ইশকুলের দিনগুলি

রিম সাবরিনা এর ছবি
লিখেছেন রিম সাবরিনা [অতিথি] (তারিখ: শনি, ১০/০৭/২০১০ - ১২:০৮অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

৯ মার্চ, ২০০০
বৃহস্পতিবার

প্রমিজ করছি এখন থেকে প্রতিদিন ডাইরী লিখবই লিখব। যদি না লিখি, তাহলে কান কেটে পাড়ার নেড়িটার গলায় ঝুলিয়ে দেব। কিন্তু লিখতে গেলেই যে সব গুলিয়ে যায়। কোনটা ছেড়ে কোনটা লিখব বুঝে উঠতে পারি না। আজকে একটা চেষ্টা নিয়ে দেখা যেতে পারে। একেবারে সকাল থেকে শুরু করি।

হলুদ বর্ডার দেয়া জাপানী কোয়ার্টজ টেবিল ঘড়িটা সবসময় আমার বিছানায় থাকে। সে হিসেবে তার নাম হওয়া উচিত ‘বিছানা ঘড়ি’। ঠিক করেছি তাকে আর টেবিল ঘড়ি ডাকব না। তার বিকট প্রিং প্র্যাং আর্তচিতকারে ধড়ফড় করে জ্যান্ত হয়ে উঠলাম। চোখ খুলে দেখি পৌনে আটটা। এক ঝটকায় উঠে দাঁড়ালাম। স্কুল ইউনিফর্মটা আব্বুকে ইস্ত্রী করতে দিয়ে হাতমুখ ধুতে গেলাম। আমার জামা-কাপড় ইস্ত্রী করার এই কাজটা সে খুব আগ্রহের সাথে করে। নাকেমুখে কিছু একটা গিলে চলে গেলাম স্কুলে। প্রথম পিরিয়ডেই পরীক্ষা। সাধারণ গনিত। দিলাম আর কি। ভাল না খারপ হল বুঝে ওঠার আগেই শিবানী আপা এসে হাজির। আমার প্রিয় একজন মানুষ। বলা উচিত না কিন্তু বলেই ফেলি, বায়োলজি আমার ভাল লাগে না। তাই ক্লাসে আমি খুব অন্যমনস্ক। আমার ঝুলিতে শিবানী আপার বকা খাওয়ার অনেক তিতা-মিঠা অভিজ্ঞতা আছে। তারপরও ক্লাসে বসে ঘুম তাড়াতে আমি অক্ষম।

ইংলিশ ক্লাসে কিশোরীমোহন স্যারের অনুরোধে আনুশকা গান শোনালো। ওর গলা যে কি সুন্দর! আফসোস হল গান শিখি নি বলে। টিফিন টাইমে অমিয়কে পাওয়া গেল। তাকে কখনো অমিয় ডাকা হয়, কখনো মুনরবি। অর নামটা সুন্দর, মুনরবি অমিয়। অমিয়র গানের গলা অসাধারণ। “ভালো আছি, ভালো থেকো”- এই গানটার একটা ফাজিল সংস্করণ লিখেছে আমাদের ধুমকেতুর ফাহিম। অমিয় গানটা দারুণ করে গাইতে পারে। আজকে ওকে দেখামাত্র পাকড়াও করলাম। গানটার লিরিক্স লেখালাম ডাইরীতে। ভাল কথা, অমিয়র টাইটেল দেয়া হয়েছে “লিটু আনাম”। মারাত্মক এই টাইটেল শুনে সে কি করে সেটা খুব দেখতে ইচ্ছা করছে। তাহসীনার কাছ থেকে ফেয়ারওয়েলের দুইটা ছবি নেয়া হয়েছিল। নাভিদকে দিয়ে সেগুলো ডেভেলপ করানো হয়েছে। একটা ছবিতে শুধু ছেলেরা। আরেকটা সবার কম্বাইন্ড ছবি। ছবির মোটামুটি সবাইকে টাইটেল দেয়া হয়েছে। স্কুলের দারোয়ান আজিজ ভাইয়ের নাম অনুপম খের আর ঝন্টু ভাই শাহরুখ খান। রাশিন হল সালমান খান, আস-সাবা বাংলা সিনেমার ভিলেন আলেকজান্ডার বো আর আমাদের রুবাব হল এ্যাকশন হিরো রুবেল।

কালকে ফাইজা আর আমার নতুন উদ্যোগ Love Letter Agency (LLA) এর প্রথম চিঠিটা লেখা হল। আগের দিনও একটা লিখেছিলাম। “ক” কে দেয়া মাত্র সে দলা পাকিয়ে ফেলে দিয়েছে। ফাজিল! কিন্তু LLA’র ট্যাগ লাইনই হল “আমরা বিশ্বস্ততায় বিশ্বাসী, বাস্তবে নয়”। সুত্রাং আরেকখানা পত্র রচিত হইল। সেটা অনেকটা এরকমঃ (‘অনেকটা এরকম’ বলছি একারণে যে এই চিঠিটাও সে টান মেরে ছিড়ে ফেলে দিয়েছে)

“ ৭৮৬/৪২০
যাও পাখি বলো তারে সে যেন ভোলেনা মোরে।
‘দোয়াগো’

Our dear ‘vatija’,

তোমার আবু-লাবু-বাবু চাচ্চু-চাচী আম্মাকে আমাদের কলিজা নিঙরানো শ্রদ্ধা ও সালাম জানিয়ে পাঁটের আশঁ দিয়ে কৃতজ্ঞতাপাশে বেঁধে দিবে। আনোয়ার স্যার কিংবা মালাইকারি (মালাকার) আপা- এ দু’জনের মধ্যে যার মাথায় চুল কম তার চুলের সমান, মানে তত পিকোসেকেন্ড তোমার পরমায়ু হোক।

পর সমাচার এই যে, গতকাল কার কাছে যেন শুনলাম তুমি নাকি শনিবারে শনির আখড়ার বিখ্যাত স্যুয়েজ পাইপের কাছে ডাকু দল হালাকু খাঁ কর্তৃক ধৃত হয়ে সর্বস্ব খুঁইয়েছ (inside+outside)। আঃহারে, চুক চুক চুক...

