মা কাছে নেই বলে, কেঁদে যদি একটু আম্মুর আদরই না পাওয়া গেলো তাহলে চোখের পানিটুকুই তো বৃথা, তার মায়ের আবার বাচ্চার দিকে একপলক তাকিয়েই গল্পে মজে থাকল আরেক মায়ের সাথে, কেউ একজন টিফিন বাটি খুলে এটা সেটা বের করছে, পানির বোতল নিয়ে এক মা তাকিয়ে দেখল তার বাচ্চা গভীর মনোযোগ দিয়ে কবুতরের পিছনে হাঁটছে, কবুতরটাও একটা নিরাপদ দূরত্বে থেকে বাচ্চার দিকে তাকিয়ে দেখছে মাটি খুঁটে খাওয়ার ফাঁকে- এই যে এতো বিশাল আয়োজন আজ, এ তো প্রতিদিন আসে না। সবার মুখে হাসি, নাকি আমারই চোখে এমন লাগে। মনে হয় পৃথিবীতে জরা, ক্লান্তি, দুঃখ, যুদ্ধ এসবের যেন কোন অস্তিত্ব নেই। অকারণ আনন্দে উচ্ছ্বাস লাগে, এ যেন শিরায় শিরায় রোদের কণা ছড়িয়ে পড়ার আনন্দ। ভাবি প্রিয় পৃথিবী, তোমায় ভালোবাসি। এমন দিনে খালি মনে হয় যে একদিন থাকব না আমি, কিন্তু এই রোদ থাকবে। এই দুঃখ কোথায় রাখি?
মন্তব্য
ধন্যবাদ। অনুপ্রাণিত হলাম।
ভালোই লেগেছে।
একটু প্যারায় ভেঙ্গে দিলে পড়তে আরও সুবিধা হত। "নিতান্ত বেরসিক না হলে" এই বাক্যটি থেকে একটা প্যারা দেওয়া যেতো।
------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।
পড়ায় অনেক ধন্যবাদ।
ঠিকই, পরের লেখায় খেয়াল রাখব।
প্রিয় ব্যানার ভাই, অনেক থ্যাঙ্কস।
বোধহয় বলা হয়নাই- আপনার ব্যানারের কাজ অসাধারণ। প্রত্যহ নতুন নতুন ব্যানার দেখে কি যে ভালো লাগে।
বাহ বেশ হয়েছে তো!
__________________________________
----আমার মুক্তি আলোয় আলোয় এই আকাশে---
অনেক ধন্যবাদ। পাঠ এবং মন্তব্যে।
প্রথম লাইনটা দেখেই ভেবে নিয়েছিলাম আপনি লন্ডনে আছেন বুঝি
কৌস্তভ দা, ধন্যবাদ।
বর্ণপরিচয়ের মত কিছু একটা দেন না আবার।
আপনি যখন ছিলেন না তখনও এই রোদ ছিল। সেটা নিয়ে কি আফসোস্ করেন? যদি না করে থাকেন, তাহলে আপনি যখন থাকবেন না তখনও এই রোদ থাকবে - সেটা নিয়েও খামাখা কষ্ট পাবেন না।
মীর্জা গালিব দুঃখ করেছিলেন এই ভেবে যে, তিনি মারা যাবার পরেও বালিকারা ষোড়শী হবে! হায়, গালিব এটা কেন ভাবেন নি যে, তিনি জন্মাবার আগেও বালিকারা ষোড়শী হতো!
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
শুধু শুধু কি এখানে আসতে এতো ভালো লাগে। এই যে আপনার মন্তব্যেই নতুন কিছু শিখে ফেললাম।
গভীর পাঠ এবং মন্তব্যে অশেষ ধন্যবাদ। আপনার নতুন গল্পের আশায় আছি। মন্তব্য অত করা না হলেও প্রায় সব গল্পই পড়েছি এবং ভালো লেগেছে অনেক।
এইসব দৃশ্যে মজে গিয়েই তো পাঁচ বছরেও গ্র্যাজুয়েট হইতে পার্লাম্না
কিষান নাকি?
হবি হবি, এতো তাড়াহুড়ার কি হইল। একটু নাহয় আধবুড়োই হই।
...........................
একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা
পাঠে ধন্যবাদ।
ভালো লেগেছে!
মনে হয় বাক্যগুলো আরো কিছু প্যারায় ভেঙে দিলে চোখে দেখতে ভালো লাগতো আরো।
............................................................................................
এক পথে যারা চলিবে তাহারা
সকলেরে নিক্ চিনে।
লেখা ভালো লাগায় আমারও ভালো লাগলো। ধন্যবাদ। প্যারার বিষয়ে খেয়াল রাখব।
একদিন থাকব না, ভাবতেই একধরনের ক্ষীণ পৈশাচিক আনন্দ হয় আমার।
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
পাঠে ধন্যবাদ।
ক্ষীণ পৈশাচিক আনন্দ
লেখকের অন্যান্য লেখায় শুধু একটা লেখা কেন?
এত চমৎকার লেখনী থেকে একটা লেখা পেয়ে কি সাধ মেটে?
নতুন মন্তব্য করুন