চাপা মাথা ধরা নিয়ে বিছানা ছেড়েছিলাম, সেটা ক্রমশই বাড়ছে।
দোষ নেই অবশ্য, কদিন ধরে রেস্ট পাচ্ছে না বেচারা। এমনিতে চাপে তো থাকিই, এখন সেটারও পিক টাইম। ফাইনাল প্রোজেক্ট এর খসড়া নিয়ে আড়াইটা পর্যন্ত ধস্তাধস্তি করতে হয়েছে, শাটল ধরে অ্যাপার্টমেন্টে ফিরতে ফিরতে রাত সাড়ে তিন, আবার অ্যালার্ম বেজেছে ভোর সাতটায়।
বাজে অবস্থা পুরাই!
ক্যাম্পাসের অবস্থাও যা তা, সামনে মিড টার্ম বলে আন্ডারগ্র্যাড ছানাপোনাদের আধপাগল দশা চলছে। লাইব্রেরি, কমন রিডিং স্পেস.. কোথাও জায়গা পাওয়াই মুশকিল!
ইকোনমিক্স ল্যাবের এক কোনে গ্যাঁট হয়ে বসে পড়লাম। সাতটায় ক্লাস, তার আগে গ্রেডিং এর ফ্যাচাং মেটাতে হবে।
ধুর, কফিটা জুড়িয়ে পানি, এখন হাই পাচ্ছে কেবল। আশেপাশে ঘুম তাড়ানোর মতো কিছু পাওয়া যায় না?
ইতিউতি তাকাতে গিয়ে কাছের মানুষে চোখ পড়ে।
ঠিক পাশের সিটে মেয়েটা। হিসপ্যানিক নাকি এশিয়ান?
সম্ভবত দক্ষিণ ভারতীয়, চোখ বলে সেটা। টানা, কালো। এবং ক্লান্ত। আইলাইনারের বালাইবিহীন।
দু-তিনটে বই, একগাদা কাগজ, হাইলাইটার, পেন, নোটবুক-- টেবিল জুড়ে সব ছড়িয়ে-ছিটিয়ে লিটারেলি বসে বসে চুল ছিঁড়ছে যাকে বলে।
আহারে, কোন মানসাংক মিলছে না বোধহয়।
এতটা বয়স চলে গ্যালো, তবু কী আশ্চর্য.. আজো জীবনের অংক মেলাতে পারলাম না বালিকা, এ তো নিতান্তই নগণ্য হিসাব।
আমি আমার ট্র্যাকে ফেরার চেষ্টা করি। খেই হারিয়ে মাঝে মাঝে বাঁ পাশটায় মনোযোগ সরে যায়। চোখজোড়া, আহ, কী গভীর! ডাটাসেটের ভ্যারিয়েবলে তালগোল পাকিয়ে যায়, সদ্য দখলে আসা এসপিএসএসের কোথায় কী কমান্ড দিতে হয় ভুলে বসি।
জীবনবাবু, যদিও শর্তহীন, যদিও সুসময়হীন..পাখির নীড়ের মতো চোখের রহস্য তুমি এতদিনে বুঝিয়ে দিলে!
খাতায়- কলমে বাংলা লেখা হয় না কতোদিন!
ডেস্ক থেকে একটা টুকরো কাগজ টেনে নিয়ে ঐ দাশবাবুর লাইন-ই লিখি। গোটা গোটা হরফে।
...তোমায় আমি দেখেছিলাম বলে, তুমি আমার পদ্মপাতা হলে/ শিশিরকণার মতোন শূন্য ঘুরে, ভেবেছিলাম পদ্মপত্র আছে অনেক দূরেএ..
ফোনটা টেনে কাগজটা চাপা দিই, এরপর জোর করে ডুব দেই কাজে। আজকে গ্রেড জমা না দিলে গুরুদেব খেপবে। রুটি-রুজি-সুজি, সবই ঐ খিটকেলে বুড়োর হাতে, খামোখা রিস্ক নিয়ে লাভ নেই।
এরপর ঘন্টা দুই ঝড়ের মতো হাত চলে।
শ্যাষ!!