এবার কাজের কথায় আসি। নান্দাইলের ইউনুস তোমাকে দেখতে চেয়েছে। আগামীকাল মাঝরাতে পুলিস্তানের গলাচিপা গলিতে পৌনে তিন নাম্বার টিউবলাইটের থাম্বার পাশের লজ্জাবতী গাছের তলে বোরখা পরে রামদা হাতে সে অপেক্ষায় থাকবে। সুতরাং বুঝতেই পারছো, এই যে দুনিয়া/কিসের লাগিয়া। দে দৌড়! তুমি আর বেশিদিন নাই।

ইতি
কষ্টে আছি আইজুদ্দিন

কাগজের উল্টা পৃষ্ঠায় লিখে দিয়েছিলাম, “আমরা বিশ্বস্ততায় বিশ্বাসী, বাস্তবে নয়।“

অনেক রাত। কিছুই পড়ি নাই আজকে। লেখাপড়া যে করি না সেটা তো বোঝাই যাচ্ছে! তাতে কুব বেশি কিছু আসে যায় না আমার। কারণ আমি বাস্তবে বিশ্বাসী না। LLA effect!

--রিম সাবরিনা


মন্তব্য

অছ্যুৎ বলাই এর ছবি

খাইছে আমারে! লাভ লেটার এমুন হইলে তো পাবলিক লাভের বদলে কিরিচ নিয়া লাফ দিয়া পড়বে। মজা পাইলাম।

---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো

তারানা_শব্দ এর ছবি

আহহাহাহাআ!! চিঠিটা পছন্দ হইসে!! এমন চিঠি কোনদিন লেখা হইলো না! মন খারাপ

"মান্ধাতারই আমল থেকে চলে আসছে এমনি রকম-
তোমারি কি এমন ভাগ্য বাঁচিয়ে যাবে সকল জখম!
মনেরে আজ কহ যে,
ভালো মন্দ যাহাই আসুক-
সত্যেরে লও সহজে।"

রিম সাবরিনা এর ছবি

ধন্যবাদং!
রিম সাবরিনা

রিম সাবরিনা এর ছবি

ওই বয়সে লাভ লেটার যে কারে কয় সেইটাই তো বুঝতাম না। লিখছিলাম আর কি আবজাব। পুরাটাই একটা বিরাট ফাজলামি ছিল...খাইছে

রিম সাবরিনা

এলোমেলো ভাবনা এর ছবি

ওররে !! কিশোরীমোহন স্যার.... তাঁর কৃর্তীকলাপ নিয়ে পুরো বই লিখে ফেলা যায় !!! দেঁতো হাসি
ইস্কুলের দিনগুলী আসলেই অনেক মজার হাসি


হাত বাড়িয়ে ছুঁই না তোকে, মন বাড়িয়ে ছুঁই,

দুইকে আমি এক করি না এক কে করি দুই৷


হাত বাড়িয়ে ছুঁই না তোকে, মন বাড়িয়ে ছুঁই,

দুইকে আমি এক করি না এক কে করি দুই৷

রিম সাবরিনা এর ছবি

উদয়নের প্রোডাক্ট??? দারুন। কোন ব্যাচ?
রিম সাবরিনা

উত্তর ফাল্গুনী এর ছবি

কলেজের দিনগুলোতে "রিম সাবরিনা" কে দেইখা ধারনা হইছিলো..এই বান্দা বুঝি এই পাগলখানায় আইসা আউলা হইছে....এখন দেখতাছি বান্দা আগে থেইকাই আউলা...

আউলার আউলামি ভালু পাই!
নিজের কীর্তিকলাপও মনে পইড়া গেল..কিন্তু এমন খতরনাক কিছু করি নাই..বিশ্বাস যাইয়েন!!

রিম সাবরিনা এর ছবি

কলেজে আমারে দেখছো? তুমিও কি ভিকারুননিসার? ব্যাপক তো!
রিম সাবরিনা

 উত্তর ফাল্গুনী এর ছবি

আমার আকিকা দেয়া নামটাকে তোমরা কিন্চিত ঘষামাজা করছিলা কি না..তাই তোমাকে খুব ভালো মনে আছে।আর তোমার নামটাও তখন তেরো হাত লম্বা ছিলো!

রিম সাবরিনা এর ছবি

নাম আমার এখনো তেরো হাত লম্বা। সাহিত্যের খাতিরে আদ্ধেকটা হাপিশ করে দেয়া। অন্য ক্ষেত্রে তেরো হাত লম্বা নাম দিয়েই চালাতে হয়। তুমি কে এখন বল তো।
রিম সাবরিনা

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।