হার্ভার্ড থেকে সদ্য বের হওয়া এক মেধাবী উচ্চাকাঙ্ক্ষী আইনের ছাত্র এক ল’ফার্মে যোগ দেয়। সেখানে যোগ দেয়ার সাথে সাথে সোনার হরিণ হাতে আসে তার- বিশাল বাড়ি, বিএমডব্লিউ, দুটো কান্ট্রি ক্লাবের সদস্যপদ, দশ বছরের মধ্যে মিলিয়নার হওয়ার সুবর্ণ ভবিষ্যতের হাতছানি। কিন্তু এসবের জন্য চড়া মাশুল দিতে হবে তাকে তা ভুলেও ভাবেনি সে। যেখানে মিলিয়ন ডলারের ট্যাক্স, ব্যবসা, চুক্তি নিয়ে ওঠাবসা সেখানে পর্দার পেছনে কি গভীর অন্ধকার লুকিয়ে আছে তা অজানা থাকে তার, অন্তত ফার্মে ঢোকার আগ পর্যন্ত। পর্দার পেছনের সত্য যখন একটু একটু করে স্পষ্ট হয় তার কাছে, তখন আর ফেরার উপায় থাকে না। সে শুধু তার কাজের সময়টুকু অন্যের নিয়ন্ত্রণাধীন তা নয়, তার ব্যক্তিগত জীবনেও ল’ফার্মের অনুপ্রবেশ ঘটেছে- একথা স্পষ্ট হতে থাকে।
লেখকের বর্ণনাভঙ্গি বারুদে ঠাসা। গতকাল থেকে পড়ছি, আমি ধীর পাঠক, তাও প্রায় তিন ভাগের এক ভাগ পড়ে ফেলেছি। উপন্যাস আকারে মোটামুটি বড়, বড় বই পড়া শুরুর আগে ভীতি কাজ করে আমার শেষ পর্যন্ত যেতে পারব কিনা তা নিয়ে। কিন্তু প্রথম ক’পাতা দিয়েই লেখক এক অসাধারণ, অনাস্বাদিত, রহস্যময় নতুন জগতে টেনে নিয়ে গেছেন আমাকে, যেখানে শেষ না দেখে মুক্তি নেই। পড়ার সময় কখনও মনে হয়নি যে কাহিনী সমতল হয়ে যাচ্ছে। পাঠককে জাগিয়ে রাখার কৌশল লেখকের পুরদস্তুর জানা, কাহিনী নাটকীয়তায় পূর্ণ। যেকোন লেখায়, হোক তা গল্প, উপন্যাস বা নাটকে, এর পরে কি ঘটবে তা জানার লোভ পাঠকের মধ্যে জাগাতে পারাটা লেখার খুব বড় গুণ, এ গুণ একাই লেখাকে সার্থকতা দেয়ার জন্য যথেষ্ট। দ্য ফার্ম শুরুর পর থেকে পাতার পর পাতা উলটে গিয়েছি শুধু এর পরে কি ঘটবে তা জানার আগ্রহে। এমনকি যখন বইটা পড়ছি না, তখনও বইয়ের চরিত্ররা মাথার মধ্যে কিলবিল করে হাঁটাচলা করছে, কাহিনীতে নতুন কি হবে এই ভয়-শঙ্কা-সাসপেন্স মস্তিষ্কে জায়গা করে নিয়েছে। কোন ছবি বা চলচ্চিত্র না দেখিয়েও, লেখার জাদু দিয়ে পাঠককে কল্পনা করাতে পারাটা গ্রিশামের খুবই বড় শক্তি বলে মনে হয়েছে।
বই পড়ে শেষ হয়নি এখনও, তাই পুরোটুকু নিয়ে বলতে পারছি না। এমনও হতে পারে, শেষে গিয়ে শিহরণ জাগানো কোন সমাপ্তিই হল না, হয়তো মনে হল এতো গাঁজাখুরি। তা হলে হোকগে, এই যে এতটা সময় আমাকে বহুদিন পর থ্রিলারের ভিন্ন দুনিয়াতে নিয়ে নতুন বিস্ময়ে, নতুন আনন্দে মুগ্ধ করে রাখলেন বই দিয়ে, তা তো মুছে যাবার নয়।
দ্য ফার্ম বইয়ের কথা প্রথম জেনেছি সচল কনফুসিয়াসের সহী দিননামা ব্লগ থেকে। তাঁকে ধন্যবাদ।
মন্তব্য
পুরো বই না পড়ে পাঠপ্রতিক্রিয়া দিলে 'পাঠপ্রতিক্রিয়া'র পাঠকের ওপর কি সুবিচার করা হয়?
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
তা হয় না অবশ্য। এমনও হতে পারে যে নিজের পুরো অনুভূতিই ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে গেলো শেষ পর্যন্ত পড়ে। লিখে ফেলার কারণ থ্রিলার পড়ার উত্তেজনা যেটুকু অনুভব করছি তা টাটকা থাকতে থাকতে ভাষায় আটকে ফেলা। পুরোটা পড়ে লেখায় যোগ বিয়োগ করে পরে পোস্ট দিলেই হত।
পাঠে ধন্যবাদ।
শেষ করে ফেলুন। ঠকবেননা এই নিশ্চয়তা দিচ্ছি।
ফারাসাত
নতুন মন্তব্য করুন