এ গল্পটি বিদ্যানারায়নের। অথচ চাইলে এটি অন্য অনেক কিছুর গল্পই হতে পারতো। তা হয় নি কারণ আজ বিদ্যানারায়নের সামনে মেলে ধরা বইয়ের পাতার গুটি গুটি অক্ষরগুলো ঝাপসা হয়ে আসছে। সারি সারি সমীকরণের গোলকধাঁধায় দিশেহারা হচ্ছে বেচারা। নিশ্চিত ভাবেই আজ বিদ্যার্জনের জন্য প্রসন্ন দিন নয়। আজ ডিসক্রিট সিগন্যাল আর মাইক্রোপ্রসেসর ইন্টারফেসিং বইগুলো তাকে তুলে রাখার দিন । আজ বিদ্বান হবার দিন নয়, আজ লেখক হবার দিন। গল্পটি বিদ্যানারায়নের কারণ আজ সে লেখক।।
প্রথমেই বলে রাখি এভাবে আয়োজন করে লেখক হবার কথা শুনে ভড়কাবেন না । একেক সময় এমনটা হয়, বিদ্যানারায়নের মনে হয় আজ সে লেখক হবে। সমীকরণ- ব্যাকরণের অকারণ বাধ্যবাধকতা জলাঞ্জলি দিয়ে আজ সে লিখবে আপন মর্জিতে। বিদ্যানারায়ন জানে, আদ্যোপান্ত ঠিক ঠিক ইকুয়েশন লিখে যাওয়া, খাতা ভরে অংক কষা, পর্যায় সারণী মুখস্ত আওড়ানো – এসবকিছুই বিদ্যার্জন নয়। সব নিয়ম ভেঙেচুড়ে, নিজ মত নিয়ম গড়ে, দুকলম লিখবার বিদ্যা আয়ত্ত্ব করাই প্রকৃত অর্জন।
সত্যি বলতে, এসব লক্ষীছাড়া চিন্তা চেতনা বিদ্যানারায়নের নিত্যদিনকার ভাবনা সাধনারই অংশ। যেসব দিন বইয়ের পাতার ডোরাকাঁটা সমীকরণগুলো বড় বেশি বেকায়দা করে সেদিন এসব ভাবনার পালেও হাওয়া লাগে। আজ অবশ্য হতচ্ছড়া সমীকরণগুলো তাকে শুধু বেকায়দায়ই ফেলেনি, রীতিমতো ধরাশায়ী করেছে। আজ তাই ভাবনার জগতে মৃদু হাওয়া নয়, উত্তুঙ্গ টাইফুন বইছে। বিদ্যানারায়ন দক্ষ নাবিক, ঝড়ের বিপরীতে চলা তার কম্মো নয়। বইটা ঠেলে দিয়ে খাতাটা এগিয়ে নেয়াই তাই সমীচীন মনে করে সে। লেখার খাতাই আপাতত নাবিকের হাল।।
বিদ্যানারায়নের লেখার খাতা লয়ে অধিক বাক্যব্যয় করবো না। বাদামী মলাটের আর দশটা খাতার মতই তার খাতাটি। ভেতরে সাদা সাদা রুলটানা পাতা, কোণা ভাঁজ হওয়া কিছু পৃষ্ঠা, মলাটে সুন্দর হস্তাক্ষরে মালিকের নাম লেখা। বিশেষত্বরহিত এ খাতার একটিই বলবার মত বিষয়, পৃষ্ঠাগুলো মেলে ধরলে কেমন মিষ্টি মিষ্টি ফুলেল ঘ্রাণ পাওয়া যায় একটা। অবশ্য সবাই এই ঘ্রাণ পায় এমনটি বলছি না। সত্যি বলতে বিদ্যানারায়ন ছাড়া আর কাউকে এই ঘ্রাণ কখনো পেতে দেখেনি কেউ। আজ অবশ্য বিদ্যানারায়ন ঘ্রাণ নিতে খুব একটা ব্যাকুল নয়, সে তাই খাতাটি না খুলে বন্ধ খাতার বাদামী মলাটের দিকে চেয়েই বসে থাকে। বসে বসে ভাবে, কোথা থেকে শুরু করবে গল্পটা!!!
বিদ্যানারায়ন জানে গল্পের শুরুটা গুরুত্বপূর্ণ। লোকে অবশ্য বলে, শুরু নয় শেষটাই আসল, সেটা যত চমকপ্রদ লেখা তত উত্তম। কিন্তু বিদ্যানারায়ন এটুকু বুঝে যে গল্প শেষ করা যত কঠিন শুরু করাও তারচেয়ে কিছুমাত্র কম কষ্টসাধ্য নয়। শুরুর চমৎকারিত্বও ফেলনা নয়। তাই সে গল্পের শুরুটা নিয়েই ভাবে... চোখবুজে ভাবে...চোখ খুলে ভাবে...আধবোজা চোখে ভাবে...
