একটি ইন্টারভিউ এবং আমি

রাকিব হাসনাত সুমন এর ছবি
লিখেছেন রাকিব হাসনাত সুমন (তারিখ: বুধ, ১২/০৩/২০০৮ - ৮:২৩অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু হলের একটি কক্ষ। ঘটনাকাল ৯৭ বা ৯৮ সালের মার্চ বা এপ্রিল। টেবিলে .৩২ রিভলবার। প্রশ্নকর্তা খাটে শুয়ে উপরে দেয়ালে পা ঠেকিয়ে শুরু করলেন আমার ঐতিহাসিক সাক্ষাতকার। আমি আরেকপাশের খাটে বসার অনুমতি পেলাম।
নাম কি তোমার?
-রাকিব হাসনাত সুমন।
বাড়ী কই ?
-ভোলাতে কিন্তু থাকি সাভারে।
কোন ডিপার্টমেন্টে পড়ো ?
-গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা।
ও জার্নালিজম... আরেফিন সিদ্দিকির (ড. আআমস আরেফিন সিদ্দিক, শিক্ষক সমিতির সাবেক সভাপতি ও সাধারন সম্পাদক, সাংবাদিকতা বিভাগের প্রাণপুরুষ) ডিপার্টমেন্টে ? না সিট হবেনা।
- আমি নিশ্চুপ।
কিছুক্ষন চুপ থেকে বললাম- ভাই আমার সিট খুব দরকার। প্রতিদিন সাভার থেকে এসে ক্লাস করতে আমার খুব সমস্যা। পড়ালেখাই হচ্ছেনা।
রাজনীতি করছো ?
- না।
রাজনীতি করতে পারবে ?
- না।
হল পাহারা দিতে পারবা ?
- না ভাই, সম্ভব না।
তাহলে তো লাভ নাই ... যাও ভাগো।
ভগ্ন মনোরথে বেরিয়ে যাওয়ার জন্য যখন পা বাড়ালাম তখন পিছন থেকে ডাক দিলেন-- এই শোন -- আগামী পড়শু দিন সকাল ১১টায় মধুর কেন্টিনে আমার সঙ্গে দেখা করবা। দেখি কি করা যায়।
কিছু না বলে বেরিয়ে আসলাম আমি।
একদিন পর ইউনিভার্সিটির বাসে সাভার থেকে ক্যাম্পাসে এসে কলাভবনের সামনে নামলাম। মূল গেইট দিয়ে ডিপার্টেমেন্টের দিকে যাওয়ার সময় হলের এক বড় ভাই এর সঙ্গে দেখা - ব্যতিব্যস্ত হয়ে আমাকে বললেন- এই শোন হলের দিকে যাইয়োনা কিন্তু। গন্ডগোল হইছে। আরিফ মারা গেছে গুলিতে।

সেকেন্ড মূহুর্ত চুপ থেকে আনন্দে চিতকার দিলাম - ইয়া হু...........। তাই নাকি ... শালায় তো আমাকে আজকে ১১টায় মধুতে দেখা করতে কইছিলো সিট চাইছিলাম বলে।

বড় ভাই আমার মুখে হাত দিয়ে বললো- এভাবে বইলোনা ... মইরা গেছে। কিছুটা লজ্জা পেলাম আমিও।

যাই হোক পরদিনই হলে গেলাম । এক বন্ধুর সহায়তায় ৩২৩ নম্বর কক্ষের একটি খালি থাকা খাটের একটি বিছানা চাদর রেখে আসলাম। ৭ দিন পর উঠে গেলাম সিটে। সেই থেকে আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু হলের আবাসিক ছাত্র ছিলাম ২০০১ সালের অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত।


মন্তব্য

সুবিনয় মুস্তফী এর ছবি

কঠিন গল্প! অনেক পুরান জিনিস মনে করায় দিলেন। হলের লাইফ। আমার বন্ধুদের দেখতাম। গ্রীন রোডে আইবিএ হোস্টেলে থাকতো কয়েকজন।

৯৫-৯৬ এর কথা - কোন এক হলে (ফজলুল হক সম্ভবত) এক মেয়েরে চায়ের মধ্যে ঘুমের পিল মিশায় খাওয়াইলো কোন এক পোলা, তারপর রেপ করলো। ব্যাস সাথে সাথে সব হলে মেয়েদের আনাগোনা বন্ধ। আইবিএ হোস্টেলে প্রচুর ডেটিং চলতো - "দোস্ত তোর রুমটা লাগবো অমুক দিন, অমুক টাইমে" টাইপের ব্যবস্থা - বেশ কয়েকদিন বন্ধ ছিল এই ঘটনার পরে।
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর

তানভীর এর ছবি

--------------------

রাহা এর ছবি

বুঝলাম না.. কিসের মধ্যে কি ??

..হৃদি ভেসে যায় অলকানন্দার জলে...

রায়হান আবীর এর ছবি

ভাল লাগল...

---------------------------------
এসো খেলি নতুন এক খেলা
দু'দলের হেরে যাবার প্রতিযোগিতা...

অতিথি লেখক এর ছবি

মজার অভিজ্ঞতা...।

-নিরিবিলি

শামীম হক এর ছবি

কারো মৃত্যুর খবর শুনলে ইন্নালিল্লাহ পড়ার কথা জানতাম। তবে মৃত্যু বিশেষে 'ইয়াহু' চলতে পারে।

রাকিব হাসনাত সুমন এর ছবি

শামীম ভাই@ ওই বেটায় অস্ত্রহাতে আমার ইন্টারভিউ নিছিল। তাই খবরটা শুনেই খুশী হইছিলাম....

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

পড়িয়াছি।

====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির

বিপ্লব রহমান এর ছবি

হুমম।...এই রকমই হওয়ার কথা ছিলো। সাপুড়েরা সাপের ছোবলেই মরে।...


আমাদের চিন্তাই আমাদের আগামী: গৌতম বুদ্ধ


একটা ঘাড় ভাঙা ঘোড়া, উঠে দাঁড়ালো
একটা পাখ ভাঙা পাখি, উড়াল দিলো...

অছ্যুৎ বলাই এর ছবি

সময়ের সাথে সাথে মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি বিবর্তিত হয়। খুব মৌলিক সমস্যা না থাকলে টাই মানুষের আচরণও ইউ-টার্ন নিতে পারে। আরিফেরা নষ্ট রাজনীতির ফসল। যে ছেলেটা ঢাবিতে পড়ার মত মেধাবী, তাকে নষ্ট করার দায় আমাদের নষ্ট সমাজের।

---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো

রাকিব হাসনাত সুমন এর ছবি

বলাই দা @ একমত।

সুমন চৌধুরী এর ছবি

হুম



ঋণম্ কৃত্বাহ ঘৃতম্ পীবেৎ যাবৎ জীবেৎ সুখম্ জীবেৎ

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

(দীর্ঘশ্বাস)

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।