নিঃশব্দে আড়মোড়া ভেঙে আড়চোখে তাকাই। ও হরি, বালিকাও আছেন এখনো। কাগজপত্রের ঢিপি ঈষৎ গোছানো অবস্থায় এখন, চোখ-মুখও। ঘাড় ছোঁয়া গোছাগোছা চুলও গার্ডারে বাঁধা। খুব ভাব ধরে বোধহয় প্রুফরিডিং চলছে এখন।
ওহ, টার্ম পেপার।
নিশ্চয়ই সাবমিশন আজ বারোটায়।
আমি ব্যাকপ্যাক গুছাই, ফোন পকেটে গুঁজি, কাগজটা হাতে। কবিতার লাইনদুটো এক টানে কেটে দিয়ে আরেকটা সরলরেখা জুড়ে দিই।
'গুড লাক উইথ ইওর পেপার'।
এরপর কাছে দাঁড়িয়ে হাত বাড়াই।
বালিকা চমকে তাকায়। এরপর হাতে নিয়ে বলে, থ্যাঙ্কিউ।
বড্ড সিগারেটের তৃষ্ণা পেয়েছে। দ্রুত পায়ে অনেকটুকু দূরত্ব পেরিয়ে ছেড়ে আসা চিহ্নটুকুতে নজর ফেরাই। স্মিত হাসি সমেত তাকিয়ে থাকা বালিকাটি আলতো হাত নাড়ে।
আমিও হেসে ফেলি।
হয়তো তখন-ই তোমারে পাবো, দেখা হবে, ফের দেখা হবে....
মন্তব্য
ভালো লাগলো
...........................
Every Picture Tells a Story
আমি অনিকেতদাকে নকিয়ে জিজ্ঞেস করেছি কিভাবে [জাস্টিফাই] লিখতে হয়।
বোঝেন, ব্লগিং এর সিস্টেম-ই ভুলে যেতে বসেছি।
থ্যাঙ্কিউ।
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
চাপ মুবারক, আল্লাহ আপনাকে আরও চাপ নসীব করুন। আমেন!
পুনশ্চঃ এসপিএসএস একটা অভিশাপ। এর চাইতে একদমে মাইকেল মধুসূদন দত্তের কোবতে আওড়ানো কিংবা জীবনবাবুর কোবতের মাঝে সায়েঞ্ছের মারফতি খুঁজে বার করা ঢের সোজা কাজ।
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
যত খুশি বদদোয়া দেন।
কিন্তু খবরদার, ডুবসাঁতারে খুকিটুকি বলে আর কমেন্ট-টমেন্ট করবেন না।
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
১।
আজকাল শকুনের দোয়ায় গরু মরেনা, পাল্টা ডাইক্লফেনাক খেয়ে শকুনই মরে যায়
২।
হি হি হি... মাঝদরিয়ায় পাগলকে বলছেন- "খবরদার! নৌকা নাড়াসনে, রে পাগলা।"
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
২ -
--------------------------------------------------------
এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।
এক লহমার... টুকিটাকি
২। চলেন, শুরু করি
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
হে হে হে, কে যেন তখন অলক্ষ্যে হাসিয়া গিয়াছিলো।
----মোখলেস হোসেন
১। গল্প ভালো লাগলো। একটা কারণ হচ্ছে পরিবেশটার সাথে পুরোপুরি আইডেনটিফাই করতে পেরেছি।
২। মেইন ক্যারেক্টার মেয়ে ভেবে পড়ছিলাম। শেষটা তাই একটু বেশি ইন্টারেস্টিং লাগলো।
গল্পের 'লোকটা'কে খুঁজে পাচ্ছিলাম না। পরে দু'য়ে দু'য়ে চার হলো।
৩। অলসো, লোকটার বদলে 'ছেলেটা' হলে মানাতো।
৪। আবুল হাসান মানে কি?
৫। 'যখোন' কি ইচ্ছাকৃত? 'আন্ডারগ্রাড', 'হিসপানিক', দূরেএ - অনেক টাইপো।
৬। আমার অনেকদিন আগে লেখা একটা গল্পের কথা মনে পরে গেল।
https://www.facebook.com/notes/380713335454873/?pnref=story
১। ধন্যবাদ।
২। হে হে। (আংশিক) সত্যি গল্প কিন্তু।
৩। এবং ৪।
লোকটা যখোন নিঃসঙ্গ, আবুল হাসান নামের এক লোকের লেখা কবিতার নাম।
৫। যখোন, দূরেএ ইচ্ছাকৃত। আন্ডারগ্র্যাড ঠিক করে দিলাম। 'হিসপানিক' সম্ভবত আপনার মন্তব্যের আগেই ঠিক ছিলো। যাই হোক, টাইপো থাকাটা দুঃখজনক।
৬। ফেসবুক নোট, লিঙ্ক কাজ করেনি।
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
(ডুপ্লি ঘ্যাচাং)
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
আবজাব লেখা পেকটিশ চলুক।
--------------------------------------------------------
এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।
এক লহমার... টুকিটাকি
পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
ত্রয়ী শক্তি ত্রিস্বরূপে প্রপজ্ঞে প্রকট —
সংক্ষেপে বলিতে গেলে,
আহা, আপনার মানসাংকের মতোই রবি বুড়ো এভাবে জীবন-স্বপ্নের অতি সহজ মানেটা বলে গেছেন।
আজো সেটা ধরা গেল না!