...না, বিদ্যানারায়নের এ ভাবনা প্রচেষ্টা বিশেষ ফলপ্রসু হয় না। অচিরেই ফলপ্রসু হবে এমনটা ভাবাও ঠিক না। কেননা যে গল্পের শুরুটা লিখতে সে মরিয়া হয়েছে সেটি আদতে কিসের গল্প তা সে নিশ্চিত নয় এখনো। এটি হতে পারে একটা চড়ুইয়ের গল্প, হতে পারে একটা বিড়ালের গল্প, চাই কী হতে পারে শীতের সকালে একবিন্দু শিশির কণার গল্প।।
বিদ্যানারায়ন নিজেকে শুধায়, চডুই, বিড়াল না শিশির? কোন গল্পটি লিখবে সে? কোন গল্পটি লিখলে হড়হড় করে লেখা আসবে? সবচে প্রিয় বস্তুটি নিয়ে লিখবে সে? এর মাঝে কোনটি তার সবচে প্রিয়? মনস্থির করতে পারে না বিদ্যানারায়ন। তাই সে ভাবে...চোখ কুচকে ভাবে...নাক চুলকে ভাবে...কলম কামড়ে ভাবে।। আজ তাকে একটা সিদ্ধান্তে আসতেই হবে। আজ যে তার লেখক হবার দিন। আজ সে লিখবেই। হোক সেটা এক শিশিরের গল্প, হোক তা কোন চড়ুই বিড়ালের আখ্যান।।
এভাবে অনেক সময় অতিবাহিত হয়, অনেক চড়ুই বাবুই পাখির সাথে বচসা করে, অনেক শিশির বাতাসে মিলায়, অনেক ম্যাও ভোক্ষস দৌড়ে পালায়। তারপর একসময় বিদ্যানারায়নের চোখ কুচকানো থামে, নাক চুলকানো কমে, কলমটাও রেহাই পায়। হ্যা, বিদ্যানারায়ন তার প্রিয় বিষয়টি বেছে নিতে পেরেছে। পেয়ে গেছে গল্পের শুরুটাও। আজ সে নিশ্চিত ভাবেই একটি চড়ুই বা একটি বিড়াল নিদেনপক্ষে একবিন্দু শিশিরের গল্প লিখবে। এখন শুধু জানার বাকি কার গল্প লিখছে বিদ্যানারায়ন?? কি তার সবচে প্রিয়? কাকে নিয়ে সে লিখে যাবে পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা? কি রয়েছে তার গল্পের শুরুতে? উত্তর জানাতে সময় নেয় না বিদ্যানারায়ন। যত্নের সাথে খাতাটা মেলে ধরে, একবার ঘ্রাণ নেয়, তারপর লিখতে শুরু করে-
“এ গল্পটি বিদ্যানারায়নের। অথচ চাইলে এটি অন্য অনেক কিছুর গল্পই হতে পারতো। তা হয় নি কারণ আজ বিদ্যানারায়নের সামনে মেলে ধরা বইয়ের পাতার গুটি গুটি অক্ষরগুলো ঝাপসা হয়ে আসছে। সারি সারি সমীকরণের গোলকধাঁধায় দিশেহারা হচ্ছে বেচারা। নিশ্চিত ভাবেই আজ বিদ্যার্জনের জন্য প্রসন্ন দিন নয়। আজ ডিসক্রিট সিগন্যাল আর মাইক্রোপ্রসেসর ইন্টারফেসিং বইগুলো তাকে তুলে রাখার দিন । আজ বিদ্বান হবার দিন নয়, আজ লেখক হবার দিন। গল্পটি বিদ্যানারায়নের কারণ আজ সে লেখক।।.........”
নাহ্, বিদ্যানারায়ন খুব একটা ভুল বলেনি, গল্পের শুরুটা আসলেই গুরুত্বপূর্ণ।।
মন্তব্য
বিদ্যানারায়ন তথা দেবতা ওসিরিসকে একটা চমৎকার গল্প লখার জন্য অশেষ ধন্যবাদ। আশা করছি এরপরথেকে শেষ ওয়ালা গল্পও লিখবেন তিনি
ঐশ
ঐশ দা, অনেক ধন্যবাদ।
আবার কবে এরকম পিএল পাবো, আবার কবে লিখবো??
_______________________________________________
সিগনেচার কই??? আমি ভাই শিক্ষিৎ নই। চলবে টিপসই???
