সকাল আটটা থেকে বেলা পাঁচটা অব্দি যে সময়টা আমি কাটাই, যেভাবে কাটাতে হয়.. সেখানে ভাবালুতার কোন সুযোগ নেই। অফিস সময়ের ব্যাপারে কড়াকড়ি আছে বলে দেরিতে ছুটলে চলে না। পেরিয়ে যাওয়ার সময় আশেপাশের ডেস্কের দিকে স্মিতমুখে প্রাতঃসম্ভাষণসূচক দু-চারটে বুলি ছুঁড়ে দেওয়ার পর লাঞ্চব্রেক অব্দি বড় একটা ফুরসত থাকেও না আসলে।
মনিটরের একটানা লাল- নীল গ্রাফ আর সংখ্যার ওঠানামা অসহ্য হয়ে উঠলে চশমাটা খুলে রেখে মিনিট দশেক চোখ বুঁজে থাকি ।
এই চারকোনা স্ক্রিনের কারিকুরিতেই জীবনটা আটকে গেল হায়…..
মুক্ত হতে গিয়ে আমাদের জীবন বোধহয় পাতালের কৌটোবন্দি কীটেরও অধম হয়ে যায়, কিংবা রূপকথায় চেয়েও আরো কোন গভীর হ্যালুসিনেশন আমাদের গ্রাস করে...
যে জেগে দ্যাখে স্বপ্ন জাগরণের,
সহস্র সোনার কাঠি বদলেও তার ভাঙেনা ঘুম।
জীবন কি আসলেই আটকে নেই? বিস্বাদ দিনগুলো বন্দি একঘেঁয়ে এক্সিকিউটিভ রুমে, অবসর বন্দি ফেসবুকের খাতায়। ভালোলাগা, না লাগা সমস্ত অনুভূতিগুলো মাউসের খোঁচায় আমি এবং আমরা তুলে দিই আন্তর্জালে। প্রিয়জনকে পাশে নিয়ে দেশের শ্বাসরুদ্ধকর খেলা দেখার সময়ও লাইভ আপডেট শেয়ারের ইচ্ছে যায় দূরদেশে ফিকে হওয়া রাতে ডাক পাঠানো বন্ধুর সঙ্গে। কতটুকু নিঃসঙ্গতার দাম চুকাতে ক্লান্ত চোখের পাতাকে বশ মানিয়ে অদেখা সঙ্গীর অনুরোধে হাতড়ানো হয় ফরমায়েশি কোন লিঙ্ক?
একসময়ের তীব্র, সর্বগ্রাসী বই পড়ার নেশা এসে ঠেকেছে প্রায় শূন্যের কোঠায়। এখনো কিনি অনেক, হাতেও নেওয়া হয়.. তবে আগের মতো এক বৈঠকে আর শেষ করা হয় না। আজ 'বয়স হয়েছে ঢের নরনারীদের,
ঈষৎ ডুবেছে সূর্য নক্ষত্রের আলো...…
সন্ধ্যায় ক্লাস থাকে, হপ্তায় চারদিন। দিনের খাটুনির পর আবার ফালতু ডিগ্রি কামানোর লোভে বস্তাপচা লেকচারে কান দিই।
সব মিলিয়ে সংখ্যায় সত্তর ছুঁইছুঁই সহপাঠীদের মধ্যে মেয়েদের সংখ্যা নেহায়েতই কম। চেষ্টা না করেও তাই মাঝেমাঝে কেউ কেউ চোখে পড়েন।
সেদিন প্রজেক্টরটা কাজ করছিল না। আনাড়ি সহকারীটি হিমশিম খাচ্ছিল বারবার.. অসহিষ্ণু হয়ে উঠে গিয়ে একটা প্লাগপয়েন্ট ঠেসে লাগাতেই সব ঠিক হয়ে গেল। খুব বেশি কথা বলিয়ে না হলেও স্বভাব মিশুক কজনের সঙ্গে এ দুই মাসে খানিকটা সহজ সর্ম্পক তৈরি হয়ে গেছে। তাঁরাই নাম ধরে ডেকে নানা মন্তব্য করছিলেন। বাউ করে দাঁড়িয়ে আমিও হাসছিলাম।
মাঝেমাঝে টুকটাক ছেলেমানুষি মন্দ লাগে না।
যে তরুণীটি ঈষৎ ঘাড় বাঁকিয়ে তাকিয়েছিলেন তখন এদিকটায়, তার নাম জানা আছে বটে। তবে ঐটুকুই। অপ্রয়োজনে কথা বলতে দেখিনি, শান্ত গম্ভীর ভঙ্গিতে বসেন রোজই ঠিক প্রথম সারিতে।
তবে যে চোখ মেলে তাকালেন, মুখাবয়বের চাইতেও সেটা অনেক বেশি শান্ত।
সব দিঘির জলে ঢেউ থাকে না...
পরদিন উইকেন্ড, ঘুমোব ভেবেও নেটবুক হাতে গা এলিয়ে বসি। প্রাক্তন ইউনি সতীর্থদের বাৎসরিক পিকনিকের ছবিতে আমিও ট্যাগড। টুকটাক পচাই একে ওকে।
ওই ফাইজা--নিজে তো বিয়েশাদী করে গুছিয়ে বসে ধুমসি হচ্ছিস দিন কে দিন। তোর রূপবতী কোন ননদটনদ নেই?
পাশেই স্পিকারে অনুচ্চ ভলিউমে মুহম্মদ রফি তখন গাইছেন-- 'চেও না, সুনয়না..'