রাজর্ষি
অংক/মানসাংক পারি না।
পাঠের জন্য ধন্যবাদ।
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
গদ্য টা তরতর করে এগিয়ে শেষ হয়ে গেল কখন বুঝতেই পারল না পাঠক। ব্যস্ত থাকলেও লেখার ধার কমে নি। কিন্তু এই লেখকের আগের বিভিন্ন জায়গায় দেখেছি বাংলা ভাষার নিবিড় পাঠক এবং বানান সচেতন। এখন মনে হয় একটু ব্যস্ততায় অচেতন তাই টাইপো।
অনেক শুভেচ্ছা।
-----------------------------
ইচ্ছে মত লিখি
http://icchemotolikhi.blogspot.in/
মনোযোগী মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
ট্যাগের দিকে না তাকিয়ে পড়ার বিপত্তি............ পুরো গল্পটাকে আপনার ব্লগর ব্লগর হিসেবে পড়েছি। তারপর "বড্ড সিগারেটের তৃষ্ণা পেয়েছে" এইটা পড়ে হুশ হয়েছে।
গল্প ভালো লেগেছে, পেক্টিশ চলুক।
------------------------------------------------------------------------------------------------------------
“We sit in the mud, my friend, and reach for the stars.”
অলীক জানালা _________
ক্যানো? তিথি'দি কি কখনো দাবি করেছেন যে উনি নন-নিকোটনিক?
ছোট্ট খুকিটি তো আর নন, তাইনা? খালি খালি ট্যাগ দিয়ে মাছ ঢাকা!
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
আমার বিড়ির গন্ধ সহ্য হয় না।
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
বুচ্ছি, আন্নে সুগন্ধী বিড়ি খান
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
------------------------------------------------------------------------------------------------------------
“We sit in the mud, my friend, and reach for the stars.”
অলীক জানালা _________
মুড়ি খান।
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
হ্যাঁ, তাহসিন ভাই, আপনাকেই বলেছে। কি আর করা, মুড়ি খান!
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
বাস্তব জীবনের ঘটনা থেকে অনুপ্রাণিত মনে হলো।
হ, ফিফটি পার্সেন্ট জীবন থেকে নেয়া।
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
কবিতা কাটা লাগলো কেন?
বুঝি নাই।
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
অনেকদিন পর ঢুকে অনেকদিন পর আপনার লেখা পেলাম। আপনার মতো লেখকের এই আত্মবিশ্বাস তো মানায় না, কেন ট্যাগে লিখেছেন, আবজাব লেখা, পেকটিশ? পাঠক কিভাবে ধরে রাখতে হয় তা আপনি ছাড়া ভাল কে জানে। ভাল লেগেছে তিথীডোর, তবে বকলাম দেখে রাগ করবেন না কিন্তু!
-----------------------------------
অন্ধ, আমি বৃষ্টি এলাম আলোয়
পথ হারালাম দূর্বাদলের পথে
পেরিয়ে এলাম স্মরণ-অতীত সেতু
আমি এখন রৌদ্র-ভবিষ্যতে
ট্যাগ থাকলে সুবিধা, পরে নিজের মনে পড়ে, লিখে যে আরাম পাইনি।
অনেক ধন্যবাদ, মন্তব্যের জন্য।
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
বেশ ভাল লাগল।
প্রতিটা শব্দের ব্যবহার বোল্ড এন্ড স্ট্রং।
---------------------------------------------------------
ভাঙে কতক হারায় কতক যা আছে মোর দামী
এমনি করে একে একে সর্বস্বান্ত আমি।
ধন্যযোগ আফামনি।
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
নতুন মন্তব্য করুন