ভাল লাগলো।
আমি মেঘের দলে আছি, আমি ঘাসের দলে আছি
অলস সময়
ধন্যবাদ পলাশদা।
_______________________________________________
সিগনেচার কই??? আমি ভাই শিক্ষিৎ নই। চলবে টিপসই???
অসাধারন লিখেছিস। চালিয়ে যা।
--তানজিল
তোরটাও চলুক সেই সাথে
ধন্যবাদ বন্ধু।।
_______________________________________________
সিগনেচার কই??? আমি ভাই শিক্ষিৎ নই। চলবে টিপসই???
বিদ্যানারায়ণ ?? ঠিক লিকেচিস তো ?? কেষ্টানারায়ণ নয় ?? !!!
_________________________________________
সেরিওজা
যেইটাই হউক, শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত এইসব গালগল্প ফেঁদে এই নারায়ন ব্যাটা নাকি নিশিন্দপুরের দিকে রওনা দিসে। তারে সহসা দেখতে পাওয়ার সম্ভাবনা নাই আর।।
_______________________________________________
সিগনেচার কই??? আমি ভাই শিক্ষিৎ নই। চলবে টিপসই???
সন্ধ্যার পর থেকে ঘুরঘুর করতেসি, কখন তোর লেখা আসবে।
অবশেষে পাইলাম, আমি ইহাকে পাইলাম।
গল্প কিংবা গল্প লেখার গল্প, যাই বলিস না কেন , চমৎকার হইসে।
ব্রাভো বেটা
---আশফাক আহমেদ
অনেক ধন্যবাদ পলিট।
_______________________________________________
সিগনেচার কই??? আমি ভাই শিক্ষিৎ নই। চলবে টিপসই???
ভালো লেগেছে। ধন্যবাদ।
======================================
অন্ধকারের উৎস হতে উৎসারিত আলো, সেইতো তোমার আলো।
সকল দ্বন্ধ বিরোধ মাঝে জাগ্রত যে ভালো, সেইতো তোমার ভালো।।
------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।
পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
_______________________________________________
সিগনেচার কই??? আমি ভাই শিক্ষিৎ নই। চলবে টিপসই???
হুম, থোড় বড়ি খাড়া, খাড়া বড়ি থোড়।
তা এবারের ডুবটা কয়দিনের জন্য হবে মঁসিয়ে?
--------------------------------------------
আজি দুঃখের রাতে সুখের স্রোতে ভাসাও ধরণী
তোমার অভয় বাজে হৃদয় মাঝে হৃদয় হরণী।
--------------------------------------------
যদ্যপি আমার গুরু শুঁড়ি-বাড়ি যায়
তথাপি আমার গুরু নিত্যানন্দ রায়।
না মিলুক সমীকরণ, গল্প করেছে পাঠকের মন হরণ।
------------------------
[ওয়েবসাইট] [ফেইসবুক] [ফ্লিকার ]
লেখাটা পড়ে অনেক ভাল্লাগলো।
সুন্দর গল্পটা লেখার জন্য অনেক ধন্যবাদ, রিফাত।
- রাজন
_________________
ঝাউবনে লুকোনো যায় না
_________________
ঝাউবনে লুকোনো যায় না
সুন্দর গল্প।
তবে অনেকের মত আমারো কেন যেন মনে হয়, গল্পের শুরু থেকে শেষ অংশটা সাজানো অনেক বেশি কঠিন। আমার মনে হয় সুহান এ ব্যাপারে জ্ঞানগর্ভ উপদেশ দিতে পারবে!
---- মনজুর এলাহী ----
অ! এই তাহলে গঠনা?
___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।
___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।
ভাল্লাগছে!
শুরুই তো শেষ। আর শেষ মানেই শুরু। আর তখনই শেষ। আর তারপরেই আবার ব্যপারটা নতুন করে শুরু। এইরকমই আরকি।
______________________________________
যুদ্ধ শেষ হয়নি, যুদ্ধ শেষ হয় না
______________________________________
যুদ্ধ শেষ হয়নি, যুদ্ধ শেষ হয় না
আমার মনের কথা বিদ্যানারায়নের মনে খেললো কি করে
লেখাটা খুব ভাল লাগলো ভাই
আরো অনেক লিখুন, এরপর শেষটুকু সহ যেন পড়তে পাই।
............................................................................................
স্বপ্ন আমার জোনাকি
দীপ্ত প্রাণের মণিকা,
স্তব্ধ আঁধার নিশীথে
উড়িছে আলোর কণিকা।।
............................................................................................
এক পথে যারা চলিবে তাহারা
সকলেরে নিক্ চিনে।
ভাল লেগেছে।
নতুন মন্তব্য করুন