অপ্রত্যাশিতভাবেই অসংখ্য ছবির আড়ালে চাপা পড়তে না চাওয়া একজোড়া চোখ মনে পড়ে। বালখিল্যতায়.. বাতুলতায়।
পাখির নীড়ের মতো চোখ তুলে নিউরণে অনুরণন তোলেন সেইই বনলতা সেন। আহ, কত সহস্র জন্মের পর ফের কড়া নাড়ে কবিতার দল!
আমি বুঝে ফেলি, দ্বি অথবা ত্রিমাত্রিক প্রতিচ্ছবির চাইতে একজোড়া জীবন্ত চোখই বোধহয় অনেক বেশি আর্কষণীয়।
মন্তব্য
ইমো আসছে না, বলতে চাইছিলাম লেখা গুড় হয়েছে।
facebook
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
মনে মনে সারাদিন দেখা, মনে মনে নিত্য সহবাস
সারাক্ষণ কাছে কাছে থাকি, সারাদিন কথা বলি
"বইখানা কোথায় ফেললে?"
বেরুচ্ছো কি? ফিরবে কখন?'
মনে মনে লাগিয়ে দি'জামার বোতাম
ভুরু থেকে সরিয়ে দি' ঝুঁকে-পড়া কেশ
মনে মনে এগিয়ে দি' কলম, রুমাল।
মনে মনে অহর্নিশি,মনে মনে সারা দিনরাত
খুব ঝগড়া, খুব যত্ন, মনে মনে আদরটাদর
সারাদিন সারারাত, আজীবন নিখিল বিস্তার-
মনে মনে মনের মানুষ।
মনের মানুষ
নবনীতা দেবসেন।
-----------------------------------------------------
"চিলেকোঠার দরজা ভাঙা, পাল্লা উধাও
রোদ ঢুকেছে চোরের মত, গঞ্জনা দাও'
চমৎকার দিদি, পড়া ছিল না কবিতাটা।
অনেক ।
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
ভার্চুয়াল জিনিসপত্র আর ভালো লাগেনা।
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
নেটবন্দী জীবনে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছি!
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
কিছু কিছু বাক্য খুব দাগ কেটে গেল।
আপনারা যদি এভাবে ননদ-শ্যালিকাদের দিকে নজর দেন, আমাদের কী হবে?
অনেকদিন পর!
আপনারা মানে? আমি নারীপেম ঘুচিয়ে ফেলেছি তো, পাঁউরুটির কসম!
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
হুম, বললেন আর মানলাম!
হায়, 'কাদম্বিনী মরিয়া প্রমাণ করিয়াছিল সে মরে নাই...'
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
(গুড়)
[আমার চারপাশ]-[ফেবু]-[টিনটিন]
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
খুকি, হাসিখুশি কিছু লেখা যায় না?
------------------------------------------------------------------
এই জীবনে ভুল না করাই সবচেয়ে বড় ভুল
সবাইকে দিয়ে কী আর সবকিছু হয়!
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
খুব খুব ভালো লেখা।
----------------
স্বপ্ন হোক শক্তি
অনেক অনেক ধন্যবাদ।
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
এ চক্র থেকে পরিত্রাণ কি আছে? থাকে যদি, আদৌ কি চাই?
~~~~~~~~~~~~~~~~
আমার লেখা কইবে কথা যখন আমি থাকবোনা...
আমি চাই।
বৃত্তবন্দী জীবন ভাল্লাগছেনা আর।
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
পার যদি, উপায়টা জানিয়ে দিও!
হয়ত অনেকের কাজে লাগবে!
~~~~~~~~~~~~~~~~
আমার লেখা কইবে কথা যখন আমি থাকবোনা...
ঠিকাসে।
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
আমি সচলায়াতন পড়ছি বেশ কিছুদিন, কিন্তু মন্তব্য করছি সাম্প্রতিক। তোমার লেখা আমার খুব ভাল লাগে। আর এত কবিতা তুমি জান যে আমি অবাক হয়ে যাই। আমার প্রিয় লেখকের একটি উপন্যাসের নামে তোমার নিক, খুব সুন্দর।
তোমরা ছোট ছোট মেয়েরা এত ভাল লেখ কি করে?
আমি তুমি বললাম বলে কিছু মনে করোনা, আমি তোমার থেকে অনেক বড়। আমি মনে হয় সচলায়াতনের প্রায় সবার থেকে বড়।
তিথিডোর আমারো খুব প্রিয় উপন্যাস।
চমৎকার মন্তব্যটির জন্য অকুন্ঠ কৃতজ্ঞতা।
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
অফিসের ব্যাপার আর জীবন্ত চোখ দেখার অনুভূতি বাদে প্রায় সবটা মিলে গেল।
আমি এখন বেকার।
চোখ নিয়ে অবশ্য আসলেই একটু বাড়াবাড়ি করি।
ধন্যবাদ প্রিয়ম।
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
অফিস ৯ টায় থাকলেও আমি কোন দিন ১০ টার আগে অফিসে গেছি বইলা মনে পড়ে না। শেষে দেখি.... মরার এই ১০-৫ টা রুটিনও পরানে সয় না। চাকরির খ্যাঁতায় আগুন । দিলাম ছাইড়া
এর চাইতে..... ক্যাম্রা লইয়া ঠাডা পড়া রৈদের মইধ্যে রাস্তায় টো টো করা অনেক সুখকর ।
এইবারা আসল কথায় আসি.....
লেখা ভালু লাগছে।
- পুচকুন
হে হে।
ধন্যবাদ খোকা।
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
নতুন মন্তব্য করুন