বিকেলে প্রেসক্লাবে একটা অনুষ্ঠানে গিয়েছিলাম। "ঐতিহাসিক আগরতলা মামলা (রাষ্ট্র বনাম শেখ মুজিবুর রহমান এবং অন্যান্য ) বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে" শীর্ষক এ গোলটেবিল আলোচনায় একজন বক্তা ছিলেন বরেণ্য সাংবাদিক ফয়েজ আহমেদ। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ওই মামলার বেশ কয়েকজন আসামী। সামরিক আদালতে বঙ্গবন্ধু সহ অভিযুক্তদের বিচার প্রক্রিয়া দেখার জন্য সাংবাদিক হিসেবে আদালতে উপস্থিত ছিলেন ফয়েজ আহমেদ।
ফয়েজ ভাইয়ের ভাষায় -" কোর্টের ভিতর আমি যেখানে বসলাম তার থেকে মাত্র এক-দেড়ফুট দুরে বঙ্গবন্ধু। আমাকে ডাক দিলেন। আমি বললাম এটা সামরিক আদালত। এখানে কথা বলা যাবেনা। বঙ্গবন্ধু আবার ডাক দিলেন। আমি বললাম মুজিব ভাই এখানে কথা বলা নিষেধ।
পুরো আদালত কক্ষে কিছু আইনজীবি ও সামরিক বাহিনীর লোকজন। বঙ্গবন্ধুকে ফাঁসী দেয়ার জন্য সব আয়োজন চলছে। অথচ এসবের তোয়াক্কা না করে বঙ্গবন্ধু আবার ডাক দিলেন আমাকে - এই ফয়েজ শোন। দুজন আস্তে আস্তে কিছুক্ষন কথাও বললাম। আমি আবারো বললাম - মুজিব ভাই .. আস্তে বলেন.... এখানে কথা বলা নিষেধ।
বঙ্গবন্ধু এবার উচ্চকন্ঠে বললেন, বাংলাদেশে থাকতে হলে শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে কথা বলতে হবে। পিনপতন নীরবতার মধ্যে এ সোচ্চার কন্ঠে সবাই ঘুরে তাকালো। আমি শুধু বললাম- মুজিব ভাই ওরা কাল থেকে আর আমাকে এখানে আসতে দিবেনা। "
সংশ্লিষ্ট কিছু তথ্য: আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে সরকারপক্ষের প্রধান আইনজীবি ছিলেন মঞ্জুর কাদের। আর তার প্রধান সহযোগী ছিলেন বাংলাদেশের টিএইচ খান।( পরবর্তীকালে বিচারপতি ও বর্তমানে বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য এবং সুপ্রীম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবি)।
বঙ্গবন্ধু সহ অভিযুক্তদের পক্ষে ছিলেন ২৬ জন আইনজীবি , যার নেতৃত্বে ছিলেন আব্দুস সালাম খান। বঙ্গবন্ধুকে সহায়তা করতে ওই মামলায় লড়েছিলেন ব্রিটিশ এমপি ও আইনজীবি স্যার টমাস উইলিয়াম।
মামলার একজন আসামী (সম্ভবত কর্ণেল আলম) জানান, আদালতে বঙ্গবন্ধু ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে বক্তব্য রাখছিলেন মঞ্জুর কাদের। হঠাৎ বঙ্গবন্ধু উচ্চকন্ঠে বললেন-" মি: মঞ্জুর কাদের...... আই শ্যাল টেক রিভেঞ্জ"।
মন্তব্য
এতো তাড়াতাড়ি শেষ করে দিলেন কেন?
কি মাঝি? ডরাইলা?
আমারো একই প্রশ্ন
----------------------------------------------
আমাকে নিঃশব্দে অনুসরণ করে একটা নদী-
সাথে নিয়ে একটা পাহাড় আর একটা নিঃসঙ্গ মেঘ।
আমারও
এই রকম লোকগুলারই "যথাযথ পুনর্বাসন" হয়!
ছোট হলেও অনেক কিছু বলে দিয়েছেন।
— বিদ্যাকল্পদ্রুম
সুমন,
বঙ্গবন্ধু ৬-দফা সম্পর্কে সেই ৬৮-তেই কি বলেছিলেন জানেন? বলেছিলেন,
আমি ৬-দফা টফা বুঝি না, আমার দফা হলো তিনটা
১. কতো নেছো
২. কবে দেবা
৩. কবে যাবা
তখন পাকিস্তানীরা ছিল কিন্তু আজকে আবার বোধ হয় সময় এসেছে এই প্রশ্ন উচ্চারণের, তবে এবার অবশ্যই প্রেক্ষিত ভিন্নতর।
ধন্যবাদ।
ইচ্ছে করে লেখাটি সংক্ষিপ্ত বা শেষ করিনাই... তবে একটি অনুষ্ঠানে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার আসামী ও সংশ্লিষ্টদের শুনে এটি লিখেছি। লেখাটি বড় করার চেয়ে বেশি সতর্ক থেকেছি কোন ধরনের তথ্য বিকৃতি যেনো না হয় সেটি নিয়ে। এ কারনেই সংক্ষিপ্ত করে বঙ্গবন্ধু কেন্দ্রিক অংশ টুকু তুলে ধরলাম। তবে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র হাতে পেলে এ নিয়ে লিখার আশা আছে। অধ্যাপক মুস্তারী আহমেদ নামক একজন গবেষক ওই মামলা নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা করছেন। আশা করা যায় তা থেকেও অনেক সত্য বেরিয়ে আসবে।
নতুন মন্তব্য করুন